01-07-2020, 11:40 AM
(This post was last modified: 22-02-2021, 12:51 PM by kumdev. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
।।৩৩।।
হাসপাতাল চত্বরে জিপ থামতেই স্থানীয় থানার ওসি এসে সালাম করল। থমথমে মুখ জেনিফার ওসির আপাদ মস্তক দেখে জিজ্ঞেস করলেন,কেউ ধরা পড়েছে?
--স্যর আমরা সর্বতোভাবে চেষ্টা করছি--।
--Rubish! একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে গটগট করে হাসপাতালের দিকে পা বাড়ালেন,পিছনে বলদেব।ওসি আগে আগে পথ দেখিয়ে নিয়ে যান।আশপাশের দাঁড়িয়ে থাকা কনস্টেবলরা ডিএমসাহেবাকে স্যালুট ঠুকতে থাকে।সিড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠে এলেন জেনিফার।বা-দিকে মোড় নিয়ে একটা ঘরে ঢুকে কয়েকটা বেড পেরিয়ে দেখলেন, একজন ছাব্বিশ/সাতাশ বছরের মহিলা চোখ বুজে শুয়ে আছেন। স্থির হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন।দাত দিয়ে ঠোট কামড়ে ওসির দিকে তাকাতে ওসি বলল, স্যর মনে হয় ঘটনাটা কাল সন্ধ্যের দিকে ঘটে থাকবে।স্থানীয় একজন মহিলা জঙ্গলে ভোর রাতে প্রাতঃক্রিয়া করতে গিয়ে প্রথম দেখে। আমরা খবর পেয়ে অর্ধচেতন অবস্থায় মহিলাকে নিয়ে এসে হসপিটালে স্থানান্তর করি।
--সেতো পাড়ার লোকও করতে পারতো।পুলিশ কি করেছে?
--ম্যাম ঐখানে নুসরত ম্যাম বসে আছেন।বলদেব কাছে গিয়ে ডিএম সাহেবাকে বলে।
জেনিফার তাকিয়ে দেখলেন দূরে একটা বেঞ্চে উদাস দৃষ্টি মেলে বসে আছে নুসরত। অফিসে না এসে এখানে বসে কি করছে?ওর কেউ কি এখানে ভর্তি আছে?কিন্তু এখন ভিজিটিং আওয়ারস নয়।ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন ডিএম সাহেবা।নুসরত চোখ তুলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল,চোখ লাল অবিন্যস্ত চুল।চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ।
--কি ব্যাপার তুমি এখানে? জেনিফার জিজ্ঞেস করতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল নুসরত।
--কন্ট্রোল ইয়োরসেলফ।জেনিফার বলেন।
--ম্যাম আমার রুমমেট আমার বন্ধু--দেখুন শয়তানরা কি করেছে--।
--প্লিজ নুসরত শান্ত হও।কে তোমার বন্ধু?
--গুলনার এহেসান মন্টি।কতবার বলেছি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেওনা--।
জেনিফার বললেন,প্লিজ নুসরত শান্ত হও।কি হয়েছে আমাকে ডিটেলসে বলো। কৌতুহলি লোকজনের দিকে তাকিয়ে বলেন,আপনারা এখন যান।
কৌতুহলি লোকজন একে একে চলে যায়।ওসি এবং বলদেব দাঁড়িয়ে থাকে।
--এবার বুঝতে পারছি তুমি কেন অফিসে আসোনি।আমাকে খবর দাওনি কেন?
--ম্যাম কাল বিকেলে অফিস থেকে ফিরে অপেক্ষা করছি মনটি-দির জন্য।সন্ধ্যে হয়ে এল কিন্তু ফিরল না।আমার তেমন পরিচিতি নেই,কি করবো বুঝতে পারছিনা।রান্না করে পারুল খালা চলে গেল।
--পারুল কে?
