27-02-2019, 11:10 PM
পর্ব: ৩৬: কল্পনা:
সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস এর জন্য রেডি হতে শুরু করলাম. অন্য দিনের থেকে দীপা আজ একদম আলাদা, প্রচন্ড নিরুত্তাপ আর চুপচাপ. ওর সেই বাচ্চা বুদ্ধি গুলো আমি খুব মিস করছি. আমার খুব খারাপ লাগছিল. না ওকে আর বেশিক্ষণ কষ্ট দেবনা. অফিস এ গিয়েই ওর মন টা পাল্টে দিতে হবে. কিন্তু যেন ও আজ অনলাইন থাকে, বাস এটাই. অফিস এ গিয়ে মোটামুটি কাজ গুলো গুছিয়ে নিয়ে লগ ইন করলাম. হা দীপাও অনলাইন আছে. আজ আমি জানি সুমিতাই প্রথম মেসেজ টা পাঠাবে তমাল কে. আর যা ভেবেছি ঠিক তাই. একটা মেসেজ মুহুর্তের মধ্যে চলে এলো.
সুমিতা: কেমন আছ তমাল? কি করছ এখন?
তমাল: আরে সুমিতা বল কি করছ. এই খেয়ে উঠলাম. তুমি কেমন আছ?
সুমিতা: তমাল প্লিজ আমায় ক্ষমা কর, কাল তোমার বাক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলে ঠিক করিনি.
তমাল: আরে কি পাগলামো করছ সুমিতা. কাল আমি তোমায় ঠিক ই চিনেছিলাম. আরে কাল আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল তাই লগ আউট করে দিয়েছিলাম. কাল দুপুরে রেস্ট পাইনি, প্রচুর কাজ ছিল. আজ দুপুরে রেস্ট নিয়েছি, তাই আজ অনেকক্ষণ তোমার সাথে কথা বলব.
সুমিতা: তুমি ঠিক বলছনা তমাল, কাল তুমি দুঃক্ষ তো পেয়েছিলে ইটা একদম সত্যি.
তমাল: আমি কখনো মিথ্যে বলিনা সুমিতা. আর মিথ্যে কে আমি ঘৃনা করি. আমি কাল তোমার কথায় কিছু মনে করিনি. কিন্তু কিছু পুরনো কথা মনে পরে গেছিল, তাই একটু মন টা খারাপ হয়ে গেছিল.
সুমিতা: ওই কথা গুলো তো আমার জন্যই মনে পরেছিল.
তমাল: না সুমিতা, ওই কথা গুলো প্রতি মুহুর্তে আমায় তাড়া করে বেরোয়. কেউ মনে করাক আর না করাক. তোমার মুখ থেকে তোমার বাপরে সব কথা শুনে মনে হচ্ছিল তোমরা কত সুখী জীবনে. বাস তখন ই মনে হচ্ছিল আমার বুঝি একটা সংসার নেই. আসলে ইটা আমার ই মনের ভুল. জানত সবাই জীবনে সব পায়না. তুমি একজন ভালো স্বামী পেয়েছ, তোমার স্বামী একজন ভালো বউ পেয়েছে. আর আমি প্রচুর সুভাকাঙ্খি আর বন্ধু পেয়েছি. আমিও কিন্তু আমার জীবনটায় খুব সুখী.
সুমিতা: তুমি খুব ভালো কথা বল তমাল.
তমাল: না এরকম কিছুই নয়. এটা আমার জীবনের অনুভূতি. সবাই আমায় এক বিরাট মানুষ ই মনে করে, নিজের প্রবলেম গুলো আমায় জানায়, আমি সাধ্যমত চেষ্টা করি ওদের সাহায্য করতে. কিন্তু কেউ এটা বোঝেনা যে আমার ও কিছু চাহিদা আছে. আমিও কিছু চাই.
সুমিতা: তুমি তোমার ইচ্ছে গুলো আমার সাথে শেয়ার কর, কারণ কাল তুমি বলেছিলে আমরা বন্ধু.
