02-07-2020, 08:34 PM
(This post was last modified: 22-02-2021, 12:56 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।৩৮।।
সময় হয়ে গেছে সবাই উসখুস করে। জেনিফার একমনে ফাইল দেখে যাচ্ছেন। সুলতান সাহেব সাহস করে ঘরে উকি দিল। জেনিফার মুখ তুলে বলেন,কিছু বলবেন?
— স্যর ছুটি হয়ে গেছে। বলদা তো নাই।
মৃদু হেসে জেনিফার বলেন,ঠিক আছে আপনারা যান।
সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। একে একে সবাই বেরিয়ে পড়ল রাস্তায়। স্যারের মধ্যে কদিন ধরে একটা পরিবর্তন সবার নজরে পড়ে। আগের মত রুক্ষুভাবটা আর নেই। বিশেষ করে কলেজ টিচার ;., কাণ্ডের পর খুব ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। খবর কাগজে বেরিয়েছে সবাই ধরা পড়েছে।তাহলে তো খুশী হবার কথা।
জেনিফার ফাইল বন্ধ করে রাখেন,আর ভাল লাগছে না। তার টেবিলে আগে কখনো এত ফাইল জমা হয়নি। কাজ ফেলে রাখা তার অপছন্দ। আয়েশি হয়ে পড়ছেন? বলুকে বলেছেন তার সঙ্গে দেখা করে যেতে,কখন ফিরবে কে জানে। জাহিরুল সাহেব জানিয়েছেন,এই সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ পত্র পেয়ে যাবেন গুলনার এহসান। এসব নিয়ে আর ভাববেন না,যতদুর সম্ভব করেছেন।
অটোরিক্সা থামার শব্দ পেয়ে গুলনার মুখে একটা নিস্পৃহভাব এনে দরজা খুলে দিল। তারপর নিজের ঘরে এসে একটা বই নিয়ে বসে। বলদেবকে নিয়ে নুসরত ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে গুলনারের ঘরে গিয়ে বলে,অপা এর নাম দেব। ম্যাম এর কথা বলেছিলেন।
গুলনার স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে বলদেবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, নুসরতের অফিসে তুমি পিয়নের কাজ করো?
— জ্বি।
— আমাকে বিয়ে করতে চাও?
— জ্বি।
— দয়া করার ইচ্ছা হল কেন?
বলদেব মুচকি হাসে। নুসরত অস্বস্তি বোধ করে। বাড়িতে ডেকে এনে এধরনের আলাপ তার পছন্দ হয়না। একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলে,দেব আপনি বসুন। বলদেব বসে।
— হাসো কেনো?
— জ্বি আপনে মজা কতলেন।দয়া বা অনুগ্রহ উপরের মানুষ নীচের মানুষকে করে।আমি অতি দীন সাধারন একজন পিয়ন আমার সাধ্য কি?
গুলনার একটু দমে গেলেন।কথাটা এভাবে না বললেও পারতো।
—আচ্ছা আমার নাপাক শরীর জেনেও বিয়ে করতে চান?
— ম্যাম,শরীর নাপাক হয়না। নাপাক হয় মন। আপনে শিক্ষিত মানুষ আপনেরে বলা আমার শোভা পায় না। বিধাতা আমাদের একটূ জীবন দিয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যাতে ময়লা না লাগে। সময় হলে আবার তা বিধাতাকে ফিরায়ে দিতে হয়। হিংসা দ্বেষ সংকীর্ণতা ময়লা আমাদের চারপাশে,সযত্নে তার থেকে প্রদীপ শিখার মত বাঁচাবার চেষ্টা করি। আমার মা বলতো বলা এমন কিছু করিস না যাতে জীবনটা ময়লা হয়ে যায়।
গুলনার অবাক হয়ে বলদেবের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এতো শেখানো কথা নয়, জীবন দিয়ে উপলব্ধি না করলে এভাবে বলা যায় না। নুসরত বলেছিল মেট্রিক পাস।
— আপনি শুনেছি মেট্রিক পাস।
— জ্বি।
— আর পড়েন নি কেন? ভালো লাগে না?
