Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.47 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller টান (কালেক্টেড) 'Complete'
#23
রাধা বিছানায় সুয়ে দীপুকে বুকে টেনে নিল , যেটা সাধারণত হয়না। দীপুকে জড়িয়ে, চুমু খেতে খেতে,
........কেন যে তুই এত ছোট, নাহলে ঠিক বিয়ে করতাম তোকে, একটা সন্তানের জন্য, তোর্ সন্তান তা ছেব্লেই হোক বা মেয়ে, ভালো হবেই। আজ তুই যখন পূবার সাথে কথা বলছিলি আমার গর্বে বুক ভরে উঠছিল। দিপু আমার।দিপু কে আমি মনে মনে স্বামী হিসাবে নিয়েছি, ও আমার আর কাউর না,তুই আমার দিপু আর কাউর না। তীব্র চুম্বনএর আবেগে দীপুকে নিজের শরীরের সাথে যেন মিশিয়ে দিতে চাইছে রাধা। দীপুও রাধাকে ব্নিজের অংশ মনে করে জাপটে ধরেছে।
......তোমার সুধু তোমার, কি ক্ষতি বিয়ে করলে, ২-৪ দিন লোকে বলবে তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
.......নারে হয়না, এটা হয়না, আমি যে তোকে ভালোবাসি, সেইজন্যই আমি এইটা হতে দেবনা। যতদিন না বিয়ে করিস তুই আমার হয়েই থাকবি, কথা দে ?
......মাসি, কথা দিতে হবে, তুমি কি বোঝনা আমার মন কি চায়? কথা দিলাম, আর কাউকে ভালবাসব না। হয়ত শরীরের জন্য মিলিত হব, কিন্তু ভালো সুধু তোমাকেই বেসেছি।
.....সে তুই যা খুসি কর , কিন্তু তুই আমারি হয়ে থাকবি, আমি তোর্ বিয়ে দেব। পূবা থাক্লবে সেই বিয়েতে, কিন্তু বিয়ে আমি দেব। রাজি,?
........তুমি যা বলবে তাই করব, তাই। একদিকে পৃথিবী আর একদিকে তুমি, "তুমহি হো মাতা, পিতা ভি তুম হো ,তুমহি হো বন্ধু সখা ভি তুম হো "

রাধা আর দিপুর সেই রাত্রির মিলন দুজনেরই অভূতপূর্ব তৃপ্তিদায়ক মনে হলো।
........মাসি এত সুখ আগে কোনদিন হয়নি, আজ সম্পূর্ণ অন্যরকম, তোমারও কি তাই? , দিপুর মাথা নামিয়ে একটি চুমু দিয়ে মাথা নেড়ে রাধা বুঝিয়ে দিল "হাঁ ". দিপু একটু চুপ করে সিগারেট নিয়ে দুটো টান দিল তারপর "আমার মনে হচ্ছে, আমার মন বলছে মাসি , কিছু একটা ঘটবে, খুব সিগ্রী, ভয়ানক কিছু একটা। এক অজানা আশংকা মনে চেপে বসছে, কেন জানি না, সঞ্জীব কে নিয়ে। সঞ্জীব পরাজয় মেনে নিতে পারেনা, সেই মানসিকতা ওর নেই, থাকলে, ওই ঘটনা ঘটাত না"
.......ওর সেই সাহস হবেনা। তাহলে বিরজু ওকে শেষ করে দেবে। জানে মেরে দেবে। তুই ভয় পাসনা। আমরা আছি
......সেটা , সার আমাকে বলেছেন, আমি আমার জন্য না , মা কে নিয়ে ভয় হচ্ছে। দেখা যাক, এইবার কিছু করার চেষ্টা করলে ও পার পাবে না।সেটা সঞ্জীব জানে।
তিনদিন পর সন্ধ্যাবেলা দিপু আড্ডার জায়গায় গেল। দেখেই তো বন্ধুরা হই হই করে উঠলো। কি ব্যাপার কি হয়েছে, এই সব
.......শোন আজ তদের একটা সারপ্রাইস দেব। তোদের তো বলেছি আমার মায়ের কথা, তাকে খুঁজে পেয়েছি, সে কে জানিস ?
.......কে কে , তুই সেদিন থেকে আসছিসনা , সে কে?
