Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 2.78 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কাজল নদী Written By Tumi_je_amar
#31
(#০২)

পরের দুদিন ট্রেনিং হয়। সব মেয়েরাই খুব খুশী। জীবনে নতুন কিছু শিখলে সবাই সব সময় খুশী হয়। কলেজ বা কলেজের পরে কেউ যদি না শিখতে পারে তাতে ছাত্র যেমন দায়ী, তার শিক্ষকও তার থেকে বেশী দায়ী। শেখানোর পরে ছাত্রের কি লাভ সেটা না বুঝিয়ে আমরা শেখাতে চাই। তাই প্রায় কোন ছাত্রই ভাল করে শেখে না। যাই হোক এটা ট্রেনিং নিয়ে গল্প নয়। তাই এই আলোচনা আমরা অন্য কোথাও করবো। 

মানসী – বাপরে তুমি আবার এইসব কিভাবে শিখলে ?

স্বপন – আমি আমার অফিসে নতুন ইঞ্জিনিয়ারদের এই ট্রেনিং দেই।

মানসী – কিন্তু তুমি কি করে শিখলে ?
স্বপন – আমি ট্রেনিং দেবার ট্রেনিং নিয়েছি

অলকা – তবে তো আপনার বৌদিকে সামলানো খুব সোজা

স্বপন – দেখো থিওরি হিসাবে বৌও একজন গ্রাহক। কিন্তু আমি যা যা শিখেছি বা তোমাদের শিখিয়েছি তাতে বৌ বা স্বামী সামলানো যাবে না। কিছু কিছু স্বামীকে কন্ট্রোল করা গেলেও বৌ এর ওপর এই সবের কোন এফেক্ট নেই। 

নয়নিকা – তবে ঠিক আছে। আমার বয় ফ্রেন্ড যদি কোনদিন এই ট্রেনিং পেয়েও যায়, আমার কিছু করতে পারবে না।

মানসী – হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি ওই আনন্দেই থাকো।
বর্ণিকা – তোকে কন্ট্রোল করার ট্রেনিং শুভ কে আমি দিয়ে দেব।

নয়নিকা – একদম না। শুভর সাথে কথা বলতেই দেব না তোকে।

লতিকা – তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে কথা বলব না। 
বর্ণিকা – তোর ভয় নেই, আমরা শুধু কথা বলব। তোর শুভর কোথাও হাত লাগাব না।

অনেক দিন পরে মানসী নতুন অনেক কিছু শেখে। স্বপন আর চারটে মেয়ের সাথে মন খুলে আড্ডা মারে। মেয়ে চারটে চলে গেলে স্বপন, মানসীকে নিয়ে বড়দার সাথে দেখা করতে যায়। হতে পারে বড়দা স্বার্থপর আর দাদাগিরি করে। তবুও নিয়ম মত মানসীর অভিভাবক ওই বড়দাই। স্বপন বড়দাকে ওর আর মানসীর বিজনেস প্ল্যান সব কিছু বুঝিয়ে দেয়। আর অপ্রত্যক্ষ ভাবে এটাও বলে দেয় যে এটা শুধুই মানসীর ব্যবসা। স্বপন শুধু ওকে সাহায্য করছে শুরু করার সময়। স্বপন ব্যবসার কোন লাভের অংশ নেবে না। বড়দাও হাঁফ ছেড়ে বাচেন। 

বড়দা – মানসী স্বপন যে যে ভাবে বলেছে, একদম সেই ভাবেই চালাবি।
মানসী – ঠিক আছে দাদা।

বড়দা – কোন কিছু হলেই স্বপনের সাথে আলোচনা করবি।

স্বপন – সেটা করতেই পারে। কিন্তু আপনারাও এতদিন ধরে অন্যান্য ব্যবসা করছেন। আপনিও ওকে গাইড করতে পারবেন।

বড়দা – এই ব্যবসা আমাদের ব্যবসার থেকে অনেক আলাদা ভাবে শুরু করছে।

স্বপন – তা হতে পারে। তবু সব ব্যবসার একটাই লক্ষ – কি ভাবে টাকা উপার্জন করবো। সেটা আপনি ভালই বোঝাতে পারবেন। 

