Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 3.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller দ্বিতীয় অঙ্ক by pinuram (Complete)
#21
একাদশ পর্বঃ অপ্রকাশিত বন্ধন। (#4)




বাড়ি ফিরে দু’জনে নিজের নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে। বুধাদিত্যের ঘুম আর আসেনা, বুকের বেদনা প্রবল হয়ে ওঠে। দরজা, জানালা বন্ধ করে এসি চালিয়ে দেয়, চেষ্টা করে দিনের আলো সরিয়ে দিয়ে রাত নামিয়ে আনতে। চেষ্টা করে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়তে। কিন্তু বাথরুম থেকে জলের আওয়াজে আর ঘুম হয় না। বুঝতে পারে যে ঝিলাম এক জ্বালায় জ্বলছে, জলে ভরা নদী কিন্তু নিজের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য জল তার কাছে নেই। বুধাদিত্য বিছানায় শুয়ে শুনতে পায় ওর নুপুরের আওয়াজ। ঝিলামের চোখে ঘুম নেই, বাড়ির কাজে নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে প্রবল চেষ্টা করে। সারা বাড়ি যেন আজ চকচকে করে দেবে। নিজেই ঝাড়ু পোছা শুরু করে দেয়। আলমারি খুলে সব নোংরা বিছানার চাদর, বালিশের কভার, সোফার কভার নিয়ে কিছু অয়াশিং মেশিনে কিছু নিজের হাতে কাচতে শুরু করে। নিজের ওপরে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে চলে, মন কিছুতেই শান্ত হয় না। চোয়াল শক্ত করে চোখ বন্ধ করে বিছানায় পরে থাকে বুধাদিত্য। বুঝতে পারে যে ওর ঘরে ঢুকে আলমারি খুলে কাপড় চোপড় নিয়ে গেছে। চোখ খুলে ওকে দেখার শক্তি টুকু নেই।

অনেকক্ষণ পরে ঝিলাম ওর ঘরের দরজায় টোকা মেরে বলে, “স্নান সেরে নাও, খাবার তৈরি হয়ে গেছে।”

বুধাদিত্য চুপচাপ বিছানা ছেড়ে উঠে স্নান সেরে খাবার টেবিলে বসে পরে। বাড়ির চারদিকে একবার তাকিয়ে দেখে, অনেক দিন আগে অনিন্দিতাদি এসে সোফার কভার আর ঘরের পর্দা কিনে দিয়ে গেছিল। সেই গুলো কোথায় পড়েছিল জানত না, ঝিলাম সেই সব গুলি আলমারি থেকে বের করে ঘর সাজিয়ে ফেলেছে। মেঝে চকচক করছে, টেবিল চকচক করছে, ব্যাল্কনিতে একগাদা কাপড় মেলে রাখা। আড় চোখে ঝিলামের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করে যে তাঁর মুখ থমথমে, গম্ভির, চোখের কোন চিকচিক, দুই চোখ একটু লাল। টেবিলে একটা থালা তাতে বুধাদিত্যের খাবার বাড়া।

বুধাদিত্য গম্ভির স্বরে জিজ্ঞেস করে, “তোমার থালা কোথায়?”

ঝিলাম গম্ভির স্বরে উত্তর দেয়, “তুমি খেয়ে নাও আমি পরে খাব।”

বুধাদিত্য, “সকাল থেকে কিছু খাওনি’ত, বসলে কি ক্ষতি আছে?”

ঝিলাম ওর কথার উত্তর না দিয়ে বলে, “ভাত ভাঙ্গ, ডাল দেব।”

বুধাদিত্য, “কালকের মাংসের কিছু বেঁচে ছিল সেটা কোথায়?”

ঝিলাম, “সারা রাত ঘুমাও নি, রাতভর গাড়ি চালিয়েছ, সকালে বাড়ি ফিরে ঘুমাও নি। শরীর খারাপ করে মরার ইচ্ছে আছে?”

বুধাদিত্য আর ঘাঁটাতে সাহস পায়না ঝিলামকে। চুপচাপ খেতে শুরু করে। ঝিলামকে উলটো দিকের চেয়ারে বসে ওকে খেতে দেয়। কেউ কারুর চোখের দিকে সোজাসুজি তাকায় না, একজন যখন তাকায় তখন অন্যজনের মুখ অন্যদিকে থাকে। নিঃশব্দে কথা বলে মানসিক দ্বন্দ।

বুধাদিত্য কিছু পরে জিজ্ঞেস করে, “তোমার গরমের ছুটি কবে থেকে?”

ঝিলাম, “কেন?”

বুধাদিত্য, “না, বাড়ি যাবে বলছিলে, তা টিকিট কাটা হয়ে গেছে?”

