03-07-2020, 11:29 AM
(This post was last modified: 03-07-2020, 11:34 AM by pnigpong. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব এক। ডায়রির পাতা (#1-#1)
সকাল থেকে ঝিরঝির বৃষ্টিতে ঠিক ভাবে চোখ খুলতে ইচ্ছে করে না, মনে হয় যদি কেউ থাকত তাহলে বিছানায় চা দিয়ে যেত। এসিটা রাতে আর বন্দ করাই হয়নি, পাতলা কম্বলটা আরো টেনে নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পরা ছাড়া আর কিছুই ভেবে পেল না। গত পরশুদিন অভিনন্দনের বাবা সপ্তাহ দুয়েকের জন্য অফিস টুরে গেছে তাই বাড়িটা একদম খালি, যা খুশি তাই করা যায়। বিশাল বিলাসবহুল ফ্লাট একদম ফাঁকা তাই দেয়াল গুলো মাঝে মাঝেই ওর গলা চেপে ধরে। এই বাড়িতে ঢুকলে মনে হয় যেন সোনার খাঁচায় বন্দি এক পাখী। মনে হয় যেন চারটে দেয়ালের ওপরে একটা ছাদ কোনমতে নিজেকে ঠেকা দিয়ে আছে। এই বিশাল ফ্লাটে বিলাসিতার কোন প্রকারের খামতি রাখেনি অভির জন্মদাতা, মিস্টার দেবাশিস চ্যাটারজি। খালি বাড়িতে আসার এমনিতে কোন ইচ্ছে ওর ছিল না, কিন্তু গতকাল ওর কলেজের বাল্য বন্ধু, অনিমেশ ওকে অনেক ধরল পারটি করবে তাই অনেক রাত পর্যন্ত তুমুল পারটি চলেছে বাড়িতে। অনিমেশ নতুন চাকরি পেয়েছে একটা বড় সফটওয়ার কোম্পানিতে সেই উপলক্ষে পারটি। মনিষা, দেবেশ, কমলিকা, অশোক, কাবেরি, ইন্দ্রজিত, অনুপমা অনেকেই এসেছিল। পারটি বলতে সেই মদ খাওয়া, গল্প গুজব আর বন্ধু বান্ধবীরা মিলে উদ্দম নাচানাচি। ওর বাড়ি খালি তাই ওর বন্ধুদের পোয়াবারো, যখন তখন পারটি করা যায়, মজা করা যায়। বাড়ি যখন খালি হল তখন বাজে প্রায় রাত দুটো, তখন আর কাউকে ফোন করা হয়ে ওঠেনি। তাও আধবোজা চোখ মেলে একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে দশটা বাজে, এখন কাজের মেয়েটার দেখা নেই।
বালিশের কোন এক কোনায় মোবাইল হাতড়ে বের করে দেখে এক গাদা মিসকল। এতগুলো মিস কল হবে সেটা জানা কথা, গতরাত থেকে ফোন উঠায়নি অভি। বাবার ফোনের জন্য অত মাথা ঘামায় না, কিন্তু জ্যাঠতুতো দিদি, মনামির একগাদা মিস কল দেখে ঘুমের রেশটা এক ধাক্কায় কেটে গেল। এই সেরেছে, আজকে ওর কপালে অনেক দুঃখ আছে। জেঠিমা আর দিদি মিলে ওর পিঠের চামড়া তুলে ডুগডুগি বাজাবে। দিদিকেই ফোন করতে যাবে আর ঠিক সেই সময়ে দিদির ফোন এলো।
মনামি ওই পাশ থেকে রেগেমেগে চিৎকার করে ওঠে, “কি ব্যাপার রে তোর? গতরাত থেকে কোন পাত্তা নেই? পারটি করছিস কর তাই বলে একবার ফোন করবি না? আমি চিন্তা করে হন্যে হয়ে যাচ্ছি। বাড়ি আসার নাম নেই নাকি?”
ধরমর করে বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে ওঠে অভি, “কি রে এত চিল্লাছিস কেন বলত, আমি এখুনি বেরুচ্ছি।”
মনামি চাপা স্বরে বলে ওঠে, “প্লিস সোনা তাড়াতাড়ি আয়, অনেক কথা আছে।”
দিদির গলাটা কেমন যেন শুকনো ঠেকে, “ঠিক কি হয়েছে বলত?”
