02-07-2020, 05:46 PM
তৃতীয় পরিচ্ছদ – কালবৈশাখী
(#০১)
সেদিন কিছুক্ষন গল্প ওরে স্বপন চলে যায়। ও মানসী বা কস্তূরী কাউকেই জড়িয়ে ধরে না। শুধু হাত মিলিয়ে বিদায় নেয়। যাবার সময় মানসীকে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে বলে যায়।
(#০১)
একসময় মানসীর কলেজ শেষ হয়। ১৯৮৭ সালের শেষের দিকে ওর রেজাল্ট বের হয়। মানসী ৭১% নম্বর নিয়ে বাংলায় গ্রাজুয়েশন পাশ করে। মানসীর ইচ্ছা ছিল এম.এ. পড়বে। কিন্তু দাদা খরচ করতে রাজী হয় না। আর ওর বাবা বলেন মেয়েদের বেশী পড়ে কি হবে।
সুলগ্না বৌদি বড়দাকে অনেক বলেন মানসীকে এম. এ. পড়তে দেবার জন্য। কিন্তু বড়দা বা মানসীর বাবা কিছুতেই মেনে নেন না। মানসীর বাবা বলেন বেশী পড়াশুনা করে মেয়েদের কাজই বা কি ! তার থেকে বিয়ে দিয়ে দাও। চার পাঁচটা বাচ্চা হোক। ছেলে মেয়েদের মানুষ করুক। ব্যস হয়ে গেল।
সুলগ্না বৌদি মানসীকে কোন একটা কলেজে কাজ জোগাড় করতে বলে। এই সময় কস্তূরী মানসীকে সাহায্য করে। কস্তূরী ওর বাবাকে বলে একটা প্রাইভেট কলেজে মানসীর জন্য বাংলা শিক্ষিকার কাজ জোগাড় করে দেয়। একদিন মানসী কলেজ থেকে ফিরলে সুলগ্না বৌদি ওকে ডাকে। বৌদি মানসীকে একটা কাগজ দেয় আর বলে সাবধানে লুকিয়ে রাখতে।
মানসী – এটা কি বৌদি ?
সুলগ্না – এটা এক লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট – এর কাগজ। তোমার নামে করেছি। তুমি পাশ করেছ তাই উপহার দিলাম।
মানসী – তা বলে এতো টাকা ! আর বৌদি আমি টাকা দিয়ে কি করবো ?
সুলগ্না – এই টাকা যে আমি তোমাকে দিলাম সেটা তোমার দাদা, বাবা, মা কাউকে বলবে না।
মানসী – কিন্তু কেন ?
সুলগ্না – দেখো তোমার কোন দাদাকেই আমার ভরসা হয় ন। যে যার নিজের স্বার্থ বোঝে। তুমি সাধা সিধে মেয়ে, নিজের স্বার্থ একটুও বোঝো না। তোমার কি হবে সে নিয়ে কেউ ভাববে বলে আমার মনে হয় না। এই টাকাটা রাখ, সময়ে অসময়ে কাজে লাগবে।
মানসী ওর বৌদিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। মানসী বুঝত যে কেউ ওকে নিয়ে সেরকম চিন্তা করে না। কিন্তু নিজের জন্য কিছু আদায় করে নেওয়া ওর ধাতে নেই। ও জানত যে ওর বৌদিই শুধু ওর জন্য চিন্তা করে, তা বলে এতোটা মানসীও আশা করতে পারেনি। ও কাগজগুলো বৌদির কাছেই রেখে দিতে চায়, বলে যে ও পরে নিয়ে যাবে। কিন্তু সুলগ্না বৌদি তাতে রাজী হয় না। জোর করে মানসীকেই দিয়ে দেয়।
স্বপনের সাথেও অনেকদিন দেখা হয় নি। ও একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, এদিকে বেশী সময় দিতে পারে না। কিন্তু মানসী বুঝতে পারে স্বপন ইচ্ছা করেই আসে না। এর জন্য মানসী নিজেকেই দায়ী করে। স্বপনকে কোন দোষ দেয় না। আর কোন মেয়ে যাকে ভালবাসে, তার দোষ থাকলেও দোষ দেখে না। তাই এক্ষেত্রে মানসী বোঝে ওরই দুর্বলতার কারণে স্বপন আসে না। ও ভাবে একবার নিহারিকার সাথে কথা বলবে।
কাকতালীয় ভাবে স্বপন আর নিহারিকা তার পরেরদিন ওদের বাড়ি আসে। স্বপন মানসীকে পাশ করার উপহার দিতে এসেছিলো। স্বপন ওকে একটা কৃষ্ণের মূর্তি উপহার দেয়। সবাই বলে শুধু কৃষ্ণ কেন, রাধা কোথায় গেল?
