03-07-2020, 03:38 PM
(This post was last modified: 02-03-2021, 09:21 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।৪২।।
জুম্মাবার ছুটির দিন। সোফায় হেলান দিয়ে দিশাহারা ডা.মামুন এহসান। হায় দুনিয়াটায় এত অন্ধকার কি করে হয়ে গেল। খবরের কাগজে ঘটনাটা পড়ার পর থেকেই মা অনেক চেষ্টা করেন যোগাযোগ করতে,শেষে ছেলেকে পীড়াপিড়ি করেন, একবার গিয়ে খোজ নিতে। মনে হয়েছিল মা-র সব ব্যাপারে বাড়াবাড়ি। হসপিটালের চাকরি বললেই হুট করে চলে যাওয়া যায় না। শেষে এখানে এসে এমন খবর শুনতে হবে কল্পনাও করেননি ড.মামুন সাহেব। হায় আল্লা মার আশঙ্কা এমন করে সত্যি করে দিলে মেহেরবান?
চাকরি করার দরকার নেই কত করে বলেছিল মা,বাবার আস্কারাতে বাড়ি ছেড়ে অপা এতদুরে চলে এল। কি সুন্দর গানের গলা,চেষ্টা করলেই রেকর্ড করে কত নাম হয়ে যেত এতদিন তা না কলেজের দিদিমণি। এতকাণ্ড হয়ে গেছে বাড়িতে একটা খবর পর্যন্ত দেয়নি। তার উপর নুসরতবানুর কাছে বিয়ের ব্যাপার শুনে একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। অপার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল? আসামীদের ধরতে সাহায্য করেছে ভাল কথা। কিছু টাকা দিলেই হয়। তাই বলে বিয়ে?
— ভাইয়া বিয়ের কথা তুই এখন আম্মুরে বলবি না– আমার কসম।
— আপু একটা পিয়নের মধ্যে তুই কি দেখলি– ?
— সে তুই বুঝবি না।
— সে কি ধর্মান্তরিত হতে রাজি হয়েছে?
— না,সে যা তাই থাকতে চায়। সে নিজেরে * মনে করে না,'. হইতেও চায় না।
— এইটা কি সম্ভব?
— কেন সম্ভব না? ফিরোজা বেগমের স্বামী কমল দাশগুপ্তর কথা শুনিস নি? বিশ্বাস কর ভাইয়া তোর অপা এমন কিছু করবো না যাতে তোদের মাথা হেট হয়।
প্যালেস হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট হলে বিয়ে হবে। সামান্য কয়েকজন আমন্ত্রিত। উকিলসাহেব এসে গেছেন, রেজিস্টার সাহেবও। ডিএম সাহেবাই সব ব্যাবস্থা করছেন। বিয়ের সাজে দারুণ লাগছে অপাকে যেন বেহেস্তের হুরি। নুসরত জাহান যখন গুলনারকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এ ঘরে এল দেখে কেদে ফেললেন ড.মামুন।
— ভাইয়া প্লিজ শান্ত হ,তুই এমুন করলে আমি কি করুম বলতো?
