Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 3.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller দ্বিতীয় অঙ্ক by pinuram (Complete)
#23
দ্বাদশ পর্বঃ কলুষিত দেবী। (#3)



“সেদিনের কথা আমার মনে আছে, কালী পুজোর দিন। বিকেলবেলা রথিনের সাথে হিরাপুরে দেখা করার কথা ছিল। মিস্টার গুহ আমাকে গাড়িতে করে হিরাপুরে নিয়ে যান। গাড়ি থেকে নামার সময়ে আমার হাত ধরে বলেন, আমি যেন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি, তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন। সেই প্রথমবার মিস্টার গুহ আমাকে ছুঁয়েছিলেন, কিন্তু সেই কথা বাইরের লোক জানত না। সেই দৃশ্য দেখে রথিন রেগে যায়। আমার কথা শোনার আগেই আমার ওপরে চেঁচামেচি শুরু করে দেয়, আমাকে নীচ, জঘন্য, মিস্টার গুহ’র রক্ষিতা বলে গালাগালি দেয়। এতই বদনাম ছিলেন মিস্টার গুহ, যে তাঁর হাতের একটু ছোঁয়া আমার দুই বছরের সম্পর্ক ভেঙ্গে দেয়। রথিন আমার কোন কথা শুনল না, চলে গেল মুখ ঘুড়িয়ে। সেদিন বুঝেছিলাম, বিস্বাসের আসল মানে। হয়ত আমাদের ভালোবাসার মধ্যে সেই বিশ্বাস ছিল না তাই ভেঙ্গে গেল।”

বুধাদিত্য মাথা নিচু করে দেবস্মিতার ধরা গলার কাহিনী শুনে যায়। এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে দেবস্মিতার দিকে তাকিয়ে দেখে দুই চোখ জলে ভরা, গাল বেয়ে টসটস করে বড়বড় ফোঁটায় শ্রাবনের ধারা গড়িয়ে পড়ছে। মাথা দোলায় বুধাদিত্য, সত্যি এই ভদ্রমহিলাকে অনেক ভুল বুঝেছে সে। চোখের জল মুছে বুক ভাঙ্গা হাসি টেনে বলে, “ভাবছ যে এই মেয়েটা তোমার সামনে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলছে, তাই না। কি দরকার আমার এত দূর এসে তোমাকে বানিয়ে গল্প শুনানোর, বল বুধাদিত্য?”

বুধাদিত্য চুপ করে থাকে, ভাষা হারিয়ে এক নতুন রুপ দেখছে এই দেবী প্রতিমার। ঠিক সেই সময়ে কলিংবেল বাজে, চাইনিজ খাবার নিয়ে লোক এসে যায়। বুধাদিত্য টাকা মিটিয়ে খাবারের প্যাকেট দেবস্মিতার হাতে ধরিয়ে দেয়। বাপ্পাদিত্য ম্যাগি দেখে খুব খুশি। বাপ্পাকে কোলে নিয়ে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে থাকে বুধাদিত্য, বুকের ভেতরে এক শীতল মনোরম বাতাস বয়ে যায়। এই ছোট্ট শিশুর মুখে হাসি দেখে সব দুঃখ, সব কষ্ট নিভে যায় বুধাদিত্যের। চাইনিজ খেতে খেতে বাপ্পার গল্প শুরু হয়, উমংসর নাকি অনেক “ফাইত” করে, অনেক “রাইত” খায়, মাম্মা ওকে বলে পড়াশুনা করলে বড় হয়ে ওকে উমংসরের কাছে নিয়ে যাবে। খাবার পরে বাপ্পাকে নিয়ে শুতে চলে যায় দেবস্মিতা। বুধাদিত্য চুপচাপ বসে থাকে বসার ঘরে, সব কিছু ঠিক, কিন্তু এইসব কথা তাকে এত দিন পরে জানানোর কি দরকার? সেই অঙ্ক মিলাতে পারছে না, বুধাদিত্য। সে’ত মিস্টার গুহ’র সম্পত্তিতে ভাগ বসানোর জন্য হাত পাতেনি। বারেবারে অঙ্ক মিলাতে চেষ্টা করে বুধাদিত্য।

“ব্লাক কফি খাবে?” দেবস্মিতা বুধাদিত্যকে জিজ্ঞেস করেন। তাঁর গলার স্বর শুনে অঙ্ক মিলাতে ভুলে যায় বুধাদিত্য। মাথা নাড়িয়ে ইঙ্গিত করে যে, হ্যাঁ। দেবস্মিতা রান্না ঘরে ঢুকে দু কাপ ব্লাক কফি বানিয়ে আনেন। আবার বসে পড়েন বুধাদিত্যের সামনের সোফায়।

বুধাদিত্য চেয়ে থাকে দেবস্মিতার দিকে, জিজ্ঞেস করে, “বাপ্পা ঘুমিয়ে গেছে?” মাথা নাড়ায় দেবস্মিতা, হ্যাঁ। বুধাদিত্য বড় শ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “এমন কি হল যে চোদ্দ বছর পরে আমার কথা মনে পড়েছে, মিস্টার গুহ’র? তাঁর জীবন’ত ভালোই চলছিল, তবে?”

