Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 3.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller দ্বিতীয় অঙ্ক by pinuram (Complete)
#9
দ্বিতীয় পর্বঃ তৃষ্ণার্ত কপোতী। (#2)

সাদা টিউবের আলোয় ঘরের মধ্যে সবকিছু পরিষ্কার দেখা যায়। বিছানা ওপরে চিত হয়ে শুয়ে নগ্ন ঝিলাম। পীনোন্নত স্তনজোড়া উপরের দিকে দুটি সুউচ্চ শৃঙ্গের মতন উঁচিয়ে। স্তনের গাড় বাদামি বোঁটা ফুলে নুড়ি পাথরের মতন শক্ত হয়ে গেছে। বোঁটার চারদিকে হাল্কা বাদামি বৃত্ত। এক হাতে নিজের একটি নরম সুগোল স্তন নিয়ে চেপে পিষে দিতে থাকে, অন্যহাত তলপেটের ওপরে তীব্র গতিতে নড়ছে। দুই গোল সুন্দর থামের মতন মসৃণ উরু হাঁটু ভেঙ্গে মেলে ধরা। দুই উরুর মাঝে সমীর নিজের নিম্নাঙ্গ ডুবিয়ে দিয়েছে ঝিলামের নরম সিক্ত সুখের সাগরে। ঝিলামের দেহের দুপাশে হাত রেখে ভর করে যৌনাঙ্গের সাথে যৌনাঙ্গ মিলিয়ে মন্থনে রত। ঝিলামের ফুলের মতন নরম দেহপল্লব বিছানার সাথে পিষে চেপে একাকার করে দিয়েছে সমীর। ঝিলাম কাতরাতে থাকে চরম কামনা বাসনার তৃষ্ণায়, তীব্র উত্তেজনায় মাথা ঝাঁকায়। সমীরের মন্থনের তালেতালে ঝিলাম কোমর তুলে সারা দেয় ওর পেষণে। ঝিলাম দুইহাতে সমীরের মুখ আঁজলা করে ধরে, আহ্বান জানায় ওর বুকের ওপরে আসার জন্য, ওর কমনীয় দেহকে পিষে ফেলার জন্য। সমীরের মন্থনের গতি বেড়ে যায়, ঝুঁকে পরে ঝিলামের স্তনের ওপরে। একটা স্তন মুখের মধ্যে নিয়ে চুষে, পিষে সমান করে দেয়। কামড় বসিয়ে দেয় নরম সুগোল স্তনের ওপরে। ফর্সা নরম স্তনের ওপরে সমীরের দাঁতের দাগ বসে যায়। ঝিলাম সেই কামড়ে ককিয়ে ওঠে, ব্যাথায় নয়, তীব্র কামনার সুখে। কিছুপরে ঝিলামের দেহ বেঁকে যায় ধনুকের মতন। মাথা, ঘাড় পেছনে বেঁকে যায় সমীরের মাথা নিজের বুকের উপরে চেপে ধরে। সমীর বারকয়েক জোরে জোরে মন্থন করার পরে শিথিল হয়ে যায়। ঝিলাম দুই হাতে সমীরকে জড়িয়ে ধরে নিচের দিক থেকে সমানে কোমর উপর দিকে ঠেলতে থাকে। সমীরের লিঙ্গ নিজের ভেতরে সিক্ত গুহার ভেতরে নিয়ে নিজেই মন্থনের আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। সমীর নিস্তেজ হয়ে ওর শরীরের ওপরে পরে থাকে আর কাঁপতে থাকে। ঝিলাম প্রাণপণে নিজেকে ঠেলে ধরে সমীরের সাথে, কিন্তু ওর ভারের জন্য নিস্তেজ হয়ে পরে থাকে নিচে। কিছু পরে হাত পা এলিয়ে ঝিলাম চুপ করে সমীরের নিচে শুয়ে থাকে।

তীব্র উত্তেজনায় বুধাদিত্যের লিঙ্গ কঠিন হয়ে যায়। ওদের কাম বাসনার খেলা দেখে সেই কঠিন লিঙ্গ হাতের মুঠিতে নিয়ে নাড়াতে শুরু করে দেয়। যখন দেখে যে সমীর শিথিল হয়ে ঝিলামের ওপরে পরে আছে, তখন বুধাদিত্যের জ্ঞান ফেরে। লিঙ্গ ছেড়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে পরে। বন্ধু আর বন্ধুপত্নির প্রেমের রতিক্রীড়া লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে মনের মধ্যে এক অধভুত স্বাদের আনন্দ পায়। চুরি করার স্বাদ পায় বুভুক্ষু বুধাদিত্য, অবশেষে স্বপ্ন সাকার হয় ওর। মর্তের অপ্সরা ঝিলামের নগ্ন কমনীয় দেহ দেখার স্বপ্ন সাকার হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ ল্যাপটপ খুলে বসে থাকে, কিন্তু কিছুই মাথায় আসেনা। চোখের সামনে শুধু ঝিলামের নগ্ন নরম দেহপল্লব আর কানের মধ্যে গুঞ্জরিত হয় তৃষ্ণার্ত বাসনার মৃদু শীৎকার। একটু মদের দরকার এই অশান্ত হৃদয়কে শান্ত করতে, নাহলে পাগল হয়ে যাবে বুধাদিত্য।

