Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram
#35
মাতৃময়ী মূর্তি

কফি হাউস থেকে বাড়ি ফিরতে অভির দেরি হয়ে যায়। বাড়ি ফিরে দেখে যে সবাই বসার ঘরে বসে চা খাচ্ছে। বাবা নিজের ঘরে বসে অফিসের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত। মা পরীর মাথা কোলে করে নিয়ে ডিভানের ওপরে বসে আছে আর পরীর চুল আঁচড়ে দিচ্ছে। পরী ছোট্ট বিড়ালের মতন মায়ের আদর খাচ্ছে। লম্বা সোফায় মৈথিলী আর সুব্রত বসে। অভি ঘরে ঢুকে ছোটো সোফার ওপরে গিয়ে বসে পরে। মা ওকে জিগ্যেস করলেন যে দেরি কেন। উত্তর অভি জানাল যে প্রাক্টিকাল ক্লাসের জন্য দেরি হয়ে গেছে। মা ওকে বললেন যে আগামি কাল সুব্রত আর মৈথিলী ঢাকুরিয়া যাবে মৈথিলীর কাকার বাড়িতে, অভি কেও সঙ্গে নিয়ে যেতে চায়। মায়ের কথা শুনে অভি পরীর দিকে তাকায়, পরীর চোখ ইশারায় বলে ওঠে "প্লিস যেও না" অভি মাকে জিজ্ঞেস করে যে কালকে মা আর পরী কোথায় যাবে। মা জানালেন যে পরীকে নিয়ে মা একটু কেনাকাটা করতে শ্যাম বাজার হাতিবাগান যাবে তারপরে পরীর জন্য গয়না কিনতে বউ বাজারে যাবে।

মৈথিলী অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুমি আজকে আমাদের সাথে সিনেমা দেখতে গেলে না, কাল কিন্তু না করতে পারবে না।"

অভি দেখল মা ও চাইছে অভি ওদের সাথে ঢাকুরিয়া যাক, কিন্তু বাধ সাধছে প্রেয়সী পরীর চোখ।

সুব্রত ওকে বলল, "মামা আমি কোন কথা শুনব না, কাল তোমাকে আমাদের সাথে যেতেই হবে।"

অভি দেখল যে বড় ফাঁপড়ে পরে গেছে, কিছু একটা বলে ওদের কে ক্ষান্ত না করলে অভির যে স্বস্তি নেই।

অভি পরীর দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে একটু কথা বলে বাকিদের জানাল, "ঠিক আছে, শনিবার আসুক আমি জানাব আমি কি করব।" পরী ওর কথা শুনে মৃদু হেসে জানিয়ে দিল যে ও খুব খুশি।

মা পরী আর মৈথিলীকে নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে যায়। অভি নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। সুব্রত জিজ্ঞেস করে যে ও সাথে যেতে পারে কিনা। মাথা নাড়ায় অভি, জানিয়ে দেয় যে সুব্রতর জন্য ওর দরজা সবসময়ে খোলা।

সুব্রত ওর ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার বলত মামা, তুমি কি অরুনিমার প্রতি ইন্টারেস্টেড নও?"

মাথা চুলকালো অভি, কিছু একটা উত্তর দিতে হবে যাতে সাপ মরে কিন্তু লাঠি ভাংবে না। অভি বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে উত্তর দেয়, "মামা আসল কথা হচ্ছে যে আমি একজনার প্রতি একটু ঝুঁকে আছি।"

সুব্রত চমকে গিয়ে বলে, "কি বলছ মামা, এ কথা ত আমাকে জানাও নি। কে সে? তুমি নাকি অরুনিমাকেও বলেছিলে যে তোমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই তাহলে?"

অভি, "মামা প্রেম কি আর বলে কয়ে আসে, এত হয়ে যায় হটাত করে। কার সাথে কি ভাবে হবে কেউ জানেনা। মামা প্রেম ত আর অঙ্ক নয় যে দুয়ে দুয়ে চার হবে। তুমিও ত প্রেম করে বিয়ে করেছ, তুমি ত বুঝবে মনের কথা।"

সুব্রত, "কিন্তু মামা, একতরফা প্রেম হলে যে মুশকিল। তা তুমি কি প্রোপস করেছ?"

অভি দেখল সত্যি কথা বলা বিপদ, অগত্যা অভি কে অরুন্ধতি কে টেনে নিয়ে আসতে হল। অভি বলল, "না মামা আমি এখনো প্রোপস করিনি তবে আমি জানি যে মেয়েটা আমাকে ভালবাসে।"

সুব্রত, "কে সে?"