.......পূবা মালহোত্রা। হাঁ, সত্যি, তোরা যা শুনেছিস ওনার সম্পর্কে কিছুটা হলেও সত্যি, উনি নিজেই বলেছেন। কিছু বলার হলে আমার সামনে বলিসনা, এইটা অনুরোধ।
.......চিনলি কি ভাবে,?বিষ্ণু জিজ্ঞাসা করলো। দিপু তখন সব কথা বলল যে উনি দীপুকে খোজ করার কথা অ্যালবাম এর কথা সব। এই সমেয়ই
......দাদা, দাদা , ....তাকিয়ে দেখে তপতী , এক গাল হেসে দিপু ধরে সামনে নিয়ে আসল।
.......এ কে জানিস, আমার বোন , নিজের বোন , কি রকম দেখতে বল ? দিপু খুব খুশি মনে প্রশ্ন রাখল
........এই মেয়ে শোন, তুই লেখাপড়া ছেরে দে, নাচ সেখ, সাথে একটিং, তুই বম্বে তে সিনেমায় নির্ঘাত চান্স পাবি। দীপক খুব গম্ভীর হয়ে বলল। তপতী স্বভাব অনুযায়ী হাসতে লাগলো। একে একে সবার সাথে পরিচয় হলো। তারপর দিপু ওকে নিয়ে একটু আড়ালে গিয়ে
.......তুই প্রতি শনিবার বিকালে আর রবিবার বিকালে আমার বাড়ি আয় , অঙ্ক শেখাব, আর বাড়ির কি খবর।
.......সেইদিন থেকে বাড়ি তে সুধু অশান্তি। আমি পাপাকে খুব করে বলেছি, তবে দাদা তুই সাবধানে থাকিস, পাপাকে বলতে শুনিছি 'আমি ওকে ছাড়বনা, ও আমার সংসার ভেঙ্গে দিতে চাইছে'.
........এইটাই হবার জন্য আমি তোর্ সামনে বলেছি। যাতে সারা জীবন অশান্তি ভোগ করে। শোন তুই আমার বাড়ির ফোন নম্বর রেখেদে। কাউকে দিবিনা আর বলবি ও না। মাকেও না। বাড়ির ঠিকানা কাউকে দিবিনা। আর বাড়িতে কি কি হয় আমাকে জানাবি। চল তোকে খাওয়াই। এই বলে দিপু বন্ধুদের বলে তপতী কে রাজদূতে বসিয়ে নিয়ে একটা ভালো রেস্টুরান্ট এ গিয়ে দুজনেই মোগলাই খানা খেয়ে তপতী কে ওর বাড়ির থেকে হাত ৫০ দুরে ছেড়ে দিল।

রাতে তপতী কিছু খাবে না বলে জানাতেই আবারও অশান্তি।
......তপু খাবে না কেন ,কি হয়েছে? সঞ্জীব জিজ্ঞাসা করলো
.....খেয়ে এসেছে তাই খাবেনা . পূবা উত্তর দিল
........কার সাথে খেয়ে এসেছে, আর এত রাত্রি অবধি ছিলই বা কোথায়, তপু তপু ....সঞ্জীব বেশ রুখ্য ভাবে ডাকলো।
........কি হয়েছে, ? তপতী জিজ্ঞাসা করলো
........তুই খাবি না কেন, কার সাথে খেয়ে এসেছিস, কোথায় গেছলি যে এত রাত হলো?
.......আমার পেট ভর্তি, দাদার সাথে খেয়ে এসেছি, কেন কি হয়েছে? দিপুর কথা শুনে সঞ্জীব যেন পাগল হয়ে গেল, চিত্কার করে
.......আবার দাদা, শুনে রাখ, ওর সাথে তুই কোথাও যেতে পারবি না, কোনো রকম দেখা করবিনা একা একা , কোনো সংস্রব রাখা চলবেনা ওর সাথে। ও আমার সংসার ভাঙ্গতে চাইছে, আমি বুজতে পারছি।
.......কেন রাখবোনা, আমি সপ্তাহে দুদিন যাব অঙ্ক শিখতে , কেন আমি আমার নিজের দাদার সাথে সম্পর্ক রাখবোনা, রাখব, একশবার রাখব। তপতী ও জোরের সাথেই উত্তর দিল
......তপতী, মুখে মুখে কথা বলবিনা, কোনো সম্পর্ক রাখা চলবেনা, এইটাই আমার শেষ কথা
.......সনু, তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? কেন ও সম্পর্ক রাখবেনা, নিশ্চই রাখবে, ওর নিজের দাদা, এক বাপ মায়ের সন্তান দুজন। আমাদের দুজনের পাপ কেন তপু বহন করে চলবে। পাপ করেছিলে মনে নেই ? ব্যঙ্গ করে পূবা বলল