--উনি আমাদের রান্না করেন।একরাশ চিন্তা নিয়ে ঘুমোতে গেলাম।সারা রাত বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছি।সকাল বেলা পারুল খালার মুখে শুনলাম--হায় খোদা--।কান্নায় ভেংগে পড়ে নুসরত।
ডিএম সাহেবা ওসির দিকে তাকিয়ে বলেন,পারুলকে থানায় হাজির করুন।আমি আসছি।
ওসি সালাম ঠুকে চলে গেল।বলদেবের চোখ ছলছল করে নীচু হয়ে জিজ্ঞেস করে,ম্যাম ঐ প্রতিমার মত মানুষটা আপনের বন্ধু?
--হ্যা দেব, আমরা একসঙ্গে থাকি।কি কাঁদছিল জানেন ম্যাম।বলছিল,'আল্লাহ আমারে বাঁচায়ে রেখে আর কত শাস্তি দিতে চায়?কলেজে কি করে মুখ দেখাবো?'
--কাউকে চিনতে পেরেছেন?জেনিফার জিজ্ঞেস করেন।
--দেখলে চিনতে পারবে।জানেন ম্যাম ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল।এখন কি কেউ বিয়ে করতে চাইবে?মেয়ে হয়ে জন্মানো কি অপরাধ?
--চুপ করো।এমন ব্যবস্থা করছি হারামিগুলোর মেয়ে দেখলে ঠ্যাং কাপবে।
--তাদের কোথায় পাবেন ম্যাম?
--জাহান্নাম থেকে খুজে বের করবো। বন্ধুকে চিন্তা করতে মানা করো--অন্য কলেজে বদলির ব্যবস্থা করছি,বিয়েও হবে।বলু তুমি এখানে থাকো,আমি আসছি।
--জ্বি ম্যাম।
জেনিফার থানার দিকে চললেন। মাইল খানেকের মধ্যেই থানা।জিপ থামতেই একজন অফিসার এসে সালাম করে ভিতরে নিয়ে গেল।ডিএম সাহেব অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষন পর এক গ্রাম্য চেহারার মহিলাকে নিয়ে ওসি সাহেব এসে বলল, স্যর এর নাম পারুল।
জেনিফার চোখ তুলে তাকাতে পারুল বলে,বিশ্বাস করেন আমি বাবা কিছু জানিনা জমিলাবিবি আমারে সেনা বলল তাই আমি দিদিমণিরে বললাম।
--দিদিমণি কে?
--যাদের বাসায় রান্না করি,নুছরত ম্যাম।
জেনিফারের অভিজ্ঞ চোখ বুঝতে পারে মহিলা বাস্তবিকই কিছু জানে না,জিজ্ঞেস করেন, জমিলাবিবি কোথায় থাকে?
--আমাগো পাড়ায় থাকে।
--তাকে ডেকে আনতে পারবে?
--আমি বললি কি আসবে?
--ওসি সাহেব ওর সঙ্গে একজন সিপাই পাঠিয়ে দেন।
বলদেব সান্ত্বনা দেবার জন্য মুসরত জাহানকে বলে, ম্যাম আপনি চিন্তা করবেন না। ম্যাডাম দেখবেন কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন।
এমন সময় একটা বেহারা এসে খবর দিল, গুলনার বেগমের ঘুম ভেঙ্গেছে।বলদেবকে নিয়ে নুসরত মণ্টির কাছে যায়।গুলনার অবাক হয়ে বলদেবকে দেখে।
--এর নাম দেব।তোমাকে আগে এর কথা বলেছিলাম না?
গুলনার লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল।নুসরত বুঝতে পারে দেবকে এখানে না আনলেই ভাল হত।
--ম্যাম আপনের তো লজ্জা পাবার কিছু নাই।লজ্জা পাবার কথা আমাদের।
গুলনার আড়চোখে বলদেবকে দেখে মুখে হাত চাপা দিয়ে কেঁদে ফেলে।ভেবে পায় না কি পাপের শাস্তি তাকে পেতে হল?জ্ঞান হারিয়েছিল,মৃত্যু হল না কেন?
