Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram
#34
অপারেসান থিয়েটারের সামনে সবাই দাঁড়িয়ে, কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার এসে জানায় যে, পুবালি বর্তমানে বিপদমুক্ত, কিছু দেরি হলে হয়ত টিউমারের রক্ত ওর মাথার ভেতরে চলে যেত আর মাথার শিরা উপশিরা গুলোকে খতিগ্রস্থ করে দিত। পুবালির বাবা মা আর অরুন্ধতির বাবা মা অভির দিকে কৃতজ্ঞ ভরা চোখে তাকায়। অরুন্ধতি দৌড়ে এসে অভিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। সেই কান্না বেদনার কান্না ছিল না, সেই কান্না কৃতজ্ঞতার কান্না ছিল, যেহেতু অভি ওর প্রানের বোন পুবালিকে আবার ওর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে তাই। অভির মনে হল বিগত চোদ্দ বছরে কেউ ওকে ভালবাসায় বা কৃতজ্ঞতায় ওই রকম ভাবে জড়িয়ে ধরেনি। সারা জীবন ধরে বাবা মার কাছে ধিক্কার শুনে গেছে যে ও জীবনে কিছু করতে পারল না। অভির চোখে জল এসে যায়। অরুন্ধতির বাবা ওকে বাড়িতে আসতে বলে কিন্তু অভি ওদের জানায় যে অন্য কোনদিন ওদের বাড়িতে আসবে সেদিন আর যায় না। খুব ক্লান্ত লাগছিল অভির। অরুন্ধতির বাবা ওকে একটা টিশার্ট কিনে দেয়, কেননা তখন পর্যন্ত অভির গায়ে রক্ত মাখা গেঞ্জি ছিল।

হসপিটাল থেকে অভি মাথা উঁচু করে বেড়িয়ে এল, মনে হল যেন জীবনে খুব বড় কাজ করেছে, ও আর সেই ভীতু হেরে যাওয়া অভি নয়। সেই প্রথম বার অভির মনে হল যে ওর চারপাশের পৃথিবী টা কত অন্ধকার ময় আর কত সুবিধাবাদী মানুষে ভরা। বাকি কলেজের বন্ধুরাও ওর পেছন পেছন হস্পিটাল থেকে বেড়িয়ে আসে। অভিকে ডাকে কফি হাউসে যাবার জন্য। অভি ওদের মানা করে দেয়। অভি হটাত করে দেখে যে অনুশুয়া ওর দিকে দৌড়ে আসছে আর হাতের ইশারায় ওকে দাঁড়াতে বলছে। অভি ওর দিকে তাকায় মাথা নাড়িয়ে ওকে ক্ষমা করে দেবার ইশারা করে, সামনে যে বাস আসে তাতে অভি উঠে পরে। একসময়ে অভির চোখে যে হেরে যাওয়ার চাহনি ছিল সেটা ও অনুশুয়ার চোখে দেখতে পায়। ভগবানকে মাথা তুলে ধন্যবাদ জানায় অভি, তিনি যা করেন সবার ভালোর জন্য করেন।

তারপরে বেশ কিছুদিন অরুন্ধতি আর পুবালি কলেজে আসেনা, অভির ও আর ওদের বাড়ি যাওয়া হয় না কেননা ও চেনেনা ওদের বাড়ি বা ওর কাছে অরুন্ধুতির ফোন নাম্বার ও নেই যে ফোন করে পুবালির খবর জেনে নেবে। এমন একদিনে, অভি চুপ করে ক্লাসে বসে। অরুন্ধতি ক্লাসে ঢোকে, সবার চোখ অরুন্ধতির দিকে চলে যায়, সবার মুখে এক প্রশ্ন পুবালি কেমন আছে। অরুন্ধতি বিরক্তি ভরা চোখে সবার দিকে তাকায়, যেন বলতে চায় যে তোদের জানা কোন অধিকার নেই।