অভি, "আমার কলেজের এক বান্ধবী।"

সুব্রত, "কবে প্রোপোজ করবে?"

অভি, "দেখি, ওর জন্মদিনে ভাবছি প্রোপস করব।"

সুব্রত মনে হল যেন একটু মনক্ষুণ্ণ হয়ে গেল অভির কথা শুনে, "অরুনিমা একটু আঘাত পাবে এই কথা শুনে। বিগত দু’মাস ধরে ও তোমার ফোনের আশায় বসে আছে। যাই হক একবার ফোন করে দেখ, তুমি ত তোমার বান্ধবিকে এখন মনের কথা বলোনি তাই ত। হয়ত অরুনিমার সাথে দেখা করলে তোমার মনের ভাব বদলে যেতেও পারে।"

অভি ওর দিকে তাকিয়ে হাসল, "ঠিক আছে আমি কথা দিচ্ছি যে আমি অরুনিমার সাথে দেখা করব, কিন্তু কাল হবে না। একটা কথা বল মামা, তুমি আর চুরনি কেন আমার পেছনে অরুনিমার জন্য পরে আছো?"

সুব্রত ওর দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি হেসে বলল, "ধিরে ধিরে সব জানতে পারবে মামা।"

অভি ঠিক বুঝতে পারল না যে সুব্রত হটাত করে এই রকম কথা কেন বলল, কি জানতে পারবে অভি, কি মতলব চলছে সুব্রতর মাথার মধ্যে? সুব্রতর হাসির মধ্যে যেন একটু শয়তানি বদ মতলবের ছোঁয়া রয়েছে।

ঠিক সেই সময়ে মৈথিলী দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে জানাল যে খাবার তৈরি আর মা ওদের কে খেতে ডাকছে। সুব্রত মৈথিলীকে দেখে বলল যে ও অভিকে অরুনিমার সাথে দেখা করার কথা বলেছে আর অভি রাজি হয়েছে যে অরুনিমার সাথে দেখা করবে, কিন্তু কাল দেখা করতে পারবে না, পরে দেখা করবে। সুব্রত আরো জানাল যে অভির কলেজে একটি বান্ধবী আছে যাকে অভি ভালবাসে আর ভবিষ্যতে প্রেম নিবেদন করতে চায়। মৈথিলী লাজুক নয়নে অভির দিকে তাকিয়ে খুব মিষ্টি করে একটা হাসি দিল, বাঁ হাতের কড়ে আঙ্গুল দিয়ে দাঁতের মাঝে চেপে ধরল। অভি ওর মন মাতান হসি দেখে চঞ্চল হয়ে উঠল, বুকের মধ্যে যেন ওই মত্ত হাসিটা একটা গভীর রেখা পাত করে গেল।

অভি মৈথিলীকে জিজ্ঞেস করল, "তুমি আমার দিকে ওই ভাবে তাকিয়ে হাসছ কেনও?"

"কিছু না, এমনি হাসছি।" অভিকে আপাদ মস্তক চোখ বুলিয়ে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "কি বলেছ ওকে?"

সুব্রত ওর দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি হেসে বলল, "আরে না না ডার্লিং, চিন্তা কোরো না। ও বলেছে ত যে অরুনিমার সাথে দেখা করবে, ব্যাস তারপর যা হবার সেটা সময়ের ওপরে ছেড়ে দাও।"

"খাবার তৈরি, নিচে এস"

এই বলে মৈথিলী ওর সুডৌল নিতম্ব মাছের মতন দুলিয়ে দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেল। অভির চোখ মৈথিলীর মত্ত চলনের ওপরে নিবদ্ধ হয়ে থাকল, চোখের সামনে মৈথিলীর সুডৌল নিতম্বের লয় যেন বুকের ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে চলে গেল। ইচ্ছাকৃত ভাবে কি মৈথিলী ওই রকম ভাবে কোমর দুলিয়েছে? কি জানি। দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যাবার ঠিক আগে, মৈথিলী ওদের দিকে ঘুরে তাকাল, চোখে যেন কামনার আগুন জ্বলছে, কিছু একটা বলতে চাইছে দু’চোখ ঠিক বুঝতে পারছে না অভি। অভির চোখ ওর মত্ত ছন্দময় নিতম্বের ওপরে, একটু যেন কেঁপে উঠল মৈথিলী, অভির চোখ যেন ওর পিঠ কোমর আর নিতম্ব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিচ্ছে। সুব্রতর দিকে চোখ টিপলও মৈথিলী। অভি একি করছে, বরের সামনে তার নতুন বিয়ে করা বউয়ের মত্ত চলন লম্পটের মতন দেখছে।

