27-02-2019, 06:15 PM
অভি, "বস, একটু ওষুধের দোকানে দাঁড়াতে হবে আর বেশ কিছু সিগারেট কিনতে হবে।"
ওষুধের দোকানে দাঁড়ানোর কথা শুনে সুপ্রতিমদা বুঝতে পারে যে অভি কি কিনবে, হেসে বলে "বোকা... না নিয়েই বেড়িয়ে পরেছিস?"
অভি হেসে ফেলে, "শালা এত ঝামেলার মধ্যে কিনতে ভুলে গেছি।"
সুপ্রতিমদা, "আবে শুয়র, চিন্তা করিস না, আমার কাছ থেকে ধার নিয়ে নিস।"
অভি, "বোকা... মাঝ পথে যদি ফুরিয়ে যায় আর আমরা কন্ট্রোল না করতে পারি তাহলে শালা ন’মাস নিয়ে ফিরতে হবে কিন্তু।" দুজনেই হেসে ফেলে।
সুপ্রতিমদা, "তোর বউ খুব সুন্দরী আর তোর বান্ধবী দুজনকেই দেখতে বেশ সুন্দরী।"
অভি, "নজর দিস না যেন, দুজনেই এনগেজড কিন্তু।"
সুপ্রতিমদা, "তোর ত শালা ওখানে মাথা, সুন্দরী কে সুন্দরী বলেছি তাতেই গা জ্বলে গেল যেন তোর।"
অভি, "রিতিকাকে কোথায় পেলি?"
সুপ্রতিমদা, "আরে নেহেরু প্লেসে একটা টেকনিকাল কনভেন্সান ছিল, সেখানে ওর সাথে দেখা হয়। ওখানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে ছিল, ব্যাস আর কি, তিন মাস প্রেম আর তারপর সব ঠিকঠাক।"
ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ আর বাকি জিনিস কিনে বিকেল পাচটার মধ্যে বাড়ি ঢুকে যায়। মেয়েরা জামা কাপড় বদলে বেশ আরাম করে বসে গল্প করছিল। রিতিকার পোশাক দেখে দীপঙ্কর আর রামানুজের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। রিতিকার পরনে হাল্কা গোলাপি রঙের আঁটো স্লাক্স আর সাদা হাত কাটা গেঞ্জি। ওর গায়ের কাপড় যেন ওর পেলব কমনীয় শরীরের একপ্রস্ত রঙের প্রলেপের মতন সেটে। সুগোল নিতম্বের ওপরে অন্তর্বাসের স্পষ্ট দাগ বোঝা যাচ্ছে। অভি ওই দেখে একবার দিপঙ্করদের দিকে আর চোখে তাকায় আর সুপ্রতিমদাকে চোখ টিপে ইশারা করে। পরী, অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে কি এত মন দিয়ে দেখছে। পরী, দীপঙ্কর আর রামানুজের দিকে তাকিয়ে ওদের চোখের চাহনি দেখে মৃদু রেগে যায়। একটু বিরক্ত হয়ে মেয়েদের নিয়ে অন্য ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে।
অভি আর সুপ্রতিমদা শেষ বারের মতন বেড়াতে যাবার পুর পরিকল্পনা একবার পুনরালোচনা করে নেয়। অভি পরীকে ডাক দেয় ওদের সাথে বসে বেড়াতে যাবার কথা বলার জন্য। এবারে ঠিক করা হয় যে কে টিম লিডার হবে, সবাই এককথায় অভির নাম নেয়, তারপরে ক্যাশিয়ারের কথা ওঠে, সবার চোখ পরীর দিকে।
পরী চেঁচিয়ে ওঠে, "না না, আমি পয়সার হিসেব রাখতে পারব না।"
সুপ্রতিমদা পরীকে মজা করে বলে, "রানীরা সুখে দুঃখে সর্বদা রাজার পাশে থাকে, তাহলে এখন কেন পিছিয়ে যাচ্ছও? এর পরে ত সপ্তপদি বাকি আছে, তখন কি করবে?"
লাজুক হেসে সুপ্রতিমদার দিকে তাকায় পরী। রিতিকা সুপ্রতিমদাকে বলে, "ঠিক আছে অনেক হয়েছে ওর পেছনে লাগা, ওই ক্যাশিয়ার হবে।"
গাড়ির ব্যাপারে কথা উঠলে অভি জানায় যে কল্যাণীদের জন্য ইনোভা আর সুপ্রতিমদার গাড়িতে ওরা যাবে। কল্যাণীদের গাড়ি বল্বিন্দার আর আরেক ড্রাইভার চালাবে, আর অভি আর সুপ্রতিমদা নিজেদের গাড়ি চালাবে।
অরুনা অভির কথা শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "কিরে তুই আবার গাড়ি চালাতে কবে থেকে শিখলি?"
পরী ওকে গত বারের কথা জানায়।
অভি দিপঙ্করের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমরা কি ড্রিঙ্ক করো?"
দুজনেই ওদের বউয়ের দিকে তাকায়। কল্যাণী বিরক্তি ভরা চোখ নিয়ে দিপঙ্করকে ইশারায় বারন করে। পরী একবার কটমট করে অভির দিকে তাকায়, অভি সেদিকে দেখেও না দেখার ভান করে। পরী ওর ভাব দেখে হাল ছেড়ে দেয়।
সুপ্রতিমদা ওদের দিকে হেসে বলে, "আরে ভাই, ঘুরতে গিয়ে এই রকম বাঁধনে থাকতে কি কারুর ভালো লাগে নাকি।" তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "বোতল কোথায়? কিনেছিস নাকি তুই?"