স্বপন বলে যে ও রাধাকে খুব একটা পছন্দ করে না। যে মামীমা নিজের স্বামীকে ভুলে ভাগ্নের পেছনে ঘুরে বেড়ায় তাকে আর যাই হোক ভক্তি করা যায় না।
শ্রেয়সী এই নিয়ে তর্ক করতে যাচ্ছিল কিন্তু বড়দা থামিয়ে দেন।
বড়দা – আমরা এই বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করবো না। স্বপনের শুধু কৃষ্ণ পছন্দ তাই ও সেটা উপহার হিসাবে নিয়ে এসেছে। মানসী এটা নিয়ে তোমার পুজার আসনে রেখে দাও।
স্বপন – বড়দা আপনি কি একটু রাগ করেছেন ?
বড়দা – না ভাই। তোমার চিন্তাতে অনেক যুক্তি আছে। কিন্তু এখানে কারো তোমার কথার তাৎপর্য বোঝার মতো ম্যাচিওরিটি নেই।
স্বপন – মানসী বোঝে
বড়দা – আমার মনে হয় আমার বোন দের আমি তোমার থেকে একটু বেশী দিন ধরে জানি।
স্বপন আর কথা বাড়ায় না। বড়দার অনেক বুদ্ধি। উনি বোঝেনও সব কিছু। শুধু নিজের ইগো আছে সেটা বোঝেন না। স্বপনও বড়দার সাথে বেশী কথা বলে না। বড়দা একটু পরে “আমার একটা মিটিং আছে” বলে চলে যান।
স্বপন মানসীদের সাথে ওদের ছাদে যায়। ওদের ছাদটা খুব সুন্দর। ছাদ ভর্তি তবে ফুলের গাছ। সব বড়দা দেখাশোনা করে। ততক্ষনে নিহারিকা কস্তূরীকে ডেকে এনেছে। কস্তূরীর বাড়ি ওদের বাড়ির কাছেই। কস্তূরী আসলে স্বপন ওকে একটা বারবি ডল উপহার দেয়। কস্তূরীও বি এ পাশ করেছিল।
শ্রেয়সী জিজ্ঞাসা করে ওর জন্য স্বপন কি এনেছে। স্বপন বলে যে যেদিন শ্রেয়সী বিএ পাশ করবে সেদিন উপহার দেবে। শ্রেয়সী মনঃক্ষুন্ন হয়ে নিচে চলে যায়।
নিহারিকা বলে স্বপনের কিছু একটা উপহার শ্রেয়সীর জন্যেও আনা উচিত ছিল।
স্বপন – আমি যদি আজ শ্রেয়সীর জন্য কোন উপহার আনতাম তবে মানসী আর কস্তূরীর কৃতিত্বকে ছোটো করে দেখা হত।
নিহারিকা – তোমার সাথে তর্ক করাই বৃথা
স্বপন – অন্য সময়ে শ্রেয়সীর জন্য কিছু উপহার নিয়ে আসলেই হবে।
সেদিন কিছুক্ষন গল্প ওরে স্বপন চলে যায়। ও মানসী বা কস্তূরী কাউকেই জড়িয়ে ধরে না। শুধু হাত মিলিয়ে বিদায় নেয়। যাবার সময় মানসীকে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে বলে যায়।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!