ঝিলাম, “আসছে শুক্রবার, তারপরের শুক্রবার থেকে ছুটি। সমীরকে বলেছিলাম টিকিট কাটতে, এর মাঝে...” কথাটা বলেই ফর্সা মুখখানি বেদনায় পাংশু হয়ে যায় ঝিলামের। উলটো হাতে নাক মুছে নেয়, চোখের কোনে যে জলের ফোঁটা চিকচিক করছিল সেটা ওর চোখের লম্বা পাতা ভিজিয়ে দেয়। একটু ধরা গলায় বলে, “খেয়ে নাও তাড়াতাড়ি।”

বুধাদিত্য চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে যায়। স্টাডিতে ঢুকে ল্যাপটপ খুলে বসে পরে অফিসের কাজ করতে। কাজে মন ডুবিয়ে দিতে চেষ্টা করে। কিছুতেই মন বসাতে পারেনা, চোখের সামনে ল্যাপটপ খোলা পরে থাকে। কিছুপরে জল খাবার জন্য খাবার ঘরে এসে দেখে, ঝিলাম একাএকা বসে খাবার খাচ্ছে। খেতেখেতে বারেবারে নাক, চোখ মুছে চলেছে। বুধাদিত্য ওকে না ঘাটিয়ে জলের বোতল নিয়ে স্টাডিতে ঢুকে পরে।

প্রজেক্টের কাজে নিজেকে ডুবিয়ে দেয় বুধাদিত্য, সময়ের খেয়াল থাকেনা। দুপুর গড়িয়ে, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে যায়। খেয়াল পরে যখন ঝিলাম ওর ঘরে ঢুকে ওর সামনে এক কাপ কফি রেখে চলে যায়। পেছন থেকে দেখে ঝিলামের চলে যাওয়া। হটাত চুড়িদার কামিজ পড়েছে, সাধারণত বাড়িতে থাকলে এই কাপড় পরে না। একবার মনে হল জিজ্ঞেস করবে কিন্তু আর জিজ্ঞেস করা হয় না। অফিসের কয়েকজনের ফোন, প্রেসেন্টেসানের কাজ, কিছু সারভার খুলে দেখা, এই করতে করতে সময় কেটে যায়। মাঝেমাঝে কান পেতে ঝিলামের পায়ের আওয়াজ শুনতে চেষ্টা করে। কিন্তু সেই নুপুরের রিনিঝিনি শব্দ আর শুনতে পায়না। কিছু পরে সামনের দরজা বন্ধ করার আওয়াজ শুনতে পেয়ে চমকে ওঠে। বাইরে বেড়িয়ে দেখে, হাতে একটা প্লাস্টিক, ঝিলাম জুতো খুলে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে।
জিজ্ঞেস করে ঝিলামকে, “কোথায় গেছিলে?”

উত্তর দেয় ঝিলাম, “মাছের বাজারে। দুপুরে নিরামিষ খেয়েছ তাই ভাবলাম একটু মাছ আনি।”

বুধাদিত্য, “আমাকে বললেই পারতে আমি নিয়ে আসতাম।”

ঝিলাম, “তুমি কাজে ব্যাস্ত ছিলে তাই আর তোমাকে বিরক্ত করিনি।”

বুধাদিত্য, “আচ্ছা, তোমার প্লেনের টিকিট কেটে দিলে হবে?”

ঝিলাম, “দুর্গাপুরে প্লেন নামে না। পূর্বা’তে তৎকালে টিকিট কেটে নেব।”

বুধাদিত্য, “প্লেনের টিকিট কেটে দেব খানে। কোলকাতা থেকে গাড়ি ঠিক করে দেব, তোমাকে দুর্গাপুর পৌঁছে দেবে। আসার দিনেও সেই গাড়ি তোমাকে নিয়ে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দেবে।”

ঝিলাম ঘাড় ঘুড়িয়ে বুধাদিত্যের চোখের দিকে তাকায়, অনেকক্ষণ পরে পরস্পরের চার চোখ এক হয়। ঝিলাম ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, দুই চোখ তখন চিকচিক করে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে থাকে, বুকের ঝড়কে শান্ত করার প্রবল চেষ্টা। ঝিলাম কিছু পরে ওকে বলে, “দেখি ভেবে দেখব খানে।”

আবার সারা বাড়ি নিস্তব্ধতায় ঢেকে যায়। টিভি দেখতে মন করে না, সোফায় বসে খবরের কাগজে মুখ ডুবিয়ে বসে থাকে বুধাদিত্য। কানে ভেসে আসে অতিপরিচিত নুপুরের ঝঙ্কার, কিন্তু সেই নদীর কলতান যেন হারিয়ে গেছে। মাঝে মাঝে খবরের কাগজ থেকে মাথা তুলে দেখে ঝিলামকে। সময়ের সাথে সাথে নিজেদের স্বত্তায় ফিরে আসে দুজনে। রাতে দু’জনে এক সাথে খেতে বসে।

ঝিলাম ওকে বলে, “বাড়ির ডুপ্লিকেট চাবিটা দিও।”

বুধাদিত্য, “কেন?”

