27-06-2020, 09:17 AM
সমীর বলতে থাকে, “তুই যেদিন আমাদের বাড়ি প্রথমবার গেছিলি তার আগে পর্যন্ত মোটামুটি ঠিকঠাক ছিল সব কিছু। কিন্তু তার মাঝে ওর এক বান্ধবীর ফোন আসে, সে কোলকাতায় একটা কলেজে চাকরি পেয়েছে। সেই শুনে ঝিলাম আবার বিগড়ে যায়। আবার বায়না ধরে যে চাকরি করবে। আমি প্রথমে মানা করি, কিন্তু কিছুতেই শোনেনা ঝিলাম। আমাদের মধ্যে মনমালিন্য বেড়ে চলে। এমন দিন গেছে যে আমাকে ওর পাশে পর্যন্ত যেতে দেয়নি। নিজে না খেয়ে সারা রাত মাটিতে শুয়ে থেকেছে। কোলকাতায় থাকাকালীন শুধু অকেসানে মদ খেতাম। এখানে ওর জ্বালায় নিয়মিত হয়ে গেল। মাঝে মাঝে মনে হত বাড়ি গিয়ে কি হবে। সেই ত আবার ওর মুখ দেখা, কিছু না কিছু আছিলায় আবার ঝগড়া শুরু করে দেবে, নিজেকে কষ্ট দেবে।”
অনেকক্ষণ পরে বুধাদিত্য মুখ খোলে, “সত্যি কথা বলতে তুই অনেক নিচ, তুই অনেক স্বার্থপর, বুঝলি। আমি তোর পুরানো বন্ধু বা শত্রু, যাই বলসি, আজ আমি তোর মুখের সামনে বলছি, তুই যা করছিস ওর সাথে খুব ভুল করছিস।”
সমীর রেগে যায়, বুধাদিত্যকে বলে, “আমি জানি ওর সাথে কি করতে হয়। তুই সেদিন না এলে আমি ওকে মেরে বকে ঠিক চুপ করিয়ে দিতাম।”
যেই শোনে যে সমীর ঝিলামের গায়ে হাত তুলবে, সেইখনে বুধাদিত্যের কান গরম হয়ে ওঠে। কোনোরকমে রাগ গিলে নেয়, “আমি সেদিন তোদের ঝগড়ার কথা সব শুনে ছিলাম বাইরে দাঁড়িয়ে। হ্যাঁ, আমি শুনেছিলাম। আমি চলে যেতাম জানিস, তোদের মাঝে আসতে চাইনি আমি। কিন্তু তোদের কথা কাটাকাটি সহ্য সীমার বাইরে চলে যায়। সেইজন্য আমি ঘরে ঢুকেছিলাম।”
সমীর বলে, “তুই এসে ওকে আরও মাথায় চড়িয়ে দিয়েছিস, এবারে কিছু হলে তুই দায়ী। দেখে নিস আমি ওকে বেশি দিন চাকরি করতে দেব না। আমার আর ভালো লাগছে না রে। আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। সত্যি কথা বলতে ওর রুপ যৌবন আমার কাছে শেষ পর্যন্ত বিষ হয়ে দাঁড়াল। কিছুদিন পরে কলেজ জয়েন করবে আমাকে পায়ের নখের যোগ্য বলে গন্য করবে না দেখে নিস।”
বুধাদিত্যের সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়, বুধাদিত্য ওকে বিরত করতে চেষ্টা করে, “তুই কি করবি ওর সাথে? রাগের মাথায় প্লিস কিছু করিস না, একটু ভেবে চিন্তে কাজ করিস। দেখ যেদিন তুই মদ খেয়ে উলটে পরেছিলিস, অন্য মেয়ে হলে সেদিন সেখানে তোকে ওই অবস্থায় ফেলে চলে যেত। তুই জানিস তোর কি অবস্থা ছিল? ঘরের মধ্যে একটা উলঙ্গ মেয়ে উলটে পরে আছে বিছানায়, তুই মাটিতে তোর বাড়া বের করে উলটে পরে। তা সত্ত্বেও ঝিলাম তোকে বুকে আঁকড়ে ধরে, তোর বমি গায়ে মেখে তোকে আগলে রেখেছিল। সত্যি রে, ঝিলামের মতন মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।”
সমীর চুপ করে থাকে বুধাদিত্যের কথা শুনে, “এত কিছু’ত আমাকে বলেনি কোনদিন?”
বুধাদিত্য, “কেন বলতে যাবে? ও’যে তোকে ভালোবাসে সেটা কি বুক চিরে দেখাবে, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে জানাবে?”
সমীরের মাথা লজ্জায় নত হয়ে যায়, বুক ভরে এক শ্বাস নিয়ে বলে, “জানি না কি করব, এখন মাথার ঠিক নেই।”
সেই মুখ দেখে বুধাদিত্যের মনে হল, যে ঝিলাম আর সমীরের মাঝের অন্তরদ্বন্দ অনেক বেড়ে গেছে। ফাটল ধরেছে বিশ্বাসের প্রাচীরে। বড় ভয়ানক এই ফাটল, বুধাদিত্য তাঁর জীবন দিয়ে জানে এই ফাটল কত বড় দ্বন্দ আনতে পারে। বাবা মায়ের মধ্যে সেই প্রাচীর গড়ে উঠেছিল। ছোটোবেলায় মা ওকে নিয়ে সেই যে চলে আসে কোলকাতার বাড়িতে আর ফিরে যায় না ধানবাদে। বুধাদিত্যের সামনে সেই অতীতের চক্র ঘুরে দাঁড়ায়। যতক্ষণ না কেউ ওকে ডাকে ততক্ষণ ও স্বামী স্ত্রীর মাঝে নাক গলাবে না বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে। কিন্তু ঝিলামের কি হবে সেটা একবারের জন্য মনে করে বুক কেঁপে ওঠে।
সপ্তম পর্বঃ অন্তরদ্বন্দ। (#3)
দিনেদিনে বুধাদিত্য বদলে যায়, মদ ছেড়ে দিয়েছে, তবে সিগারেট খাওয়া কমাতে পারেনি। আর বারে যাওয়া হয় না বুধাদিত্যের, নারীসঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে। শুধু মাঝে মাঝে আয়েশার কথা খুব মনে পরে। জানে যে এই বুকে আয়েশা কোন দিন আসতে পারবে না, ঝিলামও কোনদিন আসতে পারবে না। শুধু এক ফাঁকা হৃদয় নিয়ে খুঁজে বেড়ায় মনের মানুষ। কিন্তু সেই মানুষ ধরা দেয়না বুধাদিত্যকে। বুঝতে দেরি হয়না বুধাদিত্যের যে ঝিলামের চোখ, ঝিলামের ঠোঁট বড় ডাকে ওকে, সেটা শুধু ওর মনের ভ্রম। কিছুতেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনা ঝিলামকে। চোখ বন্ধ করলেই ঝিলামের সেই রাতের সুরেলা কণ্ঠ স্বর ভেসে আসে, একটা ফোন করতে বলেছিল ঝিলাম। ঝিলামের কথা মনে পরতেই, মোবাইলে তোলা ঝিলামের ছবি খুলে দেখে। একটু গম্ভির মুখ, তাও যেন ঠোঁটে হাসি টেনে ধরে। রাগলে ভারী সুন্দরী দেখায় ঝিলামকে।
সমীরের সাথে কথা বলে বোঝে যে সমীর একটু নরম হয়ে গেছে। মেনে নিয়েছে ঝিলামের আব্দার, তবে মন থেকে নয়, উপর উপর। বুধাদিত্য একদিন ঝিলাম আর সমীরকে নিয়ে ভিশালের বাড়ি যায়। দিনেদিনে ঝিলাম অনেক পরিনত হয়ে ওঠে। কথাবার্তাতে এক নতুন আত্মপ্রত্যয় দেখা দেয়। বুধাদিত্য লক্ষ্য করল যে ঝিলাম দুর্গাপুর ছেড়েছিল সেই ঝিলাম আর নেই। শীতকাল, ঝিলাম একটা গাড় নীল রঙের জিন্স পড়েছে, উপরে হাল্কা বেগুনি রঙের শার্ট। তারপরে বুধাদিত্যের দেওয়া সাদা ফারের জ্যাকেট। ঝিলাম যেন সুন্দরী এক জলপরী। সমীরের চোখে মুখে যেন হেরে যাওয়ার ভাব বেশি করে ফুটে ওঠে। বুধাদিত্য ঝিলামকে দেখে বেশ খুশি হয়। কিন্তু নিজের মনের ভাব লুকিয়ে রাখে সমীরের সামনে। শমিতাকে বুধাদিত্য ঝিলামের কথা আগে থেকেই বলে রেখেছিল। সামনা সামনি কথা বলার পরে শমিতার মনে হয় যে ঝিলাম এবারে তৈরি। একদিন শমিতা বুধাদিত্যকে ফোন করে জানায় যে ঝিলামকে নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে আসতে হবে। সমীরের সাথে কথা বলে বুধাদিত্য, সমীরকে ছুটি নিতে বাধ্য করে। সমীর ছুটি নিয়ে ঝিলামের সাথে কলেজে যায়। রাতের বেলা সমীর বুধাদিত্যকে ইন্টারভিউর কথা জানায়। কিছুদিনের মধ্যে ঝিলামের চাকরি হয়ে যায়।
ঝিলাম মনেপ্রানে বুঝতে পারে যে বুধাদিত্য না থাকলে এই যাত্রায় ওকে বাঁচানোর কেউ ছিলনা, এমন কি বিবাহিত স্বামী ওর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ছিল। যেদিন এপয়েন্মেন্ট লেটার পায় সেদিন খুশিতে মাটিতে যেন পা পরেনা। সব থেকে আগে বুধাদিত্যকে ফোন করে। এই প্রথম বার ঝিলামের সাথে একা কথা বলছে বুধাদিত্য। ওর সুরেলা উচ্ছল গলার স্বর শুনে বুধাদিত্য পাগল হয়ে যায়।
ঝিলাম, “জানো আজ কুরিয়ারে আমার এপয়েন্মেন্ট লেটার এসেছে। শীতের ছুটির পরে আমার জয়েনিং, জানুয়ারির মাঝামাঝি।” মনে হয় এখুনি দৌড়ে গিয়ে ঝিলামকে জড়িয়ে ধরে। নিজের কেবিনে চুপ করে বসে সেই মনোভাব চেপে নেয় বুধাদিত্য। বুধাদিত্য শুধু একটু হুম করে উত্তর দেয়। ঝিলাম খুশিতে যেন ফেটে পড়ছে, “তুমি আজ বিকেলে আমাদের বাড়ি চলে এস। আমি সমীরকে এখুনি ফোন করে দিচ্ছি অফিস থেকে যাতে তাড়াতাড়ি বের হয়। আমি চিকেন নিয়ে এসছি, চিলি চিকেন বানিয়ে খাওয়াব তোমাকে।”
বুধাদিত্য কাজের আছিলা দেখায়, “না, আজ অনেক কাজ আছে অফিসে। পরে একদিন যাবো। যাই হোক তুমি এখনো সমীরকে ফোন করে জানাও নি কেন? তাড়াতাড়ি ফোন করো ওকে, এযে বড় খুশির খবর।”
ঝিলাম একটু মনমরা হয়ে উত্তর দেয়, “তুমি সত্যি আসবে না?”
