Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 3.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller দ্বিতীয় অঙ্ক by pinuram (Complete)
#32
পঞ্চদশ পর্বঃ দ্বিতীয় অঙ্ক। (#3)

স্পেটেম্বরের মাঝামাঝি, আকাশে বর্ষার মেঘের খেলা একটু কমে গেছে। বাড়িতে দুই দিন আগে থেকেই লোকজন ভর্তি। ঝিলামের জন্মদিনের দিন কোলকাতা, ধানবাদ থেকে সবাই চলে আসে। বুধাদিত্য ঝিলামের ফ্লাট একটা রনক্ষেত্র হয়ে উঠেছে এই কদিনে। দুর্গাপুর থেকে ঝিলামের বাবা মা, দুই দাদা আর তাদের পরিবার, দুই দিদি আর তাদের পরিবার মিলিয়ে জনা পনের জন লোক। রঞ্জন বাবু, প্রমীলা দেবী, অনিন্দিতাদি, বুবাই, সুব্রত দা ওদিকে ধানবাদ থেকে দেবস্মিতা বাপ্পা আর সুবিরবাবু। সকাল থেকে বাড়িতে সাজসাজ রব, কোলাহল শুনে মনে হবে যেন এক রণক্ষেত্র। চার দিনের জন্য একটা হোটেলের তিনটে রুম ভাড়া করা হয়েছিল, পুরুষেরা ছাড়া সেই হোটেলে কেউ থাকেনি। বাড়ির মেয়েরা বাড়িতেই ছিল এই ক’দিন। এই ক’দিন বুধাদিত্য অফিসে গিয়েছিল কিন্তু ঝিলাম আর কলেজ করতে পারেনি। দেবস্মিতা ওকে নিয়ে পরপর দুই দিন লাজপত নগর, এস.এন.মারকেট করে বেড়িয়েছে। ঝিলামের মা রান্না বান্নার ভার সামলে নিয়েছিলেন। দেবস্মিতা আর অনিন্দিতাদি এই কদিনে বাড়ির সব কিছু সামলে নিয়ে রেখেছে। ঝিলামের দিদিরা এই প্রথম বার রাজধানি চেপে দিল্লী এসেছে, তাই গত দুই দিন বর আর বাচ্চাদের নিয়ে দিল্লী ঘুরে বেড়িয়েছে।

সবাই বাড়ির লোক তাই আর বিশেষ কিছুই আয়োজন করা হয়নি। বাইরের মানুষ বলতে, ভিশাল স্যার আর শমিতা ম্যাডাম আর তাদের ছেলে বেদান্ত অন্যদিকে মনামি তার বর, নিরঞ্জনকে নিয়ে আসবে। ম্যারেজ রেজিস্ট্রার, নিরঞ্জনের চেনা, তাই নিরঞ্জনের সাথে সন্ধ্যে নাগাদ আসবে। মনামি সকালবেলাতেই পৌঁছে ঝিলামের বাড়ি পৌঁছে যায়। ঝিলামের বাবা, বুধাদিত্যের বাবা আর রঞ্জন বাবু একটু বয়স্ক তাই তারা বসার ঘরে এসব থেকে দুরে নিজেদের মতন গল্পে ব্যাস্ত। অনিন্দিতাদি বুধাদিত্যের জন্য ধুতি পাঞ্জাবী কিনে এনেছিল, বুধাদিত্য সেই কাপড় পড়তে নারাজ, জেদ করে বসে ঝিলাম উপহার দেওয়া সুট পরে বিয়ে করবে। বাপ্পা বুবাই আর বাকি বাচ্চারা লাফালাফি দৌড়া দউরি করে ঘর মাতিয়ে তুলেছে। ঝিলামের বড়দি বড় মেয়ে, সঙ্গীতা, মিউসিক সিস্টেমে গান চালিয়ে নাচ শুরু করে দিয়েছে। ওর দেখাদেখি বাকি বাচ্চারা বসার ঘর দখল করে নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে।