— জ্বে পড়তে আমার খুব মজা লাগে।
— মজা লাগে? এরকম কথা গুলনার আগে শোনেনি, লোকটা পাগল নাকি?
— পড়তে পড়তে মনে হয় অন্ধকারের মধ্যে পুট পুট করে আলো জ্বলতে থাকে। যেন মনে হয় উৎসবের বাড়ি।
গুলনার মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন। মনে হচ্ছে তার সামনে বসে আছে খেলায় মেতে ওঠা এক উচ্ছ্বসিত অবোধ বালক। নুসরত চা নাস্তা নিয়ে প্রবেশ করে। বলদেব আগ্রহের সঙ্গে রুটিতে কামড় দিয়ে বলে,ম্যাম আপনে কি করে বুঝলেন আমার ক্ষিধা পেয়েছে?
— কথা না বলে খান। মৃদু হেসে বলে নুসরত।
গুলনার উঠে অন্য ঘরে চলে যান নিজেকে ধাতস্থ করার জন্য। তার সব কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। চোখে মুখে জল দিয়ে আবার ফিরে আসেন। বলদেবের খাওয়া শেষ,লাজুক মুখে বসে আছে।
— ম্যাম আমার উলটাপালটা কথায় আপনে বিরক্ত হয়েছেন? সঙ্কুচিত বলদেব বলে।
— আমার ভাল লাগছে। আপনাকে একটা কথা বলি, আমার নাম গুলনার এহসান মন্টি। আমাকে মন্টি বলবেন,ম্যাম-ম্যাম করবেন না।
— জ্বি।
— এবার বলুন মজা লাগে তাহলে আর পড়লেন না কেন?
— আমার মা যখন মারা গেল দুইবেলা খাওয়া জুটানো কঠিন হয়ে পড়ল। লেখাপড়া তখন বিলাসিতা।ইউনিয়ন বোর্ডের মাটি কাটার কাজে লেগে গেলাম। ম্যাম বলেছেন আমারে পড়াবেন।
— ম্যাম কে?
— ডিএম সাহেবা,আমারে খুবই ভালবাসেন।
— বিয়ে হলে আমি পড়াবো,অন্যে কেন পড়াবে?
— আপনিও তো অন্য।
— আমাকে তুমি বলবেন।
— জ্বি।
— কি বলবেন?
— আপনাকে তুমি বলবো।
— আবার আপনি?
বলদেব হেসে বলে,মুখস্থ হলে ঠিক হয়ে যাবে।
— একটা শব্দ মুখস্থ করতে এত সময় লাগে? বলুন ‘তুমি। ‘
— তুমি। এইটা বেশ মজার খেলা।
— ঠিক আছে এবার সত্যি করে বলুন তো আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে?
— পছন্দ হয়েছে কিন্তু এই বয়সে আবার পড়াশুনা– ?
--এইযে বললেন ডিএম সাহেবা পড়াবেন।
--উনি হইলেন গিয়া বস।
গুলনার হেসে ফেলে বলল,ঠিক আছে পছন্দের দরকার নেই। আপনাকে বললাম না আমাকে মণ্টি বলতে?
বলদেব ইতস্তত করে মনে হয় কিছু বলতে চায় গুলনার জিজ্ঞেস করল,কিছু বলবেন?
— মণ্টি আমার বেতন বেশি না– ।
— সে সব আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনার সব দায়িত্ব আমার– ।
— কোনোদিন তাড়ায়ে দেবে নাতো?
গুলনারের খটকা লাগে, চোখে জল এসে যায় নিজেকে সংযত করে বলল,তাড়িয়ে দেবো কেন? শুনুন বিয়ে করলেও দাম্পত্য জীবন শুরু হবে আপনি পাস করার পর। মনে থাকবে?
— সেইটা আপনের মানে তোমার মর্জি।
— আপনার কোন ইচ্ছা নাই?
