03-07-2020, 09:56 PM
হুমকি দিয়ে দরবার কক্ষ থেকে বেড়িয়ে গেলেও , সেই হুমকি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি মনি বুড়োর পক্ষে । আম্মু বেঁকে বসেছে কিছতেই রাজি হয়নি বুড়োর সাথে ঢাকা যেতে । সুধু অসহায় আস্ফালন করেছে বুড়ো , ধমকি ধামকি করেছে সবাই কে এমনকি নানাজানকেও । কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না , যার জন্য এতকিছু সেই যদি রাজি না হয় তবে আর কি করা । ভালোর মাঝে ভালো এটুকু হয়েছে নানাজান এখন আর আম্মু কে আব্বুর কাছে দিয়ে আসার কথা বলছে না । হয়তো মনি বুড়োর কাছে লজ্জা পাওয়ার ভয়ে অথবা শেষ পর্যন্ত মনেহয় নিজের মেয়ের উপর একটু দরদ জন্মেছে ।
তবে বুড়ো চেষ্টার কমতি করেনি , আমি দু একবার বুড়োর সাথে আম্মুর কথোপকথন শুনেছি । এই তো গতকাল সন্ধায় ও বুড়ো এসেছিলো । আমি আম্মুর ঘরের পেছনে সেই জানালা দিয়ে শুনলাম ওদের কথা । বুড়ো চেষ্টার কমতি করেনি , কিন্তু আম্মুর সেই এক কথা আমাকে কারো উপর নির্ভরশীল করতে বা দয়ার পাত্র করতে চায় না আম্মু । কি যে করি কি করে আম্মু কে বোঝাই আমার জন্য নিজের জীবন নষ্ট করা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না । আম্মুর সামনা সামনি কিছু বলতেও পারছি না , তবে আড়ে ঠারে অনেক বলেছি আম্মু যেন আমাকে নিয়ে চিন্তা না করে ।
এদিকে আমার নতুন বছরের ক্লাস শুরু হওয়ার সময় চলে এসেছে । বেসিদিন এরকম চলতে থাকলে , আম্মু আমার কলেজ এর দোহাই দিয়ে আব্বুর কাছে চলে যাবে । সময় বাকি আর সপ্তাখানেক । এর মাঝেই যা একটা করতে হবে । আমি ঠিক করলাম আম্মুর সাথে কথা বলবো আরও খোলামেলা ভাবে । এ সময় মিনা কে খুব মিস করছি সাথে শিউলি আনটি কে । নিজে নিজে ঝালাই করে নিলাম কি বলবো আম্মু কে। সময় বেঁছে নিলাম দুপুর , তখন বাড়ি নিসচুপ থাকে , মামি রা দুপুর ঘুমে থাকে ।
আম্মু নিজের ঘরে বিছানায় বসে আছে হাঁটুর উপর থুতনি লাগিয়ে । ঘন লম্বা চুল্গুলি পিঠের উপর ছড়িয়ে দেয়া । দূর থেকে দেখেই আমার খুব মায়া হলো , কেমন আনমনে বসে আছে আমার উপস্থিতি এখনো টের পায়নি ।
__ আম্মু কি করছ ?
আমার ডাক শুনে আম্মু মাথা তুলে তাকালো , ইস কি হাল হয়েছে আম্মুর , ভাসা ভাসা ডাগর দুটো ডেবে গেছে অনেখানি । হালকা কালি ও পরেছে চোখের নিচে । বুকটা আমার ভারি হয়ে উঠলো আম্মুর জন্য , আমি জানি আম্মু মনে প্রানে চায় মনি দাদুর সাথে চলে যেতে । এমন লোভনীয় প্রস্তাব আর হয় না , বাধা সুধু আমি । আর একজন নারীর জন্য নিজের ভালোবাসার পুরুষ এর কাছে না যেতে পারা কতটা কষ্টের সেটা না বুঝতে পারলেও আন্দাজ করতে পারছি । তার উপর রাস্তা যখন পরিষ্কার ।
__ আয় অপু বোস আমার সাথে , তোকে তো পাওয়া ই যায় না সারাদিন ঘুরে বেড়াস , এখানে এসে আম্মুর সাথে সময় ই দিচ্ছিস না । আম্মু মুখে মেকি হাসি টেনে বলল ।
আমি আম্মুর পাশে বসতেই আম্মু পা দুটো বিছিয়ে দিলো । আমি আম্মুর পায়ে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম । আম্মু আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো । এটা আমাদের মা ছেলের একান্ত সময় কাটানোর সবচেয়ে প্রিয় আসন । এভাবে শুলে আমার কাছে মনে হয় আমি আমার আম্মুর খুব কাছে চলে এসেছি । আম্মুর গরম নিশ্বাস শরীর এর গন্ধ খুব কাছ থেকে পাই । যে শরীর থেকে আমার জন্ম যার ভেতরে একটু একটু করে তৈরি হয়েছি আমি , তার এতো কাছাকাছি আসতে পারলে কেমন জানি একটা প্রশান্তি চলে আসে । কিন্তু আজ সেটা আসছে না। নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে । আম্মুর জন্য আমি কিছুই করতে পারছি না ।