ওই গলার স্বর শুনে বুক ফেটে কাঁদতে ইচ্ছে করে বুধাদিত্যের, চোয়াল শক্ত করে ধির গলায় বলে, “না ঝিলাম আমার অনেক কাজ আছে আজকে থাক। তোমরা আনন্দ কর, পরে আমি যাব। আমি তোমার চাকরি পাওয়াতে খুব খুশি হয়েছি।”
ঝিলাম মনমরা হয়ে বলে, “তুমি আসলে খুব ভালো লাগত।” ফোন রেখে দেয় ঝিলাম।
বুধাদিরত্য মোবাইল খুলে ঝিলামের ছবি দেখে বসে বসে। ঝিলামের শেষের আওয়াজ বড় কানের মধ্যে বেজে ওঠে, “তুমি আসলে খুব ভালো লাগত।” ওর দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিধ্বনি হয় সুরেলা গলার আওয়াজ।
কিছু পরে সমীর ওকে ফোন করে। সমীরের গলার স্বর বদলে গেছে, বউয়ের চাকরি নিয়ে একটু খুশি ব্যাক্ত করল। বুধাদিত্যকে অশেষ ধন্যবাদ জানাল। ঝিলামের মিষ্টি ঠোঁটের হসি, নরম গালের লালিমা, দুটি গভীর চোখের অব্যাক্ত ভাষা বুধাদিত্যকে বড় কাছে টানে। শেষ পর্যন্ত হেরে যায় বুধাদিত্য, হুহু করে ওঠে বুক, ফাঁকা হয়ে যায় সবকিছু। খুব মনে হয় আয়েশার কথা। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে আয়েশাকে ফোন করে বুধাদিত্য। কিন্তু ফোনের রিং বেজে বেজে থেমে যায়, অপাশ থেকে কেউ ফোন তোলেনা। বুধাদিত্য একটু ভাবনায় পরে, কিছু হল না ত সেই উচ্ছল তরঙ্গিণীর, বুক আবার যেন হুহু করে ওঠে। ওর কপালে ভাগ্য বিধাতা শুধু মাত্র দেহাত্মবাদী সুখের কথা লিখে গেছে, ওর জন্য ভাগ্য বিধাতা প্রানের আনন্দের কথা লিখে যায়নি। আয়েশার অফিসে ফোন করে জানে যে বেশ কয়েকদিন আয়েশা অফিসে আসছে না, কোন এক কাজে বম্বে গেছে। খুব ইচ্ছে করে নিজের কাউকে ফোন করে কথা বলতে, কিন্তু ওর মনের কথা শোনানোর মতন লোক খুঁজে পায়না।
বিকেলে ফাঁকা বাড়িতে ফিরে মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ। ঝিলামকে কথা দিয়েছিল যে মদ ছোঁবে না, তাই ড্রিঙ্কস আর করেনা। মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত বুধাদিত্য নিজের মনের কথা বলে ফেলে। কাঁদতে কাঁদতে মাকে বলে, “মা আমি ঝিলাম কে ভালোবেসে ফেলেছি মা। আমি কি করব মা, আমাকে একটু পথ দেখাও। আমার যে তুমি ছাড়া এই পৃথিবীতে কেউ নেই মা।” মঞ্জুষাদেবী কাঁচের আড়াল থেকে বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে শুধু হাসেন, কিছু বলেন না সেইদিন।
বুধাদিত্য জানত কোন তারিখে ঝিলাম কলেজ জয়েন করবে তাও চুপ ছিল। সমীর ফোন করে বুধাদিত্যকে জানায় যে ঝিলাম কলেজ জয়েন করবে। সমীর অনুরোধ করে ওদের সাথে যেতে। বুধাদিত্য মজা করে জানায় যে অত সকালে ঘুম থেকেই ওঠে না, ওদের কি করে নিয়ে যাবে। ঝিলাম সমীরের হাত থেকে ফোন নিয়ে বুধাদিত্যকে অনুরোধ করে। ঝিলামের কর্ম জীবনের প্রথম দিন, গত কয়েক দিন ধরে উত্তেজনায় ঝিলামের ঘুম হয় না। সমীর নাছোড়বান্দা, বুধাদিত্যকে সাথে যেতে হবে। বুধাদিত্যের মনে চাপা উত্তেজনা। সমীর ওকে বলে, যেহেতু ঝিলামের কলেজ আর বুধাদিত্যের অফিস একদম কাছাকাছি। সুতরাং ওকে কলেজে ছেড়ে ও অনায়াসে অফিস যেতে পারবে। বুধাদিত্য ঝিলামের মিষ্টি অনুরোধ প্রত্যাখান করতে পারেনা। জানিয়ে দেয় যে সকালে ওদের বাড়ি পৌঁছে যাবে।
শীতকাল, প্রচন্ড ঠাণ্ডা পড়েছে দিল্লীতে। সকাল বেলা গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যায় সমীরদের বাড়ি। দরজা খোলে ঝিলাম, কলেজ যাবার জন্য তৈরি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত নিরীক্ষণ করে বুধাদিত্য। সত্যি একদম শিখিকার মতন দেখতে লাগছে। পরনে হাক্লা গোলাপি তাঁতের শাড়ি, গাড় বাদামি রঙের চওড়া পাড়। গায়ের ওপরে ভারী একটা সোয়েটার। মাথার চুল বেনুনি করা, কপালে লাল টিপ, দুই হাতে পলা বাঁধানো আর একটা ঘড়ি ছাড়া কিছু নেই, ঠোঁটে দুটি হাল্কা গোলাপি। খুব মার্জিত সাজ অতিব সুন্দরী শিক্ষিকা। সমীর যাবার জন্য তৈরি। বুধাদিত্য ওদের নিয়ে গাড়ি করে বেড়িয়ে পরে। সমীর গাড়ির সামনের সিটে উঠতে যায়, ঝিলাম ওকে টেনে ধরে পেছনের সিটে বসিয়ে দেয়। সমীর হাসতে হাসতে পেছনের সিটে গিয়ে বসে। ঝিলাম সারাটা পথ সমীরের হাত ধরে থাকে। আয়নায় সেই দৃশ্য দেখে বুধাদিত্যের মনের খুশি খুশি ভাবটা একটু কেটে যায়। চঞ্চল মনকে শান্ত করে নেয় বুধাদিত্য। ঝিলামকে নামিয়ে দেয়, কলেজের সামনে। সমীর আলতো করে ওর হাত টেনে ধরে। ঝিলাম চোখের ইশারা করে জিজ্ঞেস করে কি করছ? সমীর গাড়ি থেকে নেমে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে কিছু বলে। ঝিলামের গাল লাল হয়ে যায় লজ্জায়। চট করে সমীর ওর গালে একটা ছোটো চুমু খেয়ে নেয়। অনেক দিন পরে একটু যেন আদরের পরশ পায় ঝিলাম, হটাত করে চোখের কোনে জল চলে আসে। সমীর ঝুঁকে পরে ওর গালে হাত দিয়ে যেতে বলে। ঝিলাম গেটের ভেতরে না ঢোকা পর্যন্ত সমীর দাঁড়িয়ে থাকে। বুধাদিত্য সবকিছু গাড়ি থেকে বসে বসে দেখে, একবারের জন্য গাড়ি থেকে নামে না।
ঝিলাম ঢুকে যাবার পরে সমীর সামনের সিটে এসে বসে পরে। বুধাদিত্য ওকে জিজ্ঞেস করে যে ঝিলামের চাকরিতে সমীর খুশি কিনা। সমীর প্রান খোলা হাসি হেসে বলে ঝিলামের মুখের হাসির ফিরে পাবার জন্য ও খুশি। ক্ষণিকের জন্য বুধাদিত্যের মনে হিংসে হয়, আমি তোর কাছ থেকে ঝিলামকে কেড়ে নেব একদিন। অফিসে নামিয়ে দেয় সমীরকে।
ঠিক নামার আগে সমীর বুধাদিত্যের হাত ধরে বলে, “তুই অনেক করেছিস আমাদের জন্য। সেই রাতে আমাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছিস, ঝিলামকে চাকরি দিয়েছিস। তাও তুই আমাদের থেকে দুরে দুরে কেন থাকিস? আমাকে সত্যি কথা বলত একটু?”
ভাষা হারিয়ে ফেলে বুধাদিত্য, কি উত্তর দেবে? বলবে যে ঝিলামকে ভালোবাসে সেই ভালোবাসা যে শুধু শরীরের নয় শুধু মাত্র আত্মার এক অন্য মাত্রার ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার সংজ্ঞা জানেনা বুধাদিত্য, কেউ বুঝবে সেই প্রেমের মানে। আর তাই বুধাদিত্য নিজেকে ওদের থেকে দুরে সরিয়ে দিয়েছে। কি বলবে, বুধাদিত্য, ভেবে পায়না উত্তর।
আমতা আমতা করে বলে, “আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে, আমি যাই।” সমীরকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে গেল। বুকের ভেতরে একটা চিনচিন বেদনা শুরু হয়ে যায়। সমীরের হাসি মুখ, ঝিলামের হাসি মুখ, এর মাঝে কি করছে বুধাদিত্য?
______________________________
অষ্টম পর্বঃ প্রজাপতির প্রস্থান।
ঝিলামের কলেজ আর বুধাদিত্যের অফিস একদম কাছাকাছি। লাঞ্চের পরে বিকেলের দিকে ঝিলামের কলেজ ছুটি হয়ে যায় আর ঝিলাম বুধাদিত্যের অফিস পৌঁছে যায়। বুধাদিত্য ঝিলামকে অফিসের নিচে দেখে অবাক একেবারে আশাতীত দর্শন। সেদিন ঝিলামের পরনে আঁটো গোলাপি রঙের চুড়িদার কামিজ, হাল্কা নীল রঙের সোয়েটার বেশ ফোলা ফোলা। মাথার চুল চুড় করে মাথার ওপরে বাঁধা, তাঁর মধ্যে আবার একটা পেন গোঁজা, ঠিক জাপানি পুতলের মতন দেখতে মনে হয় ঝিলামকে। ঝিলাম অফিসের রিসেপ্সানে বসে ছিল। বুধাদিত্যকে দেখে খুব খুশি, যেন অনেক দিন পরে অতি পুরানো এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে।
একটু কপট অভিমান দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে বুধাদিত্যকে, “চাকরি পাওয়ার পরে এত ডাকলাম তাও একবারের জন্য বাড়ি এলেনা কেন? আমাদের ওপরে রাগ করে আছো? ভাব বড় জ্বালায় এই স্বামী স্ত্রী তাই ওদের থেকে দুরে থাকা ভালো।”
বুধাদিত্য কি উত্তর দেবে ঝিলামকে, অজে সত্যি ঝিলামের থেকে দুরে সরে যেতে চাইছে। যতবার দুরে যায় ততবার ঝিলাম ওকে কাছে ডেকে নেয়। এবারেও ভেবেছিল যে ঝিলামের চাকরির পরে বুধাদিত্য ওদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ কমিয়ে দেবে। কিন্তু চোখের সামনে ঝিলামকে দেখে মাথার মধ্যে সব কিছু গুবলেট হয়ে যায়। হাসতে হাসতে ঝিলামকে বলে যে কাজের চাপের জন্য ওদের সাথে দেখা করতে পারছে না। ঝিলাম ওর কথা বিশ্বাস করে না। ঝিলাম ওকে অনুরোধ করে বাড়িতে ছেড়ে আসতে। বুধাদিত্য মহা ফাঁপরে পরে যায়। বুধাদিত্য বুঝাতে চেষ্টা করে যে অফিসে অনেক কাজ আছে। ঝিলাম জেদ ধরে বসে থাকে, বলে যে অফিসের কাজ শেষ করে ওর সাথে বাড়ি যেতে হবে। নিরুপায় বুধাদিত্য, শেষ পর্যন্ত ঝিলামের জেদের কাছে হার মেনে যায়। রিসেপ্সানে বসিয়ে নিজের কেবিনে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। একটু ভালোলাগা, একটু পূর্বরাগ বুকের ভেতর জেগে ওঠে। কিছু পরে ঝিলামকে নিয়ে বেড়িয়ে পরে। রাস্তায় যেতে যেতে ঝিলাম ওকে কলেজের গল্প শুনাতে শুরু করে দেয়। নতুন চাকরি, নতুন লোকজন, নতুন পরিবেশ, উচ্ছল তরঙ্গিণীর মতন বয়ে চলেছে ঝিলামের মধুর কণ্ঠস্বর। বুধাদিত্য শুধু মাত্র হু, হ্যাঁ ছাড়া বিশেষ উত্তর দিতে চায় না। ঝিলামকে ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে আসে। ঝিলাম অনেক বার বুধাদিত্যকে বাড়ির মধ্যে আসতে বলে কিন্তু বুধাদিত্য কাজের আছিলায় ঝিলামের চোখের সামনে থেকে সরে আসে।
কয়েক দিন পরে কলেজ থেকে আবার ঝিলামের ফোন, “আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে?”