— থাকলেও কারো উপর তা চাপিয়ে দেওয়া আমার অপছন্দ।
--আর একটা কথা শুদ্ধভাষায় কথা বলবেন।'আপনের, তাড়ায়ে, একখান'--এইসব চলবে না।
--জ্বি।
--জ্বি নয় বলুন আচ্ছা।
--আচ্ছা।
— দেখি আপনার হাত।
বলদেব হাত এগিয়ে দিল। গুলনার এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখল নুসরত নেই। বলদেবের অনামিকায় একটি আংটি পরিয়ে দিলেন।
বলদেব হাত ঘুরিয়ে দেখে বলল,ভারী সুন্দর,এইটা কার?
— এইটা আমার। আপনাকে দিলাম যাতে আমাকে মনে থাকে।
— আংটি ছাড়াও মন্টি তোমাকে আমার মনে থাকবে।
নুসরত দুজনকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে স্বস্তি বোধ করে। জিজ্ঞেস করে,আপনাদের কথা শেষ হয়েছে?
বলদেব লাফিয়ে উঠে আংটি দেখিয়ে বলে,দেখুন ম্যাম মণ্টি আমাকে দিল। কেমন দেখায়?
গুলনার লজ্জায় মুখ তুলে তাকাতে পারে না। নুসরত মুচকি হেসে বলে,আংটি ছাড়াই আপনি সুন্দর।
— এই কথাটা সায়েদভাইও বলছিল।
— রাত হল। অপা দেবকে ছেড়ে দেও এবার।
— আমি কাউকে ধরে রাখিনি। গুলনার বলেন।
— ঠিকই কেউ কাউকে ধরে রাখতে পারে না সময় হলে চলে যাবে।
বলদেবকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে তার হাত ধরে চুম্বন করে গুলনার বলে,আবার আসবেন। ও হ্যা,বিয়ের পর আমরা মুন্সিগঞ্জ চলে যাবো।
— -জ্বি।
--আবার জ্বি?
--আচ্ছা।
বলদেব যখন অফিসে পৌছালো তখন সন্ধ্যে নেমেছে। হাস্নুহানার গন্ধ বাতাসে। অফিসের দরজা খোলা। ধীরে ধীরে অফিসে ঢুকে দেখল টেবিলে মাথা রেখে ম্যাম ঘুমিয়ে পড়েছে প্রায় নিচূ হয়ে ডাকতে,ম্যাম চমকে মাথা তোলেন জেনিফার আলম সিদ্দিকি। ভাল করে চোখ মেলে চারদিক দেখেন,হঠাৎ নজরে পড়ে চকচক করছে বলদেবের হাতে আংটি, জিজ্ঞেস করেন,তোমার হাতে এটা কি? হীরার আংটি মনে হয়,কে দিল?
বলদেব লাজুকভাবে বলে,মন্টি আমাকে দিয়েছে।
বিবর্ণ হয়ে যায় জেনিফারের মুখ,মনে মনে ভাবেন,ভালই হল। মিস এহসানের মানুষ চিনতে ভুল হয়নি।
— ম্যাম মণ্টি আমাকে বলল মুন্সিগঞ্জে যেতে হবে। কিন্তু আমি অফিস ফেলে কি করে যাব?
লোকে বলদা বলে ডাকে খালি খালি? আমিনা ঠিকই বলেছিল হাবাগোবা। শুষ্ক হাসি টেনে বলেন,আজ বাড়ি যাও। কাল বলে আসবে রাতে ফিরবে না,আমার বাসায় দাওয়াত।
--তোমার শরীর ভালো আছে?একটু দাঁড়াও দরজা বন্ধ করে উপরে দিয়ে আসছি।
জেনিফার হাসলেন বললেন,ঠিক আছে তুমি দরজা বন্ধ করে বাড়ি চলে যাও। তারপর ক্লান্ত শরীর টেনে নিয়ে উপরে উঠে গেলেন। বলদেব দরজা বন্ধ করে চৌকিদারের ঘরে চাবি দিয়ে রাস্তায় নামে।
সময় হয়ে গেছে সবাই উসখুস করে। জেনিফার একমনে ফাইল দেখে যাচ্ছেন। সুলতান সাহেব সাহস করে ঘরে উকি দিল। জেনিফার মুখ তুলে বলেন,কিছু বলবেন?
