27-02-2019, 05:40 PM
রম্ভার বাঁশি
দু’দিন পরে সকাল বেলায় এক অপ্রত্যাশিত ফোন এল। বাবা মা দুজনেই কাজে বেড়িয়ে গেছেন, অভি কিছুক্ষণের মধ্যে কলেজের জন্য বের হবে। ঠিক এমন সময়ে ফোন বেজে ওঠে।
ওপার থেকে তুলির গলা, "একদম ভুলে গেছ না আমাকে?"
অভি, "না ভুলবো কেন, সবে মাত্র দু’দিন কেটেছে।"
তুলি, "তুমি আমার সাথে দেখা করতে পার?"
অভি, "মানে? কোথায়?"
তুলি, "মানে বাইরে কোথাও। তুমি ভবানিপুর মেট্রো স্টেসানে আসতে পার, ঠিক দুটো নাগাদ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকব গেটের কাছে।"
অভি, "ঠিক আছে, আসব।"
কলেজে গিয়ে অরুনাকে অরুনিমার কথা বলল। সব শুনে অরুনা রেগে গেল অভির উপরে, "তুই একটা শয়তান কুত্তা। তোর কোন বোধ জ্ঞান নেই, শুচিস্মিতার কি হবে?"
অভি মজা করে বলল, "অয়ান ডে ম্যাচ দেখা যাক না কি হয়। ক্রিকেটে যারা টেস্ট ম্যাচ খেলে তারা কি অয়ান ডে খেলে না?"
অরুনা রেগে গিয়ে বলল, "অভি, জীবন কিন্তু ক্রিকেট খেলা নয়, একটু সিরিয়াস হ।"
অভি ওর দিকে চোখ টিপে বলল, "আরে বাবা দাবার ছক সাজান, ঘুটি এগিয়ে গিয়েছে, পরের চাল আমার। আমাকে দেখতে হবে এই খেলার শেষ কোথায় কেননা আমি বুঝতে পারছি যে এর পেছনে অন্য কোন গুড় মতলব আছে আমি তাঁর শেষ দেখতে চাই।" বিশেষ কিছু খোলসা করে না বলে বলল, "সাপ আর ঈগলের খেলা, অরুনা, দেখা যাক কে যেতে।"
অরুনা জিজ্ঞেস করে, "কে সাপ আর কে ঈগল?"
অভি, "অবশ্যই আমি ঈগল।"
তর্জনী তুলে ওকে সাবধান করে বলে অরুনা, "অভি, আগুন নিয়ে খেলিস না। খুব সাঙ্ঘাতিক কিছুর গন্ধ পাচ্ছি আমি। তুই যদি হাত পুড়িয়ে আমার কাছে আসিস তাহলে কিন্তু আমি তোর পিঠের চামড়া নামিয়ে দেব, তারপরে অবশ্য ওই পিঠে আবার বারনল লাগিয়ে দেব।"
দাবার ছকে ঘুঁটি বসানো, চাল একদিকে চেলে দিয়েছে, এখন অভির অপেক্ষায়। অভি ঠিক সময়ে মেট্রো স্টেসানে পৌঁছে যায়। তুলি ওর জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে সাদা জিন্স নীল টপ, জিন্স টা যেন তুলির কোমরের নিচে চামড়ার সাথে লেপটে আছে, টপের অবস্থা সেই রকম। কাঁধে একটা ব্যাগ, দেখে মনে হল কলেজ পালিয়ে এসেছে।
অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, "কি কলেজ পালানো হয়েছে নাকি? তা কোথায় যেতে চাও?"
তুলি ওকে দেখে হেসে বলল, "রবীন্দ্র সরবোর যাবে?"
অভি, "নাহ, অসব জায়গায় আমি যাই না, শুধু জোড়ায় জোড়ায় ছেলে মেয়েরা বসে থাকে ওখানে, আমার কেমন বিরক্ত বোধ হয় ওই সব জায়গায়।"
তুলি, "ত বন্ধুদের সাথে তুমি কোথায় যাও?"