কতক্ষণ এই ভাবে বসেছিল জানেনা। কিছুক্ষণ পরে বাথরুমে জল পড়ার আওয়াজে সম্বিৎ ফেরে ওর। ঘরের দরজা খুলে খাওয়ার ঘরে গিয়ে ফ্রিজ খুলে মদের বোতল বের করে। কাপবোর্ড থেকে একাটা কাট গ্লাস বের করে। খাওয়ার টেবিলে সাজান বাটিতে ঝিলাম ওর জন্য কাজু, কিসমিস রেখে গেছে। গ্লাসে বেশকয়েকটা বরফের টুকরো ঢেলে দিয়ে মদ ঢেলে নেয়। সোফার ওপরে গিয়ে বসে পরে হাতে গ্লাস নিয়ে আর বাটি নিয়ে। বেশ কিছু আগের তীব্র বাসনার শীৎকার বারমুডার ভেতরে ওর লিঙ্গকে কঠিন করে তোলে, সামনের দিকে দাঁড়িয়ে থাকে সুউচ্চ শৃঙ্গের মতন। ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত, আর পাঁচটা বাঙ্গালীর মতন নয়, ওর সুঠাম গঠন, চওড়া কাঁধ, চওড়া বুকের ছাতি, পেশিবহুল পেটান শরীর। মদ, মাংস নিয়ে থাকে তাই সকালে ব্যায়াম করে নিজেকে ধরে রেখেছে।

বাথরুম থেকে সমানে জল ঢালার আওয়াজ আসে। কে গেছে এত রাতে, সমীর না ঝিলাম? গ্লাস ঠোঁটের কাছে আনতেই বাথরুমের দরজা খুলে যায়। চোখের সামনে ভেজা একটা সুন্দরী পায়রা, ঝিলাম বেড়িয়ে আসে বাথরুম থেকে। ভেজা শরীর, পরনে পাতলা গোলাপি স্লিপ, কাঁধে বাঁধা দুটি সরু স্ট্রাপ। বুধাদিত্যকে সোফায় বসে থাকতে দেখে হকচকিয়ে যায়। একহাত চলে যায় বুকের কাছে, ভারী স্তনের মাঝের খাঁজ এক হাতে ঢাকতে চেষ্টা করে ঝিলাম। অন্য হাতে স্লিপের নিচের দিক টেনে ধরে ঢাকতে চেষ্টা করে জানুসন্ধি। ভেতরে কিছুই পরেনি ঝিলাম, পীনোন্নত স্তনের অবয়াব পরিষ্কার ফুটে উঠেছে, সাথে সাথে পাতলা স্লিপের ভেতর থেকে স্তনের দুই কঠিন নুড়ি পাথরের মতন উঁচিয়ে থাকা দুই বোঁটা পরিষ্কার দেখা যায়। স্লিপ খানি ভারী পাছার ঠিক নিচে এসে শেষ। দুই পুরুষ্টু মসৃণ উরু অনাবৃত, চিকচিক করছে বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটা। সারা মুখে একটা ভিতি আর তৃষ্ণার্ত চাহনি। ঠোঁট জোড়া ফ্যাকাসে, গালের লালিমা চলে গেছে। বাথরুমের দরজার কাছে থমকে দাঁড়িয়ে থাকে ঝিলাম, হাতে বুকে মুখের ওপরে বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটা। স্লিপের কিছু অংশ ভিজে গেছে, পেটের কাছে ভিজে নাভির চারদিকে লেপটে গেছে। ছোটো গোল পেট আর গভীর নাভিদেশ পরিস্ফুটিত। কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে থাকার পরে মাথা নিচু করে বুধাদিত্যের চোখ বাঁচিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায় ঝিলাম। হাঁটার সময়ে ভারী পাছার দুলুনি দেখে বুধাদিত্য উন্মাদ হয়ে যায়। স্লিপ মাঝে মাঝে পাছার ওপরে থেকে সরে গিয়ে নিটোল সুগোল পাছার চমক বুধাদিত্যকে দেখিয়ে দিয়ে যায়। বুধাদিত্য এক ঢোকে গ্লাসের মদ গলায় ঢেলে দেয়। মাথা নিচু করে দরজা খুলে ঘরে ঢুকে পরে ঝিলাম।

