28-02-2019, 01:43 PM
(This post was last modified: 28-02-2019, 02:08 PM by ronylol. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব- ৫২- সিঙ্গাপুরঃ
এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে বেরিয়ে দীপা তো অবাক. এ কোথায় আছে স্বর্গ নয় তো? সামনে একটা রাস্তা বা হাই ওয়ে, তার ঠিক ওপর দিয়ে ৪ তে ঝুলন্ত উড়ালপুল. একেকটা একেক উচ্চতায়. না দেখলে কেউ বিশ্বাস ই করতে পারবেনা যে এরকম ও হয়. দীপা মুগ্ধ দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকলো. ও অনেক শুনেছে সমুর থেকে বিদেশের সম্বন্ধে সেখানকার রাস্তা ঘাটের সম্বন্ধে, কিন্তু ইটা যা সুনেছিল তার চেয়ে অনেক অনেক ভালো. মনে মনে ভাবলো তমাল এর সত্যি কিছু আইডিয়া আছে গোটা দুনিয়া সম্পর্কে. যা মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে শেষ ৩ তে মাস অর কেটেছে মন তা কে ঠিক করার জন্য সত্যি ই এর চেয়ে ভালো আর অন্য কোনো জায়গা হতেই পারতনা. তমাল দীপার দিকে তাকিয়ে বলল
তমাল: যেন দীপা এই সিঙ্গাপুর তা খুব ছোট একটা দেশ. এক সপ্তাহের মধ্যে তুমি সব গুলো জায়গায় ঘুরে নিতে পারবে.
দীপা: এত ছোট একটা দেশ অথচ কি সুন্দর, ভাবাই যায়না.
তমাল: এক সময় এই দেশের সব মানুষের জন্য ঘর ছিলনা. মানুষের সংখ্যার তুলনায় দেশ তার আয়তন খুব ছোট. দেশের অর্ধেক মানুষ বাধ্য হয়ে রাস্তায় সুতো.
দীপা: এত ছোট এই দেশ?
তমাল: হা এতটাই ছোট. তারপর দেশের সরকার দেশের সমস্ত সিভিল আর মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার দের দেকে একটা কমিটি তৈরী করলো. এই কমিটি ঠিক করলো যে বিশাল উচ্চতার বহুতল বাড়ি বানালে বাসস্থানের অসুবিধা তা চলে যাবে.
দীপা: বাহ ভালো আইডিয়া তো.
তমাল: হা তারপর পুরো দেশ তাকে ওরা ভেঙ্গে গুড়িয়ে আবার নতুন করে বানিয়ে ফেলল. এই দেশে এখন সবার কাছে ঘর আছে. যেন সিঙ্গাপুরের বাড়িগুলোর গড় উছতা কত?
দীপা: কত?
তমাল: গড়ে প্রত্যেকটা বাড়ি দশ তলা. এখন বুঝবেনা এই হাই ওয়ে তা পেরিয়ে আমরা যখন মূল সহরে ঢুকব তখন তুমি দুপাশে তাকালেই বুঝতে পারবে. আমি এর চেয়ে সুন্দর গোছানো জায়গা গোটা পৃথিবী তে আর একটাও দেখিনি.
দীপা: মুগ্ধ হয়ে তমালের দিকে চেয়ে থাকলো. এই মানুষ তা বাচ্জরে অন্তত ১০ বার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যায়. কি সুন্দর এর জীবন. আর আমি চেন্নাই এর এক জঙ্গলের মধ্যে পরে পরে মরছি. ইস যদি আমিও ঘুরতে পারতাম এই রকম পুরো দুনিয়াটা, তাহলে কতই না মজা হত.
তমাল: কি ভাবছ দীপা?
দীপা: তুমি কত কিছু যেন তমাল?
তমাল: তুমিও আসতে আসতে সব শিখে যাবে. যখন তুমি সিঙ্গাপুর ছাড়বে আমি কথা দিলাম তোমায় একদম সম্পূর্ণ আলাদা এক দীপা চেন্নাই তে ফিরে যাবে. বিশ্বাস রাখো আমার ওপর.
দীপা: এত সপ্ন দেখিও না তমাল. ভয় লাগে.