তমাল: কি করে তোমায় বোঝাই বলত. দেখো সুমিতা এভাবে ভাবো. তুমি এসময় কেন চ্যাট করছ কারণ তোমার স্বামী বাড়িতে থাকেনা, ঘরের কাজ ও প্রায় সব শেষ. কোনো কাজ নেই, নিস্যন্গতা ও কাটবে নতুন মানুষ দের চেনা যাবে ও বন্ধুত্ব হবে. আমার ক্ষেত্রে বাপার টা পুরো উল্টো. আমি সারাক্ষণ ই কোনো না কোনো মানুষের ভিড়ে থাকি. তাড়া সবাই ই আমার বন্ধু. এই যেমন ধর তোমার সাথে কথা বলার আগের মুহর্তে আমার কাছে সচিন আমার ছোটবেলার বন্ধু এসেছিল. কি করে গরিব কিছু বাচ্চার জন্য কলকাতায় একটা কলেজ খোলা যায় তাই আলোচনা হলো. আমি একা কখনো বোধ করিনা. বন্ধু আর কাছের লোক আমার অনেক. কিন্তু তাদের আমি সব বলতে পারিনা. মনের কথা গুলো মনেই থেকে যায়. আমার একান্ত আপন কাউকে দরকার. সারাদিনের কষ্ট আনন্দ গুলো যার সাথে আমি শেয়ার করব. আমার বউ আমায় ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে আমি ভেতরে ভেতরে গুমরে মরি. যা তোমার বা তোমার স্বামীর ক্ষেত্রে হয়না, কারণ তোমরা একজন অপরকে বোঝো, মনের কথা গুলো জানাও. ভাগবান আমার সাথে কেন এরকম করলো জানিনা. আমি তো চিরকাল মানুষের ভালই করে এসেছি. হাজার মানুষের ভীরেও আমি একা. খুব একা সুমিতা.
সুমিতা: যদি আমি তোমার সব কষ্ট প্রতিদিন শুনি বোঝার চেষ্টা করি তাহলে.
তমাল: আরে সুমিতা তুমি খুব ভালো. না সুমিতা আমি ঠিক তোমায় বোঝাতে পারবনা. ঠিক মনের কষ্ট টা প্রকাশ করাই নয়. আমি অতটাও দুর্বল নই. আমি তোমায় বোঝাতে পারছিনা. শুধু এতটুকুই জেনো যে কেন জানিনা যখন নিজের কোনো বন্ধু কে দেখি তার বউ এর সাথে আনন্দ করতে ঘুরে বেড়াতে, আমার পুরনো কথা সব মনে পরে যায়. আমার খুব কষ্ট হয়. কাল যখন তুমি নিজের কথা বলছিলে, বলতে পর তোমার স্বামীর ওপর আমার হিংসা হচ্ছিল. কিন্তু আমি সত্যি এটা চাই যে তুমি আর তোমার স্বামী খুব সুখেই থাক.
সুমিতা: আমি তোমায় বিশ্বাস করি তমাল. তুমি মানুষ খুব ভালো. ছেলেরা যে মেয়ের বন্ধু ও হতে পারে টা আমি কখনো ভাবিনি. আমি পারব তোমার পাশে থাকতে, দেখে নিও.
তমাল: না সুমিতা তুমি পারবেনা. তুমি খুব ভালো আমি জানি টা. কিন্তু এই বাপার টা একটু অন্য রকম. তুমি একবার ভেবে দেখো, তোমার স্বামী অফিস থেকে ফিরে এসে তোমার থেকে অনেক কিছু আশা করে টা না পেলে ওর মন খারাপ হয়ে যায়. আমাদের ক্ষেত্রে টা কখনই হবেনা. আমি কি করে এতটা নির্ভর করব তোমার ওপর.