মনামি চাপা স্বরে উত্তর দেয়, “তুই আয় তারপরে কথা।”
অনেক ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পরে জেঠিমার কোলেই মানুষ হয়েছে, জেঠিমাকেই মা বলে জানে। মাকে ঠিক ভাবে মনে পরেনা ওর। মা মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরে, ওর বাবা দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন অভির কলেজের এক সুন্দরী শিক্ষিকা, ফাল্গুনী ম্যাডামকে। ফাল্গুনী ম্যাডাম ইংরেজি পড়াতেন। এই কলেজে যাওয়া আসা করতে করতে কখন যে ফাল্গুনী ম্যাডাম ওর মায়ের জায়গা দখল করে নিল সেটা আর টের পেল না। ফাল্গুনী ম্যডামের এই বাড়িতে পদার্পণ হতেই ওর জেঠিমা, দিপাদেবী বুঝে গিয়েছিলেন যে অভির ওই বাড়িতে সময় শেষ হয়ে এসেছে। মা মরা ছেলেটাকে নিজের দুই মেয়ের সাথেই বুকে টেনে নিয়েছিলেন। মনামি অভির থেকে এক বছরের বড় তাই দুইজনে যেমন একে অপরের পেছনে লাগে ঠিক তেমন একজন অন্যজন কে ছেড়ে থাকতে পারে না। বড়দি শর্বাণী, অভি আর মনামির চেয়ে প্রায় বছর আটেকের বড়। অনেক আগেই বড়দির বিয়ে হয়ে গেছে, জামাই বাবু, নীলাদ্রি মুখারজি খুব বড় এক কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার, মুম্বাই থাকেন।
বিছানা ছেড়ে বাথরুমের দিকে এগোতে এগোতে অভি জিজ্ঞেস করে, “তুই সত্যি বলত কি হয়েছে?”
মনামি উত্তরে বলে, “পাপা আমার জন্য ছেলে দেখছে। ছেলের বাড়ি থেকে আজকেই আমাকে দেখতে আসবে।”
এই খবর শুনে অভির আকাশ থেকে পড়ার জোগাড়, “হটাত, কোন বলা নেই কওয়া নেই আজকেই আসবে মানে?”
মনামি শুষ্ক গলায় উত্তর দেয়, “গতকাল রাত্রে বলে ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে, কি করব বল। তুই পাপাকে জানিস, আমার কোন কথা শুনল না।”
অভি বাথরুম থেকে বেড়িয়ে জামা কাপড় পড়তে পড়তে জিজ্ঞেস করে, “দিদিভাই জানে?”
মনামি উত্তর দিল, “আর বলিস না, সব কল কাঠি দিদিভাই ওই মুম্বাই বসে নাড়িয়েছে।”
অভি, “মানে?”
মনামি, “জিজুর দুর সম্পর্কের কেমন একজন আত্মীয় হয় এরা। পাপাকে ভালো ভাবে চিনিস, কুলিন ', না হলে হবে না।”
অভি চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে কি হবে? তোর কি ইচ্ছে?”
মনামি খেপে ওঠে, “ধ্যাত, এক রাতে কিছু চিন্তা ভাবনা করা যায় নাকি, তার ওপরে তুই পাশে নেই কার সাথে শলা পরামর্শ করব বলত। মাকে শুধু একবার বললাম যে এখুনি বিয়ে করব না, সেই শুনে আমার দিকে তেড়ে এলো, বলল আমার বয়স বেড়ে যাচ্ছে এর পর ছেলে খুঁজে পাবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। তুই সোনা প্লিস তাড়াতাড়ি আয় না হলে আমার মাথা কাজ করছে না।” শেষের দিকে কথা গুলো বলতে বলতে মনামির গলাটা ধরে আসে।
দিদিকে কোন মতে প্রবোধ দিয়ে বলে, ““আচ্ছা আমি সব ঠিক করে দেব।” কি যে ঠিক করবে সেটা নিজেই জানে না। জেঠুর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ওর নেই অথবা বাড়ির কারুর নেই।
