Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চোরাবালি (কালেক্টেড)
#12
পর্ব এক। ডায়রির পাতা (#1-#4)


মনামি ঢুকে গেল নিজের ঘরে। অভি বসার ঘরে কাউচে বসে সিগারেট ধরিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আকাশের দিকে দেখল। কালো মেঘে ঢাকা কিন্তু তাও সেই মেঘের ফাঁকে একফালি চাঁদ উঁকি মেরে রয়েছে। মন বড় উদাসিন হয়ে উঠল, বুকের ভেতরে এক অজানা শুন্যতা ভর করে এলো। বড়মায়ের হাত ধরে ঐ ফ্লাট থেকে বেড়িয়ে আসার পর, কোলকাতার স্কুল ছেড়ে দিল। মধ্যমগ্রামে যে স্কুলে মনামি পড়ত সেখানে ভর্তি করিয়ে দিল জেটু। দিদির আর ভাইয়ের মধ্যে সেই থেকে এক বন্ধন গড়ে উঠল। বড়দি যেহেতু ওদের চেয়ে অনেক বড়, তাই সে বেশি মিশত না ওদের সাথে। মিশলেও কেমন যেন বড় বড় ভাব, যেটা অভি আর মনামির একদম ভালো লাগত না। কত মারামারি করেছে এই দালানে, কত মার খেয়েছে দিদির জন্য আর দিদিও কত মার খেয়েছে ওর জন্য। এই সব চিন্তা করতে করতে রাত গড়িয়ে যায় সেদিকে আর খেয়াল নেই। 

রাত অনেক, ঘুমের মধ্যে পাশ ফিরে ভাইয়ের গায়ে হাত রাখতে গিয়ে বুঝতে পারে মনামি যে পাশের জায়গা খালি। এখন ঘুমাতে আসেনি ছেলেটা, কি যে করছে না। চোখ ডলে আড়ামোড়া খেয়ে উঠে বসে বিছানায়, গেল কোথায়? বিছানা ছেড়ে বসার ঘরে ঢুকে দেখে মাথা নিচু করে সোফায় চুপচাপ বসে অভি। ঘুমের রেশটা এক ধাক্কায় কেটে গেল, ভাইয়ের আঙ্গুলে সিগারেট দেখে আর ওইভাবে চুপচাপ থম মেরে বসে থাকতে দেখে। বুকের মাঝে এক আন্দোলন শুরু হয়ে যায়, এটাকে ছেড়ে সত্যি থাকা যাবে না।  

অভির সম্বিত ভাঙ্গে মাথায় আলতো একটা চাটি খেয়ে। পেছনে তাকিয়ে দেখে দিদি দাঁড়িয়ে। মনামি ওকে জিজ্ঞেস করে, “এই ভাই এখন এইভাবে পাগলের মতন জেগে বসে আছিস?” 
চোখের কোল মুছে ঠোটে হাসি টেনে উত্তর দেয়, “কিছু না রে। তুই হটাত উঠে এলি কেন?”
মনামি ওর পাশে বসে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে রে তোর?”
উত্তর দেয় অভি, “কিছু না রে।” দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, “দ্যাখ চাঁদটা বড্ড সুন্দর লাগছে, কেমন মেঘের মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারছে।”
দুর আকাশের চাঁদের চাইতে ওর পাশে বসা ভাইয়ের চিন্তা বেশি। বুকের মাঝের ধুসর মেঘের আবরণ কাটানোর জন্য বলে, “এই শোন, তোর মনে পরে সেই ছোটবেলায় তুই আমার নতুন জামাটা ছিঁড়ে দিয়েছিলি?” বলেই হেসে ফেলে।
মাথা দোলায় অভি, সত্যি কত হিংসুটে ছিল তখন, “হ্যাঁ রে। তোর ভাই তখন কত হিংসুটে ছিল বলত।” 

সেইবার পুজোতে দীপাদেবী একটা সুন্দর নীল রঙের ফ্রক কিনে দিয়েছিলেন মনামিকে আর অভিকে একটা লাল চেক জামা। নীল রঙটা ভাই আর বোনের দুইজনের খুব পছন্দের। অভি বায়না ধরে ওর নীল রঙের জামা চাই, আর মনামি ওকে খেপিয়ে বেড়াত, “তোর জামা হবে না, তোর জামা হবে না।” মনামির খুব ইচ্ছে ছিল অষ্টমীর দিনে ওই নতুন জামা পড়ে ঠাকুর দেখতে যাবে। ঠিক তার আগের রাতে অভি শয়তানি করে কাচি দিয়ে জামাটাকে দুই টুকরো করে কেটে দেয়। অষ্টমীর দিনে ঠাকুর আর দেখতে যাওয়া হল না, মনামির সেকি কান্না। বড়মা আর পাপা কিছুতেই থামাতে পারে না মনামিকে। দুই ভাই বোনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া, মারামারি। পাপা সেদিন রাতে দড়ি দিয়ে বেঁধে বেদম পিটিয়েছিল। বড়মা টেনে বের করে এনেছিলেন, সারা রাত বসে পিঠের ওপরে মলম লাগিয়ে দিয়েছিলেন আর প্রনবেশ বাবুর মুন্ডপাত করেছিলেন। “ছেলেকে কেউ গরু বাঁধা করে এইভাবে মারে নাকি? তোমার আক্কেল জ্ঞান কি একদম নেই? মনামির অনেক নতুন জামা আছে, আর একটা ওই রকম জামা একটা কিনে দেওয়া যাবে, তাই বলে ছেলেটাকে এইভাবে মারবে?” সেই সময়ে অভির মার খাওয়া দেখে খুব আনন্দ পেয়েছিল, তবে পরে অবশ্য নিজের জমানো পয়সা থেকে ভাইকে ফুচকা খাইয়েছিল। অনেকদিন আগের এই ঘটনা। 