--ম্যাম ভেঙ্গে পড়বেন না।এইটা শুধু আপনার ব্যাপার না,নারীজাতির প্রতি অন্যায়--।
গুলনার চোখ মুছে নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করে।মনে হয় লোকটা যেন তার অনেকদিনের চেনা।নুসরতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, তুই সকাল থেকে তো কিছু খাসনি?
--আমি খাবার আনতেছি।বলদেব বলে।
নুসরত আপত্তি করলেও বলদেব শোনে না।পরিবেশ মুহূর্তে বদলে যায়।গুলনারের এখন আর একা মনে হচ্ছে না। বলদেব সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে।এখন লোকজন কম,একটি ছেলে গামছা গায়ে তাকে অতিক্রম করে উপরে উঠে গেল।গ্রামের মানুষ,পোশাক আসাকের কোন বাহার নেই।নীচে নেমে ভাবে কি খাবার নিয়ে যাবে?এত বেলায় কোন দোকানপাট খোলা নেই।দুরে একটা মিষ্টির দোকান চোখে পড়ল।গোটা চারেক সন্দেশ কিনে যখন ফিরে এল দেখল নুসরতের চোখেমুখে আতঙ্ক।কি ব্যাপার?একটু আগে গামছা গায়ে একটা ছেলে এসেছিল তাকে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে গুলনার। সন্দেশের বাক্স নুসরতের হাতে দিয়ে বলদেব দ্রুত বেরিয়ে গেল।একটি ছেলে সিড়ি দিয়ে নামছে,সেই ছেলেটা।পিছন ফিরে তাকে দেখে গতি বাড়ায়।বলদেব এক লাফে পিছন থেকে বলদেব তার গামছা চেপে ধরে।একমুহূর্ত ছেলেটি হতভম্ব,তারপর সজোরে ধাক্কা দিল বলদেবকে।ছেলেটি সমেত বলদেব পড়ে গেল।আচমকা আক্রমনে নিশ্চিন্ত হয় বলদেব ছেলেটি নিশ্চয়ই কিছু জানে।ছেলেটি হিংস্র হলেও বলদেবের শক্তির সঙ্গে এটে উঠতে পারে না।হাল ছেড়ে দিয়ে বলে, আমাকে ধরসেন ক্যান ?আমি কি করসি?
জমিলাবিবি থানায় এল কাদতে কাদতে জেনিফারকে দেখে পা জড়িয়ে ধরে বলে,বিশ্বাস করেন আমি কিছু জানিনা।
--তুমি পারুলকে খবর দিয়েছিলে?
--কে,পারুল বলেছে?
--একে নিয়ে একটু উত্তম মধ্যম দাও তো।
--হ্যা মা আমি খবর দিয়েছি।মাঠ সারতে জঙ্গলে গেছিলাম।কাপড় উঠায়ে ঝোপের মধ্যে বসেছি দেখি শঙ্কর ঢুকতেছে জঙ্গলে।জঙ্গলে কি করতে আসে?আমারে দেখেছে নাকি? ছ্যামড়াডার স্বভাব ভাল না,লঘুগুরু জ্ঞান নাই। জঙ্গলের মধ্যে জড়ায়ে ধরলে কিছু করার উপায় নাই। দম বন্ধ করে বসে আছি,দেখলাম ভিতরে ঢুকে নীচু হয়ে কি জানি করে। তারপর একটা গামছা কুড়ায়ে গায়ে দিয়ে চলে গেল।কুলুখ করে বেরিয়ে এগিয়ে গিয়ে যা দেখলাম আমার হাত-পা সেধিয়ে যাবার জোগাড়।
--কি দেখলে?
--একটা মেয়ে মানুষ প্রায় ন্যাংটা।আমি আর দাড়ালাম না,বেচে আছে না মরে গেছে কে জানে।
--তারপর কি করলে?
--দু-একজনরে বললাম,গ্রামের সবাই জানলো।তখন কি জানতাম এই বিপদে পড়বো?