তিনজনে যখন প্যালেস হোটেলে পৌছালো,এগিয়ে এসে অভ্যর্থনা করলেন ডিএম সাহেবা। নুসরত আলাপ করিয়ে দিল,অপার ভাই ড.মামুন এহসান। আর ইনি আমাদের বস জেনিফার আলম সিদ্দিকি। মামুনের চোখ খুজছিল বলদেবকে,কি দিয়ে লোকটা তার অপাকে ভোলালো? বলদেব আজ গুলনারের দেওয়া শার্ট প্যান্ট পরেছে। দেখলে মনে হয় যেন কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির এক্সিকিউটিভ। নুসরত ডেকে আলাপ করিয়ে দিল,ড.মামুন– আপনার বেগমের ভাই। আর ইনি বলদেব সোম।
চেহারা দেখে ড.মামুনের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হয়। দারোগা পরিবার ঝেটিয়ে এসেছে। মুমতাজ কিছুটা অখুশি গুলনারকে দেখে। এতদিন ধারণা ছিল সে খুব সুন্দরি,গুলনারকে দেখে ধারণার বেলুনটার হাওয়া বেরিয়ে একেবারে চুপসে গেছে। রহিমা বেগম এগিয়ে এসে গুলনারের চিবুক ছুয়ে আশির্বাদ করেন। গুলনার কদমবুসি করেন। সামনা সামনি বসানো হল পাত্র পাত্রীকে। ডিএম সাহেবা ডাকলেন,উকিল সাহেব খোৎবার দরকার নাই,কলমা পড়াইয়া দেন।
উকিলের পছন্দ না হলেও ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবার মুখের উপর কিছু বলা নিরাপদ মনে করেন না। শুনেছেন এই ডিএমকে দেখলে দোজখের শয়তানের বাহ্য হয়ে যায়। গুলনারকে বলল,মোতরমা বলেন,আমিই অমুকের কন্যা অমুক এত দেন মোহরের বিনিময়ে আমাকে আপনার যওজিয়াত সমর্পণ করলাম।
গুলনার মৃদু স্বরে বলেন,আমি রিয়াজুদ্দিন এহসানের কন্যা গুলনার এহসান মন্টী সহস্র দেন মোহরের বিনিময়ে আমাকে আপনার যওজিয়াত সমর্পণ করলাম।
বলদেবকে উকিল সাহেব বলে,এইবার আপনি বলেন,আমি অমুকের পুত্র অমুক কবুল করলাম।
বলদেব এপাশ ওপাশ তাকাতে থাকে। রহিমা বেগম নীচু হয়ে ফিসফিসিয়ে বলেন,বলো বাজান বলো– ।
— এই কথাও মুখ ফুটে বলার দরকার? বলদেব জিজ্ঞেস করে।
ঘোমটার মধ্যে গুলনার মিটমিট করে হাসেন। রহিমা বেগম বলেন,হ্যা বাজান এইটা নিয়ম বলো– ।
বলদেব গড়্গড় করে বলে,আমি বসুদেব সোমের পুত্র বলদেব সোম সর্বান্তকরণে কবুল করলাম। সবার বিশ্বাস হইছে?
খুশির গুঞ্জন উঠোলো। ডিএম সাহেবা বললেন,আসেন রেজিস্টার সাহেব এইবার আপনি শুরু করেন। দুই জন করে চার জন সাক্ষী লাগবে। ডিএম সাহেবা বললেন, ড.মামুন আপনি আর নুসরত পাত্রী পক্ষ আর আম্মুজান আর আমি পাত্র পক্ষের– ও কে?
সই সাবুদের পর সবাই ডাইনিং হলে চলে গেল। হোটেল মালিক স্বয়ং উপস্থিত থেকে আপ্যায়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। ডিএম সাহেবার ব্যাপার বলে কথা। জেনিফারের নজরে পড়ে নুসরত জাহান কিছুটা বিমর্ষ। এগিয়ে গিয়ে বললেন,কি ম্যাডাম বন্ধুর জন্য মন খারাপ?
— না তা নয় মানে– ।
— মানেটা বলতে আপত্তি আছে?
— মণ্টি-অপা চলে গেলে একা একা থাকা– পাড়াটা নির্জন।
জেনিফার আলম এটাই সন্দেহ করেছিলেন। পাড়াটা নির্জন, সান্ত্বনা দেবার জন্য বলেন, কটা দিন কষ্ট করে চালিয়ে নিন। অফিসের আরো কাছে অ্যাপার্টমেন্টে সিঙ্গেল রুমের ব্যবস্থা করছি। আপনার বন্ধু রিয়াজসাহেবের মেয়ে?
— কেন আপনি ঊনাকে চিনেন?
— খুব ভাল করে চিনি।
রাতের গাড়িতে অপাকে নিয়ে চলে গেলেন ড.মামুন। যাবার আগে একান্তে গুলনার বলদেবকে বলেন,সাবধানে থাকবেন। পড়াশুনার ঢিল দিবেন না। আর বসকে অত তোয়াজ করার দরকার নাই। এক সপ্তাহের মধ্যে আপনারে নিয়ে যাবো।
নুসরতের চিন্তা তবু যায় না। জেনিফার আলমের কাছে বলদেব এগিয়ে এসে বলে,স্যর আমরা আসি?
— সাধারণ পোষাকেই তোমাকে মানায়। কাল অফিসে দেখা হবে?
তার ছাত্রটি আশপাশে ঘুরছিল মাস্টারসাবকে এই পোষাকে দেখে কাছে ঘেষতে সাহস করছিল না। মনুকে কাছে ডেকে বলদেব বলে, মনু আমারে কেমন দেখতে লাগছে? ভাল না?