সুমিতা: তুমি না চাইলে নাই বা চাইবে. কিন্তু একবার একটু আমায় চেষ্টা টা তো করতে দাও. আচ্ছা তুমি বল তোমার এই মুহুর্তে ঠিক কি করতে ইচ্ছে হচ্ছে. তোমার বউ ধর আছে তুমি কি চাইতে ওর কাছে.
তমাল: (কিছুটা ইয়ার্কি করে) প্রথমে তো ভালো করে ইন্ডিয়ান খাবার চাইতাম. বিদেশের খাবার আর ভালো লাগেনা.
সুমিতা: এ কোনো বাপার ই নয়. তুমি কি কিচেন ইউস কর?
তমাল: হা আমার একটা কিচেন আছে.
সুমিতা: বাড়িতে চাল আছে, আলু থাকলে আরো ভালো হয়?
এবার আমি পরলাম মহা বিপদে. বসে আছি অফিস এ. যদি ভাত রান্না করতে বলে তাহলে সত্যি ই তো পর্দা ফাস হয়ে যাবে. কি করি আমি.
তমাল: হা দুটোই আছে.
সুমিতা: যাও একটা হাড়িতে চাল আর একটু বেশি পরিমান জল দিয়ে ভেতরে ২-৩ তে আলু দিয়ে দাও. যখন দেখবে ওটা ফুটছে. নিচে নামাবে. আগে এটা কর. পরের টা তারপর বলব.
তমাল: যো হুকুম.
আমি সাইট টা মিনিমাইজ করে নিজের কাজ করতে লাগলাম. বেশ কিছুক্ষণ পর আমি রেপ্লি করলাম,
তমাল: হা হয়ে গেছে.
সুমিতা: এবার নুন দিয়ে আলু গুলো মেখে নাও ভালো করে. ভাত টা জল জল অবস্থায় নামাও. খানিক টা পান্তা ভাত টাইপের লাগবে, কিন্তু দেখো রেস্টুরেন্ট এর রান্নার থেকে অনেক ভালো. তুমি আগে খেয়ে নাও তারপর কথা বলব.
আমি আবার কিছুক্ষণের বিরতি নিলাম. বেশ কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই করলাম,
তমাল: উমম কি খেতে. তুমি খুব ভালো রান্না কর সুমিতা.
সুমিতা: এই রান্না টা তুমি করলে, আমি কোথায়.
তমাল: না আমি যখন রান্নাটা করছিলাম এটাই ভাবছিলাম যে তুমি ই রান্না করছিলে.
সুমিতা: এ আবার হয় নাকি, কাল্পনিক বাপার সব.
তমাল: হা হয়. সুমিতা এটাই তোমায় বুঝিয়ে বলতে চাই. খুব সিরিয়াসলি শুনবে কিন্তু.
সুমিতা: হা সুনব, তুমি বল.
তমাল: আমি তোমায় দেখতে পাই. এই দুদিন ধরে আমি তোমার প্রোফাইল টা খুব ভালো করে দেখেছি. তোমার প্রোফাইল পিকচার জায়াপ্রদার. তোমার প্রফেসন, তোমার হবি, তোমার ইন্টারেস্ট, ম্যারিটাল স্টেটাস আরো অনেক কিছু আমি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছি, আর তোমায় কল্পনা করেছি কেমন দেখতে হবে তোমায় সে বাপরে. আমি তোমায় বলব আর তুমি মিলিয়ে দেখো আমি কতটা ঠিক বললাম. কিন্তু তোমাকেও আমি কল্পনা করতে হবে. তুমি আমার প্রোফাইল টা ভালো করে দেখো আর মনে মনে কল্পনা কর আমায়, তারপর আমি মিলিয়ে দেখব.
সুমিতা: তুমি পারো এভাবে কল্পনা করতে. আমি সাধারণ মেয়ে আমি পারবনা.
তমাল: না পারতেই হবে, তুমি ভালো করে আমার প্রোফাইল টা দেখো আর আমায় বোলো, তারপর আমি তোমার বাপরে বলব.
