27-02-2019, 05:11 PM
তৃতীয় অধ্যায়ঃ গঙ্গাবক্ষে জোয়ার ভাঁটা
জলপরীর স্বপ্ন
অভিমন্যু তালুকদারের পরিবার বেশ সচ্ছল। দমদমে ওদের বিশাল দু’তলা বাড়ি। একতলায় একটা মারয়ারি পরিবার ভাড়া থাকে। দু’তলায় তিনটে শোবার ঘর, একটি খাবার ঘর আর একটি বশার ঘর। তিন’তলায় একটি শোবার ঘর আছে। মায়ের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে, পরীর জন্য, অভিকে ওর দুতলার ঘর ছেড়ে দিতে হয়। মায়ের মেয়ের চেয়ে ভাবি বউমা বলা ভাল, যদিও অভির মনে সংশয়ের দানা বাঁধা যে মা বাবা র সম্মতি পাওয়া অনেক অনেক কষ্টকর হবে। বাবার আদেশ অমান্য করা যায় না, দু’তলায় ঘর খালি থাকলেও অভিকে তিন তলার ঘর বরাদ্দ করা হয়।
কলেজের পরীক্ষা সামনে, পরাশুনায় ডুবে যায় অভিমন্যু। রোজ রাতের বেলা পরীর কাজল কালো চোখ ওর খোলা বইয়ের পাতায় ফুটে ওঠে। গালে পরীর ঠোঁটের পরশ অনুভব করে তখন। মন যেন কেমন করে ওঠে অভির। কাল্কা তে পরী যে চুমু ছুঁড়ে দিয়েছিল তাঁর কথা অভির বারে বারে মনে পরে যায়, সেই চুমু টাকে নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখে অভি। পড়তে বসে পড়ার দিকে মন থাকে না। রুমাল বের করে মাঝে মাঝে ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে পরীর স্পর্শ নিতে চেষ্টা করে, মুখের ওপরে মেলে ধরে রুমাল, অনুভব করতে চেষ্টা করে পরীর হাতের মিষ্টি ছোঁয়া। গ্রামের মেয়ে লাজুক পরী, মিলনের সময়েও একবারের জন্য নিজেকে অভির চোখের সামনে উন্মুক্ত করতে পারেনি।
দিনটা ছিল বৃহস্পতি বার, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে। কোলকাতায় ঠাণ্ডা বেশ কমে এসেছে। আকাশে বেশ ঝলমলে রোদ উঠেছে। হাওয়ায় যেন ভালবাসা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কলেজে যাবার আগে মা অভিকে জানাল যে বিয়ের পরে সুব্রত আর মৈথিলীকে নিমন্ত্রন করে খাওয়ানো হয়নি তাই আজ মা ওদের কে বাড়িতে ডেকেছে। অভির মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, একবারের জন্য জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে যে পরী সাথে আসবে কিনা। কিন্তু কিন্তু করেও শেষ পর্যন্ত মাকে জিজ্ঞেস করে যে পরী সাথে আসছে কি না। মা জানালেন আসতেও পারে নাও আসতে পারে পরী। পরীর আসার ঠিক নেই শুনে অভির মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কলেজে সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে অভির। বারেবারে পরীর চোখ বইয়ের পাতার ওপরে ভেসে ওঠে।
রাতে ফিসিক্স পেপারের কোচিং ক্লাস ছিল তাই অভির বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। মনমরা হয়ে বাড়ি ফিরে কলিং বেল বাজায় অভি। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে মা বারন্দা থেকে দেখলেন যে কে এসেছে।
দরজা খুলল কেউ, সামনে পরীকে দেখে হাঁ হয়ে গেল অভি। বাঁ পা চউকাঠের ভেতরে কিন্তু তারপরে আর পা ওঠে না অভির।
অভির বিস্ময়ান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে পরী। চিবুকে আঙ্গুল দিয়ে ওর খোলা মুখ বন্ধ করে দিল, হেসে বলল, "মাছি ঢুকে যাবে যে!"
