Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.43 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী-Written By pinuram
#32
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#21)

মনিদিপা মাথা তুলে এগিয়ে যাবার জন্য পা বাড়াল, হটাত করে চখাচুখি হয়ে গেল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দেবেশের সাথে। পা বাড়াতে ভুলে গেল মনিদিপা। কেউ যেন ওর পায়ের পাতার ওপরে পেরেক দিয়ে মাটির সাথে গেঁথে দিয়েছে। নড়বার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছে মনিদিপা। ঠোঁট দুটি তিরতির করে কেঁপে উঠল মনিদিপার, আস্তে আস্তে করে দুটি চোখ জলে ভরে গেল। পৃথিবীটা ওর দুই ভেজা চোখের সামনে বনবন করে ঘুরছে। মনিদিপার মাথা ঘুরতে শুরু করল, আর যেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা।

লুটিয়ে পরে যাবার আগেই দৌড়ে গিয়ে দেবেশ দু হাতে জড়িয়ে ধরল মনিদিপাকে। পুজোর থালা মাটিতে পরে গেল, ঝনঝন শব্দে গড়াতে গড়াতে পুজোর থালা গঙ্গার জলে ভেসে গেল। দেবেশ মনিদিপার জলে ভরা কাজল কালো চোখের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ পরে ধিরে ধরে চোখ খুল্ল মনিদিপা, ঝাপসা চোখে তাকিয়ে রইল দেবেশের মুখের দিকে। একটু অপ্রস্তুত লাগল নিজেকে অত লোকের সামনে একজনের বাহুর মধ্যে নিজেকে পেয়ে, আস্তে করে দেবেশের আলঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। দু’চোখে বন্যা নেমেছে মনিদিপার। বারে বারে চোখ মুছছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।

বুক ফাটিয়ে আর্তনাদ করার ইচ্ছে হচ্ছে মনিদিপার, “কেন এসেছ আমার সামনে আবার আমাকে ব্যাথা দিতে। কেন আমার জীবন থেকে চলে যেতে পার না তুমি, দেবেশ?” না মনিদিপা ওই কথা ওর ঠোঁটে আনতে পারেনি। চোখের জল মুছে ম্লান হাসি হেসে জিজ্ঞেস করল দেবেশকে, “কেমন আছো দেবেশ? তিন বছর আগে যা ছিলে তার থেকে একটু যেন রোগা হয়ে গেছ।”

এতদিন পরে ওই আওয়াজ শুনে দেবেশের বুক কেঁপে উঠল। চোখের জ্বালা করছে কিন্তু কাঁদতে পারছে না। হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “তুমি অনেক বদলে গেছ, মনি।”

মনিদিপা ঠোঁট কামড়ে ধরল, সাত বছর পরে ওই নামে আবার কেউ ওকে ডাকল আজ। সত্যি অনেক বদলে গেছে, মাথা নাড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমার জীবন’টাই এইরকম। তোমার খবর বল, আজকাল ত মনে হয় সুইজারল্যান্ডে আছো তাইতো?”

দেবেশ মনিদিপার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে উত্তর দিল, “অনেক কিছু খবর রাখ দেখছি।”

মনিদিপা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “কেউ কেউ রাখে কেউ কেউ রাখে না।”

দেবেশ মাথা নেড়ে জানাল, “না মনি, আমি সুইজারল্যান্ডে থাকিনা, আমি বোরদে, ফ্রান্সে থাকি।”

এবারে অবাক হবার পালা মনিদিপার, একভাবে তাকিয়ে রইল দেবেশের মুখের দিকে কতবছর পরে একে অপরকে এত কাছ থেকে দেখছে। মনিদিপার হাত ধরল দেবেশ, হাতের ছোঁয়া পেয়ে যেন গলে যাবে মনিদিপা, একটু কেঁপে উঠল ওর হাতের পরশ পেয়ে। দেবেশ বলল, “এসো আমার সাথে।”

জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে মনিদিপা, “কোথায় যাবো?”

দেবেশ হেসে জবাব দিল, “একটু হাটতে আপত্তি নেই নিশ্চয়?”