অভির দিকে হেঁটে এসে কাঁধ নাড়িয়ে বলে, "এই বিহারী, আমার সাথে চল।"

অভি ওকে জিজ্ঞেস করে, "কোথায়।"

অরুন্ধুতি, "বাবা তোকে বাড়িতে ডেকেছে।"

এই বলে ওর জামা ধরে টানতে টানতে ক্লাস থেকে বের করে নিয়ে আসে।

অরুন্ধতির বাড়ি যাবার পথে অভি পুবালির কথা জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে পুবালি এখন ভালো আছে আর গতকাল বিকেলেই হস্পিটাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে এসেছে। তাই ও অভিকে বাড়ি নিয়ে যেতে কলেজে এসেছে। অভি ওকে জিজ্ঞেস করে যে ও ওকে ফোন কেন করেনি।

অরুন্ধতি জবাবে বলে, "আমার কাছে ত তোর ফোন নাম্বার নেই।"

অভি, "তুই কোনদিন চাসনি।"

অরুন্ধতি, "জীবনের এই প্রথম আমি সব থেকে বড় ভুল করেছি।"

অভি, "কি ভুল?"

অরুন্ধুতি, "মানুষ চিনতে ভুল করেছি, বন্ধু চিনতে ভুল করেছি।"

অভি, "ধুর বোকা, সবাই কিছু না কিছু ভুল করে ফেলে, ছাড় অসব কথা।"

অরুন্ধুতি কিছু পরে ওকে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে তোর বাবার নাম কি অর্জুন তালুকদার?"

অভি চমকে যায়, "হ্যাঁ কিন্তু তুই কি করে জানলি?"

অরুন্ধুতি, "আমি এইটুকু জানতাম যে কাকু এয়ারপোর্ট অথরিটি তে চাকরি করেন আর আমার বাবাও করেন। আমার বাবা যখন তোর নামধাম আমাকে জিজ্ঞেস করল তখন আমি বললাম যে আমি তো কাকুর নাম জানিনা। বাবা আমকে তোর কাছে কাকুর নাম জিজ্ঞেস করতে বলেছে।"

অভি, "হুম... আচ্ছা তোর বাবা মানে ব্যানারজি কাকু। ওকে এবারে বুঝেছি।"

দিন যায় ওদের বন্ধুত প্রগাঢ় হয়ে ওঠে। ক্লাস ফাকি দিয়ে কলেজ স্ট্রিটে ঘোরা, গ্লোবে সিনেমা দেখা, এস্প্লানেড বা পার্ক স্ট্রিটে কোন রেস্টুরেন্টে খাওয়া বা নন্দনে আড্ডা মারা। পুবালি খুব শান্ত প্রকৃতির মেয়ে তাই বেশির ভাগ দিন ওরা দু’জনে ঘুরে বেড়াত এদিক সেদিক। কোলকাতায় অভি নতুন, অরুন্ধতি ওর গাইডের কাজ করত যেন। কলেজের বাকিরা ওদের এই বন্ধুত্ত টাকে অন্য চোখে দেখে, সবার মুখে এক কথা, অরুন্ধতি অভির প্রেমে পড়েছে আর সেই কথা ওদের কানে আসে, ওরা দু’জনে খুব উপভোগ করে বাকিদের সংশয়। কেউ ভাবতে পারে না যে একটা ছেলের আর একটা মেয়ের মধ্যে প্রেম প্রীতির থেকেও ভালবাসা এক অন্য ধরনের হতে পারে, বন্ধুত্তের ভালবাসা থাকতে পারে।

অভির বাবা যেহেতু অরুন্ধতির বাবার অফিস কলিগ তাই ওদের বাড়িতে অভির যেতে কোন বাধা থাকেনা। অভির বাবা মা আর অরুন্ধতির বাবা মায়ের মধ্যেও সেই একি ধারনা জাগে যে অভি অরুন্ধতিকে ভালবাসে আর ওর মায়ের কোন বাধা থাকে না অরুন্ধতিকে বউমা করে ঘরে আনতে। অভি আর অরুন্ধতি দু’জনে ওদের চারদিকের ভুল ধারনা টাকে খুব উপভোগ করে আর হাসে।