বুধাদিত্যের শিরায় উপশিরায় মদের চেয়ে বেশি ঝিলামকে কোলে পাওয়ার নেশা চাগিয়ে ওঠে। বারমুডার ভেতরে লিঙ্গ কঠিন তপ্ত লোহার রোডের মতন দাঁড়িয়ে থাকে। ঝিলাম হয়ত ওর লিঙ্গের উঁচিয়ে থাকা দেখে ফেলেছে। না, এখান থেকে চলে যাওয়া ভালো, ওদের থেকে দুরে থাকা ভালো। এত সুন্দর একটি ফুলকে নষ্ট করে দিতে মন চাইল না বুধাদিত্যের। এতদিন যে মাছগুলো খেয়েছে বুধাদিত্য, তারা সবাই টোপ ফেলার আগেই বুধাদিত্যের ছিপ দেখে বঁড়শিতে গেঁথে যেত। কিন্তু ঝিলামের মতন সুন্দরী অপ্সরা একদম অন্য ধাঁচের মেয়ে। কাউকে যদি মন দেয় তবেই সে তার শরীর পায়। ঝিলামের রুপ মাধুর্য দেখে পায়ে ডলতে ইচ্ছে করেনা বুধাদিত্যের। বোতল নিয়ে ঘরে ঢুকে গ্লাসের পর গ্লাস শেষ করে দেয়। বুকের ভেতর তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, বিবেকের সাথে তীব্র কামনার যুদ্ধ। বিবেক বাধা দেয়, কামনার আগুন ঝিলামকে ঝলসে দেয়ার জন্য উসকিয়ে দেয়। বোতল শেষ, মাথা ঝিমঝিম করছে বুধাদিত্যের। বিবেক শেষ পর্যন্ত জিতে যায়, ঝিলামের থেকে দুরে, সমীরের থেকে দুরে চলে যেতে হবে। পাশবিক, স্বার্থপর স্বভাবের লোক বুধাদিত্য, নিজেকে সে ভালো করে চেনে। টাকা আর প্রতিপত্তি ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসে না। সেইজন্য কোন একজনকে অঙ্কশায়িনী করেনি। সকাল হলেই চলে যাবে, পারে কি রাতের বেলা বেড়িয়ে যাবে সমীরের বাড়ি থেকে। হ্যাঁ, মাথা ঠিক থাকা পর্যন্ত বেড়িয়ে পরা ভালো।

হিংস্র মন মেজাজ কাবু করে নিজের জামা কাপড় পরে নিল। ঘড়িতে দেখে রাত দুটো বাজে। একটা ব্লাঙ্ক ফোন করে নিজেই নিজেকে উত্তর দিতে থাকে জোর গলায়। “কি হয়েছে? সারভার গেছে? কি করে, কতক্ষণ লাগবে ঠিক হতে? প্রোগ্রাম গেছে না হার্ডঅয়ার গেছে? আচ্ছা আমি আসছি, দেখি।”

ঘর থেকে বেড়িয়ে সমীরের ঘরের দরজায় টোকা দেয়। সমীরের পরিবর্তে ঝিলাম দরজা অল্প ফাঁক করে। স্লিপের ওপরে একটা লম্বা গাউন চড়ান। ঝিলাম প্রথমে বুধাদিত্যের চোখে চোখ রাখতে লজ্জা পায়। বুধাদিত্যকে জামা কাপড় পরা অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে যায়। দরজা খুলে বেড়িয়ে আসে, বুধাদিত্য ঘরের মধ্যে লক্ষ্য করে দেখে সমীর মরার মতন বিছানায় পরে আছে।

ঝিলাম মাথা নিচু করে মৃদু সুরে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার, এই রাত দুটোতে জামা কাপড় পরে? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? কোথায় যাবে?”

বুধাদিত্য অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে ভারী গলায় উত্তর দেয়, “না মানে আমাকে এখুনি অফিস যেতে হবে, কিছু টেকনিকাল প্রবলেম এসে গেছে। কাল সকালে আমার হয়ে সমীরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিও। আমি চললাম ঝিলাম, ভালো থেক।”

ঝিলাম ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “চলি বলতে নেই বুধাদিত্য, বলে আসছি।”

বুধাদিত্য হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায়না। কে এই নারী, কেন এর সাথে আগে দেখা হয়নি বুধাদিত্যের? হয়ত তাহলে কাউকে ভালবাসত এবং বিয়ে করত বুধাদিত্য। ওর চোখের দিকে তাকায়, ঝিলামের চোখে মিষ্টি হাসি।

বুধাদিত্য হারিয়ে যায়, মৃদু গলায় বলে, “ঝিলাম আমি আসছি।”

দরজা খুলে দেয় ঝিলাম। বুধাদিত্য ব্যাগ হাতে বেড়িয়ে যায়, পেছনে না তাকিয়ে। আবার যদি কোন অদৃশ্য টানে বেঁধে পরে সেই ভয় ওর বুকের মাঝে ভর করে।