— খুব ভাল দেখায়,যাত্রা দলের রাজার মত। হাসতে হাসতে বলল মনু।
কথাটা বলদেবের হৃদয় ছুয়ে যায়। বিধাতা শিশুদের মুখ দিয়ে কথা বলে। মনুর সামনে বসে পড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বিড়বিড় করে বলে,সাজা রাজারা মসনদ দখল করে বসেছে আসল রাজাদের আজ আর কদর নাই। মনুরে বিশ্বাস করো মনা,আমি রাজা সাজতে চাইনি– ।
দূর থেকে মুমতাজ ডিএম সাহেবা সব লক্ষ্য করছিল। মুমতাজ ছেলেকে ডাকে। মনুকে জিজ্ঞেস করে,মাস্টারসাব কি বলতেছিল?
— উলটাপালটা বলে– রাজা সাজতে চাই না– হি-হি-হি– ।
কথাটা জেনিফার আলমের কানে যেতে মনে মনে ভাবেন ” প্রকৃতির কোলে পাতা মেলে খেলছিল যে গাছ আমি কি তাকে তুলে এনে মানুষের বাহারী টবে রোপণ করলাম? ” অস্বস্তি বোধ করেন জেনিফার আলম। বেল্টে বাধা নিত্য গোস্ত খাওয়া কুকুর আর পরিশ্রম করে আহার সংগ্রহ করে যে বন্য কুকুর তাদের মধ্যে সুখী কে? তাদের মনের কথা কি আমরা বোঝার চেষ্টা করেছি?
হন্তদন্ত হয়ে ফিরে আসে গুলনার। বলদেবকে ডেকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে বললেন,মনে আছে একটু আগে কি কবুল করেছেন? দুশ্চিন্তা নিয়ে যাচ্ছি।
বলদেব হাসে বলে,বিশ্বাস হারানো পাপ।
জেনিফার আলম দূর থেকে সব লক্ষ্য করছেন।মনের মধ্যে নানা চিন্তার ভীড়।নিজে মেয়ে হয়েও মনে হচ্ছে মেয়েরা খুব স্বার্থপর।
জুম্মাবার ছুটির দিন। সোফায় হেলান দিয়ে দিশাহারা ডা.মামুন এহসান। হায় দুনিয়াটায় এত অন্ধকার কি করে হয়ে গেল। খবরের কাগজে ঘটনাটা পড়ার পর থেকেই মা অনেক চেষ্টা করেন যোগাযোগ করতে,শেষে ছেলেকে পীড়াপিড়ি করেন, একবার গিয়ে খোজ নিতে। মনে হয়েছিল মা-র সব ব্যাপারে বাড়াবাড়ি। হসপিটালের চাকরি বললেই হুট করে চলে যাওয়া যায় না। শেষে এখানে এসে এমন খবর শুনতে হবে কল্পনাও করেননি ড.মামুন সাহেব। হায় আল্লা মার আশঙ্কা এমন করে সত্যি করে দিলে মেহেরবান?
চাকরি করার দরকার নেই কত করে বলেছিল মা,বাবার আস্কারাতে বাড়ি ছেড়ে অপা এতদুরে চলে এল। কি সুন্দর গানের গলা,চেষ্টা করলেই রেকর্ড করে কত নাম হয়ে যেত এতদিন তা না কলেজের দিদিমণি। এতকাণ্ড হয়ে গেছে বাড়িতে একটা খবর পর্যন্ত দেয়নি। তার উপর নুসরতবানুর কাছে বিয়ের ব্যাপার শুনে একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। অপার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল? আসামীদের ধরতে সাহায্য করেছে ভাল কথা। কিছু টাকা দিলেই হয়। তাই বলে বিয়ে?
— ভাইয়া বিয়ের কথা তুই এখন আম্মুরে বলবি না– আমার কসম।
— আপু একটা পিয়নের মধ্যে তুই কি দেখলি– ?
— সে তুই বুঝবি না।
— সে কি ধর্মান্তরিত হতে রাজি হয়েছে?
— না,সে যা তাই থাকতে চায়। সে নিজেরে * মনে করে না,'. হইতেও চায় না।
— এইটা কি সম্ভব?
