27-02-2019, 08:57 PM
দিবস, রজনীর খেলা
জুন মাসের শেষ। একদিন রাতের খাওয়ার সময়ে অভি বাবা মাকে জানায় যে পরেরদিন ওর কিছু ইন্টারভিউ আছে। একটা চাকরি বড় জরুরি অভির পক্ষে। ছোটোবেলা থেকে অভি বাবা মার কাছে শুনে এসেছে যে বাবা মা ওর জন্য অনেক পয়সা খরচ করেছে আর তাঁর সঠিক ফলাফল অভি তাদের দিতে পারেনি। বাবা মায়ের ভরতসনা শুনে শুনে অভির মন বিষিয়ে গেছে, অন্যদিকে পরীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ওকে সমাজের সমকক্ষ হয়ে দাঁড়াতে হবে না হলে কেউ ওর আওয়াজ শুনবে না।
রাতের খাওয়ার পরে, বসার ঘরে বসে টি.ভি দেখছিল। পরী ওকে দুধ দেবার জন্য ঢুকে ওকে জিজ্ঞেস করে, "কাল কোথায় কোথায় ইন্টারভিউ আছে?"
অভি, "অনেক জায়গায় পাঠিয়েছিলাম শুধু দু জায়গা থেকে ডাক এসেছে। পি.ডাব্লু.সি আর এন.আই.আই.টি থেকে কল এসেছে। কাল ক্যামাক স্ট্রীট যাবো, দেখি কি হয়।"
সোফায় ওর পাসে বসে, অভির মাথার চুলে বিলি কেটে বলে, "আমার বিশ্বাস তুমি কিছু না কিছু তে পেয়ে যাবে। কিন্তু অভি, রেসাল্ট না পাওয়া পর্যন্ত ত কেউ তোমাকে চাকরি দেবে না। একটু অপেক্ষা করো, গ্রাজুয়েসানের রেসাল্ট বের হওয়া পর্যন্ত।"
অভি, "না পরী, আমাকে কোন রকমে একটা চাকরি পেতেই হবে। যা পাব তাতেই ঢুকে যাবো আমি।"
পরী, "এত উতলা হচ্ছ কেন? আর দুই মাস বাকি রেসাল্ট বের হতে, তারপরে ইন্টারভিউ দাও। এখন তোমাকে কেউ চাকরি দেবে না অভি, গ্রাজুয়েসান ডিগ্রি চাই ই চাই।" পরী ঠিক কথাই বলেছিল। ওর দিকে হেসে বলে, "কাল এমনি এমনি বের হবে? শুধু আমি আর তুমি, খালি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াব দুজনে। এখন তোমার শহর, কোলকাতাকে ঘুরিয়ে দেখাওনি কিন্তু।"
অভি, "হাঃ কোলকাতা আমার শহর নয়, আমি এখানে বেশি সময় থাকিনি। এই শহরেকে ঠিক নিজের বাড়ি বলে মেনে নিতে কষ্ট হয় আমার।"
পরী, "ঠিক আছে বাবা। কাল আমি তোমার সাথে ইন্টারভিউর জায়গায় যাবো, তারপরে না হয় দুজনে কোথাও বেড়াতে যাবো, হল। এখন মাথা ঠাণ্ডা করে ঘুমাতে যাও।"
অভি, "আমার সাথে এসো না প্লিস।"
পরী, "কেন?"