অনেক ক্ষণ হয়ে গেল ওরা বাইরে দাড়িয়ে আছে. এবার একটা ট্যাক্সি বা অন্য কিছুর খোজ করতে হবে. দীপা ওখানেই লাগেজ গুলোর কাছে দাড়িয়ে থাকলো, আর তমাল গেল একটা ট্যাক্সি হায়ার করতে. দীপা মুগ্ধ হয়ে চারদিকে দেখতে লাগলো.
তমালের সাথে একটা কম বয়সী এই ২০-২৫ বয়সের একটা ছেলে এগিয়ে এলো. তমাল বলল:
তমাল: দীপা এ ভারতীয় এবং বাঙালি. মুর্শিদাবাদের ছেলে নাম আক্রাম.
দীপা: বাহ বাঙালি তাহলে তো খুব ভালো হলো. আমি অর কথা বুঝতে পারব.
তমাল: হা খুব ভালো হলো. সন আক্রাম আমরা তোমার দেশের লোক. যখন ই প্রয়োজন হবে তোমায় ফোন করব. তুমি অন্য সব কাজ ফেলে দিয়ে আমাদের কাছেই চলে আসবে কেমন.
আক্রাম: স্যার সে আর বলতে. বাঙালি বলে কথা.
দীপা: তমাল আমরা এবার যাব কোথায়?
তমাল: আক্রাম এখানে ভালো হোটেল কোথায় আছে?
আক্রাম: স্যার কিরকম হোটেল খুজছেন?
তমাল: ফাইভ স্টার.
দীপা ফাইভ স্টার হোটেলের কথা ছোট বেলা থেকেই শুনেছে. বড় বড় ফিল্ম স্টার ক্রিকেটের রা ঐসব হোটেলেই ওঠে. দীপার মনে বিশাল উত্তেজনা সৃষ্টি হলো. এতদিন যে জায়গার কথা ও শুধু ভেবেছে আজ সেখানেই এসে উঠবে. সত্যি তমাল কত কেয়ার করে অর জন্য. ও তো চাইলে যেকোনো সস্তার হোটেলেই নিয়ে গিয়ে ওকে তুলতে পারত.
তমাল: এখানে কি কি ফাইভ স্টার হোটেল রয়েছে?
আক্রাম: স্যার সিঙ্গাপুরে তো প্রতি ১০০ মিটার দুরত্বে একটা করে ফাইভ স্টার হোটেল. আপনারা কোন জায়গাতে থাকবেন বলুন সেভাবে আপনাদের হোটেল খুঁজে দেব.
তমাল: মিডল সিঙ্গাপুর তাই ভালো, ওখান থেকে মোটামুটি সব জায়গা গুলি কাছাকাছি.
আক্রাম: স্যার ওই জায়গা তা কিন্তু খুব এক্ষ্পেন্সিভ.
তমাল: তা হোক গে, রোজ রোজ তো আর আসছিনা. যখন আসি একটু ভালো করে ঘুরে দেখি. ভালো জায়গায় থাকি.
দীপা খুব ইমপ্রেস হলো তমালের এই কোথায়. মনে মনে ভাবলো সত্যি কি অন্তর তমাল আর সমুর. একজন সুখ পাওয়ার জন্য কোনো চিন্তায় করেনা, টাকা পয়সা নিয়ে ভাবেনা. আরেকজন খালি ফিউচার এর কথা চিন্তা করে বর্তমান তাকে নষ্ট করে.
এদিকে আক্রাম ও গাড়ি চালাতে শুরু করে দিল. গাড়িটা আসতে আসতে হাই ওয়ে দিয়ে দু নম্বর উড়াল পুলটার ওপর গিয়ে উঠলো. দীপা তো হাসি হাসি মুখ করে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে. সত্যি কি সুন্দর লাগছে এই জায়গাটা. ইস যদি প্লেন থেকে ঠিক এই জায়গাটা একবার দেখত আরো আরো সুন্দর লাগত. গাড়িটা আসতে আসতে অনেক উচুতে উঠে গেল. এখান থেকে এয়ারপোর্ট তা ভিশন ছোট খানিকটা একটা পান দোকানের মত দেখাচ্ছে. রাস্তা কখনো এত উচুতে উঠতে পারে নাকি. গাড়িটা আর কিছুটা যাওয়ার পর রাস্তাটা ঢালু হয়ে নিচে নামতে শুরু করলো. ঠিক যতটা ওপরে ওরা উঠেছিল তার দ্বিগুন নিচে গাড়িটা নেমে গেল. হঠাত সামনে একটা গুহার মত জায়গা. ভেতরে গাড়িটা ঢোকার পর চারদিক থেকে হলুদ এল এসে ওদের শরীর তা কে চকমক করাতে লাগলো. আর ২ মিনিট পর গাড়িটা আবার গিয়ে একটা মেন রোড এ উঠলো.