__ তুমি এমন মন মড়া হয়ে থাকো তাই তোমার কাছে আসতে ইচ্ছে হয় না আম্মু । আমি বললাম
__ সে কিরে তুই কাছে থাকলে আমি মন মড়া হয়ে থাকি কখন , তুই আমার সাত রাজার ধন , তুই কাছে থাকলে আমি সবচেয়ে ভালো থাকি । আম্মু হেঁসে বলল ।
__ উঁহু , আমি এখন আর ছোট নই আম্মু আমি জানি তুমি খুব কষ্টে আছ
__ এই অপু তুই এইসব চিন্তা করবি না একদম , সব ঠিক হয়ে যাবে । তুই সুধু মন দিয়ে পড়ালেখা করবি , মানুষ এর মতো মানুষ হবি। আমার জন্য মন খারাপ করবি না একদম । আমার জীবন তো চলেই গেছে , এখন তুই আমার সব তোর ভালই আমার ভালো ।
__ আমার ভালো কি আব্বুর সাথে থাকা ? আমি সরাসরি প্রশ্ন করলাম
আম্মু কিচ্ছুক্ষন চুপ থাকলো , দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে নিয়েছে । মনে হয় কান্না লুকাচ্ছে । আমি আম্মুর গালে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফেরালাম আম্মু কে ।
__ বলো আম্মু , আব্বুর কাছে থাকলেই কি আমি ভালো মানুষ হবো ? আমি আবার প্রশ্ন করলাম
__ সেটা নিশ্চিত বলা যায় না , তবে উনি যত খারাপ মানুষ ই হোক না কেন , তোর বাবা তোর জন্য ওনার যত মায়া হবে একমাত্র আমি ছাড়া আর কারো তেমন হবে না । ওনার যা কিছু আছে সব তোর । ওনার উপর তোর দাবি আছে । আমাকে হয়তো উনি আর গ্রহন করবে না কিন্তু তোকে তো ফেলে দেবে না । দুনিয়া অনেক কঠিন অপু , এই যে নানা বাড়ি এসেছিস সবাই তোকে অনেক আদর করছে স্নেহ করছে এটা বেসিদিন স্থায়ী হবে না যদি তুই এখানে সবসময় এর জন্য থাকিস । আমার জন্য ই এ বাড়ি পর হয়ে গেছে , আমিই এবারি মেহমান এখন । আমি যদি সবসময় এর জন্য এখানে থাকি লোকে খারাপ বলবে ।
এ পর্যায়ে এসে আম্মুর গলা ধরে এলো , অনেক কষ্টে আম্মু কান্না আটকালো । তারপর আবার বলতে শুরু করলো
__ আমি চাইনা তুই কারো দয়ায় বেঁচে থাক , বাবা মা ছাড়া আর কারো কাছে থাকা মানে তাদের দয়ায় থাকা ।
__ কেন আম্মু আমি তো তোমার সাথেই থকব ।
__ আমার যে সে ক্ষমতা নেই রে অপু । যদি থাকতো তবে আমি কখনো আর ওখানে ফিরে যেতে চাইতাম না , তুই বুঝবি না একটা মেয়ের জন্য কতটা কষ্টকর যে তার স্বামী .........
এটুকু বলে আম্মু থেমে গেলো , আমি বুঝলাম আম্মু কি বলতে চাইছে , আম্মু আব্বুর কাজের মেয়েদের সাথে সম্পর্কের কথা বলতে চাইছে। তবে আমি এ ও জানি আম্মুর দুঃখ সুধু ওটা নয় । আম্মুর আসল দুঃখ নিজের ভালোবাসার পুরুষ এর সান্নিধ্য না পাওয়া ।
__ চলো আম্মু আমারা মনি দাদুর সাথে চলে যাই ? শেষ পর্যন্ত আমি বলেই ফেললাম
আম্মু আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো , আম্মুর বরফি কাটা থুতনি আর গোলাপি ঠোঁট দুটো কাঁপছে । এমন একটা মুখ কে অবহেলা করতে পারে । কি করে আমার আব্বু এমন আচরন করে আম্মুর সাথে আমি ভেবেই পাই না ।
__ কি অধিকারে যাবো আমারা তার সাথে অপু ? কে হয় উনি আমাদের ? লোকে কি বলবে ?
__ উনি তোমায় অনেক আদর করে আম্মু , আমার মনে হয় নানাজান এর চেয়ে বেশি আদর করে । আমি বললাম
আম্মু আবারো অনেক কস্তী কান্না চাপলো ।
__ সে উনি করে , কিন্তু তোকে কি উনি ওরকম ভাবে আদর করবে ? আর ওনার সাথে আমি অনেক বড় বেইমানী করেছি , তুই ছোট মানুষ তুই বুঝবি না ।
__ আমি অতসব জানি না আম্মু কিন্তু মনি দাদু সেদিন ও বলেছিলো ওনার সব কিছুই তোমার । আর তোমার মতো এতো ভালোমানুষ কি করে কারো সাথে বেইমানী করে ।
__ তুই আমাকে অনেক ভালবাসিস বলে তোর চোখে আমি অনেক ভালোমানুষ , আমি কিন্তু এতো ভালোমানুষ নই , যদি জানতে পারিস তবে তুই ও আমাকে ঘৃণা করবি । আম্মু হেঁসে বলল
__ আমি তোমাকে কোনদিন ঘৃণা করবনা আম্মু কোনদিন না ।
এই বলে আমি আম্মুর পেটে মুখ চেপে আম্মু কে জড়িয়ে ধরলাম । মনে মনে বললাম আম্মু আমি সব জানি । তারপর ও আমি তোমাকে ভালবাসি । বরং তুমি আমাকে ঘৃণা করবে যদি তুমি আমার ব্যাপারে সব জানতে পারো ।