এবারে বুধাদিত্য ওকে মজা করে বলে, “আমি কি তোমার ড্রাইভার?”
ঝিলাম মজা করে বলে, “যদি বলি হ্যাঁ...”
বুধাদিত্য, “সমীর কে বল তোমার জন্য একটা গাড়ি কনে দেবে।”
ঝিলাম, “নিজের জন্য একটা কিনুক আগে তারপরে দেখা যাবে। আর সে’ত আজকাল রাত করে ঘরে ফেরে, আমি আর কিছু বলিনা।”
বুধাদিত্য একটু খানি থমকে যায়, “মানে?”
ঝিলাম শুকনো গলায় বলে, “সমীরের অফিসে নাকি আজ কাল অনেক কাজের চাপ তাই দেরি করে ফেরে। আজকাল আবার টুর একটু বেড়ে গেছে, তবে যেদিন যায় সেদিনেই ফিরে আসে। কিছু বললেই বলে, যে আমি চাকরি পেয়ে গেছি, আমি সব কিছু পেয়ে গেছি, এবারে ওর আর কি দরকার। জানো আমার মনটা খুব কাঁদে সমীরের ওই কথা শুনে।”
বুধাদিত্যের বুক ঝিলামের কথা শুনে কেঁদে ওঠে, “আচ্ছা ঠিক আছে, আমি সমীরের সাথে কথা বলব খানে।”
ঝিলাম, “তুমি আর কত করবে আমাদের জন্য, ছাড়ো আমার ভাগ্য যা আছে তাই নিয়ে থাকি। হ্যাঁ এবারে বল আমাকে ছেড়ে আসবে বাড়িতে না আমি অটো করে চলে যাবো।”
বুধাদিত্য, “তুমি প্লিস অটো করে চলে যাও, আমি দেখি কয়েক দিনের মধ্যে একটা ড্রাইভার যোগাড় করে নেব।”
ওর কথা শুনে হেসে ফেলে ঝিলাম, “আমার জন্য তুমি ড্রাইভার রাখবে? তুমিই ত আমার ড্রাইভার, এক বান্ধবীর জন্য এইটুকু করতে পারবে না?”
বুধাদিত্য, “বাঃ রে তুমি আমাকে জ্বালাতন করবে রোজদিন, গাড়িতে যেতে চাইবে, অফিসে কাজ থাকে তাই একটা ড্রাইভার রাখা ভালো। যেদিন আমার কাজ থাকবে না সেদিন আমি পৌঁছে দেব না হলে ড্রাইভার তোমাকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসবে।”
ঝিলাম হটাত ফিসফিস করে বলে ফেলে, “আমার ড্রাইভার চাইনা, তুমি পাশে থাকলে বড় ভালো লাগে তাই বললাম।” বলেই ঝিলাম ফোন কেটে দেয়। বুধাদিত্য হটাত ওর গলায় ওই কথা শুনে স্থম্ভিত হয়ে যায়। এটাকি ভাললাগার পূর্বাভাস না শুধু মাত্র বন্ধুপ্রীতি?
সেদিনের পরে ঝিলামের ফোন আর আসেনা। বুধাদিত্যের হৃদয় ছটফট করে ঝিলামের সাথে দেখা করার জন্য, কিন্তু আগ বাড়িয়ে যেতে বড় বাধা লাগে। ঝিলামের কথা মনে পড়লেই রোজরাতে মোবাইল খুলে একবার ঝিলামের সেই অভিমান করা মুখের ছবি দেখে আর নিজের মনের ভালোবাসা কে সংযত করে রাখে। এইভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়।
এর মাঝে একদিন সকাল বেলায় আয়েশার ফোন আসে। বুধাদিত্য সবে অফিস যাবার জন্য স্নান করে বেড়িয়েছে। এবারে বেশ জমে ঠাণ্ডা পড়েছে। জানালার বাইরে কুয়াশায় ঢাকা।
আয়েশা, “এই তুমি কি করছ আজকে?”
আয়েশার গলা একটু মনমরা বলে মনে হয়। অনেকদিন পরে আয়েশার গলা শুনে অবাক হয়ে যায় বুধাদিত্য, জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার, কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলে তুমি?”
আয়েশার গলা একটু খানি শুকনো, “তুমি কি আজ ফ্রি আছো?”
বুধাদিত্য, “কেন বলত? এমনিতে আমার আজকে অনেক কাজ আছে তবে সেটা তোমার ইচ্ছের ওপরে নির্ভর করছে।”
আয়েশা কাতর কণ্ঠে বলে, “তোমার সাথে একবার দেখা করতে চাই বুধাদিত্য। প্লিস আজকে না কোরো না।”
বুধাদিত্য ভেবে পায়না হটাত আয়েশার একি হল, “ওকে, চলে এস, আমি তাহলে আজ আর অফিস যাচ্ছি না।”
বুধাদিত্য সাতপাঁচ ভাবতে থাকে। রোহিতের সাথে কি কিছু মনমালিন্য ঘটল আয়েশার? না আবার কোন অফিসের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে। বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে এর মাঝে। মদ, মেয়ে সব ছেড়ে এক নতুন বুধাদিত্য, তাও আয়েশা ওকে খুব টানে। আগে আয়েশা যখনি আসত, নিজে রান্না করে যেত। বুধাদিত্যের প্রতি ওর একটা অন্য টান আছে।
আয়েশা যথা সময়ে বুধাদিত্যের দরজার কলিং বেল বাজায়। দরজা খুলে আয়েশাকে সাদর আহবান জানায়। আয়েশা যেন আজ একটু বেশি নিজেকে সাজিয়ে এনেছে। এত সকাল বেলা, বেশ সুন্দর পরিপাটি সেজে এসেছে। সাদা আঁটো জিন্স, গাড় নীল রঙের লম্বা জ্যাকেট, কানে বড় দুল, ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি রঙ, চোখের কোনে আবার কাজল পড়েছে। কাঁধের ব্যাগ দেখে মনে হল যে অফিসের জন্য বের হয়নি, শুধু মাত্র ওর সাথে দেখা করার জন্যই এসেছে। আয়েশার চোখে মুখে এক অধভুত খুশির আলো ছড়িয়ে।
আয়েশা দরজা বন্ধ করে ওকে ঘরের মধ্যে ঠেলে দিয়ে বলে, “কেমন আছো? আমার কথা মনে পড়ত তোমার?”
বুধাদিত্য ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে আয়েশাকে, “হ্যাঁ মনে পড়েছিল, তাই ত ফোন করেছিলাম কতবার। কিন্তু ফোন রিং হয়ে যেত কেউ উঠাত না। এত দিন কোথায় ছিলে?”
আয়েশা গায়ের জ্যাকেট খুলে সোফার ওপরে বসে বলে, “হ্যাঁ ফোনটা খারাপ হয়ে গেছিল, এই কদিনে কারুর ফোন ধরতে পারিনি।”
বুধাদিত্য ওর পাশে বসে ওর কাঁধের ওপরে হাত রাখে, আয়েশা ওর দিকে সরে এসে ঘন হয়ে বুকের কাছে বসে বুকের ওপরে আদর করে দেয়। আয়েশার গাঁ থেকে খুব মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসে ওর নাকে, আয়েশার মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে প্রগার করে নেয় আলিঙ্গন। আয়েশা নিজেকে ছেড়ে দেয় বুধাদিত্যের পেসিবহুল বাহুবন্ধনের মাঝে।
বুধাদিত্য ওকে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বলত, কোথায় গেছিলে আর কেন এতদিনে একবার যোগাযোগ করনি।”
আয়েশা বুধাদিত্যের কথার উত্তর দেয় না, পালটে জিজ্ঞেস করে, “কি আছে রান্না করার মতন, দেখি আগে তোমার জন্য রান্না করে ফেলি তারপরে দুজনে মিলে অনেক গল্প করব, তোমার সব গল্প আমি শুনব আজকে।”
আয়েশা নিজেকে বুধাদিত্যের আলিঙ্গন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে পরে সোফা থেকে। হাঁটার তালে ভারী পাছা বুধাদিত্যের চোখের সামনে দুলে ওঠে। বুধাদিত্যের তলপেটে চিনচিন করে ওঠে, লিঙ্গ একটু শক্ত হয়ে যায়, আয়েশার পাছার দুলুনি দেখে। রান্না ঘরে ঢোকার আগে আয়েশা ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখে যে বুধাদিত্যের নজর ওর সুগোল নিটোল পাছার ওপরে নিবদ্ধ। খিলখিল করে হেসে ফেলে আয়েশা, সেই মিষ্টি হাসির সুর বন্ধ ঘরের দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয়।
বুধাদিত্য আয়েশাকে জানায়, “আমি মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি, আয়েশা।”
আয়েশা ওই কথা শুনে অবাক হয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, “কি বলছ? তুমি ড্রিঙ্ক করা ছেড়ে দিয়েছ? হতেই পারে না।”
বুধাদিত্য কাষ্ঠ হাসি হেসে বলে, “বিশ্বাস না হলে ফ্রিজ খুলে দেখতে পার।”
আয়েশা নিজের কান বিশ্বাস করে না, ফ্রিজ খুলে দেখে যে শুধু খাবার দাবার ছাড়া, কোন মদের বোতল ফ্রিজে নেই। ফ্রিজের দরজা বন্ধ করে বুধাদিত্যের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। এতদিন ভাবত, যে বুধাদিত্য শুধু ওর কথা শোনে, কিন্তু ওর জীবনে অন্য কেউ এসেছে জেনে চোখের কোনায় নিজের অজান্তে একটু খানি ছলকে ওঠে খুশির আর বেদনা মাখা অশ্রু।
আয়েশা আবার বুধাদিত্যের কাছে এগিয়ে আসে, ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর মুখখানি আঁজলা করে তুলে ধরে। বুধাদিত্যের মন হুহু করে ওঠে আয়েশার স্নেহ ভালোবাসা মাখানো পরশে। আয়েশা ওকে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে শেষ পর্যন্ত কাউকে পেয়েছ, বল? আমি খুব খুশি। কে সে আমার সাথে দেখা করাবে না, তাকে?”