অভি, "আমি এমনিতেই অনেক উত্তেজিত কালকের ইন্টারভিউর ব্যাপারে, তুমি সাথে থাকলে আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। তাঁর চেয়ে বরং তুমি বাড়িতে থাক, আমার ইন্টারভিউ শেষ হলে আমি ফোন করে দেব, তুমি ট্যাক্সি নিয়ে তিনটে নাগাদ নন্দনে চলে এস। একসাথে, মুভি দেখব, স্প্লিবারগের সিন্ডলারস লিস্ট।"
পরী নাক কুঁচকে বলে, "ইস, ইংরাজি সিনেমা? ধুর আমি ইংরাজি সিনেমা দেখিনা, একে ত কিছু বুঝিনা। তুমি আমাকে যদি হিন্দি অথবা বাংলা সিনেমা দেখাতে চাও তাহলে আসতে পারি।"
ঠিক তখনি মা ওদিক থেকে পরীকে শুতে যেতে বলে। অভি টি.ভি বন্ধ করে নিজের ঘরে চলে যায়। যাবার আগে পরীর দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে, "আমি কিন্তু কাল তোমার জন্য নন্দনে অপেক্ষা করব। আসা না আসা তোমার ব্যাপার।"
পরদিন, ইন্টারভিউর পরে অভি নন্দনে অনেকক্ষণ পর্যন্ত পরীর জন্য অপেক্ষা করে। পরীর দেখা না পেয়ে, অভি মর্মাহত হয়ে পরে। মাথায় রাগ চড়ে যায় অভির, সাথে সাথে মনে ভয় ঢোকে। কিছু হয়নি ত ওর, কোলকাতায় নতুন, একা একা ট্যাক্সি চেপে ঠিক ভাবে পৌছাতে পারবে ত নন্দনে। পরীর যদি কিছু হয় তাহলে মা ওকে কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবে। শেষ পর্যন্ত বাড়িতে ফোন করে পরীর খবর নেওয়ার জন্য। পরী ফোন তোলে, আর অভি রেগে যায় এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত পরী ওর কথা রাখল না।
অভি ফোনে পরীর ওপরে চেঁচিয়ে ওঠে, "আমি তিন ঘন্টা ধরে তোমার জন্য নন্দনে অপেক্ষা করছি আর তুমি বাড়িতে বসে কি করছ?"
পরী বিরক্তির সুরে উত্তর দেয়, "একদম চেঁচাবে না আমার ওপরে।"
অভি থামেনা, "তুমি আসবেনা, সেটা সকালে জানিয়ে দিলেই হত। অত আদিখ্যেতা দেখানর কি ছিল? আমি তোমার জন্য তাহলে নন্দনে অপেক্ষা করে থাকতাম না।"
পরী, "তোমাকে অপেক্ষা করতে কে বলেছিল, আমি কি বলেছিলাম? আমি ত তোমাকে আগে থেকেই বলে দিয়েছিলাম যে যদি তুমি আমাকে হিন্দি বা বাংলা সিনেমা দেখাও তাহলে আমি তোমার সাথে যেতে রাজি আছি।"
অভি, "তার মানে তুমি আসছ না তাই তো। আমি এতক্ষণ তোমার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আর তুমি এখন বলছ যে তুমি আসবে না।"
পরী, "আমি আগেই বলেছি যে আমার ওপরে ওই রকম ভাবে চেঁচাবে না।"
অভি, "আমি কিছু জানিনা, আমি আরও এক ঘন্টা তোমার জন্য এখানে অপেক্ষা করব। একটা ট্যাক্সি নিয়ে চলে আস।"
পরী, "তুমি কি আমাকে আদেশ করছ তোমার সাথে সিনেমা দেখতে যেতে? আমি আসছি না, তোমার যা ইচ্ছে তাই করো।" এই বলে ফোন রেখে দেয়।
অভি অনেকক্ষণ এদিক ওদিকে ঘুরেফিরে একটা সিনেমা দেখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে যায়। সিনেমায় অভির মন বসেনা, সামনের পর্দায় সিনেমা চলতে থাকে কিন্তু মাথার মধ্যে পরীর ওপরে খুব রাগ হয়। সন্ধ্যের পরে বাড়ি পৌঁছে দেখে যে বাবা অফিস থেকে ফিরে এসেছেন। পরী চেহারা অস্বাভাবিক ভাবে শান্ত, মনের মধ্যে যেন অশান্তির মেঘ জমে উঠেছে, অভির সাথে ঠিক ভাবে কথা বলছেনা পরী। বসার ঘরে বসে টি.ভি চালায় অভি। কিছু পরে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে ধুপ করে ওর সামনে চায়ের কাপ রেখে ওর দিকে বিরক্তি ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। অভি চোখ তুলে তাকাতেই, মুখ ঘুরিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। অভি জল খাওয়ার ছুতো করে রান্না ঘরে ঢোকে।
গলা নামিয়ে পরীকে জিজ্ঞেস করে, "কথা বলছ না কেন আমার সাথে?" পরী কিছু সবজি কাটছিল, পেছন ফিরে ভুরু কুঁচকে বিরক্তি ভরা চোখ নিয়ে অভির দিকে তাকায়, যেন জিজ্ঞেস করে, "কি চাই তোমার?" অভি ওকে, ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে, "হা ভগবান, কেন মরতে আমি প্রেয়সীকে রাগাতে গেলাম?" হাত বাড়িয়ে ছুঁতে যাবে পরীকে, ঠিক সেই সময়ে বাবা অভিকে ডাক দেন।
বাবা, "তোর ইন্টারভিউ কেমন গেল?"