খুব ইমোশনাল হয়ে পড়ায় কিছুই আর বলতে পারলাম না । আম্মু কে জড়িয়ে ধরে সুধু শুয়ে রইলাম ।
বিকেল বেলা মনি বুড়োর বাড়ির দিকে গেলাম । ছিপ রেডি করছিলো বুড়ো । আমাকে দেখে আবার ছিপ এর দিকে নজর দিলো কিছু বলল না । আমি পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম , ইচ্ছা হচ্ছিলো কিছু শক্ত কথা বলি , কিন্তু লোকটির মনের অবস্থা আর অসহায়ত্ব কিছু কিছু আমিও বুঝতে পারছি তাই কোন কঠিন কথা এলো না । আমিও চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম । কিছুক্ষন পর বুড়ো ই মৌনতা ভাংলো ।
__ যে নিজের ভালো বোঝে না তাকে কি করে ভালো পথে আনা যায় সেই মন্ত্র আমার জানা নেই ।
যেন আমার কাছে কৈফিয়ত দিচ্ছে এমন করে বলল বুড়ো কথা গুলো । বুঝলাম বুড়ো নিজেও শান্তিতে নেই ।
__ এই সন্ধায় মাছ ধরতে যাবে নাকি ? আমি ওই বিষয় এর কাছ দিয়েও গেলাম না , কারন আমার মনে যে চিন্তা ঘুরছে সেটা কি করে এই বুড়ো মানুষটাকে বলি সেটা আমি ঠিক করতে পারছি না ।
আমার প্রশ্ন শুনে বুড়ো একটু অবাক হলো , তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল বিলে যাবো আজ সারারাত মাছ ধরব । মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে । তোর মা টা যে এমন অবুঝ সেটা আমি আগে বুঝিনি ।
__ অবুঝ না হলে কি এমন সম্পর্কে জড়ায় , যে সম্পর্ক পরিনতিতে রুপান্তর এর পথে পদে পদে বাধা । আবার হঠাত রাগ করে সেই সম্পর্ক চূর্ণ করে আর একটা ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের জীবনে নরক নামিয়ে আনে । এখন আম্মু দুই নৌকায় পা দেয়া । এক হচ্ছ তুমি দুই হচ্ছি আমি আর আমার সাথে আমার বাবা জড়িত ।
__ তুই এমনিতে ছোট হলেও বেশ বুদ্ধি আছে তোর , ঠিক বলেছিস তুই আমার ও দোষ আছে , যখন শুরু হয়েছিলো তখনি বন্ধ করে দেয়া দরকার ছিলো , খুকি তো তখন খুব ছোট । কত আর বয়স হবে ১৪-১৫ ওই বয়সের মেয়েরা আবেগ প্রবন হয়ে থাকে । কিন্তু আমি তো অবুঝ ছিলাম না , দশ ঘাটের পানি খাওয়া লোক আমি ।
এটুকু বলে একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো বুড়ো
_ নাকি আমিও অবুঝ ছিলাম কে জানে । এখানে এসে খুকির বাধনে বাধা পড়ে গেলাম , সারাজীবন একা কাটিয়েছি , কিন্তু খুকির অনম নিস্পাপ মুখের ফোকলা হাসির প্রেমে পড়ে গেলাম । সারাদিন রাত পড়ে থাকতাম খুকি কে নিয়ে । আর খুকিও আমাকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝত না । এমন কি তোর নানির কাছেও যেত না আমি থাকলে । নিজের দেশ বাড়ি সম্পত্তি ভুলে পড়ে রইলাম এই গ্রামে । তোর নানা একটুকরো জমি দিলো । এমন অনেক রাত গিয়েছে খুকি আমার সাথেই থেকেছে । মাঝে মাঝে মনে হতো আমি ই ওর বাবা ও আমারি মেয়ে । আগের জন্মে মনেহয় ও আমার মেয়ে ই ছিল ।
বুড়ো আবার থামল , আমি কিছু না বলে চুপ করেই রইলাম , যদিও শিউলি আনটি আমাকে ভাসাভাসা কিছু বলেছে । কিন্তু বুড়োর মুখে শুনতে পেলে আরও ভালো করে ওদের সম্পর্কের ধরনটা বুঝতে আমার জন্য সহজ হবে । আর বুড়ো যেহেতু নিজ থেকেই বলা শুরু করেছে এখন বুড়ো কে বাধা দেয়া বা ফোঁড়ন কাটা ঠিক হবে না ।