অভি যেন ধরা পরে গেল সুব্রতর কাছে, ওর কান গরম হয়ে ওঠে, কি করছে ও? মৈথিলী কেন ওই রকম ভাবে কোমর দুলিয়ে গেল? সুব্রতর কি মতলব? কি জানে কি আছে ভবিষ্যতে।

খাবার সময়ে পরীর সাথে বিশেষ কথাবার্তা হল না, সবার সামনে একটু দুরত্ত রেখে কথা বলতে হয়েছে দুজনকে। পরীর মন খুব আনচান করতে থাকে, সামনে অভি বসে কিন্তু কিছুতেই ছুঁতে পারছে না, একি বিড়ম্বনা বিধাতার। সামনে সুধার ভাণ্ডার তাও ভালবাসার পাত্র খালি, বারে বারে আর চোখে পরীর দিকে তাকায় অভি। মা জানালেন যে ওরা কাল দুপুরে শপিং করতে বের হবে। অভি ওদের কে বলল যে ও ঢাকুরিয়া যাবে না। অভির কথা শুনে পরীর মনে যেন খুশি আর ধরে না, চোখ জলজল করে ওঠে পরীর, বুকের মধ্যে খুশির জোয়ার আসে।

পরী শয়তানি করে মাকে বলে, "আচ্ছা ছোটো মা, আমাদের তো একটা গাধা লাগবে ব্যাগ ধরার জন্য, তাই না।"

অভি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, "দেখ তোমার পরী আমাকে কি সব বলছে।"

পরী, "দেখ দেখ একটা গাধা কিনা মাংস খাচ্ছে।"

অভির খুব ইচ্ছে করছিল ওই গোলাপি গালে চিমটি কাটার জন্য। নিজেকে কোন মতে সামলে নিয়ে, "কুকুর, ভেড়া, ঢেঁড়স, কাক, হাড়গিলে..."

ওদের ঝগড়া দেখে সবাই হেসে ফেলল, মা ওদের দু’জনকে মৃদু বকুনি দিল, "তুই খেয়ে শুতে যা" পরীর দিকে তাকিয়ে বলল "আর তুই তাড়াতাড়ি কর, কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।"

অভি খাওয়া শেষ করে মাকে বলল, "আমার শুতে দেরি হবে প্রাক্টিকালের কিছু কাজ বাকি আছে আমার।"

পরীর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ইশারায় বলে, "আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব কিন্তু।"

প্রাক্টিকাল খাতা লিখতে লিখেত অনেক রাত হয়ে গেল, ঘড়ি দেখল অভি, রাত একটা বাজে। চোখ দুটো জ্বালা জ্বালা করছে, মাথাও একটু ব্যাথা ব্যাথা করছে। আঙ্গুল দিয়ে মাথায় আঁচর কাটে অভি, মনে পরে কতকাল পরীর ছোঁয়া পায়নি মাথার ওপরে, কি সুন্দর চুলে বিলি কাটে পরী আর অভি ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ত। পরী আর এলনা তাহলে, এই ভেবে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে থাকল। কিছুতেই প্রেয়সি কে কাছে পাওয়া যাচ্ছে না, তবে এটা ভেবে মন খুশিতে ভরে গেল যে কাল মা আর পরীর সাথে কেনাকাটা করতে বের হবে। হ্যাঁ, পাশে হয়ত হাঁটতে পারবে না বাঁ জড়িয়ে ধরতে পারবে না, কিন্তু চোখের সামনে ত থাকবে পরী। পরীর গায়ের ঘ্রান কতদিন বুকের মধ্যে নিতে পারেনি, টেবলের ড্রয়ার থেকে রুমাল বের করে মুখের ওপরে মেলে ধরে অভি, গায়ের গন্ধ কিছু যেন এখন লেগে আছে রুমালে। এত কাছে পরী তবুও এত দুরে পরী, হাতের নাগালের বাইরে।

এমন সময়ে অভির অরুন্ধুতির কথা মনে পরে যায়, পরীকে জানান হয় নি অরুন্ধুতির ব্যাপারে। মনে ভেতরে একটা সংশয় জেগে ওঠে, অরুনার কথা শুনলে পরী কি ভাবে গ্রহন করবে অরুনাকে। অরুনা এই পৃথিবীতে ওর একমাত্র বন্ধু। পরীর কাছে থেকে অরুনাকে লুকিয়ে রাখা মস্ত বড় ভুল হবে, পরীকে জানাতে হবে অরুনার কথা কিন্তু সাবধানে।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram - by sorbobhuk - 27-02-2019, 05:23 PM



Users browsing this thread: 9 Guest(s)