মনে পরতেই দিদিকে এক ঘা মেরে দিয়ে বলল, “এটা তার বদলা নিলুম, তখন ত শুধু ফুচকা খাইয়ে পার পেয়ে গেছিলি।” বলেই ভাই বোন দুইজনে হেসে কুটোপুটি।

পাপার কাছে দুই ভাই বোনে কম মার খায়নি। তবে অনেক সময়ে দিদি ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল অভির সামনে, অনেক বার এমন গেছে অভি মনামির হয়ে মার খেয়েছে। 

হাসি থামিয়ে মনামি বলে, “আচ্ছা আকাশের পা ভেঙ্গে দিয়েছিলি মনে আছে?”
অভি মাথা দুলিয়ে বলে, “আরে সে কথা কেন মনে থাকবে না।”

মনামি তখন ক্লাস টুয়েল্ভে পড়ে আর অভি ক্লাস ইলেভেনে। ভাই বোন একিই স্কুলে পড়ত। মনামির তখন নতুন নতুন প্রেম করার বয়স। মনামি সায়েন্সের ছাত্রী কিন্তু অঙ্ক ক্লাসে গিয়ে প্রেমে পড়ল কমার্সের আকাশের সাথে। ছোটবেলার মিষ্টি প্রেম, তিরতির করে এগিয়ে চলেছে। স্কুলের পরে বাইরে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়া, গল্প করা। দিদির অদুরে দাঁড়িয়ে থাকত, সাথে না গেলে চলত না। মাঝে মাঝে খুব রেগে যেত মনামি, “তুই বাড়ি যা, আমি পরে আসব।” মাথা নিচু করে দিদির বকা খেয়ে বাড়ি ফিরত। বুঝত নতুন প্রেম করছে, একটু একাকী সময় চায় আকাশ আর মনামি। 

সেদিন শুক্রবার, মনামি অভিকে বলল, স্কুল পালিয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে বারাসাতে সিনেমা দেখতে যাবে। অভি ক্ষুন্ন হয়ে জানিয়ে দিয়েছিল যে বড়মাকে সব বলে দেবে। অনেক কাকুতি মিনতি করে অভিকে একটা নতুন ব্যাট কিনে দেবে বলে রাজী করিয়ে নেয় মনামি। নতুন ব্যাট পাবে সেই শুনে বেশ খুশি, মনামিও খুশি, আসলে বন্ধুদের সাথে নয়, আকাশের সাথে সিনেমা দেখতে যাবে। 

স্কুলের পর বাড়ি ফিরে দেখে, দিদি বড়মাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদছে, জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলে না কি হয়েছে। রাতের বেলা ভাই বোন শুতে যাওয়ার সময়ে আবার জিজ্ঞেস করে দিদিকে। তখন থাকতে না পেরে মনামি ওকে বলে যে, আকাশের সাথে সিনেমা দেখতে গিয়েছিল, সাথে আকাশের ও কয়েকজন বন্ধু মনামির ও কয়েকজন বন্ধু বান্ধবী ছিল। বেশ ভালো সিনেমা দেখছিল, কিন্তু ঠিক ইন্টারভালের আগে, মনামির বুকে হাত দেয় আকাশ। ওইভাবে ছোঁয়াটা একদম ভালো লাগেনি মনামির, একদম জামার ভেতর হাত দিয়ে আলতো চেপে ধরেছিল ওর নরম তুলতুলে বুক। হয়ত একা থাকলে এতটা আহত হত না। কিন্তু আহত হয়, যখন সিনেমা দেখে বেড়িয়ে আকাশের এক বন্ধু, আকাশ কে জিজ্ঞেস করে, “কি রে মালটা কতটা নরম?” কথাটা কানে যেতেই প্রচন্ড ভাবে আহত হয় মনামি, ওর মনে হল কেউ যেন ওকে রাস্তার মাঝে উলঙ্গ করে দিয়েছে। আকাশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবার সামনে ঠাটিয়ে এক চড় কসিয়ে দেয় আকাশের গালে। এই ঘটনা শুনে অভির রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়। আকাশকে হাতের কাছে পেলে মেরেই ফেলবে।
[+] 1 user Likes pnigpong's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চোরাবালি (কালেক্টেড) - by pnigpong - 05-07-2020, 11:10 AM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)