তমাল: দীপা দেখো চারপাশ তা.
দীপা মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকলো কি বিশাল বিশাল লম্বা লম্বা সব বিল্ডিং. আর দেখতেও কি সুন্দর বিল্ডিং গুলোকে. রাস্তার দুপাশে কাছের দেওয়াল. আর তার ওপাশে হয়ত অতি এখানকার ফুটপাথ. সারি দিয়ে অজস্র মানুষ হেটে চলেছে. মানুষ গুলো কি হাসি খুশি মনে কোনো কষ্ট নেই কোনো দুক্ষ নেই. কি আনন্দেই না ওরা থাকে. হয়ত এখান কার এই বিলাসিতা এই লাইফ স্টাইল ই ওদের আনন্দের কারণ.
তমাল: ভালো লাগছে দীপা?
দীপা: হা খুব সুন্দর. এরকম জায়গা জীবনে প্রথম বার দেখলাম.
তমাল: আক্রাম এখান থেকে মিডল আর কতটা?
আক্রাম: স্যার আমরা মিডল এই আছি. আরেকটু ভেতরে যাচ্ছি যাতে সব গুলো জায়গায় আপনার কাছাকাছি হয়.
দীপা: দেখো তমাল, এখানে কি চিনের লোক বেশি. সব চীনাদের মত দেখতে লাগছে. বেটে বেটে চোখ গুলো ছোট ছোট. একদম ছোটবেলায় একবার দার্জিলিং গেছিলাম, অল্প অল্প মনে আছে ওখানেও এরকম ই লোক ছিল.
তমাল: (একটু হেসে) একদম ঠিক বলেছ দীপা. সিঙ্গাপুরের প্রধান ভাষা হলো চীনা. আর এখানের অধিকাংশ লোক ই একসময় চীন থেকেই এসেছেন. যেন এখানে প্রচুর ভারতীয় মূলত তামিল রা থাকে.
আক্রাম: না স্যার বিশাল কিছু এখন আর থাকেনা. তবে অল্প কিছু তামিল ও আছে.
দীপা: আমার চীনা লোক দের খুব ভালো লাগে. কি কিউট দেখতে. মনে হয় গাল গুলো টিপে দি.
আক্রাম হেসে ফেলল.
তমাল: আরে ৭ দিন তো থাকবে. যত ইচ্ছে এদের গাল টিপে দিও.
এবার আক্রাম বিশাল জোরে হেসে ফেলল.
আক্রাম: স্যার এই জায়গায় পর পর ৩ তে হোটেল. প্রথম তা লুক্সেবার্গ, তারপরের তা বেজিং হোটেল আর শেষের তা হোটেল ইলাহী. ইলাহী বিশাল খরচ বহুল এক সপ্তাহে আপনাদের ইন্ডিয়ান কারেন্সি তে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা চলে যাবে.
তমাল: তুমি ইলাহী এর সামনেই দাড়াও.
দীপা শুনে চমকে গেল. ওরা একটা বিশাল হোটেল এর সামনে দাড়ালো. দীপা ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকলো. প্রায় ৩০ তলা হবে.
তমাল: টাকাটা কোনো বাপার নয় আক্রাম, কিন্তু এখানে সব ধরণের বিলাস এর ব্যবস্থা আছে তো?
আক্রাম: ঠিক কি ধরণের বিলাস বলছেন আপনি?
তমাল: (মুচকি হেসে) সব.
আক্রাম: (একবার দীপার দিকে তাকিয়ে) স্যার এর চেয়ে ভালো হোটেল পুরো পৃথিবীতে আপনি পাবেননা.
