02-07-2020, 10:04 AM
(#৭)
নিহারিকা – এইসব কথা পরে হবে, এখন অন্য কিছু বল।
আমাদের গল্প মানসীকে নিয়ে। তাই আমরা স্বপন আর নিহারিকার জীবনে কি ভাবে কি হয়েছিল বা ওরা কবে চুমু খেয়েছিল তার মধ্যে যাব না। সেদিন ওরা চারজনে আরও অনেকক্ষণ গল্প করে। কস্তূরীও স্বপনের বন্ধু হয়ে যায়। সেদিন বেলুর মঠ থেকে ফেরার পরে মানসী আর কস্তূরী অনেক সময় চুপ করে থাকে। স্বপন ওদের কে Positive Thinking আর Positive Attitude-এর কথা বলেছিল। ওরা সেটা নিয়ে কিছু কথা বলে।
আগেই বলেছি কস্তূরী একটু পয়সা ওয়ালা ঘরের মেয়ে। ও বাবাকে বলে তিনটে বারবি পুতুল কেনে। বাব্র কাছে জিদ করে সেই পুতুলের মত ড্রেস বানায়। ওর বাবা একটু আপত্তি করছিল কিন্তু কস্তূরী ওর পিসিকে বলে সব ম্যানেজ করে। ওর পিসি ওর বাবাকে বোঝায় যে মেয়েটার শরীরে আছেটা কি যে দেখা যাবে ! নিউ মার্কেটের দর্জিদের কাছ থেকে কস্তূরীর নতুন ড্রেস বানানো হয়। কস্তূরী যেদিন প্রথম সেই ড্রেস পড়ে কলেজে আছে ছেলেদের মধ্যে হৈচৈ লেগে যায়। কিন্তু কস্তূরী বা মানসী তাতে পাত্তা দেয় না।
পরের মাসে স্বপন কলকাতায় এলে নিহারিকা ওকে নিয়ে বেলুর মঠে যায়। দুজনে গঙ্গার ধারে বসে কথা বলছিল তখন আগের প্ল্যান অনুযায়ী মানসীও কস্তূরীকে নিয়ে ওখানে ওদের সাথে দেখা করে।
স্বপন – আমার কি ভাগ্য যে এখানে আমার বন্ধুর সাথে দেখা।
মানসী – কেমন আছ স্বপন ?
স্বপন – আমি খুব ভাল, তুমি বা তোমরা কেমন আছ ?
মানসী – আমরাও ভাল আছি। আর দেখো এ হচ্ছে কস্তূরী, আমার সাথে আমার ক্লাসে পড়ে।
স্বপন – আমি স্বপন, মানসীর বন্ধু।
স্বপন হাত বাড়িয়ে দেয় কস্তূরীর দিকে। কস্তূরী একটু ইতস্তত করে হাত মেলায়।
স্বপন – তোমাকে আমি বারবি বলে ডাকবো।
কস্তূরী – বারবি ? সেটা আবার কিরকম নাম ! আর কেনই বা আমাকে বারবি বলবেন ?
স্বপন – বারবি হল পৃথিবীর সব থেকে বিখ্যাত পুতুলের নাম।
কস্তূরী – পুতুলের আবার এইরকম নাম হয় নাকি !
স্বপন – আমেরিকায় হয়। ১৯৫৯ সাল থেকে বারবি বিক্রি হয়। এখন ভারতেও পাওয়া যায়। আমি বা তুমি যখন ছোটো ছিলাম তখন এইসব ছিল না।
কস্তূরী – তো আমার নাম বারবি কেন দেবেন ?
স্বপন – আমার সাথে কেউ ‘আপনি’ করে কথা বললে আমি তার বন্ধু হই না।
কস্তূরী – ঠিক আছে ‘তুমি’ করেই বলব তোমাকে।
স্বপন – বারবির চেহারা একদম তোমার মত। বারবির গায়ের রঙ তোমার মত আর ফিগারও তোমার মত। দুনিয়ার বেশীর ভাগ ইয়ং মেয়ে তোমার মত চেহারা পাওার জন্য তপস্যা করে।
কস্তূরী – তাই !
স্বপন – হ্যাঁ গো তাই। আর আমি রাঙা দিদির কাছে শুনেছি তুমি মোটা হতে পারছ না বলে তোমার খুব দুঃখ।
কস্তূরী – তোমার কাছে লুকাব না। সত্যি স্বপন দা, আমার খুব খারাপ লাগে।
স্বপন – কি খারাপ লাগে ?
কস্তূরী – সব ছেলেরাই আমাকে আর মানসীকে দেখে নাক সিটকায়। ওর রঙ নেই নলে আর আমার চেহারা নেই বলে।
স্বপন – সেটা ওই ছেলেদের সমস্যা, তোমাদের মত বন্ধু মিস করছে। তোমার কি যায় আসে ?
কস্তূরী – আমাদের কোন বন্ধু নেই
স্বপন – সে কারোরই নেই। যে সব ছেলে মেয়ে রঙ বা ফিগার দেখে বন্ধুত্ব করে তারা আসলে বন্ধুত্বর মানেই জানে না। তারা সুবিধাবাদী, ফোকটে যা পাওয়া যায় সেটা নেবার জন্য বন্ধুত্বের ভান করে।
কস্তূরী – তবে বন্ধু কি করে পাব ?