বুধাদিত্য, সুব্রতদা আর ঝিলামের দাদারা আর দুই জামাইবাবু ওর স্টাডিতে বসে দরজা বন্ধ করে ড্রিঙ্কস করছিল। শোয়ার ঘর মেয়েদের দখলে চলে গেছে, দেবস্মিতা ঝিলামকে নিয়ে ব্যাস্ত। ঝিলামের মা আর প্রমীলাদেবী দুপুরে খাওয়ার পরে গেস্ট রুমে একটু বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু বাচ্চাদের চেঁচামেচিতে সেই ঘুমের বারোটা বেজে গেল।

প্রমীলা দেবী একবার বুধাদিত্যকে জিজ্ঞেস করে গেলেন, “এই ছোড়া রাতের খাবারের ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে’ত?”

বুধাদিত্য বেড়িয়ে এসে উত্তর দিল, “কেন, তার ব্যাপারে’ত আমি কিছু জানিনা। ওটা’ত দেবীর ডিপার্টমেন্ট। ওকে জিজ্ঞেস কর।”

দেবস্মিতা , “হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক সময়ে ওঃ ক্যালক্যাটা থেকে ডেলিভারি দিয়ে যাবে, চিন্তা নেই।”

অনিন্দিতাদি বুধাদিত্যকে এসে অনুরোধ করে, “আমি তোর জন্য সাধ করে ধুতি পাঞ্জাবী এনেছি আর তুই পরবি না?”

বুধাদিত্য, “না পরবো না। ওই বারো হাতি কাপড় সামলাতে পারব না।”

ঝিলাম ওদিক থেকে চেঁচিয়ে বলে, “আরে ওকে জোর করে কাজ নেই, বেঁকে বসলে আবার বিয়ে পিছিয়ে যাবে। দেবী এত কষ্ট করে ওঃ ক্যালক্যাটা থেকে ইলিস পাতুরি আর ডাব চিংড়ি অর্ডার দিয়েছে সব মাটি হয়ে যাবে।” সবাই ওর কথা শুনে হেসে ফেলে। ঝিলাম অর্ধেক সাজা নিয়ে ওর ঘরে ঢুকে আদেশ করে, “তুমি সুট পরলে আমি কিন্তু অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা ইভিং গাউন পরবো?”

বুধাদিত্য ঝিলামের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “তোমাকে সেই ড্রেসিং গাউনে কিন্তু দারুন দেখাবে, সেটাই পড়ে নাও।”

ঝিলাম চোখ পাকিয়ে বুধাদিত্যের দিকে রেগে চেঁচিয়ে বলে, “আমি শেষ বারের মতন বলছি।”

ঝিলামের মা উঠে চলে আসেন। মেয়ের রুদ্র রুপ দেখে বলেন, “কেন বকাবকি করছিস? ধুতি না পরলেও চলবে, সুট পড়তে চাইছে, ঠিক আছে, পরুক না, ক্ষতি কি। আজকাল অনেকেই পরে।”

ঝিলাম মায়ের ওপরে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তুমি চুপ কর, ওকে চেন না। না চেঁচালে কোন কথা শোনে না। তুমি তোমার বাকি জামাইদের মতন ননীর পুতুল ভেবনা একে।”

সুব্রতদা ঝিলামের চোখ দেখে বুধাদিত্যকে বলে, “বউ কিন্তু ক্ষেপে গেছে, এবারে গুত খাবে। তাড়াতাড়ি একটা কিছু স্থির কর।”

অগত্যা বুধাদিত্য সুব্রতদাকে বলে, “দেখ বাবা আমি ধুতি পড়তে জানিনা, সুতরাং পড়িয়ে দিতে হবে আমাকে।” ঝিলামের দিকে তাকিয়ে বলে, “মাঝখানে যদি ধুতি খুলে যায় তাহলে...”