দেবস্মিতা ওর মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলেন, “হ্যাঁ, এই তবের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি এসছি, বুধাদিত্য। রথিনের সাথে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়, আমি নিজেকে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে দিলাম। মাস পার হয়ে বছর ঘুরে যায়। দিনেদিনে মিস্টার গুহ’র মদের নেশা আর নারীসঙ্গ বেড়ে যায়। আমি চোখ কান বন্ধ করে নিচের ঘরে পরে থাকতাম আর বাড়ির চাকরদের তদারকি করতাম। মিস্টার গুহ’র ব্যাবসার ম্যানেজার, তরুন সিনহা আমাকে কাজ শিখতে অনেক সাহায্য করেন। কোম্পানির কাজ আমার ঘাড়ে এসে পরে, কেননা মিস্টার গুহ তাঁর অফিস আর মদ নিয়ে পরে থাকতেন। দিনেদিনে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। একদিন মিস্টার গুহ’র সাথে এই নিয়ে প্রচন্ড মনমালিন্য হয়। আমি কড়া গলায় জানিয়ে দিয়েছিলাম, যে আমাকে যদি কাজে রাখতে হয় তাহলে বাড়িতে মেয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। নেশায় চুড় মিস্টার গুহ আমাকে সেদিন আমার জায়গা দেখিয়ে বলেছিলেন যে এক বেতনভুক্ত চাকর। আমি ওই বাড়িকে নিজের বলে ভাবতাম। মিস্টার গুহ’র কথা শুনে আমি ভেঙ্গে যাই। নিজের ঘরে ঢুকে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করি আমি।”

“ঠিক সেই সময়ে চাকর এসে আমার দরজা ধাক্কা দেয়, চেঁচিয়ে বলে যে দিদিমনি বড়বাবুর কিছু হয়েছে। আমি আত্মহত্যার কথা ভুলে দৌড়ে উপরের ঘরে গিয়ে দেখি যে মিস্টার গুহ রক্তাক্ত অজ্ঞান অবস্থায় মেঝেতে পরে। চারদিকে কাঁচ ছড়ান, গ্লাস বোতল ভাঙ্গা। মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। আমি ওনার মাথা কোলের ওপরে তুলে শাড়ির আঁচল দিয়ে বেঁধে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে চাকরকে বললাম তরুন বাবু আর এম্বুলেন্সকে খবর দিতে। মিস্টার গুহ’কে হসপিটালে ভর্তি করা হল। এবারে আর কাছ ছেড়ে যেতে পারলাম না আমি। চোখের সামনে দেখতে পেলাম যে আমার ভবিষ্যৎ মিস্টার গুহ’র সাথে বাঁধা। আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম আমি, কিন্তু ভগবান আমাকে তাঁর পাশে দাঁড় করিয়ে দেন। আমি চোখ বন্ধ করে মেনে নিলাম আমার ভবিতব্যের লেখন।”

“দ্বিতীয় বার ফিরিয়ে আনলাম মিস্টার গুহ’কে, কিন্তু এবারে মন শক্ত করে নিলাম, আমি মিস্টার গুহ’কে আর বিপথে যেতে দেব না। তাঁর মদ খাওয়া, নারীসঙ্গ সব বন্ধ করে দিলাম। সুস্থ হয়ে ওঠার পরে তিনি অফিস যেতে শুরু করেন। ড্রাইভারের প্রতি কড়া নির্দেশ ছিল যে শুধু মাত্র অফিস আর বাড়ি ছাড়া আর কোথাও যেন না নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে একটু দোনামনা ভাব দেখিয়ে ছিলেন কিন্তু আমি তাঁর মিনতির সামনে নরম হয়ে যাইনি। সময়ের সাথে সাথে মিস্টার গুহ বদলে যান। অফিস থেকে ঠিক সময়ে বাড়ি ফিরতেন। ওনার প্রতি যে শ্রদ্ধা ভাব ছিল আমার মনে, সেটা এক ভালোবাসায় পরিনত হয়। মাঝে মাঝে অফিস থেকে আসার সময়ে অহেতুক ফুলের তোড়া, আমি চকলেট খেতে ভালবাসতাম, তাই মাঝে মাঝে চকলেট কিম্বা কোন উপহার নিয়ে আসতেন। আমাদের সম্পর্কে এক নতুন মোড় নেয়। আমি জানতাম যে আমাদের বয়সের ব্যাবধান অনেক, আমি জানতাম ভালোভাবে যে আমি কোন পথে চলেছি, কিন্তু আমি সেই ভালোবাসা উপেক্ষা করতে পারিনি। ওনার চোখে, ওনার আচরনে আমি আমার ভালোবাসা পুনরায় খুঁজে পাই। সেই পুরানো কচি মেয়েটা আবার আমার মধ্যে জেগে ওঠে, বুক ভরে মুক্তির শ্বাস নিলাম আমি।”