অভি হাঁ করে তাকিয়ে পরীর রুপ দেখে। অনেক দিন পরে পরীকে যে নতুন করে দেখছে অভি। ফর্সা কপালে, দুই বাঁকা ভুরুর মাঝে নীল রঙের টিপ। লম্বা ঘন কালো চুল খোলা, বাঁ কাঁধের ওপরে থেকে সামনের দিকে নেমে এসেছে। চুলের কিছু অংশ মুখখানি কিছুটা ঢেকে রেখেছে যেন চাঁদ লুকিয়ে আছে কালো মেঘের আড়ালে। পরনে আঁটো গাড় নীল রঙের কামিজ, বুকের নিচ থেকে ফুলে উঠে একদম হাঁটু পর্যন্ত নেমে গেছে ঘাগরার মতন। হাসিতে গালে টোল পড়েছে আর অভির ওই হাসি দেখে মনে হল যেন এখুনি পরীকে জড়িয়ে ধরে ওর লাল লাল গালে চুমু খায়।
পরী ওর মুখ বন্ধ করে চোখের পাতার ওপরে আঙ্গুল রেখে বলে, "আমার দিকে ওইরকম ভাবে তাকিয়ে থেকো না, আমার ভেতর টা কেমন করে উঠছে, অভি।"
অভি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পরীকে জড়িয়ে ধরতে যায়। পরী ওকে আলতো ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে, "কি করছ? বাড়িতে সবাই আছে যে। দেরি দেখলে এখুনি ছোটো মা ডাক দেবে।"
চালে মত্ত ছন্দ এনে অভির কবল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় পরী। অভি কিছুক্ষণ ওকে পেছন থেকে দেখে, তারপরে আবার হাত বাড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করে। পরী দৌড়ে ওর হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। বার বার পেছনে তাকিয়ে হাসে আর দুচোখ যেন ওকে হাতছানি দিয়ে ডেকে বলে, "ধরতে পারলে আমি তোমার।"
বসার ঘরে ঢুকে অভি দেখল যে বাবা মা সুব্রত মৈথিলী বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে।
সুব্রত ওকে দেখে বলে উঠল, "কি মামা কেমন আছো?"
মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে মাথা নোয়ায় অভি। মৈথিলীর চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়, "মামা আমি ভাল, তোমার খবর বল?"
নতুন বউ মৈথিলী কে দেখতে ভারী সুন্দর লাগছে, পরনে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি। এই বার বেশ কাছ থেকে দেখছে মৈথিলীকে, বিয়ের সময়ে তো ঠিক করে দেখে ওঠা হয়নি নতুন বউকে। গায়ের রঙ পরীর মতন অত ফর্সা না হলেও ফর্সা বলা চলে মৈথিলীকে। বেশ খানিকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে অভি। সুব্রত ওর কাঁধ চাপড়ে ওর কলেজের খবরাখবর জিজ্ঞেস করে। অভি মাথা নেড়ে উত্তর দেয় যে সব ঠিক চলছে।
মা জানালেন যে ওদের আনতে গিয়ে পরী ও বায়না ধরে যে আসবে তাই মা ওকেও সাথে নিয়ে আসে। মায়ের কথা শুনে পরী চোরা চাহনিতে অভির দিকে তাকায়, "দেখলে ত আমার বুদ্ধি।"
সামনে পরী মায়ের সাথে বসে। পরী মাকে জড়িয়ে ধরে আদর খাচ্ছে। পরীর মুখে অনাবিল আনন্দ, যেন অনেক দিন পরে ও হারিয়ে যাওয়া খেলনা খুঁজে পেয়েছে।
মা ওদেরকে শোনাতে লাগ্লেন যে পরীর ঘর টাকে মা কি রকম করে সাজিয়েছেন। সব ঘরের জন্য নতুন পর্দা কেনা হয়েছে, পরীর যে রঙ ভালো লাগে সেই রঙের বিছানার চাদর কেনা হয়েছে। এমনকি ঘরের দেয়ালের রঙ পর্যন্ত পরীর পছন্দের রঙ্গে রঙ করেছে মা। অভির সেই কথা ঠিক সহ্য হল না, মায়ের যেন সব কিছু বাড়িয়ে বলার স্বভাব। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে দেখল, ধিরে ধিরে পরী জানতে পারবে ওর ছোটো মা কি রকম মানুষ। অভি মাথা ব্যাথার ছল করে অখান থেকে উঠে, তিন তলায় নিজের ঘরে চলে এল।
মায়ের সবকিছু যেন বারাবারি করে বলার স্বভাব। নিজে কি করেছে না করেছে যেন সবাইকে ঢাক পিটিয়ে না বললে শান্তি হয় না মায়ের। অভির প্রতি ভালবাসা বাঁ স্নেহ যেন মা সবসময়ে পয়সা দিয়ে মাপে। মাঝে মাঝেই শোনাতে ছারে না যে যেহেতু বাবা মা ওর পড়াশুনার জন্য অনেক পয়সা খরচ করেছে সুতরাং ওকে ভাল রেসাল্ট করতেই হবে। জয়েন্ট পায়নি বলে ওর মুন্ডুপাত করতে ছারেনি মা। এই সব ভাবতে ভাবতে চুপ করে টেবিলের পাশে বসে থাকে অভি। এমন সময়ে দরজায় কেউ টোকা মারে।
অভি ভাবে পরী হয়ত দেখা করতে এসেছে, কিন্তু ঘুরে দেখে যে দরজায় সুব্রত দাঁড়িয়ে। সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি মামা কি ব্যাপার? সব কিছু ঠিক ত।"
অভি ওর দিকে হেসে উত্তর দেয়, "মামা সব ঠিক।"
সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করল, "আজ রাতে পারটি করা যাবে কি?"
