Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.47 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller টান (কালেক্টেড) 'Complete'
#37
বাচ্চাটা. ...স্তব্দ হয়ে , একরত্তি শীর্ণকায় শিশুটিকে জড়িয়ে দিপু শুনলোসব বৃতান্ত. সীতার বাবা মা ভাই বোন কেউ নেই. মামাবাড়িতে থাকত.
সুখরামকে পেয়ে বিড়াল পার করানোর মত সীতাকেপার করে মামারা দায় ঝেড়ে ফেলেছে. ২হজর টাকা পেয়ে সুখরাম সীতাকে ঘরে আনে
২ বছর. আগে. বাচ্চাটার এখন বয়েস ১বছর ৬ মাস. বাড়িয়ালা ইঙ্গিত দিয়েছে তার কথা শুনে চললে কিছু হতে পারে. স্বাধীন ভারতের
তথাকতিথ স্বাধীনতার ৪৭ বছরপর আরো একটি বেশ্যার সংখ্যা বৃধি পেতে চলেছে..হঠাত দিপু শুনতে পেল ""চুদি, এতো আমার থেকেও
অনেক বেশিদুর্ভাগা. আমার অন্তত খাবার জুটত দুবেলা. কিন্তু কি করব বলত! দ্যাখ দ্যাখ কি রকম ভাবে কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে.
বোকাচোদা বলনা কি করব? মাসি? হাঁ, রাধা মাসি, একমাত্র, মা না , রাধা মাসি বলতে পারবে."" চাপা নিশ্বাস ছেড়ে দিপুউঠে গুড্ডি কে
সীতার কোলে দিয়ে ব্যাগ বার করে একটা ১০০ টাকার নোট বার করে
.....এই টাকাটা রাখো. এখুনি খাবার কিনে ওকে দাও. ...একটু থেমে " তুমিও খাও. পারলে কাল আসব" .কথা শেষ করেপ্রায় দৌড়েই বেরিয়ে গেল দিপু. কিন্তু পারল কি? 'বুলেট' স্টার্ট দিতে গিয়েও , থেমে গেল. দোকান থেকে একটা ক্যাডবেরিচকলেট নিয়ে আবার এলো.সীতা তখন বাচ্চা নিয়ে বাইরে বেরোবে
.......এইটা ভেঙ্গে দাও ওকে. জ্বরের মুখে ভালো লাগবে. তুমিও খেও.......এইবার সত্যি দৌড়ে দিপু চলে গেল.

......রাতে খাবার খেয়ে দিপু বিছানায় শুয়ে. ঘুরে ফিরে মুখে ফুলের পরশ অনুভব করছে. কথা বলতে ভালো লাগছেনা. ওইটুকু বাচ্চার এতো
জ্বর! রাধা সব কিছু লক্ষ্য করেছে. বিছানায় এসে
........দিপু তোর কি হয়েছে, বলবিনা আমায়
......সে রকম কিছু না. ওই টাকাটা বোধহয় আর পাবনা তাই
....উহু , তা না, বল আমায় কি হয়েছে, রাধার পিড়াপিড়িতে দিপু সব জানালো. রাধা চুপ করে দীপুকে স্নেহ ভরা চোখে দেখল
.......তুই কাল আমায় একবার নিয়ে যাস তো, যদি রাজি থাকে এইখানে এসে থাকতে, আর ঘরের সব কাজ করতে, তাহলেএখানে নিয়ে
আসবি..মুহুর্তে দিপুর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো . চঞ্চল কিশোরের মত
........মাসি যাবে এখন, 'বুলেট' এ বেশি সময় লাগবে না. তুমি দেখো মাসি, কি সুন্দর ওই বাচ্চাটা. দেখলেই তোমার মায়ালাগবে
.......আয়. কাল যাব, এখন ঘুমা ...নিশ্চিন্ত মনে হাসি মুখে দিপু রাধাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল.
