Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.47 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller টান (কালেক্টেড) 'Complete'
#26
পূবা একটু অবাক হয়েই দেখল,অসীম কে
.........ঐটা আমার সবচাইতে প্রিয় কবিতা। ওই রকম ভাবে জীবনের কথা বলা, ভাবা যায়না। খালি মাথায় ওই কবিতা বেরুবেনা ....বলে পূবা হাসে
.......ছন্দার শাসুরীর এই কবিতাটা খুব প্রিয় ছিল। জীবনকে নিয়ে অন্য রকম ভাবনা ভাবতে হলে সমাজের প্রচলিত গন্ডির বাইরে বেরুতে হবেই, না হলে হবেনা, অসীম বেশ বড় করে চুমুক দিল এইবার. সবাই পানীয় তে মন দিয়েছে, ছন্দার ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে পূবার কোলে, কৌশিক দিপুর দিকে তাকিয়ে
.........প্রিয়র শয়তানির আমি একটি মাত্র example দেব, কি রে প্রিয় বলি, তুই অদ্রীশ কে কি করেছিলি? .দিপু এক গাল হেসে ঘার নেড়ে, চুমুক দিল গ্লাস্সে
" কি example কৌশিক? বললেনা তো?" পূবার চোখ মুখে কৌতুহল, ...কৌশিক গ্লাস এ চুমুক মেরে দিপুর দিকে তাকিয়ে
....অদ্রীশ আমাদের সাথে পরত। বিশাল বড়লোকের ছেলে। খুব ফাট দেখাত। লেখাপড়ায় এভব অ্যাভারেজ, মেয়েদের পিছনে খুব লাগত। বড়লোকের ছেলে বলে, বাকিরা একটু রয়ে সয়ে চলত।একদিন স্কুল এ কিসের যেন একটা অনুষ্ঠান। প্রতেকেএই ভালো জামা কাপড় পরে এসেছে। প্রিয় আমাকে বলল " আজ ওকে দেখাবো। ব্যাটার ফুটানি ঘুচাব।" ক্লাস এ teacher এর টেবিল একটা গ্লাস ছিল আর ঢাকা দেয়ার একটা ডিশ। প্রিয় গ্লাস টা টইটুম্বুর জল দিয়ে ভর্তি করে ডিশ দিয়ে চাপা দিয়ে উল্টে দিয়েছে। দেখ মনে হবে , খালি একটা গ্লাস উল্টো করে ডিশ এর উপর আছে। একটু পর অদ্রীশ এসেছে। কথা বলতে বলতে প্রিয় হঠাত " দাড়া একটা ম্যাজিক দেখাই এই অদ্রীশ গ্লাস টা দে তো" অদ্রীশ গ্লাস টা ধরে যেই টান মেরেছে সব জল ওর প্যান্টের উপর। হা হা করে সমস্ত ক্লাস হেসে উঠেছে , অদ্রীশ রেগে " এটা কি হলো প্রিয়, তুই কিন্তু ভালো করলি না,”
.........তুই ব্যাটা প্যান্টে হিসি করবি আর আমার দোষ,এত বয়েস হলো এখনো প্যান্টে হিসি করিস ......প্রিয় গম্ভীর মুখে যেই কথা গুলো বলেছে , ক্লাস এর যত মেয়ে ছিল এক সাথে " ও পিসি , ও পিসি , খোকা বাবুর প্যান্টে হিসি ". রেগে মেগে অদ্রীশ গালাগাল দিতে দিতে বেরিয়ে গেল । তারপর থেকে ও আর বারফাট্টাই দেখা নি। এই হচ্ছে প্রিয় .
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। ছন্দা হাসতে হাসতে ....... আরে এ তো তুচ্ছ। ও স্নিগ্ধা কে যা করেছিল তার জবাব নেই। কি রে প্রিয় বলব? ...দিপু হাসিতে ভেঙ্গে পরে
.........তুই সাপোর্ট দিয়েছিলি ভালো, হাঁ বল।ছন্দা আর তপু বাদ দিয়ে বাকিদের গ্লাস শেষ। আবার আসল, ছন্দা বলা সুরু করলো
.........আমাদের সাথে স্নিগ্ধা বলে একটা মেয়ে পড়ত । সুন্দরী, পয়সা আছে বাড়ির । কিন্তু সে সব সময় ছেলেদের সাথে ঘুরবে, আজ একটা তো কাল আরেকটা আর তাদের ঘার ভেঙ্গে খাবে সিনেমা দেখবে,মানে এক কোথায় ছেলে গুলোকে নাচাবে । প্রিয় ওকে পাত্তা দিতনা । কিন্তু ও প্রিয়র সাথে মেশার জন্য খুব উদগ্রীব ছিল। ওই একটু নাচাবে আরকি। একদিন প্রিয় আমাকে বলল 'দ্যাখ আজ ওকে ঘোল খাইয়ে ছাড়ব' এই বলে প্রিয় স্নিগ্ধা কে নিয়ে হাজরা মোড়ের সিনেমা হল এর উপরে খেতে গ্যাছে। প্রিয়র পকেটে তো ২ টাকাও নেই, গিয়ে যত দামী দামী খাবার আছে অর্ডার দিয়েছে। স্নিগ্ধা ওকে জিজ্ঞাসা করেছে " কি রে প্রিয় আজ কি হলো তোর্ , এত খাবার খাওয়াচ্ছিস "
....আরে আজ প্রথম তোর্ সাথে এলাম তাই আরকি, ...এই বলে খাবার তো যথারীতি আগে শেষ করেছে। তারপর কফি নিয়ে তিন চারবার চুমুক দিয়ে
........ স্নিগ্ধা, একটু বস, সিগারেট নিয়ে আসি। ......বাইরে বেরিয়ে সোজা বাড়ি। তার পরের দিন কলেজ কামাই তারপর ২ দিন ছুটি ছিল, ৪ দিন পর কলেজে এসেছে।এদিকে স্নিগ্ধা তো কফি শেষ করে বসে আছে, ১৫ মিনিট পার, প্রিয় নেই। আধ ঘন্টা পার প্রিয় নেই। ১ ঘন্টা পর হাতের ঘড়ি জমা রেখে বেরিয়েছে। কলেজে এসে আমাকে দেখে রাগে অপমানে প্রায় কেঁদে দেয়। " একবার পাই ওকে, আমার একদিন কি ওর একদিন, জানওয়ার, ছোটলোক, ইতর, ভিখারী, খেতে পায়না ভিখ্যা করতে পারে তো, চোর " ...যা খুশি বলছে . আমি তো হাসিতে ফেটে যাবার যোগার। আমি যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানিনা, এইভাবে
.........খুব অন্যায়, ছি, তোর্ মত ভালো মেয়ের সাথে কেউ এইরকম করে, তুই ইউনিয়ন কে বল ...অমি তো জানি, ইউনিয়ন এর ছেলেরা উল্টে প্রিয়কে মাথায় তুলবে। ও তো হিরো। ৪ দিন পর প্রিয় এসেই বাস স্টপ এ আমাকে ধরেছে
.........শোন ছন্দা, তুই ক্লাস এ সবাইকে ডাকবি। দেখিস যেন মেয়েরা বেশি থাকে আর অরবিন্দ কে রাখবি, ব্যাটা স্নিগ্ধার চামচা। আমি দাড়ি কাটিনি , চুলে তেল দিই নি, ওকে বলব ঠাকুমা মারা গ্যাছেন। তুই খালি দেখে যা।আমি ক্লাস এ গিয়ে সবাইকে জড়ো করেছি, একটু পর প্রিয় আসল। মুখ সুখন, তেলবিহীন চুল এলোমেলো, পায়ে হাওয়াই চপ্পল। আমি দেখেই
..........কিরে প্রিয় কি হয়েছে, কেউ মারা গ্যাছেন? .....কি বলব। প্রিয় আমাকে প্রায় মেরে ফেলার উপক্রম করেছিল। কেঁদে দিল, ফোস ফোস করে, চোখ দিয়ে জল বার করে সুপার্ব এক্টিং
........
ওই দেখে সবাই তো " কি হয়েছে, কি হয়েছে প্রিয়"
.........কি বলব মাইরি, স্নিগ্ধা কে নিয়ে জীবনে প্রথমবার গেছি, খেয়ে সিগারেট কিনতে নেমেছি, দেখি ছোটকা। আমাকে দেখেই
........... তোকে খুঁজে খুঁজে হয়রান আর তুই এখানে খেয়ে বেড়াচ্ছিস .......আমি তো ছোটকা কে দেখে অবাক
........কি হয়েছে ছোটকা, তোমাকে এত উতলা লাগছে কেন ?
........এক্ষুনি বাড়ি চল, তোর্ জন্য সবাই বসে আছে। মা মারা গেছেন তুই না গেলে কিছু হবে না তুই বাড়ির বড় নাতি , এক্ষুনি চল ......আচ্ছা বল এরপর কাউর মাথা ঠিক থাকে। ঠাম্মা আমাকে কলে পিঠে মানুষ করেছেন, তার চলে যাওয়া আমার কাছে কি বেদনা দায়ক কি বলব। স্নিগ্ধা তোকে আরেকদিন খাইয়ে দেব কিছু মনে করিস না ,কেমন
.........সব মিথ্যা কথা , চোর কোথাকার, তুই বললেই পারতিস আমি তোকে খাওয়াতাম ........স্নিগ্ধা পারলে ওকে ছিড়ে খায়। ব্যাস যেই এই কথা বলেছে ক্লাস এর সব মেয়ে স্নিগ্ধা কে ছি ছি করে উঠলো। আমি আবার বললাম
........এই সবাই চাঁদা দে তো, স্নিগ্ধার টাকা মিটিয়ে দেই, এত ছোট মন তোর্, বলছে ঠাকুমা মারা গেছে, চল ওর বাড়িতে চল, যদি সত্যি হয় তাহলে কিন্তু সবাইকে খাওয়াতে হবে। ......বাকিরাও “ স্নিগ্ধা এটা কিন্তু বারাবাড়ি হচ্ছে, গুরুজন কে নিয়ে কেউ মিথ্যা বলে! তুই কি রে , ছি “

