27-02-2019, 05:18 PM
দেবীকথা-অরুন্ধতি
অভির কলেজ ওর বাড়ি থেকে বেশি দুরে নয়। কলেজে সবার একটা ডাক নাম থাকে, অভির ডাক নাম "বিহারী", তার কারন অভি ওর পরাশুনার বেশির ভাগ সময় বিহারে কাটায়। দেওঘরে হস্টেলে থেকে অভি কলেজ আর হাইকলেজ পড়েছে।
অভির কলেজ পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়, প্রথম পিরিওড, অপ্টিক্সের, করতে পারেনা অভি। লাঞ্চ ব্রেকের পরে প্রাক্টিকাল ক্লাস। প্রাক্টিকাল ক্লাসে ঢুকে পরে অভি, বই খুলে একমনে পড়তে শুরু করে। এখনো কেউ আসেনি ক্লাসে। খোলা বইয়ের পাতায় পরীর চোখ আর হাসি দেখতে থাকে অভি। অভির গতকাল রাতের কথা মনে পরে যায়, কেমন জলপরীর মতন পরী ওর বাহুপাসে কাঁপছিল, আর অভি ওর কোমল শরীর টাকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে ছিল। বারেবারে নিজের গাল ঘষে অভি, যেখানে পরী গাল ঘষে দিয়েছিল।
এমন সময়ে ওর বাঁ বাহুতে টান পরে, "কিরে ওর নাম কি?"
অভির মুখ থেকে আপনা হতেই পরীর নাম বেড়িয়ে যায়, "পরী।"
নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে অভির ঘোর কাটে, মাথা ঘুরিয়ে দেখে ওর দিকে মিটিমিটি করে হাসছে ওর সব থেকে ভাল বান্ধবী, অরুন্ধতি, ওর প্রাক্টিকাল পারটনার আর ক্লাসের সব থেকে ভাল মেয়ে।
অরুন্ধতি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "শেষমেশ বিহারী প্রেমে পড়ল। হুম গাধা ছেলে!"
মৃদু ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "পরীর সাথে কত দিন থেকে প্রেম চলছে? আর আমাকে একবারও জানাস নি তুই?"
অরুন্ধতি ব্যানারজি, অভি ওকে মিষ্টি করে ডাকে অরুনা। অরুনা ওর হতবাক বোকা বোকা মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। অভি অনেক সযত্নে পরীর নাম বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল, কিন্তু আজ ধরা পরে গেল ওর প্রিয় বান্ধবীর হাতে!
অভি মাথা নাড়ায়, "না না না, কে পরী, আমি কোন পরীকে চিনি না।"
মাথার পেছনে আলতো করে একটা থাপ্পর মারে আরুনা, "আমার কাছে মিথ্যে কথা বলছিস? তোর চোখ বলছে যে তুই প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস আর তুই কিনা চিনিস না পরীকে?"
ধরা পড়ার পরেও অভি মানতে নারাজ, "না রে সত্যি বলছি আমি কোন পরীকে চিনি না।"
অরুনা, "মানতেই পারলাম না যে অভি প্রাক্টিকাল ক্লাসে এই রকম ভাবুক হয়ে বসে থাকতে পারে।"
শেষমেশ অভিকে স্বীকার করতে হয়, "আচ্ছা বাবা আমি তোকে প্রাক্টিকাল ক্লাসের পরে সব বলব।"
অরুনা মৃদু চিৎকার করে ওঠে, "না, আমি এখুনি সব শুনতে চাই।"
জামা ধরে টানতে শুরু করে অরুনা, "চল না ক্লাস বাঙ্ক করি।"
অভি, "মানে? আমি তোর জন্য শুধু প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছি আর তুই কিনা ক্লাস বাঙ্ক করার কথা বলছিস।"
অরুনা ওর জামা টেনে তুলে দেয়, "অহ, তুই আমার জন্যে যখন প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছিস তাহলে আমি তোকে যেখানে নিয়ে যাব সেখানে চল। আর সত্যি যদি তুই না যাস তাহলে কিন্তু আমি সত্যি রাগ করব।"
অগত্যা অভি দাঁড়িয়ে পরে, কিন্তু তাও অরুনা কে জিজ্ঞেস করে, "প্রাক্টিকালের কি হবে?"