__ ধীরে ধীরে খুকি যখন একটু বড় হতে লাগলো তখন আমার ধারণা পালটে গেলো । আগের জন্মে ও আমার মেয়ে নয় মা ছিলো এমন মনে হতে লাগলো । সারাক্ষণ আমার খোঁজ খবর নিতো । আমার কখন কি প্রয়োজন আমি কি ভুলে গেলাম সব খেয়াল রাখতো ওইটুকু মেয়ে । আর অসুখ করলে তো আমাকে ছাড়া থাকতোই না । কোন ডাক্তার ওর অসুখ ভালো করতে পারতো না অথচ আমি পাশে বসলেই কেমন সুস্থ হয়ে যেত । একবার আমি কলকাতা গেলাম , এমন সময় হলো টাইফয়েড কিছুতেই কিছু হয় না । আমি এসে দেখি মড় মড় অবস্থা। কি করেই না সেবার সুস্থ করে তুল্লাম ।
মনে মনে বললাম , তখনি তো ঘটনা ঘতিয়েছিলে আমার নানির সাথে । মুখে কিছু বললাম না । বুড়ো বলতে লাগলো ।
__ যখন একটু বড় হলো তোর মা তখন আমার মনে ভয় ঢুকে গেলো , এই বুঝি কোন ছেলের পাল্লায় পড়ে এই বুঝি আমার কাছ থেকে দূরে চলে যায় । তোর মা কে ছাড়া তখন আমি এক মুহূর্ত থাকতে পারি না । আমি কড়া শাসনে রাখতে লাগলাম তোর মা কে । তোর মায়ের একটি বান্ধবি ছিলো নাম্বার ওয়ান দুষ্ট মেয়ে । আমি খুব ভয়ে থাকতাম ওই মেয়েকে নিয়ে ।
মনে মনে আমি বললাম ওই দুষ্ট মেয়েকে ও তো ছাড়ো নি ।
__ প্রথমে প্রথমে ওই কড়া শাসন এর জন্য খুকির সাথে আমার দূরত্ব তৈরি হতে লাগলো । আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম , তখন তোর মায়ের বয়স খুব কম ক্লাস এইট এ পড়ে । কিন্তু গ্রাম অঞ্চল তার উপর তোর মায়ের সরি... মানে গ্রোথ ও অনেক ভালো । এদিক সেদিক থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে লাগলো । এই মেয়ে বিয়ে হয়ে গেলে আমি থাকবো কি করে । সারাজীবন একা একা থেকে হঠাত করে নিজের কাছের কাউকে পেলে যা হয় আমারও তখন তাই হয়েছিলো । আরও তো কত মানুষ এর মেয়ে বিয়ে হয় ওরা কি এমন করে । তবে একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম খুকি এখন আমাকে ভয় পেলেও দূরে দূরে থেকে না বরং আমার কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে । কেমন করে যেন তাকায় ওর ওর আচরন কেমন জানি আর আগের মতো স্বাচ্ছন্দ্য নয় । একদিন দেখলাম আমার একটি সেন্ডো গেঞ্জি নিয়ে গালের সাথে লাগিয়ে রেখেছে । আমি পড়ে গেলাম আরও বিপদে । এই মেয়ে এমন করছে কেন ।
বুড়োর কথা শুনে আমি অবাক , ব্রা শুকা প্যানটি শুঁকে মাল ফেলা এই সব শুনেছি । মেয়েরাও কি ছেলদের জাঙ্গিয়া ধরে উত্তেজনা বোধ করে
__ একদিন ধরলাম ঠিক করে । তারপর যা বলল তা শুনে কি আমি আনন্দ করবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারলাম না । সেদিন ধমকে বিদায় করলেও । পড়ে রাতে অনেক ভেবে দেখলাম এই মেয়ে কে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না । আমি ওকে নিয়ে উচ্চ শিক্ষার কথা বলে কলকাতা চলে যাবো । জতদুর সম্ভব একে পড়াবো আর নিজের কাছে রাখবো । এতে তোর নানা ও কোন আপত্তি করবে না । বাকি টুকু তোকে বলা সম্ভব না যত কিছুই হোক তোর মা সে । তবে এ টুকু শুনে রাখ আমি খুকির উপর কখনি কোন কিছু চাপিয়ে দেইনি । কিন্তু ওকে রেখে কলকাতা গিয়ে ঠিকঠাক করার পর এসে শুনি তোর বাবার সাথে চলে গেছে । এমন অবাক আমি কোনদিন হইনি । তবে মনে নিয়েছিলাম । চেয়েছিলাম ভালো থাকুক । কিন্তু ভালো থাকার এই নমুনা । এতো বছর ওই চান্ডাল টার সাথে সংসার করেছে । আর তুই কি যেন বললি আমার উপর রাগ করে চলে গেছে কি নিয়ে রাগ করলো সেটাই তো আমি বুঝতে পারলাম না ।
যদিও বুড়ো অনেক রখাঠাক রেখে বলেছে তবুও আমার ঘটনা বুঝতে অসুবিধা হলো না ।
__ তুমি আম্মু কে আগের মতো শাসন করতে পারো না ? আমি প্রশ্ন করলাম
__ না না আগে আমায় বল খুকি কি নিয়ে রাগ করেছিলো ? আমি আজ ও জানতে পারলাম না ।
__ আহা রাখো সে কথা তুমি আম্মু কেই জিজ্ঞাস করে নিও । আমি বলতে চাইছি না এরা তো আবার প্রেমিক প্রেমিকা যদি বুড়ো জানতে পারে তাহলে হয়তো লজ্জায় আম্মুর সামনে যাবে না ।