— স্যর ছুটি হয়ে গেছে। বলদা তো নাই।
মৃদু হেসে জেনিফার বলেন,ঠিক আছে আপনারা যান।
সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। একে একে সবাই বেরিয়ে পড়ল রাস্তায়। স্যারের মধ্যে কদিন ধরে একটা পরিবর্তন সবার নজরে পড়ে। আগের মত রুক্ষুভাবটা আর নেই। বিশেষ করে কলেজ টিচার ;., কাণ্ডের পর খুব ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। খবর কাগজে বেরিয়েছে সবাই ধরা পড়েছে।তাহলে তো খুশী হবার কথা।
জেনিফার ফাইল বন্ধ করে রাখেন,আর ভাল লাগছে না। তার টেবিলে আগে কখনো এত ফাইল জমা হয়নি। কাজ ফেলে রাখা তার অপছন্দ। আয়েশি হয়ে পড়ছেন? বলুকে বলেছেন তার সঙ্গে দেখা করে যেতে,কখন ফিরবে কে জানে। জাহিরুল সাহেব জানিয়েছেন,এই সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ পত্র পেয়ে যাবেন গুলনার এহসান। এসব নিয়ে আর ভাববেন না,যতদুর সম্ভব করেছেন।
অটোরিক্সা থামার শব্দ পেয়ে গুলনার মুখে একটা নিস্পৃহভাব এনে দরজা খুলে দিল। তারপর নিজের ঘরে এসে একটা বই নিয়ে বসে। বলদেবকে নিয়ে নুসরত ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে গুলনারের ঘরে গিয়ে বলে,অপা এর নাম দেব। ম্যাম এর কথা বলেছিলেন।
গুলনার স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে বলদেবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, নুসরতের অফিসে তুমি পিয়নের কাজ করো?
— জ্বি।
— আমাকে বিয়ে করতে চাও?
— জ্বি।
— দয়া করার ইচ্ছা হল কেন?
বলদেব মুচকি হাসে। নুসরত অস্বস্তি বোধ করে। বাড়িতে ডেকে এনে এধরনের আলাপ তার পছন্দ হয়না। একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলে,দেব আপনি বসুন। বলদেব বসে।
— হাসো কেনো?
— জ্বি আপনে মজা কতলেন।দয়া বা অনুগ্রহ উপরের মানুষ নীচের মানুষকে করে।আমি অতি দীন সাধারন একজন পিয়ন আমার সাধ্য কি?
গুলনার একটু দমে গেলেন।কথাটা এভাবে না বললেও পারতো।
—আচ্ছা আমার নাপাক শরীর জেনেও বিয়ে করতে চান?
— ম্যাম,শরীর নাপাক হয়না। নাপাক হয় মন। আপনে শিক্ষিত মানুষ আপনেরে বলা আমার শোভা পায় না। বিধাতা আমাদের একটূ জীবন দিয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যাতে ময়লা না লাগে। সময় হলে আবার তা বিধাতাকে ফিরায়ে দিতে হয়। হিংসা দ্বেষ সংকীর্ণতা ময়লা আমাদের চারপাশে,সযত্নে তার থেকে প্রদীপ শিখার মত বাঁচাবার চেষ্টা করি। আমার মা বলতো বলা এমন কিছু করিস না যাতে জীবনটা ময়লা হয়ে যায়।
গুলনার অবাক হয়ে বলদেবের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এতো শেখানো কথা নয়, জীবন দিয়ে উপলব্ধি না করলে এভাবে বলা যায় না। নুসরত বলেছিল মেট্রিক পাস।
— আপনি শুনেছি মেট্রিক পাস।
— জ্বি।
— আর পড়েন নি কেন? ভালো লাগে না?