অরুনা, "ধুর বাবা প্রাক্টিকাল নিয়ে চিন্তা করিস নাত। আমার বাড়িতে ব্রেড বোর্ড আর মাল্টিমিটার সব আছে। আমরা পরে করে নেব। তুই চল আমার সাথে, আমি আর তর সইছেনা।"
অরুনা অভির জামা টানতে টানতে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেল। ওদের দিকে বাকিরা তাকিয়ে, বিশেষ করে সুকোমল আর অনুসুয়া।
পুবালি দৌড়ে অরুনার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, "এই তোরা কোথায় যাচ্ছিস রে? প্রাক্টিকাল ক্লাস করবিনা তোরা?"
অরুনা একবার অভির দিকে তাকিয়ে পুবালিকে উত্তর দিল, "না রে আমরা একটু বের হচ্ছি। আমি তোকে সবকিছু বাড়িতে গিয়ে বলব আর তুই ঠিক করে প্রাক্টিকাল ক্লাস টা করিস।"
কলেজ থেকে বেড়িয়ে অরুনা ওকে জিজ্ঞেস করল, "কি রে কোথায় যেতে চাস?"
অভি, "আর কোথায় যাব বল, চল কফি হাউসে গিয়ে বসি আর কি।" দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল।
অরুন্ধতি ওর বাবা মার দ্বিতীয় সন্তান, দমদম এয়ারপোর্টের কাছে ওদের বাড়ি। অরুনার বাবা আর অভির বাবা দু’জনেই এয়ারপরট অথরিটি তে চাকরি করেন। অরুনাদের একান্নবর্তি পরিবার বাবা কাকা সবাই মিলে এক বিশাল বাড়িতে থাকে। পুবালি অরুনার খুরতুত বোন, একি বয়স। অরুনা বেশ মিষ্টি দেখতে, চোখে চশমা আর চোখ দুটো যেন সবসময়ে কথা বলে। খুব চঞ্চল আর হসিখুসি প্রকৃতির মেয়ে অরুনা কোন সময়ে বুকের ভেতরে কন কথা লুকিয়ে রাখে না, যা মনে আসে তাই লোককে বলে দেয়। এই জন্যে যেমন ওর বন্ধুর সংখ্যা বেশি তেমনি শত্রুর সংখ্যাও বেশি। পুবালি ঠিক উল্টো প্রকৃতির মেয়ে, খুব চুপচাপ আর সংযত একটু লাজুক। কারুর সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলে না। সারাদিনে হয়ত দুটো কি তিনটে কথা বলে অন্যদের সাথে।
হাঁটতে হাঁটতে ওরা শিয়ালদা পৌঁছে গেল। অরুনা অর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল, "কিরে গাধা, চুপ করে কেন আমি তোর পরীর কথা সব শুনতে চাই, যদি তুই চুপ করে থাকিস তাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করে লোক জড় করে বলব যে এই ছেলেটা আমার সাথে অপব্যাবহার করছে।"
অভি ওর দিকে মিনতির সুরে বলল, "প্লিস ওই রকম করিস না, আমি তোকে সব বলছি।"
অভি ওর গল্প শুরু করল, কি করে পরীর সাথে সুব্রতর বিয়েতে দেখা হয়েছিল, কপালে প্রথম চুম্বনের কথা, পরী আর ওর সম্পর্কের কথা। মায়ের সাথে পরীর সম্পর্কের কথা। ওকে জানাল যে পরী কিছুদিন পরে ওদের বাড়িতে থাকতে আসছে।
সব শুনে অরুনা আঁতকে ওঠে, "বলিস কি রে? তিন মাস ধরে তোদের প্রেম চলছে আর আমি কিছু জানি না। শয়তান ছেলে কেন তুই এত কথা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে ছিলিস বলত। কুত্তা, শূয়র..."