ঝিলাম ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তুমি ধুতি পরে কি একশ মিটার রেস দেবে? যাবে ত সেই এই ঘর থেকে অন্য ঘর। চুপ করে পরে নাও।”

অনিন্দিতাদি ঝিলামের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল, ঝিলামের কথা শুনে বুধাদিত্যকে বলে, “বেশ হয়েছে এবারে, এই হল একদম কলেজ টিচারের মতন কথা। এবারে ছড়ি দিয়ে মারতে বলব।”

সুব্রতদা অনিন্দিতাদিকে বলে, “অনু, কে কাকে কোন ছড়ি দিয়ে মারবে সেটা আর বলতে হবে না।” অনিন্দিতাদি লজ্জায় পরে যায়।

দেবস্মিতা ওদিক থেকে ঝিলামকে ডাক দেয়, “এই মেয়ে তাড়াতাড়ি এস, বাকিটা শেষ করি।”

বুবাই মামিকে দেখে বায়না ধরে সেও বউ সাজবে। অনিন্দিতাদি বকা দিতে যায়, দেবস্মিতা ওকে বসিয়ে দিয়ে বলে যে ঝিলামকে সাজানোর পরে বুবাইকে সজিয়ে দেবে। বাপ্পা একবার বুধাদিত্যর ঘরে ঢুকে ওদের ড্রিঙ্কস করতে দেখে বায়না ধরে কোল্ড ড্রিঙ্ক খাবে। সুব্রতদা শেষ পর্যন্ত একটা ছোটো গ্লাসে কোল্ড ড্রিঙ্ক দেয় খেতে।

সুবিরবাবু এক বার এসে দেখে যান সবার অবস্থা, “কি হল, সন্ধ্যে হতে চলল। কিছু পরে’ত নিরঞ্জন রেজিস্ট্রারকে নিয়ে এসে যাবে। তোমাদের সাজাগোজা হয়েছে?”

দেবস্মিতা, “তোমার এত তাড়া কিসের বলত। মেয়েদের সাজতে একটু দেরি হয়। ঠিক সময়ে সব কিছু হয়ে যাবে। পারলে কাউকে নিয়ে সি.আর.পার্ক চলে যাও, একটু দই লাগবে আর মিষ্টির অর্ডার দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো নিয়ে এস।”

অগত্যা সুবিরবাবু বউয়ের বকা খেয়ে চুপচাপ কালীনাথকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। অনিন্দিতাদির আনা গাড় বাদামি রঙের পাঞ্জাবী পরে বুধাদিত্য। সুব্রতদা বুধাদিত্যকে ধুতি পরিয়ে দেয়, সাথে কোমরের গিঁট বেশ আঁটো করে বেঁধে দেয় যাতে খুলে না যায়। দেবস্মিতা ঝিলামের জন্য একটা লাল পাড় ঘিয়ে রঙের দামী জাদমদানি শাড়ি এনেছিল, সেই শাড়িতে ঝিলামকে সাজিয়ে এক অপরূপ রানীর মতন সাজিয়ে তুলেছে। দেবস্মিতা সোনার গয়নায় সাজিয়ে তুলেছে ঝিলামকে। প্রমীলাদেবী ঝিলামের জন্য সুন্দর একটি লোহাবাঁধান এনেছিল, সেটা হাতে পড়িয়ে দেয়। বুধাদিত্য ঝিলামের মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে, কাছে গিয়ে কানেকানে বলে যে রাতে পাগল করে দেবে। ঝিলাম আলতো চাঁটি মেরে বলে সবার সামনে যেন কিছু দুষ্টুমি না করে বসে। বুবাই একবার মামার মুখের দিকে তাকায় একবার নতুন মামীর মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে।

সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসে। নিরঞ্জন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কে নিয়ে উপস্থিত। বসার ঘর লোকে লোকারণ্য। বুধাদিত্য আর ঝিলাম পাশাপাশি দাঁড়ায়। অনিন্দিতাদি একটা কুলোতে সব সাজিয়ে নিয়ে আসে, পান পাতা, প্রদীপ ইত্যাদি। প্রমীলাদেবী কালীঘাটে পুজো দিয়ে মায়ের পায়ে ছোঁয়ান সিঁদুর এনেছিলেন, সেটা অনিন্দিতাদির হাতে দিলেন। আগে সই তারপরে সিঁদুর না আগে সিঁদুর তারপরে সই। এর মাঝে সুব্রতদা বলে যে আগে আঙটি পড়ান উচিত। অনিন্দিতাদি বুধাদিত্যকে জিজ্ঞেস করে, বউয়ের জন্য আঙটি কেনা হয়েছে কিনা? বুধাদিত্য আর ঝিলাম পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করে, এখন আঙটি পড়াতে হবে নাকি, এই সব’ত অনেক আগেই ওরা সেরে ফেলেছে। অনিন্দিতাদি, ঝিলামের বউদিরা সবাই চেপে ধরে যে সেই আঙটি খুলে আবার নতুন করে ওদের সামনে পড়াতে হবে। ঝিলাম নিজের আঙটি খুলে বুধাদিত্যের হাতে দেয়, আর ঝিলামের দেওয়া আঙটি’টা বুধাদিত্যের আঙ্গুলে চেপে বসে। সেই নিয়ে সবার মধ্যে হাসাহাসি, বিয়ের আগেই বউ খাইয়ে মোটা করে দিয়েছে। অনেক কষ্টে সাবান জল দিয়ে আঙটি খোলা হয়। সুব্রতদা, ঝিলামের জামাইবাবুরা সবাই বুধাদিত্যকে চেপে ধরে যে ঝিলামের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আঙটি পড়াতে হবে। ঝিলাম হেসে ফেলে বুধাদিত্যের করুন অবস্থা দেখে। “এই না না, এটা ঠিক হচ্ছে না।” “বসে পর শালা, একবার আমরা দেখি।” বলে ওঠে সুব্রতদা। সেই সাথে ঝিলামের জামাইবাবুরা বলে ওঠে, “এই যে বাবু, রোজদিন’ত কান ধরে উঠ বস করায়, তা আমাদের সামনে করতে লজ্জা কিসের।” বুধাদিত্য, “আমি হাঁটু গেড়ে বসে পড়িয়ে দেব একটা সর্তে, ও যদি আমার কোলে বসে আমাকে আঙটি পড়িয়ে দেয়।” সেই শুনে সবাই হেসে ফেলে। ঝিলামের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়। সুবিরবাবু আর রঞ্জনবাবু হেসে বলেন যে তারা কিছু শুনতে পাননি, এবারে কানে তুল গুঁজে বসে থাকবেন তারা। ঝিলাম বুধাদিত্যর বাজুর ওপরে চাঁটি মেরে বলে যে সব দুষ্টুমির শোধ নেবে পরে। দেবস্মিতা হাতে কুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে, ওদের মেয়েলিপনা দেখে বলে যে তাড়াতাড়ি কর, হাত ব্যাথা করছে। সেই শুনে সুবিরবাবু বলেন যে, “হে প্রিয়তমা, কুলো আর তুমি দুজনেই আমার কোলে চলে এস।” দেবস্মিতার ফর্সা মুখ লাল হয়ে যায়। প্রমীলাদেবী দেবস্মিতাকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলেন, “কিরে তোর’টা এই বয়সেও এমন নাকি? আমার’টা যদি আমার দিকে একটু চোখ মেলে দেখত।” ঝিলাম দেবস্মিতাকে জড়িয়ে ধরে প্রমীলাদেবীকে বলে, “তুমি দেবীর কাছ থেকে কিছু সাজার টিপস নিও তাহলে মামা তোমাকে নিয়ে আবার হানিমুন যাবে।”