স্নিগ্ধা আর কি করবে, একেবারে একা হয়ে গেছে, রেগে মেগে ক্লাস ই করলনা। এর পরের ঘটনা আরো সাংঘাতিক। এর ২ দিন পর প্রিয় যথারীতি দাড়ি কেটে, চুলে তেল দিয়ে, কলেজ এ এসেছে। স্নিগ্ধা দেখেই
.......দ্যাখ বলেছিলাম না, মিথ্যুক কোথাকার হ্যাংলা, আজ দেখ, ......প্রিয় ওকে দেখল, তারপর একটু করুনা করার মত মুখ করে
........কি বলব বলত তোকে, কিছু বুঝিস না। শোন কাল রাতে ঠাম্মা ছোটকা কে স্বপ্নাদেশ দিয়েছেন " পুনু, দিপু বাচ্চা ছেলে, তুই ওকে কেন অসৌচ করাচ্ছিস, ওকে করতে হবেনা। দিপুর কষ্ট আমি দেখতে পারিনা, কালকেই ওকে স্নান করিয়ে দিবি।" ..... সকালে উঠেই কাকিমা আমাকে বলল "তোকে আর করতে হবে না, আর তুই বাইরে মাছ মাংশ খাস"..তাই আজ আমি এইরকম। মনটাকে একটু ভালো কর। আর সেইদিন খেয়ে আমার পেট খারাপ হয়ে গেছে, তুই এত গালাগাল দিয়েছিস যে খাবার হজম হয়নি। এই বলে ক্লাস এর দিকে তাকিয়ে " সবাই শোন, স্নিগ্ধার পয়সায় খেলে কিন্তু অবধারিত পেট খারাপ। আমি তোদের বন্ধু বলে সাবধান করে দিলাম" ...এই হচ্ছে প্রিয়। ..তপুর হাসির দমকে সমস্ত রেস্টুরান্ট ঘুরে দেখছে , তার সাথে পূবা আর অসীম। নেশা কাটিয়ে দেবার জন্য এই একটা ঘটনা যথেষ্ট।