অভি মাথা নাড়ায়, "না রে কিনিনি, যাবার পথে আম্বালা থেকে কিনে নেব।"
সুপ্রতিমদা বিরক্ত হয়ে বলে, "বোকা...শূয়র, তুই একবারে সব কথা বলতে পারিস না।"
অরুনা অভির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুই কবে থেকে ড্রিঙ্ক করা শুরু করলি রে?"
পরী ওকে সুব্রতর বিয়ের সময়ের অভির কান্ডকারখানা শুনায়, ওই শুনে সবাই হেসে ফেলে। গল্প আবার চলতে শুরু করে। সুপ্রতিমদা আর অভি বিয়ারের ক্যান নিয়ে গলায় ঢালতে থাকে আর বাকিরা কোল্ডড্রিঙ্কস হাতে নিয়ে নেয়।
কিছু পরে পরী অভিকে বাইরে ডেকে বলে, "বাড়ি ফিরে ছোটোমা, বাবু আর ব্যানারজি কাকু কে কি বলবে কিছু ভেবেছ কি?" পরীর ধরা গোল শুনে অভির ওর কাঁধে হাত দেয়। পরী থাকতে না পেরে অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে মুখ গুঁজে ভয়ে কেঁপে ওঠে, "আমার জানো, মাঝে মাঝে খুব ভয় করে, জানি না কি হবে।"
অভি ওর মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে বলে, "কিছু হবে না, ভয় নেই, আমি আছি।"
অরুনা পরীকে বেড়িয়ে যেতে দেখে কিছু পরে কল্যাণী কে নিয়ে বাইরে আসে। এসে দেখে যে পরী অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। পরী ওদের দেখে অভিকে ছেড়ে দাঁড়ায় আর চোখের কোল মুছে নেয়। অরুনা প্রশ্নভরা চাহনি নিয়ে পরীর দিকে তাকায়। পরী মাথা নাড়িয়ে জানায় যে কিছু হয়নি। অরুনার সে কথা বিশ্বাস হয় না, পরীকে জিজ্ঞেস করে, "সত্যি যদি কোন কিছু না হয়ে থাকে তাহলে তুমি কাঁদছ কেন?"
অভি ওকে নিশ্চিন্ত করে বলে, "তুই এসব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে আনন্দ কর, বুঝলি।"
রাত ন’টা নাগাদ ওরা সবাই সেই দূর পাহাড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সবাই বেশ হাল্কা জামাকাপড় পরে, রিতিকা একটু বেশি হাল্কা জামা কাপড় পরে। সুপ্রতিমদা আর অভি বারমুডা আর টিশার্ট গায়ে গলিয়ে নিয়েছে। দিল্লী ছাড়ার আগে ওরা পাঁচ বোতল ভদকা আর পাঁচ ক্যারেট বিয়ারের ক্যান কিনে নিয়েছিল, পরী তাতে একটু বিরক্ত হয়ে উঠেছিল, কিন্তু যেহেতু সবাই আনন্দে মেতে তাই অল্প সাবধান করে দিয়েছে অভিকে। সুপ্রতিমদার গাড়িতে মাঝের সিটে রিতিকা আর অরুনা বসে আর ওরা দুজনে বিয়ার পেছনে বসে, নতুন ড্রাইভার আমজাদ গাড়ি চালাচ্ছিল। পরী অভিকে বলে যে ও রাত টুকু কল্যাণী আর রানীদের সাথে ইনোভায় যাবে যাতে ওরা নিজেদের পৃথক না ভাবে। পরীর কথায় বল্বিন্দার ওদের গাড়ি চালায়।
অরুনা যথারীতি চুপচাপ বসে, রিতিকা আর ওরা বেশ গল্পে মেতে ওঠে। দিল্লী ছাড়িয়ে বেড়িয়ে পরতেই গাড়ি দ্রুত গতিতে ধেয়ে চলে, সামনে ইনোভা আর পেছনে সাফারি। বিয়ারের ফলে অভি আর সুপ্রতিমদার নেশা লাগে, বেশ একটু ঝিমঝিম পায়। অভি সুপ্রতিমদাকে বলে যে একটা সিগারেট দরকার। কিছু দূর গিয়ে গাড়ি থামায় বল্বিন্দার। দু’জনেই গাড়ি থেকে নেমে একটা করে সিগারেট ধরিয়ে টান দেয়।
অরুনা এর মধ্যে নেমে এসে অভিকে বলে, "আমার ঘুম ঘুম পাচ্ছে। আমাকে ওই ইনোভায় পাঠিয়ে দিবি, প্লিস?"
