02-07-2020, 09:58 AM
# ৫
শ্রেয়সী স্বপনের হাত ওর বুকের মধ্যে ধরে রোল কিনতে যায়।
শ্রেয়সী – আমি মোটেও কিছু উলটো পাল্টা জিনিসে হাত দেব না।
সুলগ্না – আচ্ছা নেহা তোমার আর স্বপনের ভালবাসা কি ভাবে শুরু হল ?
শ্রেয়সী – মানসীও
শ্রেয়সী স্বপনের হাত ওর বুকের মধ্যে ধরে রোল কিনতে যায়।
স্বপন – এই ভাবে আমার হাত ধরেছ সব লোকে কি ভাববে ?
শ্রেয়সী – কেন কি হয়েছে ?
স্বপন – কিছু না
শ্রেয়সী – আমার বন্ধুর হাত আমি কি ভাবে ধরব, সেটা লোকের ভাবার ওপর নির্ভর করে না।
স্বপন – তাও শালীনতা বলে একটা জিনিস আছে
শ্রেয়সী – যাও আমি বুঝতে পাড়ছি। আমার বুক একদম সমান বলে তোমার ভাল লাগছে না। এই যদি আমার জায়গায় মানসী হত ওর বুকে তুমি নিজের ইচ্ছায় হাত রেখে দিতে
স্বপন – দেখো আমি এই ভাবে কথা বলতে বা শুনতে অভ্যস্ত নই। আমি কোন মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব ওর গায়ের রঙ বা বুকের মাপ দেখে করি না। আমার কাছে তুমিও যা, মানসীও তাই।
শ্রেয়সী – সরি বাবা, ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু আমার তোমার হাত এইভাবে ধরতে ভাল লাগছে।
স্বপন – সে ঠিক আছে, কিন্তু তোমার নেহার এটা ভাল নাও লাগতে পারে
শ্রেয়সী – ছাড় তো, নেহা তো আর এখন দেখছে না।
স্বপন – ভীষণ দুষ্টু মেয়ে তুমি।
দুজনে মিলে রোল কেনে। শ্রেয়সী সবার জন্য ডবল ডিমের রোল বানাতে বলে। রোল কিনে ফেরার সময় আর শ্রেয়সী আর ওইভাবে হাত ধরে না।
সুলগ্না – কি ব্যাপার শ্রেয়সী তুমি স্বপনের হাত ধরে আসছ না !
শ্রেয়সী – স্বপনের পছন্দ নয় যে আমি ওর হাত ধরি
স্বপন – আমি কখন বললাম সেই কথা ?
শ্রেয়সী – সব কথা বলতে হয় না
মানসী – তুই নিশ্চয় স্বপনের হাত বুকের মধ্যে চেপে ধরে ছিলিস ?
শ্রেয়সী – তা না তো কিভাবে হাত ধরব ?
মানসী – আমি তো চিনি তোকে। আর এখন স্বপনকেও চিনি।
শ্রেয়সী – আমি একটু স্বপনের হাত আমার বুকে রেখেছি তো কি হয়েছে ?
সুলগ্না – তুমি কি কখনো বড় হবে না ? নেহাই বা কি ভাববে ?
নিহারিকা – শ্রেদিদি তুমি বাড়ীতে গিয়ে স্বপনের হাত, মুখ যা খুশী ধরে থেকো। কেউ কিচ্ছু বলবে না। এখানে সবার মধ্যে ওইভাবে হাত ধর না।
সুল্গনা – ওকে যা খুশী ধরতে বলছ ? তুমি জানো না নাকি ওকে ?
নিহারিকা – হ্যাঁ জানি। শ্রেদিদি আমার স্বপনের যা খুশী ধরতে পারে আমি কিচ্ছু বলব না। একদিন ধরলেই কি আর আমার থেকে পালিয়ে যাবে ?
শ্রেয়সী – আমি মোটেও কিছু উলটো পাল্টা জিনিসে হাত দেব না।
সুলগ্না – আচ্ছা নেহা তোমার আর স্বপনের ভালবাসা কি ভাবে শুরু হল ?
নিহারিকা – একদিন ও আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো যে আমি ওকে বিয়ে করতে রাজী আছি কি না ?
সুলগ্না – তুমি কি বললে ?
নিহারিকা – আমি যদি তোমার ডাকে সাড়া নাই দেব তবে আর আজ ডাকলে কেন এসেছি !