জেনিফার ইশারা করতে ওসি একজন সাব-ইন্সপেক্টারকে পাঠালেন শঙ্করকে নিয়ে আসতে।ফিরে এসে সাব-ইন্সপেকটার জানালো,পাওয়া যায়নি।
--আজ রাতের মধ্যে শঙ্করকে চাই।জেনিফার ওসি রেজ্জাক আলিকে এই কথা বলে জিপে উঠলেন।
ক্রমে ভীড় বাড়তে থাকে।বলদেব গামছা দিয়ে ছেলেটিকে পিছমোড়া করে বেধে ফেলেছে। লোকজন জমতে দেখে বলদেব চিন্তিত,সবাই মিলে যদি ঝাপিয়ে পড়ে তাহলে?হঠাৎ জিপ এসে থামে।জিপ থেকে নেমে জেনিফার ভীড় দেখে বিরক্ত হন।একজন মহিলা ধর্ষিতা হয়েছে আর সবাই মজা দেখতে এসেছে।
বলদেব বলে, ম্যাম এই ছেলেটা সন্দেহজনভাবে ঘোরাঘুরি করতেছিল।
জেনিফার এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করেন,কি নাম তোর?
ছেলেটি ভীড়ের দিকে তাকায়।এখানে অনেকেই তার পরিচিত কাজেই মিথ্যে বলতে পারেনা। মৃদু স্বরে বলে,শঙ্কর।
জেনিফার ঠাশ করে এক চড় মারতে ছেলেটি পড়ে গেল।একজন কন্সটেবল এসে ধরে কোমরে দড়ি দিয়ে বেধে ফেলে।
--বল তোর সঙ্গে আর কে ছিল?
--কি বলছেন কি আমি তো বুঝতে পারছিনা।শঙ্কর অবাক হয়ে বলে।
--স্যর আমি থানায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করছি।রেজ্জাক সাহেব বলে।
--ন্যাংটা করে ওর পেনিসটা কেটে দিলে তবে শিক্ষা হবে।সব কটা নাম চাই।কজন ছিল কে কে ছিল--সব। জেনিফার কথাটা বলে বলদেবকে নিয়ে উপরে উঠে গেলেন।
হাসপাতাল চত্বরে জিপ থামতেই স্থানীয় থানার ওসি এসে সালাম করল। থমথমে মুখ জেনিফার ওসির আপাদ মস্তক দেখে জিজ্ঞেস করলেন,কেউ ধরা পড়েছে?
--স্যর আমরা সর্বতোভাবে চেষ্টা করছি--।
--Rubish! একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে গটগট করে হাসপাতালের দিকে পা বাড়ালেন,পিছনে বলদেব।ওসি আগে আগে পথ দেখিয়ে নিয়ে যান।আশপাশের দাঁড়িয়ে থাকা কনস্টেবলরা ডিএমসাহেবাকে স্যালুট ঠুকতে থাকে।সিড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠে এলেন জেনিফার।বা-দিকে মোড় নিয়ে একটা ঘরে ঢুকে কয়েকটা বেড পেরিয়ে দেখলেন, একজন ছাব্বিশ/সাতাশ বছরের মহিলা চোখ বুজে শুয়ে আছেন। স্থির হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন।দাত দিয়ে ঠোট কামড়ে ওসির দিকে তাকাতে ওসি বলল, স্যর মনে হয় ঘটনাটা কাল সন্ধ্যের দিকে ঘটে থাকবে।স্থানীয় একজন মহিলা জঙ্গলে ভোর রাতে প্রাতঃক্রিয়া করতে গিয়ে প্রথম দেখে। আমরা খবর পেয়ে অর্ধচেতন অবস্থায় মহিলাকে নিয়ে এসে হসপিটালে স্থানান্তর করি।
--সেতো পাড়ার লোকও করতে পারতো।পুলিশ কি করেছে?