অভি, "কফি হাওস না হলে এস্প্লানেড না হলে ফ্লুরিস। তুমি কোথায় যেতে চাও বল?"
তুলি, "নন্দন যাবে?" সারা টা বিকেল ওরা দু’জনে নন্দনে গল্প করে কাটিয়ে দিল। অভি খুব সন্তর্পণে নিজের কথা চেপে গেল, গল্প কিছু এদিক ওদিক বিষয়ে চলল।
ঘন্টা থেকে দিন কেটে গেল। অভির আর তুলির মাঝে এক নতুন সম্পর্ক তৈরি হল। রাতে অভি চিন্তা করে যে কি চায় তুলি, কিন্তু তুলি যেন খুব সতর্ক মেয়ে, ওর চাল অভিকে বুঝতে দেয় না আর অভিও নাছরবান্দা, প্রন করেছে যে এই সম্পকের শেষ কি। তুলির বাঁশির শুর অভিকে মোহিত করে দিয়েছে, অভি অজান্তেই কখন যে নিজেকে ধরা দিয়ে দিয়েছে সেটা আর টের পায়না। অভি ওর ব্যাপারে বেশ কিছু কথা জানতে পারল, যেমন তুলি গান শুনতে খুব ভালবাসে, সমুদ্র আর বিচ ভালবাসে, ইংরাজি রোম্যান্টিক সিনেমা ভালবাসে। অভির ও গান ভাললাগে, সেই শুনে একদিন তুলি ওকে একটা সোনি অয়াকম্যান উপহার দিল। মান্না দের গান অভির খুব প্রিয়, অভি বেশির ভাগ সময়ে অয়াকম্যানটা কলেজের ব্যাগে রেখে দিত।
কলেজে অরুনার সাথে দেখা হলেই অরুনা হেসে জিজ্ঞেস করত ওর কথা। অরুনা দিনে দিনে অভির চালচলনে পরিবর্তন দেখে মনক্ষুণ্ণ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে অরুনার অভির ওপরে খুব রাগ হয়, কিন্তু অভির মেজাজ দেখে কিছু বলে না।
একদিন অভি অরুনাকে বুঝাতে চেষ্টা করে, "দ্যাখ ভাই, আমি অরুনিমার পেছনে পরে নেই, চিন্তা করিস না।"
অরুনা ওর দিকে প্রশ্ন ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুই নিজেকে জিজ্ঞেস করে উত্তর দিচ্ছিস ত?"
অরুনার চোখের চাহনি যেন অভিকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিল, "তুই বুকের ওপরে হাত রেখে আমাকে উত্তর দে, আমি বিশ্বাস করে নেব।"
অভি পারেনা বুকে হাত রেখে উত্তর দিতে, তাও অরুনাকে শান্ত করার জন্য বলে, "দ্যাখ আমি পরীকেই ভালবাসি। পরীর প্রতি আমার ভালবাসায় কোন ভাটা পরেনি। আমি শুধু এই খেলার শেষ দেখতে চাই, আমি জানতে চাই ওদের মাথায় কি চলছে।"
অরুনা, "কেন তোর জেনে কি হবে?"
অভি, "দ্যাখ, আমি আগেই সুব্রত আর মৈথিলীকে জানিয়েছিলাম যে আমি একজন কে ভালবাসি। সেটা জানার পরেও ওরা আমাকে তুলির সাথে দেখা করতে বলে। আমি হলফ করে বলতে পারি যে তুলিও জানে যে আমি একজন কে ভালবাসি। সবকিছু জানার পরেও যে তুলি আমার সাথে খেলে যাচ্ছে তার আমি শেষ দেখব না? এর পেছনে সুব্রত বা মৈথিলীর হাত আছে, সেটা আমি জানতে চাই।"
অভি খুব চেষ্টা করে মৈথিলীর ব্যাপারে জানার জন্য, কিন্তু চালাক মেয়ে তুলি, ঘুণাক্ষরেও অভিকে ওদের অভিপ্রায় জানায় না। একদিন অভি আর থাকতে না পেরে সোজা তুলিকে চুরনির কথা জিজ্ঞেস করে।
অভি, "তুলি, তোমাকে যখনি আমি চুরনির কথা জিজ্ঞেস করি, তখনি তুমি এড়িয়ে যাও আমার প্রশ্ন। কেন?"