__ না তুই বল এখনি আর তুই কি করে জানতে পারলি ?
না পেরে আমায় বলতেই হলো
__ আম্মু তোমার আর নানিজান এর ঘটনা জেনে ফেলেছিলো
বুড়োর প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো ভুত দেখার মতো । চোখ দুটি বড় হতে হতে যেন কোটর থেকে বেড়িয়ে যাবে । তারপর ধীরে ধীরে চয়াল ঝুলে পড়লো । একেবারে মিইয়ে গেলো বুড়ো । আমি বুঝলাম যে ভয় পাচ্ছিলাম সেটাই ঘটতে যাচ্ছে । তাই তারাতারি বললাম
__ তুমি তো আর পড়ে নানিজান এর সাথে কিছু করনি , ওটা হয়েছিলো যখন আম্মু ছোট ছিলো । আর আম্মু এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে ।
কিন্তু কোন প্রভাব পড়লো না বুড়োর উপর । বুড়ো ধীরে ধীরে উঠে দাড়িয়ে নিজের ঘরের ভেতর ঢুকে গেলো । তারপর দরজা লাগিয়ে দিলো। আমি দৌড়ে গেলাম । একি বুড়ো আবার অন্য কিছু করবে নাকি । অনেক দরজা ধাক্কালাম কিন্তু কোন লাভ হলো না । ভাগ্যিস টিনের ঘর ফুটো ফাটা অনেক । দেখলাম বুড়ো বিছানায় ঝিম মেরে বসে আছে । অনেক বোঝালাম বুড়ো কে , উঁহু কোন লাভ হলো না । আমাকে খালি হাতেই ফিরতে হলো । কেন যে বলতে গেলাম । নিজের গালেই নিজের সপাসপ চড় মারতে ইচ্ছে হচ্ছে । এসেছিলাম বুদ্ধি করতে গেলাম বুড়ো কে ভেঙ্গে দিয়ে । আমার মিনা আর শিউলি আনটিকে খুব দরকার এখন খুব ।
তবে বুড়ো চেষ্টার কমতি করেনি , আমি দু একবার বুড়োর সাথে আম্মুর কথোপকথন শুনেছি । এই তো গতকাল সন্ধায় ও বুড়ো এসেছিলো । আমি আম্মুর ঘরের পেছনে সেই জানালা দিয়ে শুনলাম ওদের কথা । বুড়ো চেষ্টার কমতি করেনি , কিন্তু আম্মুর সেই এক কথা আমাকে কারো উপর নির্ভরশীল করতে বা দয়ার পাত্র করতে চায় না আম্মু । কি যে করি কি করে আম্মু কে বোঝাই আমার জন্য নিজের জীবন নষ্ট করা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না । আম্মুর সামনা সামনি কিছু বলতেও পারছি না , তবে আড়ে ঠারে অনেক বলেছি আম্মু যেন আমাকে নিয়ে চিন্তা না করে ।
এদিকে আমার নতুন বছরের ক্লাস শুরু হওয়ার সময় চলে এসেছে । বেসিদিন এরকম চলতে থাকলে , আম্মু আমার কলেজ এর দোহাই দিয়ে আব্বুর কাছে চলে যাবে । সময় বাকি আর সপ্তাখানেক । এর মাঝেই যা একটা করতে হবে । আমি ঠিক করলাম আম্মুর সাথে কথা বলবো আরও খোলামেলা ভাবে । এ সময় মিনা কে খুব মিস করছি সাথে শিউলি আনটি কে । নিজে নিজে ঝালাই করে নিলাম কি বলবো আম্মু কে। সময় বেঁছে নিলাম দুপুর , তখন বাড়ি নিসচুপ থাকে , মামি রা দুপুর ঘুমে থাকে ।
আম্মু নিজের ঘরে বিছানায় বসে আছে হাঁটুর উপর থুতনি লাগিয়ে । ঘন লম্বা চুল্গুলি পিঠের উপর ছড়িয়ে দেয়া । দূর থেকে দেখেই আমার খুব মায়া হলো , কেমন আনমনে বসে আছে আমার উপস্থিতি এখনো টের পায়নি ।
__ আম্মু কি করছ ?
আমার ডাক শুনে আম্মু মাথা তুলে তাকালো , ইস কি হাল হয়েছে আম্মুর , ভাসা ভাসা ডাগর দুটো ডেবে গেছে অনেখানি । হালকা কালি ও পরেছে চোখের নিচে । বুকটা আমার ভারি হয়ে উঠলো আম্মুর জন্য , আমি জানি আম্মু মনে প্রানে চায় মনি দাদুর সাথে চলে যেতে । এমন লোভনীয় প্রস্তাব আর হয় না , বাধা সুধু আমি । আর একজন নারীর জন্য নিজের ভালোবাসার পুরুষ এর কাছে না যেতে পারা কতটা কষ্টের সেটা না বুঝতে পারলেও আন্দাজ করতে পারছি । তার উপর রাস্তা যখন পরিষ্কার ।
__ আয় অপু বোস আমার সাথে , তোকে তো পাওয়া ই যায় না সারাদিন ঘুরে বেড়াস , এখানে এসে আম্মুর সাথে সময় ই দিচ্ছিস না । আম্মু মুখে মেকি হাসি টেনে বলল ।
আমি আম্মুর পাশে বসতেই আম্মু পা দুটো বিছিয়ে দিলো । আমি আম্মুর পায়ে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম । আম্মু আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো । এটা আমাদের মা ছেলের একান্ত সময় কাটানোর সবচেয়ে প্রিয় আসন । এভাবে শুলে আমার কাছে মনে হয় আমি আমার আম্মুর খুব কাছে চলে এসেছি । আম্মুর গরম নিশ্বাস শরীর এর গন্ধ খুব কাছ থেকে পাই । যে শরীর থেকে আমার জন্ম যার ভেতরে একটু একটু করে তৈরি হয়েছি আমি , তার এতো কাছাকাছি আসতে পারলে কেমন জানি একটা প্রশান্তি চলে আসে । কিন্তু আজ সেটা আসছে না। নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে । আম্মুর জন্য আমি কিছুই করতে পারছি না ।
