30-06-2020, 09:53 AM
(This post was last modified: 26-02-2021, 12:35 PM by kumdev. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
।।২৯।।
প্রতিদিন অল্প অল্প করে বাগানের চেহারা বদলে দিয়েছে বলদেব।বারান্দায় সারি সারি ফুলের টব বাংলোকে দিয়েছে আলাদা মাত্রা। বোগেনভলিয়া গাছটার ডাল ছেটে দড়ি দিয়ে বেধে ছাদে তুলে দিয়েছে।জেনিফার আলমের ব্যস্ততায় ভাল করে দেখার সু্যোগ হয়নি।কাল আর বাইরে যাবেন না, বিশ্রাম দরকার।রাতে খাওয়া দাওয়ার পর একটা গেলাসে পানীয় নিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাড়ালেন। রান্নার
লোকটা ভালই পেয়েছেন।ভালমন্দ বেশ রাধে।ধীরে ধীরে সিড়ী দিয়ে নেমে আসেন।বাতাসে হাস্নু হানার গন্ধ চাদের আলোয় ঝকঝক করছে বাগান।এতদিন ভাল করে নজর করেন নি।কে এমন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করল?বাংলোর বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসলেন। অপরাধের সংখ্যা বাইরে কমলেও নিজের ডিপার্ট মেণ্টেই এখনো বাস্তুঘুঘুর বাসা বহাল তবিয়তে বিরাজ করছে।চাঁদের মায়াবী আলোয় মনে পড়ছে হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা।পুরুষগুলোর মধ্যেই অধিকতর দুর্নীতি,এক-একটা লম্পট।মেয়েদের সম্মান করতে জানে না।পুরুষমানুষগুলো শুধু পুরুষ একটাকে মানুষ বলে মনে হয়না। কি এক অভাববোধ হু-হু করে বুকের মধ্যে,সে জন্যই ডুবে থাকতে চান কাজের মধ্যে।একটা গানের কলি মনে পড়ল...."বড় একা লাগে/এই আঁধারে....",রাত অনেক হল এবার ঘুমোতে যাওয়া যাক।
ঘুম ভাঙ্গতে নুসরত জাহান বুঝতে পারল,তার হায়েজ হয়েছে।ধড় ফড় করে উঠে বসে বিছানায়।পরীক্ষা করে দেখে খুন লেগেছে কিনা
বিছানায়? পাশে গুলনার-দি ঘুমে অচেতন। গুলনার তার থেকে বয়সে কিছু বড়।দুজনই ঢাকার থেকে চাকরির প্রয়োজনে এসেছে।গুলনার কলেজে শিক্ষিকা নুসরত ডিএমের অফিসে চাকরি পায়।নুসরত জাহানেরও ইচ্ছা ছিল শিক্ষিকা হবার,আবেদনও করেছিল।
নসিব খারাপ তাই ডিএমের পিএ হিসেবে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।এখানে দুই অসমবয়সী বন্ধু ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে।গুলনারের কলেজ কাছেই,দুরে জঙ্গলটার পরেই। কাল অনেক রাত অবধি গল্প করেছে দুই বন্ধু,মজার মজার কথা।দেবের কথা নিয়েও আলোচনা
হয়েছে। সুজা সরল মানুষ এরকম দেখা যায় না। মেয়েদের প্রতি সম্ভ্রমবোধ আজকাল কোন পুরুষের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা যায় না।গুলনার অবাক হয়ে বলেছে,মানুষটারে একবার দেখতে হয়।নুসরতের অভিমান হয়,গুলনার হয়তো ভাবছে বানিয়ে বানিয়ে বলছে।
--দেখলে তোমার মনে হবে না দেব আমাদের অফিসের পিওন।এত সুন্দর চেহারা।ওর সঙ্গে কথা বললে বেশ সময় কেটে যায়।
--দেখে মানুষকে বিচার করতে যাস না।আমাদের কলেজের ক্লার্ক আদিল দেখতে নিরীহ,হা-করে দিদিমণিদের বুকের দিকে
তাকিয়ে থাকে।ওর কাছে যেতে গা ঘিনঘিন করে।মা-মাসির বয়সি কাউকে রেয়াত করেনা।
খিলখিল করে হেসে ফেলে নুসরত জাহান।হাসি থামিয়ে বলে,জেনিফার ম্যাডামের কাছে সব পুরুষ লম্পট--।ভাগ্যিস আমার আলাদা ঘর।
--তবু ভাল আদিল খালি দেখে,কেউ কেউ আরো ভয়ঙ্কর। ইদানীং কলেজে যাবার পথে কয়েকটা ছেলে গান শুনায়। কথাটা শুনে শঙ্কিত হয় নুসরত জাহান,জিজ্ঞেস করে,গান শুনায়?মানে?