.......না, কোনো পাপ না, nothing is unfair in love and war,, কোনো পাপ না এটা ,একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল , ব্যাস।
......দুর্ঘটনা? বলতে পারবে কোর্ট এ দাড়িয়ে , যে কোনো পাপনা , দুর্ঘটনা? আবার পূবা বিদ্রুপ করলো । ,
.......আমি বুজতে পারছি, তোমরা ৩জন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছ। আমিও দেখে নেব ওই দীপুকে , বলে দিলাম। আমার নাম সঞ্জীব মালহোত্রা।
.......সনু, কান খুলে শুনে রাখো, শেষ করে দেব তোমায়, দিপুর গায়ে যদি আঁচর লাগে। আর মনে রেখো বিরজু ওকে ছেলের মত দেখে। বিরজু কিন্তু খুব ক্ষমতাবান MP. একটু থেমে .," ভুল করছ সনু। ওদের ভিতর সম্পর্ক গড়ে উঠতে দাও, সেটাই ভালো হবে। তুমি তপতী কে বারণ করলেও ও যাবে, দিপু ওকে পড়াবে, তপুর ব্যাপারে দিপু যা বলবে সেটাই শেষ কথা, আমি এই কথা দিয়ে এসেছি। তপু যদি চায় ও দিপুর ওখানে থাকবে।"

.......তার মানে ? তপুর ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবনা, কেন? দিপু ওর কে, এতদিন তো দাদা বাদ দিয়েই চলেছে, তাহলে আজ কেন দিপুর কথা শেষ কথা হবে, না এ হতে দেব না।
.......তার কারণ আমাদের পাপ। তুমি ওর বাবাকে হত্যা করেছ ,আর আমি তাকে গোপন করে গেছি। বিয়ের সময় যদি দীপুকে আনতে দিতে তাহলে আজ এই অবস্থ্যার সম্মুখীন হতে হতনা। তখন আনতে দাওনি, তার কারণ তোমার ভিতর পাপ বোধ ছিল তুমি দিপুর ভিতর পঙ্কজ কে দেখতে চাওনি, তাই আনতে দাওনি। আমাকে আমার ছেলের থেকে দুরে থাকতে বাধ্য করেছ। আমিও আমার পাপবোধ থেকে তোমার কোথায় চলেছি, কিন্তু আরনা । এখন থেকে তপুর ব্যাপারে দিপু শেষ কথা, সে তুমি মানতে পার ভালো, না মানতে পার তো সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু আমি চাই ওরা দুই ভাইবোন ভালোভাবে মিশুক, নিজেদের চিনুক, পরস্পরকে ভালোবাসুক।

........পূবা , আমি আমার সংসারএ অন্যলোকের খবরদারি সয্য করবনা, আমি কিছুতেই দীপুকে তপুর ব্যাপারে নাক গলাতে দেবনা, তাতে যা হয় হোক।আমি ওকে বাবার স্নেহ দিয়েছি।
........সেইজন্যই, দিপু ওকে নিজের কাছে রাখতে চায়নি, বুঝে দেখো ওই ২২ বছরের ছেলের মানসিকতা, আর তোমার ৪৮ বছরেও বুধ্হী হলনা। দিপু মানুষ হিসাবে তোমার চাইতে অনেক উপরে, তুমি অর নখের যুগ্গী নয়।

.....পূবা , আমি তোমার স্বামী,...... চিত্কার করে উঠলো সঞ্জীব
......জানি, আমার আগের স্বামীর হত্যাকারী, আর সেই স্বামীর সন্তান দিপু। তুমি দিপুর ব্যাপারে কোনো কথা বলবেনা, তোমার কোনো অধিকার নেই। পূবাও চিত্কার করেই উত্তর দিল। পূবা একটু চুপ করে থাকলো। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে , তারপর গলা নামিয়ে ভালোভাবে বলল " সনু, একটু তপুর মনের অবস্থা ভেবে দেখো, হঠাত ও জানতে পারল যে ওর পাপা আর মা ওর পিতার হত্যাকারী। যাদের নিয়ে ওর পৃথিবী, তারাই ওর পিতাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে। ও এখনো যে ভেঙ্গে পরেনি তার কারণ দিপু। এই সত্য যেমন জেনেছে, তার সাথে ও একজন নিজের লোক পেয়েছে, যে ওর পিতার সন্তান, তাকে ও স্বাবাভিক ভাবেই জড়িয়ে ধরবে। আমরা যে অন্যায় করেছি, তার ফল ভোগ করতেই হবে, আর কোনদিনই তপু আগের তপু হবেনা। এই সত্য মেনে নাও, তপুকে যে টুকু পাচ্ছ সেটাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। দীপুকে হিংসা করে নিজের ক্ষতি করনা। " ,....