--ম্যাম ঐখানে নুসরত ম্যাম বসে আছেন।বলদেব কাছে গিয়ে ডিএম সাহেবাকে বলে।
জেনিফার তাকিয়ে দেখলেন দূরে একটা বেঞ্চে উদাস দৃষ্টি মেলে বসে আছে নুসরত। অফিসে না এসে এখানে বসে কি করছে?ওর কেউ কি এখানে ভর্তি আছে?কিন্তু এখন ভিজিটিং আওয়ারস নয়।ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন ডিএম সাহেবা।নুসরত চোখ তুলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল,চোখ লাল অবিন্যস্ত চুল।চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ।
--কি ব্যাপার তুমি এখানে? জেনিফার জিজ্ঞেস করতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল নুসরত।
--কন্ট্রোল ইয়োরসেলফ।জেনিফার বলেন।
--ম্যাম আমার রুমমেট আমার বন্ধু--দেখুন শয়তানরা কি করেছে--।
--প্লিজ নুসরত শান্ত হও।কে তোমার বন্ধু?
--গুলনার এহেসান মন্টি।কতবার বলেছি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেওনা--।
জেনিফার বললেন,প্লিজ নুসরত শান্ত হও।কি হয়েছে আমাকে ডিটেলসে বলো। কৌতুহলি লোকজনের দিকে তাকিয়ে বলেন,আপনারা এখন যান।
কৌতুহলি লোকজন একে একে চলে যায়।ওসি এবং বলদেব দাঁড়িয়ে থাকে।
--এবার বুঝতে পারছি তুমি কেন অফিসে আসোনি।আমাকে খবর দাওনি কেন?
--ম্যাম কাল বিকেলে অফিস থেকে ফিরে অপেক্ষা করছি মনটি-দির জন্য।সন্ধ্যে হয়ে এল কিন্তু ফিরল না।আমার তেমন পরিচিতি নেই,কি করবো বুঝতে পারছিনা।রান্না করে পারুল খালা চলে গেল।
--পারুল কে?
--উনি আমাদের রান্না করেন।একরাশ চিন্তা নিয়ে ঘুমোতে গেলাম।সারা রাত বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছি।সকাল বেলা পারুল খালার মুখে শুনলাম--হায় খোদা--।কান্নায় ভেংগে পড়ে নুসরত।
ডিএম সাহেবা ওসির দিকে তাকিয়ে বলেন,পারুলকে থানায় হাজির করুন।আমি আসছি।
ওসি সালাম ঠুকে চলে গেল।বলদেবের চোখ ছলছল করে নীচু হয়ে জিজ্ঞেস করে,ম্যাম ঐ প্রতিমার মত মানুষটা আপনের বন্ধু?
--হ্যা দেব, আমরা একসঙ্গে থাকি।কি কাঁদছিল জানেন ম্যাম।বলছিল,'আল্লাহ আমারে বাঁচায়ে রেখে আর কত শাস্তি দিতে চায়?কলেজে কি করে মুখ দেখাবো?'
--কাউকে চিনতে পেরেছেন?জেনিফার জিজ্ঞেস করেন।
--দেখলে চিনতে পারবে।জানেন ম্যাম ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল।এখন কি কেউ বিয়ে করতে চাইবে?মেয়ে হয়ে জন্মানো কি অপরাধ?
--চুপ করো।এমন ব্যবস্থা করছি হারামিগুলোর মেয়ে দেখলে ঠ্যাং কাপবে।
--তাদের কোথায় পাবেন ম্যাম?
--জাহান্নাম থেকে খুজে বের করবো। বন্ধুকে চিন্তা করতে মানা করো--অন্য কলেজে বদলির ব্যবস্থা করছি,বিয়েও হবে।বলু তুমি এখানে থাকো,আমি আসছি।
--জ্বি ম্যাম।
জেনিফার থানার দিকে চললেন। মাইল খানেকের মধ্যেই থানা।জিপ থামতেই একজন অফিসার এসে সালাম করে ভিতরে নিয়ে গেল।ডিএম সাহেব অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষন পর এক গ্রাম্য চেহারার মহিলাকে নিয়ে ওসি সাহেব এসে বলল, স্যর এর নাম পারুল।
জেনিফার চোখ তুলে তাকাতে পারুল বলে,বিশ্বাস করেন আমি বাবা কিছু জানিনা জমিলাবিবি আমারে সেনা বলল তাই আমি দিদিমণিরে বললাম।
--দিদিমণি কে?