— কেন সম্ভব না? ফিরোজা বেগমের স্বামী কমল দাশগুপ্তর কথা শুনিস নি? বিশ্বাস কর ভাইয়া তোর অপা এমন কিছু করবো না যাতে তোদের মাথা হেট হয়।
প্যালেস হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট হলে বিয়ে হবে। সামান্য কয়েকজন আমন্ত্রিত। উকিলসাহেব এসে গেছেন, রেজিস্টার সাহেবও। ডিএম সাহেবাই সব ব্যাবস্থা করছেন। বিয়ের সাজে দারুণ লাগছে অপাকে যেন বেহেস্তের হুরি। নুসরত জাহান যখন গুলনারকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এ ঘরে এল দেখে কেদে ফেললেন ড.মামুন।
— ভাইয়া প্লিজ শান্ত হ,তুই এমুন করলে আমি কি করুম বলতো?
তিনজনে যখন প্যালেস হোটেলে পৌছালো,এগিয়ে এসে অভ্যর্থনা করলেন ডিএম সাহেবা। নুসরত আলাপ করিয়ে দিল,অপার ভাই ড.মামুন এহসান। আর ইনি আমাদের বস জেনিফার আলম সিদ্দিকি। মামুনের চোখ খুজছিল বলদেবকে,কি দিয়ে লোকটা তার অপাকে ভোলালো? বলদেব আজ গুলনারের দেওয়া শার্ট প্যান্ট পরেছে। দেখলে মনে হয় যেন কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির এক্সিকিউটিভ। নুসরত ডেকে আলাপ করিয়ে দিল,ড.মামুন– আপনার বেগমের ভাই। আর ইনি বলদেব সোম।
চেহারা দেখে ড.মামুনের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হয়। দারোগা পরিবার ঝেটিয়ে এসেছে। মুমতাজ কিছুটা অখুশি গুলনারকে দেখে। এতদিন ধারণা ছিল সে খুব সুন্দরি,গুলনারকে দেখে ধারণার বেলুনটার হাওয়া বেরিয়ে একেবারে চুপসে গেছে। রহিমা বেগম এগিয়ে এসে গুলনারের চিবুক ছুয়ে আশির্বাদ করেন। গুলনার কদমবুসি করেন। সামনা সামনি বসানো হল পাত্র পাত্রীকে। ডিএম সাহেবা ডাকলেন,উকিল সাহেব খোৎবার দরকার নাই,কলমা পড়াইয়া দেন।
উকিলের পছন্দ না হলেও ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবার মুখের উপর কিছু বলা নিরাপদ মনে করেন না। শুনেছেন এই ডিএমকে দেখলে দোজখের শয়তানের বাহ্য হয়ে যায়। গুলনারকে বলল,মোতরমা বলেন,আমিই অমুকের কন্যা অমুক এত দেন মোহরের বিনিময়ে আমাকে আপনার যওজিয়াত সমর্পণ করলাম।
গুলনার মৃদু স্বরে বলেন,আমি রিয়াজুদ্দিন এহসানের কন্যা গুলনার এহসান মন্টী সহস্র দেন মোহরের বিনিময়ে আমাকে আপনার যওজিয়াত সমর্পণ করলাম।
বলদেবকে উকিল সাহেব বলে,এইবার আপনি বলেন,আমি অমুকের পুত্র অমুক কবুল করলাম।
বলদেব এপাশ ওপাশ তাকাতে থাকে। রহিমা বেগম নীচু হয়ে ফিসফিসিয়ে বলেন,বলো বাজান বলো– ।
— এই কথাও মুখ ফুটে বলার দরকার? বলদেব জিজ্ঞেস করে।
ঘোমটার মধ্যে গুলনার মিটমিট করে হাসেন। রহিমা বেগম বলেন,হ্যা বাজান এইটা নিয়ম বলো– ।
বলদেব গড়্গড় করে বলে,আমি বসুদেব সোমের পুত্র বলদেব সোম সর্বান্তকরণে কবুল করলাম। সবার বিশ্বাস হইছে?
খুশির গুঞ্জন উঠোলো। ডিএম সাহেবা বললেন,আসেন রেজিস্টার সাহেব এইবার আপনি শুরু করেন। দুই জন করে চার জন সাক্ষী লাগবে। ডিএম সাহেবা বললেন, ড.মামুন আপনি আর নুসরত পাত্রী পক্ষ আর আম্মুজান আর আমি পাত্র পক্ষের– ও কে?
