02-07-2020, 09:27 AM
(#০৪)
সুলগ্না – চল এবার খেয়ে নেবে।
মানসী আর বসে থাকেনি। কাঁদেও নি। একবার কান্না এসেছিলো কিন্তু নিজেই নিজেকে সামলিয়ে নেয়। যাদের ও বন্ধু ভাবতো তারাও যে এত নিচু মনের সেটা ও বুঝতে পারেনি। ও মনে মনে শিলাকে ধন্যবাদ দেয় সবার মুখোস খুলে দেবার জন্য। শিলা হয়তো সুন্দরি বলে অহংকারী। কিন্তু সত্যি কথা বলার সাহস রাখে। অসীম বা অমিতের মত গিরগিটি নয়। ওই ঘটনার পরে মানসী যখন চলে আসছিল, কস্তূরীও ওর সাথে চলে এসেছিলো। কস্তূরী ওকে কিছু বোঝাতে চাইছিল, কিন্তু তখন মানসীর শোনার মত মানসিকতা ছিল না। কস্তূরী নিজে সুন্দরী নয় বা ওর ফিগারও ছেলেদের চোখে আকর্ষণীয় নয় তাই কস্তূরী মানসীর দুঃখ বোঝে। ও সেদিন কস্তূরীকে পরে কথা বলবে বলে একাই বাড়ি ফিরে আসে। এই সন্ধ্যে বেলায় আকাশে চাঁদ কে একা দেখে ও এইসব কথাই ভাবছিল।
ও ভাবছিল চাঁদ তো কত সুন্দর কিন্তু তবুও এত বড় আকাশে একা। যখন একাদশীতে চাদের আল কম থাকে তখন চাঁদের চারপাশে সব তারারা ভিড় করে থাকে। পূর্ণিমাতে চাঁদের রূপ সম্পূর্ণ বিকশিত হলে কোন তারাই ঈর্ষায় চাঁদের কাছে আসে না। কিন্তু মানসীর ওই চাঁদের মত রূপ নেই। তাই একাদশী বা পূর্ণিমা কখনোই ওর চারপাশে কেউ থাকে না। ওকে সবাই কয়লার মত বাইরে ফেলে রাখে। আগুন জ্বালানোর জন্য ঘোরে নিয়ে আসে। আগুন শেষ হয়ে গেলে ছাই করে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।
একসময় ভাবছিল কি হবে এই জীবন রেখে কিন্তু ওর মা আর সুলগ্না বৌদির কথা মনে আসে। ভাবে কখনো হয়তো সুলগ্না বৌদির মত মানসিকতার কোন একটা ছেলে ওকে দেখবে আর পছন্দ করবে। মানসী নিজেও নিজের জীবনকে খুব ভালবাসে। আর ও কাপুরুষ নয় যে জীবন থেকে পালিয়ে যাবে। ও ভেবে নেয় ও এই লড়াই চালিয়ে যাবে। ও বোঝে যে ও প্রায় একাই ওর দলে কিন্তু প্রতিজ্ঞা করে যে ও কখনো পিছু হটবে না। ওর “Gone with the wind” সিনেমার স্কারলেটের কথা মনে পড়ে। যেখানে স্কারলেট বলেছিল, “আমি আর ক্ষিদেতে কাঁদবো না”। মানসীও চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে নিজের মনে প্রতিজ্ঞা করে “আমিও আর কালো বলে ভেঙ্গে পড়বো না”।
একসময় আকাশের ভাঙ্গা চাঁদ মেঘে ঢেকে যায়। মানসী তাও ছাদেই দাঁড়িয়ে থাকে। ভাবতে থাকে কি ভাবে মেঘের আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসবে।
সুলগ্না বৌদি মানসীকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ছাদে চলে আসে। বৌদি জানত যে মানসীর মন খারাপ হলে ও ছাদে এসেই চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সুলগ্না – আমার রাঙা দিদির কি হয়েছে আজকে ?
মানসীকে ওর বাড়ীতে সবাই রাঙা পিসি, রাঙা মাসি বা রাঙা দিদি বলে ডাকে। তাই ওর বৌদিও ওকে রাঙা দিদি বলে।
মানসী – কিছু হয়নি গো, এমনি চাঁদ দেখছিলাম।
সুলগ্না – আমি জানি আমার এই দিদি কোনদিন চাঁদ দেখতে আসে। কে কি বলেছে তোমাকে ?
মানসী ওর বৌদির কাছে কিছু লুকায়না। সেদিন কলেজের বন্ধুদের সাথে যা যা হয়েছিল সব কথা বলে দেয়।
সুলগ্না – এতেই এত মন খারাপ হয়ে গেল ? কটা ছেলে মেয়ে তোমাকে কিছু উল্টোপাল্টা কথা বলেছে। ওই কথাগুলোই ওদের নীচতার পরিচয় দিয়েছে। তুমি তাতে মন খারাপ কেন করবে ?
মানসী – আমি ওদের কথার জন্য মন খারাপ করছি না
সুলগ্না – তবে মন খারাপ কিসে হল !
মানসী – আমার নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। আমি কিভাবে ওদের আমার বন্ধু ভেবেছিলাম। কেন আমি মানুস চিনতে পারিনি !
সুলগ্না – তাতেই বা কি হয়েছে ! তুমি এখনও শিখছ। এইসময় দু একটা ভুল হতে পারে। সেই ভুলের জন্য মন খারাপ না করে সেখার চেষ্টা কর।
মানসী – সেটাই ভাবছিলাম
সুলগ্না – চল এবার খেয়ে নেবে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!