“মিস্টার গুহ’র সাথে দেখা হওয়ার প্রায় দু’বছর পরে, একদিন বিকেলে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমি তাঁর ভালোবাসা উপেক্ষা করতে পারলাম না, সম্মতি জানালাম তাঁর প্রস্তাবে। আমি মিস্টার গুহ’র সামনে একটা শর্ত রাখলাম, আমাকে বিয়ে করতে হলে আমাকে তাঁর অতীত জানাতে হবে। তিনি রাজি হলেন, যে আমাকে তাঁর অতীতের কথা, মঞ্জুষা’দির কথা, তোমার কথা, সব বলবে। আমরা দু’জনে আমার বাড়ি চিত্তরঞ্জনে গেলাম, বাবা মা আমাদের বিয়ের ব্যাপারে সম্মতি দেন না। বলেন যে, মিস্টার গুহ আমার চেয়ে কুড়ি বছরের বড়, সেমত অবস্থায় এই বিয়ে হতে পারে না। আমার দৃঢ়সঙ্কল্প’র সামনে বাবা মা শেষ পর্যন্ত ঝুঁকে যান, এবং আমাদের বিয়েতে আসেন। আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান খুব ছোটো করে হয়েছিল, গোটা কুড়ি বাইশ জন খুব কাছের লোক ছাড়া কাউকে বলা হয়নি সেই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে। আমার স্বপ্ন ছিল আমার খুব বড় করে বিয়ে হবে, কিন্তু পাশে যখন ভালোবাসার মানুষকে পেলাম তখন আর সেই অলিক স্বপ্ন ছেড়ে মিস্টার গুহ’কে বুকে টেনে নিলাম।”

“সেই প্রথম রাতে আমি মিস্টার গুহ’কে তাঁর প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলাম। তাকে জানিয়েছিলাম যে তাঁর অতীতের কথা না জানালে তিনি আমাকে চিরতরে হারাবেন। আমার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে আমার হাত দুটি নিজের হাতে নিয়ে তাঁর অতীতের কালো পাতা মেলে ধরে। টাকা-পয়সা, প্রতিপত্তি আর নারীসঙ্গের পেছনে ছুটতে ছুটতে নিজেকে এই পাঁকের মধ্যে ডুবিয়ে ফেলেছেন। মঞ্জুষাদি’র শত বারন সত্তেও কোন কথা কানে দেননি তিনি। নিজের মনে যা ইচ্ছে হত তাই করতেন, শেষ পর্যন্ত মঞ্জুষাদি’কে একদিন বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন, বলেন যে সে আর তাঁর পুত্র তাঁর চাহিদার মাঝে দাঁড়িয়ে, তাদের তিনি মুখ দেখতে চাননা। তোমাকে তাঁর আগেই হস্টেলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। চোখে জল, বুকে অনুতাপ, কাঁধে অসীম পাপের বোঝা, ঝুঁকে পড়েছেন মিস্টার গুহ। আমার হাত ধরে কাতর মিনতি করেন তাকে সেই পাপের বোঝা থেকে মুক্ত করতে। আমি তাঁর চোখের জলে, তাঁর নতুন রুপের সামনে গলে গিয়ে বুকে টেনে নিলাম। আমি তাকে বলি যে সেদিন থেকে তাঁর সব কষ্ট সব দুঃখ আমি বরন করে নিলাম। সেইদিন আমি বাড়ির নাম মঞ্জুষা মন্দির রাখি। সেটাই আমার উচিত মনে হয়েছিল।”

“একটা অতি পুরানো কাঠের বাক্স থেকে একটা এ্যালবাম বের করে আমার হাতে দিয়ে বলেন, তাঁর অতীত সেই হলদে কাগজে আটকা পরে আছে। আমাকে মঞ্জুষাদি’র ছবি আর তোমার ছবি দেখিয়ে বললেন যে তিনি সব হারিয়েছেন। আমি বুকে টেনে বলি যে আমি তাঁর হারিয়ে যাওয়া জীবন হয়ত ফিরিয়ে দিতে পারবোনা, তবে ওনার ভবিষ্যৎ নিজে হাতে সুন্দর করে তুলবো।”