হাসি থামতে তপু দীপুকে জড়িয়ে গালে চুমু " my sweet dada"....তোর্ মাথায় খেলেও বটে .....বলে আবার হাসি। পূবা এতক্ষণ হেসে মুখচোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
.........দিপু, মা তার কতদিন আগে মারা যান?
.........৪ বছর হবে, আরে ভুল তো বলি নি। ঠাম্মা তো মারাই গেছিলেন, খালি সময়টা নিজের মত করে নিয়েছি, বেশি কিছু না।
........তবে একটা কথা মানতে হবে, প্রিয়র অঙ্ক।মনে আছে, সেকেন্ড ইয়ার এ সার, ক্যালকুলাস এর সবচাইতে কঠিন চাপ্টার সেখাছেন। প্রথমে বুঝিয়ে একটা অঙ্ক বোর্ড এ লিখেছেন। তারপর সমস্ত ক্লাস কে বুঝিয়ে অঙ্ক টা করছেন। বোধ হয় ৩-৪ মিনিট হয়েছে , প্রিয় " সার উত্তর তা কি এই "pkc অবাক হয়ে তাকিয়ে অঙ্ক করা থামিয়ে চুপ করে দেখলেন,তারপর আবেগ, ভালোবাসা, স্নেহ সব মিশিয়ে
.........প্রিয়দর্শি, তোদের পড়ানো আমার জীবিকা, কিন্তু তার ভিতরও satisfaction খুঁজে পাই তোর্ মত ছেলে পেলে। তুই একটা বছর নষ্ট কর, আমি তোকে নিয়ে প্রিন্সিপাল এর কছে যাব। তুই আবার ফার্স্ট ইয়ার এ ভর্তি হ অম্ক নিয়ে। একটু সুখ পাই রে পড়িয়ে! এই অঙ্কটা এই চাপ্টারের সবচাইতে কঠিন, তুই এই ২-৩ মিনিট এর ভিতর ঠিক করে করলি কি করে? তুই exceptional....এই বলে যেই সার বোর্ড এর দিকে ঘুরেছেন, প্রিয় দাড়িয়ে বাঁ হাতে জামার কলার তুলে দুবার নাচিয়ে দিল। এই হচ্ছে প্রিয়দর্শি, আমার সব চাইতে প্রিয় বন্ধু ... হাসিতে মুখ ভাসিয়ে, ছন্দা ঝুকে দু হাত দিয়ে প্রিয়র হাত চেপে ধরল।
..........আসলে অঙ্ক ব্যাপারটা আমার ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছেন পঙ্কজ বাবু আর সবিতা দেবী, আমার বিশেষ ক্রিতিত্য নেই, আর এইটার ভিতরেও কিছু ঢুকে গেছে , গম্ভীর ভাবে বলে দিপু তপুর মাথায় আলতো চাটি মারলো, দিপুর কথা শুনে বাকিরা একটু অবাক হলো পূবা বাদ দিয়ে। তপুও ক্ষনিকের জন্য ধরতে পারেনি তারপরেই দমফাটা হাসিতে ফেটে পড়ল তপু। অসীম জিজ্ঞাসু চোখে পূবার দিকে চাইতে
.........পঙ্কজ আর আমার প্রথম সন্তান দিপু। আমার নাম সবিতা,....”. কিন্তু অন্তরে অতলান্তিক সাগরের ঢেউ উঠেছে,এত সুখ, এত গর্ব,এত খুশি আগে কবে হয়েছে মনে পরছেনা। একেই কি সন্তান সুখ বলে? এত আনন্দ আমি কি করে রাখব দিপু, তুই যা চাবি তাই দেব দিপু, খালি কিছু আবদার কর। অন্তত একবার বল 'মা আমার এইটা চাই'. আমার আজকের মত সুখ,শান্তি কোনদিন আসেনি রে দিপু। তুই সবার সামনে আমাকে উঁচু করে দিলি”। দিপু মায়ের অন্তরের কথা কি ভাবে শুনতে পেল? কি ভাবে মা এবং সন্তান পরস্পরের মনের কথা শুনতে পায়, না হলে কেন দিপু বলবে
...........মা, একটা কথা বলছি, সম্ভব হলে রেখো ...দিপু আন্তরিক ভাবে বলল
............বল, সবার সামনে কথা দিলাম যা বলবি তাই করব, বল .....দিপু একটু চুপ করে মা কে দেখল
.......কিছু খারাপ ভেবে নিওনা। তোমার ছেলে চরিত্রিহীন না। আমার পরচিত একটি মহিলা, বছর ৩১-৩২ হবে তাকে নিয়ে বলছি। এই বলে দিপু মঞ্জুর কথা বলল সবিস্তারে,তারপর ....যদি সম্ভব হয় তাহলে মঞ্জু দির একটা চাকরি বা অন্য কোনো পয়সা রোজগারের উপায় বার কর। ওদের প্রেম আমাকে বাকরুধ্হ করে দিয়েছিল। মনে মনে ঠিক করেছিলাম তখনি, যে তোমাকে বললে হয়ত তুমি কোনো উপায় বার করতে পারবে। পূবা মুগ্ধ নয়নে দিপুর দিকে তাকিয়ে আন্তরিক কন্ঠে
........তুই আমার সাথে দেখা করতে বল, নিশ্চই কিছু করব যাতে ওকে আর ওই ঘৃণ্য কাজ না করতে হয়। হাসি মুখে দিপুর দিকে চেয়ে, প্রশংসা মিশ্রিত স্বরে ‘”দিপু তুই আমাকে প্রতিদিন অবাক করছিস, এই রকম এক মহিলার জন্য সমবেদনা তুই উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছিস। পঙ্কজ মিছি মিছি জেল খাটেনি, সে তার ভাবনা তোর্ মাঝে রেখে গেছে।“ ...
প্রচুর খাবার এসেছে, যথারীতি দিপু নিজের কাবাব খেয়ে ছন্দার থেকে তুলে নিয়েছে, আর ছন্দা হাতে ছোট্ট করে চাটি মেরেছে, পূবা আরো কাবাব অর্ডার দিল।বাকিরা না না করে উঠতেই " আহ, আসুক না, কেউ না খেতে পারে আমি আর কৌশিক আছি, ঠিক খেয়ে নেব, ছন্দা তুই কিন্তু ভাগ পাবিনা"
..........ভাগের কি দরকার,তোর্ থেকে খাব .....যা হোক খাওয়া শেষ। অসীম চুপ করে খাবার খাচ্ছে, দেখে পূবা জিজ্ঞাসা করলো
........আরে আপনি তো কিছুই বলছেন না, কিছু বলুন।