সই সাবুদের পর সবাই ডাইনিং হলে চলে গেল। হোটেল মালিক স্বয়ং উপস্থিত থেকে আপ্যায়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। ডিএম সাহেবার ব্যাপার বলে কথা। জেনিফারের নজরে পড়ে নুসরত জাহান কিছুটা বিমর্ষ। এগিয়ে গিয়ে বললেন,কি ম্যাডাম বন্ধুর জন্য মন খারাপ?
— না তা নয় মানে– ।
— মানেটা বলতে আপত্তি আছে?
— মণ্টি-অপা চলে গেলে একা একা থাকা– পাড়াটা নির্জন।
জেনিফার আলম এটাই সন্দেহ করেছিলেন। পাড়াটা নির্জন, সান্ত্বনা দেবার জন্য বলেন, কটা দিন কষ্ট করে চালিয়ে নিন। অফিসের আরো কাছে অ্যাপার্টমেন্টে সিঙ্গেল রুমের ব্যবস্থা করছি। আপনার বন্ধু রিয়াজসাহেবের মেয়ে?
— কেন আপনি ঊনাকে চিনেন?
— খুব ভাল করে চিনি।
রাতের গাড়িতে অপাকে নিয়ে চলে গেলেন ড.মামুন। যাবার আগে একান্তে গুলনার বলদেবকে বলেন,সাবধানে থাকবেন। পড়াশুনার ঢিল দিবেন না। আর বসকে অত তোয়াজ করার দরকার নাই। এক সপ্তাহের মধ্যে আপনারে নিয়ে যাবো।
নুসরতের চিন্তা তবু যায় না। জেনিফার আলমের কাছে বলদেব এগিয়ে এসে বলে,স্যর আমরা আসি?
— সাধারণ পোষাকেই তোমাকে মানায়। কাল অফিসে দেখা হবে?
তার ছাত্রটি আশপাশে ঘুরছিল মাস্টারসাবকে এই পোষাকে দেখে কাছে ঘেষতে সাহস করছিল না। মনুকে কাছে ডেকে বলদেব বলে, মনু আমারে কেমন দেখতে লাগছে? ভাল না?
— খুব ভাল দেখায়,যাত্রা দলের রাজার মত। হাসতে হাসতে বলল মনু।
কথাটা বলদেবের হৃদয় ছুয়ে যায়। বিধাতা শিশুদের মুখ দিয়ে কথা বলে। মনুর সামনে বসে পড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বিড়বিড় করে বলে,সাজা রাজারা মসনদ দখল করে বসেছে আসল রাজাদের আজ আর কদর নাই। মনুরে বিশ্বাস করো মনা,আমি রাজা সাজতে চাইনি– ।
দূর থেকে মুমতাজ ডিএম সাহেবা সব লক্ষ্য করছিল। মুমতাজ ছেলেকে ডাকে। মনুকে জিজ্ঞেস করে,মাস্টারসাব কি বলতেছিল?
— উলটাপালটা বলে– রাজা সাজতে চাই না– হি-হি-হি– ।
কথাটা জেনিফার আলমের কানে যেতে মনে মনে ভাবেন ” প্রকৃতির কোলে পাতা মেলে খেলছিল যে গাছ আমি কি তাকে তুলে এনে মানুষের বাহারী টবে রোপণ করলাম? ” অস্বস্তি বোধ করেন জেনিফার আলম। বেল্টে বাধা নিত্য গোস্ত খাওয়া কুকুর আর পরিশ্রম করে আহার সংগ্রহ করে যে বন্য কুকুর তাদের মধ্যে সুখী কে? তাদের মনের কথা কি আমরা বোঝার চেষ্টা করেছি?
হন্তদন্ত হয়ে ফিরে আসে গুলনার। বলদেবকে ডেকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে বললেন,মনে আছে একটু আগে কি কবুল করেছেন? দুশ্চিন্তা নিয়ে যাচ্ছি।
বলদেব হাসে বলে,বিশ্বাস হারানো পাপ।
জেনিফার আলম দূর থেকে সব লক্ষ্য করছেন।মনের মধ্যে নানা চিন্তার ভীড়।নিজে মেয়ে হয়েও মনে হচ্ছে মেয়েরা খুব স্বার্থপর।