বুধাদিত্য যথারীতি সবার চাপে পরে ঝিলামের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আঙটি পড়িয়ে দেয়। আঙটি পরানোর সময় সবাই চেঁচিয়ে ওঠে যে একদম ইংরাজি স্টাইলে হাতে চুমু খেয়ে আংটি পড়াতে হবে। বুধাদিত্য চেঁচিয়ে বলে এবারে আর না, বউ নিয়ে পালিয়ে অন্য কোথাও বিয়ে করে নেবে। ঝিলাম ওর চিবুকে হাত রেখে ছোট্ট একটা চুমু খায়। সেই দেখে সবার হর্ষধ্বনি দিয়ে ওঠে। ঠিক করা হয় যে সই দিয়ে তারপরে সিঁদুর পরানো হবে। সই দেওয়া শেষ, কে কে সাক্ষী হিসাবে সই দেবে সেটা নিয়ে একটু প্রশ্ন ওঠে। বুধাদিত্য বলে যে, ঝিলামের বাবা, মামা আর দেবস্মিতা সাক্ষী দিলে হবে। রঞ্জনবাবু এর মাঝে বলে ওঠেন, এই যাঃ বিয়ের মন্ত্র যে পড়া হলনা, তাহলে বিয়ে কি করে সম্পন্ন হবে। সুবিরবাবু হেসে বলেন, তিনি মন্ত্র পরে দেবেন। তিনি ঋগ বেদের একটা মন্ত্র উচ্চারন করে বললেন বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে, ব্যাস বর বধু এবারে সিঁদুর পড়াতে পারে। দেবস্মিতা কুলো এগিয়ে ধরে বুধাদিত্যের দিকে। ঝিলামের মা বলেন, বাবা আঙটি দিয়ে সিঁদুর পড়াতে হয়। ঝিলাম বলে ওঠে, ধুর, একটা কিছু দিয়ে পরালেই হল। দেবস্মিতা বুধাদিত্যকে বলে যে দুই আঙ্গুলে একটু সিঁদুর তুলে ঝিলামের সিঁথিতে লাগিয়ে দিতে। বুধাদিত্য এক চিমটে সিঁদুর উঠায়, ঝিলামের ঠোঁটে হাসি, দু’চোখ ছলছল করে ওঠে। মাথা নিচু করে দাঁড়ায় ওর সামনে, বুধাদিত্য কপালে থেকে সিঁদুর মাথার মাঝখানে পর্যন্ত টেনে দেয়। দেবস্মিতা ওকে বলে যে তিন বার লাগাতে হয়। বুধাদিত্য দ্বিতীয় বার সিঁদুর নিয়ে লাগিয়ে দেয়, বেশ কিছু সিঁদুর কপাল ছাড়িয়ে গালে আর নাকে মুখ পরে যায়। ঝিলাম মৃদু হেসে বকুনি দিয়ে বলে যে ঠিক ভাবে সিঁদুর পরাতেও জানেনা। তৃতীয়বার একটু বেশি করে সিঁদুর নিয়ে প্রথমে ওর কপালে আর সিঁথিতে লাগিয়ে দেয়, তারপরে ইচ্ছে করে বাকি টুকু ঝিলামের নাকের ওপরে আর দুই গালে লাগিয়ে দেয়। ঝিলাম খুশির জোয়ারে প্রায় কেঁদে ফেলে। গালের থেকে একটু খানি সিঁদুর হাতে নিয়ে বুধাদিত্যের গালে আর কপালে লাগিয়ে দেয়। সবাই হেসে ওঠে ওদের সিঁদুর খেলা দেখে। ঝিলামের সারা গালে কপালে সিদুরে লাল হয়ে গেছে, সেই সাথে বুধাদিত্যের গালে ঝিলামের সিঁদুর লেগে। ভালোবাসার আবেগে আর নিজেকে সামলাতে পারেনা বুধাদিত্য, ঝিলামকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে। সুব্রতদা চেঁচিয়ে ওঠে, “শালাবাবু, নাউ ইউ মে কিস দা ব্রাইড।” বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে যে সপ্তপদীর পরে দিদিভাইকে মন্ডপে চুমু খেয়েছিল কি না? সিঁদুরের রঙ্গে ঝিলামের মুখ খানি লাল হয়ে ছিল, সুব্রতদার কথা শুনে লজ্জায় আরও লাল হয়ে ওঠে। বুধাদিত্য বাঁ হাতে ঝিলামের কাঁধ জড়িয়ে ধরে মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে। ব্যাস, সেই দেখে অনিন্দিতাদি বলে, “হয়ে গেছে তোর কিস দেওয়া।” খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হল বেশ হই হুল্লোড়ে, সবাই দেবস্মিতার গুণগান করে। অবশ্য দেবস্মিতা রান্না করেনি, কিন্তু ওর পছন্দের মেনু দেখে সবাই আপ্লুত। ঝিলামের দিদিদের হোটেল পাঠিয়ে দেওয়া হল, কারন ঝিলাম আর বুধাদিত্য এবারে নিজেদের ঘর চায়। দেবস্মিতা আর প্রমীলা দেবী মিলে সবার রাতের ব্যাবস্থা করে দিল।