অভি, "মোটামুটি গেছে।"
বাবা, "কোথায় গেছিলি?"
অভি, "এন.আই.আই.টি, ক্যামাক স্ট্রীট।"
বাবা, "ব্যাঙ্কিং, ডাব্লু.বি.সি.এস এই সবে চেষ্টা করিস না কেন? কোন সরকারি চাকরি দেখ।"
অভি তখন রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে, পরী ওর দিকে তাকিয়ে ইশারা করে, "ওই রকম ভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও এখান থেকে।"
বাবা থেমে থাকেন না, নিজের ঘর থেকেই অভির ওপরে বকতে শুরু করেন, "সারা জীবন তো তুই আমাদের কথাই শুনলি না, নিজের মতন চলে গেলি। কত টাকা পয়সা খরচ করে তোকে পড়ালাম, কিন্তু কি রেসাল্ট করলি তুই? এমনি কি আই.আই.টি বা জয়েন্ট পেলি না। কি চাস তুই? তুই ভাল করে জানিস কি করে তোকে কলেজে ভর্তি করেছি সেখানেও মন দিয়ে যদি একটু পড়াশুনা করতিস। পড়াশুনা করতে চাস, না ভ্যাগাবন্ডের মতন ঘুরে বেড়াতে চাস?"
শুরু হল অভিকে বাক্য বাণে বেঁধা। কিছু পরে মা কলেজ থেকে ফিরে অভিকে জিজ্ঞেস করেন ইন্টারভিউর কথা, মাকে জানায় যে ওরা বলেছে রেসাল্ট বের হবার পরে আসতে। রান্না ঘরের দরজায় তখন দাঁড়িয়ে অভি, একদিকে মা অন্যদিকে বাবা, দুজনে মিলে ওকে বকতে শুরু করে দেন। প্রথমত, ইন্টারভিউ ভালো যায়নি, তারপরে পরী আসেনি নন্দনে, তারপরে বাবা মায়ের বকুনি, মাথা যেন আর ঠিক রাখতে পারে না অভি।
চেঁচিয়ে ওঠে সবার ওপরে, "আমাকে একটু কি একা একা বাঁচতে দেবে?"
শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে রেগে মেগে নিজের ঘরে চলে যায়।
পশ্চিম আকাশে বর্ষা কালের ঘন কালো মেঘ, অভির বুকের ভেতরে দুখের কালো মেঘ জমে ওঠে। আলমারির এক কোনা থেকে একটা কাঠের বাক্স বের করে অভি, কলেজে পড়ার সময়ে এক বন্ধু ওকে উপহার দিয়েছিল। কাঁচের ছোটো ছোটো গুলি ভর্তি সেই কাঠের বাক্সে, ছোটো বেলায় হস্টেলে থাকতে গুলি খেলত অভি। সব গুলি গুলো বিছানার ওপরে ছড়িয়ে দিয়ে, ওর ওপরে শুয়ে পরে, নিজের সেই হারানো ছোটো বেলা ফিরে পেতে চায়। বালিশে মুখ গুঁজে পরে থাকে, বুকের মাঝে অব্যাক্ত এক বেদনা। কিন্তু সময়কে যে কেউ ধরে রাখতে পারেনা, চেষ্টা করেও ফিরে পাবেনা ওর সেই বাল্যকাল বা ওর মনের সেই অব্যাক্ত ইচ্ছে গুলো। রাতে মা খেতে ডাকতে আসেন, অভি চুপ করে বালিসে মাথা গুঁজে পরে থাকে। একবার ভাবে হয়ত মা বা পরী ওর জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসবে, কিন্তু কেউ ওর জন্য খাবার নিয়ে আসে না।
জুন মাসের শেষ। একদিন রাতের খাওয়ার সময়ে অভি বাবা মাকে জানায় যে পরেরদিন ওর কিছু ইন্টারভিউ আছে। একটা চাকরি বড় জরুরি অভির পক্ষে। ছোটোবেলা থেকে অভি বাবা মার কাছে শুনে এসেছে যে বাবা মা ওর জন্য অনেক পয়সা খরচ করেছে আর তাঁর সঠিক ফলাফল অভি তাদের দিতে পারেনি। বাবা মায়ের ভরতসনা শুনে শুনে অভির মন বিষিয়ে গেছে, অন্যদিকে পরীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ওকে সমাজের সমকক্ষ হয়ে দাঁড়াতে হবে না হলে কেউ ওর আওয়াজ শুনবে না।
রাতের খাওয়ার পরে, বসার ঘরে বসে টি.ভি দেখছিল। পরী ওকে দুধ দেবার জন্য ঢুকে ওকে জিজ্ঞেস করে, "কাল কোথায় কোথায় ইন্টারভিউ আছে?"