অভি, "তোর ঘুম পাচ্ছে ত এখানে ঘুমিয়ে পর না।"
অরুনা অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমার ভালো লাগছে না, আমি শুচিদির কাছে যাবো।"
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে অরুনার ঝাপসা হয়ে আসা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, "ঠিক আছে আমি ওকে এই গাড়িতে আস্তে বলব খানে।"
বল্বিন্দার গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা সামনের গাড়িকে ধরে ফেলল। গাড়ি থামিয়ে অভি পরীকে ওদের গাড়িতে আসতে বলে।
পরী কারন জিজ্ঞেস করাতে অভি একটু বিরক্ত হয়ে বলে, "আমাদের গাড়িতে এসে অরুনাকে সামলাও, ওর আবার মন কেমন করছে। ওকে সামলানোর দায়িত্ব তোমার, আমাকে যদি এই রকম অবস্থায় ফেলে যাও তাহলে দেখে নিও।"
পরী গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে ওদের গাড়িতে চেপে যায়। অরুনাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, অরুনা চুপ করে ওর মুখের দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। পরীর বুঝতে দেরি হয় না যে ওর মনে আবার সেই পুরানো বেদনা জেগে উঠেছে। পরী ওর মাথা জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে, কিছুক্ষণের মধ্যেই অরুনা ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে।
অভি দুই ড্রাইভারকে সোজা চায়েল নিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। সুপ্রতিমদা আর অভি সাফারির পেছনের সিটে বসে ঘুম লাগায়।
সকাল সাড়ে দশ’টা নাগাদ ওরা চায়েল পৌঁছে যায়। ছোট্ট শহর চায়েলের উচ্চতা বেশি নয়, চারদিকে সবুজে ঢাকা পাহাড়। চায়েলের আবহাওয়া বেশ মনোরম, চারদিকে উঁচু উঁচু পাইন, কেদার, শাল দেবদারুর বন। হোটেলে ওরা দুটো রুম নিয়ে নেয় একটু বিশ্রাম নেবার জন্য। সারা রাত ধরে ড্রাইভার গাড়ি চালিয়েছে তাই ঠিক করা হল যে দুপুরে খাওয়ার পরে ওর চায়েল ছেড়ে বের হবে।
দুপুরে একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে আবার বেড়িয়ে পরে সবাই। এবারে অভির হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং, পাশে পরী। সুপ্রতিমদা, রিতিকা আর অরুনা পেছনের সিটে বসে। পরীর মুখে সবাই সেই জায়গার গল্প শুনছে মন দিয়ে। পরীর বর্ণনা শুনে সবাই মুগ্ধ, রাস্তা ঘাটা যেন পরীর এত চেনা যে মনে হয় ও এখানে সবসময়ে ঘুরতে আসে।
পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা আমরা কি শতদ্রু নদীর তীরে দাঁড়াবো?"
অভি, "না এবারে নয়, কল্পা বাঁ রেকং পিও পৌছাতে দেরি হয়ে যাবে, বেবি।"
পরী, "ভিমাকালি মন্দিরে নিয়ে যাবে না?"
অভি, "বেবি, কি করে হবে? আমাদের হাতে সময় কম।"
পরী একটু মনমরা হয়ে বলে, "কেন সময় কম, আমাদের হাতে ত অনেক সময় আছে। তাহলে চলো না আজ রাতে চিতকুলে থেকে যাই আমরা।"
কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাতে অসুবিধে হচ্ছিল অভির, চেঁচিয়ে ওঠে পরীর দিকে, "তুমি কি আবার চিতকুলে গিয়ে গতবারের মতন ঝগড়া করতে চাও?"
পরী খিলখিল করে হেসে অভির গালে টোকা মেরে বলে, "না সোনা, এবারে আর ঝগড়া করব না। কিন্তু বাকিদের কথা বলতে পারছিনা, অভি।"
সুপ্রতিমদা অভিকে জিজ্ঞেস করে, "কিরে, আমরা কি শেষ পর্যন্ত চিতকুল যাচ্ছি নাকি?"
পরী অভির হয়ে উত্তর দিল, "হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা চিতকুল যাচ্ছি। আমাদের হাতে অনেক সময় আছে আমরা আরামসে চিতকুলে দুই দিন কাটাতে পারি।" পরী অভির দিকে মিষ্টি হেসে চোখ টেপে।
রিতিকা আর সুপ্রতিমদা একসাথে বলে ওঠে, "কিন্তু চিতকুল ত আমাদের পথে ছিলে না, তাহলে?"
পরী, "কেন তোমরা ছেলেরাই ত বলেছিলে যে, ঘুরতে গিয়ে যদি এডভেঞ্চারের গন্ধ না পাও তাহলে ঘোরা আর ঘোরা কি। চলো এক নতুন দুর্গম জায়গায়, সেটাও এক রকমের এডভেঞ্চার বইকি।"
অরুনা অভিকে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে, তোরা কেন চিতকুলে গিয়ে ঝগড়া করেছিলিস?"
পরী পেছনে অরুনার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে উত্তর দেয়, "ধৈর্য ধর আর দেখ। চিতকুল পৌঁছে সব বুঝতে পারবি আমরা কেন ঝগড়া করেছিলাম।"
পরীর সেই শয়তানি হাসি আর চোখের ভাব দেখে অভির যেন ভেতরটা গলে গেল। সেই দুষ্টু হাসি ওকে মনে করিয়ে দিল সেই পুরানো দিনের কথা।
গাড়িতে তেল ভরানোর জন্য ওরা জিওরিতে থামে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে একটু হাটাহাটি করে, এতক্ষণ বসে বসে সবার পা ধরে গেছে। সবাই পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে যায়। হাইওয়ের পাশ দিয়ে শতদ্রু নদী বয়ে চলেছে। গতবারের চেয়ে এবারে রাস্তার অবস্থা একটু যেন ভালো। তেল ভরানোর পরে সুপ্রতিমদার সাথে গিয়ে, পরী পয়সা মিটিয়ে দিল।
অরুনা আর রিতিকা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে সত্যি কি আমরা চিতকুলে যাচ্ছি?"