বুধাদিত্য কি বলবে, বলবে যে মনে মনে ঝিলামকে ভালোবেসে ফেলেছে আর তাই ওর কথা মেনে মদ, নারীসঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে। বুধাদিত্য মুখে হাসি টেনে এনে বলে, “না গো ডাক্তার দেখিয়েছিলাম, বোকা... ড্রিঙ্ক করতে করতে লিভারটা বড় হয়ে গেছে তাই মদ ছাড়তে হল।”
আয়েশা ম্লান হেসে বলে, “তোমার চোখ বলছে তুমি খুব বড় ব্যাথা লুকিয়ে আছো, ডাক্তারের কথা সব মিথ্যে। সত্যি কথা বল না আমাকে, কে এসেছে তোমার জীবনে, আমি তোমাকে কিছু বলব না।”
বুধাদিত্য চেপে যায় ঝিলামের সাথে ওর অপ্রকাশিত সম্পর্কের কথা, “সত্যি তোমার প্রমিস, আয়েশা, এই বুক বড় ফাঁকা।”
আয়েশা ওকে জড়িয়ে ধরে দুইহাতে, ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে বলে, “আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করব যাতে খুব তারাতারি তুমি মনের মানুষ খুঁজে পাও।”
বুধাদিত্য ওর বুকের মাঝে মাথা রেখে দুহাতে আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে থাকে। অনেকদিন পরে ওর ভাললাগার পাত্রীকে বুকের কাছে পেয়েছে। মনের মধ্যে একটা চিনচিন ব্যাথা থাকা স্বত্তেও আয়েশাকে পেয়ে সেই বেদনা একটু খানি স্তিমিত হয়ে গেছে।
আয়েশা কিছু পরে বলে, “এই ছাড়ো আমাকে, রান্না সেরে ফেলি, তারপরে দুজনে মিলে শুধু গল্প করব।”
ফ্রিজে কিছু কাঁচা চিকেন রাখা ছিল, সেটা রান্না করে ফেলে আয়েশা। রান্না করতে করতে বুধাদিত্যের সাথে গল্প করে এইকদিনে কোথায় ছিল। রোহিতের একমাস লম্বা একটা অফিসিয়াল টুর ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তাই তাঁর সাথে ইউরোপ গিয়েছিল। রোম, প্যারিস, মিলান, হেগ, বার্লিন অনেক জায়গা ঘুরেছে। নানান জায়গা ঘুরে ওর খুব ভালো লেগেছে, কোথায় কিকি দেখেছে সেই সব বর্ণনা। বুধাদিত্য উচ্ছল সেই প্রজাপতির মধুর ধ্বনি শোনে মন দিয়ে। একবার মনে হয় পেছন থেকে আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে ওর ওই মরালী গর্দানে ঠোঁট চেপে ধরে। দুই ভারী পাছার মাঝে নিজের উত্থিত লিঙ্গ চেপে, পিষে দেয় আয়েশার নরম দেহ।
আয়েশা ওর চোখের ভাষা পড়ে ফেলে, বাঁকা হেসে বলে, “পড়ে হবে ডারলিং একটু সবুর করো। ওই ভাবে দেখতে থাকলে আমার দেহ জ্বলে পুরে ছারখার হয়ে যাবে।”
বুধাদিত্য হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, “উম্মম্ম... আমি যে আর থাকতে পারছি না, বেবি... তোমাকে আমার এখুনি চাই।”
আয়েশা খিলখিল করে হেসে ফেলে, বলে, “যাও আমার পেছনে এইরকম ভাবে দাঁড়িয়ে থেকও না। একটু হিটার চালিয়ে দাও বড় ঠাণ্ডা লাগছে।”
বুধাদিত্য আয়েশার পেছনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীর ওর পেছনে চেপে ধরে। পাতলা কোমরের দুপাশ থেকে হাত নিয়ে গিয়ে গোল নরম তুলতুলে পেট চেপে ধরে এক হাতের থাবায়, অন্য হাত নিয়ে যায় ওর পাঁজরের ওপরে, ঠিক উন্নত স্তনের নিচে চেপে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে আয়েশাকে। আয়েশা বুধাদিত্যের প্রেমঘন বাহুর মাঝে জড়িয়ে পড়ে ককিয়ে ওঠে। নিটোল পাছার খাঁজে উত্থিত লিঙ্গের কঠিন পরশ অনুভব করে। আয়েশা ওর হাত ধরে নিজের দেহের ওপরে বুধাদিত্যের বাহুবন্ধন আরও প্রগাড় করে নেয়। মাথা বেঁকিয়ে বুধাদিত্যের ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দেয়। উষ্ণ শ্বাসে ভরিয়ে দেয় পরস্পরের মুখ।
চুম্বন শেষে আয়েশা বুধাদিত্যের হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। রান্না ঘর থেকে একটা থালা নিয়ে আসে, বলে, “আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দেব, তুমি আমাকে কোলে নিয়ে বসে থেকো। তুমি আমাকে একটু জোরে জড়িয়ে ধরবে, প্লিস?”
আয়েশা হাতে থালা নিয়ে বুধাদিত্যের কোলের ওপরে বসে পরে। বুধাদিত্য দুহাতে আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে থাকে। আয়েশা ওকে খাইয়ে দেয় আর মিটিমিটি হাসে। দুই প্রেমঘন নরনারীর মাঝে ভালোবাসার আগুন জ্বলে ওঠে। নরম পাছার চাপের নিচে বুধাদিত্যের লিঙ্গ ধিরেধিরে নিজের কঠিন অবয়াব ধারন করে। বারেবারে নিচ থেকে ঠেলে দেয় নরম আয়েশাকে, আয়েশা ইচ্ছে করেই বুধাদিত্যকে উত্যক্ত করার জন্য পাছা দিয়ে চেপে ধরে কঠিন লিঙ্গ। খাওয়া চলাকালীন চলে আদরের খেলা, মিষ্টি মধুর আহা, উহু ধ্বনি, মাঝে মাঝে একটু চুম্বন, নিজে খায় আর বুধাদিত্যকে খাইয়ে দেয়। মাঝে মাঝে বুধাদিত্যের মুখের ভেতর থেকে মাংসের টুকরো কামড়ে ধরে, দুটি প্রেমাসিক্ত নরনারী কামনার খেলায় মেতে ওঠে খেতে খেতে।
খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে, আয়েশা ঝাঁপিয়ে পরে বুধাদিত্যের কোলে। বুধাদিত্য আয়েশার হাবভাব ঠিক ভাবে ধরতে পারেনা। উদ্দাম আয়েশা আজ যেন আজ এক সুন্দরী প্রজাপতি, ওকে আদরে, ভালবাসায় ভরিয়ে দেবার জন্য তৎপর। প্রাণপণে দুহাতে বুধাদিত্যকে জড়িয়ে ধরে, প্রসস্থ কঠিন বুকের ওপরে, নরম স্তন চেপে ফিসফিস করে প্রেমঘন গলায় অনুরোধ করে ওকে ভালোবাসার জন্য। আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। চুম্বন গভীর করে তোলে আয়েশা, বুধাদিত্যের পরনের গেঞ্জি খুলে নগ্ন বুকের ত্বকের ওপরে নরম আঙুল দিয়ে আঁচর কাটে। বুধাদিত্য ওর পেছনে হাত নিয়ে গিয়ে নরম পাছা চেপে ধরে। আয়েশাকে ঠেলে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আয়েশা বুধাদিত্যের ঠোঁট ছেড়ে ওর গলায়, কাঁধে, বুলের ওপরে চুম্বনের ঝড় বইয়ে দেয়। ছোটো ছোটো চুম্বনের সাথে সাথে, জিবের ডগা বের করে লালার দাগ এঁকে দেয় বুধাদিত্যের বুকে। বুধাদিত্য আয়েশার কোমরে হাত নিয়ে গিয়ে গায়ের জামা উপর দিকে টেনে তোলে। আয়েশা হাত উঁচু করে বুধাদিত্যকে সাহায্য করে জামা খুলে দিতে। আয়েশার পরনে ছোটো লাল ব্রা বেড়িয়ে পরে জামার ভেতর থেকে। পীনোন্নত স্তন জোড়া ছোটো ব্রার বাধুনির মাঝে পরস্পরের সাথে মারামারি করে। আয়েশা বুধাদিত্যের মাথার চুল আঁকড়ে ধরে বুকের খাঁজের ওপরে চেপে ধরে। ঘন মৃদু কন্ঠে ওর স্তনের নরম মাংসে চুম্বনে চুষে ভরিয়ে দিতে অনুরোধ করে বারেবারে। বুধাদিত্য ঠোঁট নামিয়ে আনে আয়েশার কাঁধের ওপরে, গলার ওপরে চুমু খেতে থাকে, ধিরে ধিরে ঠোঁট নিচে নামে, বুকের ওপরে জিবের ডগা দিয়ে লালার দাগ কেটে দেয়। তপ্ত ত্বকের ওপরে জলের দাগ পরে যেন ছ্যাক করে ওঠে। কামনার আগুনে দুই জনের শরীর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আয়েশার উরু মাঝে বুধাদিত্যের কঠিন লিঙ্গ স্পর্শ করে। জিন্সের উপর দিয়েই চেপে ধরে যৌনাঙ্গের সাথে যৌনাঙ্গ। কঠিন অনুভুতি পেয়ে আয়েশা পাগল হয়ে যায়। ঠোঁট অল্প ফাঁক করে শীৎকার করে প্রেমে পাগল আয়েশা। বুধাদিত্যের ঠোঁট নেমে যায় ব্রার ওপরে, কামড়ে, চুষে পিষে একাকার করে দেয় আয়েশার স্তন জোড়া। হাত দুটি একবার পাছার ওপরে, একবার পিঠের ওপরে ইতরের মতন বিচরন করে।
আয়েশা বুধাদিত্যের মাথা স্তনের ওপরে চেপে ধরে বলে, “হানি, আই মিস ইউ। আজ আমাকে খুব করে ভালোবাস।”
আয়েশার ধরা গলার আওয়াজে বুধাদিত্য ওর মুখের দিকে মুখ তুলে তাকায়, “কি হয়েছে তোমার?”
চোখ দুটি ছলছল, চোখের পাতা ভিজে গেছে। ঠোঁটে হাসি টেনে বলে, “আমি চলে যাচ্ছি, দিল্লী ছেড়ে, তোমাকে ছেড়ে।”
বুধাদিত্যের মাথা ঘুরে যায়, নাকের ডগা লাল হয়ে আসে, চোয়াল শক্ত করে চাপা গলায় আয়েশাকে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় যাচ্ছ?”
আয়েশা হাসিহাসি মুখে চোখে জল নিয়ে বলে, “অনেক দুরে, সাত সমুদ্র তের নদী পার করে। রোহিতের লন্ডনে চাকরি হয়েছে, ওর সাথে আমাকে যেতে হবে, বুধাদিত্য। আমার ভিসা হয়ে গেছে, পরের মাসে আমি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।” বুধাদিত্য এক’পা পেছনে সরে যায়, কিন্তু আয়েশার কোমর থেকে হাত সরায় না, আলতো করে ধরে থাকে আয়েশার কোমর। আয়েশা ওর গলা জড়িয়ে বলে, “আরও একটা খবর আছে,” একটু থেমে যায় আয়েশা, “আমি প্রেগ্ন্যান্ট। গত মাসে, রোহিতের সাথে, বার্লিনে। ছয় সপ্তাহ হল আমার প্রেগ্ন্যান্সির।”
বুধাদিত্য আয়েশার কোমর ছেড়ে দেয়, ওর বুকের মাঝে হুহু করে ওঠে এক আর্তনাদ। ব্যাথিত বুধাদিত্য, কাঁপা গলায় আয়েশাকে বলে, “আমি জানি আমি বড় পাপী, আমি নিচ, আমি ইতর, ব্যাভিচারি। আমি অন্যের বউয়ের সাথে শুই, অন্যের বউয়ের সাথে প্রেম করি। সেই পর্যন্ত ঠিক ছিল আয়েশা, কিন্তু কারুর মায়ের গায়ে হাত দিতে পারিনা, কারুর মাকে আমি কলুষিত করতে পারব না, আয়েশা।” ধুপ করে সোফার ওপরে বসে পরে বুধাদিত্য, দু’চোখে শ্রাবনের অঝর বারিধারা। মাথার চুল আঁকড়ে, নিজেকে অভিশাপ দিতে থাকে, “আমার মতন পাপী, আমার মতন দুঃখী যেন এই পৃথিবীতে আর কেউ না জন্মায়, সেই প্রার্থনা কর। আমি মাকে হারিয়েছি ছোটো বেলায়, কারুর মাকে আমি কলুষিত করতে পারব না আয়েশা। তুমি চলে যাও।” বুক ফাটিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে বুধাদিত্য, “আয়েশা তুমি চলে যাও।”
আয়েশা ওর সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেলে, কিছু বলার নেই আর বুধাদিত্যকে। বড় বেদনা এই বুকে সামনে বসা ছেলেটার জন্য, যতদিন শরীরে খেলা হিসাবে ছিল ততদিন ঠিক ছিল, কিন্তু সব কিছু জেনে বুঝে প্রেমে পড়েছিল বুধাদিত্য, ঝুঁকে গেছিল আয়েশাও।
আয়েশা ওর কপালে ছোটো চুমু খেয়ে বলে, দুই কাজল কালো চোখে জল, চোখের পাতা ভারী, ঠোঁট দুটি তিরতির করে কেঁপে ওঠে, “প্রথম যেদিন তোমার কোলে এসেছিলাম, সেদিন আমাকে একটা গোলাপ দিয়েছিলে সেটা শুকিয়ে গেছে। আমাদের ভালোবাসা বড় মেকি, বড় নিষ্ঠুর। আমি নিজেই জানিনা আমি কাকে বেশি ভালোবাসি, রোহিত না তুমি। শেষ পর্যন্ত আমি ঠিক করলাম যে আমি রোহিতের সাথে চলে যাব। আমি চললাম বুধাদিত্য, আমাকে আর খুঁজতে চেষ্টা করো না। জানি পৃথিবীটা অনেক ছোটো, হয়ত কোন এক মোড়ে আবার দেখা হবে কিন্তু দয়া করে তুমি আমাকে আর খুঁজতে এস না।”
জামা কাপড় পরে, চোখের জল মুছে ফেলে আয়েশা। আর দাঁড়ায় না, দরজা খুলে বেড়িয়ে যায় চুপ করে। বুধাদিত্য সোফার ওপরে পাথরের মূর্তির মতন বসে থাকে। দরজা খোলা, ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকে পরে ঘরের মধ্যে, কিন্তু বুকের আগুন নেভাতে অক্ষম সেই ঠাণ্ডা বাতাস।
......