অভি উত্তর দিল, "হ্যাঁ মামা, করা যাবে। কিন্তু তুমি কি এনেছ না আমাকে নিয়ে আসতে হবে?"
সুব্রত, "না মামা আমি আনিনি, তোমাকে যোগাড় করতে হবে।"
অভি, "ঠিক আছে যোগাড় হয়ে যাবে চিন্তা কোর না।"
সুব্রত, "উলুপিদি জানতে পারবে না ত? জানতে পারলে..."
অভি ওকে আসস্থ করে, "না মামা জানতে পারবে না। রাতের বেলা কেউ উপরে আসে না। আমরা চাইলে সারা রাত ধরে গল্প করতে পারি। এই টুকু স্বাধীনতা মা আমাকে দিয়েছে যে আমার ঘরে কন বন্ধু এলে মা আমার ঘরে আসেন না। আর যাই হক, সকালে কলেজে যাবার সময়ে আমি সব বোতল নিয়ে বাইরে ফেলে দেব।"
জলপরীর স্বপ্ন
অভিমন্যু তালুকদারের পরিবার বেশ সচ্ছল। দমদমে ওদের বিশাল দু’তলা বাড়ি। একতলায় একটা মারয়ারি পরিবার ভাড়া থাকে। দু’তলায় তিনটে শোবার ঘর, একটি খাবার ঘর আর একটি বশার ঘর। তিন’তলায় একটি শোবার ঘর আছে। মায়ের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে, পরীর জন্য, অভিকে ওর দুতলার ঘর ছেড়ে দিতে হয়। মায়ের মেয়ের চেয়ে ভাবি বউমা বলা ভাল, যদিও অভির মনে সংশয়ের দানা বাঁধা যে মা বাবা র সম্মতি পাওয়া অনেক অনেক কষ্টকর হবে। বাবার আদেশ অমান্য করা যায় না, দু’তলায় ঘর খালি থাকলেও অভিকে তিন তলার ঘর বরাদ্দ করা হয়।
কলেজের পরীক্ষা সামনে, পরাশুনায় ডুবে যায় অভিমন্যু। রোজ রাতের বেলা পরীর কাজল কালো চোখ ওর খোলা বইয়ের পাতায় ফুটে ওঠে। গালে পরীর ঠোঁটের পরশ অনুভব করে তখন। মন যেন কেমন করে ওঠে অভির। কাল্কা তে পরী যে চুমু ছুঁড়ে দিয়েছিল তাঁর কথা অভির বারে বারে মনে পরে যায়, সেই চুমু টাকে নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখে অভি। পড়তে বসে পড়ার দিকে মন থাকে না। রুমাল বের করে মাঝে মাঝে ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে পরীর স্পর্শ নিতে চেষ্টা করে, মুখের ওপরে মেলে ধরে রুমাল, অনুভব করতে চেষ্টা করে পরীর হাতের মিষ্টি ছোঁয়া। গ্রামের মেয়ে লাজুক পরী, মিলনের সময়েও একবারের জন্য নিজেকে অভির চোখের সামনে উন্মুক্ত করতে পারেনি।
দিনটা ছিল বৃহস্পতি বার, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে। কোলকাতায় ঠাণ্ডা বেশ কমে এসেছে। আকাশে বেশ ঝলমলে রোদ উঠেছে। হাওয়ায় যেন ভালবাসা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কলেজে যাবার আগে মা অভিকে জানাল যে বিয়ের পরে সুব্রত আর মৈথিলীকে নিমন্ত্রন করে খাওয়ানো হয়নি তাই আজ মা ওদের কে বাড়িতে ডেকেছে। অভির মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, একবারের জন্য জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে যে পরী সাথে আসবে কিনা। কিন্তু কিন্তু করেও শেষ পর্যন্ত মাকে জিজ্ঞেস করে যে পরী সাথে আসছে কি না। মা জানালেন আসতেও পারে নাও আসতে পারে পরী। পরীর আসার ঠিক নেই শুনে অভির মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কলেজে সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে অভির। বারেবারে পরীর চোখ বইয়ের পাতার ওপরে ভেসে ওঠে।