অভি ম্লান হেসে উত্তর দেয়, "আমাকে জিজ্ঞেস করে কি লাভ আছে। তোমরা কি জানো না যে প্রানীদের মধ্যে মানুষ হচ্ছে সব থেকে বিপ্পজন্নক আর মানুষের মধ্যে তোমরা, মেয়েরা সব থেকে মারাত্মক। তোমাদের কথা না মানলে ত মহাভারত উলটে দেবে, তাই না।"
সুপ্রতিমদা পরীকে জিজ্ঞেস করে যে কখন ওরা চিতকুল পৌঁছাবে, পরী অভির দিকে তাকায়। অভি ঘড়ি দেখে অনুমান করে যে চিতকুল পৌছাতে ওদের রাত আটটা বেজে যাবে।
পরীকে বলে, "তুমি রাস্তার অবস্থা জানো, তা সত্তেও কেন ওদের নিয়ে চিতকুল যাবার জন্য জেদ করছ, সোনা?"
পরী অভির একদম কাছে এসে, বুকের ওপরে হাত রেখে মুখ উঁচু করে নেয়। ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস অভির সারা মুখের ওপরে বয়ে যায়, মিষ্টি লালা ঠোঁটের কাতর আহবান অভি প্রত্যাখান করতে পারে না। পরীর কোমর জড়িয়ে ঠোঁট নামিয়ে নিয়ে আসে আর পরী ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মধুর সুরে বলে, "আমার একটা কথা রাখবে না, সোনা?"
অভি ঠোঁট নিচে নামিয়ে বলে, "এটা কিন্তু ব্লাকমেইল করা হচ্ছে বেবি।"
অভি পরীর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে যায়, পরী সবার দিকে চেঁচিয়ে বলে ওঠে, "আমরা চিতকুল যাচ্ছি।"
বলেই অভির হাতের বাঁধন ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। অভির দিকে মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে ইশারায় বলে, "ওই চুমুটা পাওয়ার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে, সোনা।"
গাড়িতে উঠে অভি, চিতকুলের হোটেলের ম্যানেজারের ফোন নাম্বার খুঁজে টাকে ফোন করে জানিয়ে দিল পাঁচটা রুম বুক করার কথা। ম্যানেজার রাতের খাবারের কথা জিজ্ঞেস করাতে অভি বাকি সবাই কে জিজ্ঞেস করে রাতের খাওয়ার ব্যাপারে। সবাই আঁতকে ওঠে যে বিকেল বেলায় রাতের খাবার। পরী ওদের জানায় যে চিতকুল পৌঁছতে পৌঁছতে অনেক রাত হয়ে যাবে আর যেখানে যাচ্ছে সেখানে গিয়েই বুঝতে পারবে কেন রাতের খাবারের কথা এত তাড়াতাড়ি অর্ডার দেওয়া হচ্ছে।
রকছাম ব্রিজ পৌঁছতে সন্ধ্যে নেমে এল। অভি মনে মনে একটু ভয় নিয়েই পরীর দিকে তাকাল, পরী হেসে ওকে আসস্থ দেয় যে এবারে ও আর রাগবে না। অরুনা গাড়ি দাঁড় করাতে অনুরধ করে নিচে নেমে নদী দেখতে চায়। গাড়ি দাঁড়াতেই সবাই নেমে নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে থাকে। এর মাঝে সুপ্রতিমদা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে যে ওর গাড়ি চালাতে অসুবিধে হচ্ছে কিনা। অভি হেসে বলে যে পরী যতক্ষণ ওর পাশে আছে ততক্ষণ ওর শরীরে ক্লান্তি আসতে পারেনা।
সুপ্রতিমদা ওর মাথায় চাঁটি মেরে বলে, "শালা, আজ রাতে তাহলে এক প্যাকেট কন্ডম শেষ করবি।"
অভি, "এমন বলছিস যেন তুই হাতে ধরে নাড়াবি। শালা তুই কি থেমে থাকবি নাকি?" সিগারেট জ্বালিয়ে দুজনেই হেসে ফেলে।
বল্বিন্দার এর মাঝে এসে জিজ্ঞেস করে অভিকে যে ওই রাস্তায় চালাতে পারবে কিনা। রাত ঘনিয়ে আসে, অভি বড় এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলে যে ও চালাতে পারবে। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে, অভির পাশে সুপ্রতিমদা বসে। খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে শুরু করে অভি, সঙ্কীর্ণ পাহাড়ি রাস্তায় রাতের অন্ধকারে গাড়ি ধিরে ধিরে উঠতে শুরু করে। কিছু দুরে দুরে অন্ধ বাঁক, সামনে থেকে কোন গাড়ি না আসাতে গাড়ি চালাতে বিশেষ অসুবিধে হয় না। পাথুরে রাস্তায় গাড়ি দোল খায়, অরুনা আর রিতিকার ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসে। পরীর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকায় দুই মেয়ে, জিজ্ঞেস করে যে ওরা ঠিক রাস্তায় যাচ্ছে কি না। পরী ওদের অভয় প্রদান করে, আয়নায় অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে, মনে পরে যায় প্রথম বার যখন পরী এখানে এসেছিল তখন ও ঝগড়া করেছিল অভির সাথে।
রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ওর সবাই চিতকুল পৌঁছে যায়। গাড়ি সোজা হোটেলে নিয়ে যায় অভি। ম্যানেজার পরী আর অভিকে দেখে চিন্তে পেরে যায় আর ওদের থাকার জন্য রুম দেখিয়ে দেয়। ম্যানেজার জানায় যে রাতের খাবার একদম তৈরি, ওরা যেন খাওয়ার আগে একটু খবর দেয়।
ওষুধের দোকানে দাঁড়ানোর কথা শুনে সুপ্রতিমদা বুঝতে পারে যে অভি কি কিনবে, হেসে বলে "বোকা... না নিয়েই বেড়িয়ে পরেছিস?"