এই বিশাল বিলাস বহুল ফ্লাটটা অভিদের, তাও ওর নিজের বাড়ি বলতে জেঠুর বাড়ি ছাড়া আর কোন বাড়িকে ভাবতে পারেনা। অভির জেঠু প্রনবেশ বাবু, চট্টোপাধ্যায় কুলীন গোঁড়া ব্রহ্মন পরিবার, ওদের মতন অত ধনী না হলেও মফস্বলে তার পৈতৃক বড় বাড়ি। সরকারি চাকুরেরত প্রনবেশ বাবু, তাঁর ভাইয়ের এই দ্বিতীয় বিয়েতে অমত ছিল। দেবাশিস দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পরে, দুই ভাইয়ের মধ্যে মনোমালিন্য হয়, সেই থেকে দুই ভাইয়ের মধ্যে মুখ দেখাদেখি এক প্রকার বন্ধ। এক প্রকার জোর করেই অভিকে নিজের কাছে নিয়ে চলে আসেন। গোঁড়া কঠোর হলেও মা মরা ছেলেটাকে ফেলতে পারেন নি। নিজের কোন ছেলে নেই তাই অভিকেই নিজের ছেলের মতন দেখেন। এই রকম এক বরষায় ওর জেঠিমা ওর হাত ধরে এই বিলাস বহুল ফ্লাটের কবল থেকে ওকে মুক্ত করে নিজের আঁচলে ছায়ায় টেনে নিয়ে আসে। জেঠিমার আঁচল ধরে যেদিন বেড়িয়ে এসেছিল এই বিলাস বহুল ফ্লাট থেকে, সেদিন ক্ষনিকের জন্য চোখের কোনায় জলের রেখা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু জেঠুর বাড়িতে পা রাখতেই, দিদিদের ভালোবাসা ওর চোখের জল মুছে ঠোটে হাসি ফিরিয়ে নিয়ে আসে। ধনবান কি শুধু টাকা পয়সায় চেনা যায়, সেই আসল ধনী যে রোজ রাতে নিশিন্ত মনে ঘুমাতে পারে। তবে এই ফ্লাটে অভির ঘুম বিশেষ আসেনা, আসে জেঠুর বাড়িতে নিজের ছোট ঘরের মধ্যে।
এক প্রকার ঝাঁঝিয়ে ওঠে মনামি, “হ্যাঁ, তুই কি না ঠিক করে দিবি। যা শয়তান ছেলে, পাপার সামনে তোর মুখ থেকে আওয়াজ বের হয় না।”
ম্লান হেসে দিদিকে জিজ্ঞেস করে, “কি করব বল, ওই বাঘের সামনে আমরা ত তুচ্ছ খাদ্য ন্যায়।” বলে ফেলেই দিদি আর ভাই দুইজনেই হেসে ফেলে, “আচ্ছা বাবা, সত্যি বলত তোর কি ইচ্ছে?”
ম্লান হাসি দিয়ে উত্তর দেয় মনামি, “ঠিক জানি না রে। সত্যি কারের প্রেম ত আমার কপালে কোনদিন জুটল না তাই কপাল ঠুকে দেখা যাক কি হয়।”
মনামি দেখতে ভীষন সুন্দরী, সেই নিয়ে অভির খুব গর্ব আর সেই সাথে একটু হিংসে। যেই ওর দিদির সাথে অন্য ছেলেরা কথা বলে তখন খুব হিংসে হয় তাদের ওপর। মনে হয় এই বুঝি ওর দিদিকে ওর কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিয়ে চলে গেল। পড়াশুনাতে বরাবর দুই ভাই বোন খুব ভালো। বটানি তে এমএসসি করার পরে চাকরি করতে চেয়েছিল মনামি, একটা কলেজে চাকরিও পেয়েছিল কিন্তু বাড়ি থেকে অনেকদুর তাই আর চাকরি করা হয়ে ওঠেনি ওর, বাড়ির কেউই অতদুরে মেয়েকে ছাড়তে নারাজ, বিশেষ করে অভি। তবে মনামির নিজেরও বিশেষ একটা ইচ্ছে ছিল না অতদুরে সবাইকে ছেড়ে চাকরি করতে। কলেজে কলেজে পড়া কালীন মনামির চারপাশে প্রচুর ছেলেরা ঘুরে বেড়াত, তবে বিশেষ কেউই কাছে ঘেঁষতে সাহস পেত না, এক অভির ভয়ে আরেক ওর জেঠুর। তবে কলেজে পড়াকালীন মনামি খুব কাছাকাছি একজন এসেছিল, সেটাকে ঠিক প্রেম অথবা ভালোবাসা বলা চলে না। এই একটু ঘোরাফেরা, সিনেমা দেখা আড্ডা মারা। শান্তনুর সাথে মনামির সম্পর্ক যে বেশিদিন ঠিকবে না সেটা অভি আর মনামি দুইজনে ভালভাবেই জানত। যদিও শান্তনু ভালবাসত মনামিকে, তাও ওর বাড়ির অবস্থা জানার পরে দুইজনেই একে অপরের কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়। কলেজ ছাড়ার পরে আর তেমন ভাবে কারুর সাথে মেলামেশা করেনি মনামি।
অভি জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা, ছেলের কি নাম কি করে কিছু জানিস? পাপা কিছু বলেছে নাকি তোকে ধরে বেঁধে কানা খোড়া ল্যাংড়ার সাথে বেঁধে দিচ্ছে?”