ঝিলাম, “তোমার অফিসে অনেক কাজ থাকে, রোজ দিন অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায় আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে। আমি অটো করে একাই চলে আসব।”

বুধাদিত্য কিছু বলে না, মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে দিয়ে দেবে। কিছু পরে বলে, “কাল দেখি, একটা ড্রাইভারের ব্যাবস্থা করে নেব।”

ঝিলাম, “খাবার পরে একটু ল্যাপটপ’টা দিও ত, একটু মেইল দেখার আছে আর কলেজে কিছু কাজ করার আছে।”

একটু অবাক হয়ে যায় বুধাদিত্য, ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার ল্যাপটপ নেই?”

ঝিলাম চিবিয়ে উত্তর দেয়, “তোমার মতন বড়লোক নই যে ল্যাপটপ কিনতে পারব।”

বুধাদিত্যের সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়, চাপা গলায় বলে, “কি করেছি একবার বলতে পার? কেন এমন করে কথা বলছ?”

ঝিলাম থালা থেকে মুখ উঠিয়ে ওর চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তারপরে চাপা গম্ভির গলায় বলে, “কিছু করনি। আমার ভুল, আমি তোমার সাথে এখানে এসেছি। ঠিক আছে, আমি ব্যাগ ঘুছিয়ে নিচ্ছি আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এস।”

ঝিলামের চাপা কান্না বুকে বেঁধে রাখে, বুধাদিত্য চেপে যায় বুকের ব্যাথা, ওর কথার কোন উত্তর দেয় না।
পরেরদিন সকাল বেলা উঠে দেখে যে ঝিলাম কলেজের জন্য বেড়িয়ে গেছে। ফ্রিজের ওপরে একটা হলদে স্টিকনোটে লেখা, “কফি, মাইক্রো তে রাখা, কুড়ি সেকেন্ড গরম করে নেবে। উপমা বানিয়ে রেখে গেছি, একটু গরম করে খেয়ে নিও। টিফিন তৈরি করে খাবার টেবিলে রাখা, লাঞ্চের আগে পারলে একবার গরম করে নেবে।”

অফিসে গিয়ে জানতে পারে যে বুধবার অফিসের কাজে চন্ডিগড় যেতে হবে। নিজেকে সেই কাজে ডুবিয়ে দেয়। দুপুরে একবার ভাবে ঝিলামকে ফোন করবে, কিন্তু ইতিস্তত ভাবে আর করা হয়না। প্রোডাক্টের ম্যানাজার, রাকেশ সান্ডিল্য, ওকে মজা করে জিজ্ঞেস করে যে ওর গার্লফ্রেন্ড এল না। ওর কথা হেসে উরিয়ে দেয়। অফিসের মোটামুটি সবাই আচ করে ঝিলাম আর বুধাদিত্যের সম্পর্কের ব্যাপারে। কিন্তু রাকেশ ছাড়া অন্য কেউ ওকে ঘাঁটানোর বিশেষ সাহস করেনি কোনদিন। মাঝেমাঝেই রাখেশ মজা করে, কিন্তু বুধাদিত্য ওর সব কথা মজার ছলে উরিয়ে দেয়। লাঞ্চের কিছুপরে নেহেরু প্লেসে গিয়ে ঝিলামের জন্য একটা দামী ল্যাপটপ কেনে। রমণীর অভিমান কিছু করে ভাঙ্গাতে হবে না হলে বাড়ির পরিবেশ দমবন্ধ হয়ে আসছে।

বিকেল পাঁচটায় ঝিলামের ফোন আসে, ফোন ধরতে গিয়ে এক অন্য উত্তেজনায় হাত কেঁপে ওঠে। বুধাদিত্য, “কি হয়েছে?”

ঝিলাম, “কখন বাড়ি ফিরবে?” গলার স্বর অনেক স্বাভাবিক হয়ে গেছে “ঝিল্লি”র।

বুধাদিত্য চাপা হেসে বলে, “কফি বানাও, আমি এই এখুনি আসছি।”

হেসে ফেলে ঝিলাম, “কফি গরম থাকতে থাকতে না পৌঁছালে কিন্তু কফি পাবে না।”

বুধাদিত্যের মন নেচে ওঠে ঝিলামের হাসি শুনে, “একটা সারপ্রাইস গিফট আছে তোমার জন্য।”

ঝিলাম হেসে বলে, “আগে বাড়ি এসে আমাকে উদ্ধার কর, তারপরে দেখব খানে।”

বুধাদিত্য আর দাঁড়ায়না, ব্যাগ উঠিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। দরজা খুলে দাঁড়ায় ঝিলাম, সেই পুরাতন ঝিলাম, উজ্জ্বল দুই চোখে হাসি ফিরে এসেছে, গালের লালিমা ফিরে এসেছে। উচ্ছল তরঙ্গিণী আবার নিজের মত্ততায় মেতে উঠেছে।

হেসে বলে বুধাদিত্যকে বলে, “কফি বানানোর আগেই উপস্থিত দেখছি। অফিসে কাজ ছিল না নাকি?”