অভি, "অনেক জায়গায় পাঠিয়েছিলাম শুধু দু জায়গা থেকে ডাক এসেছে। পি.ডাব্লু.সি আর এন.আই.আই.টি থেকে কল এসেছে। কাল ক্যামাক স্ট্রীট যাবো, দেখি কি হয়।"
সোফায় ওর পাসে বসে, অভির মাথার চুলে বিলি কেটে বলে, "আমার বিশ্বাস তুমি কিছু না কিছু তে পেয়ে যাবে। কিন্তু অভি, রেসাল্ট না পাওয়া পর্যন্ত ত কেউ তোমাকে চাকরি দেবে না। একটু অপেক্ষা করো, গ্রাজুয়েসানের রেসাল্ট বের হওয়া পর্যন্ত।"
অভি, "না পরী, আমাকে কোন রকমে একটা চাকরি পেতেই হবে। যা পাব তাতেই ঢুকে যাবো আমি।"
পরী, "এত উতলা হচ্ছ কেন? আর দুই মাস বাকি রেসাল্ট বের হতে, তারপরে ইন্টারভিউ দাও। এখন তোমাকে কেউ চাকরি দেবে না অভি, গ্রাজুয়েসান ডিগ্রি চাই ই চাই।" পরী ঠিক কথাই বলেছিল। ওর দিকে হেসে বলে, "কাল এমনি এমনি বের হবে? শুধু আমি আর তুমি, খালি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াব দুজনে। এখন তোমার শহর, কোলকাতাকে ঘুরিয়ে দেখাওনি কিন্তু।"
অভি, "হাঃ কোলকাতা আমার শহর নয়, আমি এখানে বেশি সময় থাকিনি। এই শহরেকে ঠিক নিজের বাড়ি বলে মেনে নিতে কষ্ট হয় আমার।"
পরী, "ঠিক আছে বাবা। কাল আমি তোমার সাথে ইন্টারভিউর জায়গায় যাবো, তারপরে না হয় দুজনে কোথাও বেড়াতে যাবো, হল। এখন মাথা ঠাণ্ডা করে ঘুমাতে যাও।"
অভি, "আমার সাথে এসো না প্লিস।"
পরী, "কেন?"