নিজেদের শোয়ার ঘরে ঢুকতেই বুধাদিত্য ঝিলামকে জড়িয়ে ধরে। সদ্য বিবাহিতা, অপরূপ সুন্দরী প্রেয়সীকে অনেকদিন পরে একা পেয়েছে। ঝিলাম বুধাদিত্যের বুকের ওপরে মাথা চেপে হৃদপিণ্ডের ধুকপুক শোনে অনেকক্ষণ, বড় শান্তি এই বুকের, এই আলিঙ্গনে নিরাপত্তার ছোঁয়া। বুধাদিত্যের বাহুপাসে মনের শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়তে পারে ঝিলাম, আনন্দে চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু বুধাদিত্যের পাঞ্জাবির বুক ভিজিয়ে দেয়। বুধাদিত্য ঝিলামের মুখ আঁজলা করে তুলে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। চোখে জল ঠোঁটে হাসি, চেহারায় অপার ভালোবাসা নিয়ে ঝিলাম বুধাদিত্যের গলা দুই হাতে জড়িয়ে ধরে। কাজল কালো চোখের ভেতরে প্রেয়সীর ছবি এঁকে নেয় বুধাদিত্য।
প্রেয়সীর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে নাকের ওপরে নাক ঘষে কানেকানে বলে, “অনেকদিন পরে খুঁজে পেলাম।”
ঝিলাম মিষ্টি হেসে বলে, “এই রকম সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি?”

বুধাদিত্যের উষ্ণ শ্বাস ঝিলামের সারা মুখ ভরিয়ে দেয়, ঠোঁট নেমে আসে গোলাপি কোমল অধরে। তিরতির করে কেঁপে ওঠে ঝিলামের ঠোঁট, অল্প ফাঁক করে আহবান জানায় দয়িতের ভালোবাসার চুম্বন। আবেগে চোখ বন্ধ হয়ে যায় ঝিলামের, বুধাদিত্যের গভীর চুম্বনে অবশ হয়ে আসে শরীর। বুধাদিত্যের উষ্ণ হাত ঝিলামের মসৃণ পিঠে আদর করে দেয়। পরনের বসন একে একে দেহ চ্যুত হতে শুরু করে। শাড়ির প্যাঁচে ঢাকা প্রেয়সীর নধর দেহপল্লব বুধাদিত্যের চোখের সামনে উন্মোচিত হয় ধিরে ধিরে। বুধাদিত্য হাঁটু গেড়ে ঝিলামের সামনে বসে পেটের ওপরে চুমু খায়। শ্বাস ফুলে ওঠে ঝিলামের। বুধাদিত্য ঝিলামের নরম পেটের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে। ব্লাউসে ঢাকা পীনোন্নত বক্ষ যুগল প্রবল ঢেউ আছড়ে পরে। নাক চেপে বুক ভরে ঝিলামের গায়ের গন্ধে হৃদয় ভরিয়ে নেয় বুধাদিত্য। নিম্নাগের কটি বস্ত্রে ঢাকা নারীত্বের দ্বার সিক্ত হয়ে ওঠে, উরু জোড়ায় কাঁপন ধরে ঝিলামের। দশ আঙ্গুলে বুধাদিত্যের মাথা খামচে ধরে মিহি সুরে ককিয়ে ওঠে ললনা, “সোনা আর দুষ্টুমি করো না, এবারে আমাকে বুকে করে নাও...”