বুধাদিত্য ওর দিকে ঝুঁকে বলে, “কফির কথা শুনে আর থাকতে পারলাম না।”

ঝুঁকে পড়ার জন্য ঝিলামের মুখের ওপরে উষ্ণ শ্বাস বয়ে যায়, বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলে, “হ্যাঁ অনেক হয়েছে।”
“একটা সারপ্রাইস আছে” বুধাদিত্য ওর হাতে ল্যাপটপের বাক্স ধরিয়ে দিয়ে বলে, “তোমার জন্য।”

হাতে ল্যাপটপের বাক্স নিয়ে একটু অবাক হয়ে যায়, তারপরে হেসে ফেলে ঝিলাম, “হটাত কি মনে করে? তোমাকে কিছু বলা মানে তুমি সারা পৃথিবী নিয়ে আসবে মনে হচ্ছে।”

বুধাদিত্য ঘরে ঢুকে বলে, “আমার ল্যাপটপে যাতে আর হানা না দেওয়া হয় তাই নিয়ে এলাম।”

ঝিলাম মজা করে বলে, “কেন তোমার গার্লফ্রেন্ডেদের সাথে কবে কোথায় কিকি কেচ্ছাকলাপ কি করেছ সেই সব ছবি তুলে রেখেছ নাকি? চিন্তা নেই আমি চোখ বন্ধ করে নিতাম ওই ফটো দেখলে।”

চাপা হেসে ফেলে বুধাদিত্য, শুধু মাত্র আয়েশার কয়েকটা ফটো আছে ল্যাপটপে তা ছাড়া অসংখ্য পর্ণ মুভি’ত আছেই। ঝিলামের কাঁধে একটু ধাক্কা মেরে বলে, “দেখার সখ আছে নাকি?”

কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “জাঃ শয়তান।” বুধাদিত্যের পিঠে আলতো করে চাঁটি মেরে বলে, “যাও ফ্রেস হয়ে নাও, আমি তোমার জন্য চা খাব বলে বসেছিলাম।”

বুধাদিত্য তাড়াতাড়ি জামাকাপড় ছেড়ে বসার ঘরে এসে বসে। শনিবার রাতে বাজার থেকে চা কিনে আনা হয়েছিল। ঝিলাম নিজের জন্য চা বানায় আর বুধাদিত্যের জন্য কফি।

চা খেতে খেতে ঝিলাম জিজ্ঞেস করে, “কত দাম নিয়েছে ল্যাপটপের?”

বুধাদিত্য, “কেন দাম দেবে নাকি?”

ঝিলাম ভুরু কুঁচকে বলে, “হ্যাঁ টাকা জমিয়ে নিয়ে তোমাকে ফিরিয়ে দেব।” তারপরে হেসে বলে, “শয়তান, আমাকে নিয়ে যেতে পারলে না, ল্যাপটপ কেনার সময়ে, একটু দেখে নিতাম।”

বুধাদিত্য, “একদম ভালোটা এনেছি, এইচ.পি’র বেশ ভালো ল্যাপটপ। অফিস থেকে সব লোড করে নিয়ে এসেছি। নিয়ে আস সব দেখিয়ে দিচ্ছি।”




______________________________
একাদশ পর্বঃ অপ্রকাশিত বন্ধন। (#5)



ঘরের পরিবেশ আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়, দু’জনে ল্যাপটপ খুলে বসে পরে, ঝিলামের হাজার প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়, “এটা কি? ওটা কি করে খুলতে হয়? একটা হেডফোন আনতে পারনি, একটু কানে লাগিয়ে গান শুনতাম।”

বুধাদিত্য বলে, “বাড়িতে দামী ফাইভ পয়েন্ট অয়ান মিউসিক সিস্টেম আছে, কবার গান শুনেছ বলতে পার?”

ঝিলাম ওর কাঁধে আলতো চাঁটি মেরে হেসে বলে, “পরশু দিন কাজে চলে গেল। কাল থেকে মাথার ওইত খিচুরি করে রেখে দিয়েছিল। তারমধ্যে গান, হ্যাঁ।”

বুধাদিত্য হেসে বলে, “ওকে বাবা সরি। আচ্ছা একটা কথা আছে, বুধবার সকাল বেলা আমাকে চণ্ডীগড় যেতে হবে।”

ঝিলাম, “গাড়িতে যাবে না শতাব্দীতে?”

বুধাদিত্য, “গাড়িতে যাবো, মিটিং শেষ হলেই আবার যাতে ফিরতে পারি।”

ঝিলাম ধমকে ওঠে, “না অত দূর গাড়ি চালিয়ে যেতে হবে না, শতাব্দী করে যেও।”

বুধাদিত্য কোনদিন চণ্ডীগড় ট্রেনে যায়নি, যেতেও চায় না। গাড়ি চালাতে খুব ভালোবাসে বুধাদিত্য। মিটিঙ্গে কেউ না কেউ ওর সাথে যায়, পথে তাই কোন কষ্ট হয় না। এবারে রাকেশ যাবে ওর সাথে। বুধাদিত্য ওকে বলে, “না কোন প্রবলেম নেই গাড়ি চালাতে।”

ঝিলাম, “ড্রাইভার খুঁজে পেয়েছ?”