অভি হেসে ফেলে, "শালা এত ঝামেলার মধ্যে কিনতে ভুলে গেছি।"
সুপ্রতিমদা, "আবে শুয়র, চিন্তা করিস না, আমার কাছ থেকে ধার নিয়ে নিস।"
অভি, "বোকা... মাঝ পথে যদি ফুরিয়ে যায় আর আমরা কন্ট্রোল না করতে পারি তাহলে শালা ন’মাস নিয়ে ফিরতে হবে কিন্তু।" দুজনেই হেসে ফেলে।
সুপ্রতিমদা, "তোর বউ খুব সুন্দরী আর তোর বান্ধবী দুজনকেই দেখতে বেশ সুন্দরী।"
অভি, "নজর দিস না যেন, দুজনেই এনগেজড কিন্তু।"
সুপ্রতিমদা, "তোর ত শালা ওখানে মাথা, সুন্দরী কে সুন্দরী বলেছি তাতেই গা জ্বলে গেল যেন তোর।"
অভি, "রিতিকাকে কোথায় পেলি?"
সুপ্রতিমদা, "আরে নেহেরু প্লেসে একটা টেকনিকাল কনভেন্সান ছিল, সেখানে ওর সাথে দেখা হয়। ওখানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে ছিল, ব্যাস আর কি, তিন মাস প্রেম আর তারপর সব ঠিকঠাক।"
ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ আর বাকি জিনিস কিনে বিকেল পাচটার মধ্যে বাড়ি ঢুকে যায়। মেয়েরা জামা কাপড় বদলে বেশ আরাম করে বসে গল্প করছিল। রিতিকার পোশাক দেখে দীপঙ্কর আর রামানুজের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। রিতিকার পরনে হাল্কা গোলাপি রঙের আঁটো স্লাক্স আর সাদা হাত কাটা গেঞ্জি। ওর গায়ের কাপড় যেন ওর পেলব কমনীয় শরীরের একপ্রস্ত রঙের প্রলেপের মতন সেটে। সুগোল নিতম্বের ওপরে অন্তর্বাসের স্পষ্ট দাগ বোঝা যাচ্ছে। অভি ওই দেখে একবার দিপঙ্করদের দিকে আর চোখে তাকায় আর সুপ্রতিমদাকে চোখ টিপে ইশারা করে। পরী, অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে কি এত মন দিয়ে দেখছে। পরী, দীপঙ্কর আর রামানুজের দিকে তাকিয়ে ওদের চোখের চাহনি দেখে মৃদু রেগে যায়। একটু বিরক্ত হয়ে মেয়েদের নিয়ে অন্য ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে।
অভি আর সুপ্রতিমদা শেষ বারের মতন বেড়াতে যাবার পুর পরিকল্পনা একবার পুনরালোচনা করে নেয়। অভি পরীকে ডাক দেয় ওদের সাথে বসে বেড়াতে যাবার কথা বলার জন্য। এবারে ঠিক করা হয় যে কে টিম লিডার হবে, সবাই এককথায় অভির নাম নেয়, তারপরে ক্যাশিয়ারের কথা ওঠে, সবার চোখ পরীর দিকে।
পরী চেঁচিয়ে ওঠে, "না না, আমি পয়সার হিসেব রাখতে পারব না।"
সুপ্রতিমদা পরীকে মজা করে বলে, "রানীরা সুখে দুঃখে সর্বদা রাজার পাশে থাকে, তাহলে এখন কেন পিছিয়ে যাচ্ছও? এর পরে ত সপ্তপদি বাকি আছে, তখন কি করবে?"
লাজুক হেসে সুপ্রতিমদার দিকে তাকায় পরী। রিতিকা সুপ্রতিমদাকে বলে, "ঠিক আছে অনেক হয়েছে ওর পেছনে লাগা, ওই ক্যাশিয়ার হবে।"
গাড়ির ব্যাপারে কথা উঠলে অভি জানায় যে কল্যাণীদের জন্য ইনোভা আর সুপ্রতিমদার গাড়িতে ওরা যাবে। কল্যাণীদের গাড়ি বল্বিন্দার আর আরেক ড্রাইভার চালাবে, আর অভি আর সুপ্রতিমদা নিজেদের গাড়ি চালাবে।
অরুনা অভির কথা শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "কিরে তুই আবার গাড়ি চালাতে কবে থেকে শিখলি?"
পরী ওকে গত বারের কথা জানায়।
অভি দিপঙ্করের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমরা কি ড্রিঙ্ক করো?"
দুজনেই ওদের বউয়ের দিকে তাকায়। কল্যাণী বিরক্তি ভরা চোখ নিয়ে দিপঙ্করকে ইশারায় বারন করে। পরী একবার কটমট করে অভির দিকে তাকায়, অভি সেদিকে দেখেও না দেখার ভান করে। পরী ওর ভাব দেখে হাল ছেড়ে দেয়।
সুপ্রতিমদা ওদের দিকে হেসে বলে, "আরে ভাই, ঘুরতে গিয়ে এই রকম বাঁধনে থাকতে কি কারুর ভালো লাগে নাকি।" তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "বোতল কোথায়? কিনেছিস নাকি তুই?"