খিলখিল করে হেসে ফেলে মনামি, “তুই পারিস বটে। বললাম ত জিজুর দুর সম্পর্কের আত্মীয়। বাড়ুজ্যে ',, শিতাভ্র ভট্টাচারজি, ইঞ্জিনিয়ার দিল্লীতে থাকে একটা পাব্লিক সেক্টরে চাকরি করে।”
হেসে ফেলে অভি, “তাহলে আর কি, ঝুলে পড়। দিদিভাই মুম্বাই, বিয়ের পর তুই চলে যাবি দিল্লী, শালা আমি এখানে বুড়ো বুড়িকে নিয়ে থাকব আর কি।”
মনামি ওকে বলে, “তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়, ওরা বিকেলে আসবে আর তুই নেই, কাজ নেই নাকি? ওইদিকে মা সকাল থেকে আমার ওপর চিল্লিয়ে যাচ্ছে।”
অভি প্রশ্ন করে, “বড়মা তোর ওপর কেন চেল্লাছে শুনি?”
মনামি খেপে উঠে বলে, “তোকে গতকাল রাতে নাকি আমি ফোন করিনি, তাই। বাড়ির ছেলে বাড়িতে থাকবে না সেটা হতে পারে নাকি? বাড়িতে লোকজন আসবে অনেক কাজ পরে রয়েছে। পাপা তাও বিশু আর সুবল কে দিয়ে মাংস মিষ্টি ইত্যাদি আনিয়েছে।”
হেসে ফেলে অভি, “বড়মা পারে বটে সত্যি। বাড়ির ছেলে বাড়িতেই ফিরবে রে। আমি এখুনি বেরোচ্ছি।”
মনামি একটু চাপা স্বরে ওকে জিজ্ঞেস করল, “এই দেখ, তোর বন্ধু অনিমেশ চাকরি পেয়ে গেল, সেই শুনে পাপা কিন্তু আমাকে হাজার কথা শুনিয়েছে। তোর মাথা আমি খেয়েছি, তুই শুধু বাড়ির অন্ন ধ্বংস করছিস, এই সব...” কথাটা বলেই হেসে ফেলে মনামি, “চাকরি করবি কবে?”
সত্যি ত, ওর এখন চাকরি করার বয়স হয়ে গেছে। পঁচিশটা বসন্ত ইতিমধ্যে পার করে ফেলেছে। ওর বন্ধুদের মধ্যে একজন বিয়েও করে ফেলেছে গত বছর। ইচ্ছে করলেই যে কোন কোম্পানি ওকে লুফে নেবে। আইআইটি খরগপুর থেকে বিটেক করেছে, তারপরে জোকা থেকে এমবিএ, উচ্চ বিদ্যা অর্জনে কোন খামতি রাখেনি। ক্যাম্পাসিঙ্গের সময়ে বেশ কয়েকটা কোম্পানি থেকে ডাক পেয়েছিল, তবে দিদিকে ছেড়ে জেঠিমাকে ছেড়ে এই শহরের বাইরে কোথাও যেতে নারাজ অভিনন্দন। কোটি টাকার চেয়েও দামী এই দুইজনার স্নেহ ভালোবাসা। অভির এই উচ্চ বিদ্যার পুরো টাকাটা ওর বাবাই দিয়েছিল। প্রনবেশ বাবু জানতেন যে অভিকে অত টাকা খরচ করে পড়াতে পারবে না। ছেলেকে এমনিতে কোনদিন দেখেননি কিন্তু এই উচ্চ শিক্ষার সময়ে অর্থ সাহায্য করেছিলেন দেবাশিস বাবু।
বাড়ির দরজায় তালা লাগাতে লাগাতে উত্তর দেয়, “তুই যেদিন বলবি সেদিন জয়েন করব, চিন্তা নেই। তার আগে বাপের টাকা কিছুদিন ধ্বংস করতে দোষ কোথায় রে।” বলেই হেসে ফেলে, “আচ্ছা ফোন রাখছি, আমি কিন্তু বেড়িয়ে পরেছি।”
এই ঝমঝম বৃষ্টি রেনকোটেও কতটা মানবে বলা মুশকিল। বাড়িতে গাড়ি আছে, ড্রাইভার ও আছে, কিন্তু অভি গ্যারেজ থেকে বাইকে স্টারট দিল। পকেটটা একবার দেখে নিল, বাড়ির চাবিটা, ফোন, মানিব্যাগ সব ঠিক মতন নিয়ে নিয়েছে। বাইকে বেরিয়ে একবার নিজেদের ফ্লাটের দিকে তাকিয়ে হুস করে বড় রাস্তা ধরে বেড়িয়ে পরে। ওদের বাড়ি থেকে ওর জেঠুর বাড়ি পৌঁছাতে অন্তত এক ঘন্টা লেগে যাবে।