স্বপন – তোমাকে ভগবান যেটা দেন নি সেটা নিয়ে দুঃখ না করে যা যা দিয়েছেন সেটা নিয়ে আনন্দ করো। কিছু জিনিস বা কোয়ালিটি আমরা চেষ্টা করে অর্জন করতে পারি, সেটার চেষ্টা করো। যেটা অর্জন করা যায় না সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার নেই।
কস্তূরী – কি অর্জন করা যায় আর কি অর্জন করা যায় না ?
স্বপন – গায়ের রঙ অর্জন করা যায় না। ফিগার কিছুটা যায় কিন্তু হাইট অর্জন করা যায় না। লেখাপড়া অর্জন করা যায়, বন্ধু অর্জন করা যায়, বাবা মা অর্জন করা যায় না।
নিহারিকা – এত সিরিয়াস আলোচনা করছে কেন তোমরা ?
কস্তূরী – না না ঠিক আছে, আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাইছিলাম এই কথাগুলো শোনার জন্যই।
স্বপন – তুমি আমার সাথে দেখা করতে চাইছিলে ? জানতাম না তো !
নিহারিকা – আমি তোমাকে বলিনি। রাঙা দি আমাকে বলেছিল। তাই আমি এখানে তোমার সাথে আসার প্ল্যান করেছিলাম।
স্বপন – আমার বৌ টা বড় দুষ্টু
মানসী – ও এখনও তোমার বৌ হয় নি
স্বপন – আমার কাছে নিহারিকা প্রথম দিন থেকেই আমার বৌ। সামাজিক স্বীকৃতির অপেক্ষা করছি শুধু।
কস্তূরী – কি ভাল গো তুমি !
স্বপন – কি ভাল দেখলে বারবি ?
মানসী – তুমি বুঝবে না তোমার কি ভাল গুণ আছে
স্বপন – তোমরা বুঝতে পার ?
মানসী – না হলে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করি ?
স্বপন – নিহারিকা বোঝে না গো
নিহারিকা – না বুঝি না, এমনি এমনি তোমার সাথে থাকি !
স্বপন – আমার সাথে থাকো কিন্তু এখনও আমাকে একটাও হামি খেতে দাও নি
নিহারিকা – সেসব সামাজিক স্বীকৃতির পরে হবে
স্বপন – সেইজন্যেই তো বলি যে তুমি এখনও আমাকে পুরো বিশ্বাস করো না
নিহারিকা – বিশ্বাস করি, কিন্তু ভয় লাগে
মানসী – নেহা তোর এটা উচিত নয়, স্বপন তোকে এত ভালবাসে আর তুই কিনা ওর থেকে দূরে থাকিস !
নিহারিকা – এইসব কথা পরে হবে, এখন অন্য কিছু বল।
আমাদের গল্প মানসীকে নিয়ে। তাই আমরা স্বপন আর নিহারিকার জীবনে কি ভাবে কি হয়েছিল বা ওরা কবে চুমু খেয়েছিল তার মধ্যে যাব না। সেদিন ওরা চারজনে আরও অনেকক্ষণ গল্প করে। কস্তূরীও স্বপনের বন্ধু হয়ে যায়। সেদিন বেলুর মঠ থেকে ফেরার পরে মানসী আর কস্তূরী অনেক সময় চুপ করে থাকে। স্বপন ওদের কে Positive Thinking আর Positive Attitude-এর কথা বলেছিল। ওরা সেটা নিয়ে কিছু কথা বলে।
কস্তূরী – সত্যি রে আমরা যা নেই সেটা নিয়েই বেশী ব্যস্ত, যা আছে সেটা দেখি না
মানসী – স্বপনের সাথে চেনা হবার পর থেকে আমি সেটা দেখতে শুরু করেছি
কস্তূরী – চল আজ থেকে আমরা আর দুঃখ করবা না। আমাদের যা আছে তা আরও কিভাবে ভাল করা যায় সেই চেষ্টা করবো।
মানসী – ঠিক আছে। কাল আমি তোর কি কি গুণ আছে সেটা বলব। আর তুই আমার গুনের কথা বলবি।
কস্তূরী – তথাকথিত দোষের কথা একটুও বলব না বা চিন্তা করবো না।
ওরা দুজনেই নিজেদেরকে বদলিয়ে নেবার চেষ্টা করে। নিজেকে বদলাবো ভাবলেই বদলানো অতো সহজ নয়। দুজনেই আস্তে আস্তে ওদের পুরানো বন্ধুদের থেকে দূরে সরে আসে। কিছু ছেলে মেয়ে খুঁজে পায় যারা ওদের মত করেই চিন্তা করে। কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই কম। জীবন চলতে থাকে।
আগেই বলেছি কস্তূরী একটু পয়সা ওয়ালা ঘরের মেয়ে। ও বাবাকে বলে তিনটে বারবি পুতুল কেনে। বাব্র কাছে জিদ করে সেই পুতুলের মত ড্রেস বানায়। ওর বাবা একটু আপত্তি করছিল কিন্তু কস্তূরী ওর পিসিকে বলে সব ম্যানেজ করে। ওর পিসি ওর বাবাকে বোঝায় যে মেয়েটার শরীরে আছেটা কি যে দেখা যাবে ! নিউ মার্কেটের দর্জিদের কাছ থেকে কস্তূরীর নতুন ড্রেস বানানো হয়। কস্তূরী যেদিন প্রথম সেই ড্রেস পড়ে কলেজে আছে ছেলেদের মধ্যে হৈচৈ লেগে যায়। কিন্তু কস্তূরী বা মানসী তাতে পাত্তা দেয় না।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!