....পূবা দেবী, কি বলব, আমার গত 7 বছরে সবচাইতে আনন্দের দিন আজকে। এই সুন্দর ছেলেমেয়েগুলো আমাকে আজ অনে .....ক পিছনে নিয়ে গেছে। আজ আমরা সবাই বন্ধু, যদিও তপু খুবই ছোট , তবুও ওর সামনেই স্বীকার করছি, সুরমার মৃত্যু আমাকে একেবারে শেষ করে দিয়েছিল। আমার পদস্থলন হয়েছিল, সেইটা সুরমা জানত। ওই দেশের সামাজিক অবস্থায় হয়ত সেইটা খুব আশ্চর্য নয়, কিন্তু আমাদের মূল্যবোধ অন্যরকমের, তাই আমি পদস্থলন ই বলছি। আমার খুব নামডাক ছিল কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে, তার ফলে নারী জীবনে আসার সুযোগ ছিল আর এসেও ছিল । কিন্তু যেদিন অফিস এর পর ডাক্তার এর চেম্বারে শুনলাম রক্তের ওই মারণব্যাধি , আমার মনে হলো আমি এক ধু ধু প্রান্তরে একা দাড়িয়ে,ঘন আঁধারে কিছু দেখতে পারছিনা, কোনো আলো নেই, কোনো শব্দ নেই, চাঁদ তারা কিচ্ছু নেই, এক বিরাট অখন্ড নিরবতা, কোনো অদৃশ্য টান আমাকে কৃষ্ণ গ্বহবরে নিক্ষেপ করেছে, যেখানে আলো পর্যন্ত হারিয়ে যায়। কোনো দিক বুজতে পারছিনা, কি করব বুজতে পারছিনা, আমি একা, যার আমার পাশে থাকার কথা ,নেই, সে নেই আমি একা। আমার দুই সন্তান তো আমার না, ওরা তো মায়ের সন্তান। আমারতো একমাত্র সুরমা, আর কেউতো আমার নিজের নয়, সুরমাই যদি না থাকে , তাহলে এই নশ্বর শরীর ছাড়া আমার নিজের আর কিচ্ছুটি রইলোনা, জীবন কি তাহলে সুরমার অবর্তমানে, খালি ভেসে চলা,উদ্দেশ্য হীন ভাবে ? বাঁচার মানে কি তাহলে ? তিতলি , আমার মেয়ে আমাকে ক্ষমা করেনি, করবেও না, না খেয়েও থাকলে কেউ জিজ্ঞাসা করবে না " তুমি খেয়েছ?" আমার ওই বিপুল সম্পদ,সাস্থ্য, জ্ঞান, বুধ্হী সব নিরর্থক, খালি ডাক্তারের রিপোর্ট সত্যি। খালি মনে হলো এ আমার পাপ, না হলে সুরমার মত ঐরকম প্রাণ শক্তিতে ভরপুর একজনের কেন হবে, আমার পাপ তার উপর বর্শিয়েছে।…….. একটানা আবেগ মথিত স্বরে বলে অসীম চুপ করে টেবিল এর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময়, তারপর

"রাত কত হলো, উত্তর মেলেনা"

সব ছেড়ে দিলাম। বাড়ি গাড়ি সব বেচে এখানে চলে এলাম। আর যাই হোক দেশের মাটিতেই হোক। ৭ মাস ১৮ দিন বেচে ছিল, তারপর। একেবারে শেষ অবস্থায় ধরা পরে। এই ৭ মাস ১৮ দিন খালি চান খাওয়া ছাড়া ওর পাশ থেকে নড়িনি। ওর মুখের প্রতিটি বলিরেখা দেখতাম আর মনের মনিকোঠায় জমা রাখতাম, এই ভেবে যে আমার সুরমার এই খানে চামড়া এইরকম ছিল। চোখের কোনা এইরকম, থুতনি এইরকম, সব প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত দেখতাম আর মনে রাখতাম।বার বার ঘন্টার পর ঘন্টা খালি দেখে যেতাম, আর যদি না দেখতে পাই, ঘুমাতামনা, যদি জেগে উঠে আর না দেখতে পাই। শেষের আগের দিন শেষের কবিতার শেষ কবিতাটির কিছু অংশ শেষ বারের মত আবৃতি করে শোনালো, পূবা দেবী আজ পর্যন্ত কোনো মানুষ ওই ভাবে ওই আবৃতি করতে পারেনি , ,