সকাল ৯ টার, সময় দিপু রেডি হয়ে বেরুবে, হঠাত ফোন. মঞ্জুর ফোন, রাধা ফোন পেয়েই ,
....দিপু মঞ্জু তোকে খুজছে, মনে হয় ভালো কিছু না. ...দ্রুত এসে ফোন নিয়ে
......হাঁ মঞ্জুদি কি খবর,..সেকি কখন মারা গেছেন? ভোর ৪ টার সময়. এতক্ষণ জানাওনি কেন? মা কোথায় ? সেকি, কোনোকথা বলছে
না. তপুর কথাও উত্তর দিছে না? তাই? ..হু হু .....আচ্ছা, আসছি এখুনি আসছি. ...ফোন রেখে ..রাধার দিকেতাকিয়ে
.......মাসি একেই বলে পাপের প্রাশচিত্ত্য, না হলে তপুর রেজাল্ট আর ৬৭ দিনের ভিতর বেরুবে, সুখবরটা আর সঞ্জীব বাবুরসোনা হলনা.
ভোর৪ টার সময় মারা গেছে.
মা সেই থেকে মৃতদেহের সামনে হাটুতে মাথা রেখে বসে আছে.এক ফোটা কাঁদেনি. কোনো কথার, কাউর কথার, উত্তর পর্যন্ত দেয়নি,
খাওয়া তো দূর অস্ত.এখুনি চল..... ...রাধা আর দিপু ৫ মিনিট এরভিতর 'বুলেট' এ স্টার্ট দিল. রাধার কথা মত দিপু সাদা পাজামা আর পাঞ্জাবি পড়েছে. এই প্রথম দিপু তার
মায়ের বাড়ি এলো.বাড়ি ভর্তি লোক. MP সাহেব, বিরজু দীপুকে দেখে এগিয়ে এসে দু হাত ধরে একটু চাপ দিয়ে সামান্য জড়িয়ে ধরল. বাকিরাএকটু অবাকিই হয়ে গেল. মঞ্জু
দীপুকে দেখেই কেঁদে উঠলো. দিপু মঞ্জুর মাথা ধরে একটু হাত বুলিয়ে ভিতরে এলো. উপস্থিতসবাই দীপুকে চোখ তুলে দেখে আবার পূবার
দিকে তাকালো. শোভা, সঞ্জীবের আত্বীয়রা, ব্যবসায়ীরা সবাই উপস্থিত. ডাক্তারউপস্থিত. প্রতেকেই চিন্তিত পুবাকে নিয়ে. কোনো ব্রুক্ষেপ
নেই, চোখে জল নেই. একটি পাথরের মূর্তি, যার চেতনা লোপ পেয়েছে.প্রাণ আছে কিন্তু স্পন্দন নেই. . ভিতর ভিতর শেষ হয়ে যাচ্ছে. পূবা. একবারের জন্য সঞ্জীবকে স্পর্শ করেনি, দৃষ্টিস্থির, কোনো ভাষা নেই, বোধশক্তি লোপ পেয়েছে.
শবযাত্রা শুরুর জন্য তৈরী, কিন্তু পূবার ওই অবস্থায় কি করবে কেউ বুজতেপারছেনা. রাধা, একটু দেখে দীপুকে ইঙ্গিত করলো পূবার কাছে
গিয়ে বসতে. রাধা পুবাকে ঘিরে বসে থাকা মহিলাদের ইশারাকরলো দীপুকে যেতে. দিপু পূবার পিছনে গিয়ে দু হাতে জড়িয়ে মাথার চুলে মুখ
রাখল একটু. পূবা ঘুরে তাকালো, " মা, আমিএসেছি মা,আমি দিপু, মা " . দু তিন বার ঠোট কাপল , চোখ ভিজে আসতে শুরু করেছে, কাপছে পূবা, এখুনি যেন জ্ঞানহারাবে পূবা , পরশ পাথরের ছোয়া লেগেছে