অনেকক্ষণ পরে বুধাদিত্য মুখ খোলে, “সত্যি কথা বলতে তুই অনেক নিচ, তুই অনেক স্বার্থপর, বুঝলি। আমি তোর পুরানো বন্ধু বা শত্রু, যাই বলসি, আজ আমি তোর মুখের সামনে বলছি, তুই যা করছিস ওর সাথে খুব ভুল করছিস।”
সমীর রেগে যায়, বুধাদিত্যকে বলে, “আমি জানি ওর সাথে কি করতে হয়। তুই সেদিন না এলে আমি ওকে মেরে বকে ঠিক চুপ করিয়ে দিতাম।”
যেই শোনে যে সমীর ঝিলামের গায়ে হাত তুলবে, সেইখনে বুধাদিত্যের কান গরম হয়ে ওঠে। কোনোরকমে রাগ গিলে নেয়, “আমি সেদিন তোদের ঝগড়ার কথা সব শুনে ছিলাম বাইরে দাঁড়িয়ে। হ্যাঁ, আমি শুনেছিলাম। আমি চলে যেতাম জানিস, তোদের মাঝে আসতে চাইনি আমি। কিন্তু তোদের কথা কাটাকাটি সহ্য সীমার বাইরে চলে যায়। সেইজন্য আমি ঘরে ঢুকেছিলাম।”
সমীর বলে, “তুই এসে ওকে আরও মাথায় চড়িয়ে দিয়েছিস, এবারে কিছু হলে তুই দায়ী। দেখে নিস আমি ওকে বেশি দিন চাকরি করতে দেব না। আমার আর ভালো লাগছে না রে। আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। সত্যি কথা বলতে ওর রুপ যৌবন আমার কাছে শেষ পর্যন্ত বিষ হয়ে দাঁড়াল। কিছুদিন পরে কলেজ জয়েন করবে আমাকে পায়ের নখের যোগ্য বলে গন্য করবে না দেখে নিস।”
বুধাদিত্যের সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়, বুধাদিত্য ওকে বিরত করতে চেষ্টা করে, “তুই কি করবি ওর সাথে? রাগের মাথায় প্লিস কিছু করিস না, একটু ভেবে চিন্তে কাজ করিস। দেখ যেদিন তুই মদ খেয়ে উলটে পরেছিলিস, অন্য মেয়ে হলে সেদিন সেখানে তোকে ওই অবস্থায় ফেলে চলে যেত। তুই জানিস তোর কি অবস্থা ছিল? ঘরের মধ্যে একটা উলঙ্গ মেয়ে উলটে পরে আছে বিছানায়, তুই মাটিতে তোর বাড়া বের করে উলটে পরে। তা সত্ত্বেও ঝিলাম তোকে বুকে আঁকড়ে ধরে, তোর বমি গায়ে মেখে তোকে আগলে রেখেছিল। সত্যি রে, ঝিলামের মতন মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।”
সমীর চুপ করে থাকে বুধাদিত্যের কথা শুনে, “এত কিছু’ত আমাকে বলেনি কোনদিন?”
বুধাদিত্য, “কেন বলতে যাবে? ও’যে তোকে ভালোবাসে সেটা কি বুক চিরে দেখাবে, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে জানাবে?”
সমীরের মাথা লজ্জায় নত হয়ে যায়, বুক ভরে এক শ্বাস নিয়ে বলে, “জানি না কি করব, এখন মাথার ঠিক নেই।”
সেই মুখ দেখে বুধাদিত্যের মনে হল, যে ঝিলাম আর সমীরের মাঝের অন্তরদ্বন্দ অনেক বেড়ে গেছে। ফাটল ধরেছে বিশ্বাসের প্রাচীরে। বড় ভয়ানক এই ফাটল, বুধাদিত্য তাঁর জীবন দিয়ে জানে এই ফাটল কত বড় দ্বন্দ আনতে পারে। বাবা মায়ের মধ্যে সেই প্রাচীর গড়ে উঠেছিল। ছোটোবেলায় মা ওকে নিয়ে সেই যে চলে আসে কোলকাতার বাড়িতে আর ফিরে যায় না ধানবাদে। বুধাদিত্যের সামনে সেই অতীতের চক্র ঘুরে দাঁড়ায়। যতক্ষণ না কেউ ওকে ডাকে ততক্ষণ ও স্বামী স্ত্রীর মাঝে নাক গলাবে না বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে। কিন্তু ঝিলামের কি হবে সেটা একবারের জন্য মনে করে বুক কেঁপে ওঠে।
সপ্তম পর্বঃ অন্তরদ্বন্দ। (#3)
দিনেদিনে বুধাদিত্য বদলে যায়, মদ ছেড়ে দিয়েছে, তবে সিগারেট খাওয়া কমাতে পারেনি। আর বারে যাওয়া হয় না বুধাদিত্যের, নারীসঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে। শুধু মাঝে মাঝে আয়েশার কথা খুব মনে পরে। জানে যে এই বুকে আয়েশা কোন দিন আসতে পারবে না, ঝিলামও কোনদিন আসতে পারবে না। শুধু এক ফাঁকা হৃদয় নিয়ে খুঁজে বেড়ায় মনের মানুষ। কিন্তু সেই মানুষ ধরা দেয়না বুধাদিত্যকে। বুঝতে দেরি হয়না বুধাদিত্যের যে ঝিলামের চোখ, ঝিলামের ঠোঁট বড় ডাকে ওকে, সেটা শুধু ওর মনের ভ্রম। কিছুতেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনা ঝিলামকে। চোখ বন্ধ করলেই ঝিলামের সেই রাতের সুরেলা কণ্ঠ স্বর ভেসে আসে, একটা ফোন করতে বলেছিল ঝিলাম। ঝিলামের কথা মনে পরতেই, মোবাইলে তোলা ঝিলামের ছবি খুলে দেখে। একটু গম্ভির মুখ, তাও যেন ঠোঁটে হাসি টেনে ধরে। রাগলে ভারী সুন্দরী দেখায় ঝিলামকে।
সমীরের সাথে কথা বলে বোঝে যে সমীর একটু নরম হয়ে গেছে। মেনে নিয়েছে ঝিলামের আব্দার, তবে মন থেকে নয়, উপর উপর। বুধাদিত্য একদিন ঝিলাম আর সমীরকে নিয়ে ভিশালের বাড়ি যায়। দিনেদিনে ঝিলাম অনেক পরিনত হয়ে ওঠে। কথাবার্তাতে এক নতুন আত্মপ্রত্যয় দেখা দেয়। বুধাদিত্য লক্ষ্য করল যে ঝিলাম দুর্গাপুর ছেড়েছিল সেই ঝিলাম আর নেই। শীতকাল, ঝিলাম একটা গাড় নীল রঙের জিন্স পড়েছে, উপরে হাল্কা বেগুনি রঙের শার্ট। তারপরে বুধাদিত্যের দেওয়া সাদা ফারের জ্যাকেট। ঝিলাম যেন সুন্দরী এক জলপরী। সমীরের চোখে মুখে যেন হেরে যাওয়ার ভাব বেশি করে ফুটে ওঠে। বুধাদিত্য ঝিলামকে দেখে বেশ খুশি হয়। কিন্তু নিজের মনের ভাব লুকিয়ে রাখে সমীরের সামনে। শমিতাকে বুধাদিত্য ঝিলামের কথা আগে থেকেই বলে রেখেছিল। সামনা সামনি কথা বলার পরে শমিতার মনে হয় যে ঝিলাম এবারে তৈরি। একদিন শমিতা বুধাদিত্যকে ফোন করে জানায় যে ঝিলামকে নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে আসতে হবে। সমীরের সাথে কথা বলে বুধাদিত্য, সমীরকে ছুটি নিতে বাধ্য করে। সমীর ছুটি নিয়ে ঝিলামের সাথে কলেজে যায়। রাতের বেলা সমীর বুধাদিত্যকে ইন্টারভিউর কথা জানায়। কিছুদিনের মধ্যে ঝিলামের চাকরি হয়ে যায়।
ঝিলাম মনেপ্রানে বুঝতে পারে যে বুধাদিত্য না থাকলে এই যাত্রায় ওকে বাঁচানোর কেউ ছিলনা, এমন কি বিবাহিত স্বামী ওর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ছিল। যেদিন এপয়েন্মেন্ট লেটার পায় সেদিন খুশিতে মাটিতে যেন পা পরেনা। সব থেকে আগে বুধাদিত্যকে ফোন করে। এই প্রথম বার ঝিলামের সাথে একা কথা বলছে বুধাদিত্য। ওর সুরেলা উচ্ছল গলার স্বর শুনে বুধাদিত্য পাগল হয়ে যায়।
ঝিলাম, “জানো আজ কুরিয়ারে আমার এপয়েন্মেন্ট লেটার এসেছে। শীতের ছুটির পরে আমার জয়েনিং, জানুয়ারির মাঝামাঝি।” মনে হয় এখুনি দৌড়ে গিয়ে ঝিলামকে জড়িয়ে ধরে। নিজের কেবিনে চুপ করে বসে সেই মনোভাব চেপে নেয় বুধাদিত্য। বুধাদিত্য শুধু একটু হুম করে উত্তর দেয়। ঝিলাম খুশিতে যেন ফেটে পড়ছে, “তুমি আজ বিকেলে আমাদের বাড়ি চলে এস। আমি সমীরকে এখুনি ফোন করে দিচ্ছি অফিস থেকে যাতে তাড়াতাড়ি বের হয়। আমি চিকেন নিয়ে এসছি, চিলি চিকেন বানিয়ে খাওয়াব তোমাকে।”
বুধাদিত্য কাজের আছিলা দেখায়, “না, আজ অনেক কাজ আছে অফিসে। পরে একদিন যাবো। যাই হোক তুমি এখনো সমীরকে ফোন করে জানাও নি কেন? তাড়াতাড়ি ফোন করো ওকে, এযে বড় খুশির খবর।”
ঝিলাম একটু মনমরা হয়ে উত্তর দেয়, “তুমি সত্যি আসবে না?”