সুমিতা: ঠিক আছে সময় দাও.
প্রায় ১০ মিনিট পরে সুমিতা উত্তর দিল
সুমিতা: হা দেখেও নিয়েছি ভেবেও নিয়েছি. কিন্তু আগে তোমায় বলতে হবে.
তমাল: ঠিক আছে. সুমিতা তুমি যেখানে থাক তার চারদিকে প্রচুর পাহাড় আর জঙ্গল. জায়গাটা তোমার ভালো লাগে খুব. বাড়ির ভেতরে দুটো বড় গাছ আছে. তাতে অনেক পাখি বসে. তোমার হায়িট ৫ ফুট হবে মানে যাকে বলে শর্ট হায়িট. তুমি একটু সাস্থবান টাইপের. বিয়ের আগে তুমি সারি পড়তে. বিয়ের পর স্বামীর কথাতেই সালোয়ার পড়া শুরু. এর আগে কখনো নাইট ড্রেস পরনি. এখানে এসেই শুরু করেছ. এখন তুমি একটা টি শার্ট আর স্কার্ট পরে আছ. রং টা নিল বা লাল হবে. তুমি নিজের স্বামীকে খুব ভালোবাসো. ও বাড়িতে না থাকলে খুব একা লাগে নিজেকে.
সুমিতা: এত কিছু কিভাবে মিলিয়ে দিলে. তোমার অনুমান ১০০% ঠিক. দাড়াও এবার আমি বলি..
সুমিতা: তোমার উচ্চতা মাঝারি মাপের, এই ৫ ফুট ৫ ইনচ হবে. তুমি শ্যাম বর্ণের. তুমি একটু মোটা টাইপ এর. আর কি বলি তুমি এখন একটা হলুদ টি শার্ট আর কালো পান্ট পরে আছ.
তমাল: এক ফোটায় মিললনা. এক কাজ করি. আমি তোমায় নিজের শরীরের আর আসে পাশের জিনিসের বর্ণনা দিয়ে দি, তুমি তাহলে আমায় দেখতে পাবে.
সুমিতা: হমমম তাই ভালো.
তমাল: আমার হায়িট ৬ ফুট. গায়ের রং লালচে ফর্সা. শরীর একদম পেটানো. মাথার চুল টা কাচা পাকা, একটু কোকড়ানো. আমি টি শার্ট আর জিন্স পড়তে ভালবাসি. ব্লু কালার এর জিন্স আমার প্রিয়. হলুদ অথবা কমলা টি শার্ট আমার বেশি ভালো লাগে. আমার বাড়িটা একদম রাস্তার ওপরে তাই সবসময়ে গাড়ির আওয়াজ পাওয়া যায়. এবার চোখ টা বন্ধ করে আমায় ভাবতে শুরু কর.
সুমিতা: হা আমি এবার তোমায় কল্পনা করতে পারছি.
তমাল: তুমি বিশ্বাস কর সবসময় আমি তোমায় দেখতে পাই. তোমার গলায় অথবা ঘাড়ে একটা তিল আছে. তোমার মুখটা খুব খুব মিষ্টি.
সুমিতা: তুমি কি করে এগুলো বলছ, আমায় শেখাও না প্লিজ.
তমাল: কি করে শেখায় বলত. এটাই ভাবো যে আমি তোমায় সবসময় দেখতে পাই. তুমি যদি মনে কর আমি তোমার বাড়িতেই আছি, তাহলে তুমি ঠিক আমায় অনুভব করতে পারবে. যাই হোক আজ শুতে যাচ্ছি, ঘুম পাচ্ছে খুব. টাটা পরে কথা হবে.
আমি লগ আউট করে নিলাম. জানি দীপার মন খুব ভালো হয়ে গেছে. আমি ওকে একটা ফোন করলাম আর বিকেলে সমুদ্র তট দেখতে যাওয়ার প্লান হলো. কুরুভিল্লা কেও একটা ফোন করে দেকে নিলাম বিকেলে.
সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস এর জন্য রেডি হতে শুরু করলাম. অন্য দিনের থেকে দীপা আজ একদম আলাদা, প্রচন্ড নিরুত্তাপ আর চুপচাপ. ওর সেই বাচ্চা বুদ্ধি গুলো আমি খুব মিস করছি. আমার খুব খারাপ লাগছিল. না ওকে আর বেশিক্ষণ কষ্ট দেবনা. অফিস এ গিয়েই ওর মন টা পাল্টে দিতে হবে. কিন্তু যেন ও আজ অনলাইন থাকে, বাস এটাই. অফিস এ গিয়ে মোটামুটি কাজ গুলো গুছিয়ে নিয়ে লগ ইন করলাম. হা দীপাও অনলাইন আছে. আজ আমি জানি সুমিতাই প্রথম মেসেজ টা পাঠাবে তমাল কে. আর যা ভেবেছি ঠিক তাই. একটা মেসেজ মুহুর্তের মধ্যে চলে এলো.
সুমিতা: কেমন আছ তমাল? কি করছ এখন?
তমাল: আরে সুমিতা বল কি করছ. এই খেয়ে উঠলাম. তুমি কেমন আছ?
সুমিতা: তমাল প্লিজ আমায় ক্ষমা কর, কাল তোমার বাক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলে ঠিক করিনি.
তমাল: আরে কি পাগলামো করছ সুমিতা. কাল আমি তোমায় ঠিক ই চিনেছিলাম. আরে কাল আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল তাই লগ আউট করে দিয়েছিলাম. কাল দুপুরে রেস্ট পাইনি, প্রচুর কাজ ছিল. আজ দুপুরে রেস্ট নিয়েছি, তাই আজ অনেকক্ষণ তোমার সাথে কথা বলব.
সুমিতা: তুমি ঠিক বলছনা তমাল, কাল তুমি দুঃক্ষ তো পেয়েছিলে ইটা একদম সত্যি.
তমাল: আমি কখনো মিথ্যে বলিনা সুমিতা. আর মিথ্যে কে আমি ঘৃনা করি. আমি কাল তোমার কথায় কিছু মনে করিনি. কিন্তু কিছু পুরনো কথা মনে পরে গেছিল, তাই একটু মন টা খারাপ হয়ে গেছিল.
সুমিতা: ওই কথা গুলো তো আমার জন্যই মনে পরেছিল.
তমাল: না সুমিতা, ওই কথা গুলো প্রতি মুহুর্তে আমায় তাড়া করে বেরোয়. কেউ মনে করাক আর না করাক. তোমার মুখ থেকে তোমার বাপরে সব কথা শুনে মনে হচ্ছিল তোমরা কত সুখী জীবনে. বাস তখন ই মনে হচ্ছিল আমার বুঝি একটা সংসার নেই. আসলে ইটা আমার ই মনের ভুল. জানত সবাই জীবনে সব পায়না. তুমি একজন ভালো স্বামী পেয়েছ, তোমার স্বামী একজন ভালো বউ পেয়েছে. আর আমি প্রচুর সুভাকাঙ্খি আর বন্ধু পেয়েছি. আমিও কিন্তু আমার জীবনটায় খুব সুখী.
সুমিতা: তুমি খুব ভালো কথা বল তমাল.
তমাল: না এরকম কিছুই নয়. এটা আমার জীবনের অনুভূতি. সবাই আমায় এক বিরাট মানুষ ই মনে করে, নিজের প্রবলেম গুলো আমায় জানায়, আমি সাধ্যমত চেষ্টা করি ওদের সাহায্য করতে. কিন্তু কেউ এটা বোঝেনা যে আমার ও কিছু চাহিদা আছে. আমিও কিছু চাই.
সুমিতা: তুমি তোমার ইচ্ছে গুলো আমার সাথে শেয়ার কর, কারণ কাল তুমি বলেছিলে আমরা বন্ধু.