তুলি, "তুমি দিদির ব্যাপারে কেন জানতে চাও? ওর ত বিয়ে হয়ে গেছে।"
অভি একবার ভাবে যে তুলিকে বলে সেই রাতের ঘটনা কিন্তু চেপে যায় অভি।
তুলি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে এক দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমার কি দিদিকে খুব পছন্দ হয়েছে।"
একি প্রশ্ন করল, জোরে মাথা নাড়ায় অভি, "না না না... একদম না।"
তুলি চোখ টিপে বলে, "সত্যি করে বল, দিদিকে তোমার খুব পছন্দ?"
অভি, "এই প্রশ্ন কেন করছ? আমি এমনি চুরনির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছি, আর কিছু না। যেদিন তোমাকে তোমার বাড়িতে ছেড়ে এসেছিলাম সেদিন তুমি বলেছিলে যে তুমি আর চুরনি খুব ক্লোস রিলেসান সেয়ার করো, তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম।"
তুলি, "তাহলে তুমি আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে চাও?" চোখ টিপে তুলি উত্তর দিল, "হ্যাঁ আমাদের দুজনে মাঝে খুব কাছের এক সম্পর্ক আছে। আমরা দুজনে সব কিছু ভাগ ভাগ করে নেই।"
চশমার পেছন থেকে অভি ওদের মাঝের সম্পর্কের ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করে।
তুলি, "ওইরকম করে কেন দেখছ। বললাম ত চুরনি আমার দিদি আর ও আমাকে ওর সব কথা বলে আর আমি ওকে আমার সব কথা বলি। দুজনের মাঝে আমরা কিছুই লুকিয়ে রাখি না।"
অভি, "হুম বেশ ভাল কথা, জেঠতুত খুড়তুত বোনেদের মধ্যে এই রকম সম্পর্ক খুব কম দেখেছি।"
তুলি এর চেয়ে বেশি আর কিছু জানায় না অভি কে।
অভি সামনে বসা গোলাপের কুঁড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। দৃষ্টি বারে বারে ওর বুকের দিকে চলে যায়, পাতলা হলেও বেশ সুন্দর গঠন তুলির। দেখে মনে হয় যেন, নব্য অঙ্কুরিত এক ধানের শিষ, এখন দলিত হয়নি কারুর ছোঁয়ায়। ঠোঁটে সর্বদা এক মিষ্টি হাসির প্রলেপ লাগান থাকে, দু’চোখ যেন অত্যধিক কথা বলে।
চুরনিকে দেখতে অনেক আলাদা। চুরনির চেহারা অনেক বেশি নধর আর কামনাময়ি। অভি ওর কামুক চিন্তায় চুরনিকে নগ্ন করে পড়িয়ে দেয় সুব্রতর দেওয়া সেই লাল রঙের বিকিনি। খোলা চোখের সামনে চুরনির ছোট্ট লাল বিকিনি পরিহিত আকর্ষণীয় শরীর দেখতে পায়। মাথার মধ্যে যেন কামনার আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। না অভির মনে চুরনির প্রতি কোন ভালবাসা নেই আছে শুধু কামনার আগুন, চুরনিকে নিংড়ে নেবার প্রচন্ড লিপ্সা।
হটাত তুলি অভিকে জিজ্ঞেস ক্করে, "আচ্ছা একটা কথা মাকে বলবে?"
অভি, "কি কথা।"
তুলি, "আমাকে তোমার কেমন মনে হয়?"