পাথরের মূর্তিতে, প্রানের সঞ্চার হয়েছে, . তারপর সমস্ত বাড়ি সচকিত করে,প্রতিটি মানুষকে অবাক করে " দি...............পু, ও
নে......ই দি...পু "আর্তনাদ করে বুক ফাটা কান্নায় তীরে ভাঙা সাগরের ঢেউএর moto ভেঙ্গে পড়ল, দিপুর দু হাতের বেষ্টনীতে. পরম মমতায় দিপু তার মায়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিছে. তপু দীপুকেদেখে দৌড়ে " দাদা"
বলে জড়িয়ে ধরল. মাথা সোজা রেখে চোখ স্থির রেখে, না চোখে জল নেই, প্রতিটি চলেযাওয়া মুহুর্তে স্মৃতির অতলে শ্যাওলায় ঢাকা পরা একটার পর একটা ছবির আসাযাওয়া দিপুর চোখে. একটি শিশুর প্রথম স্কুল এ যাওয়া.হাটুগেরে বসে বাঁ হাতে গাল টিপে ধরে চুল আচরে দিচ্ছে মা. বাবা কোলে করে সবার ঘরে নিয়ে গেল. তারপর স্কুটার এ সামনে শিশু, পিছনে মা, বাবা চালাচ্ছে. পরের ছবি, বাবা শুয়ে,সবাই কাদছে,ছোটকা হাতে কি ধরিয়ে বাবার মুখের কাছে নিয়ে গেল, একটা সাদা কাপড় পরিয়ে মেঝকাকার হাউ হাউ করে কান্না, একটি ৭ বছরের ক্লাস ২ এ পরা ছেলে দেশপ্রিয় পার্ক এর কাছে, ফুটপাথ এ দাড়িয়ে. রাস্তা পার হতে ভয় পাছে, কিন্তু স্কুলের ট্রাম ধরতে হবে. পুলিশ কাকু এসে হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দিলেন, তারপর আরো অনেক অনেক দিন, পুলিশ কাকু রাস্তা পার করিয়ে দিচ্ছে,.সেই বালক স্কুল থেকে ফিরে ৩ তলায় উঠছে ঠাম্মাকে রেজাল্ট দেখাবে, কিন্তু ঠাম্মা যে ঘুমাচ্ছে, ডাকলে রেগে যাবে. দোতলায়, কাকিমার ঘরে আস্তে করে প্রায় নিশ্বাস নেওয়ার শব্দে "কাকিমা", এই প্রথম ভালো লাগার মুহূর্ত, . " আমার রেজাল্ট, অঙ্কে ১০০ পেয়েছি, কাকিমা", কিন্তু ও কে, ওই কালো রুগ্ন, নোংরা জামা পরা শিশুটি কে, ওকে কেন দেখছি এখন!. কিন্তু এখন কেন এইসব ভুলে যাওয়া ছবি ভেসে উঠলো! শেষ ১৬-১৭ বছরে এর একটাও তো মনে পরেনি, আজ কেন? দিপু তার মা আর বোন কে জড়িয়ে হাটু মুরে বসেথাকলো. উপস্থিত পুরুষ আর মহিলারা অবাক হয়ে পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করছে, কে
এই সুদর্শন যুবক, কে হয় পূবার ?

অনেকটা সময় কান্নার পর পূবা একটু থামল. দিপু শান্ত চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকালো.