তমাল: কি করে তোমায় বোঝাই বলত. দেখো সুমিতা এভাবে ভাবো. তুমি এসময় কেন চ্যাট করছ কারণ তোমার স্বামী বাড়িতে থাকেনা, ঘরের কাজ ও প্রায় সব শেষ. কোনো কাজ নেই, নিস্যন্গতা ও কাটবে নতুন মানুষ দের চেনা যাবে ও বন্ধুত্ব হবে. আমার ক্ষেত্রে বাপার টা পুরো উল্টো. আমি সারাক্ষণ ই কোনো না কোনো মানুষের ভিড়ে থাকি. তাড়া সবাই ই আমার বন্ধু. এই যেমন ধর তোমার সাথে কথা বলার আগের মুহর্তে আমার কাছে সচিন আমার ছোটবেলার বন্ধু এসেছিল. কি করে গরিব কিছু বাচ্চার জন্য কলকাতায় একটা কলেজ খোলা যায় তাই আলোচনা হলো. আমি একা কখনো বোধ করিনা. বন্ধু আর কাছের লোক আমার অনেক. কিন্তু তাদের আমি সব বলতে পারিনা. মনের কথা গুলো মনেই থেকে যায়. আমার একান্ত আপন কাউকে দরকার. সারাদিনের কষ্ট আনন্দ গুলো যার সাথে আমি শেয়ার করব. আমার বউ আমায় ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে আমি ভেতরে ভেতরে গুমরে মরি. যা তোমার বা তোমার স্বামীর ক্ষেত্রে হয়না, কারণ তোমরা একজন অপরকে বোঝো, মনের কথা গুলো জানাও. ভাগবান আমার সাথে কেন এরকম করলো জানিনা. আমি তো চিরকাল মানুষের ভালই করে এসেছি. হাজার মানুষের ভীরেও আমি একা. খুব একা সুমিতা.
সুমিতা: যদি আমি তোমার সব কষ্ট প্রতিদিন শুনি বোঝার চেষ্টা করি তাহলে.
তমাল: আরে সুমিতা তুমি খুব ভালো. না সুমিতা আমি ঠিক তোমায় বোঝাতে পারবনা. ঠিক মনের কষ্ট টা প্রকাশ করাই নয়. আমি অতটাও দুর্বল নই. আমি তোমায় বোঝাতে পারছিনা. শুধু এতটুকুই জেনো যে কেন জানিনা যখন নিজের কোনো বন্ধু কে দেখি তার বউ এর সাথে আনন্দ করতে ঘুরে বেড়াতে, আমার পুরনো কথা সব মনে পরে যায়. আমার খুব কষ্ট হয়. কাল যখন তুমি নিজের কথা বলছিলে, বলতে পর তোমার স্বামীর ওপর আমার হিংসা হচ্ছিল. কিন্তু আমি সত্যি এটা চাই যে তুমি আর তোমার স্বামী খুব সুখেই থাক.
সুমিতা: আমি তোমায় বিশ্বাস করি তমাল. তুমি মানুষ খুব ভালো. ছেলেরা যে মেয়ের বন্ধু ও হতে পারে টা আমি কখনো ভাবিনি. আমি পারব তোমার পাশে থাকতে, দেখে নিও.
তমাল: না সুমিতা তুমি পারবেনা. তুমি খুব ভালো আমি জানি টা. কিন্তু এই বাপার টা একটু অন্য রকম. তুমি একবার ভেবে দেখো, তোমার স্বামী অফিস থেকে ফিরে এসে তোমার থেকে অনেক কিছু আশা করে টা না পেলে ওর মন খারাপ হয়ে যায়. আমাদের ক্ষেত্রে টা কখনই হবেনা. আমি কি করে এতটা নির্ভর করব তোমার ওপর.