__ তুমি এমন মন মড়া হয়ে থাকো তাই তোমার কাছে আসতে ইচ্ছে হয় না আম্মু । আমি বললাম
__ সে কিরে তুই কাছে থাকলে আমি মন মড়া হয়ে থাকি কখন , তুই আমার সাত রাজার ধন , তুই কাছে থাকলে আমি সবচেয়ে ভালো থাকি । আম্মু হেঁসে বলল ।
__ উঁহু , আমি এখন আর ছোট নই আম্মু আমি জানি তুমি খুব কষ্টে আছ
__ এই অপু তুই এইসব চিন্তা করবি না একদম , সব ঠিক হয়ে যাবে । তুই সুধু মন দিয়ে পড়ালেখা করবি , মানুষ এর মতো মানুষ হবি। আমার জন্য মন খারাপ করবি না একদম । আমার জীবন তো চলেই গেছে , এখন তুই আমার সব তোর ভালই আমার ভালো ।
__ আমার ভালো কি আব্বুর সাথে থাকা ? আমি সরাসরি প্রশ্ন করলাম
আম্মু কিচ্ছুক্ষন চুপ থাকলো , দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে নিয়েছে । মনে হয় কান্না লুকাচ্ছে । আমি আম্মুর গালে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফেরালাম আম্মু কে ।
__ বলো আম্মু , আব্বুর কাছে থাকলেই কি আমি ভালো মানুষ হবো ? আমি আবার প্রশ্ন করলাম
__ সেটা নিশ্চিত বলা যায় না , তবে উনি যত খারাপ মানুষ ই হোক না কেন , তোর বাবা তোর জন্য ওনার যত মায়া হবে একমাত্র আমি ছাড়া আর কারো তেমন হবে না । ওনার যা কিছু আছে সব তোর । ওনার উপর তোর দাবি আছে । আমাকে হয়তো উনি আর গ্রহন করবে না কিন্তু তোকে তো ফেলে দেবে না । দুনিয়া অনেক কঠিন অপু , এই যে নানা বাড়ি এসেছিস সবাই তোকে অনেক আদর করছে স্নেহ করছে এটা বেসিদিন স্থায়ী হবে না যদি তুই এখানে সবসময় এর জন্য থাকিস । আমার জন্য ই এ বাড়ি পর হয়ে গেছে , আমিই এবারি মেহমান এখন । আমি যদি সবসময় এর জন্য এখানে থাকি লোকে খারাপ বলবে ।
এ পর্যায়ে এসে আম্মুর গলা ধরে এলো , অনেক কষ্টে আম্মু কান্না আটকালো । তারপর আবার বলতে শুরু করলো
__ আমি চাইনা তুই কারো দয়ায় বেঁচে থাক , বাবা মা ছাড়া আর কারো কাছে থাকা মানে তাদের দয়ায় থাকা ।
__ কেন আম্মু আমি তো তোমার সাথেই থকব ।
__ আমার যে সে ক্ষমতা নেই রে অপু । যদি থাকতো তবে আমি কখনো আর ওখানে ফিরে যেতে চাইতাম না , তুই বুঝবি না একটা মেয়ের জন্য কতটা কষ্টকর যে তার স্বামী .........
এটুকু বলে আম্মু থেমে গেলো , আমি বুঝলাম আম্মু কি বলতে চাইছে , আম্মু আব্বুর কাজের মেয়েদের সাথে সম্পর্কের কথা বলতে চাইছে। তবে আমি এ ও জানি আম্মুর দুঃখ সুধু ওটা নয় । আম্মুর আসল দুঃখ নিজের ভালোবাসার পুরুষ এর সান্নিধ্য না পাওয়া ।
__ চলো আম্মু আমারা মনি দাদুর সাথে চলে যাই ? শেষ পর্যন্ত আমি বলেই ফেললাম
আম্মু আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো , আম্মুর বরফি কাটা থুতনি আর গোলাপি ঠোঁট দুটো কাঁপছে । এমন একটা মুখ কে অবহেলা করতে পারে । কি করে আমার আব্বু এমন আচরন করে আম্মুর সাথে আমি ভেবেই পাই না ।
__ কি অধিকারে যাবো আমারা তার সাথে অপু ? কে হয় উনি আমাদের ? লোকে কি বলবে ?
__ উনি তোমায় অনেক আদর করে আম্মু , আমার মনে হয় নানাজান এর চেয়ে বেশি আদর করে । আমি বললাম
আম্মু আবারো অনেক কস্তী কান্না চাপলো ।
__ সে উনি করে , কিন্তু তোকে কি উনি ওরকম ভাবে আদর করবে ? আর ওনার সাথে আমি অনেক বড় বেইমানী করেছি , তুই ছোট মানুষ তুই বুঝবি না ।
__ আমি অতসব জানি না আম্মু কিন্তু মনি দাদু সেদিন ও বলেছিলো ওনার সব কিছুই তোমার । আর তোমার মতো এতো ভালোমানুষ কি করে কারো সাথে বেইমানী করে ।
__ তুই আমাকে অনেক ভালবাসিস বলে তোর চোখে আমি অনেক ভালোমানুষ , আমি কিন্তু এতো ভালোমানুষ নই , যদি জানতে পারিস তবে তুই ও আমাকে ঘৃণা করবি । আম্মু হেঁসে বলল
__ আমি তোমাকে কোনদিন ঘৃণা করবনা আম্মু কোনদিন না ।
এই বলে আমি আম্মুর পেটে মুখ চেপে আম্মু কে জড়িয়ে ধরলাম । মনে মনে বললাম আম্মু আমি সব জানি । তারপর ও আমি তোমাকে ভালবাসি । বরং তুমি আমাকে ঘৃণা করবে যদি তুমি আমার ব্যাপারে সব জানতে পারো ।
খুব ইমোশনাল হয়ে পড়ায় কিছুই আর বলতে পারলাম না । আম্মু কে জড়িয়ে ধরে সুধু শুয়ে রইলাম ।