........তোমায় যেতে হবে না মা. ওই ভয়ঙ্কর সময়ের সাক্ষী থাকতে হবে.না, আমি , কৌশিক, MP সাহেব, সঞ্জীব বাবুরভাইরা আছেন, তপুকে আমি দেখব মা. তুমি যাবেনা...শেষের কথাটা একটু জোর দিয়ে বলল. ...পূবা আবার দীপুকে জড়িয়ে
......আমায় নিয়ে চল দিপু, আমি যাব রে ......আকুতি মিনতি ঝরে পড়ছে
......না মা, তুমি যেওনা. ভালো লাগবেনা তোমার. লক্ষিটি মা, আমার এই কথাটা শোন. এই খান থেকেই বিদায় দাওওনাকে....পূবা চুপ
করে কিছুক্ষণ দীপুকে দেখে দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে ঘাড় নাড়ল. তারপর ঘরের সবাইকে উদ্দেশ্য করে, ডানহাতে দীপুকে জড়িয়ে, গত ২৪ ঘন্টায়
প্রথম অল্প হাসি নিয়ে
......এ আমার ছেলে. আমার প্রথম সন্তান.এর নাম প্রিয়দর্শি ভট্টাচার্জি বা দিপু
শেষ যাত্রা সুরু হলো সঞ্জীবের পূবার বুক ফাটা কান্না নিয়ে. সঞ্জীবের ভাইয়ের ছেলেরা আর দিপু কৌশিককে ইশারা করাতেকৌশিক কাধ
দিল. তপুকে জড়িয়ে বিরজু তার গাড়িতে দুজনকে নিয়ে নিল. হরজিত একটা হুইলচেয়ার এ বারান্দায় বসে দুহাত কপালে ঠেকিয়ে চোখের
জল ফেলল. রাধা পুবাকে জড়িয়ে আছে, কিন্তু তার ভিতর লক্ষ্য করলো দিপু এক ফোটা চোখেরজল ফেলেনি বা কাধ দেবার জন্য এগিয়ে
আসেনি,সেই দিপু যে স্ব ইচ্ছায় তার বাবার মৃতদেহ কাধে তুলে নিয়েছিল. পুবাকেজড়িয়ে রাধা ঘরের ভিতর নিয়ে এলো. তখন পূবা কেঁদে
চলেছে. এর মধ্হেই রাধা মঞ্জু কে একটু কফি করে পুবাকে দিতেবলল. বার বার না করলেও, রাধার জোরাজুরিতে কফি খেল. প্রায়, ২০
ঘন্টা পর পূবা কিছু খেল.
.......পূবা, নিয়ম অনেক আছে থাকবেও, কিন্তু তোমাকেও থাকতে হবে. এখনো অনেক কাজ বাকি তোমার, কফিটা অন্ততখাও, না হলে
মাথা কাজ করবে না. ..কফি খেয়ে পূবা বুজতে পারল, না খেলে ও আর পারতনা, অর মাথা কাজ করতনা.চোখে চোখ রেখে চোখ দিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে
......রাধাদী, আজ দীপুকে একটু বলবে আমার সাথে থাকতে, আমরা দুই মা আর মেয়ে তাতে একটু আশ্বস্ত হই.
......বলতে হবেনা পূবা, ও নিজেই থাকবে, তোমার ছেলে কে কোনো কিছু বোঝানোর দরকার নেই, আমাদের থেকে অনেকবেশি পরিনত.
তুমি দেখো. তবে একটা জায়গায় ও আজ যাবেই, আমি জানি অর মন কি ভিশন উতল এখন. পূবা একটুআশ্চর্য হয়ে, কিছু বুজতে না
পেরে ভাবলো " সঞ্জীবের জন্য, দিপু উতলা, এটা সম্ভব নয়, তাহলে, কি কোনো নারী". বলেইফেলল,
.......কার জন্য, রাধাদী, কোনো মেয়ে, সে কে? ...রাধা চেয়ে দেখল পুবাকে, তারপর সীতা আর তার মেয়ের কথা বললসবিস্তারে. এত দুঃখের ভিতরও পূবার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো.
কার জন্য, দিপু না তার নিজের মাস্টারমশাই?

শ্বশানের কাজ মিটিয়ে শ্বশান যাত্রীরা ফিরল প্রায় বেলা ৩ বাজে. দিল্লির প্রখর তাপ জ্বালা ধরিয়ে দিছে সবার,নিয়ম বিধিসবাইকেই মানতে
হলো. দিপু ঘরের ভিতর পূবার কাছে বসে
.........মা, আমি আর রাধা মাসি একটু পরেই যাব. একটা কাজ আছে, সেটা সেরে বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে আমি তোমারসাথে আজ থাকব মা, কেমন
পূবা একটু হেসে 'হ্যা' সূচক ঘাড় নেড়ে
.........প্রথমে বাড়িগিয়ে ফ্রেশ হয়ে তারপর জাবি,. শ্বশান থেকে ফিরে ওই অবস্থায় কোনো ভালো কাজে যেতে নেই..... দিপুঅবাক হয়ে
মায়ের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে চাইল...." আমাকে রাধাদী সব বলেছে, সত্যি তুই পঙ্কজের যোগ্য ছেলে".....দিপুএকটু হেসে
.....সুধু পঙ্কজ ভট্টাচার্জির, আর তোমার নয়?.....পূবা স্মিত হাসি হেসে,মাথা নামিয়ে চুমু খেল,একটু চুপ করে
......এইবাড়ির একটা খবর আছেরে, জীবনের সংবাদ, মঞ্জুর বাচ্চা হবে. ....গত ৩০ ঘন্টায়, প্রথম পূবা, পূবা হলো....দিপুহাসি মুখে চেয়ে,কানের কাছে মুখ নিয়ে যাতে আর কেউ শুনতে না পায়
.......বাবা এমনি এমনি তোমার প্রেমে পরেনি, এইজন্যই.... আবার হেসে দিল পূবা, গালে কি একটু, সামান্য লালের ছোয়াদেখা গেল?