পুবালি আর অরুন্ধুতি সবসময়ে অভিকে অনুশুয়ার কাছ থেকে আগলে রাখত, কিছুতেই অনুশুয়াকে অভির কাছে আসতে দিত না। একদিন ওরা তিনজনে মিলে পার্ক স্ত্রিটের ফ্লুরিসে বসে খাচ্ছিল তখন পুবালি অরুন্ধতিকে বলে, "জানিস, কাল অনুশুয়া তোর কথা আর অভিমন্যুর মাঝের সম্পর্কের কথা জিজ্ঞেস করছিল।"

ওরা দু’জনে হেসে উঠে জিজ্ঞেস করে যে পুবালি কি উত্তর দিয়েছে।

পুবালি, "আমি বলেছি যে তোরা খুব ভাল বন্ধু ব্যাস আর কিছু না।"

অরুন্ধতি পুবালিকে আলতো করে চাঁটি মেরে বলে, "বোকা মেয়ে ওকে বলবি ত যে আমরা প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। ধুত বোকা, এখন আবার অনুশুয়া ওর পেছন পেছন আসতে চাইবে।"

অরুন্ধতি অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "মাগি টার পেছনে আর গেছিস ত আমি তোর ঠ্যাং ভেঙ্গে দেব।"

হেসে ওঠে অভি, মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে ন্যাড়া বেলতলায় একবার যায়।

ঠিক দুর্গাপুজার আগে, অরুনা আর অভি আউট্ট্রাম ঘাটের, স্কুপে বসে গল্প করতে থাকে। দুজনে আইস ক্রিম খেতে খেতে সামনের কাঁচের জানালা দিয়ে পড়ন্ত সূর্যের আলোয় আলোকিত লাল নদীর জল দেখতে দেখতে হারিয়ে যায়। অভি একমনে অরুনার দিকে তাকিয়ে থাকে, সেই প্রথম বার অভির মনে হয় যে অরুনা ওর কত কাছের মানুষ। অরুনার চোখ দুটি খুশিতে চকচক করছে যেন। খুব বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে অভি অরুনার কাঁধে হাত রাখে।

অরুনা অভির হাতের স্পর্শে আইসক্রিম খাওয়া থামিয়ে অভির মুখের দিকে তাকায়, চোখের চাহনি দেখে অভির মনের ভাব বুঝতে পারে অরুনা, কিন্তু তাও জিজ্ঞেস করে, "কিরে আমার দিকে ওই রকম ভাবে দেখছিস কেন রে?"

হাত সরিয়ে নেয় অভি, হেসে ফেলে, "কিছু না এমনি।"

গভীর ভাবে অভির দুচোখের দিকে তাকায় অরুনা, "আমার কাছে থেকে কিছু লুকাতে পারবি না রে। তুই চুপ থাকলে কি হবে তোর চোখ দুটো যে অনেক কথা বলে।"

অভি ওকে হেসে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা তাহলে তুই বল আমার চোখ কি বলছে?"

অরুনা ওর গাল টিপে বলে, "তুই যা ভাবছিস আমিও সেটাই ভাবছি।"

অভি ওর দু’হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়। অরুনা বলতে থাকে, "আমি চাই না আমাদের সম্পর্ক একটা বাঁধনের জোরে নষ্ট হক। বহু দিন পরে আমাদের মনে হবে যে আমাদের কোন বন্ধু হত যাকে আমরা আমাদের মনের কথা বলতে পারি, যেগুলো হয়ত আমরা আমাদের সাথি কে বলতে পারব না সেগুল আমরা এঁকে অপরকে বলব। আমি আমার সব থেকে ভাল বন্ধুকে হারাতে চাই না অভিমন্যু।"

এইসব ভাবতে ভাবতে ওরা কফি হাউসে পৌঁছে যায়। অরুনা ওর বাজুতে চাঁটি মেরে বলে, "কিরে সারা রাস্তা এত চুপ মেরে গেলি কেন? তুই কি পরীর খেয়ালে আবার হারিয়ে গেলি নাকি?"