“দিন যায়, বাড়ির নতুন রানী আমি। আমি ব্যাবসার কাজে ডুবে গেলাম, নিজে হাতে সেই কোম্পানির ভার নিলাম। মিস্টার গুহ’র দুই দুই বার হার্টঅ্যাটাক হয়েছে, তাই তাকে শুধু অফিস আর বাড়ি করতে নির্দেশ দিলাম। একটি নরম মেয়ে ধিরে ধিরে এক কোম্পানির কর্ণধারে পরিনত হল। আমি আমার সংসার আমার কাজ নিয়ে মেতে উঠলাম। আমাদের ভেতর থেকে মঞ্জুষাদি হারিয়ে গেল। বিয়ের পাঁচ বছর পরে বাপ্পার জন্ম হয়। আমি বাপ্পার নাম রেখেছিলাম তোমার নামের সাথে মিলিয়ে, হয়ত কোনদিন ওর দাদার সাথে দেখা হবে না, তবে নামের মধ্যে হয়ত জানবে যে ওর একটা দাদা এই পৃথিবীতে আছে। বাপ্পা জন্মাবার পরে মিস্টার গুহ চাকরি থেকে ভলেন্টারি রিটায়ারমেন্ট নিয়ে নিলেন, সারাদিন বাড়িতে থাকতেন আর বাপ্পার সাথে সময় কাটাতেন। কোন কোন দিন দুপুরে যদি অফিস থেকে বাড়ি আসতাম তাহলে দেখতাম যে বাপ্পা মিস্টার গুহ’র পেটের ওপরে শুয়ে ঘুমিয়ে। ওদের দুজনকে দেখে আমার খুব ভালো লাগত।”

বুধাদিত্য ঘাড় ঘুড়িয়ে গেস্টরুমের ভেতরে তাকিয়ে দেখে, কচি শিশু বাপ্পা, বিশাল বিছানায় উলটে শুয়ে, লাল পদ্মের মতন গোল মুখ, টোপা টোপা নরম গাল, ঠোঁট জোড়া ঈষৎ খোলা, গায়ের ওপরে চাদর। দেবস্মিতার চোখের কোনা চিকচিক করছে, বাপ্পাকে আর বুধাদিত্যকে দেখে।

দেবস্মিতা চোখের কোল মুছে বুধাদিত্যকে বলেন, “গত বছর, জুলাই মাসে, আমি অফিসের কাজে একটু ব্যাস্ত ছিলাম। বাপ্পা আমার পায়ের কাছে, টেবিলের নিচে খেলছিল। খুব বায়না ধরে লুকোচুরি খেলার জন্য, ওর সাথে বিশেষ সময় কাটাতে পারতাম না, তাই লুকোচুরি খেলতে বসে গেলাম। বাপ্পা লুকিয়ে গেল একটা আলমারির ভেতরে। আমি খুঁজতে গিয়ে সেই আলমারির নিচে খুঁজে পেলাম সেই পুরানো কাঠের বাক্স। বাক্স খুলে এ্যালবাম হাতে নিয়ে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। পাতা উলটাতেই আমার সামনে মঞ্জুষাদি’র ছবি আর তোমার ছবি চলে এল। কাগজের ভেতর থেকে তোমার আর মঞ্জুষাদির চোখ আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে হাসছে। সেই ছবি দেখে আমার চোখে জল চলে আসে, আমি বাপ্পার দিকে তাকালাম। এই বিশাল পৃথিবীতে কোন এক কোনায় এক মাতৃহীন ছেলে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই নিস্পাপ ছেলেটা যদি আমার বাপ্পা হত তাহলে...” কেঁপে ওঠে দেবস্মিতার গলা, মুখে হাত চেপে কোনোরকমে নিজেকে সামলে নেন তিনি।

______________________________

দ্বাদশ পর্বঃ কলুষিত দেবী। (#4)



দেবস্মিতা ধরা গলায় বলেন, “সেই ছেলেটার কি দোষ, সেও চেয়েছিল এক সুন্দর জীবন, সেও চেয়েছিল ভালোবাসা নিয়ে বাঁচতে, অন্যের পাপের বোঝা ঘাড়ে করে কেন সেই ছেলেটা এই বিশাল পৃথিবীতে একা একা ঘুরে বেড়াবে। আমি সেদিন সেই ছবি নিয়ে মিস্টার গুহ’র সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মিস্টার গুহ’র হাত বাপ্পার মাথায় রেখে বললাম, যে তোমার সাথে যোগাযোগ করতে, তোমাকে ডাকতে, তোমার প্রাপ্য তোমাকে ফিরিয়ে দিতে। মিস্টার গুহ ইতস্তত করেন, তিনি জানান যে তিনি তোমার কোন খবর জানেন না। আমি তাঁর কথা মানতে পারলাম না, আমি জানিয়ে দিলাম যে তিনি যদি তোমার সাথে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন না করেন তাহলে আমি বাপ্পাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। মিস্টার গুহ বাপ্পাকে বুকে জড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে, বলেন যে তিনি সচেষ্ট হবেন তাঁর পুত্রের সাথে যোগাযোগ করতে। সাথেসাথে তিনি এটাও জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তাঁর পুত্র তাকে ক্ষমা করে দেবে না। আমি জানিয়ে দিলাম, যে ক্ষমার প্রশ্ন এখানে উঠছে না। তাঁর অতীতের জন্য আমি তাকে ক্ষমা করতে পারিনা, কেউ যদি পারে তিনি মঞ্জুষা’দি আর বুধাদিত্য।”