তমাল: (পকেট থেকে একটা ডলার এর বান্ডিল বার করে আক্রাম এর হাতে দিয়ে) ইটা রাখো. তোমায় তো মাঝে মধ্যেই ডাকব. যে টাকাটা বেছে যাবে তা তোমার বখশিশ. আর কম পড়লে চেয়ে নিও.
আক্রাম সেলাম ঠুকে বেরিয়ে গেল.
ওরা দুজন হোটেল এ প্রবেশ করলো. দেওয়াল গুলোতে কাঁচের তৈরী কতগুলো সোকেস আর তার মধ্যে সমুদ্রের ঢেউ এর মতন জলের প্রতিবিম্ব ভেসে উঠছে. সামনেই কতগুলো কাঁচের তৈরী লিফট ওপরে উঠে যাচ্ছে. একটা লিফট এ ২ জনের বেশি নেই. দীপা তো এসব দেখে ঘোরের মধ্যে চলে গেল. একজন স্যুট পরা লোক এগিয়ে এসে তমালের সাথে ইংলিশ এ কিছু কথা বলল আর আবার চলে গেল. তমাল দিপাকে ডেকে বলল
তমাল: অপরের দিকে দেখো.
দীপা ওপরে তাকিয়ে দেখল, ঠিক এয়ারপোর্ট এর বোর্ড এর মত একটা ইলেকট্রনিক বোর্ড. আর তাতে জলজল করে ভাসছে রুম নম্বর ৩০-৫৩০----তমাল সেন আর দীপা চৌধুরী. দীপা আনন্দে তাকিয়েই থাকলো.
তমাল: প্রথম ৩০ এর মানে হলো আমরা ৩০ তলায় থাকব.
দীপা: এত ওপরে আমার ভয় করবে তমাল.
তমাল: কিসের ভয়, আমি আছি তো. আর আমাদের রুম নম্বর ৫৩০.
এবার দীপার শরীরে একটা শিহরণ বয়ে গেল. মন তা খুব চঞ্চল হয়ে উঠলো.
দীপা: একটাই রুম?
তমাল: (একটু হেসে) হা এখানে প্রতি দুজনে একটা রুম. দেখবে প্রত্যেক রুম এ দুজন থাকে.
দীপা একটু শান্ত হয়ে গেল. একটা লিফট বেয়ে ওরা দুজন উঠতে লাগলো ৩০ তলায়.
এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে বেরিয়ে দীপা তো অবাক. এ কোথায় আছে স্বর্গ নয় তো? সামনে একটা রাস্তা বা হাই ওয়ে, তার ঠিক ওপর দিয়ে ৪ তে ঝুলন্ত উড়ালপুল. একেকটা একেক উচ্চতায়. না দেখলে কেউ বিশ্বাস ই করতে পারবেনা যে এরকম ও হয়. দীপা মুগ্ধ দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকলো. ও অনেক শুনেছে সমুর থেকে বিদেশের সম্বন্ধে সেখানকার রাস্তা ঘাটের সম্বন্ধে, কিন্তু ইটা যা সুনেছিল তার চেয়ে অনেক অনেক ভালো. মনে মনে ভাবলো তমাল এর সত্যি কিছু আইডিয়া আছে গোটা দুনিয়া সম্পর্কে. যা মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে শেষ ৩ তে মাস অর কেটেছে মন তা কে ঠিক করার জন্য সত্যি ই এর চেয়ে ভালো আর অন্য কোনো জায়গা হতেই পারতনা. তমাল দীপার দিকে তাকিয়ে বলল
তমাল: যেন দীপা এই সিঙ্গাপুর তা খুব ছোট একটা দেশ. এক সপ্তাহের মধ্যে তুমি সব গুলো জায়গায় ঘুরে নিতে পারবে.
দীপা: এত ছোট একটা দেশ অথচ কি সুন্দর, ভাবাই যায়না.
তমাল: এক সময় এই দেশের সব মানুষের জন্য ঘর ছিলনা. মানুষের সংখ্যার তুলনায় দেশ তার আয়তন খুব ছোট. দেশের অর্ধেক মানুষ বাধ্য হয়ে রাস্তায় সুতো.
দীপা: এত ছোট এই দেশ?
তমাল: হা এতটাই ছোট. তারপর দেশের সরকার দেশের সমস্ত সিভিল আর মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার দের দেকে একটা কমিটি তৈরী করলো. এই কমিটি ঠিক করলো যে বিশাল উচ্চতার বহুতল বাড়ি বানালে বাসস্থানের অসুবিধা তা চলে যাবে.