বুধাদিত্য একদম ভুলে গেছিল ড্রাইভারের কথা, জিব কেটে বলে, “জাঃ একদম ভুলে গেছি।”

ঝিলামের আরও এক চাটি বুধাদিত্যের পিঠের ওপরে, রেগে মেগে বলে, “আগে একটা ড্রাইভার খুজবে। যদি কালকের মধ্যে ড্রাইভার পাও তাহলে গাড়িতে যাবে না হলে ট্রেনে যাবে। একা গাড়িতে আমি যেতে দেব না। ব্যাস শেষ কথা।”

বুধাদিত্য, “আচ্ছা বাঃবা, আমি ফোন করে দেখছি।”

ঝিলাম, “ড্রাইভার পঁয়তাল্লিশ পঞ্চাসের কাছাকাছি হতে হবে, তাঁর পুলিস ভেরিফিকেশান করাতে হবে।”

বুধাদিত্য ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “অত বয়স কেন?”

ঝিলাম, “একটু বয়স্ক ড্রাইভার ভালো গাড়ি চালায়, ধিরে সুস্থে গাড়ি চালায়, আর অন্তত এদিক ওদিক তাকায় না।”

হেসে ফেলে বুধাদিত্য, বুঝতে পারে ঝিলাম কি বলতে চায়, “তুমি আর বল না, তুমি রাস্তা দিয়ে হাটলে, আবালবৃদ্ধবনিতা তোমার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারে না। সে আমি বুড়ো আনি কি জোয়ান ড্রাইভার আনি।”

ঝিলাম লজ্জায় লাল হয়ে যায়, “ধুত, অনেক হয়েছে তোমার। যা বলছি সেটা করো। আমি রান্না করতে চললাম।”

ঝিলাম উঠে পরে রান্না করতে চলে যায়। অগত্যা বুধাদিত্যকে বেশ কয়েক জনকে ফোন করতে হয় ড্রাইভারের জন্য, না হলে আর গাড়ি নিয়ে যেতে দেবে না। এমনিতে একটা ড্রাইভারের দরকার ছিল, ঝিলামকে কলেজ থেকে আনার জন্য। আগে যখন ছেড়ে আসতে হত তখন মাঝে মাঝে বুধাদিত্যকে মিটিং ছেড়ে বা কোন কাজ ছেড়ে আসতে হত। ড্রাইভার থাকলে সেই অসুবিধে গুলো হবে না। যাদের ফোন করেছিল, তারা জানায় যে পরেরদিন বিকেলের মধ্যে ড্রাইভার যোগাড় করে দেবে।

পরেরদিন যথারীতি কেটে যায় কাজে কর্মে। বিকেলবেলায় দুটি ড্রাইভার আসে, তাদের মধ্যে একজনের কথাবার্তা শুনে আর কাজের কথা শুনে ঝিলাম তাকে কাজে নিযুক্ত করে। ড্রাইভার বিহারী নাম কালিনাথ, বয়স প্রায় পঁয়তাল্লিশ। ঝিলাম ওকে কাজ বলে দেয়, যে সকালবেলা, বুধাদিত্যকে অফিসে ছেড়ে দিতে হবে, তারপরে দুপুরে ওকে কলেজ থেকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আবার অফিসে যেতে হবে। বিকেলে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তবে ছুটি, যদি কখন বিকেলে কাজ থাকে তাহলে দেরি করে ছুটি পাবে। বুধাদিত্য চুপচাপ ঝিলামকে দেখে, অতি নিপুণ হস্তে সব কিছু করে চলেছে। ড্রাইভার চলে যাবার পরে বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে যে এবারে ওর মন শান্তি হয়েছে কিনা। হেসে ফেলে ঝিলাম, বলে যে তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়তে, পরেরদিন চণ্ডীগড় যেতে হবে।