— জ্বে পড়তে আমার খুব মজা লাগে।
— মজা লাগে? এরকম কথা গুলনার আগে শোনেনি, লোকটা পাগল নাকি?
— পড়তে পড়তে মনে হয় অন্ধকারের মধ্যে পুট পুট করে আলো জ্বলতে থাকে। যেন মনে হয় উৎসবের বাড়ি।
গুলনার মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন। মনে হচ্ছে তার সামনে বসে আছে খেলায় মেতে ওঠা এক উচ্ছ্বসিত অবোধ বালক। নুসরত চা নাস্তা নিয়ে প্রবেশ করে। বলদেব আগ্রহের সঙ্গে রুটিতে কামড় দিয়ে বলে,ম্যাম আপনে কি করে বুঝলেন আমার ক্ষিধা পেয়েছে?
— কথা না বলে খান। মৃদু হেসে বলে নুসরত।
গুলনার উঠে অন্য ঘরে চলে যান নিজেকে ধাতস্থ করার জন্য। তার সব কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। চোখে মুখে জল দিয়ে আবার ফিরে আসেন। বলদেবের খাওয়া শেষ,লাজুক মুখে বসে আছে।
— ম্যাম আমার উলটাপালটা কথায় আপনে বিরক্ত হয়েছেন? সঙ্কুচিত বলদেব বলে।
— আমার ভাল লাগছে। আপনাকে একটা কথা বলি, আমার নাম গুলনার এহসান মন্টি। আমাকে মন্টি বলবেন,ম্যাম-ম্যাম করবেন না।
— জ্বি।
— এবার বলুন মজা লাগে তাহলে আর পড়লেন না কেন?
— আমার মা যখন মারা গেল দুইবেলা খাওয়া জুটানো কঠিন হয়ে পড়ল। লেখাপড়া তখন বিলাসিতা।ইউনিয়ন বোর্ডের মাটি কাটার কাজে লেগে গেলাম। ম্যাম বলেছেন আমারে পড়াবেন।
— ম্যাম কে?
— ডিএম সাহেবা,আমারে খুবই ভালবাসেন।
— বিয়ে হলে আমি পড়াবো,অন্যে কেন পড়াবে?
— আপনিও তো অন্য।
— আমাকে তুমি বলবেন।
— জ্বি।
— কি বলবেন?
— আপনাকে তুমি বলবো।
— আবার আপনি?
বলদেব হেসে বলে,মুখস্থ হলে ঠিক হয়ে যাবে।
— একটা শব্দ মুখস্থ করতে এত সময় লাগে? বলুন ‘তুমি। ‘
— তুমি। এইটা বেশ মজার খেলা।
— ঠিক আছে এবার সত্যি করে বলুন তো আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে?
— পছন্দ হয়েছে কিন্তু এই বয়সে আবার পড়াশুনা– ?
--এইযে বললেন ডিএম সাহেবা পড়াবেন।
--উনি হইলেন গিয়া বস।
গুলনার হেসে ফেলে বলল,ঠিক আছে পছন্দের দরকার নেই। আপনাকে বললাম না আমাকে মণ্টি বলতে?
বলদেব ইতস্তত করে মনে হয় কিছু বলতে চায় গুলনার জিজ্ঞেস করল,কিছু বলবেন?
— মণ্টি আমার বেতন বেশি না– ।
— সে সব আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনার সব দায়িত্ব আমার– ।
— কোনোদিন তাড়ায়ে দেবে নাতো?
গুলনারের খটকা লাগে, চোখে জল এসে যায় নিজেকে সংযত করে বলল,তাড়িয়ে দেবো কেন? শুনুন বিয়ে করলেও দাম্পত্য জীবন শুরু হবে আপনি পাস করার পর। মনে থাকবে?
— সেইটা আপনের মানে তোমার মর্জি।
— আপনার কোন ইচ্ছা নাই?