“অনেক জোর করার পরে মিস্টার গুহ রঞ্জন বাবুকে ফোন করেন। তোমার মামিমা ফোন ধরে অবাক হয়ে যান, বেশ কিছুক্ষণ তিনি কথা বলতে পারেন না। আমি বুঝতে পারি তোমার মামিমার রাগ আর বিদ্বেষ। আমি মিস্টার গুহকে তাঁর সামনে অনুরোধ করতে বললাম, যে একবারের জন্য তিনি যেন তোমার ফোন নাম্বার দেন। তোমার মামিমা, শেষ পর্যন্ত তোমার ফোন নাম্বার দিলেন। আমি মিস্টার গুহকে সেইক্ষণেই তোমাকে ফোন করতে বললাম। হাত কাঁপছিল তাঁর, চোখে অনুতাপের অশ্রু নিয়ে ফোন করেছিলেন তিনি। তাঁর পরের ঘটনা তুমি জানো ভালো করে। তোমার সাথে কথা বলার সময়ে তিনি জানতেন যে তুমি মিস্টার গুহ’কে ছেড়ে কথা বলবে না, সব দোষ আমার ওপরে পরবে আর আমার ছেলে বাপ্পার ওপরে পরবে।”

বুধাদিত্য বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়, চোখে জল নেই, বুক ফাঁকা, ধিরে ধিরে জীবনের অঙ্ক মিলছে চোখের সামনে। বুধাদিত্যের সামনে এক কলুষিত দেবী বসে, সমাজ অনেক ঘৃণ্য নাম দিয়েছিল তাঁকে। সেই সব পার করে, এক পাপী আত্মা কে বুকে করে পাঁকের জীবন থেকে টেনে তুলেছে এই দেবী। দেবস্মিতা দেবীর মতন হেসে ওর দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে বলেন, “তুমি আমাদের বাড়িতে এলে, তোমার আচরন দেখে মনে হল না যে তুমি আমাদের ক্ষমা করতে পেরেছ। আমি তোমার চোখ দেখে বুঝতে পারি যে তুমি আমাকেই দোষী সাবস্ত্য করেছ। আমি মিস্টার গুহ’র যখন অর্ধাঙ্গিনী তখন তাঁর পাপ ভাগ করে নিয়েছি আমি। আমি শেষ চেষ্টা করতে তৎপর হয়ে উঠলাম, শেষবারের জন্য তোমার সাথে দেখা করে সব কথা খুলে বলার জন্য। তোমার ঠিকানা জানার জন্য মিস্টার গুহ’কে দিয়ে অনিন্দিতাকে ফোন করালাম। তোমাকে এখানে না জানিয়ে আসার একটাই কারন, তোমাকে জানালে তুমি হয়ত আমাদের আসতে বারন করতে। তাই ভাবলাম একবারে এখানে এসে তোমার সাথে যোগাযোগ করা, চোখের সামনে দেখে অন্তত ফেলে দিতে পারবে না আমাদের।”

বুধাদিত্যের সামনে মিনতির সুরে ধরা গলায় বলেন, “আমি যখন মিসেস গুহ হবার জন্য সম্মতি দিয়েছিলাম, সেই সময়ে আমি জানতাম মিস্টার গুহ কি রকম মানুষ ছিলেন। তিনি বদলে গেছেন, বুধাদিত্য। আজ তিনি এক অন্য মানুষ। আমি জানিনা, তুমি তাঁকে ক্ষমা করতে পারবে কিনা, কেননা তিনি তোমার অতীত তোমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন না।” দুই হাত জোর করে কেঁদে বলেন, “আমার ছেলেটা কোন পাপ করেনি, বুধাদিত্য। তোমার বিদ্বেষের অভিশাপ যেন ওর কাছে না আসে। শুধু তোমার একটু আশীর্বাদ চাইতে এসেছি, বুধাদিত্য, দয়া করে ফিরিয়ে দিও না আমাকে। আমি ভিক্ষে চাইছি, বুধাদিত্য।” দুই হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলেন দেবস্মিতা।

বুধাদিত্য ঘাড় ঘুড়িয়ে বাপ্পাকে দেখে, এই শিশু কি সত্যি পাপ করতে পারে? ছোট্ট একটি ফুলের কুঁড়ি, এখন জীবন পরে আছে সামনে। বুধাদিত্য ত ভুলেই গিয়েছিল ওর বাবার কথা, তাঁর নতুন জবনের কথা। সামনে বসা এই দেবী প্রতিমা যদি এগিয়ে না আসত, তাহলে হয়ত কোনদিন যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হত না।

বুধাদিত্য কিছু পরে দেবস্মিতাকে বলে, “চিন্তা করো না, আমি তোমাদের মাঝে কোনদিন আসব না।”

চাপা আঁতকে ওঠেন দেবস্মিতা, “না, তুমি আমাদের ছেড়ে যেতে পার না। ধানবাদের যা কিছু আছে তাতে বাপ্পার যেমন অধিকার তোমার সেই এক অধিকার। আমি তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি।”

বুধাদিত্য ম্লান হেসে বলে, “আমি কোথাও যাইনি, আমাকে কোথায় ফিরিয়ে নেবে?”