--অবাক লাগে আমি কলেজের টিচার,ভাবছি এত সাহস পায় কি করে?
--আজকাল সব কেমন হয়ে যাচ্ছে।আমাদের সময় দিদিমণিদের কত সম্মান করতাম--।
--ভাবছি আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাবো না।ঘুরে যেতে গেলে অনেকটা পথ।
--অসুবিধে হলে বোলো ব্যাপারটা আমি জেনিফার ম্যাডামকে বলবো।
গুলনার বলে,দরকার নেই,আপনি ঠিক হয়ে যাবে।
নুসরত বাথরুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি গোসল করে নিল। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখল ঘুম থেকে উঠে পড়েছে গুলনার।
--কি রে এত সকাল সকাল গোসল করলি?কোথাও যাবি নাকি?
লাজুক হেসে বলে নুসরত,আমার আজ হয়েছে।
--মেয়েদের এই এক ঝামেলা।গুলনার বলে।আচ্ছা তোদের ম্যাডামের এইসব হয়না?
--চল্লিশ-বিয়াল্লিশ বয়স--জানিনা কতদিন মেয়েদের এই ভোগান্তি চলে?
দরজায় নক করছে রান্নার মাসী।।নুসরত জাহান দরজা খুলতে গেল।রান্নার মাসীর নাম পারুল,* ।এদের রান্না করে দিয়ে যায় কিন্তু চা ছাড়া এখানে কিছু খায় না।অদ্ভুত লাগে পারুলের এই বাঁচিয়ে চলা।
সবাই এসে গেছে অফিসে।আব্বাস সাহেব ফয়সাল সাহেব সইফুল আজমান শঙ্করবাবু সুলতান সাহেব যে যার কাজের জায়গায় বসে কাজ শুরু করে দিয়েছে।স্যর বাসায় আছেন ওরা খবর পেয়েছে।বলদেব দরজার পাশে টুলে বসে আছে।ডিএম সাহেবা আসতে
সবাই উঠে দাড়ায়।বলদেব মাথায় হাত দিয়ে সালাম করে।জেনিফার এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে বলদেবকে দেখেন।বলদেবের গলার কাছে শ্বাস আটকে থাকে।তারপর গটমট করে ছোট্ট ঘরে ঢুকে গেলেন।
নুসরত দাঁড়িয়ে বলে,গুড মর্নিং ম্যাম।
--মর্নিং।বসো।আচ্ছা বারান্দায় টব সাজিয়েছে কে?
--ম্যাম আনিস মিঞার জায়গায় একজন এসেছেন,বলদেব নাম।মনে হয় উনি--।
--অফিসে কাজ করতে এসেছে না বাগান করতে?বাইরে টুলে বসে আছে ঐ লোকটা?
--বোধ হয়।ওকে ডাকবো?