বিকেল বেলা মনি বুড়োর বাড়ির দিকে গেলাম । ছিপ রেডি করছিলো বুড়ো । আমাকে দেখে আবার ছিপ এর দিকে নজর দিলো কিছু বলল না । আমি পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম , ইচ্ছা হচ্ছিলো কিছু শক্ত কথা বলি , কিন্তু লোকটির মনের অবস্থা আর অসহায়ত্ব কিছু কিছু আমিও বুঝতে পারছি তাই কোন কঠিন কথা এলো না । আমিও চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম । কিছুক্ষন পর বুড়ো ই মৌনতা ভাংলো ।
__ যে নিজের ভালো বোঝে না তাকে কি করে ভালো পথে আনা যায় সেই মন্ত্র আমার জানা নেই ।
যেন আমার কাছে কৈফিয়ত দিচ্ছে এমন করে বলল বুড়ো কথা গুলো । বুঝলাম বুড়ো নিজেও শান্তিতে নেই ।
__ এই সন্ধায় মাছ ধরতে যাবে নাকি ? আমি ওই বিষয় এর কাছ দিয়েও গেলাম না , কারন আমার মনে যে চিন্তা ঘুরছে সেটা কি করে এই বুড়ো মানুষটাকে বলি সেটা আমি ঠিক করতে পারছি না ।
আমার প্রশ্ন শুনে বুড়ো একটু অবাক হলো , তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল বিলে যাবো আজ সারারাত মাছ ধরব । মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে । তোর মা টা যে এমন অবুঝ সেটা আমি আগে বুঝিনি ।
__ অবুঝ না হলে কি এমন সম্পর্কে জড়ায় , যে সম্পর্ক পরিনতিতে রুপান্তর এর পথে পদে পদে বাধা । আবার হঠাত রাগ করে সেই সম্পর্ক চূর্ণ করে আর একটা ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের জীবনে নরক নামিয়ে আনে । এখন আম্মু দুই নৌকায় পা দেয়া । এক হচ্ছ তুমি দুই হচ্ছি আমি আর আমার সাথে আমার বাবা জড়িত ।
__ তুই এমনিতে ছোট হলেও বেশ বুদ্ধি আছে তোর , ঠিক বলেছিস তুই আমার ও দোষ আছে , যখন শুরু হয়েছিলো তখনি বন্ধ করে দেয়া দরকার ছিলো , খুকি তো তখন খুব ছোট । কত আর বয়স হবে ১৪-১৫ ওই বয়সের মেয়েরা আবেগ প্রবন হয়ে থাকে । কিন্তু আমি তো অবুঝ ছিলাম না , দশ ঘাটের পানি খাওয়া লোক আমি ।
এটুকু বলে একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো বুড়ো
_ নাকি আমিও অবুঝ ছিলাম কে জানে । এখানে এসে খুকির বাধনে বাধা পড়ে গেলাম , সারাজীবন একা কাটিয়েছি , কিন্তু খুকির অনম নিস্পাপ মুখের ফোকলা হাসির প্রেমে পড়ে গেলাম । সারাদিন রাত পড়ে থাকতাম খুকি কে নিয়ে । আর খুকিও আমাকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝত না । এমন কি তোর নানির কাছেও যেত না আমি থাকলে । নিজের দেশ বাড়ি সম্পত্তি ভুলে পড়ে রইলাম এই গ্রামে । তোর নানা একটুকরো জমি দিলো । এমন অনেক রাত গিয়েছে খুকি আমার সাথেই থেকেছে । মাঝে মাঝে মনে হতো আমি ই ওর বাবা ও আমারি মেয়ে । আগের জন্মে মনেহয় ও আমার মেয়ে ই ছিল ।
বুড়ো আবার থামল , আমি কিছু না বলে চুপ করেই রইলাম , যদিও শিউলি আনটি আমাকে ভাসাভাসা কিছু বলেছে । কিন্তু বুড়োর মুখে শুনতে পেলে আরও ভালো করে ওদের সম্পর্কের ধরনটা বুঝতে আমার জন্য সহজ হবে । আর বুড়ো যেহেতু নিজ থেকেই বলা শুরু করেছে এখন বুড়ো কে বাধা দেয়া বা ফোঁড়ন কাটা ঠিক হবে না ।
__ ধীরে ধীরে খুকি যখন একটু বড় হতে লাগলো তখন আমার ধারণা পালটে গেলো । আগের জন্মে ও আমার মেয়ে নয় মা ছিলো এমন মনে হতে লাগলো । সারাক্ষণ আমার খোঁজ খবর নিতো । আমার কখন কি প্রয়োজন আমি কি ভুলে গেলাম সব খেয়াল রাখতো ওইটুকু মেয়ে । আর অসুখ করলে তো আমাকে ছাড়া থাকতোই না । কোন ডাক্তার ওর অসুখ ভালো করতে পারতো না অথচ আমি পাশে বসলেই কেমন সুস্থ হয়ে যেত । একবার আমি কলকাতা গেলাম , এমন সময় হলো টাইফয়েড কিছুতেই কিছু হয় না । আমি এসে দেখি মড় মড় অবস্থা। কি করেই না সেবার সুস্থ করে তুল্লাম ।
মনে মনে বললাম , তখনি তো ঘটনা ঘতিয়েছিলে আমার নানির সাথে । মুখে কিছু বললাম না । বুড়ো বলতে লাগলো ।
__ যখন একটু বড় হলো তোর মা তখন আমার মনে ভয় ঢুকে গেলো , এই বুঝি কোন ছেলের পাল্লায় পড়ে এই বুঝি আমার কাছ থেকে দূরে চলে যায় । তোর মা কে ছাড়া তখন আমি এক মুহূর্ত থাকতে পারি না । আমি কড়া শাসনে রাখতে লাগলাম তোর মা কে । তোর মায়ের একটি বান্ধবি ছিলো নাম্বার ওয়ান দুষ্ট মেয়ে । আমি খুব ভয়ে থাকতাম ওই মেয়েকে নিয়ে ।
মনে মনে আমি বললাম ওই দুষ্ট মেয়েকে ও তো ছাড়ো নি ।