--যাদের বাসায় রান্না করি,নুছরত ম্যাম।
জেনিফারের অভিজ্ঞ চোখ বুঝতে পারে মহিলা বাস্তবিকই কিছু জানে না,জিজ্ঞেস করেন, জমিলাবিবি কোথায় থাকে?
--আমাগো পাড়ায় থাকে।
--তাকে ডেকে আনতে পারবে?
--আমি বললি কি আসবে?
--ওসি সাহেব ওর সঙ্গে একজন সিপাই পাঠিয়ে দেন।
বলদেব সান্ত্বনা দেবার জন্য মুসরত জাহানকে বলে, ম্যাম আপনি চিন্তা করবেন না। ম্যাডাম দেখবেন কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন।
এমন সময় একটা বেহারা এসে খবর দিল, গুলনার বেগমের ঘুম ভেঙ্গেছে।বলদেবকে নিয়ে নুসরত মণ্টির কাছে যায়।গুলনার অবাক হয়ে বলদেবকে দেখে।
--এর নাম দেব।তোমাকে আগে এর কথা বলেছিলাম না?
গুলনার লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল।নুসরত বুঝতে পারে দেবকে এখানে না আনলেই ভাল হত।
--ম্যাম আপনের তো লজ্জা পাবার কিছু নাই।লজ্জা পাবার কথা আমাদের।
গুলনার আড়চোখে বলদেবকে দেখে মুখে হাত চাপা দিয়ে কেঁদে ফেলে।ভেবে পায় না কি পাপের শাস্তি তাকে পেতে হল?জ্ঞান হারিয়েছিল,মৃত্যু হল না কেন?
--ম্যাম ভেঙ্গে পড়বেন না।এইটা শুধু আপনার ব্যাপার না,নারীজাতির প্রতি অন্যায়--।
গুলনার চোখ মুছে নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করে।মনে হয় লোকটা যেন তার অনেকদিনের চেনা।নুসরতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, তুই সকাল থেকে তো কিছু খাসনি?
--আমি খাবার আনতেছি।বলদেব বলে।
নুসরত আপত্তি করলেও বলদেব শোনে না।পরিবেশ মুহূর্তে বদলে যায়।গুলনারের এখন আর একা মনে হচ্ছে না। বলদেব সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে।এখন লোকজন কম,একটি ছেলে গামছা গায়ে তাকে অতিক্রম করে উপরে উঠে গেল।গ্রামের মানুষ,পোশাক আসাকের কোন বাহার নেই।নীচে নেমে ভাবে কি খাবার নিয়ে যাবে?এত বেলায় কোন দোকানপাট খোলা নেই।দুরে একটা মিষ্টির দোকান চোখে পড়ল।গোটা চারেক সন্দেশ কিনে যখন ফিরে এল দেখল নুসরতের চোখেমুখে আতঙ্ক।কি ব্যাপার?একটু আগে গামছা গায়ে একটা ছেলে এসেছিল তাকে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে গুলনার। সন্দেশের বাক্স নুসরতের হাতে দিয়ে বলদেব দ্রুত বেরিয়ে গেল।একটি ছেলে সিড়ি দিয়ে নামছে,সেই ছেলেটা।পিছন ফিরে তাকে দেখে গতি বাড়ায়।বলদেব এক লাফে পিছন থেকে বলদেব তার গামছা চেপে ধরে।একমুহূর্ত ছেলেটি হতভম্ব,তারপর সজোরে ধাক্কা দিল বলদেবকে।ছেলেটি সমেত বলদেব পড়ে গেল।আচমকা আক্রমনে নিশ্চিন্ত হয় বলদেব ছেলেটি নিশ্চয়ই কিছু জানে।ছেলেটি হিংস্র হলেও বলদেবের শক্তির সঙ্গে এটে উঠতে পারে না।হাল ছেড়ে দিয়ে বলে, আমাকে ধরসেন ক্যান ?আমি কি করসি?