সকাল থেকে ঝিরঝির বৃষ্টিতে ঠিক ভাবে চোখ খুলতে ইচ্ছে করে না, মনে হয় যদি কেউ থাকত তাহলে বিছানায় চা দিয়ে যেত। এসিটা রাতে আর বন্দ করাই হয়নি, পাতলা কম্বলটা আরো টেনে নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পরা ছাড়া আর কিছুই ভেবে পেল না। গত পরশুদিন অভিনন্দনের বাবা সপ্তাহ দুয়েকের জন্য অফিস টুরে গেছে তাই বাড়িটা একদম খালি, যা খুশি তাই করা যায়। বিশাল বিলাসবহুল ফ্লাট একদম ফাঁকা তাই দেয়াল গুলো মাঝে মাঝেই ওর গলা চেপে ধরে। এই বাড়িতে ঢুকলে মনে হয় যেন সোনার খাঁচায় বন্দি এক পাখী। মনে হয় যেন চারটে দেয়ালের ওপরে একটা ছাদ কোনমতে নিজেকে ঠেকা দিয়ে আছে। এই বিশাল ফ্লাটে বিলাসিতার কোন প্রকারের খামতি রাখেনি অভির জন্মদাতা, মিস্টার দেবাশিস চ্যাটারজি। খালি বাড়িতে আসার এমনিতে কোন ইচ্ছে ওর ছিল না, কিন্তু গতকাল ওর কলেজের বাল্য বন্ধু, অনিমেশ ওকে অনেক ধরল পারটি করবে তাই অনেক রাত পর্যন্ত তুমুল পারটি চলেছে বাড়িতে। অনিমেশ নতুন চাকরি পেয়েছে একটা বড় সফটওয়ার কোম্পানিতে সেই উপলক্ষে পারটি। মনিষা, দেবেশ, কমলিকা, অশোক, কাবেরি, ইন্দ্রজিত, অনুপমা অনেকেই এসেছিল। পারটি বলতে সেই মদ খাওয়া, গল্প গুজব আর বন্ধু বান্ধবীরা মিলে উদ্দম নাচানাচি। ওর বাড়ি খালি তাই ওর বন্ধুদের পোয়াবারো, যখন তখন পারটি করা যায়, মজা করা যায়। বাড়ি যখন খালি হল তখন বাজে প্রায় রাত দুটো, তখন আর কাউকে ফোন করা হয়ে ওঠেনি। তাও আধবোজা চোখ মেলে একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে দশটা বাজে, এখন কাজের মেয়েটার দেখা নেই।
বালিশের কোন এক কোনায় মোবাইল হাতড়ে বের করে দেখে এক গাদা মিসকল। এতগুলো মিস কল হবে সেটা জানা কথা, গতরাত থেকে ফোন উঠায়নি অভি। বাবার ফোনের জন্য অত মাথা ঘামায় না, কিন্তু জ্যাঠতুতো দিদি, মনামির একগাদা মিস কল দেখে ঘুমের রেশটা এক ধাক্কায় কেটে গেল। এই সেরেছে, আজকে ওর কপালে অনেক দুঃখ আছে। জেঠিমা আর দিদি মিলে ওর পিঠের চামড়া তুলে ডুগডুগি বাজাবে। দিদিকেই ফোন করতে যাবে আর ঠিক সেই সময়ে দিদির ফোন এলো।
মনামি ওই পাশ থেকে রেগেমেগে চিৎকার করে ওঠে, “কি ব্যাপার রে তোর? গতরাত থেকে কোন পাত্তা নেই? পারটি করছিস কর তাই বলে একবার ফোন করবি না? আমি চিন্তা করে হন্যে হয়ে যাচ্ছি। বাড়ি আসার নাম নেই নাকি?”
ধরমর করে বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে ওঠে অভি, “কি রে এত চিল্লাছিস কেন বলত, আমি এখুনি বেরুচ্ছি।”
মনামি চাপা স্বরে বলে ওঠে, “প্লিস সোনা তাড়াতাড়ি আয়, অনেক কথা আছে।”
দিদির গলাটা কেমন যেন শুকনো ঠেকে, “ঠিক কি হয়েছে বলত?”