অভি ওদের দু বোনের কাউকেই ভালবাসে না, মনের মধ্যে একটা প্রচন্ড খিদের উদ্রেক হয়, এই দুই কামতারিত নারীর যৌবন সুধা পান করার জন্য। মনের ভাব অতি সন্তর্পণে লুকিয়ে নেয় অভি।
চোখে চোখ রেখে মিথে বলে অভি, "হুম মানে হ্যাঁ একটু, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা জানি না।"
ওর কথা শুনে হাসি ফুটে ওঠে তুলির ঠোঁটে, "বর্তমান টাকে আনন্দে বাঁচ অভি, ভবিষ্যৎ কে দেখেছে।"
ওদিকে অরুনা বুঝতে পারে অভির আর তুলির মাঝের সম্পর্ক। নিজেকে ধিরে ধিরে অভির কাছ থেকে দুরে সরিয়ে নেয় অরুনা। অভিকে দেখে খুব কষ্ট হয় ওর, কিছুতেই কথা শুনছে না অভি। পরী রাতের বেলা স্বপ্নে দেখা দেয় কিন্তু আজকাল সেই স্বপ্ন যেন অনেক দুরের মরিচিকার মতন মনে হয় অভির।
তুলির সাতে দেখা হওয়ার প্রায় দিন বারো কেটে গেছে। এক মঙ্গলবারে তুলি রাতে অভিকে ফোন করে।
তুলি, "হ্যালো অভি।"
অভি, "হ্যাঁ বল, কিছু জরুরি আছে নাকি?"
তুলি, "না মানে হ্যাঁ। কাল বিকেলে আমি বাড়িতে একটা ছোট্ট পার্টি দিচ্ছি। তাই আমি চাই যে তুমিও এস আমার পা+টিতে।"
অভি, "কি খুশিতে পার্টি।"
তুলি, "কিছু না, এমনি এমনি পা+টি। তুমি আমি আর আমার কিছু কাছের লোকজন।"
কেন তুলি একা নয় বাড়িতে, কেন তুলিকে একা পেতে পারেনা, একবার একবার একা পেলে কি করবে অভি। না আর ভাবতে পারে না অভি, ও যেন এক অতল অন্ধকার গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে।
অভি, "তুমি একা নিশ্চয় থাকবে না, তাই ত?"
তুলির হাসি কানে আসে, "তুমি কি চাও আমি বাড়িতে একা থাকি?"
অভি, "না মানে আমি চাই না, এমনি জিজ্ঞেস করলাম।"
তুলি, "তাহলে গুড নাইট, ভালো থেক। কাল বিকেলে ঠিক পাচটায় আমার বাড়িতে। তোমাকে আমি নিরাশ করব না, তোমার স্বপ্ন পূরণ হবে।"
রাতের খাবার পরে ছাদে একা একা দাঁড়িয়ে থাকে অভি। একমনে আকাশ দেখে, বসন্তের আকাশে মেঘ কিছু কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দূর আকাশের কোলে একটা ছোট্ট নৌকা দেখতে পেল, নৌকাটি একটা ছোট্ট দ্বিপের দিকে বেয়ে আসছে। সেই দ্বীপের তীরে এক মোহময়ি নারী একটা গাছের গুঁড়ির ওপরে বসে খুব সুন্দর বাঁশি বাজাচ্ছে। বাঁশির সুর ওকে যেন এক অধভুত মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যে নৌকা চালাচ্ছে সে অভির দিকে তাকাল, অভি অবাক হয়ে গেল নিজেকে নৌকায় দেখে। দিগন্তের দিকে তাকাল অভি, আকাশে চাঁদ এবং সূর্য দুটোই পশ্চিম আকাশে দিগন্তের কোলে হারিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুটো খগোল বস্তুর আলো বড় ম্লান, অভির নৌকা যত ওই দ্বিপের কাছে যায়, আলো যেন আরও ম্লান হয়ে আসে।
দু’দিন পরে সকাল বেলায় এক অপ্রত্যাশিত ফোন এল। বাবা মা দুজনেই কাজে বেড়িয়ে গেছেন, অভি কিছুক্ষণের মধ্যে কলেজের জন্য বের হবে। ঠিক এমন সময়ে ফোন বেজে ওঠে।
ওপার থেকে তুলির গলা, "একদম ভুলে গেছ না আমাকে?"