আজ ও আমার সমস্ত শরীরে প্রতিধ্বনিত হয়

...." কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও।

.তারি রথ নিত্যই উধাও

জাগাইছে অন্তরিক্ষে হৃদয়স্পন্দন ,

চক্র -পিষ্ঠ আঁধারের বক্ষফাটা তারার ক্রন্দন।

.ওগো বন্ধু,সেই ধাবমান কাল

.জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল -

.তুলে নিল দ্রুতরথে দুঃসাহসী ভ্রমনের পথে

. তোমা হতে বহু দুরে। .........হে বন্ধু বিদায়।

ফিরবার পথ নেই জানি পূবা দেবী, কিন্তু এই ৭ বছর পার হয়ে গেলেও ওকে ভুলতে পারিনি।
......আমি ১৭ বছরেও পারিনি। খুব আস্তে শোনা গেল পূবাকে
...কিন্তু আজ সন্ধ্যা আমার এক অপূর্ব সন্ধ্যা, বেশ কিছুক্ষণ অন্য কিছু মনে ছিল না, তার সম্পূর্ণ কৃতিত্য আমার নবীন বন্ধুদের।
কেউ লক্ষ্য করলনা নিজের অজান্তে তপু কৌশিকের হাত জোরে চেপে ধরে আছে। দিপুর মনে এক ৪০ পেরিয়ে যাওয়া নারীর ছবি
কৌশিককে iit তে নামিয়ে পূবা দিপুর বাড়িতে আসল,দীপুকে ছাড়বার জন্য।ছন্দা আর শ্বশুর নিজেদের গাড়িতেই চলে গেছে।
..........মা, তুমি কোনদিন আমার ডেরা দেখনি না, এস আজ দেখে যাও। খুব একটা খারাপ ভাবে নেই, বাড়ি ছাড়া সময় কল্পনার অতীত ছিল, এই রকম জায়গায় এই আস্তানা, এস। পূবা আর তপতী হাসি মুখে নেমে, উঠে রাধার ফ্লাট এ ঢুকে প্রথমেই বারান্দায় এসে দাড়ালো। একে একে সব ঘর, রান্না ঘর , বাথরুম সব ঘুরে ঘুরে দেখল, তপু আগেই দেখেছে, আজ মায়ের সাথে প্রথম। বাথরুম দেখে পূবা একটু নাক কচকালো
..........দিপু, রোজ পরিষ্কার করবি, পৃথিবী উল্টে গেলেও রোজ পরিষ্কার করবি, এইটা দেখেই একটি মানুষ কে অনেকখানি বোঝা যায়। ..দিপু হাসলো, দিপুর রান্নার সরঞ্জাম দেখে পূবা হেসে দিল,
..........না না , রাধা মাসি আসলে সব কিছু বার করি , কি হবে একলা মানুষ এতেই যথেষ্ট। হাসি মুখে বিদায় নেবার জন্য পূবা দরজার কাছে পৌছেছে
.........মা, একটু কাছে এস
........কেন রে দিপু , কিছু বলবি, দিপুর কাছে এসে দাড়ালো পূবা, দিপু মুখ ঝুকিয়ে পূবার কপালে চুমু খেয়ে কাঁধে মুখ রেখে
........আমি তোমাকে আর তপুকে খুব ভালোবাসি মা, সত্যি বলছি, বেড়ে ওঠার বেলার না পাওয়ার ব্যথা আর নেই। তপু এদিকে আয়, ভালবাসার কন্ঠে ডেকে , তপুকে আর পূবাকে দু হাতে জড়িয়ে দুজনের মাঝে দিপু মুখ লুকালো, পূবা দু হাতে দিপুর মাথা ধরে, হাত বোলাতে বোলাতে
........আমার যে আছে রে দিপু, আমি যে তোকে ধীরে ধীরে বড় হতে দেখতে পেলামনা দিপু। তুই তো এখন আর কোনো কিছু আবদার করবি না, অবাধ্য পনা করবিনা, তোকে শাসন করার কোনো সুযোগ আমি যে আর পাবনা রে দিপু, আমার ভিতর সেই বঞ্চনা চিরদিন থেকে যাবে দিপু। কনা কে হিংসা হয়, সে দেখেছে, তার মত করে সে তোকে শাসন করেছে, তোর্ অজান্তে ,কিন্তু " আমি রব নিষ্ফল হতাশার দলে ", ..হঠাত দিপু সোজা হয়ে
.........ওহ ওহ বলতেই ভুলে গেছি, মেঝকাকা রাজি হয়েছেন, এখন আমি কি করব।
........বাহ, তুই এখুনি, ফোন করে পার্টিশন ডিড,এর xerox করে রাখতে বল। মা, তোর্ দাদুর মৃত্যুর পর কোর্ট এ গিয়ে বাড়ির পার্টিশন করেন। নিজে কোনো ভাগ রাখেন নি, তিন ছেলেকে তিনটে তলা ভাগ করে দিয়েছিলেন। তাতে তিন ভাইয়ের নাম পার্টিশন ডিড, হয়। ঐটাই বাড়ির দলিল। আমার উকিলকে আমি এখুনি ফোন করে বলছি, কাল বিকালে গিয়ে পবিত্রর কাছ থেকে xerox নিয়ে sale deed তৈরী করতে। তুই পবিত্রকে বলবি, যে উকিল ওকে একটা চিঠি দেবে, আর তার কপি received করিয়ে নেবে, আসল partition deed যেন না দেয়। উকিল ওখানেই xerox কপির সাথে মিলিয়ে আসল ওকে ফেরত দেবে। উকিল সাত দিনের ভিতর তৈরী করে পবিত্র কে একটা xerox কপি দেবে। পবিত্র কে বল দিল্লির টিকেট কাটতে, aug. এর ৭-৮ তারিকের। ফেরার টিকেট তুই করে দিবি, আর তুই তিনজনকেই আসতে বলবি, দিল্লি ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিবি। আমার বড় গাড়িটা আমি দিয়ে দেব তোকে। ইচ্ছা করলে নিজের উকিল কেও আনতে পারে, যদিও তার প্রয়োজন নেই। টাকা কতটা নগধ নেবে আর কতটা ড্রাফট নেবে জেনে নে,এক্ষুনি পূবা ফোন কর। ....দিপু অবাক হয়ে চেয়ে
.........সতিই, তুমি কি জাননা বলত, এই সব খুটি নাটি শিখলে কথা থেকে ...... হেসে দিল, দিপুর হাত ধরে
.........ব্যবসা চালাতে হলে অনেক কিছুই জানতে হয়, তুইও জেনে যাবি , নে ফোন কর, তুই স্টেশন এ আনতে যাবি ....দিপু মার কথামত সব জানালো। মেঝকাকা রাজি হলো
.......মেঝকাকা, তুমি কিন্তু বুলবুলি, আর কাকিমাকে নিশ্চই আনবে, আমি মথুরা, বৃন্দাবন, তাজমহল সব দেখিয়ে দেব, চিন্তা করার কিছু নেই, আমার ৩ খানা ঘর। ...দিপু ফোন ছাড়া মাত্র পূবা ,কলকাতার উকিলকে ফোন করে সব বুঝিয়ে দিল,সে যেন নিশ্চই চিঠির কপি সই করিয়ে নেয় , অন্তত ৪ বার মনে করালো ।আর পুবার কথা ঘুনাক্ষরেও প্রকাশ করবে না।
........দিপু, কোনো ঝামেলার কাজ ফেলে রাখবি না, কেননা আজ হোক বা কাল বা পরশু বা ২ বছর পর,ওই ঝামেলা থাকবেই, বরঞ্চ আরো বাড়বে, তাই ঝামেলার কাজ আগে করবি আর চিঠি তে সই করানোর কথা কেন বললাম জানিস ? ....দিপু বোকার মত মাথা নেড়ে না বলল
.......কোনো ভাগের সম্পত্তি বিক্রি করতে হলে,প্রথমে শরিক কে অফার করতে হবে। চিঠিতে সই করিয়ে নেওয়া মানে তুই কিনতে রাজি আছিস, এরপর পবিত্র আর কিছুতেই অন্য কাউকে বিক্রি করতে পারবে না, আর যদি করে, ১০০ হাত জলের তলায় পাঠিয়ে দেব। বিক্রির টাকা উকিলের পিছনে খরচা করিয়ে ছাড়ব, বুঝেছিস ....হাসি মুখে পূবা বলল।
.........তপু, একটু পায়ের ধুলো নিয়ে কাগজে মুরে আমাকে দিস কাল, দিপুর গম্ভীর স্বরে পূবা আর তপু হেসে উঠলো
........ব্যবসায় অনেক কিছুই করতে হয় এমনিতে যেটা করবনা, এটাও লেনদেনের ব্যাপার, আর এখানে আমার সন্তানেরা জড়িয়ে, প্রাণ দিয়ে দেব কিন্তু হার মানবনা। পূবা এখনো হেসে চলেছে। দরজার বাইরে এসে দিপু ......মা এক মিনিট দাড়াও .....বলে পার্বতীর দরজায় বেল বাজাল।সুধীর দরজা খুলতে
........ম্যাডাম কই ? আমার মা এসেছেন, আলাপ করিয়ে দেব, পার্বতী ছুটে বাইরে এসে পূবাকে ভিতরে আসার অনুরোধ করলো, পূবা পরে আসবে বলে সৌজন্য বিনিময় করে প্রশান্ত মনে বিদায় নিল, এই আশায় যে আবার সিগ্রী দিপুর বাসায় আসবে। গাড়িতে ওঠার মুখেই
.........মা, তুমিত বরিশালের মেয়ে, মাংসর ঝোল রাধতে পার, কষা টসা না, সিম্পল ঝোল, রাধা মাসি সবকিছুই ভালো রাধেন, কিন্তু মাংসর ঝোল রাধতে পারেননা, তুমি পারো ?
........ সামনের শনিবার এইখানে আবার আমরা মিলিত হব, মাংসর ঝোল আর ভাত খাব,ঠিক আছে ? হাসি প্রায় কান এঁট করে দেবে
.......কি কি লাগবে বলে দিও সব কিনে রাখব
.......... কিছু না, আরো কিছু আবদার, ব্যাস ....
পূবা সত্যি ভালো রাধে। দিপু শেষ কবে এত ভাত খেয়েছে,নিজেই মনে করতে পারেনি।
..............মা, তুমি অসীম বাবুকে তোমার ফ্যাক্টরি তে কনসালটেন্ট হিসাবে নিলেই তো পার, উনি বেশ জ্ঞান গম্মি ওলা বলেই মনে হয়
.........কথা হয়ে গেছে, নিমরাজি হয়েছেন। মনে হয় ছন্দা আবার সমুদ্রে ভাসলে উনি করবেন, দেখা যাক। আচ্ছা দিপু, তপু কি পারবে জয়েন্ট এ , কি মনে হয়?
........পারবে বলেই আমার আর কৌশিকের বিশ্বাস। অঙ্কে বেশ ভালো, আমাদের স্কুলের যাদের চান্স পেতে দেখেছি, তাদের অনেকের থেকেই ভালো, আরে বহিন কিসকা হ্যায়,এ তো দেখিয়ে ......দিপু আজ খুশিতে ভরপুর।
........তুই দিলেই পারতিস দাদা , ঠিক পেতিস ,
......এখন মনে হয়, দিলেই পারতাম। অঙ্কে আমি ৯০% হেসে খেলে পেতাম আর physics,কেমিস্ট্রি তেও খারাপ ছিলাম না, যাকগে, ইঞ্জিনিয়ার হলে তো তোকে পেতাম না, বা মাকেও পেতামনা। এইগুলো কি কম পাওয়া , বল ...দিপুর কথায় কোনো আফসোস নেই ,.....কি জানিস তপু, আমাদের সবারই জীবন যেন " পুতুল নাচের ইতিকথা " আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে সুতোর টানে নেচে চলেছি। ভগবান,ভাগ্য এইগুলোতে আমার খুব একটা বিশ্বাস নেই।কিন্তু এইটা বুঝি আমি চাইলেই সব কিছু পাব না, চেষ্টা করতে পারি এই পর্যন্ত,তুই ইঞ্জিনিয়ার হলে আমার না পাওয়া, পাওয়া হবে।
.........মা, একটা পরামর্শ দাও। আমাদের পাড়ায় নিতাই দার মোটর গ্যারাজ ছিল মনে আছে? পূবা ঘার নেড়ে হাঁ বলল ......তার ছেলে শিবু আমার ওই পাড়ায় একমাত্র বন্ধু ছিল। লেখাপড়া স্কুল ফাইনাল পাস করেছিল কোনো প্রকারে, কিন্তু মোটর এর কাজ ভালো জানে। এখন শিবু মিস্ত্রী যোগার করে পাড়ার বাড়িতে ছোট খাট কাজ করে, যেমন রং করানো, অল্প মেরামতি এইসব। ও কিছু টাকা চেয়েছে, একটু বড় করে করবে বলে, ওকে দিয়ে বাড়ির মেরামিতি করলে কি রকম হয়? ও আমার সাথে বেইমানি করবে না। ওকে বলে আমি জয়েন্ট এর প্রশ্ন পত্র আনিয়েছি, যেহেতু পাড়ার আমি ছাড়া ছোটবেলার থেকে ওর সাথে কেউ মিশত না , তাই আমার প্রতি ওর দুর্বলতা আছে। আর তপু ওখানে থেকে পড়লে, শিবুর বোন্ এর মত জানলে কেউ কিছু করতে সাহস পাবেনা। আমি তোমার আর তপুর ব্যাপারে ,খুলে বলিনি, ইঙ্গিত দিয়েছি। ও তো শুনে " সেকিরে জ্যাঠাই মা ওখানে," আমি ওকে বলেছি যে এখনো sure না, হলেও হতে পারে। ওকেও কি মেঝকাকার সাথে আসতে বলব? ওরা চলে গেলে না হয় খুলে বলব বা তোমাদের সাথে আলাপ করিয়ে দেব। ও তো তোমাদের দেখলে অজ্ঞান হয়ে যাবে। একটু শুনেই যা ভক্তি, বাপরে। তুমি কি বল?
.......খারাপ প্রস্তাব না, তুই আসতে বল , কথা বলে দেখি। আমি ১৫ মিনিট কথা বললেই বুজতে পারব কি রকম ছেলে। কতদিন পর এই নামে কেউ ডাকলো আমায়
.........আর একটা ভালো খবর আছে। ছোটকা nov.dec. এর ভিতর কলকাতায় ট্রান্সফার হয়ে যাবে। তার আগে লিভ ফেয়ার নিয়ে দিল্লি আসবে, আমাকে বলেছে " বড় বৌদিকে দেখব রে, আমরা খুব বন্ধু ছিলাম"
........আমারও পুনুকে দেখতে ইচ্ছা করে। পুনু আমার থেকে ২ মাসের ছোট। আমরা শীতকালে ওই ৩ তলার ঘরে এক লেপের তলায় শুয়ে গল্প করতাম, পঙ্কজ আসলে অন্য পাসে সুতো আর লেপ ধরে টানতো, পুনুর লেপ সরে যেত আর তাই নিয়ে দুই ভাই ঝগড়া। দিপু, কোনদিন দুজনেরই কোনো রকম পাপ মনে আসেনি। তোর্ বাবাও আমাদের প্রশ্রয় দিত। আসলে ওই বাড়ির আমি প্রথম বউ বললে বউ, মেয়ে বললে মেয়ে, তাই পুনু বোন্ হিসাবেই আমাকে নিয়ে মনের স্বাদ মেটাত। পবিত্র আমার থেকে ৩ বছরের বড় ছিল,সেও কিন্তু আমায় খুব ভালবাসত " বৌদি, গরম কাটলেট এনেছি, বা বৌদি, রাধুর দোকানের কিমা কারি এনেছি তোমার জন্য ". ওর বিয়েটা ভালো হয়নি। ছোট মনের বৌটা। কত স্মৃতি ফিরে এলরে দিপু। স্মৃতি সততই সুখের হয়। কিন্তু ওরা আসার আগে তুই এই ঘরবাড়ি পরিষ্কার কর, রাধাদী কিছু বলে না তোকে? বড় বেশি আস্কারা দেয় তোকে। রাধাদির ফোন নম্বর আমায় দে তো, বাড়ি গিয়ে ঝগড়া করি। ....এ কোন পূবা ? তপুর মুখ বেশ বড় হা হয়ে গেছে, এই মহিলাই কি আমার মা? দাদার কি পরশ পাথর আছে ?
........তপু তোর্ মাত্র একটা, আমার কিন্তু তিনটে মা , ইঞ্জিনিয়ার হলে কি পেতাম ...দেবতারা আকাশ থেকে এই ঘরটাতে খুশির রেনু বর্ষণ করেছেন?
পবিত্রর দিল্লি আসা, রেজিস্ট্রি হওয়া দিল্লি ঘুরে দেখা সব নির্বিগ্নে মিটল । শিবুও জীবনে প্রথম দিল্লি এলো। দেখে তো তাজ্জব .." গুরু এখানকার মাগী গুলো তো দারুন রে, তুই লাগাসনা?".....দিপু মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বলল। মেঝকাকা,কাকিমা বুলবুলি, দিপুর আথিতেঅতায় মুগ্ধ। মন থেকেই আশির্বাদ করলেন দীপুকে। যতই হোক বাড়ির প্রথম সন্তান। ফিরে যাবার আগের দিন
.......মেঝকাকা, তোমার আমার মাকে মনে আছে? দেখলে চিনতে পারবে ?
.......মরার দিন পর্যন্ত চিনতে পারব রে দিপু। আমাদের বাড়ির প্রথম বউ,তোর্ ঠাম্মার মেয়ে, তাকে চিনতে পারব না, কেন হঠাত জিজ্ঞাসা করছিস?
......এখনো sure নই, আমি একটা মেয়েকে অঙ্ক করাই, আমার পরচিত অনেকেই বলে যে আমার মুখ নাকি বসানো। কিন্তু সে আমার থেকে অনেক সুন্দর দেখতে, দেখলে চোখ ফেরানো যায়না , কিন্তু ওরা 'মালহোত্রা', তাই জিজ্ঞাসা করিনি কোনদিন। ভাবছি ছোটকা এলে ওর মায়ের সাথে দেখা করিয়ে দেব,তখন বোঝা যাবে। উনি এখন দিল্লিতে নেই, নাহলে তোমার সাথেও আলাপ করিয়ে দিতাম, তাহলেই বোঝা যেত। কিন্তু একটু বাধ বাধ লাগে, মহিলা এখন প্রচন্ড বড়লোক, ভাবতে পারে পয়সার লোভে খুঁজে বার করেছি। ...দীপুকে জীবনের সবথেকে আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়ে উত্তর দিলেন মেঝকাকিমা