দেবস্মিতা, “তোমার বাবার কাছে, মিস্টার গুহ’র কাছে।”

বুধাদিত্য ম্লান হেসে চুপ করে মাথা দোলায়, কিছু পরে বলে, “তুমি সত্যি একজন দেবী। সব কিছু জেনেশুনে একজন পাপী আত্মার বিষ বুকে টেনে তাঁকে শুদ্ধ করে দিয়েছ। তোমার কথা কি করে ফেলব। ঠিক আছে আমি ছুটি পেলে নিশ্চয় যাব ধানবাদ। আমি তোমাদের সাথে যোগাযোগ রাখব। কিন্তু আমি মিস্টার গুহ’র এক পয়সা নেব না, ক্ষমা করে দিও। আমার সম্পত্তি আমার মা, আমার সাথে আছেন, তাতেই আমি শান্তিতে আছি। আমাদের এই নতুন সম্পর্কের মাঝে টাকা পয়সা নিয়ে না আসাটাই শ্রেয়।”

দেবস্মিতা চোখের জল মুছে ধরা গলায় বলেন, “আমি বড় আশা করে এসেছিলাম, তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য।”

বুধাদিত্য, “না ম্যাডাম, সেটা সম্ভব নয়। দয়া করে সেই অনুরোধ দ্বিতীয় বার করো না, আমি মায়ের সামনে মুখ দেখাতে পারব না তাহলে।”

দেবস্মিতা, “আর বাপ্পা?”

বুধাদিত্য হেসে ফেলে, “বুধাদিত্যের ভাই বাপ্পাদিত্য, আমার আশীর্বাদ সব সময়ে ওর সাথে। সত্যি বলছি, আমি ধানবাদ না গেলে জানতেই পারতাম না যে আমার একটা ভাই আছে।”

দেবস্মিতা অবশেষে চোখের জল মুছে হেসে বলেন, “আমি তাহলে মিস্টার গুহ’কে ফোন করে জানিয়ে দেই যে আমি শেষ পর্যন্ত আমার কারজে সফল হয়েছি।”

বুধাদিত্য ঠিক বুঝতে পারে না, জিজ্ঞেস করে, “মানে?” ঘড়ি দেখে সকাল প্রায় চারটে বাজে, “তুমি এখন ফোন করবে?”

দেবস্মিতা, “হ্যাঁ, তিনি জেগে আছেন। তিনি খুব চিন্তায় ছিলেন, দাঁড়াও একটু কথা বল তাঁর সাথে। তোমার গলার আওয়াজ শুনে হয়ত একটু ঘুমাতে পারবেন।”

হেসে ফেলে বুধাদিত্য, “বয়স হয়েছে, ফোন করে ঘুমাতে বল এখন। কাল কথা হবে।”

দেবস্মিতা ফোন করেন সুবির বাবুকে, “ওষুধ খেয়েছিলে? রতন ঠিকঠাক খাবার দিয়েছিল?” “হ্যাঁ, বাপ্পা ঘুমাচ্ছে।” “হ্যাঁ, আমার সামনে বসে আছে।” “চিন্তা করো না। আমি কথা দিয়েছিলাম, ফিরিয়ে এনেছি আমি।” “না, সেটা আর হল না। তোমার ছেলে অনেক ঋজু, নিজের আত্মসন্মান আছে।” “তুমি এখন শান্তিতে ঘুমাও, পরে ফোন করব।” “কথা বলবে? ঠিক আছে দিচ্ছি।” ফোন বুধাদিত্যের হাতে ধরিয়ে বলেন, “একটু কথা বল না হলে ঘুমাবেন না।”

সুবির বাবুর গলা কেঁপে ওঠে, “কেমন আছো?”