অভি, "না ভুলবো কেন, সবে মাত্র দু’দিন কেটেছে।"
তুলি, "তুমি আমার সাথে দেখা করতে পার?"
অভি, "মানে? কোথায়?"
তুলি, "মানে বাইরে কোথাও। তুমি ভবানিপুর মেট্রো স্টেসানে আসতে পার, ঠিক দুটো নাগাদ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকব গেটের কাছে।"
অভি, "ঠিক আছে, আসব।"
কলেজে গিয়ে অরুনাকে অরুনিমার কথা বলল। সব শুনে অরুনা রেগে গেল অভির উপরে, "তুই একটা শয়তান কুত্তা। তোর কোন বোধ জ্ঞান নেই, শুচিস্মিতার কি হবে?"
অভি মজা করে বলল, "অয়ান ডে ম্যাচ দেখা যাক না কি হয়। ক্রিকেটে যারা টেস্ট ম্যাচ খেলে তারা কি অয়ান ডে খেলে না?"
অরুনা রেগে গিয়ে বলল, "অভি, জীবন কিন্তু ক্রিকেট খেলা নয়, একটু সিরিয়াস হ।"
অভি ওর দিকে চোখ টিপে বলল, "আরে বাবা দাবার ছক সাজান, ঘুটি এগিয়ে গিয়েছে, পরের চাল আমার। আমাকে দেখতে হবে এই খেলার শেষ কোথায় কেননা আমি বুঝতে পারছি যে এর পেছনে অন্য কোন গুড় মতলব আছে আমি তাঁর শেষ দেখতে চাই।" বিশেষ কিছু খোলসা করে না বলে বলল, "সাপ আর ঈগলের খেলা, অরুনা, দেখা যাক কে যেতে।"
অরুনা জিজ্ঞেস করে, "কে সাপ আর কে ঈগল?"
অভি, "অবশ্যই আমি ঈগল।"
তর্জনী তুলে ওকে সাবধান করে বলে অরুনা, "অভি, আগুন নিয়ে খেলিস না। খুব সাঙ্ঘাতিক কিছুর গন্ধ পাচ্ছি আমি। তুই যদি হাত পুড়িয়ে আমার কাছে আসিস তাহলে কিন্তু আমি তোর পিঠের চামড়া নামিয়ে দেব, তারপরে অবশ্য ওই পিঠে আবার বারনল লাগিয়ে দেব।"
দাবার ছকে ঘুঁটি বসানো, চাল একদিকে চেলে দিয়েছে, এখন অভির অপেক্ষায়। অভি ঠিক সময়ে মেট্রো স্টেসানে পৌঁছে যায়। তুলি ওর জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে সাদা জিন্স নীল টপ, জিন্স টা যেন তুলির কোমরের নিচে চামড়ার সাথে লেপটে আছে, টপের অবস্থা সেই রকম। কাঁধে একটা ব্যাগ, দেখে মনে হল কলেজ পালিয়ে এসেছে।
অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, "কি কলেজ পালানো হয়েছে নাকি? তা কোথায় যেতে চাও?"
তুলি ওকে দেখে হেসে বলল, "রবীন্দ্র সরবোর যাবে?"
অভি, "নাহ, অসব জায়গায় আমি যাই না, শুধু জোড়ায় জোড়ায় ছেলে মেয়েরা বসে থাকে ওখানে, আমার কেমন বিরক্ত বোধ হয় ওই সব জায়গায়।"
তুলি, "ত বন্ধুদের সাথে তুমি কোথায় যাও?"