....... সত্যি যিনি নিজের সন্তান সম্বন্ধে যিনি এইরকম ভাবতে পারেন, তুই তার থেকে সাবধানে চলিস। আমি জ্ঞানত কোনো মাকে তার সন্তান নিয়ে এইরকম ভাবতে দেখিনি, এইরকম ভাবনা তোর্ ভুল হতেও পারে। দেখবি সত্যি হলে উনি আকুল হয়ে তোকে জড়িয়ে কাঁদবেন, তুই মহিলা কে জিজ্ঞাসা কর তোর্ বাবার নামে কাউকে চেনে কিনা। ওই এক প্রশ্নেই তুই সব উত্তর পেয়ে যাবি। দিপু অবাক হয়ে মেঝো কাকিমাকে দেখছে। মানুষ চেনা সবচাইতে কঠিন, কোন টান, স্নেহ, ভালবাসা ফল্গুধারার মতন অন্তরে বয়ে চলেছে, মানুষ নিজেই তা জানেনাl
পবিত্রদের রাজধানীতে তুলে দিয়ে শিবু আর দিপু বাইরে এসেই, দিপু পূবাকে ফোন করে
.........মা, সব কিছু ঠিক আছে। তুমি আজ একবার তপুকে নিয়ে আসবে, শিবু কে চমকে দেব
.........ঠিক আছে, আমি আর তপু আজ ৭-৩০ নাগাধ যাব, রাতের রান্না করিস না, আমি নিয়ে যাব
যথা সময় মা আর মেয়ে আসল। ড্রাইভার এর হাতে এক বিরাট টিফিন বাক্স। ঘরে ঢুকে বসে
.......এই ছেলেটা কে রে দিপু, এই তোর্ নাম কিরে? ...শিবু উত্তর দেবে কি, মাছি ঢুকে যাবে এইরকম হা করে দুজনকে দেকছে, হঠাত, সাষ্টাঙ্গে সুয়ে পরে
.....জ্যাঠাই মা , তুমি , ওরে বাবা এ কি সাংঘাতিক ব্যাপার রে দিপু। পুরো পাগল হওয়ার ব্যাপার গুরু, জ্যাঠাই মা, আমি শিবু, আমার বাবার মোটর গ্যারেজ ছিল, আমি গেলেই তুমি,পড়া ধরতে, আর আমি কেটে পরতাম, একবার কেক খাইয়েছিলে এখনো আমার মনে আছে,.. তুমি! আমি মরে যাব রে দিপু। এই তোর্ বোন্, উফ, এই তুই এত সুন্দর কেন রে, কোন রেশন এর চাল খাস? শিবুর কথা বলার ভঙ্গিমা আর সরলতা পূবা ,তপু দুজনেরই ভালো লাগলো। তপু তো হি হি করে তার স্বভাব অনুযায়ী হাসিতে ভেঙ্গে পড়ছে, পূবা হাসি মুখে দেখছে,
.......তোর্ বাবা কেমন আছেন রে,শিবু?
......ওই না থাকার মতই, হাপানিতে কষ্ট পায় খুব,শীতকালে বেড়ে যায়, জ্যাঠাই মা, please পড়া ধরনা, কিচ্ছু লেখাপড়া শিখিনি ...এইবার তপুর বাড়ি কাপিয়ে হাসি , সাথে পূবা আর দিপু
..........শিবু, তোর্ কথা দিপু আমাকে বলেছে।তুই বড় হয়েছিস, সব বুঝিস, তাই এই সাখ্যাত এর কথা কাউকে বলবিনা। তপু যদি কলকাতায় থেকে লেখাপড়া করে তুই একটু ওকে দেখবি তো, পাড়ার চ্যাংরা ছেলের তো অভাব নেই, তাই আরকি।
........কি বলছ জ্যাঠাই মা, আমি মোটর মেকানিক এর ছেলে বলে কেউ তাদের ছেলেকে আমার সাথে মিশতে দিতনা, একমাত্র তুমি দীপুকে কোনদিন বারণ করনি, আর আমি আমার বোন্ কে দেখবনা, কোনো বাপের ব্যাটার হিম্মত নেই ওই অঞ্চলে শিবুর বোন্ কে কিছু বলে,হারামির হাত ভেঙ্গে দেব, বলেই জিভ বার করে ...,মুখ খারাপ করে ফেলি জ্যাঠাই মা, ক্ষমা করে দিও, কি রে তপু কোন রেশন বললি না তো ? শিবুর বেশ রস জ্ঞান আছে, আর হাসি মুখ সব সময়, ভাষা একটু অন্যরকম কিন্তু সম্মান দিয়ে কথা বলতে পারে
........হতভাগা, তুই একবারে চিনলি কি করে ? আমিও তো চিনতে পারিনি
.......একমাত্র জ্যাঠাই মা ছাড়া , এখন ছোট কাকিমা, ওই পাড়ার আর কোনো বাড়ির কোনো মহিলা ছেলেবেলায় আমাকে মানুষ বলে মনে করতনা, মেঝো কাকিমাও আমাকে দেখলে, বুলবুলিকে পাসে সরিয়ে নেয়, বড় অপমান লাগে, আর বাবা জ্যাঠা কে খুব শ্রদ্ধা করত,এখনো বলে " ওই রকম মানুষ এই পাড়ায় আর হবে না, দেবতা ছিলেন", আর আমি জ্যাঠাই মা কে চিনব না! আমি লেখাপড়া শিখিনি, কিন্তু মানুষ চিনতে ভুল হয়না। তুমি নিশ্চিন্তে থাক জ্যাঠাই মা, প্রাণ থাকতে কেউ তপুর চুল ছুঁতে পারবেনা,......সফল ব্যবসায়ী পূবা বুজলো শিবু অন্তত তাদের ব্যাপারে uncut diamond, ঘষে নিলে দ্যুতি বেরোবে।
........নিতাই দা আর পঙ্কজ এক সাথে পার্টি করত। নিতাই দা অনেক ছেলেকে গ্যারেজে রাতে লুকিয়ে রাখত,পঙ্কজের সব চাইতে বিশ্বাসী ছিল নিতাই দা, তুই বলিস বাবাকে আমি কিন্তু কিছুটি ভুলিনি ...পূবার কথা শুনে শিবু ডান হাতের কনুই ভাজ করে চোখ মুছলো ,
... ........আমার খুব ভালো মনে আছে, হেমন্ত বসু যেদিন খুন হলেন , সেইদিন সুধু পঙ্কজের পার্টি নয়,অন্য বাম দল, এখন যারা ক্ষমতায়, তাদের ছেলেদেরও নিতাই দা ৩ দিন গ্যারেজ এ লুকিয়ে রেখছিল। গ্যারেজ বন্ধ রেখেছিলেন, খুব সাহস ছিল, আর কি পেটানো শরীর, পঙ্কজের বডি গার্ড ছিল নিতাই দা, তুই বলিস শিবু সব মনে আছে। ৭২ এর পর তো ওই গ্যারেজ এর পিছন দিকের দরজা দিয়ে প্রতি রাতে অন্তত ৮-১০ টা ছেলে ঢুকে ঘুমত আর দিনের ৭ টার ভিতর বেরিয়ে যেত। সারাদিন মনুমেন্ট এর তলায় বা ইডেন গার্ডেন এ ঘুরে বেড়াত আর রাতে নিতাই দার গ্যারেজ। খাবার এর পয়সা দিত পঙ্কজ, কি দারুন দিন ছিল সেইসব। পূবার স্মৃতি চারণ বাকিদের ছুয়ে গেল ...চুপ করে বেশ কিছু সময় পার হলো