রাধার দৃষ্টিতে তাই মনে হলো.

বাড়ি ফিরে দুজনে খালি চা আর বিস্কিট খেয়ে চান করে, একটা অটো নিয়ে সীতার বাড়ির কাছে গিয়ে,অটো টাকে দাড়াতেবলে সীতার
দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল. ভিতরে দুজনে স্তম্ভিত হয়ে দেখল শিশুটি অচৈতন্য, সীতা উদভ্রান্ত মুখেকপালে জলপট্টি দিচ্ছে দিপুদের দেখেই কেঁদে দিল.রাধা দৌড়ে গিয়ে গায়ে হাত দিয়ে দেখল, গা জ্বরে পুরে যাচ্ছে, উদ্বিগ্ন স্বরে
.......দিপু এখুনি একে নিয়ে চল, এ ভাবে থাকলে বাচবে না, শোনো, তুমি আমার সাথে চল, এখুনি, না হলে একে বাচানোমুশকিল.
পয়সার কথা চিন্তা করতে হবেনা, আমার ছেলে দেবে. ....সীতার দুই চোখে জল ,দিপু এই প্রথম সীতার মুখ দেখল,সেই মুখ জোড়া সুধুই দুটি কাজল কালো চোখ, না খেতে পেয়ে বসে গ্যাছে.
সীতা সুধু ঘার নেড়ে দিল. বাচ্চকে নিয়ে বাইরেএসে অটো তে উঠে দিপুর ফ্লাট এর এক ডাক্তার এর কাছে নিয়ে এলো. ডাক্তার চেম্বারে
যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে, দরজা খুলে
........আরে প্রিয়দর্শি, কি ব্যাপার?... রাধা এগিয়ে এলো, বাচ্চাটাকে নিয়ে,
........ডাক্তার সাহেব, please এই শিশুটিকে একটু দেখুন,এর খুব জ্বর, ডাক্তার রাধার কোলে ঐরকম একটা শিশুকে দেখেঅবাকই হলো.
ভিতরে বাচ্চাটাকে শুইয়ে দিয়ে , গায়ে হাত দিয়েই, " my god" বলে উঠলো. তারপর বাচ্চাটাকে দেখে,সীতাকে জিজ্ঞাসা করলো
.....ওকে কি, কেউ polio ওষুধ খাইয়েছে, ৪-৫ বার, ওই এক ফোটা করে? বলতে পারবে?....সীতা বিহ্বল চেয়ে রইলো,কিছু বলতে পারলনা , তখন রাধা তার নিজের দেশওয়ালী ভাষায় জিজ্ঞাসা করে জানতে পারল,এক
দিদিমনি বাড়ি বাড়ি ঘুরেবাচ্চাদের ফোটা খাওয়াত, ৫-৬ বার খেয়েছে. ডাক্তার একটু হাফ ছাড়ল,
.......দেখুন মনে হচ্ছে, গরম থেকেই হয়েছে, সাথে অপুষ্টি তো আছেই. এখুনি গিয়ে ঠান্ডা জ্বলে চান করান বা গা মুছিয়ে দিনকিন্তু ঠান্ডা
জলে, দরকার পড়লে ফ্রিজ এর জল মিশিয়ে নেবেন , যতক্ষণ না জ্বর কমে. এখন ১০৫ জ্বর, এটা কমাতেই হবে.