__ প্রথমে প্রথমে ওই কড়া শাসন এর জন্য খুকির সাথে আমার দূরত্ব তৈরি হতে লাগলো । আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম , তখন তোর মায়ের বয়স খুব কম ক্লাস এইট এ পড়ে । কিন্তু গ্রাম অঞ্চল তার উপর তোর মায়ের সরি... মানে গ্রোথ ও অনেক ভালো । এদিক সেদিক থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে লাগলো । এই মেয়ে বিয়ে হয়ে গেলে আমি থাকবো কি করে । সারাজীবন একা একা থেকে হঠাত করে নিজের কাছের কাউকে পেলে যা হয় আমারও তখন তাই হয়েছিলো । আরও তো কত মানুষ এর মেয়ে বিয়ে হয় ওরা কি এমন করে । তবে একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম খুকি এখন আমাকে ভয় পেলেও দূরে দূরে থেকে না বরং আমার কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে । কেমন করে যেন তাকায় ওর ওর আচরন কেমন জানি আর আগের মতো স্বাচ্ছন্দ্য নয় । একদিন দেখলাম আমার একটি সেন্ডো গেঞ্জি নিয়ে গালের সাথে লাগিয়ে রেখেছে । আমি পড়ে গেলাম আরও বিপদে । এই মেয়ে এমন করছে কেন ।
বুড়োর কথা শুনে আমি অবাক , ব্রা শুকা প্যানটি শুঁকে মাল ফেলা এই সব শুনেছি । মেয়েরাও কি ছেলদের জাঙ্গিয়া ধরে উত্তেজনা বোধ করে
__ একদিন ধরলাম ঠিক করে । তারপর যা বলল তা শুনে কি আমি আনন্দ করবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারলাম না । সেদিন ধমকে বিদায় করলেও । পড়ে রাতে অনেক ভেবে দেখলাম এই মেয়ে কে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না । আমি ওকে নিয়ে উচ্চ শিক্ষার কথা বলে কলকাতা চলে যাবো । জতদুর সম্ভব একে পড়াবো আর নিজের কাছে রাখবো । এতে তোর নানা ও কোন আপত্তি করবে না । বাকি টুকু তোকে বলা সম্ভব না যত কিছুই হোক তোর মা সে । তবে এ টুকু শুনে রাখ আমি খুকির উপর কখনি কোন কিছু চাপিয়ে দেইনি । কিন্তু ওকে রেখে কলকাতা গিয়ে ঠিকঠাক করার পর এসে শুনি তোর বাবার সাথে চলে গেছে । এমন অবাক আমি কোনদিন হইনি । তবে মনে নিয়েছিলাম । চেয়েছিলাম ভালো থাকুক । কিন্তু ভালো থাকার এই নমুনা । এতো বছর ওই চান্ডাল টার সাথে সংসার করেছে । আর তুই কি যেন বললি আমার উপর রাগ করে চলে গেছে কি নিয়ে রাগ করলো সেটাই তো আমি বুঝতে পারলাম না ।
যদিও বুড়ো অনেক রখাঠাক রেখে বলেছে তবুও আমার ঘটনা বুঝতে অসুবিধা হলো না ।
__ তুমি আম্মু কে আগের মতো শাসন করতে পারো না ? আমি প্রশ্ন করলাম
__ না না আগে আমায় বল খুকি কি নিয়ে রাগ করেছিলো ? আমি আজ ও জানতে পারলাম না ।
__ আহা রাখো সে কথা তুমি আম্মু কেই জিজ্ঞাস করে নিও । আমি বলতে চাইছি না এরা তো আবার প্রেমিক প্রেমিকা যদি বুড়ো জানতে পারে তাহলে হয়তো লজ্জায় আম্মুর সামনে যাবে না ।
__ না তুই বল এখনি আর তুই কি করে জানতে পারলি ?
না পেরে আমায় বলতেই হলো
__ আম্মু তোমার আর নানিজান এর ঘটনা জেনে ফেলেছিলো
বুড়োর প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো ভুত দেখার মতো । চোখ দুটি বড় হতে হতে যেন কোটর থেকে বেড়িয়ে যাবে । তারপর ধীরে ধীরে চয়াল ঝুলে পড়লো । একেবারে মিইয়ে গেলো বুড়ো । আমি বুঝলাম যে ভয় পাচ্ছিলাম সেটাই ঘটতে যাচ্ছে । তাই তারাতারি বললাম
__ তুমি তো আর পড়ে নানিজান এর সাথে কিছু করনি , ওটা হয়েছিলো যখন আম্মু ছোট ছিলো । আর আম্মু এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে ।
কিন্তু কোন প্রভাব পড়লো না বুড়োর উপর । বুড়ো ধীরে ধীরে উঠে দাড়িয়ে নিজের ঘরের ভেতর ঢুকে গেলো । তারপর দরজা লাগিয়ে দিলো। আমি দৌড়ে গেলাম । একি বুড়ো আবার অন্য কিছু করবে নাকি । অনেক দরজা ধাক্কালাম কিন্তু কোন লাভ হলো না । ভাগ্যিস টিনের ঘর ফুটো ফাটা অনেক । দেখলাম বুড়ো বিছানায় ঝিম মেরে বসে আছে । অনেক বোঝালাম বুড়ো কে , উঁহু কোন লাভ হলো না । আমাকে খালি হাতেই ফিরতে হলো । কেন যে বলতে গেলাম । নিজের গালেই নিজের সপাসপ চড় মারতে ইচ্ছে হচ্ছে । এসেছিলাম বুদ্ধি করতে গেলাম বুড়ো কে ভেঙ্গে দিয়ে । আমার মিনা আর শিউলি আনটিকে খুব দরকার এখন খুব ।