খাওয়া দাওয়া শেষ হলে, পূবা ,শিবু আর দিপু বসে ঠিক করলো শিবু ছোট করে প্রমোটারী ব্যবসায় নামবে। দিপু, ওকে প্রথমে ৫ লক্ষ্য দেবে, ফার্ম দিপু আর শিবুর নাম হবে,কিন্তু কাজ সব শিবু কেই করতে হবে। শিবু অবাক হয়ে পূবার দিকে চেয়ে কেঁদে দিল।
.......আরে তুই কাঁদছিস কেন, হতভাগা ,দিপু হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করলো
.......জ্যাঠাই মা, তুমি ৫ লক্ষ্য দিতে বলছ, কিন্তু পাড়ায় কেউ ৫০০ টাকা দিয়ে সাহায্য করে নি কোনদিন। কাঁদবনা, তো কি, দিপুর সাথে কোনদিন বেইমানি করবনা, তাহলে যেন আমার কুষ্ঠ হয়
.......ব্যাটা, নেকামি করছিস, অন্য রোগ বল,কুষ্ঠ এখন বেমালুম সেরে যায়, বল তাহলে যেন তোর্ aids হয়
.......ধ্যাত , তুই কিরে, মায়ের সামনে নোংরা রোগের কথা বলছিস , ..শিবু এইবার একটু ধাতস্ত হলো
........শিবু, আমি ১৫ বছর পর কলকাতা যাব, তুই পুনু আর কনার সাথে কথা বলে, বাড়ির মেরামতি করবি, আর একটা করে বাথরুম প্রতি তলায় করতে হবে। কর্পোরেশন থেকে পার্মিসিওন বার করা তোর্ দায়িত্য, টাকা যা লাগে আমি দেব,কিন্তু ঝামেলা তোর্, লাভ তোর্, রাজি,?..শিবু শুয়ে পরে পূবার পা ছুয়ে কথা দিল