মাঝ রাস্তায় অরুনা অভিকে মারতে শুরু করে।
রাজাবাজার থেকে বাঁ দিকে বাঁক নিয়ে ওরা শিয়ালদা স্টেসানের দিকে হাঁটতে শুরু করে। সামনে ফুচকা ওয়ালা দাঁড়িয়ে, টাকে দেখে অরুনা ওকে জিজ্ঞেস করে যে ফুচকা খাবে কিনা। অভি মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ"
অরুনা, "ঠিক আছে বাকি গল্প কফি হাউসে গিয়ে সুনব।"
অরুনার সারা মুখে একটা দুষ্টু মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে থাকে। অভিকে একটু আনমনা দেখে জিজ্ঞেস করে, "আজ কি প্রব্লেম তোর যে তুই এত আনমনা?"
অভি, "কাল পরী আমার বাড়িতে এসেছে।"
অরুনা, "তুই একটা বড় কুত্তা। পরীকে ছেড়ে তুই প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছিস? যাই হক তুই না এলে আমি ত জানতেও পারতাম না তাই না।"
তারপরে ওর দিকে প্রশ্নের জাল ছুঁড়ে দেয় অরুনা, "আচ্ছা, পরীকে দেখতে সুন্দরী? কি পড়াশুনা করেছে? তুই কবে ওর সাথে আমার দেখা করাবি?"
অভি ওর মাথায় চাঁটি মেরে উত্তর দেয়, "আরে বাবা দাঁড়া দাঁড়া। বাসন্তি পুজোর পরে পরী যখন আমার বাড়িতে থাকতে আসবে তখন তোর সাথে দেখা করাব, চিন্তা নেই তোর।"
তর্জনী উচিয়ে বলে অরুনা, "কথা দিচ্ছিস?"
অভি, "হ্যাঁ বাবা কথা দিচ্ছি, তোকে না দেখিয়ে আমি কোথায় যাব রে।"
ওরা ফুচকা খাওয়ার পরে আবার হাঁটতে শুরু করে, ফ্লাইঅভার পার করে কলেজ স্ট্রিটের দিকে চলতে থাকে।
অরুনা, "তাহলে বিহারী শেষ পর্যন্ত প্রেমে পড়ল।" খিলখিল করে হেসে বলে, "আমি এক সময়ে ভাবতাম তোর কপালে কোন মেয়ে জুটবে না। তোর যা তিরখি মেজাজ আর যা মুখ।"
"তিরিক্ষি মেজাজ, হ্যাঁ তা বটে" ম্লান হাসি হেসে অরুনা কে বলল, "এই মেজাজ আমাকে আমার চার পাশের পৃথিবী দিয়েছে রে।"
অরুনা দেখল অভি আবার ভাবুক হয়ে উঠেছে, "এই ছেলে, অসব কথা ছাড়। তোর চোখে জল দেখলে আমার খুব কান্না পায়। তোর মুখে হাসি দেখে আমি সত্যি খুব খুশি। আমি সত্যি পরীর সাথে দেখা করে ওকে অনেক বড় ধন্যবাদ জানাব যে তোর মুখে আবার হাসি ফুটিয়ে তুলেছে।"
অভি, "এই সমুদ্রনীল কে ডেকে নেব কফি হাওসে?"