ফ্লাট এ এসে বাচ্চটাকে সুইয়ে দিপু ফ্রিজ থেকে জল বার করে বাথরুম থেকে বালতি করে জল দিয়ে অসুধ আনতে. যাবে ,
..........দিপু, উকুন মারার স্যাম্ফু আনবি, একটু বেশি করে,.... বাচ্চাটাকে গা মোছাতে মোছাতেই বলল
.........উকুন, কার উকুন হয়েছে, তোমার? অবাক হয়ে দিপু জিজ্ঞাসা করলো
........না এই মা আর মেয়ের. এদের থেকে আমাদের হবে,তাই নিয়ে আয়.......দিপু বির বির করতে করতে চলে গেল. একটুপর
.........সীতা, আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি, তুমি আমাকে যা করতে দেখলে, তাই করে যাও. আর এখানে তোমার থাকতে কোনোআপত্তি আছে?
ঘরের কাজ করবে সব, দেখিয়ে দেব আমি, আর তোমাদের চিন্তা আমার ছেলের, কি করবে?....বিহ্বল হয়েচেয়ে সীতা রাধার পা জড়িয়ে ধরে, তার নিজের ভাষায় কাঁদতে কাঁদতে সুধু বলল
........রাস্তায় থাকতে হত, কোনো কঠী তে তুলত আমায়, সেখানে আপনাদের সাথে রাখবেন ভাবতেও পারছিনা. মা, আমিকিন্তু ছোট
জাতের,আমার হাতের জল খাবে তোমরা? .....রাধা চুপ করে ঘাড় নেড়ে রান্না ঘরে গিয়ে ভাত আর একটা ডিম এরতরকারী চাপিয়ে দিল. নিজের ঘর থেকে শাড়ি,সায়া ,ব্লাউস এনে
সীতাকে দিয়ে
........বাথরুম এ চল. দেখিয়ে দিচ্ছি. বাথরুম এ ঢুকে সীতা পিছিয়ে এলো. এইরকম বাথরুম যে হতে পারে ও তো ছবিতেওদেখেনি.
যাই হোক রাধা ওকে সব বুঝিয়ে,গিজার চালিয়ে খানিকটা গরম জল বালতিতে দিয়ে, গুড়ো সাবান দিয়ে সীতা কেবলল,
.........এই স্যাম্ফু চুলে দেবে.প্রচুর ফেনা হবে,তারপর তোমার সব কাপড় জামা গরম জলে কেচে, ভালো ভাবে, চান করেআমার শাড়ি
এইসব পরে বেরুবে. তোমার মেয়েকে আমি একটা ব্লাউস পরিয়ে দিচ্ছি, কাল জামা কিনে আনব. ওর জমাওকেচে দিও. তোমার হাতের
নখ দেখি, যা ভেবিছি তাই. দাড়াও.....বলে ঘরে গিয়ে নিজের নেল কাটার এনে কি ভাবে কাটতেহয় , দেখিয়ে হাত আর পায়ের নখ
কেটে কোথায় রাখবে বলে আবার শিশুটির কাছে এসে বসলো. শিশুটির মুখের দিকেতাকিয়ে চিন্তায় ডুবে গেল. সত্যি, অদ্ভূত ভালো ছেলে
দিপু. নিজের না পাওয়া স্নেহ,যত্ন, ভালবাসা উজার করে দিতে পারেঅন্য কোনো অবহেলিত শিশুর জন্য. এই রকম ঘরের কোনো শিশুর
জন্য দিপুর মত ঘরের ছেলের টান, হৃদয় কাপিয়ে দেয়. "দিপু, আমার ভালবাসা, তুই ভালো থাকিস. ভগবান আর যেন তোকে বঞ্চিত না করেন, যখনি, প্রয়োজন হবে তোর্ রাধিকাসঙ্গে থাকবেই,
আর কেউ থাকুক বা না থাকুক" . দিপু পাসে বসে শিশুটিকে দেখছে,একমনে
.........কি দেখছিস দিপু. ....চুপ করে ঘার নাড়ল. গভীর ঘুমের ঘোরে যেন দিপুর কথা
.........৮ বছরের একটি বালক কে দেখছি রাধা মাসি. এইরকম জ্বরে অচৈতন্য, প্রায় ৭-৮ ঘন্টা, কেউ খোজ নেবার নেই,শেষে ওই কাকিমা. সেই baloktir কথা মনে পড়ছে মাসি. যার জন্য আমার বঞ্চনার ছেলেবেলা, সে ছাই
হয়ে যাওয়ার পরএই নিষ্পাপ শিশুটিকে ঘরে আনলাম. এক সীতা যদি বাধা না হয়ে দাড়ায়, তাহলে এই আমার প্রথম সন্তান হবে মাসি. … চুপকরে শিশুটির দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে
......মাসি, মা কে এই নিয়ে কিছু বলার দরকার নেই. mp সাহেবকে , কিছুদিন পর আমরাই বলব. .