ঝিলাম ওকে পেছন থেকে ডাক দেয়, “বুধাদিত্য, এত রাতে যাচ্ছ। অফিস পৌঁছে একটা ফোন করে দিও সমীরের ফোনে। আমি খুব চিন্তায় থাকব, আমি তোমার ফোনের অপেক্ষায় জেগে থাকব কিন্তু।”

পেছনে না তাকিয়ে মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয় যে ফোন করবে। আজ পর্যন্ত নিজের মা ছাড়া কোন মহিলার আওয়াজে ওর চোখে জল আসেনি। ঝিলামের শেষ বাক্য ওর মন কাঁদিয়ে দিয়ে গেল, শরীরের শত সহস্র শিরাউপশিরা ঝনঝন করে বেজে উঠল। এই ঝিলামকে পিষে নিংড়ে নিজের কামক্ষুধা চরিতার্থ করতে চেয়েছিল কয়েক ঘন্টা আগে। যাবার আগে ঝিলামের মধু মাখানো সুর ওর হৃদয়ের আমুল নাড়িয়ে দেয়।

______________________________
তৃতীয় পর্বঃ ভস্মীভূত ক্রন্দন।

সেই রাতে আর বাড়ি ফেরেনা বুধাদিত্য। সারা রাত গাড়ি চালিয়ে যায় পাগলের মতন জয়পুর হাইওয়ে দিয়ে। সকাল সাতটা নাগাদ খেয়াল হয় যে জয়পুর পৌঁছে গেছে। ঝিলামকে ফোন করা হল না, কি বলবে ঝিলাম কে, আমি পালিয়ে এসেছি? গাড়ি ঘুড়িয়ে দিল্লীর দিকে রওনা হয়ে গেল। দিল্লী ঢুকতে ঢুকতে দেরি হয়ে গেল, সেদিন আর অফিস গেলনা। সোজা বাড়ি চলে এল। তালা খুলে ঢুকতেই একটা গুমোট বাধা হাওয়া বেড়িয়ে আসে। বাড়ির তালা খোলার সময়ে সমীরের ফোন।

সমীর উদোম গালাগালি শুরু করে দিল ফোনে, “শুয়োরের বাচ্চা, কুত্তা, হারামি। অত রাতে কেউ বের হয়? শালা তুই জাত শয়তান, আজ পর্যন্ত বদলালিনা।”

বুধাদিত্য কি উত্তর দেবে, সমীরকে ক্ষান্ত করার জন্য বলল, “একটু বুঝতে চেষ্টা কর, অফিসে কাজ ছিল তাই রাতে বেড়িয়ে যেতে হয়েছিল।”

সমীর, “শালা সেসব বুঝলাম, কিন্তু ঝিলামকে একটা ফোন করে দিতে পারতিস অফিস পৌঁছে। বেচারি সারা রাত তোর ফোনের অপেক্ষা করে সকালের দিকে ঘুমাতে গেছে।”

বুধাদিত্যের বুক ফাঁকা হয়ে যায়, চিনচিন করে ওঠে বুকের বাঁদিক। কেন ঝিলাম ওর জন্য বসে ছিল? বুধাদিত্য ঝিলামের কেউ নয়, শুধু মাত্র ওর স্বামির পুরানো বন্ধু মাত্র, তাও আবার অনেক দিন পরে দেখা। ঝিলাম কি আসল বুধাদিত্যকে চেনে? চিনলে হয়ত বাড়িতেই ঢুকতে দিত না। আসল বুধাদিত্য স্বার্থপর, নিচ, ইতর স্বভাবের লোক।

বুধাদিত্য সমীরকে ক্ষমা চেয়ে বলে, “সরি বাবা, কাজে এত ডুবে গেছিলাম যে ফোন করা হয়নি।”

সমীর, “শালা এখন দুপুর বারোটা বাজে, এতক্ষণে তোর ফোন করার সময় হয়নি?”

বুধাদিত্য, “ঠিক আছে বাবা, আমার মাথা কেটে তোর পায়ের তলায় রাখলে তুই শান্তি পাবি? আমার হয়ে ঝিলামের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিস।”

সমীর, “ঠিক আছে। এক কাজ কর আগামি শনিবার বিকেলে আমার বাড়ি চলে আসিস।”

বুধাদিত্য ফাপরে পরে যায়। ওর বুকে যে ঝিলামের সামনে যাওয়ার শক্তি নেই। মিথ্যে কথা বলে সমীরকে এড়াতে চায়, “আমি পরের সপ্তাহে ইটালি যাচ্ছি, দিন পনেরর টুর। ওখান থেকে এসে দেখা হবে।”

সমীর, “ওকে বাই, মাঝে মধ্যে ফোন করিস তাহলে।”