অভি মাথা চুলকে বলে, "নারে, আমি ত তওর কথা আর আমাদের বন্ধুত্তের কথা ভাবছিলাম।"

অরুনা ওকে আলতো করে থাপ্পর মেরে বলে, "আহা, ছেলের ভাব দেখ, ভেতরে যেন টালা ট্যাঙ্ক ভরে উঠেছে। হ্যাঁ রে তোর পরীর কথা আমাকে বলতে হবে সেটা মনে থাকে যেন নাহলে কিন্তু আমি তোকে ছিঁড়ে খাবো। যাই হক পরীর ভাল নাম কি?"

অভি, "শুচিস্মিতা মন্ডল।"

অরুনা, "শুচিস্মিতা, মানে যার হাসি শুদ্ধ, বাহ রে নিশ্চয় পরীর হাসি খুব সুন্দর হবে।"

লাজুক হেসে অভি উত্তর দেয়, "হ্যাঁ রে পরীর হাসি খুব মিষ্টি। ও যখন হাসে তখন দু’গালে টোল পরে আর হাসিটা যেন আরও বেশি মিষ্টি হয়ে যায়।" অভি যেন ওর চোখের সামনে পরীর হাসি মাখা মুখ দেখতে পায়।

কফিহাউসে বসে অভি পরীর গল্প শুরু করে, কি করে অভি ওকে নিয়ে হিমাচলে ঘুরে এসেছে। সব শুনে অরুনা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির দিকে, বাবা ছেলের কি সাহস।

অরুনা কফির কাপে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "ত অসুবিধে টা কোথায়?"

অভি মাথা নাড়ে, "আমাদের মধ্যে ত কোন অসুবিধে নেই।"

অরুনা, "ধুর বোকা ছেলে, আমি জানি যে তোদের মধ্যে কোন অসুবিধে নেই, কিন্তু তোর মনের ভেতরে একটা গভীর সংশয় বা ভয় দানা বাধছে তাই না।"

অভি অবাক হয়ে অরুনার দিকে তাকিয়ে বলে, "তুই জানলি কি করে।"

অরুনা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, "আমি তোকে তোর চেয়ে বেশি জানি বুঝলি রে। তুই ভাবছিস যে কাকু কাকিমা তোদের সম্পর্ক মেনে নেবে না, কেননা পরী তোর চেয়ে দু’বছরের বড় আর কাকিমার সাথে পরীর সম্পর্ক। কাকিমা কে বুঝাতে অনেক কষ্ট হবে কেননা কাকিমা খুব কড়া প্রকৃতির মহিলা।"

অসহায় ভাবে অভি ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, "আমি জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি। এই নিষ্ঠুর পৃথিবী আমাকে অনেক কঠিন করে দিয়েছে। পরীকে পাওয়ার জন্য আমি আকাশ পাতাল এক করে দেব।"

অরুনা, "অত শত ভাবিস না। আমি কাকু কাকিমা কে বুঝাতে আপ্রান চেষ্টা করব। তুই শুধু বসে কফি খা কুত্তা।"

অভি অরুনার হাসি মুখ দেখতে থাকে, অরুন্ধুতি ওর কাছে যেন দেবী প্রতিমা, ওর সব থেকে ভাল বন্ধু। জীবনের কিছুর বিনিময়ে ও অরুনার হসি মুখ হারাতে চায় না।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram - by sorbobhuk - 27-02-2019, 05:21 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)