oct. এর প্রথম দিকে প্রণব সপরিবারে দিল্লি বেড়াতে এলো , প্রধানত পূবার সাথে দেখা করবে আর মেয়েদের আগ্রা দেখাবে। দীপুই এয়ারপোর্ট এ রিসিভ করে নিজের বাড়িতে তুলল। ফ্লাট দেখে সবাই দারুন খুশি,সন্ধ্যা বেলা পূবা আর তপতী সাথে বিরাট ২ টো টিফিন বাক্স ড্রাইভার এর হাতে। প্রণব ভিতরের ঘর থেকে বেরিয়ে পূবাকে দেখে থমকে দাড়িয়ে পড়ল। চোখ কি চিক চিক করছে ? প্রনাম করবে বলে ঝুকেছে পূবা দুই হাতে জড়িয়ে ..." পুনু , তুই আর আমি বন্ধু ছিলাম না, ..কথা জড়িয়ে আসছে পূবার, গলার কাছে কি যেন আটকে আছে,কথা বলতে অসুবিধা অনুভব করছে , ....তুই আমাকে প্রনাম করিস না পুনু , বন্ধুকে প্রনাম কর ...শেষের কথা গলার কাছে দলা পাকিয়ে গেল। প্রণব
[+] 5 users Like pnigpong's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: টান (কালেক্টেড) - by pnigpong - 27-06-2020, 08:45 AM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)