মনামি চাপা স্বরে উত্তর দেয়, “তুই আয় তারপরে কথা।”
অনেক ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পরে জেঠিমার কোলেই মানুষ হয়েছে, জেঠিমাকেই মা বলে জানে। মাকে ঠিক ভাবে মনে পরেনা ওর। মা মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরে, ওর বাবা দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন অভির কলেজের এক সুন্দরী শিক্ষিকা, ফাল্গুনী ম্যাডামকে। ফাল্গুনী ম্যাডাম ইংরেজি পড়াতেন। এই কলেজে যাওয়া আসা করতে করতে কখন যে ফাল্গুনী ম্যাডাম ওর মায়ের জায়গা দখল করে নিল সেটা আর টের পেল না। ফাল্গুনী ম্যডামের এই বাড়িতে পদার্পণ হতেই ওর জেঠিমা, দিপাদেবী বুঝে গিয়েছিলেন যে অভির ওই বাড়িতে সময় শেষ হয়ে এসেছে। মা মরা ছেলেটাকে নিজের দুই মেয়ের সাথেই বুকে টেনে নিয়েছিলেন। মনামি অভির থেকে এক বছরের বড় তাই দুইজনে যেমন একে অপরের পেছনে লাগে ঠিক তেমন একজন অন্যজন কে ছেড়ে থাকতে পারে না। বড়দি শর্বাণী, অভি আর মনামির চেয়ে প্রায় বছর আটেকের বড়। অনেক আগেই বড়দির বিয়ে হয়ে গেছে, জামাই বাবু, নীলাদ্রি মুখারজি খুব বড় এক কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার, মুম্বাই থাকেন।
বিছানা ছেড়ে বাথরুমের দিকে এগোতে এগোতে অভি জিজ্ঞেস করে, “তুই সত্যি বলত কি হয়েছে?”
মনামি উত্তরে বলে, “পাপা আমার জন্য ছেলে দেখছে। ছেলের বাড়ি থেকে আজকেই আমাকে দেখতে আসবে।”
এই খবর শুনে অভির আকাশ থেকে পড়ার জোগাড়, “হটাত, কোন বলা নেই কওয়া নেই আজকেই আসবে মানে?”
মনামি শুষ্ক গলায় উত্তর দেয়, “গতকাল রাত্রে বলে ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে, কি করব বল। তুই পাপাকে জানিস, আমার কোন কথা শুনল না।”
অভি বাথরুম থেকে বেড়িয়ে জামা কাপড় পড়তে পড়তে জিজ্ঞেস করে, “দিদিভাই জানে?”
মনামি উত্তর দিল, “আর বলিস না, সব কল কাঠি দিদিভাই ওই মুম্বাই বসে নাড়িয়েছে।”
অভি, “মানে?”
মনামি, “জিজুর দুর সম্পর্কের কেমন একজন আত্মীয় হয় এরা। পাপাকে ভালো ভাবে চিনিস, কুলিন ', না হলে হবে না।”
অভি চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে কি হবে? তোর কি ইচ্ছে?”
মনামি খেপে ওঠে, “ধ্যাত, এক রাতে কিছু চিন্তা ভাবনা করা যায় নাকি, তার ওপরে তুই পাশে নেই কার সাথে শলা পরামর্শ করব বলত। মাকে শুধু একবার বললাম যে এখুনি বিয়ে করব না, সেই শুনে আমার দিকে তেড়ে এলো, বলল আমার বয়স বেড়ে যাচ্ছে এর পর ছেলে খুঁজে পাবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। তুই সোনা প্লিস তাড়াতাড়ি আয় না হলে আমার মাথা কাজ করছে না।” শেষের দিকে কথা গুলো বলতে বলতে মনামির গলাটা ধরে আসে।
দিদিকে কোন মতে প্রবোধ দিয়ে বলে, ““আচ্ছা আমি সব ঠিক করে দেব।” কি যে ঠিক করবে সেটা নিজেই জানে না। জেঠুর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ওর নেই অথবা বাড়ির কারুর নেই।