বুধাদিত্য হেসে বলে, “এক প্রশ্ন কয় বার করবে। ঘুমাতে যাও, আর পারলে কালকে বা পরশুর ফ্লাইট ধরে চলে এস।”

কেঁদে ফেলেন সুবর বাবু, “তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।”

বুধাদিত্য, “ঠিক আছে, চলে এস। এখন ত ঘুমাও” ফোন দেবস্মিতাকে ফিরিয়ে দেয়।

ভোরের নবীন ঊষার আলো, খোলা জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরে আসে।

দেবস্মিতা ফোন রেখে ওর দিকে হেসে বলেন, “মিসেস গুহ হিসাবে যে সম্পর্ক আমাদের হওয়া উচিত সেই মর্যাদা তুমি দেবে না আমি জানি আর সেটা চাইতেও আসিনি।” হাঁ করে থাকিয়ে থাকে বুধাদিত্য। আবার কোন নতুন হেঁয়ালি শুরু করল দেবস্মিতা, সেই ভাবতে থাকে। দেবস্মিতা বলে, “আমি বাড়ির ছোটো ছিলাম, খুব ইচ্ছে ছিল আমার একটা ভাই হোক। কিন্তু সেই সম্পর্ক আমাদের মাঝে হতে পারে না। তাই না?”

বুধাদিত্য বুঝতে পারে কি বলতে চায় দেবস্মিতা। হেসে বলে, “তুমি দেবী, সুতরাং তুমি আমার নাম ধরে ডাকবে আমি তোমাকে দেবী বলে ডাকব ব্যাস। আর সম্পর্কের অলগলিতে ঘুরতে চাই না।”

স্বস্তির শ্বাস নিলেন দেবস্মিতা, জিজ্ঞেস করেন “কফি খাবে?”

বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে, “তোমার ঘুম পাচ্ছে না?”

দেবস্মিতা হেসে বলেন, “দশ বছর অপেক্ষা করেছিলাম এই দিন’টার জন্য। আমার না ঘুমালেও চলবে, তুমি ঘুমাতে যেতে পার।”

দেবস্মিতা রান্না ঘরে ঢুকে দু’কাপ কফি বানিয়ে এনে বুধাদিত্যের সামনে বসে। কফির কাঁপে চুমুক দিয়ে বুধাদিত্যকে প্রশ্ন করে, “একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি, যদিও প্রশ্ন টা অনেক ব্যাক্তিগত, তাও উত্তর জানালে একটু খুশি হব।”
বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে, “কি?”

দেবস্মিতা মৃদু হেসে বলে, “তোমার রান্নাঘর, সোফার কভার, বাড়ির দেয়াল ইত্যাদি দেখে মনে হয় তোমার জীবনে কেউ আছে, সত্যি কি না জানিনা।”

হেসে ফেলে বুধাদিত্য, শেষ পর্যন্ত দেবীর কড়া নজরে ধরা পরে গেছে। হেসে বলে, “কি জানি ঠিক জানিনা, আছে কি নেই।”

দেবস্মিতা, “কি ব্যাপার, কি অসুবিধে একটু জানতে পারি কি?”

বুধাদিত্য একটু খানি চুপ করে থেকে বলে, “আমি একজনকে ভালোবাসি।” শেষ পর্যন্ত নিজের হৃদয়ের কথা ভালোবাসার মানুষকে না জানিয়ে অন্য কাউকে জানাতে হচ্ছে। বুকের ভেতর চিনচিন করে এক অব্যাক্ত ব্যাথা শুরু হয় বুধাদিত্যের।

দেবস্মিতা বড় বড় চোখ করে হেসে বলে, “বেশ ভাল কথা, কবে বিয়ে করছ?”

বুধাদিত্যের মুখ শুকিয়ে যায় ঝিলামের কথা ভেবে, “বিয়ে হয়ত হবে না আমাদের।” ঝিলাম কিছুদিন পরে সমীরের সাথে বেড়াতে যাবে, ঝিলাম আর সমীরের সুখের সংসার থেকে দুরে সরে যেতে যায়।

দেবস্মিতা, “কেন? অসুবিধে কোথায়?” বুধাদিত্য মাথা নিচু করে বসে থাকে। দেবস্মিতা ওর পাশে বসে ওর পিঠের ওপরে হাত রেখে মৃদু সুরে বলে, “দেবী বলে ডেকেছ, আর নিজের মনের কষ্ট একটু জানাবে না?”

নরম হাতের পরশে মায়ের কথা মনে পরে যায় বুধাদিত্যের, চোখের কোন চিকচিক করে ওঠে বেদনায়। কোনোরকমে আবেগ সামলে বলে, “বড় প্যাঁচালো সম্পর্ক, দেবী। জানিনা শুনলে তুমি আমাকে কি বলবে। আমি যাকে ভালোবাসি সে আমার বন্ধুর বৌ, নাম ঝিলাম। সমীরের সাথে বিয়ে হয় বছর তিন আগে। এই গত বছর দিল্লীতে দেখা, এখন দিল্লীতে থাকে। সমীর আর ঝিলামের মধ্যে সম্পর্ক বেশ কিছুদিন ধরে খুব টানাপড়েনের মধ্যে চলে। সমীর কাউকে ভালোবাসে বা ভালবাসত। আমি ভেবেছিলাম যে হয়ত ওদের মাঝে ডিভোর্স হয়ে যাবে আর আমি ঝিলামকে আমার করে নিতে পারব। কিন্তু কিছুদিন আগে সমীর ফিরে আসে ঝিলামের জীবনে। আমি সেই একা।”