অভি, "আমি এমনিতেই অনেক উত্তেজিত কালকের ইন্টারভিউর ব্যাপারে, তুমি সাথে থাকলে আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। তাঁর চেয়ে বরং তুমি বাড়িতে থাক, আমার ইন্টারভিউ শেষ হলে আমি ফোন করে দেব, তুমি ট্যাক্সি নিয়ে তিনটে নাগাদ নন্দনে চলে এস। একসাথে, মুভি দেখব, স্প্লিবারগের সিন্ডলারস লিস্ট।"
পরী নাক কুঁচকে বলে, "ইস, ইংরাজি সিনেমা? ধুর আমি ইংরাজি সিনেমা দেখিনা, একে ত কিছু বুঝিনা। তুমি আমাকে যদি হিন্দি অথবা বাংলা সিনেমা দেখাতে চাও তাহলে আসতে পারি।"
ঠিক তখনি মা ওদিক থেকে পরীকে শুতে যেতে বলে। অভি টি.ভি বন্ধ করে নিজের ঘরে চলে যায়। যাবার আগে পরীর দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে, "আমি কিন্তু কাল তোমার জন্য নন্দনে অপেক্ষা করব। আসা না আসা তোমার ব্যাপার।"
পরদিন, ইন্টারভিউর পরে অভি নন্দনে অনেকক্ষণ পর্যন্ত পরীর জন্য অপেক্ষা করে। পরীর দেখা না পেয়ে, অভি মর্মাহত হয়ে পরে। মাথায় রাগ চড়ে যায় অভির, সাথে সাথে মনে ভয় ঢোকে। কিছু হয়নি ত ওর, কোলকাতায় নতুন, একা একা ট্যাক্সি চেপে ঠিক ভাবে পৌছাতে পারবে ত নন্দনে। পরীর যদি কিছু হয় তাহলে মা ওকে কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবে। শেষ পর্যন্ত বাড়িতে ফোন করে পরীর খবর নেওয়ার জন্য। পরী ফোন তোলে, আর অভি রেগে যায় এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত পরী ওর কথা রাখল না।
অভি ফোনে পরীর ওপরে চেঁচিয়ে ওঠে, "আমি তিন ঘন্টা ধরে তোমার জন্য নন্দনে অপেক্ষা করছি আর তুমি বাড়িতে বসে কি করছ?"
পরী বিরক্তির সুরে উত্তর দেয়, "একদম চেঁচাবে না আমার ওপরে।"
অভি থামেনা, "তুমি আসবেনা, সেটা সকালে জানিয়ে দিলেই হত। অত আদিখ্যেতা দেখানর কি ছিল? আমি তোমার জন্য তাহলে নন্দনে অপেক্ষা করে থাকতাম না।"
পরী, "তোমাকে অপেক্ষা করতে কে বলেছিল, আমি কি বলেছিলাম? আমি ত তোমাকে আগে থেকেই বলে দিয়েছিলাম যে যদি তুমি আমাকে হিন্দি বা বাংলা সিনেমা দেখাও তাহলে আমি তোমার সাথে যেতে রাজি আছি।"
অভি, "তার মানে তুমি আসছ না তাই তো। আমি এতক্ষণ তোমার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আর তুমি এখন বলছ যে তুমি আসবে না।"
পরী, "আমি আগেই বলেছি যে আমার ওপরে ওই রকম ভাবে চেঁচাবে না।"
অভি, "আমি কিছু জানিনা, আমি আরও এক ঘন্টা তোমার জন্য এখানে অপেক্ষা করব। একটা ট্যাক্সি নিয়ে চলে আস।"
পরী, "তুমি কি আমাকে আদেশ করছ তোমার সাথে সিনেমা দেখতে যেতে? আমি আসছি না, তোমার যা ইচ্ছে তাই করো।" এই বলে ফোন রেখে দেয়।
অভি অনেকক্ষণ এদিক ওদিকে ঘুরেফিরে একটা সিনেমা দেখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে যায়। সিনেমায় অভির মন বসেনা, সামনের পর্দায় সিনেমা চলতে থাকে কিন্তু মাথার মধ্যে পরীর ওপরে খুব রাগ হয়। সন্ধ্যের পরে বাড়ি পৌঁছে দেখে যে বাবা অফিস থেকে ফিরে এসেছেন। পরী চেহারা অস্বাভাবিক ভাবে শান্ত, মনের মধ্যে যেন অশান্তির মেঘ জমে উঠেছে, অভির সাথে ঠিক ভাবে কথা বলছেনা পরী। বসার ঘরে বসে টি.ভি চালায় অভি। কিছু পরে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে ধুপ করে ওর সামনে চায়ের কাপ রেখে ওর দিকে বিরক্তি ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। অভি চোখ তুলে তাকাতেই, মুখ ঘুরিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। অভি জল খাওয়ার ছুতো করে রান্না ঘরে ঢোকে।
গলা নামিয়ে পরীকে জিজ্ঞেস করে, "কথা বলছ না কেন আমার সাথে?" পরী কিছু সবজি কাটছিল, পেছন ফিরে ভুরু কুঁচকে বিরক্তি ভরা চোখ নিয়ে অভির দিকে তাকায়, যেন জিজ্ঞেস করে, "কি চাই তোমার?" অভি ওকে, ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে, "হা ভগবান, কেন মরতে আমি প্রেয়সীকে রাগাতে গেলাম?" হাত বাড়িয়ে ছুঁতে যাবে পরীকে, ঠিক সেই সময়ে বাবা অভিকে ডাক দেন।
বাবা, "তোর ইন্টারভিউ কেমন গেল?"