সমুদ্রনীল, অরুনার বন্ধু, অরুনার প্রেম। কোলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে রসায়নে মাস্টার্স করছে। গত বছর অক্টবরে ওদের দেখা হয় কোন কলেজ অনুষ্ঠানে আর তারপর থেকে প্রেম। সমুদ্রনীল বেশ ভাল ছেলে। যেদিন সমুদ্রনীল অরুনাকে প্রোপস করে, সেদিন অভি সমুদ্রনীল কে বলেছিল যে যদি কোন দিন অরুনার চোখে জল দেখে তাহলে ও সমুদ্র কে আস্ত রাখবে না, কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবে ওকে।
অভির কলেজ ওর বাড়ি থেকে বেশি দুরে নয়। কলেজে সবার একটা ডাক নাম থাকে, অভির ডাক নাম "বিহারী", তার কারন অভি ওর পরাশুনার বেশির ভাগ সময় বিহারে কাটায়। দেওঘরে হস্টেলে থেকে অভি কলেজ আর হাইকলেজ পড়েছে।
অভির কলেজ পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়, প্রথম পিরিওড, অপ্টিক্সের, করতে পারেনা অভি। লাঞ্চ ব্রেকের পরে প্রাক্টিকাল ক্লাস। প্রাক্টিকাল ক্লাসে ঢুকে পরে অভি, বই খুলে একমনে পড়তে শুরু করে। এখনো কেউ আসেনি ক্লাসে। খোলা বইয়ের পাতায় পরীর চোখ আর হাসি দেখতে থাকে অভি। অভির গতকাল রাতের কথা মনে পরে যায়, কেমন জলপরীর মতন পরী ওর বাহুপাসে কাঁপছিল, আর অভি ওর কোমল শরীর টাকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে ছিল। বারেবারে নিজের গাল ঘষে অভি, যেখানে পরী গাল ঘষে দিয়েছিল।
এমন সময়ে ওর বাঁ বাহুতে টান পরে, "কিরে ওর নাম কি?"
অভির মুখ থেকে আপনা হতেই পরীর নাম বেড়িয়ে যায়, "পরী।"
নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে অভির ঘোর কাটে, মাথা ঘুরিয়ে দেখে ওর দিকে মিটিমিটি করে হাসছে ওর সব থেকে ভাল বান্ধবী, অরুন্ধতি, ওর প্রাক্টিকাল পারটনার আর ক্লাসের সব থেকে ভাল মেয়ে।
অরুন্ধতি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "শেষমেশ বিহারী প্রেমে পড়ল। হুম গাধা ছেলে!"
মৃদু ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "পরীর সাথে কত দিন থেকে প্রেম চলছে? আর আমাকে একবারও জানাস নি তুই?"
অরুন্ধতি ব্যানারজি, অভি ওকে মিষ্টি করে ডাকে অরুনা। অরুনা ওর হতবাক বোকা বোকা মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। অভি অনেক সযত্নে পরীর নাম বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল, কিন্তু আজ ধরা পরে গেল ওর প্রিয় বান্ধবীর হাতে!
অভি মাথা নাড়ায়, "না না না, কে পরী, আমি কোন পরীকে চিনি না।"
মাথার পেছনে আলতো করে একটা থাপ্পর মারে আরুনা, "আমার কাছে মিথ্যে কথা বলছিস? তোর চোখ বলছে যে তুই প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস আর তুই কিনা চিনিস না পরীকে?"
ধরা পড়ার পরেও অভি মানতে নারাজ, "না রে সত্যি বলছি আমি কোন পরীকে চিনি না।"
অরুনা, "মানতেই পারলাম না যে অভি প্রাক্টিকাল ক্লাসে এই রকম ভাবুক হয়ে বসে থাকতে পারে।"
শেষমেশ অভিকে স্বীকার করতে হয়, "আচ্ছা বাবা আমি তোকে প্রাক্টিকাল ক্লাসের পরে সব বলব।"
অরুনা মৃদু চিৎকার করে ওঠে, "না, আমি এখুনি সব শুনতে চাই।"
জামা ধরে টানতে শুরু করে অরুনা, "চল না ক্লাস বাঙ্ক করি।"
অভি, "মানে? আমি তোর জন্য শুধু প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছি আর তুই কিনা ক্লাস বাঙ্ক করার কথা বলছিস।"
অরুনা ওর জামা টেনে তুলে দেয়, "অহ, তুই আমার জন্যে যখন প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছিস তাহলে আমি তোকে যেখানে নিয়ে যাব সেখানে চল। আর সত্যি যদি তুই না যাস তাহলে কিন্তু আমি সত্যি রাগ করব।"
অগত্যা অভি দাঁড়িয়ে পরে, কিন্তু তাও অরুনা কে জিজ্ঞেস করে, "প্রাক্টিকালের কি হবে?"