ফোন রেখে চুপ করে বসে থাকে বুধাদিত্য। নিজের জীবনের পাতা চোখের সামনে মেলে ধরে। টাকা ছাড়া, প্রতিপত্তি ছাড়া কারুর পেছনে যায় নি। তিন রুমের বিশাল ফ্লাট যেন ওকে গিলে খাবার জন্য হাঁ করে তাকিয়ে ওর দিকে। একটা রুম বেডরুম, একটি গেস্ট রুম যেটা ওর শারীরিক ক্ষুধা মেটানোর জায়গা, অন্যটি রুমকে স্টাডি বানিয়েছে। বসার ঘরের সোফার ওপরে খবরের কাগজ, খাওয়ার টেবিলে কিছু প্লেট ছড়ান। সকাল বেলায় কাজের লোক এসে ফিরে গেছে। নিজেকেই একটু সাফসুতরা করতে হবে। সবকিছু ভুলিয়ে দিয়ে ঘরের কাজে মেতে উঠলো বুধাদিত্য। নিজেই ঝাড়ু হাতে ঝার দিল, দুই ঘরের আবর্জনা পরিষ্কার করে দিল। সোফার কভার বদলে দিল, খাওয়ার টেবিল মুছে চকচক কর দিল। শোয়ার ঘরে ঢুকে বিছানার চাদর বদলে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল।

বিকেল হয়ে এল। সারাদিনের কাজের পরে একটু ক্লান্ত। বসার ঘরে বসে টিভি চালিয়ে দিল। ঠিক তখন ফোন বেজে উঠল। ফোন তুলে দেখে অচেনা একটা এসটিডি নাম্বার। ফোন তুলে জিজ্ঞেস করে কে কথা বলছে।

অচেনা আওয়াজ, “হ্যালো, বুধাদিত্য, আমি তোমার বাবা বলছি, ধানবাদ থেকে।”

ঝনঝন করে ওঠে সারা শরীর। অচেনা ভদ্রলোকের পরিচয় ছুনে রাগে রক্ত ফুটে ওঠে বুধাদিত্যের। গম্ভির স্বরে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ বল কি খবর? হটাত এতদিন পরে কি মনে করে?”

বুধাদিত্যের বাবা একটু আমতা আমতা করে বলেন, “না মানে, বহু বছর দেখা সাক্ষাৎ নেই তাই। কেমন আছো?”

বুধাদিত্য, “আমি ভালো আছি। চোদ্দ বছর পরে আমাকে মনে পড়ল তোমার? কিছু কাজ আছে নিশ্চয়, কি কাজ আছে?”

বুধাদিত্যের বাবা, “না মানে, শুনলাম তুমি দিল্লী চলে গেছ। একটি বার দেখা করার ইচ্ছে হল। কোলকাতায় কি আর আসা হয়?”

বুধাদিত্য, “মাঝে মধ্যে মামাবাড়ি যাই। আমার ফোন নাম্বার তোমাকে কে দিল?”

বুধাদিত্যের বাবা, “তোমার মামিমা দিলেন। মানে প্রথমে দিতে চাইছিলেন না, আমি অনেক অনুরোধ করার পরে দিয়েছেন। আমার কর্মের ফল তোমাকে অনেক ভোগ করতে হয়েছে। তোমার সাথে একটি বার দেখা করার ইচ্ছে আছে, বুধো। আমি ক্ষমাপ্রার্থী বুধো।”

বুধাদিত্য গর্জে ওঠে নিজের নাম শুনে, “মিস্টার,গুহ তুমি আমাকে ওই নামে ডাকার অধিকার হারিয়েছ।” বাবাকে বাবা বলে ডাকতে ইচ্ছে করে না। “মায়ের চিতার সাথে আমি অনাথ হয়ে গেছি, মিস্টার গুহ। তুমি ফোন রেখে দাও।”

বুধাদিত্যের বাবা ধরা গলায় বলেন, “আমি সত্যি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে।”

বুধাদিত্য, “এত দিন পরে হটাত, কারন জানতে পারি কি? তুমি ত বেশ আনন্দে আছো, আবার বিয়ে করেছ, ভালোই আছো, সেখানে আমার জায়গা হতে পারেনা।” কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “নতুন বউ কি ছেড়ে দিয়েছে, যে আমার কথা চোদ্দ বছর পরে মনে পড়েছে?”

বুধাদিত্যের বাবা চাপা গলায় উত্তর দেয়, “না ঠিক তা নয়। তবে যদি কোনদিন কোলকাতা আস, তাহলে একটি বার ধানবাদ ঘুরে যেও। খুব দেখতে ইচ্ছে করে তোমাকে। বয়স হয়েছে, জীবনে অনেক পাপ করেছি, অনেক কিছুর ক্ষমা নেই জানি। তাও একটি বার দেখা করার ইচ্ছে আছে।”