রাতে ফিসিক্স পেপারের কোচিং ক্লাস ছিল তাই অভির বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। মনমরা হয়ে বাড়ি ফিরে কলিং বেল বাজায় অভি। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে মা বারন্দা থেকে দেখলেন যে কে এসেছে।
দরজা খুলল কেউ, সামনে পরীকে দেখে হাঁ হয়ে গেল অভি। বাঁ পা চউকাঠের ভেতরে কিন্তু তারপরে আর পা ওঠে না অভির।
অভির বিস্ময়ান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে পরী। চিবুকে আঙ্গুল দিয়ে ওর খোলা মুখ বন্ধ করে দিল, হেসে বলল, "মাছি ঢুকে যাবে যে!"
অভি হাঁ করে তাকিয়ে পরীর রুপ দেখে। অনেক দিন পরে পরীকে যে নতুন করে দেখছে অভি। ফর্সা কপালে, দুই বাঁকা ভুরুর মাঝে নীল রঙের টিপ। লম্বা ঘন কালো চুল খোলা, বাঁ কাঁধের ওপরে থেকে সামনের দিকে নেমে এসেছে। চুলের কিছু অংশ মুখখানি কিছুটা ঢেকে রেখেছে যেন চাঁদ লুকিয়ে আছে কালো মেঘের আড়ালে। পরনে আঁটো গাড় নীল রঙের কামিজ, বুকের নিচ থেকে ফুলে উঠে একদম হাঁটু পর্যন্ত নেমে গেছে ঘাগরার মতন। হাসিতে গালে টোল পড়েছে আর অভির ওই হাসি দেখে মনে হল যেন এখুনি পরীকে জড়িয়ে ধরে ওর লাল লাল গালে চুমু খায়।
পরী ওর মুখ বন্ধ করে চোখের পাতার ওপরে আঙ্গুল রেখে বলে, "আমার দিকে ওইরকম ভাবে তাকিয়ে থেকো না, আমার ভেতর টা কেমন করে উঠছে, অভি।"
অভি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পরীকে জড়িয়ে ধরতে যায়। পরী ওকে আলতো ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে, "কি করছ? বাড়িতে সবাই আছে যে। দেরি দেখলে এখুনি ছোটো মা ডাক দেবে।"
চালে মত্ত ছন্দ এনে অভির কবল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় পরী। অভি কিছুক্ষণ ওকে পেছন থেকে দেখে, তারপরে আবার হাত বাড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করে। পরী দৌড়ে ওর হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। বার বার পেছনে তাকিয়ে হাসে আর দুচোখ যেন ওকে হাতছানি দিয়ে ডেকে বলে, "ধরতে পারলে আমি তোমার।"
বসার ঘরে ঢুকে অভি দেখল যে বাবা মা সুব্রত মৈথিলী বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে।
সুব্রত ওকে দেখে বলে উঠল, "কি মামা কেমন আছো?"
মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে মাথা নোয়ায় অভি। মৈথিলীর চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়, "মামা আমি ভাল, তোমার খবর বল?"