মুগ্ধ হয়ে রাধা দীপুকে একটু আদর করলো মাথায়. তারপর শিশুটিকে ব্লাউস পরিয়ে গিট্ মেরে, যা হোক একটা কিছু করলো.প্রায় ৩ ঘন্টার
উপর ওই চিকত্সা আর অসুধ চলার পর জ্বর একটু একটু করে কমতে লাগলো. প্রচুর পরিমানে গ্লুকস এরজল, চামচে করে একটু একটু
করে খাওয়াতে লাগলো দিপু. সীতা চান করে বেরোনোর পর দিপু দেখে অবাক, একটু জলপরতেই এইরকম. ডাক্তার কে , উঠে গিয়ে ফোন
করে জানালো. ac তে রাখা উচিত কিনা জিজ্ঞাসা করাতে ডাক্তার বলল, “অল্প ঠান্ডা রাখতে মনে হয় ওই শিশু কোনদিন অসুধ খায়নি, তাই যে অসুধ দিয়েছি, খাইয়ে দাও. দেখবে ম্যাজিক এর মতকাজ হবে.” ডাক্তারের কথাটা মনে
হয় সত্যি. জ্বর প্রায় ৩ ডিগ্রির কাছা কাছি কমেছে. যাই হোক, দুটো ডিম দিয়ে প্রচুর ভাতখেয়ে দিপু পূবার বাড়ি চলল নিশ্চিন্ত মনে ""মাসি
তো আছে,ঠিক সামলে নেবে "

পূবা আর তপু, তপুর ঘরে শুয়ে আছে. বাইরে সার্ভেন্ট কয়াটার্স এ মঞ্জু আর হরজিত, নতুন জীবনের আনন্দে, চলে যাওয়াজীবনের বেদনা
মনে পরছেনা সেই ভাবে. এইটাই বহতা জীবনের ইতিকথা. দিপু এসে, তপুর ঘরে ঢুকে
.......মা, তোমরা দুজনে আজ খাটে শোবে, আমি মেঝেতে সুই. আমাকে উঠতে হবে ফোন করার জন্য মাসিকে. ......শিশুটির কথা, ডাক্তারের কথা, চিকিত্সা সব সবিস্তারে বলল.
........তোর্ খুব ঝড় গেল আজ , তাই না দিপু.
.......তোমার থেকে অনেক অনেক কম. ....একটু বিষন্ন হেসে, .." ঝড় না হোক, নিস্তব্দতা এইবার তোমার সাথ সহজেছাড়বেনা. তপুও তো কলকাতা যাবার মুখে"
.......জানি, কিন্তু তুই কেন তলায় শুবি, এখানেই আয়, হয়ে যাবে
.............না, তোমরা দুজনেই আজ,কিছু হারিয়েছে. তাই এক সাথে ঘুমাবে তোমরা. তা ছাড়া আমি উঠে উঠে মাসিকেফোন করব
গুড্ডির জন্য, তোমাদের অসুবিধা হবে. ও সুস্থ্য হয়ে উঠলে আমি নিয়ে আসব, তোমার আপত্তি নেইত?