দীপা: বাহ ভালো আইডিয়া তো.
তমাল: হা তারপর পুরো দেশ তাকে ওরা ভেঙ্গে গুড়িয়ে আবার নতুন করে বানিয়ে ফেলল. এই দেশে এখন সবার কাছে ঘর আছে. যেন সিঙ্গাপুরের বাড়িগুলোর গড় উছতা কত?
দীপা: কত?
তমাল: গড়ে প্রত্যেকটা বাড়ি দশ তলা. এখন বুঝবেনা এই হাই ওয়ে তা পেরিয়ে আমরা যখন মূল সহরে ঢুকব তখন তুমি দুপাশে তাকালেই বুঝতে পারবে. আমি এর চেয়ে সুন্দর গোছানো জায়গা গোটা পৃথিবী তে আর একটাও দেখিনি.
দীপা: মুগ্ধ হয়ে তমালের দিকে চেয়ে থাকলো. এই মানুষ তা বাচ্জরে অন্তত ১০ বার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যায়. কি সুন্দর এর জীবন. আর আমি চেন্নাই এর এক জঙ্গলের মধ্যে পরে পরে মরছি. ইস যদি আমিও ঘুরতে পারতাম এই রকম পুরো দুনিয়াটা, তাহলে কতই না মজা হত.
তমাল: কি ভাবছ দীপা?
দীপা: তুমি কত কিছু যেন তমাল?
তমাল: তুমিও আসতে আসতে সব শিখে যাবে. যখন তুমি সিঙ্গাপুর ছাড়বে আমি কথা দিলাম তোমায় একদম সম্পূর্ণ আলাদা এক দীপা চেন্নাই তে ফিরে যাবে. বিশ্বাস রাখো আমার ওপর.
দীপা: এত সপ্ন দেখিও না তমাল. ভয় লাগে.
অনেক ক্ষণ হয়ে গেল ওরা বাইরে দাড়িয়ে আছে. এবার একটা ট্যাক্সি বা অন্য কিছুর খোজ করতে হবে. দীপা ওখানেই লাগেজ গুলোর কাছে দাড়িয়ে থাকলো, আর তমাল গেল একটা ট্যাক্সি হায়ার করতে. দীপা মুগ্ধ হয়ে চারদিকে দেখতে লাগলো.
তমালের সাথে একটা কম বয়সী এই ২০-২৫ বয়সের একটা ছেলে এগিয়ে এলো. তমাল বলল:
তমাল: দীপা এ ভারতীয় এবং বাঙালি. মুর্শিদাবাদের ছেলে নাম আক্রাম.
দীপা: বাহ বাঙালি তাহলে তো খুব ভালো হলো. আমি অর কথা বুঝতে পারব.
তমাল: হা খুব ভালো হলো. সন আক্রাম আমরা তোমার দেশের লোক. যখন ই প্রয়োজন হবে তোমায় ফোন করব. তুমি অন্য সব কাজ ফেলে দিয়ে আমাদের কাছেই চলে আসবে কেমন.
আক্রাম: স্যার সে আর বলতে. বাঙালি বলে কথা.
দীপা: তমাল আমরা এবার যাব কোথায়?
তমাল: আক্রাম এখানে ভালো হোটেল কোথায় আছে?
আক্রাম: স্যার কিরকম হোটেল খুজছেন?
তমাল: ফাইভ স্টার.
দীপা ফাইভ স্টার হোটেলের কথা ছোট বেলা থেকেই শুনেছে. বড় বড় ফিল্ম স্টার ক্রিকেটের রা ঐসব হোটেলেই ওঠে. দীপার মনে বিশাল উত্তেজনা সৃষ্টি হলো. এতদিন যে জায়গার কথা ও শুধু ভেবেছে আজ সেখানেই এসে উঠবে. সত্যি তমাল কত কেয়ার করে অর জন্য. ও তো চাইলে যেকোনো সস্তার হোটেলেই নিয়ে গিয়ে ওকে তুলতে পারত.
তমাল: এখানে কি কি ফাইভ স্টার হোটেল রয়েছে?