মাথা নাড়ল মনিদিপা, “না তা নেই।” বলেই হেসে ফেলল। সেই মুক্ত সাজান দাঁতের পাটি দেখে দেবেশের মন খুশিতে ভরে গেল।

দু’জনে রাস্তা দিয়ে হাটতে শুরু করল। কারুর মুখে কথা নেই, দুজনের বুকে এক অজানা শূন্যতা আর ভাললাগা দুটোই ভর করে রয়েছে। দুজনেই যেন ভাবছে কে আগে কিছু বলবে।

অনেকক্ষন পরে দেবেশ ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “দিল্লীতে কোথায় থাক?”

মনিদিপা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল, “আমি তিন বছর হল দিল্লী ছেড়ে দিয়েছি।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “কেন? তুমি ত একটা পত্রিকায় লিখতে তাই না?”

মনিদিপা উত্তর দিল, “হ্যাঁ লিখতাম। কিন্তু আর থাকতে পারলাম না তাই দিল্লী ছেড়ে আমাকে চলে যেতে হল।”

দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “এখন কোথায় থাকো তুমি?”

“কেন আমাকে শেষ করে দিয়েও তোমার এখন শান্তি হয়নি।” না কথাটা বলল না মনিদিপা, কাষ্ঠ হাসি হেসে উত্তর দিল, “আমি যেখানে আছি ভাল আছি তুমি আর জেনে কি করবে?”

উত্তরটা দেবেশের মনে বড় ব্যাথা দিল। মনিদিপার অধিকার আছে সে ব্যাথা দেবার। আবার দুজনেই চুপ। নিজেদের মাঝে একটু ব্যাবধান রেখে হাঁটতে থাকল। দেবেশ ভাবছে যে কি কথা বলা যায়, কি প্রশ্ন করবে মনিদিপাকে, কি হয়েছিল মনিদিপার এই প্রশ্ন করবে? ওদিকে মনিদিপা ভাবছে যে, কেন আবার দেবেশের সাথে দেখা হল, ভাল’ত ছিল মনীষা হয়ে এক নতুন জীবন নিয়ে। কিন্তু দেবেশ এখানে কি করছে? এতদিনে নিশ্চয় বিয়ে করেছে।

মনিদিপা দেবেশকে জিজ্ঞেস করল, “তা হৃষীকেশ-এ কেন?”

মনিদিপার আওয়াজ শুনে দেবেশের ধড়ে প্রান ফিরে এল, “অনেক দিন পর পুরান বন্ধুদের সাথে দেখা হল আর এই বন্ধুদের সাথে র্যাফটিং করতে এখানে আসা।”

হাসি থামাতে পারল না মনিদিপা, “ফ্রান্স থেকে এখানে র্যাফটিং করতে আসা? বাপরে তোমার ফ্রান্সে নদী নালা নেই নাকি?”

হাসি শুনে খুব ভাল লাগল দেবেশের, ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল দেবেশ, “না, সেই রকম নয়, আমার বন্ধুরা সবাই বিদেশে থাকে। একটা গেটটুগেদার হয়ে গেল আর র্যাফটিং’ও হয়ে গেল।”

আবার দুজনেই চুপ, কে কাকে কি জিজ্ঞেস করবে এই নিয়ে দুজনেই মনের মধ্যে প্রশ্নের অভিধান খুলে বসেছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে দেবেশ জিজ্ঞেস করল, “মনি যাবে আমার সাথে?” জিজ্ঞেস করার পরেই দেবেশের হৃদয়ের ধুকপুকানি বেড়ে গেল, মনিদিপা কি উত্তর দেবে এই ভেবে।

মনিদিপার বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে গেল। আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় নিয়ে যাবে?”

দেবেশ উত্তর দিল, “আমার হোটেলে চল একটু বসে গল্প করব।”

হেসে জবাব দিল মনিদিপা, “গল্প করার জন্য’ত অন্য কোথাও বসা যেতে পারে, কিন্তু হোটেলে কেন নিয়ে যেতে চাও আমাকে?”

দেবেশ হেসে উত্তর দিল, “ভয় নেই খেয়ে নেব না আমি।”

মনিদিপা বলল, “আচ্ছা চল, তবে বেশিক্ষণ বসব না। আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরে জিনিস গুছাতে হবে। কাল সকাল বেলা আমি চলে যাব তাই।”

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 3 users Like Kolir kesto's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী-Written By pinuram - by Kolir kesto - 27-06-2020, 03:13 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)