........কি বলছিস দাদা, আপত্তি কেন হবে, কাল আমি যাব তোর সাথে দেখতে. ...তপু একটু স্বাবাভিক
.......দিপু যা ভাবছিস তা না, সঞ্জীবের জন্য আমি মনে মনে প্রস্তত ছিলাম. সঞ্জীবের বেডসোর হয়ে গেছিল,বেচে থাকলেআরো কষ্ট পেত.
তবুও, ১৮ বছরের এক সাথে কাটানো, এতলবেতল হয়ে গেছে যার জন্য, তাকে ভুলব কি করে! ...দিপুআবার মাকে জড়িয়ে ধরল.
.........ভুলোনা, তাহলে বেইমানি হবে. সঞ্জীব বাবুর সাথে আমার সম্পর্ক অন্য ব্যাপার, কিন্তু তপু আর তুমি তার ভালবাসাআর স্নেহ
পেয়েছ, ভুলোনা. আজ না দু একদিন যাক, এই ঘরে আমরা তিনজন থাকব, আর তুমি আমার শিশুবেলার গল্প বলবে, আমি তো কিছু
জানি নাতার. বাবাকে নিয়ে বলবে, তোমাদের দুজনের কথা বলবে, সব বলবে,কেমন.
........তাই হবে রে দিপু. কিন্তু আজ সঞ্জীবের কথা মনে হচ্ছে. ঘৃন্যতম কাজ করেছিল, সুধু আমাকে পাওয়ার জন্য.ভালবাসত আমায়,
পুরো ব্যবসা আমার নামে দিয়েছে.কি করে ভুলি?
.......বেইমানি, হবে ভুললে. কিন্তু তপু চলে গেলে, তুমি মঞ্জুদিকে পিছনের ঘরে নিয়ে এস. কথা বলার জন্য আর শিশুরকান্নায় বাড়িতে
প্রাণ আসবে, মা. আমি বোধহয়, জীবনের ব্যাপারে তোমার থেকে বেশি অভিজ্ঞ. but you are my মা.পুরনোদিনের গল্প বলতে হবে কিন্তু. ....বলে উঠে গিয়ে ফোন করলো
......মাসি, কি ব্যাপার, জ্বর কমেছে? ১০২. তুমি আজ ঘুমাতে পারবে বলে মনে হয়না, সীতার সাথে ভাগাভাগি করে নীয়.গ্লুকোস কিন্তু
খায়েই যাবে. আমি ঘন্টা ২-৩ পর আবার ফোন করব. ...ঘুরে ..." মা জ্বর কমার দিকে, এই শিশুটি আজতোমায় নতুন করে চিনতে শেখাচ্ছে. ....তপু, জল খাবি, দেব? coke খাবি, মা খাবে, খাওনা, খাওয়া তো কিছুই হয়নি মনেহচ্ছে.
........না. তুই খা,তপুকে দে.
.......তুমি খেলে খাব, নাহলে থাকুক
.......উফ.খুব সয়তান তুই, আসলে আমাকে খাওয়াবি তাই নিজের কথা বলছিস, দে খাই. ....বেশ হাসি মুখ পূবার. cokeখেয়ে আরো বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে তিনজনে ঘুমানোর চেষ্টা করলো. একটিই ঘর, তিনটি প্রাণী, একজন তার সদ্দ্যহারানো স্বামীর
জন্য, একজন তার পিতার হত্যাকারী কে হারিয়ে, একজন তার কুড়িয়ে পাওয়া প্রথম সন্তানের জন্য চেষ্টাকরেও সহজে ঘুমাতে পারলনা.

সাত দিন পর বাচ্চাটি সুস্থ হয়ে উঠলো. এর ভিতর রাধা আর দিপু বিরজু কে তার বাসায় গিয়ে সব বলেছে. বিরজু শুনেইদীপুকে আর সর্জুকে
FIR করতে বলল সুখরাম এর নামে
[+] 2 users Like pnigpong's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: টান (কালেক্টেড) - by pnigpong - 28-06-2020, 12:03 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)