ফোন রেখে দিল বুধাদিত্য। ফ্রিজ খুলে একটা গ্লাসে মদ ঢেলে নিল। দুচোখ ঝাপসা হয়ে গেছে, একটা দমকা ঝড় এসে ওর বাঁধাধরা অঙ্ককষা জীবন উলট পালোট করে দিয়ে গেল। বিছানার ওপরে শুয়ে পড়ল বুধাদিত্য। মাথার কাছে বাঁধানো মায়ের ছবি। মায়ের সবে একুশ আর বাবার তখন চব্বিস, যখন তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পরেই বুধাদিত্যের জন্ম। ক্লাস নাইনে পড়ত বুধাদিত্য তখন মা মারা যান। কাঁচের ফ্রেমের ভেতর থেকে মা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসেন, চোখ দুটি ভারী মিষ্টি, অসীম মমতা মাখা। রোজ সকালে স্নান সেরে মায়ের ছবির নিচে ধুপ কাঠি জ্বালিয়ে যায়। মা ওকে রোজ দিন আশীর্বাদ করেন, বাবা সাবধানে গাড়ি চালাস একটু, কারুর সাথে এক্সিডেন্ট হলে মাথা গরম করিস না, মারপিট করিস না। বুধো রে, আমি তোর পথ চেয়ে বসে থাকব।

কেঁদে ওঠে বুধাদিত্যের প্রান, সেই কান্নার জল ওর একার। হাতের পানীয়ের অর্ধেকটা গলায় ঢেলে দিল, মাথা ঝিম ঝিম করতে শুরু করে দিল একটু। ছোটোবেলা থেকে হস্টেলে মানুষ। মা চাইতেন না তার একমাত্র ছেলেকে হস্টেলে পাঠাতে, কিন্তু বাবার জেদের জন্য হস্টেলে যেতে হয়।

ক্লাস নাইনে পড়ত, একদিন কলেজ যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে সবাই। হস্টেল ওয়ার্ডেন ওকে ডেকে নিয়ে যায় অফিস ঘরে। সেখানে গিয়ে দেখে যে মামা বসে আছেন। মামাকে দেখে খুব খুশি বুধাদিত্য, কিন্তু রঞ্জন বাবুর মুখ থমথমে। ভাগ্নের মুখের হাসি দেখে প্রান কেঁপে ওঠে। বোনের মৃত্যু সংবাদ কি করে দেবে। মামাকে দেখে আনন্দে আঠখানা, বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে, কি এনেছে মামা। রঞ্জন বাবু ওকে বললেন যে ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে এসেছেন। সেই শুনে বুধাদিত্যের মনে আনন্দ ধরে না। এক মাস বাকি ছিল শীতের ছুটির, তার আগেই বাড়ি ফিরতে হবে শুনে খুব খুশি হয়েছিল। সারা রাস্তা রঞ্জনবাবু ওর খুশির আমেজে টোল পড়তে দেয় না, জানে যে এই হাসি হয়ত তাঁর ভাগ্নের শেষ হাসি।

বাড়িতে পা দিতেই পা আটকে যায় মাটিতে। উঠানে তার স্নেহময়ি মা শুয়ে আছেন অন্তিম শয্যায়। দৌড়ে গিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে ওঠে বুধাদিত্য, মা একি হল, তুমি যে বলেছিলে শীতের ছুটিতে আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে? মা ওঠ মা, দেখ আমি এসে গেছি। চল না মা, ঘুরতে যাব। বুধাদিত্যের মায়ের কানে সেই আওয়াজ পৌঁছায় না। মায়ের মাথা কোলে করে নিয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বুধাদিত্য। জগতে সব শেষ। শেষ পর্যন্ত সবাই মিলে মাকে নিয়ে চলে গেল।

মায়ের মুখাগ্নি করার সময়ে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা বাবার দিকে চোখ পরে। চোয়াল শক্ত হয়ে যায় বাবাকে দেখে। মুখাগ্নি করার পরে হাতের কাছে একটা বাঁশ পড়েছিল, সেটা নিয়ে বাবাকে মারতে ছোটে। বুধাদিত্যের মামি, প্রমিলা দেবী জড়িয়ে ধরেন ওকে। মামিমার আদরের ছোঁয়া পেয়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষান্ত হয় বুধাদিত্য। বুধাদিত্য জানে না রঞ্জনবাবু ওর বাবাকে কি বলেছিল সেইদিন। শুধু জানে যে বাবার সাথে শেষ দেখা সেই শ্মশানে। মায়ের চিতা জ্বলে ওঠে, সেই সাথে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায় বুধাদিত্যের মুখের হাসি, ছাই হয়ে যায় বুধাদিত্যের মনের আনন্দ।

বাবা সেই ছোটবেলায় হস্টেলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, তারপরে ছয় বছরে মাত্র দিন কুড়ির জন্য দেখা হয়েছিল বাবার সাথে। বাবা ধানবাদের কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের উচ্চ পদস্থ ম্যানেজার। বাবার কথা জিজ্ঞেস করলেই মা ওকে বলতেন যে, বাবা কাজে খুব ব্যাস্ত। কেউ যদি ওকে এসে জিজ্ঞেস করত, তোর বাবা দেখতে কেমন। উত্তর দেবার মতন ছবি ছিল না বুকে, ঠিক করে হয়ত বলতে পারত না, যে ওর বাবা দেখতে কেমন।