সুলগ্না – এ আবার কি রকম
নিহারিকা – ওই রকমই
সুলগ্না – স্বপন তুমি নিহারিকা কে প্রপোজ কেন করলে ?
স্বপন – দেখো আমি নিহারিকাকে প্রথম দেখি যেদিন ওর দাদার সাথে ওদের বাড়ি যাই
সুলগ্না – তুমি ওর দাদাকে চেন ?
নিহারিকা – ও আর দাদা একসাথে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছে
সুলগ্না – কি করতে গিয়েছিলে ওদের বাড়ি ?
স্বপন – বাবা তুমি তো পুরো বিশদ জানতে চাও ?
সুলগ্না – তোমার সাথে আমার ননদের বিয়ে হবে আর তোমাকে জানবো না ?
স্বপন – আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আর ওর দাদা ব্যাঙ্গালর যাচ্ছিলাম। আমার বাড়ি বেশ দূরে তাই অফিস থেকে ওদের বাড়ীতে খেয়ে ত্রেন ধরি।
সুলগ্না – তারপর ?
স্বপন – তারপর আর কি ! আমি গেলে নিহারিকা আমাকে খেতে দেয়। ও এত যত্ন করে খাওয়ায় যে আমার মনে হয় যে মেয়ে একটা অচেনা ছেলেকে এত যত্ন করতে পারে, সে নিজের ভালবাসার লোককে অনেক বেশিই খেয়াল রাখবে। তাই বলতে পারো আমি স্বার্থপরের মত নিজের সুবিধার জন্য ওকে ভালবেসেছি।
সুলগ্না – তোমরা বুঝলে স্বপন নেহাকে কেন ভালবাসে ?
মানসী – নেহা খুব ভাল মেয়ে। ও সবাইকে ভালবাসে।
স্বপন – এটাই এখন সমস্যা আমার কাছে
সুলগ্না – কেন ভাই ?
স্বপন – এরপরেও যদি আরও কাউকে যত্ন করে খাওয়ায় আর সেও ভালবেসে ফেলে ?
নিহারিকা – মোটেই না, আমি সবাইকে অতো খাতির করি না
সুলগ্না – তবে স্বপনকে এত যত্ন করেছিলি কেন ?
নিহারিকা – আমার ওকে দেখে ভাল লেগেছিল তাই।
মানসী – নেহা নিজে ভাল তাই ওর ভাল ছেলে খুঁজে পেটে অসুবিধা হয়নি।
শ্রেয়সী – আমি বাবা বুঝি না, শুধু খেতে দেবার মধ্যে এত যত্ন, ভালবাসা কোথা থেকে আসে ! প্লেটে করে সামনে খাবার দেবে, ব্যাস হয়ে গেল।
সুলগ্না – সেটাই যদি বুঝতে তবে তোমার দুনিয়া আলাদা হত।
শ্রেয়সী – দরকার নেই আমার বোঝার। আমি যেরকম তাতে যদি কোন ছেলের ভাল লাগে তো ঠিক আছে। আর না হলে বাবা যার সাথে বলবে আমি বিয়ে করে নেব।
মানসী – না রে দিদি জীবনে স্বপনের মত একটা ছেলের ভালবাসার খুব দরকার আছে। তুই কোনদিন বুঝলিই না ভালবাসা কাকে বলে।
শ্রেয়সী – যেন তুই খুব বুঝিস !
মানসী ঠিক বুঝেছিল ভালবাসা কি জিনিস। কিন্তু শ্রেয়সী সেটা জানত না বা ওর সেটা বোঝার ক্ষমতাও ছিল না। আরও কিছু সময় দক্ষিণেশ্বরে থেকে ওরা বাড়ি ফিরে আসে। স্বপনরা আর বেশী বসে না। ও নিহারিকাকে ওর বাড়ি পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়ি ফিরবে। ও যাবার সময় মানসীকে জড়িয়ে ধরে। মানসীও মনে মনে এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিল।
সুলগ্না – স্বপন খুব ভাল কাটল আজকের বিকাল টা।
স্বপন – আমারও খুব ভাল লেগেছে।
শ্রেয়সী – মানসীর সব থেকে ভাল লেগেছে।
নিহারিকা – আমার ও রাঙা দিদিকে খুব ভালবাসে।
শ্রেয়সী – মানসীও
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!