অভি, "মোটামুটি গেছে।"
বাবা, "কোথায় গেছিলি?"
অভি, "এন.আই.আই.টি, ক্যামাক স্ট্রীট।"
বাবা, "ব্যাঙ্কিং, ডাব্লু.বি.সি.এস এই সবে চেষ্টা করিস না কেন? কোন সরকারি চাকরি দেখ।"
অভি তখন রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে, পরী ওর দিকে তাকিয়ে ইশারা করে, "ওই রকম ভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও এখান থেকে।"
বাবা থেমে থাকেন না, নিজের ঘর থেকেই অভির ওপরে বকতে শুরু করেন, "সারা জীবন তো তুই আমাদের কথাই শুনলি না, নিজের মতন চলে গেলি। কত টাকা পয়সা খরচ করে তোকে পড়ালাম, কিন্তু কি রেসাল্ট করলি তুই? এমনি কি আই.আই.টি বা জয়েন্ট পেলি না। কি চাস তুই? তুই ভাল করে জানিস কি করে তোকে কলেজে ভর্তি করেছি সেখানেও মন দিয়ে যদি একটু পড়াশুনা করতিস। পড়াশুনা করতে চাস, না ভ্যাগাবন্ডের মতন ঘুরে বেড়াতে চাস?"
শুরু হল অভিকে বাক্য বাণে বেঁধা। কিছু পরে মা কলেজ থেকে ফিরে অভিকে জিজ্ঞেস করেন ইন্টারভিউর কথা, মাকে জানায় যে ওরা বলেছে রেসাল্ট বের হবার পরে আসতে। রান্না ঘরের দরজায় তখন দাঁড়িয়ে অভি, একদিকে মা অন্যদিকে বাবা, দুজনে মিলে ওকে বকতে শুরু করে দেন। প্রথমত, ইন্টারভিউ ভালো যায়নি, তারপরে পরী আসেনি নন্দনে, তারপরে বাবা মায়ের বকুনি, মাথা যেন আর ঠিক রাখতে পারে না অভি।
চেঁচিয়ে ওঠে সবার ওপরে, "আমাকে একটু কি একা একা বাঁচতে দেবে?"
শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে রেগে মেগে নিজের ঘরে চলে যায়।
পশ্চিম আকাশে বর্ষা কালের ঘন কালো মেঘ, অভির বুকের ভেতরে দুখের কালো মেঘ জমে ওঠে। আলমারির এক কোনা থেকে একটা কাঠের বাক্স বের করে অভি, কলেজে পড়ার সময়ে এক বন্ধু ওকে উপহার দিয়েছিল। কাঁচের ছোটো ছোটো গুলি ভর্তি সেই কাঠের বাক্সে, ছোটো বেলায় হস্টেলে থাকতে গুলি খেলত অভি। সব গুলি গুলো বিছানার ওপরে ছড়িয়ে দিয়ে, ওর ওপরে শুয়ে পরে, নিজের সেই হারানো ছোটো বেলা ফিরে পেতে চায়। বালিশে মুখ গুঁজে পরে থাকে, বুকের মাঝে অব্যাক্ত এক বেদনা। কিন্তু সময়কে যে কেউ ধরে রাখতে পারেনা, চেষ্টা করেও ফিরে পাবেনা ওর সেই বাল্যকাল বা ওর মনের সেই অব্যাক্ত ইচ্ছে গুলো। রাতে মা খেতে ডাকতে আসেন, অভি চুপ করে বালিসে মাথা গুঁজে পরে থাকে। একবার ভাবে হয়ত মা বা পরী ওর জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসবে, কিন্তু কেউ ওর জন্য খাবার নিয়ে আসে না।