বড়দা – তা তো বটেই। 

হৈ হৈ করে একটা শুভ দিন দেখে মানসীর “সুলগ্না” শুরু হয়। মোটামুটি ছ’ মাস লাগে বিউটি পার্লার দাঁড়িয়ে যেতে। এখন “সুলগ্না” ওই এলাকার যথেষ্ট পপুলার পার্লার। মানসী কালো হলেও মেয়েদের সাজায় ভাল। একজন গ্রাহক একবার ওই পার্লারে এলে সে আর অন্য কোথাও যায় না। ওই চারটে মেয়েও খুব ভাল ভাবে কাজ করে। মানসী পয়সার দিক থেকে পুরোপুরি স্বনির্ভর হয়ে যায়। কিন্তু সংসারে এখনও বড়দার অনুমতি ছাড়া কিছু করতে পারে না। 

মানসী সকালে উঠে কলেজে যায়। সব মেয়েরা পার্লার চালায়। কলেজ থেকে ফিরেই পার্লারে যায় আর রাত ন’ টা পর্যন্ত পার্লারেই থাকে। বেশ আনন্দেই ছিল শুধু একটা ব্যাপার ছাড়া। সেই ব্যাপারটা হল সেই বড়দার সেই দাদাগিরি। পার্লারে যা আয় হত পুরোটাই বড়দা নিয়ে নিতেন। বলতেন মানসীর ভবিস্যতের জন্য রেখে দিচ্ছেন। কিন্তু কারো সাহস ছিল না জিজ্ঞাসা করার যে উনি টাকাটা কোথায় কি ভাবে রাখছেন। মানসীকে একটা নাম মাত্র হাত খরচা দিতেন। উনি বলতেন মানসীর আর কি খরচা ? খাওয়া দাওয়া বাড়ীতে। ওর কোন নেশার খরচও নেই বা অন্য কোথাও খরচ করার দরকার হয় না। তো মানসী টাকা নিয়ে কি করবে। আর একটা মেয়ে টাকার বোঝেই বা কি !

মানসী স্বনির্ভর হয় কিন্তু “অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (Financial Freedom)” পায় না।

মানসীর পার্লার চালু হবার প্রায় একবছর পরে স্বপন আসে দিল্লি থেকে। মানসী খুব আনন্দের সাথে স্বপন আর নিহারিকা কে পার্লারে নিয়ে যায়। সেদিন শনিবার আর সময় দুপুরবেলা। কোন কাস্টোমার ছিল না। 

মানসী – চল স্বপন আজ তোমাকে সাজাই
স্বপন – কি করবে ?

মানসী – দেখো না কি করি
স্বপন – নিজেকে আয়নায় চিনতে পারবো তো ?

অলকা আর নয়নিকা বলে যে ওদের পার্লারে ছেলেদের ভেতরে ঢোকাই নিষেধ আর সেখানে স্বপনকে ওখানে বিউটি ট্রিটমেন্ট দেবে কি করে।

মানসী – দেখো স্বপন আমার বন্ধু। আমি আজ যেখানে পৌঁছেছি সেটা স্বপন না থাকলে হত না।

স্বপন – আমি কিছুই করিনি তোমার এই পার্লারের জন্য। তোমার বাবা তোমাকে দোকান দিয়েছেন। তুমি তোমার টাকায় ব্যবসা করছ। আমি কি করলাম।

মানসী স্বপনকে জড়িয়ে ধরে আর বলে, “তোমার বন্ধুত্ব ছাড়া এই মানসীই তৈরি হত না। তাই যা কিছু আমি করি তোমার ভরসা আর তোমার দেওয়া বুদ্ধিতেই করি। আর একথা বলা বাহুল্য যে তোমার ট্রেনিং আমাদের খুব কাজে দেয়।”

স্বপন – এটা তুমি বাড়িয়ে বলছ
মানসী – তুমি যে আমার জীবনে কি সেটা শুধু আমিই জানি।

নিহারিকা – রাঙ্গাদি সেটা আমিও বুঝি।

তারপর মানসী নিজে স্বপনের ফেসিয়াল করে দেয়। মুখে, মাথায় আরও কি সব করে স্বপন সেটা বোঝে না। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে কাজ করে যাচ্ছিল। 

বর্ণিকা – এবার তুমি ছাড়ো দিদি, বাকিটা আমি করে দিচ্ছি

মানসী – আমার স্বপনের গায়ে তোমরা কেউ হাত দেবে না।

এই বলে সবার সামনেই মানসী স্বপনের ঠোঁটে চুমু খায়।

ওই মেয়েগুলো হতবাক হয়ে যায়, এটা আবার কিরকম বন্ধুত্ব! ওরা নিজেদের মধ্যে ফিস ফিস করে কিছু বলতে থাকে। 

মানসী – এই তোরা কি বলছিস রে ?
নয়নিকা – না তুমি যে ....