প্রমিলা দেবী আর রঞ্জন বাবু বুধাদিত্যকে ভাসিয়ে দেন নি। নিজের মেয়ে অনিন্দিতার সাথে নিজের সন্তানের মতন মানুষ করেছেন। কিন্তু কারুর সাথে বুধাদিত্যের মনের বন্ধন তৈরি হয়া না। বুধাদিত্যের মায়ের নামে ওর দাদু কোলকাতার লেকটাউনে একটা ফ্লাট কিনে রেখে গিয়েছিলেন। বোনের জমানো টাকা দিয়ে বুধাদিত্যকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ান রঞ্জন বাবু। বুধাদিত্য কলেজে পড়াকালীন মামাবাড়ি ছেড়ে লেকটাউনের ফ্লাটে চলে আসে। রঞ্জনবাবু মানা করেন নি, ছেলে বড় হয়েছে, নিজের বাড়ি চলে যাবে সেটা তিনি আগেই জানতেন। চাকরি পাওয়ার পরে দিল্লী চলে আসে। গত বছর লেকটাউনের ফ্লাট বিক্রি করে দিল্লীর কাল্কাজিতে বিশাল তিন কামরার ফ্লাট কেনে। ছোটোবেলা থেকে কোলকাতার বাইরে, কোলকাতায় মা নেই, সুতরাং কোলকাতা আর ওর শহর নয়। তবে প্রতি বছর এক নয় পুজোতে নাহয় শীতে মামাবাড়ি যায়।

বুধাদিত্য চুপ করে শুয়ে থাকে বিছানার ওপরে। ঠাণ্ডার আমেজ কেটে বুকের মধ্যে দেখা দেয় মরুভুমির তপ্ত বালুচর। সেই ছোটবেলায় মা ওকে বুকে করে লেকটাউনের ফ্লাটে চলে আসে, আর ফিরে যায়নি ধানবাদে। ধানবাদের কথা বিশেষ মনে নেই বুধাদিত্যের। ছোটবেলা থেকে হস্টেলে মানুষ, ছুটিতে মামাবাড়ি না হয় নিজেদের ফ্লাটে। কানাঘুষো কথা শুনতে পেত বুধাদিত্য, বাবা নাকি মেয়েছেলে আর মদ নিয়ে পরে থাকে দিন রাত।

বাবা যাকে বিয়ে করেছে তাকে হয়ত আগে থেকেই চিনত, তাই হয়ত মাকে ছেড়ে দিয়েছিল। আসল কারন জানেনা, কেননা বাবার সাথে বহু বছর কারুর দেখা সাক্ষাৎ নেই, নতুন সেই মহিলাকেও কোন দিন দেখেনি বুধাদিত্য। যাবে কি যাবে না, গিয়ে কি হবে, না একবার যাওয়া যাক, দেখা যাক কি বলতে চায় তাঁরা। দেখে আসতে চায় নতুন সংসার কেমন করে আছে।

কুয়াশার মতন কিছু ছবি ওর চোখের সামনে ভেসে আসে। বুধাদিত্য তখন হস্টেলে যায়নি, ক্লাস অয়ান এ পড়ে। বাবা অতি মদ্যপ হয়ে বাড়ি ফিরেছে, মায়ের সাথে তুমুল ঝগড়া, মা ওকে কোলে করে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে শুয়ে পরে। বহু রাত এই রকম কেটে গেছে। এমন দিন গেছে যে মা বাবার জন্য খাবার বেড়ে টেবিলেই শুয়ে পড়েছে, বাবা রাতে আর বাড়ি ফেরেন নি। বুধাদিত্য রাতে পেচ্ছাপ করার সময় মা বলে কেঁদে উঠত। ঘুম ঘুম চোখ মেলে টের পেত, মা ওর পাশে নেই। খাবার ঘরে গিয়ে দেখত মা টেবিলের ওপরে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছেন। মায়ের নাকের কাছে চোখের জলের সরু দাগ। ছোট্ট ছোট্ট হাতে সেই জলের দাগ মুছিয়ে মাকে আদর করে বলত, আমি বড় হলে তোমাকে তাড়াতাড়ি খেতে দেব। তোমাকে রাতে না খেয়ে থাকতে হবে না। মাকে তাড়াতাড়ি খেতে দিতে পারল না বুধাদিত্য, মা তাঁর আগেই ওকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেন।