সুমিতা: তুমি না চাইলে নাই বা চাইবে. কিন্তু একবার একটু আমায় চেষ্টা টা তো করতে দাও. আচ্ছা তুমি বল তোমার এই মুহুর্তে ঠিক কি করতে ইচ্ছে হচ্ছে. তোমার বউ ধর আছে তুমি কি চাইতে ওর কাছে.
তমাল: (কিছুটা ইয়ার্কি করে) প্রথমে তো ভালো করে ইন্ডিয়ান খাবার চাইতাম. বিদেশের খাবার আর ভালো লাগেনা.
সুমিতা: এ কোনো বাপার ই নয়. তুমি কি কিচেন ইউস কর?
তমাল: হা আমার একটা কিচেন আছে.
সুমিতা: বাড়িতে চাল আছে, আলু থাকলে আরো ভালো হয়?
এবার আমি পরলাম মহা বিপদে. বসে আছি অফিস এ. যদি ভাত রান্না করতে বলে তাহলে সত্যি ই তো পর্দা ফাস হয়ে যাবে. কি করি আমি.
তমাল: হা দুটোই আছে.
সুমিতা: যাও একটা হাড়িতে চাল আর একটু বেশি পরিমান জল দিয়ে ভেতরে ২-৩ তে আলু দিয়ে দাও. যখন দেখবে ওটা ফুটছে. নিচে নামাবে. আগে এটা কর. পরের টা তারপর বলব.
তমাল: যো হুকুম.
আমি সাইট টা মিনিমাইজ করে নিজের কাজ করতে লাগলাম. বেশ কিছুক্ষণ পর আমি রেপ্লি করলাম,
তমাল: হা হয়ে গেছে.
সুমিতা: এবার নুন দিয়ে আলু গুলো মেখে নাও ভালো করে. ভাত টা জল জল অবস্থায় নামাও. খানিক টা পান্তা ভাত টাইপের লাগবে, কিন্তু দেখো রেস্টুরেন্ট এর রান্নার থেকে অনেক ভালো. তুমি আগে খেয়ে নাও তারপর কথা বলব.
আমি আবার কিছুক্ষণের বিরতি নিলাম. বেশ কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই করলাম,
তমাল: উমম কি খেতে. তুমি খুব ভালো রান্না কর সুমিতা.
সুমিতা: এই রান্না টা তুমি করলে, আমি কোথায়.
তমাল: না আমি যখন রান্নাটা করছিলাম এটাই ভাবছিলাম যে তুমি ই রান্না করছিলে.
সুমিতা: এ আবার হয় নাকি, কাল্পনিক বাপার সব.
তমাল: হা হয়. সুমিতা এটাই তোমায় বুঝিয়ে বলতে চাই. খুব সিরিয়াসলি শুনবে কিন্তু.
সুমিতা: হা সুনব, তুমি বল.
তমাল: আমি তোমায় দেখতে পাই. এই দুদিন ধরে আমি তোমার প্রোফাইল টা খুব ভালো করে দেখেছি. তোমার প্রোফাইল পিকচার জায়াপ্রদার. তোমার প্রফেসন, তোমার হবি, তোমার ইন্টারেস্ট, ম্যারিটাল স্টেটাস আরো অনেক কিছু আমি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছি, আর তোমায় কল্পনা করেছি কেমন দেখতে হবে তোমায় সে বাপরে. আমি তোমায় বলব আর তুমি মিলিয়ে দেখো আমি কতটা ঠিক বললাম. কিন্তু তোমাকেও আমি কল্পনা করতে হবে. তুমি আমার প্রোফাইল টা ভালো করে দেখো আর মনে মনে কল্পনা কর আমায়, তারপর আমি মিলিয়ে দেখব.
সুমিতা: তুমি পারো এভাবে কল্পনা করতে. আমি সাধারণ মেয়ে আমি পারবনা.
তমাল: না পারতেই হবে, তুমি ভালো করে আমার প্রোফাইল টা দেখো আর আমায় বোলো, তারপর আমি তোমার বাপরে বলব.