আক্রাম: স্যার সিঙ্গাপুরে তো প্রতি ১০০ মিটার দুরত্বে একটা করে ফাইভ স্টার হোটেল. আপনারা কোন জায়গাতে থাকবেন বলুন সেভাবে আপনাদের হোটেল খুঁজে দেব.
তমাল: মিডল সিঙ্গাপুর তাই ভালো, ওখান থেকে মোটামুটি সব জায়গা গুলি কাছাকাছি.
আক্রাম: স্যার ওই জায়গা তা কিন্তু খুব এক্ষ্পেন্সিভ.
তমাল: তা হোক গে, রোজ রোজ তো আর আসছিনা. যখন আসি একটু ভালো করে ঘুরে দেখি. ভালো জায়গায় থাকি.
দীপা খুব ইমপ্রেস হলো তমালের এই কোথায়. মনে মনে ভাবলো সত্যি কি অন্তর তমাল আর সমুর. একজন সুখ পাওয়ার জন্য কোনো চিন্তায় করেনা, টাকা পয়সা নিয়ে ভাবেনা. আরেকজন খালি ফিউচার এর কথা চিন্তা করে বর্তমান তাকে নষ্ট করে.
এদিকে আক্রাম ও গাড়ি চালাতে শুরু করে দিল. গাড়িটা আসতে আসতে হাই ওয়ে দিয়ে দু নম্বর উড়াল পুলটার ওপর গিয়ে উঠলো. দীপা তো হাসি হাসি মুখ করে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে. সত্যি কি সুন্দর লাগছে এই জায়গাটা. ইস যদি প্লেন থেকে ঠিক এই জায়গাটা একবার দেখত আরো আরো সুন্দর লাগত. গাড়িটা আসতে আসতে অনেক উচুতে উঠে গেল. এখান থেকে এয়ারপোর্ট তা ভিশন ছোট খানিকটা একটা পান দোকানের মত দেখাচ্ছে. রাস্তা কখনো এত উচুতে উঠতে পারে নাকি. গাড়িটা আর কিছুটা যাওয়ার পর রাস্তাটা ঢালু হয়ে নিচে নামতে শুরু করলো. ঠিক যতটা ওপরে ওরা উঠেছিল তার দ্বিগুন নিচে গাড়িটা নেমে গেল. হঠাত সামনে একটা গুহার মত জায়গা. ভেতরে গাড়িটা ঢোকার পর চারদিক থেকে হলুদ এল এসে ওদের শরীর তা কে চকমক করাতে লাগলো. আর ২ মিনিট পর গাড়িটা আবার গিয়ে একটা মেন রোড এ উঠলো.
তমাল: দীপা দেখো চারপাশ তা.
দীপা মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকলো কি বিশাল বিশাল লম্বা লম্বা সব বিল্ডিং. আর দেখতেও কি সুন্দর বিল্ডিং গুলোকে. রাস্তার দুপাশে কাছের দেওয়াল. আর তার ওপাশে হয়ত অতি এখানকার ফুটপাথ. সারি দিয়ে অজস্র মানুষ হেটে চলেছে. মানুষ গুলো কি হাসি খুশি মনে কোনো কষ্ট নেই কোনো দুক্ষ নেই. কি আনন্দেই না ওরা থাকে. হয়ত এখান কার এই বিলাসিতা এই লাইফ স্টাইল ই ওদের আনন্দের কারণ.
তমাল: ভালো লাগছে দীপা?
দীপা: হা খুব সুন্দর. এরকম জায়গা জীবনে প্রথম বার দেখলাম.
তমাল: আক্রাম এখান থেকে মিডল আর কতটা?
আক্রাম: স্যার আমরা মিডল এই আছি. আরেকটু ভেতরে যাচ্ছি যাতে সব গুলো জায়গায় আপনার কাছাকাছি হয়.
দীপা: দেখো তমাল, এখানে কি চিনের লোক বেশি. সব চীনাদের মত দেখতে লাগছে. বেটে বেটে চোখ গুলো ছোট ছোট. একদম ছোটবেলায় একবার দার্জিলিং গেছিলাম, অল্প অল্প মনে আছে ওখানেও এরকম ই লোক ছিল.