বুধাদিত্য উঠে পরে মেঝে থেকে, ঝিলামকে পেছন থেকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে। ঘাড়ের ওপরে মুখ নিয়ে কানের লতি, গাল ঘাড় চুম্বনে ভরিয়ে দেয়। ঝিলাম পেছনে হাত দিয়ে বুধাদিত্যের মাথা টেনে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। বুধাদিত্যের পুরুষাঙ্গ ঝিলামের নগ্ন নিতম্বের মাঝে আটকা পরে যায়। কোমল নিতম্ব কঠিন তপ্ত শলাকার পরশে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শরীরের শেষ বস্ত্র টুকু দেহ চ্যুত হয়ে যায়।

বুধাদিত্য পাগল হয়ে যায় ঝিলামের রুপে, “বারে বারে হেরি, চঞ্চলা হরিণী মত্ত নয়না তুমি হে কামিনী,
তুমি আছো তাই, আছে মোর হিয়া, মোর বাহুপাশে তুমি হে যামিনী।
ওই বাঁকা চোখে তাকিও না আর, মরমে জ্বলিছে আগুন তোমার,
অধরের মধু দাও গো শুধু, সেচিয়া দাও গো হৃদয় আমার।
আলুলিত ওই কুন্তলরাশি, সর্পের ন্যায় যায় যে দুলিয়া
আস মোর প্রিয়ে, ক্রোরে আমার, বসে আছি আমি দু বাহু মেলিয়া।
হে গজ গামিনী, তোমার চলনে, ছলকাইয়া ওঠে মদিরা পেয়ালা,
কণ্ঠধ্বনি কর্ণরন্ধ্রে, প্রবেশিলে পরে বেজে ওঠে যে বেহালা।
ও দেহ পরতে লুকিয়ে রেখেছ, কত সহস্র বিজলীর কণা,
সুগভীর বক্ষবিদলন মাঝে, যা কিছু আছে, তাই অজানা।
পীনোন্নত বক্ষোপরি শোভিতেছে দুই কঠিন নুড়ি,
সুকোমল দুই শৃঙ্গ যে ডাকে, হাতছানি দিয়া আমি কি করি?
হে মোর প্রেয়সী, হে মোর ললনা, দূর করো মোর বুকের যাতনা,
ও রাঙ্গা চরনে, চুম্বিয়া আজ, আমি যে মিটাব তোমার বাসনা।
প্রতি ওই শ্বাসে স্ফীত হয়ে আসে, সুকোমল ওই বক্ষযুগল,
কামাগ্নি ধায় নাসারন্ধ্রে তায় তপ্ত শ্বাস বয় অবিরল।
নিটোল জানু দেখিয়া ভাবি যে হেরিতেছি দুই কদলি কান্ড,
ওই জানুমাঝে করিলে চিন্তন, মস্তিষ্ক হয় লন্ডভন্ড।
কুম্ভের ন্যায় দুই নিতম্ব, পশ্চাতের শোভা করিয়া বর্ধন,
হৃদয় আকুলি বিকুলি করে, করিব কুচকুম্ভ মর্দন।
হে মোর কামিনী হে মোর ললনা মিটাও আজি মোর মনের বাসনা,
হে মোর প্রেয়সী করো না ছলনা।”

দুই প্রেমে বিভোর নর নারী পরস্পরকে আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে হারিয়ে যায় পরস্পরের মাঝে। শুরু হয় এক নতুন অঙ্ক, আগের সব অঙ্ক ভুলে।

!!!!!!! দ্বিতীয় অঙ্কের সুত্রপাত !!!!!!!
[+] 8 users Like pnigpong's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: দ্বিতীয় অঙ্ক (কালেক্টেড) - by pnigpong - 30-06-2020, 11:38 AM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)