— থাকলেও কারো উপর তা চাপিয়ে দেওয়া আমার অপছন্দ।
--আর একটা কথা শুদ্ধভাষায় কথা বলবেন।'আপনের, তাড়ায়ে, একখান'--এইসব চলবে না।
--জ্বি।
--জ্বি নয় বলুন আচ্ছা।
--আচ্ছা।
— দেখি আপনার হাত।
বলদেব হাত এগিয়ে দিল। গুলনার এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখল নুসরত নেই। বলদেবের অনামিকায় একটি আংটি পরিয়ে দিলেন।
বলদেব হাত ঘুরিয়ে দেখে বলল,ভারী সুন্দর,এইটা কার?
— এইটা আমার। আপনাকে দিলাম যাতে আমাকে মনে থাকে।
— আংটি ছাড়াও মন্টি তোমাকে আমার মনে থাকবে।
নুসরত দুজনকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে স্বস্তি বোধ করে। জিজ্ঞেস করে,আপনাদের কথা শেষ হয়েছে?
বলদেব লাফিয়ে উঠে আংটি দেখিয়ে বলে,দেখুন ম্যাম মণ্টি আমাকে দিল। কেমন দেখায়?
গুলনার লজ্জায় মুখ তুলে তাকাতে পারে না। নুসরত মুচকি হেসে বলে,আংটি ছাড়াই আপনি সুন্দর।
— এই কথাটা সায়েদভাইও বলছিল।
— রাত হল। অপা দেবকে ছেড়ে দেও এবার।
— আমি কাউকে ধরে রাখিনি। গুলনার বলেন।
— ঠিকই কেউ কাউকে ধরে রাখতে পারে না সময় হলে চলে যাবে।
বলদেবকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে তার হাত ধরে চুম্বন করে গুলনার বলে,আবার আসবেন। ও হ্যা,বিয়ের পর আমরা মুন্সিগঞ্জ চলে যাবো।
— -জ্বি।
--আবার জ্বি?
--আচ্ছা।
বলদেব যখন অফিসে পৌছালো তখন সন্ধ্যে নেমেছে। হাস্নুহানার গন্ধ বাতাসে। অফিসের দরজা খোলা। ধীরে ধীরে অফিসে ঢুকে দেখল টেবিলে মাথা রেখে ম্যাম ঘুমিয়ে পড়েছে প্রায় নিচূ হয়ে ডাকতে,ম্যাম চমকে মাথা তোলেন জেনিফার আলম সিদ্দিকি। ভাল করে চোখ মেলে চারদিক দেখেন,হঠাৎ নজরে পড়ে চকচক করছে বলদেবের হাতে আংটি, জিজ্ঞেস করেন,তোমার হাতে এটা কি? হীরার আংটি মনে হয়,কে দিল?
বলদেব লাজুকভাবে বলে,মন্টি আমাকে দিয়েছে।
বিবর্ণ হয়ে যায় জেনিফারের মুখ,মনে মনে ভাবেন,ভালই হল। মিস এহসানের মানুষ চিনতে ভুল হয়নি।
— ম্যাম মণ্টি আমাকে বলল মুন্সিগঞ্জে যেতে হবে। কিন্তু আমি অফিস ফেলে কি করে যাব?
লোকে বলদা বলে ডাকে খালি খালি? আমিনা ঠিকই বলেছিল হাবাগোবা। শুষ্ক হাসি টেনে বলেন,আজ বাড়ি যাও। কাল বলে আসবে রাতে ফিরবে না,আমার বাসায় দাওয়াত।
--তোমার শরীর ভালো আছে?একটু দাঁড়াও দরজা বন্ধ করে উপরে দিয়ে আসছি।
জেনিফার হাসলেন বললেন,ঠিক আছে তুমি দরজা বন্ধ করে বাড়ি চলে যাও। তারপর ক্লান্ত শরীর টেনে নিয়ে উপরে উঠে গেলেন। বলদেব দরজা বন্ধ করে চৌকিদারের ঘরে চাবি দিয়ে রাস্তায় নামে।