02-07-2020, 10:01 AM
দ্বিতীয় পরিচ্ছদ – আলোর ঝলক
(#০৬)
সেই সময় টেলিফোন কম থাকলেও, মানসী আর নিহারিকা দুজনের ঘরেই ফোন ছিল। মানসী নিহারিকার সাথে কথা বলে স্বপনের পরের বারের আসার দিন শুনে নেয়। আর দুজনে মিলে বেলুর মঠে যাবার প্ল্যান করে।
(#০৬)
মানসীর জীবন একই ভাবে কেটে যায়। কলেজের তথাকথিত বন্ধুরা একই ভাবে থাকে। মানসী এখন আর কারো সাথে বেশী কথা বলে না। মাঝে মাঝে শুধু ওর কস্তূরীর সাথে কথা হয়।
কস্তূরী মোটামুটি পয়সাওয়ালা ঘরের মেয়ে। ওর মা নেই, বাবার কাছে মানুষ। মা অনেক ছোটো বেলায় চলে গিয়েছেন। ওর বয়স প্রায় কুড়ি হলেও চেহারা ১২ বছরের মত। একদম রোগা, তার মধ্যে ছোট্ট দুটো বুক। খুব সুন্দর গায়ের রঙ। বাবা ওকে রোজ মাছ, মাংস, কাজু বাদাম, আলমন্ড সব কিছু খাওয়ায়। কিন্তু কস্তূরীর গায়ে মাংস লাগে না। কস্তূরীকেও প্রায় কোন ছেলেই পাত্তা দেয় না। একদিন কস্তূরী আর মানসী গল্প করছিল।
কস্তূরী – দেখ তোর ফিগার আছে কিন্তু গায়ের রঙ নেই
মানসী – তাতে কি হয়েছে ?
কস্তূরী – আর আমার গায়ের রঙ আছে কিন্তু কোন ফিগার নেই।
মানসী – আমার গায়ে একটা রঙ আছে আর তোরও কিছু না কিছু ফিগার আছে।
কস্তূরী – কিন্তু আমাদের যা যা আছে, মানে যে কম্বিনেশনে আছে সেটা ছেলেদের পছন্দ নয়।
মানসী – নয় তো কি যায় আসে।
কস্তূরী – কিচ্ছু যায় আসে না ! তুই কি বস্তু দিয়ে তৈরি ?
মানসী – আমি এই সব ছেলেদের আমার যোগ্য হিসাবে গণ্যই করি না।
কস্তূরী – তবে তুই কোন ছেলেদের পছন্দ করিস ?
মানসী – আমি স্বপনকে ভালবাসি, মানে স্বপনের মত ছেলে পছন্দ করি।
কস্তূরী – কে এই স্বপন ?
মানসী – আমার খুড়তুতো বোন নেহার বয়ফ্রেন্ড। দু বছর পরে বিয়ে করবে।
কস্তূরী – তোর বোনের বয়ফ্রেন্ড তো তোর কি ?
মানসী – তুই স্বপন কে দেখিস নি। ওর সাথে কথা বললে তুইও ওর প্রেমে পরে যাবি।
কস্তূরী – কি এমন রাজপুত্রের মত চেহারা স্বপনের ?
মানসী – ওর চেহারা এমন কিছু নয়। বেশ ফর্সা, কিন্তু একটু ভুঁড়ি আছে। লম্বাও বেশী না।
কস্তূরী – তবে কেন প্রেমে পড়বো ?
মানসী – তুইও তো আকাট ছেলে গুলোর মত কথা বলছিস। স্বপন কোন মেয়ের মধ্যে গায়ের রঙ বা ফিগার দেখে না। ও বন্ধু ঠিক করে মন দেখে।
কস্তূরী – তাই আবার হয় না কি ? মন আবার কি করে দেখে !
মানসী কস্তূরীকে বলে ওর স্বপনের সাথে যে দুবার দেখা হয়েছিল তার কথা। স্বপন ওকে জড়িয়ে ধরলে ওর মনে যে আলোড়ন উঠে ছিল তার কথা।
মানসী – তুই আমার বোনকে দেখিস নি
কস্তূরী – কোন বোন ? নেহা ? না না ওকে কখনও দেখিনি।
মানসী – না আমি বলছি আমার বোন শ্রেয়সীর কথা।
কস্তূরী – না ওকেও দেখিনি। কেন কি হয়েছে ?
মানসী – আমার বোনের গায়ের রঙ আমার মতই আর ফিগার তোর মত।
কস্তূরী – বাপরে, ওকে কোন ছেলে পছন্দ করবে !
মানসী – তার ওপর শ্রেয়সী নিজেকে হেমামালিনি মনে করে।
কস্তূরী – তো কি হয়েছে ?
মানসী – সেই স্বপন শ্রেয়সীর সাথে যে ভাবে কথা বলে বা ওর আবদার মেনে নেয়, তুই দেখলে অবাক হয়ে যাবি।
কস্তূরী – আমি তো শুনেই প্রেমে পরে যাচ্ছি। আমার সাথে একবার আলাপ করিয়ে দে প্লীজ।
মানসী – স্বপন নেহাকে প্রানের থেকে বেশী ভালবাসে। ও নেহা ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে কোন খারাপ ভাবে তাকাবেই না।
কস্তূরী – না না আমিও খারাপ ভাবে কিছু চাইছি না। আমি শুধু একবার ওইরকম ছেলেকে দেখতে চাই।
মানসী – স্বপন রাঁচিতে থাকে। মাসে একবার কলকাতায় আসে। ওর বাবা, মা আর নেহাকে দেখতে। এইবার আসলে আমি বলব।
সেই সময় টেলিফোন কম থাকলেও, মানসী আর নিহারিকা দুজনের ঘরেই ফোন ছিল। মানসী নিহারিকার সাথে কথা বলে স্বপনের পরের বারের আসার দিন শুনে নেয়। আর দুজনে মিলে বেলুর মঠে যাবার প্ল্যান করে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!