এই বিশাল বিলাস বহুল ফ্লাটটা অভিদের, তাও ওর নিজের বাড়ি বলতে জেঠুর বাড়ি ছাড়া আর কোন বাড়িকে ভাবতে পারেনা। অভির জেঠু প্রনবেশ বাবু, চট্টোপাধ্যায় কুলীন গোঁড়া ব্রহ্মন পরিবার, ওদের মতন অত ধনী না হলেও মফস্বলে তার পৈতৃক বড় বাড়ি। সরকারি চাকুরেরত প্রনবেশ বাবু, তাঁর ভাইয়ের এই দ্বিতীয় বিয়েতে অমত ছিল। দেবাশিস দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পরে, দুই ভাইয়ের মধ্যে মনোমালিন্য হয়, সেই থেকে দুই ভাইয়ের মধ্যে মুখ দেখাদেখি এক প্রকার বন্ধ। এক প্রকার জোর করেই অভিকে নিজের কাছে নিয়ে চলে আসেন। গোঁড়া কঠোর হলেও মা মরা ছেলেটাকে ফেলতে পারেন নি। নিজের কোন ছেলে নেই তাই অভিকেই নিজের ছেলের মতন দেখেন। এই রকম এক বরষায় ওর জেঠিমা ওর হাত ধরে এই বিলাস বহুল ফ্লাটের কবল থেকে ওকে মুক্ত করে নিজের আঁচলে ছায়ায় টেনে নিয়ে আসে। জেঠিমার আঁচল ধরে যেদিন বেড়িয়ে এসেছিল এই বিলাস বহুল ফ্লাট থেকে, সেদিন ক্ষনিকের জন্য চোখের কোনায় জলের রেখা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু জেঠুর বাড়িতে পা রাখতেই, দিদিদের ভালোবাসা ওর চোখের জল মুছে ঠোটে হাসি ফিরিয়ে নিয়ে আসে। ধনবান কি শুধু টাকা পয়সায় চেনা যায়, সেই আসল ধনী যে রোজ রাতে নিশিন্ত মনে ঘুমাতে পারে। তবে এই ফ্লাটে অভির ঘুম বিশেষ আসেনা, আসে জেঠুর বাড়িতে নিজের ছোট ঘরের মধ্যে।
এক প্রকার ঝাঁঝিয়ে ওঠে মনামি, “হ্যাঁ, তুই কি না ঠিক করে দিবি। যা শয়তান ছেলে, পাপার সামনে তোর মুখ থেকে আওয়াজ বের হয় না।”
ম্লান হেসে দিদিকে জিজ্ঞেস করে, “কি করব বল, ওই বাঘের সামনে আমরা ত তুচ্ছ খাদ্য ন্যায়।” বলে ফেলেই দিদি আর ভাই দুইজনেই হেসে ফেলে, “আচ্ছা বাবা, সত্যি বলত তোর কি ইচ্ছে?”
ম্লান হাসি দিয়ে উত্তর দেয় মনামি, “ঠিক জানি না রে। সত্যি কারের প্রেম ত আমার কপালে কোনদিন জুটল না তাই কপাল ঠুকে দেখা যাক কি হয়।”
মনামি দেখতে ভীষন সুন্দরী, সেই নিয়ে অভির খুব গর্ব আর সেই সাথে একটু হিংসে। যেই ওর দিদির সাথে অন্য ছেলেরা কথা বলে তখন খুব হিংসে হয় তাদের ওপর। মনে হয় এই বুঝি ওর দিদিকে ওর কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিয়ে চলে গেল। পড়াশুনাতে বরাবর দুই ভাই বোন খুব ভালো। বটানি তে এমএসসি করার পরে চাকরি করতে চেয়েছিল মনামি, একটা কলেজে চাকরিও পেয়েছিল কিন্তু বাড়ি থেকে অনেকদুর তাই আর চাকরি করা হয়ে ওঠেনি ওর, বাড়ির কেউই অতদুরে মেয়েকে ছাড়তে নারাজ, বিশেষ করে অভি। তবে মনামির নিজেরও বিশেষ একটা ইচ্ছে ছিল না অতদুরে সবাইকে ছেড়ে চাকরি করতে। কলেজে কলেজে পড়া কালীন মনামির চারপাশে প্রচুর ছেলেরা ঘুরে বেড়াত, তবে বিশেষ কেউই কাছে ঘেঁষতে সাহস পেত না, এক অভির ভয়ে আরেক ওর জেঠুর। তবে কলেজে পড়াকালীন মনামি খুব কাছাকাছি একজন এসেছিল, সেটাকে ঠিক প্রেম অথবা ভালোবাসা বলা চলে না। এই একটু ঘোরাফেরা, সিনেমা দেখা আড্ডা মারা। শান্তনুর সাথে মনামির সম্পর্ক যে বেশিদিন ঠিকবে না সেটা অভি আর মনামি দুইজনে ভালভাবেই জানত। যদিও শান্তনু ভালবাসত মনামিকে, তাও ওর বাড়ির অবস্থা জানার পরে দুইজনেই একে অপরের কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়। কলেজ ছাড়ার পরে আর তেমন ভাবে কারুর সাথে মেলামেশা করেনি মনামি।
অভি জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা, ছেলের কি নাম কি করে কিছু জানিস? পাপা কিছু বলেছে নাকি তোকে ধরে বেঁধে কানা খোড়া ল্যাংড়ার সাথে বেঁধে দিচ্ছে?”