অভি, "কফি হাওস না হলে এস্প্লানেড না হলে ফ্লুরিস। তুমি কোথায় যেতে চাও বল?"
তুলি, "নন্দন যাবে?" সারা টা বিকেল ওরা দু’জনে নন্দনে গল্প করে কাটিয়ে দিল। অভি খুব সন্তর্পণে নিজের কথা চেপে গেল, গল্প কিছু এদিক ওদিক বিষয়ে চলল।
ঘন্টা থেকে দিন কেটে গেল। অভির আর তুলির মাঝে এক নতুন সম্পর্ক তৈরি হল। রাতে অভি চিন্তা করে যে কি চায় তুলি, কিন্তু তুলি যেন খুব সতর্ক মেয়ে, ওর চাল অভিকে বুঝতে দেয় না আর অভিও নাছরবান্দা, প্রন করেছে যে এই সম্পকের শেষ কি। তুলির বাঁশির শুর অভিকে মোহিত করে দিয়েছে, অভি অজান্তেই কখন যে নিজেকে ধরা দিয়ে দিয়েছে সেটা আর টের পায়না। অভি ওর ব্যাপারে বেশ কিছু কথা জানতে পারল, যেমন তুলি গান শুনতে খুব ভালবাসে, সমুদ্র আর বিচ ভালবাসে, ইংরাজি রোম্যান্টিক সিনেমা ভালবাসে। অভির ও গান ভাললাগে, সেই শুনে একদিন তুলি ওকে একটা সোনি অয়াকম্যান উপহার দিল। মান্না দের গান অভির খুব প্রিয়, অভি বেশির ভাগ সময়ে অয়াকম্যানটা কলেজের ব্যাগে রেখে দিত।
কলেজে অরুনার সাথে দেখা হলেই অরুনা হেসে জিজ্ঞেস করত ওর কথা। অরুনা দিনে দিনে অভির চালচলনে পরিবর্তন দেখে মনক্ষুণ্ণ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে অরুনার অভির ওপরে খুব রাগ হয়, কিন্তু অভির মেজাজ দেখে কিছু বলে না।
একদিন অভি অরুনাকে বুঝাতে চেষ্টা করে, "দ্যাখ ভাই, আমি অরুনিমার পেছনে পরে নেই, চিন্তা করিস না।"
অরুনা ওর দিকে প্রশ্ন ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুই নিজেকে জিজ্ঞেস করে উত্তর দিচ্ছিস ত?"
অরুনার চোখের চাহনি যেন অভিকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিল, "তুই বুকের ওপরে হাত রেখে আমাকে উত্তর দে, আমি বিশ্বাস করে নেব।"
অভি পারেনা বুকে হাত রেখে উত্তর দিতে, তাও অরুনাকে শান্ত করার জন্য বলে, "দ্যাখ আমি পরীকেই ভালবাসি। পরীর প্রতি আমার ভালবাসায় কোন ভাটা পরেনি। আমি শুধু এই খেলার শেষ দেখতে চাই, আমি জানতে চাই ওদের মাথায় কি চলছে।"
অরুনা, "কেন তোর জেনে কি হবে?"
অভি, "দ্যাখ, আমি আগেই সুব্রত আর মৈথিলীকে জানিয়েছিলাম যে আমি একজন কে ভালবাসি। সেটা জানার পরেও ওরা আমাকে তুলির সাথে দেখা করতে বলে। আমি হলফ করে বলতে পারি যে তুলিও জানে যে আমি একজন কে ভালবাসি। সবকিছু জানার পরেও যে তুলি আমার সাথে খেলে যাচ্ছে তার আমি শেষ দেখব না? এর পেছনে সুব্রত বা মৈথিলীর হাত আছে, সেটা আমি জানতে চাই।"
অভি খুব চেষ্টা করে মৈথিলীর ব্যাপারে জানার জন্য, কিন্তু চালাক মেয়ে তুলি, ঘুণাক্ষরেও অভিকে ওদের অভিপ্রায় জানায় না। একদিন অভি আর থাকতে না পেরে সোজা তুলিকে চুরনির কথা জিজ্ঞেস করে।
অভি, "তুলি, তোমাকে যখনি আমি চুরনির কথা জিজ্ঞেস করি, তখনি তুমি এড়িয়ে যাও আমার প্রশ্ন। কেন?"