জমিলাবিবি থানায় এল কাদতে কাদতে জেনিফারকে দেখে পা জড়িয়ে ধরে বলে,বিশ্বাস করেন আমি কিছু জানিনা।
--তুমি পারুলকে খবর দিয়েছিলে?
--কে,পারুল বলেছে?
--একে নিয়ে একটু উত্তম মধ্যম দাও তো।
--হ্যা মা আমি খবর দিয়েছি।মাঠ সারতে জঙ্গলে গেছিলাম।কাপড় উঠায়ে ঝোপের মধ্যে বসেছি দেখি শঙ্কর ঢুকতেছে জঙ্গলে।জঙ্গলে কি করতে আসে?আমারে দেখেছে নাকি? ছ্যামড়াডার স্বভাব ভাল না,লঘুগুরু জ্ঞান নাই। জঙ্গলের মধ্যে জড়ায়ে ধরলে কিছু করার উপায় নাই। দম বন্ধ করে বসে আছি,দেখলাম ভিতরে ঢুকে নীচু হয়ে কি জানি করে। তারপর একটা গামছা কুড়ায়ে গায়ে দিয়ে চলে গেল।কুলুখ করে বেরিয়ে এগিয়ে গিয়ে যা দেখলাম আমার হাত-পা সেধিয়ে যাবার জোগাড়।
--কি দেখলে?
--একটা মেয়ে মানুষ প্রায় ন্যাংটা।আমি আর দাড়ালাম না,বেচে আছে না মরে গেছে কে জানে।
--তারপর কি করলে?
--দু-একজনরে বললাম,গ্রামের সবাই জানলো।তখন কি জানতাম এই বিপদে পড়বো?
জেনিফার ইশারা করতে ওসি একজন সাব-ইন্সপেক্টারকে পাঠালেন শঙ্করকে নিয়ে আসতে।ফিরে এসে সাব-ইন্সপেকটার জানালো,পাওয়া যায়নি।
--আজ রাতের মধ্যে শঙ্করকে চাই।জেনিফার ওসি রেজ্জাক আলিকে এই কথা বলে জিপে উঠলেন।
ক্রমে ভীড় বাড়তে থাকে।বলদেব গামছা দিয়ে ছেলেটিকে পিছমোড়া করে বেধে ফেলেছে। লোকজন জমতে দেখে বলদেব চিন্তিত,সবাই মিলে যদি ঝাপিয়ে পড়ে তাহলে?হঠাৎ জিপ এসে থামে।জিপ থেকে নেমে জেনিফার ভীড় দেখে বিরক্ত হন।একজন মহিলা ধর্ষিতা হয়েছে আর সবাই মজা দেখতে এসেছে।
বলদেব বলে, ম্যাম এই ছেলেটা সন্দেহজনভাবে ঘোরাঘুরি করতেছিল।
জেনিফার এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করেন,কি নাম তোর?
ছেলেটি ভীড়ের দিকে তাকায়।এখানে অনেকেই তার পরিচিত কাজেই মিথ্যে বলতে পারেনা। মৃদু স্বরে বলে,শঙ্কর।
জেনিফার ঠাশ করে এক চড় মারতে ছেলেটি পড়ে গেল।একজন কন্সটেবল এসে ধরে কোমরে দড়ি দিয়ে বেধে ফেলে।
--বল তোর সঙ্গে আর কে ছিল?
--কি বলছেন কি আমি তো বুঝতে পারছিনা।শঙ্কর অবাক হয়ে বলে।
--স্যর আমি থানায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করছি।রেজ্জাক সাহেব বলে।
--ন্যাংটা করে ওর পেনিসটা কেটে দিলে তবে শিক্ষা হবে।সব কটা নাম চাই।কজন ছিল কে কে ছিল--সব। জেনিফার কথাটা বলে বলদেবকে নিয়ে উপরে উঠে গেলেন।