অভি মাথা নাড়ায়, "না রে কিনিনি, যাবার পথে আম্বালা থেকে কিনে নেব।"
সুপ্রতিমদা বিরক্ত হয়ে বলে, "বোকা...শূয়র, তুই একবারে সব কথা বলতে পারিস না।"
অরুনা অভির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুই কবে থেকে ড্রিঙ্ক করা শুরু করলি রে?"
পরী ওকে সুব্রতর বিয়ের সময়ের অভির কান্ডকারখানা শুনায়, ওই শুনে সবাই হেসে ফেলে। গল্প আবার চলতে শুরু করে। সুপ্রতিমদা আর অভি বিয়ারের ক্যান নিয়ে গলায় ঢালতে থাকে আর বাকিরা কোল্ডড্রিঙ্কস হাতে নিয়ে নেয়।
কিছু পরে পরী অভিকে বাইরে ডেকে বলে, "বাড়ি ফিরে ছোটোমা, বাবু আর ব্যানারজি কাকু কে কি বলবে কিছু ভেবেছ কি?" পরীর ধরা গোল শুনে অভির ওর কাঁধে হাত দেয়। পরী থাকতে না পেরে অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে মুখ গুঁজে ভয়ে কেঁপে ওঠে, "আমার জানো, মাঝে মাঝে খুব ভয় করে, জানি না কি হবে।"
অভি ওর মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে বলে, "কিছু হবে না, ভয় নেই, আমি আছি।"
অরুনা পরীকে বেড়িয়ে যেতে দেখে কিছু পরে কল্যাণী কে নিয়ে বাইরে আসে। এসে দেখে যে পরী অভিকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। পরী ওদের দেখে অভিকে ছেড়ে দাঁড়ায় আর চোখের কোল মুছে নেয়। অরুনা প্রশ্নভরা চাহনি নিয়ে পরীর দিকে তাকায়। পরী মাথা নাড়িয়ে জানায় যে কিছু হয়নি। অরুনার সে কথা বিশ্বাস হয় না, পরীকে জিজ্ঞেস করে, "সত্যি যদি কোন কিছু না হয়ে থাকে তাহলে তুমি কাঁদছ কেন?"
অভি ওকে নিশ্চিন্ত করে বলে, "তুই এসব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে আনন্দ কর, বুঝলি।"
রাত ন’টা নাগাদ ওরা সবাই সেই দূর পাহাড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সবাই বেশ হাল্কা জামাকাপড় পরে, রিতিকা একটু বেশি হাল্কা জামা কাপড় পরে। সুপ্রতিমদা আর অভি বারমুডা আর টিশার্ট গায়ে গলিয়ে নিয়েছে। দিল্লী ছাড়ার আগে ওরা পাঁচ বোতল ভদকা আর পাঁচ ক্যারেট বিয়ারের ক্যান কিনে নিয়েছিল, পরী তাতে একটু বিরক্ত হয়ে উঠেছিল, কিন্তু যেহেতু সবাই আনন্দে মেতে তাই অল্প সাবধান করে দিয়েছে অভিকে। সুপ্রতিমদার গাড়িতে মাঝের সিটে রিতিকা আর অরুনা বসে আর ওরা দুজনে বিয়ার পেছনে বসে, নতুন ড্রাইভার আমজাদ গাড়ি চালাচ্ছিল। পরী অভিকে বলে যে ও রাত টুকু কল্যাণী আর রানীদের সাথে ইনোভায় যাবে যাতে ওরা নিজেদের পৃথক না ভাবে। পরীর কথায় বল্বিন্দার ওদের গাড়ি চালায়।
অরুনা যথারীতি চুপচাপ বসে, রিতিকা আর ওরা বেশ গল্পে মেতে ওঠে। দিল্লী ছাড়িয়ে বেড়িয়ে পরতেই গাড়ি দ্রুত গতিতে ধেয়ে চলে, সামনে ইনোভা আর পেছনে সাফারি। বিয়ারের ফলে অভি আর সুপ্রতিমদার নেশা লাগে, বেশ একটু ঝিমঝিম পায়। অভি সুপ্রতিমদাকে বলে যে একটা সিগারেট দরকার। কিছু দূর গিয়ে গাড়ি থামায় বল্বিন্দার। দু’জনেই গাড়ি থেকে নেমে একটা করে সিগারেট ধরিয়ে টান দেয়।
অরুনা এর মধ্যে নেমে এসে অভিকে বলে, "আমার ঘুম ঘুম পাচ্ছে। আমাকে ওই ইনোভায় পাঠিয়ে দিবি, প্লিস?"
