27-06-2020, 03:51 PM
(This post was last modified: 17-02-2021, 04:03 PM by kumdev. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
।।১৮।।
বেটারে নিয়ে মুমতাজের আর দুশ্চিন্তা নাই।বাড়ির পিছনে যে ঘরটা ছিল আবর্জনার স্তুপ মানুষটার ছোয়ায় ভোল বদলেছে। জঙ্গল সাফ করে বাগান করেছে।মনু সবসময় মাস্টারের সাথে থাকে। পরীক্ষায় অঙ্কে ভাল নম্বর করেছে। ওনার শেখানোর ঢংটা মনুর ভাল লেগেছে।যে কাজ করে আন্তরিকভাবে করে।মুমতাজের একটা ব্যাপারে খটকা লাগে।সুন্দরী হিসেবে তার বেশ খ্যাতি আছে অথচ লোকটা তার দিকে ফিরেও চায় না। ধর্ম বাঁধা হবার কথা না কেননা আম্মুর সাথে যেভাবে মেশে মনে হয়না ধর্ম ব্যাপারে কোন ছুৎমার্গ আছে।আম্মুর হাতের রান্না কি পরিতৃপ্তি করে খায়।এসব কথা সে কেন ভাবছে পরমুহূর্তে মনে হয় মুমতাজের।আর কয়দিন পর ইদ পরব।ইদ পরবে ফরজানার আসার কথা।ননদটা তার ভীষণ খেয়ালি ডানপিটে স্বভাবের। নিয়ম কানুনের ধার ধারেনা।ছাদে উঠে ঢিল ছোড়ে ফেরিওলার ঝুড়িতে। একবার একজনের গুড়ের হাড়ি ভেঙ্গেছিল উপর থেকে ঢিল ছুড়ে।ফাজলামি করে সবার সাথে,লঘুগুরু জ্ঞান নাই।মনু ওর ফুপার খুব ন্যাওটা।
বলদেব অফিসে গেছে। মানুষটারে বলদ-বলদ দেখতে হলেও কথা বলে ভারী সুন্দর।সায়েদের সাথে কথা বলে আড়াল থেকে শুনেছে।সায়েদ জিজ্ঞেস করেছিল এসব কথা কোথায় শিখলো।কয় কিনা পাঁচজনের সঙ্গে মিশে শিখেছে। নতুন অফিসে অল্পদিনে বেশ জনপ্রিয় বলদেব। সবাই সুযোগ নেয়,মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নেয়।কাজ করতে ভালবাসে,এই জন্য তৈয়ব আলির কাছে কথা শুনতে হয়।
--আল্লামিঞা তোমারে কি দিয়া গড়ছে?
--যা দিয়ে তোমাকে।
--লজ্জায় ফ্যালাইলে ভাই, তুমার লগে আমার তুলনা হয়না।
--কারো সাথে কারো তুলনা হয়না।ভগবানের এইখানে কেরামতি।
তোইয়ব আলির মুখে কথা সরেনা। মনে মনে সিদ্ধান্ত করে এই লোকটারে মানুষ করা যাবেনা।
তৈয়ব চলে যেতে ক্যাণ্টিনের দিকে যায়। হাতে কাজ নেই এক কাপ চা খেলে মন্দ হয়না। লেডিস বাথরুম থেকে শাড়ি ঠিক করতে করতে বেরোল মিনু উসমানি ম্যাডাম।পাছার কাছে রক্তের দাগ।
বলদেব অবাক হয়ে দেখছে মিনু ম্যাডাম জিজ্ঞেস করে, কিছু বলবে?
বলদেব বলবে কি বলবে না ভাবতে ভাবতে বলে, ম্যাডাম আপনের পাছায় রক্ত লেগে আছে।
মিনু ম্যাডাম চোখ পাকিয়ে পিছন দিকে দেখে অগ্নিবর্ষী দৃষ্টি হেনে বাথরুমে ঢুকে গেল।
বলদেব ভাবে যেচে উপকার করতে যাওয়া ঠিক হয় নাই।মা বলতো বলা কেউ কিছু না জিজ্ঞেস করলে বলবি না,কেউ কিছু করতে না বললে করবি না। বিমর্ষ মন নিয়ে ক্যাণ্টিনে চলে গেল।
ক্যাণ্টিনে বসে চা খেতে খেতে বলদেব অবাক হয়ে দেখে, মিনু ম্যাডাম চলে যাচ্ছে কিন্তু পিছনে রক্তের দাগ নাই।তাহলে কি সে ভুল দেখেছিল।বিষয়টা তার কাছে রহস্যময় মনে হয়।অবশ্য মেয়েরাই ঈশ্বরের রহস্যপূর্ণ সৃষ্টি।ম্যাডামের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।
চা খেয়ে আবার তার টুলে এসে বসে।মোজাম্মেল হক সাহেব অফিসে এসেছেন সাদা পায়জাম পাঞ্জাবি পরে। ভালই মানিয়েছে।মিনু ম্যাডাম মনে হয় রাগ করেছে।কোথা থেকে তৈয়ব এসে বলদেবের কলার ধরে টেনে দাড় করিয়ে দিল। দেখল সবাই দাঁড়িয়ে পড়েছে। ডিএম অফিসে ঢুকছেন।সবাই সলাম দিতে লাগল।ডিএম একটু দাড়ালেন,তারপর হক সাহেবের আপাদ মস্তক দেখে হেসে বললেন, আপনি কবি সম্মেলনে এসেছেন নাকি?