ওই গলার স্বর শুনে বুক ফেটে কাঁদতে ইচ্ছে করে বুধাদিত্যের, চোয়াল শক্ত করে ধির গলায় বলে, “না ঝিলাম আমার অনেক কাজ আছে আজকে থাক। তোমরা আনন্দ কর, পরে আমি যাব। আমি তোমার চাকরি পাওয়াতে খুব খুশি হয়েছি।”
ঝিলাম মনমরা হয়ে বলে, “তুমি আসলে খুব ভালো লাগত।” ফোন রেখে দেয় ঝিলাম।
বুধাদিরত্য মোবাইল খুলে ঝিলামের ছবি দেখে বসে বসে। ঝিলামের শেষের আওয়াজ বড় কানের মধ্যে বেজে ওঠে, “তুমি আসলে খুব ভালো লাগত।” ওর দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিধ্বনি হয় সুরেলা গলার আওয়াজ।
কিছু পরে সমীর ওকে ফোন করে। সমীরের গলার স্বর বদলে গেছে, বউয়ের চাকরি নিয়ে একটু খুশি ব্যাক্ত করল। বুধাদিত্যকে অশেষ ধন্যবাদ জানাল। ঝিলামের মিষ্টি ঠোঁটের হসি, নরম গালের লালিমা, দুটি গভীর চোখের অব্যাক্ত ভাষা বুধাদিত্যকে বড় কাছে টানে। শেষ পর্যন্ত হেরে যায় বুধাদিত্য, হুহু করে ওঠে বুক, ফাঁকা হয়ে যায় সবকিছু। খুব মনে হয় আয়েশার কথা। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে আয়েশাকে ফোন করে বুধাদিত্য। কিন্তু ফোনের রিং বেজে বেজে থেমে যায়, অপাশ থেকে কেউ ফোন তোলেনা। বুধাদিত্য একটু ভাবনায় পরে, কিছু হল না ত সেই উচ্ছল তরঙ্গিণীর, বুক আবার যেন হুহু করে ওঠে। ওর কপালে ভাগ্য বিধাতা শুধু মাত্র দেহাত্মবাদী সুখের কথা লিখে গেছে, ওর জন্য ভাগ্য বিধাতা প্রানের আনন্দের কথা লিখে যায়নি। আয়েশার অফিসে ফোন করে জানে যে বেশ কয়েকদিন আয়েশা অফিসে আসছে না, কোন এক কাজে বম্বে গেছে। খুব ইচ্ছে করে নিজের কাউকে ফোন করে কথা বলতে, কিন্তু ওর মনের কথা শোনানোর মতন লোক খুঁজে পায়না।
বিকেলে ফাঁকা বাড়িতে ফিরে মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ। ঝিলামকে কথা দিয়েছিল যে মদ ছোঁবে না, তাই ড্রিঙ্কস আর করেনা। মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত বুধাদিত্য নিজের মনের কথা বলে ফেলে। কাঁদতে কাঁদতে মাকে বলে, “মা আমি ঝিলাম কে ভালোবেসে ফেলেছি মা। আমি কি করব মা, আমাকে একটু পথ দেখাও। আমার যে তুমি ছাড়া এই পৃথিবীতে কেউ নেই মা।” মঞ্জুষাদেবী কাঁচের আড়াল থেকে বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে শুধু হাসেন, কিছু বলেন না সেইদিন।
বুধাদিত্য জানত কোন তারিখে ঝিলাম কলেজ জয়েন করবে তাও চুপ ছিল। সমীর ফোন করে বুধাদিত্যকে জানায় যে ঝিলাম কলেজ জয়েন করবে। সমীর অনুরোধ করে ওদের সাথে যেতে। বুধাদিত্য মজা করে জানায় যে অত সকালে ঘুম থেকেই ওঠে না, ওদের কি করে নিয়ে যাবে। ঝিলাম সমীরের হাত থেকে ফোন নিয়ে বুধাদিত্যকে অনুরোধ করে। ঝিলামের কর্ম জীবনের প্রথম দিন, গত কয়েক দিন ধরে উত্তেজনায় ঝিলামের ঘুম হয় না। সমীর নাছোড়বান্দা, বুধাদিত্যকে সাথে যেতে হবে। বুধাদিত্যের মনে চাপা উত্তেজনা। সমীর ওকে বলে, যেহেতু ঝিলামের কলেজ আর বুধাদিত্যের অফিস একদম কাছাকাছি। সুতরাং ওকে কলেজে ছেড়ে ও অনায়াসে অফিস যেতে পারবে। বুধাদিত্য ঝিলামের মিষ্টি অনুরোধ প্রত্যাখান করতে পারেনা। জানিয়ে দেয় যে সকালে ওদের বাড়ি পৌঁছে যাবে।
শীতকাল, প্রচন্ড ঠাণ্ডা পড়েছে দিল্লীতে। সকাল বেলা গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যায় সমীরদের বাড়ি। দরজা খোলে ঝিলাম, কলেজ যাবার জন্য তৈরি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত নিরীক্ষণ করে বুধাদিত্য। সত্যি একদম শিখিকার মতন দেখতে লাগছে। পরনে হাক্লা গোলাপি তাঁতের শাড়ি, গাড় বাদামি রঙের চওড়া পাড়। গায়ের ওপরে ভারী একটা সোয়েটার। মাথার চুল বেনুনি করা, কপালে লাল টিপ, দুই হাতে পলা বাঁধানো আর একটা ঘড়ি ছাড়া কিছু নেই, ঠোঁটে দুটি হাল্কা গোলাপি। খুব মার্জিত সাজ অতিব সুন্দরী শিক্ষিকা। সমীর যাবার জন্য তৈরি। বুধাদিত্য ওদের নিয়ে গাড়ি করে বেড়িয়ে পরে। সমীর গাড়ির সামনের সিটে উঠতে যায়, ঝিলাম ওকে টেনে ধরে পেছনের সিটে বসিয়ে দেয়। সমীর হাসতে হাসতে পেছনের সিটে গিয়ে বসে। ঝিলাম সারাটা পথ সমীরের হাত ধরে থাকে। আয়নায় সেই দৃশ্য দেখে বুধাদিত্যের মনের খুশি খুশি ভাবটা একটু কেটে যায়। চঞ্চল মনকে শান্ত করে নেয় বুধাদিত্য। ঝিলামকে নামিয়ে দেয়, কলেজের সামনে। সমীর আলতো করে ওর হাত টেনে ধরে। ঝিলাম চোখের ইশারা করে জিজ্ঞেস করে কি করছ? সমীর গাড়ি থেকে নেমে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে কিছু বলে। ঝিলামের গাল লাল হয়ে যায় লজ্জায়। চট করে সমীর ওর গালে একটা ছোটো চুমু খেয়ে নেয়। অনেক দিন পরে একটু যেন আদরের পরশ পায় ঝিলাম, হটাত করে চোখের কোনে জল চলে আসে। সমীর ঝুঁকে পরে ওর গালে হাত দিয়ে যেতে বলে। ঝিলাম গেটের ভেতরে না ঢোকা পর্যন্ত সমীর দাঁড়িয়ে থাকে। বুধাদিত্য সবকিছু গাড়ি থেকে বসে বসে দেখে, একবারের জন্য গাড়ি থেকে নামে না।
ঝিলাম ঢুকে যাবার পরে সমীর সামনের সিটে এসে বসে পরে। বুধাদিত্য ওকে জিজ্ঞেস করে যে ঝিলামের চাকরিতে সমীর খুশি কিনা। সমীর প্রান খোলা হাসি হেসে বলে ঝিলামের মুখের হাসির ফিরে পাবার জন্য ও খুশি। ক্ষণিকের জন্য বুধাদিত্যের মনে হিংসে হয়, আমি তোর কাছ থেকে ঝিলামকে কেড়ে নেব একদিন। অফিসে নামিয়ে দেয় সমীরকে।
ঠিক নামার আগে সমীর বুধাদিত্যের হাত ধরে বলে, “তুই অনেক করেছিস আমাদের জন্য। সেই রাতে আমাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছিস, ঝিলামকে চাকরি দিয়েছিস। তাও তুই আমাদের থেকে দুরে দুরে কেন থাকিস? আমাকে সত্যি কথা বলত একটু?”
ভাষা হারিয়ে ফেলে বুধাদিত্য, কি উত্তর দেবে? বলবে যে ঝিলামকে ভালোবাসে সেই ভালোবাসা যে শুধু শরীরের নয় শুধু মাত্র আত্মার এক অন্য মাত্রার ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার সংজ্ঞা জানেনা বুধাদিত্য, কেউ বুঝবে সেই প্রেমের মানে। আর তাই বুধাদিত্য নিজেকে ওদের থেকে দুরে সরিয়ে দিয়েছে। কি বলবে, বুধাদিত্য, ভেবে পায়না উত্তর।
আমতা আমতা করে বলে, “আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে, আমি যাই।” সমীরকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে গেল। বুকের ভেতরে একটা চিনচিন বেদনা শুরু হয়ে যায়। সমীরের হাসি মুখ, ঝিলামের হাসি মুখ, এর মাঝে কি করছে বুধাদিত্য?
______________________________
অষ্টম পর্বঃ প্রজাপতির প্রস্থান।
ঝিলামের কলেজ আর বুধাদিত্যের অফিস একদম কাছাকাছি। লাঞ্চের পরে বিকেলের দিকে ঝিলামের কলেজ ছুটি হয়ে যায় আর ঝিলাম বুধাদিত্যের অফিস পৌঁছে যায়। বুধাদিত্য ঝিলামকে অফিসের নিচে দেখে অবাক একেবারে আশাতীত দর্শন। সেদিন ঝিলামের পরনে আঁটো গোলাপি রঙের চুড়িদার কামিজ, হাল্কা নীল রঙের সোয়েটার বেশ ফোলা ফোলা। মাথার চুল চুড় করে মাথার ওপরে বাঁধা, তাঁর মধ্যে আবার একটা পেন গোঁজা, ঠিক জাপানি পুতলের মতন দেখতে মনে হয় ঝিলামকে। ঝিলাম অফিসের রিসেপ্সানে বসে ছিল। বুধাদিত্যকে দেখে খুব খুশি, যেন অনেক দিন পরে অতি পুরানো এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে।
একটু কপট অভিমান দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে বুধাদিত্যকে, “চাকরি পাওয়ার পরে এত ডাকলাম তাও একবারের জন্য বাড়ি এলেনা কেন? আমাদের ওপরে রাগ করে আছো? ভাব বড় জ্বালায় এই স্বামী স্ত্রী তাই ওদের থেকে দুরে থাকা ভালো।”
বুধাদিত্য কি উত্তর দেবে ঝিলামকে, অজে সত্যি ঝিলামের থেকে দুরে সরে যেতে চাইছে। যতবার দুরে যায় ততবার ঝিলাম ওকে কাছে ডেকে নেয়। এবারেও ভেবেছিল যে ঝিলামের চাকরির পরে বুধাদিত্য ওদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ কমিয়ে দেবে। কিন্তু চোখের সামনে ঝিলামকে দেখে মাথার মধ্যে সব কিছু গুবলেট হয়ে যায়। হাসতে হাসতে ঝিলামকে বলে যে কাজের চাপের জন্য ওদের সাথে দেখা করতে পারছে না। ঝিলাম ওর কথা বিশ্বাস করে না। ঝিলাম ওকে অনুরোধ করে বাড়িতে ছেড়ে আসতে। বুধাদিত্য মহা ফাঁপরে পরে যায়। বুধাদিত্য বুঝাতে চেষ্টা করে যে অফিসে অনেক কাজ আছে। ঝিলাম জেদ ধরে বসে থাকে, বলে যে অফিসের কাজ শেষ করে ওর সাথে বাড়ি যেতে হবে। নিরুপায় বুধাদিত্য, শেষ পর্যন্ত ঝিলামের জেদের কাছে হার মেনে যায়। রিসেপ্সানে বসিয়ে নিজের কেবিনে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। একটু ভালোলাগা, একটু পূর্বরাগ বুকের ভেতর জেগে ওঠে। কিছু পরে ঝিলামকে নিয়ে বেড়িয়ে পরে। রাস্তায় যেতে যেতে ঝিলাম ওকে কলেজের গল্প শুনাতে শুরু করে দেয়। নতুন চাকরি, নতুন লোকজন, নতুন পরিবেশ, উচ্ছল তরঙ্গিণীর মতন বয়ে চলেছে ঝিলামের মধুর কণ্ঠস্বর। বুধাদিত্য শুধু মাত্র হু, হ্যাঁ ছাড়া বিশেষ উত্তর দিতে চায় না। ঝিলামকে ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে আসে। ঝিলাম অনেক বার বুধাদিত্যকে বাড়ির মধ্যে আসতে বলে কিন্তু বুধাদিত্য কাজের আছিলায় ঝিলামের চোখের সামনে থেকে সরে আসে।
কয়েক দিন পরে কলেজ থেকে আবার ঝিলামের ফোন, “আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে?”
এবারে বুধাদিত্য ওকে মজা করে বলে, “আমি কি তোমার ড্রাইভার?”
ঝিলাম মজা করে বলে, “যদি বলি হ্যাঁ...”
বুধাদিত্য, “সমীর কে বল তোমার জন্য একটা গাড়ি কনে দেবে।”
ঝিলাম, “নিজের জন্য একটা কিনুক আগে তারপরে দেখা যাবে। আর সে’ত আজকাল রাত করে ঘরে ফেরে, আমি আর কিছু বলিনা।”
বুধাদিত্য একটু খানি থমকে যায়, “মানে?”