অরুনা, "ধুর বাবা প্রাক্টিকাল নিয়ে চিন্তা করিস নাত। আমার বাড়িতে ব্রেড বোর্ড আর মাল্টিমিটার সব আছে। আমরা পরে করে নেব। তুই চল আমার সাথে, আমি আর তর সইছেনা।"
অরুনা অভির জামা টানতে টানতে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেল। ওদের দিকে বাকিরা তাকিয়ে, বিশেষ করে সুকোমল আর অনুসুয়া।
পুবালি দৌড়ে অরুনার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, "এই তোরা কোথায় যাচ্ছিস রে? প্রাক্টিকাল ক্লাস করবিনা তোরা?"
অরুনা একবার অভির দিকে তাকিয়ে পুবালিকে উত্তর দিল, "না রে আমরা একটু বের হচ্ছি। আমি তোকে সবকিছু বাড়িতে গিয়ে বলব আর তুই ঠিক করে প্রাক্টিকাল ক্লাস টা করিস।"
কলেজ থেকে বেড়িয়ে অরুনা ওকে জিজ্ঞেস করল, "কি রে কোথায় যেতে চাস?"
অভি, "আর কোথায় যাব বল, চল কফি হাউসে গিয়ে বসি আর কি।" দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল।
অরুন্ধতি ওর বাবা মার দ্বিতীয় সন্তান, দমদম এয়ারপোর্টের কাছে ওদের বাড়ি। অরুনার বাবা আর অভির বাবা দু’জনেই এয়ারপরট অথরিটি তে চাকরি করেন। অরুনাদের একান্নবর্তি পরিবার বাবা কাকা সবাই মিলে এক বিশাল বাড়িতে থাকে। পুবালি অরুনার খুরতুত বোন, একি বয়স। অরুনা বেশ মিষ্টি দেখতে, চোখে চশমা আর চোখ দুটো যেন সবসময়ে কথা বলে। খুব চঞ্চল আর হসিখুসি প্রকৃতির মেয়ে অরুনা কোন সময়ে বুকের ভেতরে কন কথা লুকিয়ে রাখে না, যা মনে আসে তাই লোককে বলে দেয়। এই জন্যে যেমন ওর বন্ধুর সংখ্যা বেশি তেমনি শত্রুর সংখ্যাও বেশি। পুবালি ঠিক উল্টো প্রকৃতির মেয়ে, খুব চুপচাপ আর সংযত একটু লাজুক। কারুর সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলে না। সারাদিনে হয়ত দুটো কি তিনটে কথা বলে অন্যদের সাথে।
হাঁটতে হাঁটতে ওরা শিয়ালদা পৌঁছে গেল। অরুনা অর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল, "কিরে গাধা, চুপ করে কেন আমি তোর পরীর কথা সব শুনতে চাই, যদি তুই চুপ করে থাকিস তাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করে লোক জড় করে বলব যে এই ছেলেটা আমার সাথে অপব্যাবহার করছে।"
অভি ওর দিকে মিনতির সুরে বলল, "প্লিস ওই রকম করিস না, আমি তোকে সব বলছি।"
অভি ওর গল্প শুরু করল, কি করে পরীর সাথে সুব্রতর বিয়েতে দেখা হয়েছিল, কপালে প্রথম চুম্বনের কথা, পরী আর ওর সম্পর্কের কথা। মায়ের সাথে পরীর সম্পর্কের কথা। ওকে জানাল যে পরী কিছুদিন পরে ওদের বাড়িতে থাকতে আসছে।
সব শুনে অরুনা আঁতকে ওঠে, "বলিস কি রে? তিন মাস ধরে তোদের প্রেম চলছে আর আমি কিছু জানি না। শয়তান ছেলে কেন তুই এত কথা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে ছিলিস বলত। কুত্তা, শূয়র..."