তমাল: (একটু হেসে) একদম ঠিক বলেছ দীপা. সিঙ্গাপুরের প্রধান ভাষা হলো চীনা. আর এখানের অধিকাংশ লোক ই একসময় চীন থেকেই এসেছেন. যেন এখানে প্রচুর ভারতীয় মূলত তামিল রা থাকে.
আক্রাম: না স্যার বিশাল কিছু এখন আর থাকেনা. তবে অল্প কিছু তামিল ও আছে.
দীপা: আমার চীনা লোক দের খুব ভালো লাগে. কি কিউট দেখতে. মনে হয় গাল গুলো টিপে দি.
আক্রাম হেসে ফেলল.
তমাল: আরে ৭ দিন তো থাকবে. যত ইচ্ছে এদের গাল টিপে দিও.
এবার আক্রাম বিশাল জোরে হেসে ফেলল.
আক্রাম: স্যার এই জায়গায় পর পর ৩ তে হোটেল. প্রথম তা লুক্সেবার্গ, তারপরের তা বেজিং হোটেল আর শেষের তা হোটেল ইলাহী. ইলাহী বিশাল খরচ বহুল এক সপ্তাহে আপনাদের ইন্ডিয়ান কারেন্সি তে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা চলে যাবে.
তমাল: তুমি ইলাহী এর সামনেই দাড়াও.
দীপা শুনে চমকে গেল. ওরা একটা বিশাল হোটেল এর সামনে দাড়ালো. দীপা ওপর দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকলো. প্রায় ৩০ তলা হবে.
তমাল: টাকাটা কোনো বাপার নয় আক্রাম, কিন্তু এখানে সব ধরণের বিলাস এর ব্যবস্থা আছে তো?
আক্রাম: ঠিক কি ধরণের বিলাস বলছেন আপনি?
তমাল: (মুচকি হেসে) সব.
আক্রাম: (একবার দীপার দিকে তাকিয়ে) স্যার এর চেয়ে ভালো হোটেল পুরো পৃথিবীতে আপনি পাবেননা.
তমাল: (পকেট থেকে একটা ডলার এর বান্ডিল বার করে আক্রাম এর হাতে দিয়ে) ইটা রাখো. তোমায় তো মাঝে মধ্যেই ডাকব. যে টাকাটা বেছে যাবে তা তোমার বখশিশ. আর কম পড়লে চেয়ে নিও.
আক্রাম সেলাম ঠুকে বেরিয়ে গেল.
ওরা দুজন হোটেল এ প্রবেশ করলো. দেওয়াল গুলোতে কাঁচের তৈরী কতগুলো সোকেস আর তার মধ্যে সমুদ্রের ঢেউ এর মতন জলের প্রতিবিম্ব ভেসে উঠছে. সামনেই কতগুলো কাঁচের তৈরী লিফট ওপরে উঠে যাচ্ছে. একটা লিফট এ ২ জনের বেশি নেই. দীপা তো এসব দেখে ঘোরের মধ্যে চলে গেল. একজন স্যুট পরা লোক এগিয়ে এসে তমালের সাথে ইংলিশ এ কিছু কথা বলল আর আবার চলে গেল. তমাল দিপাকে ডেকে বলল
তমাল: অপরের দিকে দেখো.
দীপা ওপরে তাকিয়ে দেখল, ঠিক এয়ারপোর্ট এর বোর্ড এর মত একটা ইলেকট্রনিক বোর্ড. আর তাতে জলজল করে ভাসছে রুম নম্বর ৩০-৫৩০----তমাল সেন আর দীপা চৌধুরী. দীপা আনন্দে তাকিয়েই থাকলো.
তমাল: প্রথম ৩০ এর মানে হলো আমরা ৩০ তলায় থাকব.
দীপা: এত ওপরে আমার ভয় করবে তমাল.
তমাল: কিসের ভয়, আমি আছি তো. আর আমাদের রুম নম্বর ৫৩০.
এবার দীপার শরীরে একটা শিহরণ বয়ে গেল. মন তা খুব চঞ্চল হয়ে উঠলো.
দীপা: একটাই রুম?
তমাল: (একটু হেসে) হা এখানে প্রতি দুজনে একটা রুম. দেখবে প্রত্যেক রুম এ দুজন থাকে.
দীপা একটু শান্ত হয়ে গেল. একটা লিফট বেয়ে ওরা দুজন উঠতে লাগলো ৩০ তলায়.