খিলখিল করে হেসে ফেলে মনামি, “তুই পারিস বটে। বললাম ত জিজুর দুর সম্পর্কের আত্মীয়। বাড়ুজ্যে ',, শিতাভ্র ভট্টাচারজি, ইঞ্জিনিয়ার দিল্লীতে থাকে একটা পাব্লিক সেক্টরে চাকরি করে।”
হেসে ফেলে অভি, “তাহলে আর কি, ঝুলে পড়। দিদিভাই মুম্বাই, বিয়ের পর তুই চলে যাবি দিল্লী, শালা আমি এখানে বুড়ো বুড়িকে নিয়ে থাকব আর কি।”
মনামি ওকে বলে, “তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়, ওরা বিকেলে আসবে আর তুই নেই, কাজ নেই নাকি? ওইদিকে মা সকাল থেকে আমার ওপর চিল্লিয়ে যাচ্ছে।”
অভি প্রশ্ন করে, “বড়মা তোর ওপর কেন চেল্লাছে শুনি?”
মনামি খেপে উঠে বলে, “তোকে গতকাল রাতে নাকি আমি ফোন করিনি, তাই। বাড়ির ছেলে বাড়িতে থাকবে না সেটা হতে পারে নাকি? বাড়িতে লোকজন আসবে অনেক কাজ পরে রয়েছে। পাপা তাও বিশু আর সুবল কে দিয়ে মাংস মিষ্টি ইত্যাদি আনিয়েছে।”
হেসে ফেলে অভি, “বড়মা পারে বটে সত্যি। বাড়ির ছেলে বাড়িতেই ফিরবে রে। আমি এখুনি বেরোচ্ছি।”
মনামি একটু চাপা স্বরে ওকে জিজ্ঞেস করল, “এই দেখ, তোর বন্ধু অনিমেশ চাকরি পেয়ে গেল, সেই শুনে পাপা কিন্তু আমাকে হাজার কথা শুনিয়েছে। তোর মাথা আমি খেয়েছি, তুই শুধু বাড়ির অন্ন ধ্বংস করছিস, এই সব...” কথাটা বলেই হেসে ফেলে মনামি, “চাকরি করবি কবে?”
সত্যি ত, ওর এখন চাকরি করার বয়স হয়ে গেছে। পঁচিশটা বসন্ত ইতিমধ্যে পার করে ফেলেছে। ওর বন্ধুদের মধ্যে একজন বিয়েও করে ফেলেছে গত বছর। ইচ্ছে করলেই যে কোন কোম্পানি ওকে লুফে নেবে। আইআইটি খরগপুর থেকে বিটেক করেছে, তারপরে জোকা থেকে এমবিএ, উচ্চ বিদ্যা অর্জনে কোন খামতি রাখেনি। ক্যাম্পাসিঙ্গের সময়ে বেশ কয়েকটা কোম্পানি থেকে ডাক পেয়েছিল, তবে দিদিকে ছেড়ে জেঠিমাকে ছেড়ে এই শহরের বাইরে কোথাও যেতে নারাজ অভিনন্দন। কোটি টাকার চেয়েও দামী এই দুইজনার স্নেহ ভালোবাসা। অভির এই উচ্চ বিদ্যার পুরো টাকাটা ওর বাবাই দিয়েছিল। প্রনবেশ বাবু জানতেন যে অভিকে অত টাকা খরচ করে পড়াতে পারবে না। ছেলেকে এমনিতে কোনদিন দেখেননি কিন্তু এই উচ্চ শিক্ষার সময়ে অর্থ সাহায্য করেছিলেন দেবাশিস বাবু।
বাড়ির দরজায় তালা লাগাতে লাগাতে উত্তর দেয়, “তুই যেদিন বলবি সেদিন জয়েন করব, চিন্তা নেই। তার আগে বাপের টাকা কিছুদিন ধ্বংস করতে দোষ কোথায় রে।” বলেই হেসে ফেলে, “আচ্ছা ফোন রাখছি, আমি কিন্তু বেড়িয়ে পরেছি।”
এই ঝমঝম বৃষ্টি রেনকোটেও কতটা মানবে বলা মুশকিল। বাড়িতে গাড়ি আছে, ড্রাইভার ও আছে, কিন্তু অভি গ্যারেজ থেকে বাইকে স্টারট দিল। পকেটটা একবার দেখে নিল, বাড়ির চাবিটা, ফোন, মানিব্যাগ সব ঠিক মতন নিয়ে নিয়েছে। বাইকে বেরিয়ে একবার নিজেদের ফ্লাটের দিকে তাকিয়ে হুস করে বড় রাস্তা ধরে বেড়িয়ে পরে। ওদের বাড়ি থেকে ওর জেঠুর বাড়ি পৌঁছাতে অন্তত এক ঘন্টা লেগে যাবে।