তুলি, "তুমি দিদির ব্যাপারে কেন জানতে চাও? ওর ত বিয়ে হয়ে গেছে।"
অভি একবার ভাবে যে তুলিকে বলে সেই রাতের ঘটনা কিন্তু চেপে যায় অভি।
তুলি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে এক দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমার কি দিদিকে খুব পছন্দ হয়েছে।"
একি প্রশ্ন করল, জোরে মাথা নাড়ায় অভি, "না না না... একদম না।"
তুলি চোখ টিপে বলে, "সত্যি করে বল, দিদিকে তোমার খুব পছন্দ?"
অভি, "এই প্রশ্ন কেন করছ? আমি এমনি চুরনির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছি, আর কিছু না। যেদিন তোমাকে তোমার বাড়িতে ছেড়ে এসেছিলাম সেদিন তুমি বলেছিলে যে তুমি আর চুরনি খুব ক্লোস রিলেসান সেয়ার করো, তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম।"
তুলি, "তাহলে তুমি আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে চাও?" চোখ টিপে তুলি উত্তর দিল, "হ্যাঁ আমাদের দুজনে মাঝে খুব কাছের এক সম্পর্ক আছে। আমরা দুজনে সব কিছু ভাগ ভাগ করে নেই।"
চশমার পেছন থেকে অভি ওদের মাঝের সম্পর্কের ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করে।
তুলি, "ওইরকম করে কেন দেখছ। বললাম ত চুরনি আমার দিদি আর ও আমাকে ওর সব কথা বলে আর আমি ওকে আমার সব কথা বলি। দুজনের মাঝে আমরা কিছুই লুকিয়ে রাখি না।"
অভি, "হুম বেশ ভাল কথা, জেঠতুত খুড়তুত বোনেদের মধ্যে এই রকম সম্পর্ক খুব কম দেখেছি।"
তুলি এর চেয়ে বেশি আর কিছু জানায় না অভি কে।
অভি সামনে বসা গোলাপের কুঁড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। দৃষ্টি বারে বারে ওর বুকের দিকে চলে যায়, পাতলা হলেও বেশ সুন্দর গঠন তুলির। দেখে মনে হয় যেন, নব্য অঙ্কুরিত এক ধানের শিষ, এখন দলিত হয়নি কারুর ছোঁয়ায়। ঠোঁটে সর্বদা এক মিষ্টি হাসির প্রলেপ লাগান থাকে, দু’চোখ যেন অত্যধিক কথা বলে।
চুরনিকে দেখতে অনেক আলাদা। চুরনির চেহারা অনেক বেশি নধর আর কামনাময়ি। অভি ওর কামুক চিন্তায় চুরনিকে নগ্ন করে পড়িয়ে দেয় সুব্রতর দেওয়া সেই লাল রঙের বিকিনি। খোলা চোখের সামনে চুরনির ছোট্ট লাল বিকিনি পরিহিত আকর্ষণীয় শরীর দেখতে পায়। মাথার মধ্যে যেন কামনার আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। না অভির মনে চুরনির প্রতি কোন ভালবাসা নেই আছে শুধু কামনার আগুন, চুরনিকে নিংড়ে নেবার প্রচন্ড লিপ্সা।
হটাত তুলি অভিকে জিজ্ঞেস ক্করে, "আচ্ছা একটা কথা মাকে বলবে?"
অভি, "কি কথা।"
তুলি, "আমাকে তোমার কেমন মনে হয়?"