অভি, "তোর ঘুম পাচ্ছে ত এখানে ঘুমিয়ে পর না।"
অরুনা অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমার ভালো লাগছে না, আমি শুচিদির কাছে যাবো।"
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে অরুনার ঝাপসা হয়ে আসা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, "ঠিক আছে আমি ওকে এই গাড়িতে আস্তে বলব খানে।"
বল্বিন্দার গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা সামনের গাড়িকে ধরে ফেলল। গাড়ি থামিয়ে অভি পরীকে ওদের গাড়িতে আসতে বলে।
পরী কারন জিজ্ঞেস করাতে অভি একটু বিরক্ত হয়ে বলে, "আমাদের গাড়িতে এসে অরুনাকে সামলাও, ওর আবার মন কেমন করছে। ওকে সামলানোর দায়িত্ব তোমার, আমাকে যদি এই রকম অবস্থায় ফেলে যাও তাহলে দেখে নিও।"
পরী গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে ওদের গাড়িতে চেপে যায়। অরুনাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, অরুনা চুপ করে ওর মুখের দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। পরীর বুঝতে দেরি হয় না যে ওর মনে আবার সেই পুরানো বেদনা জেগে উঠেছে। পরী ওর মাথা জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে, কিছুক্ষণের মধ্যেই অরুনা ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে।
অভি দুই ড্রাইভারকে সোজা চায়েল নিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। সুপ্রতিমদা আর অভি সাফারির পেছনের সিটে বসে ঘুম লাগায়।
সকাল সাড়ে দশ’টা নাগাদ ওরা চায়েল পৌঁছে যায়। ছোট্ট শহর চায়েলের উচ্চতা বেশি নয়, চারদিকে সবুজে ঢাকা পাহাড়। চায়েলের আবহাওয়া বেশ মনোরম, চারদিকে উঁচু উঁচু পাইন, কেদার, শাল দেবদারুর বন। হোটেলে ওরা দুটো রুম নিয়ে নেয় একটু বিশ্রাম নেবার জন্য। সারা রাত ধরে ড্রাইভার গাড়ি চালিয়েছে তাই ঠিক করা হল যে দুপুরে খাওয়ার পরে ওর চায়েল ছেড়ে বের হবে।
দুপুরে একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে আবার বেড়িয়ে পরে সবাই। এবারে অভির হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং, পাশে পরী। সুপ্রতিমদা, রিতিকা আর অরুনা পেছনের সিটে বসে। পরীর মুখে সবাই সেই জায়গার গল্প শুনছে মন দিয়ে। পরীর বর্ণনা শুনে সবাই মুগ্ধ, রাস্তা ঘাটা যেন পরীর এত চেনা যে মনে হয় ও এখানে সবসময়ে ঘুরতে আসে।
পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা আমরা কি শতদ্রু নদীর তীরে দাঁড়াবো?"
অভি, "না এবারে নয়, কল্পা বাঁ রেকং পিও পৌছাতে দেরি হয়ে যাবে, বেবি।"
পরী, "ভিমাকালি মন্দিরে নিয়ে যাবে না?"
অভি, "বেবি, কি করে হবে? আমাদের হাতে সময় কম।"
পরী একটু মনমরা হয়ে বলে, "কেন সময় কম, আমাদের হাতে ত অনেক সময় আছে। তাহলে চলো না আজ রাতে চিতকুলে থেকে যাই আমরা।"
কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাতে অসুবিধে হচ্ছিল অভির, চেঁচিয়ে ওঠে পরীর দিকে, "তুমি কি আবার চিতকুলে গিয়ে গতবারের মতন ঝগড়া করতে চাও?"
পরী খিলখিল করে হেসে অভির গালে টোকা মেরে বলে, "না সোনা, এবারে আর ঝগড়া করব না। কিন্তু বাকিদের কথা বলতে পারছিনা, অভি।"
সুপ্রতিমদা অভিকে জিজ্ঞেস করে, "কিরে, আমরা কি শেষ পর্যন্ত চিতকুল যাচ্ছি নাকি?"
পরী অভির হয়ে উত্তর দিল, "হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা চিতকুল যাচ্ছি। আমাদের হাতে অনেক সময় আছে আমরা আরামসে চিতকুলে দুই দিন কাটাতে পারি।" পরী অভির দিকে মিষ্টি হেসে চোখ টেপে।
রিতিকা আর সুপ্রতিমদা একসাথে বলে ওঠে, "কিন্তু চিতকুল ত আমাদের পথে ছিলে না, তাহলে?"
পরী, "কেন তোমরা ছেলেরাই ত বলেছিলে যে, ঘুরতে গিয়ে যদি এডভেঞ্চারের গন্ধ না পাও তাহলে ঘোরা আর ঘোরা কি। চলো এক নতুন দুর্গম জায়গায়, সেটাও এক রকমের এডভেঞ্চার বইকি।"
অরুনা অভিকে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে, তোরা কেন চিতকুলে গিয়ে ঝগড়া করেছিলিস?"
পরী পেছনে অরুনার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে উত্তর দেয়, "ধৈর্য ধর আর দেখ। চিতকুল পৌঁছে সব বুঝতে পারবি আমরা কেন ঝগড়া করেছিলাম।"
পরীর সেই শয়তানি হাসি আর চোখের ভাব দেখে অভির যেন ভেতরটা গলে গেল। সেই দুষ্টু হাসি ওকে মনে করিয়ে দিল সেই পুরানো দিনের কথা।
গাড়িতে তেল ভরানোর জন্য ওরা জিওরিতে থামে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে একটু হাটাহাটি করে, এতক্ষণ বসে বসে সবার পা ধরে গেছে। সবাই পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে যায়। হাইওয়ের পাশ দিয়ে শতদ্রু নদী বয়ে চলেছে। গতবারের চেয়ে এবারে রাস্তার অবস্থা একটু যেন ভালো। তেল ভরানোর পরে সুপ্রতিমদার সাথে গিয়ে, পরী পয়সা মিটিয়ে দিল।
অরুনা আর রিতিকা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে সত্যি কি আমরা চিতকুলে যাচ্ছি?"