মাঝ রাস্তায় অরুনা অভিকে মারতে শুরু করে।
রাজাবাজার থেকে বাঁ দিকে বাঁক নিয়ে ওরা শিয়ালদা স্টেসানের দিকে হাঁটতে শুরু করে। সামনে ফুচকা ওয়ালা দাঁড়িয়ে, টাকে দেখে অরুনা ওকে জিজ্ঞেস করে যে ফুচকা খাবে কিনা। অভি মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ"
অরুনা, "ঠিক আছে বাকি গল্প কফি হাউসে গিয়ে সুনব।"
অরুনার সারা মুখে একটা দুষ্টু মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে থাকে। অভিকে একটু আনমনা দেখে জিজ্ঞেস করে, "আজ কি প্রব্লেম তোর যে তুই এত আনমনা?"
অভি, "কাল পরী আমার বাড়িতে এসেছে।"
অরুনা, "তুই একটা বড় কুত্তা। পরীকে ছেড়ে তুই প্রাক্টিকাল ক্লাস করতে এসেছিস? যাই হক তুই না এলে আমি ত জানতেও পারতাম না তাই না।"
তারপরে ওর দিকে প্রশ্নের জাল ছুঁড়ে দেয় অরুনা, "আচ্ছা, পরীকে দেখতে সুন্দরী? কি পড়াশুনা করেছে? তুই কবে ওর সাথে আমার দেখা করাবি?"
অভি ওর মাথায় চাঁটি মেরে উত্তর দেয়, "আরে বাবা দাঁড়া দাঁড়া। বাসন্তি পুজোর পরে পরী যখন আমার বাড়িতে থাকতে আসবে তখন তোর সাথে দেখা করাব, চিন্তা নেই তোর।"
তর্জনী উচিয়ে বলে অরুনা, "কথা দিচ্ছিস?"
অভি, "হ্যাঁ বাবা কথা দিচ্ছি, তোকে না দেখিয়ে আমি কোথায় যাব রে।"
ওরা ফুচকা খাওয়ার পরে আবার হাঁটতে শুরু করে, ফ্লাইঅভার পার করে কলেজ স্ট্রিটের দিকে চলতে থাকে।
অরুনা, "তাহলে বিহারী শেষ পর্যন্ত প্রেমে পড়ল।" খিলখিল করে হেসে বলে, "আমি এক সময়ে ভাবতাম তোর কপালে কোন মেয়ে জুটবে না। তোর যা তিরখি মেজাজ আর যা মুখ।"
"তিরিক্ষি মেজাজ, হ্যাঁ তা বটে" ম্লান হাসি হেসে অরুনা কে বলল, "এই মেজাজ আমাকে আমার চার পাশের পৃথিবী দিয়েছে রে।"
অরুনা দেখল অভি আবার ভাবুক হয়ে উঠেছে, "এই ছেলে, অসব কথা ছাড়। তোর চোখে জল দেখলে আমার খুব কান্না পায়। তোর মুখে হাসি দেখে আমি সত্যি খুব খুশি। আমি সত্যি পরীর সাথে দেখা করে ওকে অনেক বড় ধন্যবাদ জানাব যে তোর মুখে আবার হাসি ফুটিয়ে তুলেছে।"
অভি, "এই সমুদ্রনীল কে ডেকে নেব কফি হাওসে?"
সমুদ্রনীল, অরুনার বন্ধু, অরুনার প্রেম। কোলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে রসায়নে মাস্টার্স করছে। গত বছর অক্টবরে ওদের দেখা হয় কোন কলেজ অনুষ্ঠানে আর তারপর থেকে প্রেম। সমুদ্রনীল বেশ ভাল ছেলে। যেদিন সমুদ্রনীল অরুনাকে প্রোপস করে, সেদিন অভি সমুদ্রনীল কে বলেছিল যে যদি কোন দিন অরুনার চোখে জল দেখে তাহলে ও সমুদ্র কে আস্ত রাখবে না, কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবে ওকে।