নতুন বউ মৈথিলী কে দেখতে ভারী সুন্দর লাগছে, পরনে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি। এই বার বেশ কাছ থেকে দেখছে মৈথিলীকে, বিয়ের সময়ে তো ঠিক করে দেখে ওঠা হয়নি নতুন বউকে। গায়ের রঙ পরীর মতন অত ফর্সা না হলেও ফর্সা বলা চলে মৈথিলীকে। বেশ খানিকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে অভি। সুব্রত ওর কাঁধ চাপড়ে ওর কলেজের খবরাখবর জিজ্ঞেস করে। অভি মাথা নেড়ে উত্তর দেয় যে সব ঠিক চলছে।
মা জানালেন যে ওদের আনতে গিয়ে পরী ও বায়না ধরে যে আসবে তাই মা ওকেও সাথে নিয়ে আসে। মায়ের কথা শুনে পরী চোরা চাহনিতে অভির দিকে তাকায়, "দেখলে ত আমার বুদ্ধি।"
সামনে পরী মায়ের সাথে বসে। পরী মাকে জড়িয়ে ধরে আদর খাচ্ছে। পরীর মুখে অনাবিল আনন্দ, যেন অনেক দিন পরে ও হারিয়ে যাওয়া খেলনা খুঁজে পেয়েছে।
মা ওদেরকে শোনাতে লাগ্লেন যে পরীর ঘর টাকে মা কি রকম করে সাজিয়েছেন। সব ঘরের জন্য নতুন পর্দা কেনা হয়েছে, পরীর যে রঙ ভালো লাগে সেই রঙের বিছানার চাদর কেনা হয়েছে। এমনকি ঘরের দেয়ালের রঙ পর্যন্ত পরীর পছন্দের রঙ্গে রঙ করেছে মা। অভির সেই কথা ঠিক সহ্য হল না, মায়ের যেন সব কিছু বাড়িয়ে বলার স্বভাব। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে দেখল, ধিরে ধিরে পরী জানতে পারবে ওর ছোটো মা কি রকম মানুষ। অভি মাথা ব্যাথার ছল করে অখান থেকে উঠে, তিন তলায় নিজের ঘরে চলে এল।
মায়ের সবকিছু যেন বারাবারি করে বলার স্বভাব। নিজে কি করেছে না করেছে যেন সবাইকে ঢাক পিটিয়ে না বললে শান্তি হয় না মায়ের। অভির প্রতি ভালবাসা বাঁ স্নেহ যেন মা সবসময়ে পয়সা দিয়ে মাপে। মাঝে মাঝেই শোনাতে ছারে না যে যেহেতু বাবা মা ওর পড়াশুনার জন্য অনেক পয়সা খরচ করেছে সুতরাং ওকে ভাল রেসাল্ট করতেই হবে। জয়েন্ট পায়নি বলে ওর মুন্ডুপাত করতে ছারেনি মা। এই সব ভাবতে ভাবতে চুপ করে টেবিলের পাশে বসে থাকে অভি। এমন সময়ে দরজায় কেউ টোকা মারে।
অভি ভাবে পরী হয়ত দেখা করতে এসেছে, কিন্তু ঘুরে দেখে যে দরজায় সুব্রত দাঁড়িয়ে। সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি মামা কি ব্যাপার? সব কিছু ঠিক ত।"
অভি ওর দিকে হেসে উত্তর দেয়, "মামা সব ঠিক।"
সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করল, "আজ রাতে পারটি করা যাবে কি?"
অভি উত্তর দিল, "হ্যাঁ মামা, করা যাবে। কিন্তু তুমি কি এনেছ না আমাকে নিয়ে আসতে হবে?"
সুব্রত, "না মামা আমি আনিনি, তোমাকে যোগাড় করতে হবে।"
অভি, "ঠিক আছে যোগাড় হয়ে যাবে চিন্তা কোর না।"
সুব্রত, "উলুপিদি জানতে পারবে না ত? জানতে পারলে..."
অভি ওকে আসস্থ করে, "না মামা জানতে পারবে না। রাতের বেলা কেউ উপরে আসে না। আমরা চাইলে সারা রাত ধরে গল্প করতে পারি। এই টুকু স্বাধীনতা মা আমাকে দিয়েছে যে আমার ঘরে কন বন্ধু এলে মা আমার ঘরে আসেন না। আর যাই হক, সকালে কলেজে যাবার সময়ে আমি সব বোতল নিয়ে বাইরে ফেলে দেব।"