30-06-2020, 04:45 PM
(This post was last modified: 22-02-2021, 12:43 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।৩০।।
আব্বাস সাহেব বলদেবকে পান আনতে দিয়েছিল।নুসরত জাহান ঘর থেকে বেরোতে আব্বাস সাহেব উঠে এসে বলে, ম্যাডাম আপনে বসেন গিয়ে বলদা আসলে আমি পাঠায়ে দিতেছি।
--কোথায় গেছেন?
--বাইরে কি কাজে গেছে এক্ষুনি আসতেছে।
নুসরত বুঝতে পারে কথা বাড়ায় না।ফিরে এসে বলে,ম্যাম ও আসতেছে।
একটু পরেই বলদেবের গলা পাওয়া গেল,আসতে পারি স্যর?
--আসুন।নুসরত বলে।
বলদেব ঘরে ঢুকতেই জেনিফার জিজ্ঞেস করেন,কি নাম তোমার?
--জ্বি বলদেব সোম।
--এই অফিসে কয়দিন আসছো?
--সেইটা ঠিক মানে--।নুসরতের দিকে তাকায়।
--দিন কুড়ি হবে।নুসরত বলে।
--তোমারে কেউ বাগান পরিস্কার করতে বলেছে?
--জ্বি না।আমার ভুল হয়ে গেছে।
--তোমার ভুল হয়েছে কি করে বুঝলে?
--জ্বি আমার মায়ে বলতো,বলা আগ বাড়ায়ে কিছু করবি না,কিছু বলবি না।
জেনিফার আলম মায়ের কথা উঠতে বিচলিত বোধ করেন।ছোটবেলা থেকে দেখেছেন সংসারে মাকে দাসিবাদির মত কাজ করতে।আর রাতে সহ্য করতো স্বামী নামক একটা পুরুষের হৃদয়হীন যৌন নিগ্রহ। তাদের বাড়িতে আশ্রিত দুরসম্পর্কীয় এক খালার সঙ্গেও ছিল অবৈধ সম্পর্ক।মা জেনে বুঝেও কিছু বলার ক্ষমতা ছিল না।লোকটাকে আব্বু বলে ডাকতে হত ভাবলে আজও লজ্জা হয়।তারপর দিন গেছে অনেক পুরুষ দেখেছেন কিন্তু পুরুষ সম্পর্কে ধারণা বদলের কোন কারণ ঘটেনি।
--তুমি ভেবেছিলে এতে আমি খুশি হবো?
--জ্বি না।আপনের কথা আমার মনে আসে নাই।
নুসরত জাহান শঙ্কিত চোখে বলদেবকে দেখে।তার এই ভয় করছিল,সরল মানুষটা কি বলতে কি বলে ফেলে।জেনিফার আলম টেবিলে রাখা গেলাস নিয়ে চুমুক দিয়ে পানি খেলেন।তারপর বলেন,মা তোমাকে আগ বাড়িয়ে কিছু করতে মানা করেছেন,তাহলে কেন করলে?
--জ্বি মা আর একখান কথা বলেছিল।
জেনিফার আলমের কৌতুহল বাড়তে থাকে। গাম্ভীর্য বজায় রেখে জিজ্ঞেস করেন,কি বলেছিলেন?
--জ্বি বলেছিল বলা বাইরেটা পরিস্কার রাখবি তাহলে ভিতরটাও পরিস্কার থাকবে।
--তোমার মা আর কি বলেছিলেন?
--যতদিন বেচেছিল ব্যাড়ব্যাড়ায়ে কত কথা বলতো।সব কি আর মনে থাকে।জায়গায় জায়গায় মনে পড়ে।
--তুমি লেখাপড়া কতদুর করেছো?
--জ্বি মেট্রিক পাস করেছি।
--তোমারে দেখে তা মনে হয়না।
--দেখে সব বুঝতে পারলে তো এত সমস্যা হত না।
নুসরত জাহান বিরক্ত হল।ডিএম সাহেবা বললেন,মানে?
--স্যর আপনেরে দেখে কি বোঝা যায় না।আপনে গোসা হয়েছেন না খুশি হয়েছেন?