পরেরদিন বুধবার, সকালবেলা ঝিলাম ঠেলে বুধাদিত্যকে উঠিয়ে দেয়। ঘুম চোখে উঠে স্নান সেরে তৈরি হয়ে নেয়। ঝিলাম ওর আগেই উঠেছে দেখে একটু অবাক হয়ে যায়। অবশ্য ওর অনেক সকালে ওঠার অভ্যাস আছে। কফি বানিয়ে দেয়। কালিনাথ কে বারবার বলে দেয় ঠিক ভাবে গাড়ি চালাতে। ম্যাডামের কথা অমান্য করে না। বুধাদিত্যের আঁকাবাঁকা রেখার জীবন সরল রেখায় চলতে শুরু করে। চণ্ডীগড় পৌঁছান মাত্র ঝিলাম ফোন করে জেনে নেয় যে ঠিক ভাবে পৌঁছেছে কিনা। সারাদিন কাজের মধ্যে খুব ব্যাস্ত থাকে, সারাদিনে আর ফোন করা হয়ে ওঠেনি। রাখেশ ফেরার পথে ফোঁড়ন কাটে, কিরে শালা, গার্লফ্রেন্ড কে ফোন করে জানাবি না? তখন বুধাদিত্যের মনে পরে ঝিলামকে ফোন করা হয়নি। সন্ধ্যে হয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি ফোন করে ঝিলামকে। ঝিলাম ফোন তুলেই একটু সাবধান বানী শুনিয়ে দিল, যে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে আর কালিনাথ কে ধিরে সুস্থে গাড়ি চালাতে। ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়, ঝিলাম ওর জন্য না খেয়ে বসে থাকে। বাড়ি ফিরে ঝিলামের মুখের হাসি দেখে সারাদিনের ক্লান্তি কেটে যায় এক নিমেষে। ঝিলাম ওর হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে স্টাডিতে রেখে দেয়, ওর জন্য জল এনে দেয়। বুধাদিত্যের বড় ইচ্ছে করে নিবিড় আলিঙ্গনে বাঁধতে, আবার ওই পুরানো দ্বিধা বোধ ওকে আটকে দেয়। ওই মিষ্টি হাসি হারাতে চায় না, সময়ের ওপরে সব ছেড়ে দেয়।

শুক্রবার সকালবেলা ঝিলাম যথারীতি কলেজে বেড়িয়ে গেছে। এই কদিনের মধ্যে সমীরের বা অন্য কারুর ফোন আসেনি, ঝিলামের খোঁজ নেবার জন্য। ঝিলামকে জিজ্ঞেস করেনি, সমীরের কথা, ফোন করেছিল কিনা সেটাও জানা হয়নি। বুধাদিত্য অফিসের কাজে ব্যাস্ত, ঠিক লাঞ্চের পরে ঝিলামের ফোন আসে। গলা শুনে মনে হল খুব ত্রস্ত আর উদ্বেগ মাখা।

ঝিলামের গলা কাঁপছে, “বাড়ি আসতে পার এখুনি?”

বুধাদিত্য, “তুমি কোথায়?”

ঝিলাম, “আমি বাড়িতে, গাড়ি তোমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।”

বুধাদিত্য, “কি হয়েছে?”

ঝিলাম, “সমীর এসেছে বাড়িতে, তুমি প্লিস এখুনি বাড়ি আস।”

সমীরের নাম শুনেই মাথায় রক্ত চড়ে যায় বুধাদিত্যের। চোয়াল শক্ত করে ঝিলামকে বলে, “সামনের দরজা খোলা রেখে দেবে, আর বসার ঘরে বসিয়ে রাখবে। ফোন অন রাখ, কিছু হলে যেন আমি শুনতে পাই।”

ঝিলাম কাতর কণ্ঠে ডাক দেয়, “প্লিস, তাড়াতাড়ি এস।”

তাড়াতাড়ি ব্যাগ নিয়ে কালিনাথ কে গাড়ি চালাতে বলে। বাড়িতে ঢোকার আগে, প্যাসেঞ্জার সিটের নীচ রাখা বাক্স থেকে পিস্তল’টা বের করে প্যান্টের পেছনে গুঁজে নেয়। একটু এদিক ওদিক করলে সমীরের মাথার মধ্যে সব কটা গুলি নামিয়ে দেবে, তারপরে যা হবার হবে, যদি মরতে হয় তাহলে বুকের মাঝে ঝিলামের ভালোবাসা নিয়ে মরবে। দৌড়ে তিনতলার সিঁড়ি চড়ে। বাড়িতে এসে দেখে, ঝিলাম কথা মত বাড়ির সদর দরজা হাঁ করে খুলে রেখেছে। সমীর মাথা নিচু করে সোফার ওপরে বসে আর ঝিলাম বেশ কিছু দুরে খাবার টেবিলের পাশে চেয়ারে বসে। বুধাদিত্য একবার সমীরের দিকে তাকায়, একবার ঝিলামের দিকে তাকায়। ওকে দেখে, ঝিলাম প্রানে বল পায়। সমীর ওর দিকে মাথা তুলে তাকায়, চোখ মুখ বিধ্বস্ত পরাজিত সৈনিকের মতন। দুই চোখ লাল, কিন্তু সেই করুন চোখ, মিনতি ভরা চাহনি বুধাদিত্যকে শান্ত করতে পারে না।

ওর সামনের সোফায় বসে ধির গম্ভির গলায় সমীর কে জিজ্ঞেস করে, “কি মনে করে এখানে আসা হয়েছে?”