--ডাকবা?--ডাকো।একটু আলাপ করা যাক।
নুসরতের বুক কেপে ওঠে,সোজা সরল মানুষ কি বলতে কি বলে দেয়? জেনিফার ম্যামের মেজাজের হদিশ কেউ জানে না।কামিজের নীচে নাকি রিভলবার গোজা থাকে। মহিলাদের এমন তেজ নুসরত জাহান আগে দেখেনি।কলেজ জীবনে হেড মিসট্রেসকে দেখেছে
ছাত্রীরা কেন দিদিমণিরাও তার ভয়ে ছিল সর্বদা সন্ত্রস্ত কিন্তু সে এরকম না।বাগানটা জঙ্গল হয়ে ছিল,দেব এসে কি সুন্দর সাজিয়েছেন।আসলে সকলে সৌন্দর্যের কদর বোঝেনা।জেনিফার ম্যামের কাঠখোট্টা মনে কোন দাগ কাটবে না তাতে মোটেই আশ্চর্য নয় নুসরত জাহান।চোখের সামনে অপমানিত লাঞ্ছিত দেবকে দেখতে হবে ভেবে খারাপ লাগছে।
প্রতিদিন অল্প অল্প করে বাগানের চেহারা বদলে দিয়েছে বলদেব।বারান্দায় সারি সারি ফুলের টব বাংলোকে দিয়েছে আলাদা মাত্রা। বোগেনভলিয়া গাছটার ডাল ছেটে দড়ি দিয়ে বেধে ছাদে তুলে দিয়েছে।জেনিফার আলমের ব্যস্ততায় ভাল করে দেখার সু্যোগ হয়নি।কাল আর বাইরে যাবেন না, বিশ্রাম দরকার।রাতে খাওয়া দাওয়ার পর একটা গেলাসে পানীয় নিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাড়ালেন। রান্নার
লোকটা ভালই পেয়েছেন।ভালমন্দ বেশ রাধে।ধীরে ধীরে সিড়ী দিয়ে নেমে আসেন।বাতাসে হাস্নু হানার গন্ধ চাদের আলোয় ঝকঝক করছে বাগান।এতদিন ভাল করে নজর করেন নি।কে এমন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করল?বাংলোর বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসলেন। অপরাধের সংখ্যা বাইরে কমলেও নিজের ডিপার্ট মেণ্টেই এখনো বাস্তুঘুঘুর বাসা বহাল তবিয়তে বিরাজ করছে।চাঁদের মায়াবী আলোয় মনে পড়ছে হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা।পুরুষগুলোর মধ্যেই অধিকতর দুর্নীতি,এক-একটা লম্পট।মেয়েদের সম্মান করতে জানে না।পুরুষমানুষগুলো শুধু পুরুষ একটাকে মানুষ বলে মনে হয়না। কি এক অভাববোধ হু-হু করে বুকের মধ্যে,সে জন্যই ডুবে থাকতে চান কাজের মধ্যে।একটা গানের কলি মনে পড়ল...."বড় একা লাগে/এই আঁধারে....",রাত অনেক হল এবার ঘুমোতে যাওয়া যাক।
ঘুম ভাঙ্গতে নুসরত জাহান বুঝতে পারল,তার হায়েজ হয়েছে।ধড় ফড় করে উঠে বসে বিছানায়।পরীক্ষা করে দেখে খুন লেগেছে কিনা
বিছানায়? পাশে গুলনার-দি ঘুমে অচেতন। গুলনার তার থেকে বয়সে কিছু বড়।দুজনই ঢাকার থেকে চাকরির প্রয়োজনে এসেছে।গুলনার কলেজে শিক্ষিকা নুসরত ডিএমের অফিসে চাকরি পায়।নুসরত জাহানেরও ইচ্ছা ছিল শিক্ষিকা হবার,আবেদনও করেছিল।
নসিব খারাপ তাই ডিএমের পিএ হিসেবে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।এখানে দুই অসমবয়সী বন্ধু ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে।গুলনারের কলেজ কাছেই,দুরে জঙ্গলটার পরেই। কাল অনেক রাত অবধি গল্প করেছে দুই বন্ধু,মজার মজার কথা।দেবের কথা নিয়েও আলোচনা
হয়েছে। সুজা সরল মানুষ এরকম দেখা যায় না। মেয়েদের প্রতি সম্ভ্রমবোধ আজকাল কোন পুরুষের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা যায় না।গুলনার অবাক হয়ে বলেছে,মানুষটারে একবার দেখতে হয়।নুসরতের অভিমান হয়,গুলনার হয়তো ভাবছে বানিয়ে বানিয়ে বলছে।
--দেখলে তোমার মনে হবে না দেব আমাদের অফিসের পিওন।এত সুন্দর চেহারা।ওর সঙ্গে কথা বললে বেশ সময় কেটে যায়।
--দেখে মানুষকে বিচার করতে যাস না।আমাদের কলেজের ক্লার্ক আদিল দেখতে নিরীহ,হা-করে দিদিমণিদের বুকের দিকে
তাকিয়ে থাকে।ওর কাছে যেতে গা ঘিনঘিন করে।মা-মাসির বয়সি কাউকে রেয়াত করেনা।
খিলখিল করে হেসে ফেলে নুসরত জাহান।হাসি থামিয়ে বলে,জেনিফার ম্যাডামের কাছে সব পুরুষ লম্পট--।ভাগ্যিস আমার আলাদা ঘর।
--তবু ভাল আদিল খালি দেখে,কেউ কেউ আরো ভয়ঙ্কর। ইদানীং কলেজে যাবার পথে কয়েকটা ছেলে গান শুনায়। কথাটা শুনে শঙ্কিত হয় নুসরত জাহান,জিজ্ঞেস করে,গান শুনায়?মানে?