সুমিতা: ঠিক আছে সময় দাও.
প্রায় ১০ মিনিট পরে সুমিতা উত্তর দিল
সুমিতা: হা দেখেও নিয়েছি ভেবেও নিয়েছি. কিন্তু আগে তোমায় বলতে হবে.
তমাল: ঠিক আছে. সুমিতা তুমি যেখানে থাক তার চারদিকে প্রচুর পাহাড় আর জঙ্গল. জায়গাটা তোমার ভালো লাগে খুব. বাড়ির ভেতরে দুটো বড় গাছ আছে. তাতে অনেক পাখি বসে. তোমার হায়িট ৫ ফুট হবে মানে যাকে বলে শর্ট হায়িট. তুমি একটু সাস্থবান টাইপের. বিয়ের আগে তুমি সারি পড়তে. বিয়ের পর স্বামীর কথাতেই সালোয়ার পড়া শুরু. এর আগে কখনো নাইট ড্রেস পরনি. এখানে এসেই শুরু করেছ. এখন তুমি একটা টি শার্ট আর স্কার্ট পরে আছ. রং টা নিল বা লাল হবে. তুমি নিজের স্বামীকে খুব ভালোবাসো. ও বাড়িতে না থাকলে খুব একা লাগে নিজেকে.
সুমিতা: এত কিছু কিভাবে মিলিয়ে দিলে. তোমার অনুমান ১০০% ঠিক. দাড়াও এবার আমি বলি..
সুমিতা: তোমার উচ্চতা মাঝারি মাপের, এই ৫ ফুট ৫ ইনচ হবে. তুমি শ্যাম বর্ণের. তুমি একটু মোটা টাইপ এর. আর কি বলি তুমি এখন একটা হলুদ টি শার্ট আর কালো পান্ট পরে আছ.
তমাল: এক ফোটায় মিললনা. এক কাজ করি. আমি তোমায় নিজের শরীরের আর আসে পাশের জিনিসের বর্ণনা দিয়ে দি, তুমি তাহলে আমায় দেখতে পাবে.
সুমিতা: হমমম তাই ভালো.
তমাল: আমার হায়িট ৬ ফুট. গায়ের রং লালচে ফর্সা. শরীর একদম পেটানো. মাথার চুল টা কাচা পাকা, একটু কোকড়ানো. আমি টি শার্ট আর জিন্স পড়তে ভালবাসি. ব্লু কালার এর জিন্স আমার প্রিয়. হলুদ অথবা কমলা টি শার্ট আমার বেশি ভালো লাগে. আমার বাড়িটা একদম রাস্তার ওপরে তাই সবসময়ে গাড়ির আওয়াজ পাওয়া যায়. এবার চোখ টা বন্ধ করে আমায় ভাবতে শুরু কর.
সুমিতা: হা আমি এবার তোমায় কল্পনা করতে পারছি.
তমাল: তুমি বিশ্বাস কর সবসময় আমি তোমায় দেখতে পাই. তোমার গলায় অথবা ঘাড়ে একটা তিল আছে. তোমার মুখটা খুব খুব মিষ্টি.
সুমিতা: তুমি কি করে এগুলো বলছ, আমায় শেখাও না প্লিজ.
তমাল: কি করে শেখায় বলত. এটাই ভাবো যে আমি তোমায় সবসময় দেখতে পাই. তুমি যদি মনে কর আমি তোমার বাড়িতেই আছি, তাহলে তুমি ঠিক আমায় অনুভব করতে পারবে. যাই হোক আজ শুতে যাচ্ছি, ঘুম পাচ্ছে খুব. টাটা পরে কথা হবে.
আমি লগ আউট করে নিলাম. জানি দীপার মন খুব ভালো হয়ে গেছে. আমি ওকে একটা ফোন করলাম আর বিকেলে সমুদ্র তট দেখতে যাওয়ার প্লান হলো. কুরুভিল্লা কেও একটা ফোন করে দেকে নিলাম বিকেলে.