মানসী – আমি যে কি ?
বর্ণিকা – তুমি যে স্বপন দা কে চুমু খেলে তাই !

মানসী – চুমু খেলাম তো কি হয়েছে ?
নয়নিকা – কখনও কোন বন্ধুকে ওইভাবে চুমু খেতে দেখিনি, তাই।

নিহারিকা – ওরা দুজন কত বছর ধরে চুমু খায়
বর্ণিকা – আর তুমি কিছু বল না ?

নিহারিকা – চুমু খায় তো কি হয়েছে ?
নয়নিকা – তোমার বরের ঠোঁটে চুমু খেল আর তুমি কিছু বলবে না ?

নিহারিকা – স্বপন আর রাঙ্গাদির বন্ধুত্ব গঙ্গা জলের মত পবিত্র। সেখানে চুমু খেলে কিচ্ছু অপবিত্র হয় না।

অলকা – আমরা বুঝতে পারিনা। 

লতিকা – এর মধ্যে আবার বোঝার কি আছে। আমি প্রথম যেদিন স্বপনদাকে দেখি সেদিনই বুঝেছি যে দাদা 

মানসীদি কে খুব ভালবাসে। আর ভালবাসায় চুমু খেতেই পারে।

মানসী – আমাকে স্বপনের মতো ভাল কেউ বাসে না।

বর্ণিকা – আমি নিহারিকা দিদিকে দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।

নিহারিকা – তোমরা স্বপনকে জানোনা তাই অবাক হচ্ছো। ওর কাছেই আমি শিখেছি ভালবাসা কাকে বলে।

অলকা – ভালবাসা কাকে বলে দিদি ?

নিহারিকা – সে আমি বোঝাতে পারবো না। আমি ট্রেনিং দিতে পারি না।

বর্ণিকা – তাও তোমরা কি ভাব সেটা একটু বল

নিহারিকা – আমি কিছু বলার আগেই স্বপন বুঝে যায় যে আমি কি চাই। আমার শরীর খারাপ হলে বা অন্য কোন সমস্যা হলে আমার স্বপন আমার যে যত্ন নেয় সেইরকম আর কেউ করেনি। ধর আমি যদি গরমকালে ফুলকপি খেতে চাই তো স্বপন যেখান থেকে হোক যেভাবেই হোক জোগাড় করে আনবে। স্বপনের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য আমাকে আর আমার মেয়েকে ভাল ভাবে রাখা। ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে যে শান্তি সেটা আর কোথাও পাইনা। ও আমাকে ফুলসজ্জার রাতে যেভাবে আদর করেছিলো সো সময়েই সে ভাবেই আদর করে। আমি ওর কাছে এখন পর্যন্ত পুরানো হয়ে যাই নি।

অলকা – স্বপনদা তোমাকে I Love you বলে ?

নিহারিকা – মুখে হয়তো মাসে একবার বলে। কিন্তু ব্যবহারে দিয়ে ২৫ বার বলে

লতিকা – স্বপন দা আপনি কিছু বলুন
স্বপন – আমি কি বলব ?

লতিকা – ভালবাসা নিয়ে কিছু বলুন

স্বপন – ঠিক আছে আবার একদিন ট্রেনিং দেব। আমাকে ভালবাসার ট্রেনিং প্রোগ্রাম বানাতে দাও।

সবাই হেঁসে ওঠে।

লতিকা – না না সে দরকার নেই। এমনি বলুন।

স্বপন – মোদ্দা কথা হল তোমরা একে অন্যের Care কতটা করো। তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো তবে তার জন্য Concerned থাকবে। তোমার ভালবাসার জীবন আর তোমার জীবন কখনও আলাদা হবে না।

লতিকা – বুঝলাম। আচ্ছা দাদা ভালবাসায় সেক্সের ভুমিকা কি ?

স্বপন – সেক্সের সাথে ভালবাসার সেইরকম কোন সম্পর্কই নেই। আমরা সবাই বিয়ের পরে সেক্স করি আর বাচ্চার জন্ম দেই। তাই ভাবি সেক্স আর ভালবাসা এক। অনেকেই ভাবে স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে সেক্স না থাকলে ভালবাসা বেশী দিন টেঁকে না। আমাদের ভালবাসা সেক্সের ওপর নির্ভরশীল নয়। 

বর্ণিকা – বিয়ের আগে সেক্স করলে ?
স্বপন – ইচ্ছা হলে করবে। কিছুই হবে না তাতে

বর্ণিকা – আপনার মেয়ে যদি বড় হয়ে বিয়ের আগে সেক্স করে ?