--অবাক লাগে আমি কলেজের টিচার,ভাবছি এত সাহস পায় কি করে?
--আজকাল সব কেমন হয়ে যাচ্ছে।আমাদের সময় দিদিমণিদের কত সম্মান করতাম--।
--ভাবছি আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাবো না।ঘুরে যেতে গেলে অনেকটা পথ।
--অসুবিধে হলে বোলো ব্যাপারটা আমি জেনিফার ম্যাডামকে বলবো।
গুলনার বলে,দরকার নেই,আপনি ঠিক হয়ে যাবে।
নুসরত বাথরুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি গোসল করে নিল। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখল ঘুম থেকে উঠে পড়েছে গুলনার।
--কি রে এত সকাল সকাল গোসল করলি?কোথাও যাবি নাকি?
লাজুক হেসে বলে নুসরত,আমার আজ হয়েছে।
--মেয়েদের এই এক ঝামেলা।গুলনার বলে।আচ্ছা তোদের ম্যাডামের এইসব হয়না?
--চল্লিশ-বিয়াল্লিশ বয়স--জানিনা কতদিন মেয়েদের এই ভোগান্তি চলে?
দরজায় নক করছে রান্নার মাসী।।নুসরত জাহান দরজা খুলতে গেল।রান্নার মাসীর নাম পারুল,* ।এদের রান্না করে দিয়ে যায় কিন্তু চা ছাড়া এখানে কিছু খায় না।অদ্ভুত লাগে পারুলের এই বাঁচিয়ে চলা।
সবাই এসে গেছে অফিসে।আব্বাস সাহেব ফয়সাল সাহেব সইফুল আজমান শঙ্করবাবু সুলতান সাহেব যে যার কাজের জায়গায় বসে কাজ শুরু করে দিয়েছে।স্যর বাসায় আছেন ওরা খবর পেয়েছে।বলদেব দরজার পাশে টুলে বসে আছে।ডিএম সাহেবা আসতে
সবাই উঠে দাড়ায়।বলদেব মাথায় হাত দিয়ে সালাম করে।জেনিফার এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে বলদেবকে দেখেন।বলদেবের গলার কাছে শ্বাস আটকে থাকে।তারপর গটমট করে ছোট্ট ঘরে ঢুকে গেলেন।
নুসরত দাঁড়িয়ে বলে,গুড মর্নিং ম্যাম।
--মর্নিং।বসো।আচ্ছা বারান্দায় টব সাজিয়েছে কে?
--ম্যাম আনিস মিঞার জায়গায় একজন এসেছেন,বলদেব নাম।মনে হয় উনি--।
--অফিসে কাজ করতে এসেছে না বাগান করতে?বাইরে টুলে বসে আছে ঐ লোকটা?
--বোধ হয়।ওকে ডাকবো?
--ডাকবা?--ডাকো।একটু আলাপ করা যাক।
নুসরতের বুক কেপে ওঠে,সোজা সরল মানুষ কি বলতে কি বলে দেয়? জেনিফার ম্যামের মেজাজের হদিশ কেউ জানে না।কামিজের নীচে নাকি রিভলবার গোজা থাকে। মহিলাদের এমন তেজ নুসরত জাহান আগে দেখেনি।কলেজ জীবনে হেড মিসট্রেসকে দেখেছে
ছাত্রীরা কেন দিদিমণিরাও তার ভয়ে ছিল সর্বদা সন্ত্রস্ত কিন্তু সে এরকম না।বাগানটা জঙ্গল হয়ে ছিল,দেব এসে কি সুন্দর সাজিয়েছেন।আসলে সকলে সৌন্দর্যের কদর বোঝেনা।জেনিফার ম্যামের কাঠখোট্টা মনে কোন দাগ কাটবে না তাতে মোটেই আশ্চর্য নয় নুসরত জাহান।চোখের সামনে অপমানিত লাঞ্ছিত দেবকে দেখতে হবে ভেবে খারাপ লাগছে।