জেনিফার আলম হাসি চেপে রাখতে পারেন না,খিল খিল করে হেসে ফেলেন।ম্যাম হাসছেন, নুসরত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।হাসি থামিয়ে জেনিফার আলম বলেন,আমি খুশি হয়েছি।
--ধন্যবাদ স্যর।
--তোমারে স্যর বলতে কে শিখিয়েছে?
--হক সাহেব সতর্ক করে দিয়েছেন,চেয়াররে বলতে।
--তুমি আমাকে বলবে,চেয়ারকে নয়।বুঝেছো?
--জ্বি।
--কি বলবে?
--চেয়ারকে নয়।
--বলবে ম্যাম।ঠিক আছে?
--জ্বি।
--এখন আমাদের একটু চা খাওয়াবে?
--জ্বি ম্যাম।
বলদেব চা আনতে চলে গেল।অফিসের অন্যরা বলদেবকে দেখে অনুমান করার চেষ্টা করে ভিতরে কি হচ্ছিল এতক্ষন।সুলতান সাহেবের কয়েকটা ফাইলে সইসাবুদ করাতে হবে।বলদেব চলে গেল ভাবছে নিজেই যাবে কিনা?তাহলে স্যরের মেজাজটা বুঝতে পারবে।জেনিফার আলম কি যেন ভাবেন আপন মনে তারপর নুসরতকে বলেন,অদ্ভুত মানুষ কথা বলতে বলতে বেশ সময় কেটে যায়।
--জ্বি ম্যাম।মানুষটা নিরীহ অতি সরল।নুসরত বলে।
--কিন্তু পুরুষ।ওকি ম্যারেড?চেহারাটা দেখেছো?ভাল জামা কাপড় পরালে অফিসার-অফিসার মনে হবে।
--জিজ্ঞেস করিনি ম্যারেড কি না?
--এতদিন বিয়ে না করে বসে আছে?খেতে পাক না পাক বিয়ে করা চাই।বাংলাদেশে হতভাগ্য মেয়ের অভাব হবেনা।জেনিফার আলমের মুখটা ব্যথায় করুণ হয়ে ওঠে।সবার ধারণা ডিএম সাহেব কঠিণ প্রাণ বাইরে থেকে দেখলে তেমন ভাবা স্বাভাবিক।কিন্তু নুসরত জাহান ম্যাডামকে দিনের পর দিন খুব কাছ থেকে দেখেছে।দেব ঠিকই বলেছে বাইরে থেকে সবটা দেখা যায় না।
বলদেব চা নিয়ে ঢোকে,বগলে কয়েকটা ফাইল।ফাইল নামিয়ে চা এগিয়ে দিল।জেনিফার সাহেবা চায়ে চুমুক দিতে দিতে ফাইলে চোখ বোলাতে থাকেন।বলদেব দাঁড়িয়ে ইতস্তত করে।জেনিফার চোখ না তুলে জিজ্ঞেস করেন,কিছু বলবে?
--ম্যাম আমি অলস বসে থাকতে পারিনা।দয়া করে যদি কাজ কাম দেন--।
জেনিফার চোখ তুলে তাকালেন সবাই ফিকির খোজে কিভাবে কাজে ফাকি দেওয়া যায়।জিজ্ঞেস করেন,তুমি বিয়ে কর নাই?
--জ্বি না।
নুসরতের সঙ্গে চোখাচুখি করে জিজ্ঞেস করেন,বিয়ে করার ইচ্ছা হয়না?
--জ্বি ইচ্ছা হলেও সামর্থ্য নাই।
--কেন,তুমি নপুংষক নাকি?
নুসরত জাহান বিষম খায়।বলদেব নির্বিকার জবাব দেয়,এক রকম তাই বলতে পারেন।একটা পেটের খোরাক যোগাতে পারিনা তো আর একটা--।
ডিএম সাহেবার ফোন বেজে ওঠে,নুসরত ফোন ধরতে ওপার হতে এসপি সাহেব,স্যরের সঙ্গে কথা বলতে চায়।জেনিফার আলম ফোন ধরে হা-হু করে ফোন নামিয়ে রেখে বলেন,আমি একটু বেরোচ্ছি,তাড়াতাড়ী ফিরবো।তুমি ফাইল্গুলো দেখে রাখবে।নুসরত বলে,ইয়েস ম্যাম।