সমীর মাথা নিচু করে উত্তর দেয়, “আমি বড় পাপী, ঝিলামকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তার প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছি।”

বুধাদিত্য চোয়াল চেপে দাঁত পিষে জিজ্ঞেস করে, “হটাত এই বোধোদয় হওয়ার কারন? নন্দিতা কি লাথি মেরেছে তোর গাঁড়ে?”

সমীর আলতো মাথা দুলিয়ে বলে, হ্যাঁ। বুধাদিত্য ঘাড় ঘুড়িয়ে ঝিলামের দিকে তাকায়। ওর চোখে জল, একবারের জন্য ভেবেছিল যে সমীর অন্য কারুর সাথে শুতে পারে। কিন্তু সেই কথা স্বামীর মুখে শুনে স্থম্ভিত হয়ে গেছে ঝিলাম। স্বামী এক অন্য মেয়ের প্রেমে পরে ওকে ছেড়ে দিয়েছিল, আর সেই স্বামী আবার ফিরে এসেছে। কি করবে ঝিলাম, কিছু বুঝে উঠতে পারে না।

বুধাদিত্য, “তোর বাবা মা’র সাথে কথা বলতে চাই, তারপরে ঝিলামকে এই বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে পারবি।”

সমীর নিচু গলায় বলে, “বাবা মায়ের সাথে কথা হয়েছে আমার। আমার কার্যকলাপে তাঁরা মর্মাহত।”

বুধাদিত্য চিবিয়ে বলে, “এই বোকা... আমাকে গরু পেয়েছ? তুই শুয়োরের বাচ্চা, বললি আর আমি বিশ্বাস করে নিলাম। এখুনি শালা ফোন লাগা কোলকাতায়, লাউডস্পিকারে দে, আমি কথা শুনতে চাই।” ঝিলামকে ইঙ্গিত করে যে পাশের সোফায় এসে বসতে। ঝিলাম ধির পায়ে বুধদিত্যের পাশের সোফায় এসে বসে পরে।

নিরুপায় সমীর প্রথমে ইতস্তত করে, কিন্তু বুধাদিত্যের লাল চোখের সামনে ঝুঁকে যায়। ফোন লাগায় কোলকাতায়, সমীরের মা ফোন ধরেন। ফোন ধরা মাত্রই ঝিলাম ওর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সব কিছু বলে দেয়। সমীরের মা চুপ করে কিছুক্ষণ শোনেন সব কথা। তারপরে সমীরকে উত্তমমধ্যম বকা দিতে শুরু করেন। বলেন যে, ঝিলাম যদি চাকরি করতে চায় সে ভালো কথা, ওকে চাকরি করতে দিতে হবে, আর ঝিলামকে যদি কোনদিন কষ্ট দেয় তাহলে এক কথায় তাজ্যপুত্র করে দেবেন। সমীরের বাবা প্রচন্ড রেগে যান, এক কথায় জানিয়ে দেন, যে মা লক্ষ্মীর মতন মেয়ে ঝিলামকে যদি একটুও চোখের জল ফেলতে দেখে তাহলে সমীরকে বাড়িতে ঢুকতে দেবে না। সমীরের চোখে জল, মুখ থমথমে, বুকের মাঝে পরিতাপের ছায়া। সব কথা শোনার পরে লুটিয়ে পরে ঝিলামের পায়ের কাছে।

পা ধরে বলে, “শেষ বারের মতন ক্ষমা করে দাও ঝিলাম। দয়া করে আমাকে ফিরিয়ে নাও।”

সমীরের বুক ফাটা কান্না দেখে ঝিলাম কেঁদে ফেলে, একবার বুধাদিত্যের মুখের দিকে তাকায়। বুধাদিত্যে সামনে ওর ভালোবাসা চলে যায়, বুধাদিত্য চোয়াল শক্ত করে ঠোঁটে হাসি আনে। মাথা দুলিয়ে সমীরের সাথে যাবার সম্মতি দেয়। বুক ভেঙ্গে আবার টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ভেবেছিল সময়ের সাথে সাথে ঝিলামকে ওর কোলে টেনে নেবে, কিন্তু সমীরের কান্না আর পরিতাপের ডাক শুনে সেই স্বপ্ন দূর অস্ত। ঝিলাম চুপচাপ উঠে নিজের ঘরে চলে যায় কাপড় পড়ার জন্য আর ব্যাগ গুছানোর জন্য।

সমীর চোখের জল মুছে হাত জোর করে বুধাদিত্যের সামনে বসে থাকে। বুধাদিত্য গর্জে ওঠে ওর মুখ দেখে, “মাদা... ওই কুমিরের কান্না আমাকে দেখাবি না। শালা তোকে আমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস হয় না, শুধু মাত্র ঝিলামের মুখ দেখে তোকে ছেড়ে দিলাম।” পিস্তল বের করে টেবিলে ওপরে রেখে দেয়। সমীরের নাকের সামনে তর্জনী নাড়িয়ে বলে, “ভাবিস না তোকে ছেড়ে দিলাম আমি। ঝিলামের চুল যদি বাঁকা হয়, আমি প্রতিজ্ঞা করছি, এই পিস্তলের সব গুলি তোর মাথার মধ্যে নামিয়ে দেব। আমার আগে পেছনে কাঁদার কেউ নেই, বুঝলি। আমি তোকে খুন করে জেলে যেতে রাজি।”