ঝিলাম শুকনো গলায় বলে, “সমীরের অফিসে নাকি আজ কাল অনেক কাজের চাপ তাই দেরি করে ফেরে। আজকাল আবার টুর একটু বেড়ে গেছে, তবে যেদিন যায় সেদিনেই ফিরে আসে। কিছু বললেই বলে, যে আমি চাকরি পেয়ে গেছি, আমি সব কিছু পেয়ে গেছি, এবারে ওর আর কি দরকার। জানো আমার মনটা খুব কাঁদে সমীরের ওই কথা শুনে।”
বুধাদিত্যের বুক ঝিলামের কথা শুনে কেঁদে ওঠে, “আচ্ছা ঠিক আছে, আমি সমীরের সাথে কথা বলব খানে।”
ঝিলাম, “তুমি আর কত করবে আমাদের জন্য, ছাড়ো আমার ভাগ্য যা আছে তাই নিয়ে থাকি। হ্যাঁ এবারে বল আমাকে ছেড়ে আসবে বাড়িতে না আমি অটো করে চলে যাবো।”
বুধাদিত্য, “তুমি প্লিস অটো করে চলে যাও, আমি দেখি কয়েক দিনের মধ্যে একটা ড্রাইভার যোগাড় করে নেব।”
ওর কথা শুনে হেসে ফেলে ঝিলাম, “আমার জন্য তুমি ড্রাইভার রাখবে? তুমিই ত আমার ড্রাইভার, এক বান্ধবীর জন্য এইটুকু করতে পারবে না?”
বুধাদিত্য, “বাঃ রে তুমি আমাকে জ্বালাতন করবে রোজদিন, গাড়িতে যেতে চাইবে, অফিসে কাজ থাকে তাই একটা ড্রাইভার রাখা ভালো। যেদিন আমার কাজ থাকবে না সেদিন আমি পৌঁছে দেব না হলে ড্রাইভার তোমাকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসবে।”
ঝিলাম হটাত ফিসফিস করে বলে ফেলে, “আমার ড্রাইভার চাইনা, তুমি পাশে থাকলে বড় ভালো লাগে তাই বললাম।” বলেই ঝিলাম ফোন কেটে দেয়। বুধাদিত্য হটাত ওর গলায় ওই কথা শুনে স্থম্ভিত হয়ে যায়। এটাকি ভাললাগার পূর্বাভাস না শুধু মাত্র বন্ধুপ্রীতি?
সেদিনের পরে ঝিলামের ফোন আর আসেনা। বুধাদিত্যের হৃদয় ছটফট করে ঝিলামের সাথে দেখা করার জন্য, কিন্তু আগ বাড়িয়ে যেতে বড় বাধা লাগে। ঝিলামের কথা মনে পড়লেই রোজরাতে মোবাইল খুলে একবার ঝিলামের সেই অভিমান করা মুখের ছবি দেখে আর নিজের মনের ভালোবাসা কে সংযত করে রাখে। এইভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়।
এর মাঝে একদিন সকাল বেলায় আয়েশার ফোন আসে। বুধাদিত্য সবে অফিস যাবার জন্য স্নান করে বেড়িয়েছে। এবারে বেশ জমে ঠাণ্ডা পড়েছে। জানালার বাইরে কুয়াশায় ঢাকা।
আয়েশা, “এই তুমি কি করছ আজকে?”
আয়েশার গলা একটু মনমরা বলে মনে হয়। অনেকদিন পরে আয়েশার গলা শুনে অবাক হয়ে যায় বুধাদিত্য, জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার, কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলে তুমি?”
আয়েশার গলা একটু খানি শুকনো, “তুমি কি আজ ফ্রি আছো?”
বুধাদিত্য, “কেন বলত? এমনিতে আমার আজকে অনেক কাজ আছে তবে সেটা তোমার ইচ্ছের ওপরে নির্ভর করছে।”
আয়েশা কাতর কণ্ঠে বলে, “তোমার সাথে একবার দেখা করতে চাই বুধাদিত্য। প্লিস আজকে না কোরো না।”
বুধাদিত্য ভেবে পায়না হটাত আয়েশার একি হল, “ওকে, চলে এস, আমি তাহলে আজ আর অফিস যাচ্ছি না।”
বুধাদিত্য সাতপাঁচ ভাবতে থাকে। রোহিতের সাথে কি কিছু মনমালিন্য ঘটল আয়েশার? না আবার কোন অফিসের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে। বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে এর মাঝে। মদ, মেয়ে সব ছেড়ে এক নতুন বুধাদিত্য, তাও আয়েশা ওকে খুব টানে। আগে আয়েশা যখনি আসত, নিজে রান্না করে যেত। বুধাদিত্যের প্রতি ওর একটা অন্য টান আছে।
আয়েশা যথা সময়ে বুধাদিত্যের দরজার কলিং বেল বাজায়। দরজা খুলে আয়েশাকে সাদর আহবান জানায়। আয়েশা যেন আজ একটু বেশি নিজেকে সাজিয়ে এনেছে। এত সকাল বেলা, বেশ সুন্দর পরিপাটি সেজে এসেছে। সাদা আঁটো জিন্স, গাড় নীল রঙের লম্বা জ্যাকেট, কানে বড় দুল, ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি রঙ, চোখের কোনে আবার কাজল পড়েছে। কাঁধের ব্যাগ দেখে মনে হল যে অফিসের জন্য বের হয়নি, শুধু মাত্র ওর সাথে দেখা করার জন্যই এসেছে। আয়েশার চোখে মুখে এক অধভুত খুশির আলো ছড়িয়ে।
আয়েশা দরজা বন্ধ করে ওকে ঘরের মধ্যে ঠেলে দিয়ে বলে, “কেমন আছো? আমার কথা মনে পড়ত তোমার?”
বুধাদিত্য ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে আয়েশাকে, “হ্যাঁ মনে পড়েছিল, তাই ত ফোন করেছিলাম কতবার। কিন্তু ফোন রিং হয়ে যেত কেউ উঠাত না। এত দিন কোথায় ছিলে?”
আয়েশা গায়ের জ্যাকেট খুলে সোফার ওপরে বসে বলে, “হ্যাঁ ফোনটা খারাপ হয়ে গেছিল, এই কদিনে কারুর ফোন ধরতে পারিনি।”
বুধাদিত্য ওর পাশে বসে ওর কাঁধের ওপরে হাত রাখে, আয়েশা ওর দিকে সরে এসে ঘন হয়ে বুকের কাছে বসে বুকের ওপরে আদর করে দেয়। আয়েশার গাঁ থেকে খুব মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসে ওর নাকে, আয়েশার মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে প্রগার করে নেয় আলিঙ্গন। আয়েশা নিজেকে ছেড়ে দেয় বুধাদিত্যের পেসিবহুল বাহুবন্ধনের মাঝে।
বুধাদিত্য ওকে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বলত, কোথায় গেছিলে আর কেন এতদিনে একবার যোগাযোগ করনি।”
আয়েশা বুধাদিত্যের কথার উত্তর দেয় না, পালটে জিজ্ঞেস করে, “কি আছে রান্না করার মতন, দেখি আগে তোমার জন্য রান্না করে ফেলি তারপরে দুজনে মিলে অনেক গল্প করব, তোমার সব গল্প আমি শুনব আজকে।”
আয়েশা নিজেকে বুধাদিত্যের আলিঙ্গন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে পরে সোফা থেকে। হাঁটার তালে ভারী পাছা বুধাদিত্যের চোখের সামনে দুলে ওঠে। বুধাদিত্যের তলপেটে চিনচিন করে ওঠে, লিঙ্গ একটু শক্ত হয়ে যায়, আয়েশার পাছার দুলুনি দেখে। রান্না ঘরে ঢোকার আগে আয়েশা ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখে যে বুধাদিত্যের নজর ওর সুগোল নিটোল পাছার ওপরে নিবদ্ধ। খিলখিল করে হেসে ফেলে আয়েশা, সেই মিষ্টি হাসির সুর বন্ধ ঘরের দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয়।
বুধাদিত্য আয়েশাকে জানায়, “আমি মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি, আয়েশা।”
আয়েশা ওই কথা শুনে অবাক হয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, “কি বলছ? তুমি ড্রিঙ্ক করা ছেড়ে দিয়েছ? হতেই পারে না।”
বুধাদিত্য কাষ্ঠ হাসি হেসে বলে, “বিশ্বাস না হলে ফ্রিজ খুলে দেখতে পার।”
আয়েশা নিজের কান বিশ্বাস করে না, ফ্রিজ খুলে দেখে যে শুধু খাবার দাবার ছাড়া, কোন মদের বোতল ফ্রিজে নেই। ফ্রিজের দরজা বন্ধ করে বুধাদিত্যের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। এতদিন ভাবত, যে বুধাদিত্য শুধু ওর কথা শোনে, কিন্তু ওর জীবনে অন্য কেউ এসেছে জেনে চোখের কোনায় নিজের অজান্তে একটু খানি ছলকে ওঠে খুশির আর বেদনা মাখা অশ্রু।
আয়েশা আবার বুধাদিত্যের কাছে এগিয়ে আসে, ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর মুখখানি আঁজলা করে তুলে ধরে। বুধাদিত্যের মন হুহু করে ওঠে আয়েশার স্নেহ ভালোবাসা মাখানো পরশে। আয়েশা ওকে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে শেষ পর্যন্ত কাউকে পেয়েছ, বল? আমি খুব খুশি। কে সে আমার সাথে দেখা করাবে না, তাকে?”
বুধাদিত্য কি বলবে, বলবে যে মনে মনে ঝিলামকে ভালোবেসে ফেলেছে আর তাই ওর কথা মেনে মদ, নারীসঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে। বুধাদিত্য মুখে হাসি টেনে এনে বলে, “না গো ডাক্তার দেখিয়েছিলাম, বোকা... ড্রিঙ্ক করতে করতে লিভারটা বড় হয়ে গেছে তাই মদ ছাড়তে হল।”
আয়েশা ম্লান হেসে বলে, “তোমার চোখ বলছে তুমি খুব বড় ব্যাথা লুকিয়ে আছো, ডাক্তারের কথা সব মিথ্যে। সত্যি কথা বল না আমাকে, কে এসেছে তোমার জীবনে, আমি তোমাকে কিছু বলব না।”
বুধাদিত্য চেপে যায় ঝিলামের সাথে ওর অপ্রকাশিত সম্পর্কের কথা, “সত্যি তোমার প্রমিস, আয়েশা, এই বুক বড় ফাঁকা।”
আয়েশা ওকে জড়িয়ে ধরে দুইহাতে, ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে বলে, “আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করব যাতে খুব তারাতারি তুমি মনের মানুষ খুঁজে পাও।”
বুধাদিত্য ওর বুকের মাঝে মাথা রেখে দুহাতে আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে থাকে। অনেকদিন পরে ওর ভাললাগার পাত্রীকে বুকের কাছে পেয়েছে। মনের মধ্যে একটা চিনচিন ব্যাথা থাকা স্বত্তেও আয়েশাকে পেয়ে সেই বেদনা একটু খানি স্তিমিত হয়ে গেছে।
আয়েশা কিছু পরে বলে, “এই ছাড়ো আমাকে, রান্না সেরে ফেলি, তারপরে দুজনে মিলে শুধু গল্প করব।”
ফ্রিজে কিছু কাঁচা চিকেন রাখা ছিল, সেটা রান্না করে ফেলে আয়েশা। রান্না করতে করতে বুধাদিত্যের সাথে গল্প করে এইকদিনে কোথায় ছিল। রোহিতের একমাস লম্বা একটা অফিসিয়াল টুর ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তাই তাঁর সাথে ইউরোপ গিয়েছিল। রোম, প্যারিস, মিলান, হেগ, বার্লিন অনেক জায়গা ঘুরেছে। নানান জায়গা ঘুরে ওর খুব ভালো লেগেছে, কোথায় কিকি দেখেছে সেই সব বর্ণনা। বুধাদিত্য উচ্ছল সেই প্রজাপতির মধুর ধ্বনি শোনে মন দিয়ে। একবার মনে হয় পেছন থেকে আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে ওর ওই মরালী গর্দানে ঠোঁট চেপে ধরে। দুই ভারী পাছার মাঝে নিজের উত্থিত লিঙ্গ চেপে, পিষে দেয় আয়েশার নরম দেহ।
আয়েশা ওর চোখের ভাষা পড়ে ফেলে, বাঁকা হেসে বলে, “পড়ে হবে ডারলিং একটু সবুর করো। ওই ভাবে দেখতে থাকলে আমার দেহ জ্বলে পুরে ছারখার হয়ে যাবে।”
বুধাদিত্য হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, “উম্মম্ম... আমি যে আর থাকতে পারছি না, বেবি... তোমাকে আমার এখুনি চাই।”
আয়েশা খিলখিল করে হেসে ফেলে, বলে, “যাও আমার পেছনে এইরকম ভাবে দাঁড়িয়ে থেকও না। একটু হিটার চালিয়ে দাও বড় ঠাণ্ডা লাগছে।”
বুধাদিত্য আয়েশার পেছনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীর ওর পেছনে চেপে ধরে। পাতলা কোমরের দুপাশ থেকে হাত নিয়ে গিয়ে গোল নরম তুলতুলে পেট চেপে ধরে এক হাতের থাবায়, অন্য হাত নিয়ে যায় ওর পাঁজরের ওপরে, ঠিক উন্নত স্তনের নিচে চেপে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে আয়েশাকে। আয়েশা বুধাদিত্যের প্রেমঘন বাহুর মাঝে জড়িয়ে পড়ে ককিয়ে ওঠে। নিটোল পাছার খাঁজে উত্থিত লিঙ্গের কঠিন পরশ অনুভব করে। আয়েশা ওর হাত ধরে নিজের দেহের ওপরে বুধাদিত্যের বাহুবন্ধন আরও প্রগাড় করে নেয়। মাথা বেঁকিয়ে বুধাদিত্যের ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দেয়। উষ্ণ শ্বাসে ভরিয়ে দেয় পরস্পরের মুখ।
চুম্বন শেষে আয়েশা বুধাদিত্যের হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। রান্না ঘর থেকে একটা থালা নিয়ে আসে, বলে, “আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দেব, তুমি আমাকে কোলে নিয়ে বসে থেকো। তুমি আমাকে একটু জোরে জড়িয়ে ধরবে, প্লিস?”