স্বপন – আমার মেয়ের ১৮ বছর বয়সের পরে বা কলেজের গ্রাজুয়েশনের পরে কি করবে সেটা ওর চিন্তা হবে। আমি ওর মধ্যে কিচ্ছু বলব না। ওর যদি ইচ্ছা হয় কারো সাথে সেক্স করতে তো করবে।

নিহারিকা – আর আমি চাইব সেটা এখানে ওখানে না করে আমাদের বাড়ীতে বা ছেলেটার বাড়ীতে যেন করে।

অলকা – বাপরে আমরা এইরকম চিন্তাই করতে পারি না।

নিহারিকা – সেটাই তো বলছি। স্বপনের কাছে সেক্স আর ভালবাসা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা। আমিও অন্য ছেলের সাথে সেক্স করেছি। আর তোমাদের স্বপনদাও করেছে। কত জনের সাথে সেটা জানিনা। কিন্তু সেসব শুধুই সেক্স ছিল। ভালবাসা শুধু আমার আর ওর মধ্যে।

মানসী – এই সব কথা এখানে বলছিস কেন ?

নিহারিকা – আমরা আমাদের জীবনের কোন কিছুই লুকিয়ে রাখি না। তুই যে স্বপন কে জড়িয়ে ধরিস বা চুমু খাস সেটা কি লুকিয়ে রাখিস ?

মানসী – কেন লুকাবো ?
নিহারিকা – আমিও তাই বলি কেন লুকাবো ?

নয়নিকা – আজ স্বপনদার কাছে ভালবাসার অন্য মানে বুঝলাম। স্বপন দা তোমাকে একটা চুমু খেতে দেবে ?

মানসী – একদম না। আমার স্বপনের দিকে চোখ তুলেও তাকাবি না।

নয়নিকা – না দিদি কিচ্ছু করবো না। আমি শুধু তোমার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য বললাম।

মানসী – দেখ আমি নিহারিকা বা স্বপনের মতো মহান নই। আমার সামনে আমার স্বপনের গায়ে আর কাউকে হাত দিতে দেব না। 

বর্ণিকা – স্বপন দা কি তোমার ?

মানসী – স্বপন প্রথমে নিহারিকার। কিন্তু তার পরে আমারও। 

এতক্ষনে স্বপনের সাজুগুজু শেষ হয়ে যায়। নিহারিকা বলে দেখে একটু বেশী ভদ্র ভদ্র মনে হচ্ছে। বিকাল হয়ে গিয়েছিলো আর অন্য গ্রাহকদের আসার সময় হয়ে গিয়েছিলো। তাই সেদিনকার আড্ডা শেষ করে স্বপন রা চলে যায়। মানসীর মনে আনন্দ আর দুঃখ দুটোই থাকে। 

সেদিন রাতে মানসীর ঘুম আসেনা। মানসী জানত না যে স্বপন আর নিহারিকার মধ্য সেক্সের সম্পর্ক ওইরকম খোলা মেলা। ও তখন বুঝতে পারে কোন ভরসায় পাটনায় নিহারিকা ওকে আর স্বপন কে সব কিছু করতে বলে রেখে গিয়েছিল। একবার ভাবে সেই রাতে স্বপনের সাথে সেক্স করলেই ভাল হত। তারপরেই ভাবে স্বপনরা যাদের সাথে সেক্স করে তাদের ভাল বাসে না। ও তো স্বপনকে ভালবাসে। স্বপনও ওকে ভালবাসে। আর ওদের ভালবাসার জন্য সেক্সের দরকার নেই। আর স্বপনও কোনদিন ওর মানসীর সাথে সেক্স করবে না। মানসীর মন থেকে ক্ষনিকের দুঃখটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। ও নিজের মনে বলে ওঠে, “স্বপনের ভালবাসা বোঝার জন্য আমার সেক্সের দরকার নেই। আমাদের ভালবাসায় কোনদিন সেক্স আসতেই দেব না।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজল নদী Written By Tumi_je_amar - by Kolir kesto - 03-07-2020, 12:36 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)