অভি ম্লান হেসে উত্তর দেয়, "আমাকে জিজ্ঞেস করে কি লাভ আছে। তোমরা কি জানো না যে প্রানীদের মধ্যে মানুষ হচ্ছে সব থেকে বিপ্পজন্নক আর মানুষের মধ্যে তোমরা, মেয়েরা সব থেকে মারাত্মক। তোমাদের কথা না মানলে ত মহাভারত উলটে দেবে, তাই না।"
সুপ্রতিমদা পরীকে জিজ্ঞেস করে যে কখন ওরা চিতকুল পৌঁছাবে, পরী অভির দিকে তাকায়। অভি ঘড়ি দেখে অনুমান করে যে চিতকুল পৌছাতে ওদের রাত আটটা বেজে যাবে।
পরীকে বলে, "তুমি রাস্তার অবস্থা জানো, তা সত্তেও কেন ওদের নিয়ে চিতকুল যাবার জন্য জেদ করছ, সোনা?"
পরী অভির একদম কাছে এসে, বুকের ওপরে হাত রেখে মুখ উঁচু করে নেয়। ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস অভির সারা মুখের ওপরে বয়ে যায়, মিষ্টি লালা ঠোঁটের কাতর আহবান অভি প্রত্যাখান করতে পারে না। পরীর কোমর জড়িয়ে ঠোঁট নামিয়ে নিয়ে আসে আর পরী ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মধুর সুরে বলে, "আমার একটা কথা রাখবে না, সোনা?"
অভি ঠোঁট নিচে নামিয়ে বলে, "এটা কিন্তু ব্লাকমেইল করা হচ্ছে বেবি।"
অভি পরীর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে যায়, পরী সবার দিকে চেঁচিয়ে বলে ওঠে, "আমরা চিতকুল যাচ্ছি।"
বলেই অভির হাতের বাঁধন ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। অভির দিকে মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে ইশারায় বলে, "ওই চুমুটা পাওয়ার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে, সোনা।"
গাড়িতে উঠে অভি, চিতকুলের হোটেলের ম্যানেজারের ফোন নাম্বার খুঁজে টাকে ফোন করে জানিয়ে দিল পাঁচটা রুম বুক করার কথা। ম্যানেজার রাতের খাবারের কথা জিজ্ঞেস করাতে অভি বাকি সবাই কে জিজ্ঞেস করে রাতের খাওয়ার ব্যাপারে। সবাই আঁতকে ওঠে যে বিকেল বেলায় রাতের খাবার। পরী ওদের জানায় যে চিতকুল পৌঁছতে পৌঁছতে অনেক রাত হয়ে যাবে আর যেখানে যাচ্ছে সেখানে গিয়েই বুঝতে পারবে কেন রাতের খাবারের কথা এত তাড়াতাড়ি অর্ডার দেওয়া হচ্ছে।
রকছাম ব্রিজ পৌঁছতে সন্ধ্যে নেমে এল। অভি মনে মনে একটু ভয় নিয়েই পরীর দিকে তাকাল, পরী হেসে ওকে আসস্থ দেয় যে এবারে ও আর রাগবে না। অরুনা গাড়ি দাঁড় করাতে অনুরধ করে নিচে নেমে নদী দেখতে চায়। গাড়ি দাঁড়াতেই সবাই নেমে নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে থাকে। এর মাঝে সুপ্রতিমদা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে যে ওর গাড়ি চালাতে অসুবিধে হচ্ছে কিনা। অভি হেসে বলে যে পরী যতক্ষণ ওর পাশে আছে ততক্ষণ ওর শরীরে ক্লান্তি আসতে পারেনা।
সুপ্রতিমদা ওর মাথায় চাঁটি মেরে বলে, "শালা, আজ রাতে তাহলে এক প্যাকেট কন্ডম শেষ করবি।"
অভি, "এমন বলছিস যেন তুই হাতে ধরে নাড়াবি। শালা তুই কি থেমে থাকবি নাকি?" সিগারেট জ্বালিয়ে দুজনেই হেসে ফেলে।
বল্বিন্দার এর মাঝে এসে জিজ্ঞেস করে অভিকে যে ওই রাস্তায় চালাতে পারবে কিনা। রাত ঘনিয়ে আসে, অভি বড় এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলে যে ও চালাতে পারবে। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে, অভির পাশে সুপ্রতিমদা বসে। খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে শুরু করে অভি, সঙ্কীর্ণ পাহাড়ি রাস্তায় রাতের অন্ধকারে গাড়ি ধিরে ধিরে উঠতে শুরু করে। কিছু দুরে দুরে অন্ধ বাঁক, সামনে থেকে কোন গাড়ি না আসাতে গাড়ি চালাতে বিশেষ অসুবিধে হয় না। পাথুরে রাস্তায় গাড়ি দোল খায়, অরুনা আর রিতিকার ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসে। পরীর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকায় দুই মেয়ে, জিজ্ঞেস করে যে ওরা ঠিক রাস্তায় যাচ্ছে কি না। পরী ওদের অভয় প্রদান করে, আয়নায় অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে, মনে পরে যায় প্রথম বার যখন পরী এখানে এসেছিল তখন ও ঝগড়া করেছিল অভির সাথে।
রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ওর সবাই চিতকুল পৌঁছে যায়। গাড়ি সোজা হোটেলে নিয়ে যায় অভি। ম্যানেজার পরী আর অভিকে দেখে চিন্তে পেরে যায় আর ওদের থাকার জন্য রুম দেখিয়ে দেয়। ম্যানেজার জানায় যে রাতের খাবার একদম তৈরি, ওরা যেন খাওয়ার আগে একটু খবর দেয়।