ত্রস্ত চোখে তাকিয়ে থাকে সমীর, কাতর কণ্ঠে বলে, “না রে, আমি তোর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইছি।”

বেশ কিছুপরে ঝিলাম শাড়ি পরে, হাতে একটা সুটকেস নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। জল ভরা চোখে বুধাদিত্যের দিকে তাকায়, একবার সারা বাড়ির দেয়ালের দিকে তাকায়। বুধাদিত্য চুপ করে বসে থাকে, চোখের সামনে ঝিলামকে ছেড়ে দিতে বুক কেঁপে ওঠে। কালিনাথ কে ডেকে বলে ওদের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসতে। ঝিলাম ওর সামনে এসে দাঁড়ায়, কিন্তু কথা বলতে পারে না, দু’চোখে অঝোর ধারায় বন্যা বয়ে চলে। বুধাদিত্য মাথা তুলে তাকাতে পারেনা ঝিলামের মুখের দিকে। ঝিলাম ওর মাথায় আলতো করে হাত ছোঁয়ায়, তারপরে ধির পায়ে সমীরের পেছন পেছন ঝিলাম বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। কালিনাথ ঝিলামের ব্যাগ নিয়ে আগেই নিচে নেমে যায়। ঝিলাম চলে যাবার পরে দরজা খোলা পরে থাকে। স্বপ্ন দেখেছিল বুধাদিত্য, ঝিলামকে ওই দরজা দিয়ে এই বাড়ির গৃহিণী করে আনার। সেই ঝিলামকে শেষ পর্যন্ত সমীরের হাতে সঁপে দিতে হয়। মন মানে না, কিন্তু ঝিলাম যে সমীরের বিয়ে করা, আইনসিদ্ধ স্ত্রী। বাড়ির চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে বুধাদিত্য, বাড়ির আনাচে কানাচে ঝিলামের হাতের ছোঁয়া লেগে। সব জায়গায় ঝিলামের নাম লেখা। একবার মনে হয় এই শোয়ার ঘর থেকে ঝিলাম বেড়িয়ে আসবে।

খানিক পরে দেখে ঝিলাম ওর দরজায় দাঁড়িয়ে। মৃদু হেসে মাথা নাড়ায় বুধাদিত্য, সত্যি পাগল হয়ে গেছে ঝিলামের প্রেমে, দরজায় দাঁড়িয়ে ঝিলামের ছায়া। সম্বিৎ ফিরে পায় যখন রক্ত মাংসের ঝিলাম দৌড়ে এসে ওর বুকের ওপরে ঝাঁপিয়ে পরে জড়িয়ে ধরে। বুধাদিত্যের বুক সেই প্রেমের পরশে হুহ করে কেঁপে ওঠে। প্রানপন শক্তি দিয়ে ঝিলামকে জড়িয়ে ওর মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে। ঝিলাম দুই হাতে আঁকড়ে ধরে থাকে বুধাদিত্যের ঋজু দেহ। এই বুকের ওপর থেকে যেন মৃত্যুই ওকে ছিনিয়ে নেয় আর কারুর ক্ষমতা থাকে না ওকে বিচ্ছিন্ন করার।

বেশ কিছু পরে ধরা গলায় ঝিলাম ওকে বলে, “সুট’টা কিন্তু কাল দেবে, মনে করে নিয়ে এস যেন। বড় আলমারির লকারে আমার সব গয়না আর আমার সার্টিফিকেট গুলো রাখা। আমার জিনিস গুলো ছড়িয়ে দিও না আবার। দরকার পড়লে নিয়ে যাব, না হলে এখানেই থাক।” বুকের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে ঝিলাম, কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আমি চলে যাবার পরে প্লিস আর মদ খেও না।” বহু কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, “আমি চললাম বুধো, ভালো থেক।”

“বুধো” নাম শুনে চোখ বন্ধ করে নেয় বুধাদিত্য, আলতো করে ওর গালে হাত দিয়ে বলে, “চলি বলতে নেই ঝিল্লিরানি, বলে আসছি।”

“ঝিল্লিরানী” কোন রকমে “বুধো”র হাত ছাড়িয়ে দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যায়। বেড়িয়ে যাবার আগে একটু বহু কষ্টে ঠোঁটে হেসে টেনে বলে, “সোমবার গাড়ি পাঠাতে ভুলোনা, আমি অপেক্ষা করে থাকব।”
[+] 4 users Like pnigpong's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: দ্বিতীয় অঙ্ক (কালেক্টেড) - by pnigpong - 28-06-2020, 12:34 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)