সেইদিন থেকে ওর জীবন কালো মেঘে ঢেকে গেল। পড়াশুনায় ভালো তাই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করল। জীবনকে এক নতুন অঙ্কে বেঁধে নিল বুধাদিত্য। মমতাময়ি মা তাকে ছেড়ে বহুদুরে চলে গেছে। অন্যদিকে নারীসঙ্গে ডুবে তার বাবা তার কাছ থেকে দুরে চলে গেছে। এমন হতে পারে যে কোন এক সুন্দরী লাস্যময়ী নারীর কবলে পরে বাবা মাকে ছেড়ে চলে গেছেন। সেই নারী বাবাকে ভুলিয়ে বশীভূত করে তাঁর সম্পত্তি নিয়ে নিয়েছে। আর যখন বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন, শ্রান্ত পথের পথিক হয়ে গেছেন তখিন সেই মহিলা ছেড়ে চলে গেছে। তাই হয়ত ওর বাবার এতদিন পরে বুধাদিত্যের কথা মনে পড়েছে। এই নারীসঙ্গের প্রতি বিতৃষ্ণায় বুধাদিত্য নতুন নারী খোঁজে প্রতি রাতে। কোন আকর্ষণীয় নারী দেখলে, পেটের মধ্যে জৈবিক ক্ষুধা জেগে ওঠে। ঝিলামকে দেখে সেই জৈবিক ক্ষুধার উদ্রেক হয়েছিল। ব্যাতিক্রমি শুধু এক নারী, আয়েশা।

গত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ওর জীবনের সব অঙ্ক ভুল হয়ে গেল। গত রাতে ঝিলামের সেই শেষ বাক্য মায়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। উনত্রিশ বছরের ঋজু বুধাদিত্য, চোদ্দ বছর পরে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। হাতের গ্লাস ছুঁড়ে মারে, ঝনঝন করে হাতের গ্লাসের সাথে সেন্টার টেবিলের কাঁচ ভেঙ্গে যায়। মেঝের ওপরে ছড়িয়ে সহস্র কাঁচের টুকরো, ওর জীবন যেন দ্বিতীয় বার টুকরো টুকরো হয়ে গেল।

মাঝে মাঝেই প্রমিলাদেবী ওকে ফোন করে কুশল জিজ্ঞেস করত। ঠিক সন্ধ্যের সময়ে প্রমিলাদেবীর ফোন আসে।

বুধাদিত্য ফোন তুলেই মামিমাকে বকতে শুরু করে দেয়, “আমার ফোন নাম্বার কি বারোয়ারী পেয়েছ, যে যাকে তাকে নাম্বার দিয়ে বেড়াচ্ছ?”

প্রমীলাদেবী থথমত খেয়ে যান, একটু ধাতস্থ হয়ে বুঝতে পারেন যে, বুধাদিত্যের বাবা ওকে ফোন করেছিল। শান্ত হয়ে বলেন, “হ্যাঁ বাবা, তুই ভালো আছিস। আজ অফিস গেছিলি?”

বুধাদিত্য ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “দুই দিনে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না। আমি ঠিক আছি। তুমি একদম আমার কথা ঘুরাবার চেষ্টা করবে না। কেন দিয়েছিলে মিস্টার গুহ কে আমার ফোন নাম্বার?”

প্রমীলাদেবী, “তোর বাবা অনেক অনুরোধ করেছিলেন। তোর মামা দিতে চাননি। পরে আবার আমাকে ফোন করেছিলেন আমি ভাবলাম চোদ্দ বছর হয়ে গেছে, সবার বয়স হয়েছে। তাই তোর ফোন নাম্বার দিয়ে দিলাম। কথা বলে দেখ।”

বুধাদিত্য, “কথা বলা হয়ে গেছে। কি চায় এত দিন পরে?”

প্রমীলাদেবী, “তা জানিনা বাবা। তোর সাথে দেখা করতে চায় এই জানালেন।”

বুধাদিত্য, “হ্যাঁ আমাকেও তাই বললেন, কিন্তু আমার একদম ইচ্ছে নেই দেখা করার।”

প্রমীলাদেবী, “বাবা, আমার কথা শোন, একটি বার পারলে দেখা করিস, তোর বাবার বয়স হয়েছে, হয়ত প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়।”

বুধাদিত্য, “ঠিক আছে সে দেখা যাবে। সেটা পরের কথা। তোমরা ভালো আছো?”

প্রমীলাদেবী, “হ্যাঁ রে সবাই ভালো আছি। দিনেদিনে বুবাইের দুষ্টুমি বেড়েই চলেছে।”

বুধাদিত্য, “আচ্ছা মামি, আমি পরের মাসে দেশের বাইরে যাচ্ছি। পুজোর সময়ে আসতে পারব কি না ঠিক জানিনা।”

প্রমীলাদেবী, “পুজো এবারে অক্টোবরের মাঝা মাঝি, তুই ততদিনে ফিরতে পারবি না?”

বুধাদিত্য, “জানিনা, তবে আগে ফিরে এলে পুজোতে যাব। ওকে বাই, ফোন রাখছি।”

প্রমীলাদেবী, “ঠিক আছে, সাবধানে থাকিস।”
[+] 1 user Likes pnigpong's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: দ্বিতীয় অঙ্ক (কালেক্টেড) - by pnigpong - 27-06-2020, 09:04 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)