হক সাহেব কিছু বলার আগে ডিএম তার ঘরে ঢুকে গেলেন।বলদেব এই প্রথম ডিএমকে দেখল।পুরুষালি চেহারা।বুক দেখে বোঝা যায় মেয়েমানুষ।দীর্ঘদেহী শ্যামলা গায়ের রঙ।এখন বুঝতে পারে কেন মেয়ে মানুষের এত দাপট।ভাগ্যিস তোইয়ব খাড়া করে দিয়েছিল,সে তো ডিএম সাহেবরে দেখে নাই।সত্যিই তৈয়ব তার বন্ধু।
কোথায় মন্ত্রী আসতেছেন ত্রানসামগ্রী বিলি করতে হক সাহেবরে নিয়ে ডিএম সেইখানে চলে গেলেন।অফিসে আবার স্বস্তিরভাব ফিরে আসে।মিনু ম্যাডাম মাথা নীচু করে কাজ করছে। বলদেব ভাবে এখন গিয়ে চুপি চুপি ক্ষমা চেয়ে নেবে। বলদেব ম্যাডামের টেবিলের কাছে যেতে মিনুম্যাডাম চোখ তুলে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কিছু বলবে?
--আমারে ক্ষমা করে দিয়েন।
মিনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,কি ব্যাপারে?
--আমার পাছা বলা ঠিক হয় নাই কাপড়ে বলা উচিত ছিল।আমি তো পাছা দেখতে পাই নাই।
মিনু উস্মানি বিরক্ত হয়ে চোখ বুজে থাকে।উজবুকটা বলে কি? পাছা দেখতে পাই নাই।লোকটারে কি বলা যায়?কিছুক্ষন পর চোখ মেলে জিজ্ঞেস করে, তোমারে বলদা নাম কে দিছিল?
--জ্বি আমার প্রকৃত নাম বলদেব,লোকে বলে বলদা।
--লোকে ঠিকই বলে।
--আমি তো তাতে আপত্তি করি নাই। সেইটা লোকের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
--তুমি মহিলাদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয় জানোনা।
--শিখাইয়া দিলে শিখতে পারি।
--তুমি বিয়ে করেছো?
--জ্বি না।
--এইবার একটা বিয়ে করো।বয়স তো হয়েছে।
--ম্যাডম আপনে রসিকতা করতেছেন--।
--রসিকতার কি হল?
--আমারে বিবাহ করবে কার ঠেকা পড়েছে?
মিনু উসমানির মজা লাগে তার মনের যত উষ্মা দূর হয়ে গেল মানুষটার সঙ্গে কথা বলে। লোকটা তোইয়বের মত ধড়িবাজ নয়,সরল।মজা করার জন্য বলে, কেমন মেয়ে তোমার পছন্দ?
বলদেব গভীর সমস্যায় পড়ে যায়।এতগুলো বয়স পেরিয়ে এসেছে এ বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে কোনদিন ভাবার কথা মনে হয়নি।বিবাহ কেন করতে চায় এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে কিন্তু কিরকম মেয়ে বিবাহ করতে চায় প্রশ্নটা তার কাছে নতুন।
মিনু উসমানির নজরে পড়ে বলদেবের অসহায় অবস্থা।জিজ্ঞেস করে ,এই অফিসে তোমার কারে পছন্দ?
--জ্বি রুমেলা ম্যাডামরে পছন্দ না।
--কেন অন্য ধর্ম তাই?
--জ্বি সেইটা কথা না।অত মুটা আমার ভাল লাগেনা।
অনেক কষ্টে হাসি দমন করে মিনু উসমানি।বাস্তবিক রুমেলা দিন দিন অস্বাভাবিক রকম মুটিয়ে গেছে,হাটতে গেলে দুলে দুলে হাটে। মানুষটার সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে। স্থির করে এর সঙ্গে একটু সময় ব্যয় করলে বেশ আরাম বোধ হয়। সারাদিন অফিসে রাস্তায় প্রতিনিয়ত লোলুপ দৃষ্টি দ্বারা বিদ্ধ হতে হতে গা ঘিন ঘিন করে।বাড়ি ফিরে গোসল করে তবে শান্তি।
মিনু উসমানি জিজ্ঞেস করে, আমার মত মেয়ে তোমার পছন্দ?
--জ্বি? বলদেব চোখ মেলে কিছুক্ষন দেখে বলে,অসুবিধা আছে।
--কি অসুবিধা?
--জ্বি আপনে হলেন আপনে বয়সে বড় সেইটা বাদ দিলাম কিন্তু---।
--কিন্তু কি?
--আপনে বিবাহিত।ঘরে আপনার স্বামী আছে।
মিনু উসমানির জিদ চেপে যায় তাকে কথা বলার নেশা চেপে বসে,বলে, আচ্ছা ধরো তারে যদি তালাক দিই?
--সেইটা ঠিক হবেনা।তানার তো কোন দোষ নাই।আপনে নিজের স্বার্থে তারে ত্যাগ করবেন--একজনের জন্যি আরেকজনরে বঞ্চিত করা ঠিক নয়?
মিনু উসমানির মুখে কথা সরেনা।এইটা মানুষ না পয়গম্বর?পিপাসা বোধ করে,সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে ফরমাশ করতে সঙ্কোচ হয়,পানির বোতলটা খোজে।
--জ্বি জল খাইবেন?
বলদেব জল আনতে যায়।মিনু উসমানি হা-করে তাকিয়ে থাকে।ধর্ম বাধা নয় বয়সে বড় তাতেও আপত্তি নাই কেউ বঞ্চিত হবে সেইটা অপছন্দ। জীবনে ভালমন্দ কত বিচিত্র মানুষ দেখেছেন,এই মানুষটা সবার থেকে আলাদা।