অভি ওদের দু বোনের কাউকেই ভালবাসে না, মনের মধ্যে একটা প্রচন্ড খিদের উদ্রেক হয়, এই দুই কামতারিত নারীর যৌবন সুধা পান করার জন্য। মনের ভাব অতি সন্তর্পণে লুকিয়ে নেয় অভি।
চোখে চোখ রেখে মিথে বলে অভি, "হুম মানে হ্যাঁ একটু, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা জানি না।"
ওর কথা শুনে হাসি ফুটে ওঠে তুলির ঠোঁটে, "বর্তমান টাকে আনন্দে বাঁচ অভি, ভবিষ্যৎ কে দেখেছে।"
ওদিকে অরুনা বুঝতে পারে অভির আর তুলির মাঝের সম্পর্ক। নিজেকে ধিরে ধিরে অভির কাছ থেকে দুরে সরিয়ে নেয় অরুনা। অভিকে দেখে খুব কষ্ট হয় ওর, কিছুতেই কথা শুনছে না অভি। পরী রাতের বেলা স্বপ্নে দেখা দেয় কিন্তু আজকাল সেই স্বপ্ন যেন অনেক দুরের মরিচিকার মতন মনে হয় অভির।
তুলির সাতে দেখা হওয়ার প্রায় দিন বারো কেটে গেছে। এক মঙ্গলবারে তুলি রাতে অভিকে ফোন করে।
তুলি, "হ্যালো অভি।"
অভি, "হ্যাঁ বল, কিছু জরুরি আছে নাকি?"
তুলি, "না মানে হ্যাঁ। কাল বিকেলে আমি বাড়িতে একটা ছোট্ট পার্টি দিচ্ছি। তাই আমি চাই যে তুমিও এস আমার পা+টিতে।"
অভি, "কি খুশিতে পার্টি।"
তুলি, "কিছু না, এমনি এমনি পা+টি। তুমি আমি আর আমার কিছু কাছের লোকজন।"
কেন তুলি একা নয় বাড়িতে, কেন তুলিকে একা পেতে পারেনা, একবার একবার একা পেলে কি করবে অভি। না আর ভাবতে পারে না অভি, ও যেন এক অতল অন্ধকার গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে।
অভি, "তুমি একা নিশ্চয় থাকবে না, তাই ত?"
তুলির হাসি কানে আসে, "তুমি কি চাও আমি বাড়িতে একা থাকি?"
অভি, "না মানে আমি চাই না, এমনি জিজ্ঞেস করলাম।"
তুলি, "তাহলে গুড নাইট, ভালো থেক। কাল বিকেলে ঠিক পাচটায় আমার বাড়িতে। তোমাকে আমি নিরাশ করব না, তোমার স্বপ্ন পূরণ হবে।"
রাতের খাবার পরে ছাদে একা একা দাঁড়িয়ে থাকে অভি। একমনে আকাশ দেখে, বসন্তের আকাশে মেঘ কিছু কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দূর আকাশের কোলে একটা ছোট্ট নৌকা দেখতে পেল, নৌকাটি একটা ছোট্ট দ্বিপের দিকে বেয়ে আসছে। সেই দ্বীপের তীরে এক মোহময়ি নারী একটা গাছের গুঁড়ির ওপরে বসে খুব সুন্দর বাঁশি বাজাচ্ছে। বাঁশির সুর ওকে যেন এক অধভুত মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যে নৌকা চালাচ্ছে সে অভির দিকে তাকাল, অভি অবাক হয়ে গেল নিজেকে নৌকায় দেখে। দিগন্তের দিকে তাকাল অভি, আকাশে চাঁদ এবং সূর্য দুটোই পশ্চিম আকাশে দিগন্তের কোলে হারিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুটো খগোল বস্তুর আলো বড় ম্লান, অভির নৌকা যত ওই দ্বিপের কাছে যায়, আলো যেন আরও ম্লান হয়ে আসে।