আয়েশা হাতে থালা নিয়ে বুধাদিত্যের কোলের ওপরে বসে পরে। বুধাদিত্য দুহাতে আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে থাকে। আয়েশা ওকে খাইয়ে দেয় আর মিটিমিটি হাসে। দুই প্রেমঘন নরনারীর মাঝে ভালোবাসার আগুন জ্বলে ওঠে। নরম পাছার চাপের নিচে বুধাদিত্যের লিঙ্গ ধিরেধিরে নিজের কঠিন অবয়াব ধারন করে। বারেবারে নিচ থেকে ঠেলে দেয় নরম আয়েশাকে, আয়েশা ইচ্ছে করেই বুধাদিত্যকে উত্যক্ত করার জন্য পাছা দিয়ে চেপে ধরে কঠিন লিঙ্গ। খাওয়া চলাকালীন চলে আদরের খেলা, মিষ্টি মধুর আহা, উহু ধ্বনি, মাঝে মাঝে একটু চুম্বন, নিজে খায় আর বুধাদিত্যকে খাইয়ে দেয়। মাঝে মাঝে বুধাদিত্যের মুখের ভেতর থেকে মাংসের টুকরো কামড়ে ধরে, দুটি প্রেমাসিক্ত নরনারী কামনার খেলায় মেতে ওঠে খেতে খেতে।
খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে, আয়েশা ঝাঁপিয়ে পরে বুধাদিত্যের কোলে। বুধাদিত্য আয়েশার হাবভাব ঠিক ভাবে ধরতে পারেনা। উদ্দাম আয়েশা আজ যেন আজ এক সুন্দরী প্রজাপতি, ওকে আদরে, ভালবাসায় ভরিয়ে দেবার জন্য তৎপর। প্রাণপণে দুহাতে বুধাদিত্যকে জড়িয়ে ধরে, প্রসস্থ কঠিন বুকের ওপরে, নরম স্তন চেপে ফিসফিস করে প্রেমঘন গলায় অনুরোধ করে ওকে ভালোবাসার জন্য। আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। চুম্বন গভীর করে তোলে আয়েশা, বুধাদিত্যের পরনের গেঞ্জি খুলে নগ্ন বুকের ত্বকের ওপরে নরম আঙুল দিয়ে আঁচর কাটে। বুধাদিত্য ওর পেছনে হাত নিয়ে গিয়ে নরম পাছা চেপে ধরে। আয়েশাকে ঠেলে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আয়েশা বুধাদিত্যের ঠোঁট ছেড়ে ওর গলায়, কাঁধে, বুলের ওপরে চুম্বনের ঝড় বইয়ে দেয়। ছোটো ছোটো চুম্বনের সাথে সাথে, জিবের ডগা বের করে লালার দাগ এঁকে দেয় বুধাদিত্যের বুকে। বুধাদিত্য আয়েশার কোমরে হাত নিয়ে গিয়ে গায়ের জামা উপর দিকে টেনে তোলে। আয়েশা হাত উঁচু করে বুধাদিত্যকে সাহায্য করে জামা খুলে দিতে। আয়েশার পরনে ছোটো লাল ব্রা বেড়িয়ে পরে জামার ভেতর থেকে। পীনোন্নত স্তন জোড়া ছোটো ব্রার বাধুনির মাঝে পরস্পরের সাথে মারামারি করে। আয়েশা বুধাদিত্যের মাথার চুল আঁকড়ে ধরে বুকের খাঁজের ওপরে চেপে ধরে। ঘন মৃদু কন্ঠে ওর স্তনের নরম মাংসে চুম্বনে চুষে ভরিয়ে দিতে অনুরোধ করে বারেবারে। বুধাদিত্য ঠোঁট নামিয়ে আনে আয়েশার কাঁধের ওপরে, গলার ওপরে চুমু খেতে থাকে, ধিরে ধিরে ঠোঁট নিচে নামে, বুকের ওপরে জিবের ডগা দিয়ে লালার দাগ কেটে দেয়। তপ্ত ত্বকের ওপরে জলের দাগ পরে যেন ছ্যাক করে ওঠে। কামনার আগুনে দুই জনের শরীর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আয়েশার উরু মাঝে বুধাদিত্যের কঠিন লিঙ্গ স্পর্শ করে। জিন্সের উপর দিয়েই চেপে ধরে যৌনাঙ্গের সাথে যৌনাঙ্গ। কঠিন অনুভুতি পেয়ে আয়েশা পাগল হয়ে যায়। ঠোঁট অল্প ফাঁক করে শীৎকার করে প্রেমে পাগল আয়েশা। বুধাদিত্যের ঠোঁট নেমে যায় ব্রার ওপরে, কামড়ে, চুষে পিষে একাকার করে দেয় আয়েশার স্তন জোড়া। হাত দুটি একবার পাছার ওপরে, একবার পিঠের ওপরে ইতরের মতন বিচরন করে।
আয়েশা বুধাদিত্যের মাথা স্তনের ওপরে চেপে ধরে বলে, “হানি, আই মিস ইউ। আজ আমাকে খুব করে ভালোবাস।”
আয়েশার ধরা গলার আওয়াজে বুধাদিত্য ওর মুখের দিকে মুখ তুলে তাকায়, “কি হয়েছে তোমার?”
চোখ দুটি ছলছল, চোখের পাতা ভিজে গেছে। ঠোঁটে হাসি টেনে বলে, “আমি চলে যাচ্ছি, দিল্লী ছেড়ে, তোমাকে ছেড়ে।”
বুধাদিত্যের মাথা ঘুরে যায়, নাকের ডগা লাল হয়ে আসে, চোয়াল শক্ত করে চাপা গলায় আয়েশাকে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় যাচ্ছ?”
আয়েশা হাসিহাসি মুখে চোখে জল নিয়ে বলে, “অনেক দুরে, সাত সমুদ্র তের নদী পার করে। রোহিতের লন্ডনে চাকরি হয়েছে, ওর সাথে আমাকে যেতে হবে, বুধাদিত্য। আমার ভিসা হয়ে গেছে, পরের মাসে আমি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।” বুধাদিত্য এক’পা পেছনে সরে যায়, কিন্তু আয়েশার কোমর থেকে হাত সরায় না, আলতো করে ধরে থাকে আয়েশার কোমর। আয়েশা ওর গলা জড়িয়ে বলে, “আরও একটা খবর আছে,” একটু থেমে যায় আয়েশা, “আমি প্রেগ্ন্যান্ট। গত মাসে, রোহিতের সাথে, বার্লিনে। ছয় সপ্তাহ হল আমার প্রেগ্ন্যান্সির।”
বুধাদিত্য আয়েশার কোমর ছেড়ে দেয়, ওর বুকের মাঝে হুহু করে ওঠে এক আর্তনাদ। ব্যাথিত বুধাদিত্য, কাঁপা গলায় আয়েশাকে বলে, “আমি জানি আমি বড় পাপী, আমি নিচ, আমি ইতর, ব্যাভিচারি। আমি অন্যের বউয়ের সাথে শুই, অন্যের বউয়ের সাথে প্রেম করি। সেই পর্যন্ত ঠিক ছিল আয়েশা, কিন্তু কারুর মায়ের গায়ে হাত দিতে পারিনা, কারুর মাকে আমি কলুষিত করতে পারব না, আয়েশা।” ধুপ করে সোফার ওপরে বসে পরে বুধাদিত্য, দু’চোখে শ্রাবনের অঝর বারিধারা। মাথার চুল আঁকড়ে, নিজেকে অভিশাপ দিতে থাকে, “আমার মতন পাপী, আমার মতন দুঃখী যেন এই পৃথিবীতে আর কেউ না জন্মায়, সেই প্রার্থনা কর। আমি মাকে হারিয়েছি ছোটো বেলায়, কারুর মাকে আমি কলুষিত করতে পারব না আয়েশা। তুমি চলে যাও।” বুক ফাটিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে বুধাদিত্য, “আয়েশা তুমি চলে যাও।”
আয়েশা ওর সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেলে, কিছু বলার নেই আর বুধাদিত্যকে। বড় বেদনা এই বুকে সামনে বসা ছেলেটার জন্য, যতদিন শরীরে খেলা হিসাবে ছিল ততদিন ঠিক ছিল, কিন্তু সব কিছু জেনে বুঝে প্রেমে পড়েছিল বুধাদিত্য, ঝুঁকে গেছিল আয়েশাও।
আয়েশা ওর কপালে ছোটো চুমু খেয়ে বলে, দুই কাজল কালো চোখে জল, চোখের পাতা ভারী, ঠোঁট দুটি তিরতির করে কেঁপে ওঠে, “প্রথম যেদিন তোমার কোলে এসেছিলাম, সেদিন আমাকে একটা গোলাপ দিয়েছিলে সেটা শুকিয়ে গেছে। আমাদের ভালোবাসা বড় মেকি, বড় নিষ্ঠুর। আমি নিজেই জানিনা আমি কাকে বেশি ভালোবাসি, রোহিত না তুমি। শেষ পর্যন্ত আমি ঠিক করলাম যে আমি রোহিতের সাথে চলে যাব। আমি চললাম বুধাদিত্য, আমাকে আর খুঁজতে চেষ্টা করো না। জানি পৃথিবীটা অনেক ছোটো, হয়ত কোন এক মোড়ে আবার দেখা হবে কিন্তু দয়া করে তুমি আমাকে আর খুঁজতে এস না।”
জামা কাপড় পরে, চোখের জল মুছে ফেলে আয়েশা। আর দাঁড়ায় না, দরজা খুলে বেড়িয়ে যায় চুপ করে। বুধাদিত্য সোফার ওপরে পাথরের মূর্তির মতন বসে থাকে। দরজা খোলা, ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকে পরে ঘরের মধ্যে, কিন্তু বুকের আগুন নেভাতে অক্ষম সেই ঠাণ্ডা বাতাস।
......