দেবস্মিতা পিঠের ওপরে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কোনদিন তোমার মনের কথা ঝিলামকে জানিয়েছ?” বুধাদিত্য মাথা দোলায়, “না।” দেবস্মিতা জিজ্ঞেস করে, “ঝিলাম তোমাকে ভালোবাসে?” বুধাদিত্য শূন্য চোখে দেবস্মিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। দেবস্মিতা বুঝে যায় যে বুধাদিত্য অথবা ঝিলাম কেউ পরস্পরকে মনের কথা জানায়নি। চিন্তায় পরে যায় দেবস্মিতা, “সত্যি বড় প্যাঁচালো সম্পর্ক। এখানে কিছু করা মানে সবার চোখে পাপী, ব্যাভিচারি হয়ে যাওয়া, এক অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পরা। কি করবে ভেবেছ?”

বুধাদিত্য মাথা দোলায়, “জানিনা, দেবী। আমি সত্যি নিজের কাছে হেরে গেছি। ওদের মাঝে যেদিন বুঝব যে ভালোবাসা ফিরে এসেছে, সেদিন আমি দিল্লী ছেড়ে, দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চাকরি নিয়ে চলে যাব। আমি জানি, আমি যদি ঝিলামের চোখের সামনে থাকি তাহলে সমীরকে মেনে নিতে ঝিলামের বড় কষ্ট হবে। আমি চাই না ওদের ভালোবাসার মাঝে কাটা হয়ে দাঁড়াতে।”

দেবস্মিতা মিষ্টি হেসে বলে, “তুমি হারতে পার না, বুধাদিত্য। আমার মন বলছে, একদিন এই কালো মেঘের মাঝ খান থেকে এক নতুন সূর্য উঠবে, তোমার মনের সব কালিমা দূর করে দেবে। সত্যি যদি তোমাকে কোথাও যেতে হয়, তুমি আমার কাছে চলে এস। আমার বাড়ি, তোমার বাবার বাড়ির দরজা তোমার অপেক্ষায় দিন গুনছে বুধাদিত্য।”

বুধাদিত্য ম্লান হেসে বলে, “ভেবে দেখব দেবী। যাও একটু বিশ্রাম করো, আমাকে নিজের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দাও।”

সকাল বেলায় বুধাদিত্য মামাকে ফোন করে সব কথা বলে। প্রমীলা দেবীর মন একটু খারাপ হয়ে যায়। বুধাদিত্য বুঝতে পারে যে মামিমা ভাবছেন যে ছেলে বাবা পেয়ে হয়ত তাকে ভুলে যাবে। বুধাদিত্য মামিমাকে আসস্থ করে, “পমুসোনা”র জায়গা ওর জীবনে অন্য কেউ নিতে পারবে না। বাবাকে হয়ত ফিরে পেয়েছে, কিন্তু রঞ্জনবাবুকে জানায় যে সুবিরবাবু কর্মে নয়, শুধু মাত্র জন্ম দিয়েছেন বলে তাঁর বাবা। তৎক্ষণাৎ প্লেনের টিকিট কেটে পাঠিয়ে দেয় মামা মামীকে। বিকেলের মধ্যে প্রমীলাদেবী আর রঞ্জনবাবু দিল্লী আসেন। প্রমীলাদেবী দেবস্মিতাকে দেখে তার সাথে কথা বলে আসস্থ হন। বাপ্পাকে দেখে বেশ খুশি হন। রাতের মধ্যে সুবিরবাবু দিল্লী পৌঁছান। বাড়ি লোকজনের সমাগমে মুখর ওঠে, ছোট্ট বাপ্পা মায়ের কোলে চেপে নতুন লোকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

সুবিরবাবু অনেক চেষ্টা করেন ছেলেকে ধানবাদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার। বুধাদিত্য সুবিরবাবুকে শোয়ার ঘরে মায়ের ছবির সামনে দাঁড় করিয়ে জানিয়ে দেয়’যে ওর মা ওর সাথেই আছে, আর এই সম্পত্তি নিয়ে অথবা ধানবাদ যাওয়া নিয়ে যেন কথা না বলে। জানায় যে, নতুন সম্পর্কে টাকা পয়সা না আসলেই ভালো, মায়ের আত্মা শান্তি পাবে না। বুধাদিত্যের জীবনে সব আছে নতুন আর কিছু চায় না।

!!! দ্বাদশ পর্ব সমাপ্ত !!!
[+] 5 users Like pnigpong's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: দ্বিতীয় অঙ্ক (কালেক্টেড) - by pnigpong - 28-06-2020, 12:39 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)