তপতী সব শুনলো। একটা জিনিস তপতী লক্ষ্য করলো সঞ্জীবের মুখের চেহারা, যেন ছিড়ে খাবে দীপুকে। দুই হাতের মুঠি বন্ধ করে শক্ত করে আছে, চোয়াল শক্ত, দাঁতে দাঁত চিপে কিরমির করছে। চোখ যেন জ্বলছে। তপতীর ভয় হলো, ও ঠিক করলো কালকেই দীপুকে সব বলবে। ওর পাপা যেন অন্য মানুষ, এ সেই স্নেহসিল সঞ্জীব না।
পরের শনিবার দিপুর ফ্ল্যাট এ গেল৪ টের সময়। প্রথমে ফ্লাট ঘুরে দেখে খুব খুশি হলো। রাধা ওকে বসিয়ে বাঙালি রান্না করে রেখেছিল খাওয়ালো, যেমন আলুপস্ত, রুইমাছ এর কালিয়া, এইসব। রাধা কলকাতায় থাকতে থাকতে বাঙালিই হয়ে গেছে। তারপর তপতী বাড়ির কথা বলল। রাধার মুখ সুখিয়ে গেছে, দিপু শুনলো কিন্তু পাত্তা দিলনা।
........শোন, ঐসব ছার, তুই IIT তে বসার জন্য কোনো কোচিং সেন্টার এ ভর্তি হোসনি । এখন যদি ভর্তি হোস, তাহলেও তুই ৭ মাস পিছিয়ে যাবি । IIT তে বসার জন্য উচিত ছিল, ১০ ক্লাস এর পরিখ্যার পরেই ভর্তি হওয়া। ওখানে কম্পিটিশন অনেক বেশি। তুই পারবি না তা বলছিনা, কিন্তু তুই পিছিয়ে আছিস। তুই পশ্চিম বাংলার জয়েন্ট এ বসবি।যাদবপুর এর ইঞ্জিনিয়ারিং IIT থেকে কম নয়। আমার স্কুলের অনেকেই বাইরে আছে। তাদের একজন আমার থেকে ৩ বছরের বড় আমার এক সহপাঠির খুড়তুত দাদা , MIT তে আছে। সে বলেছে যে আমেরিকার এমন কোনো ইউনিভার্সিটি নেই যেখানে যাদবপুর এর অন্তত একটি ছাত্র বা ছাত্রী নেই। আমার সেই সহপাঠি, কৌশিক দত্ত , iit দিল্লিতে M.TECH করছে। আমাদের ফার্স্টবয়। iisc তে চান্স পেয়েছিল কিন্তু যায়নি, কারণ ওর বাবার এখানে ট্রান্সফার হবার কথা। তবে ও আমাকে কোনদিন অঙ্কে হারাতে পারেনি। আমার থেকে অন্তত ৭-৮ নম্বর কম পেতই। কিন্তু কৌশিক physics এ দারুন, কেমিস্ট্রি খুব ভালো। ও যাদবপুরে পরার সময়েই ছাত্র পরাত। ওর ৩ টে ছাত্র ছাত্রী জয়েন্ট এ ভালো রেজাল্ট করেছে, আমি ওকে আসতে বলেছি। ওর কাছে তুই physics ,chemistry পরবি। আমি আর ও জয়েন্ট এর প্রশ্ন পত্র এনে দেব, তুই পারবি। আর যদি চাস তাহলে প্রেম করতে পারিস, ছেলে ভালো। ....... তপতী, শুনেই দুম দুম ঘুষি লাগাতে লাগলো হাসতে হাসতে। তখনি বেল বেজে উঠলো , রাধা গিয়ে দরজা খুলে কৌশিক কে নিয়ে আসলো। প্রায় ৬ ফুট লম্বা, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা, চোখ যেন ঝকমক করছে। ঢুকেই
.........প্রিয়, তুই কাকে পড়াতে বলছিস, আমি তো এর মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকব, পড়াব কি করে।
........সেটা তোর্ ব্যাপার, তুই কি করে পড়াবি , তবে জয়েন্ট এ পাস করাতে হবে যাতে তোর্ ইউনিভার্সিটি তে চান্স পায়। এর নাম তপতী, সূর্য কন্যা।
........তপতী, তোমার দাদা যে কেন অঙ্ক নিয়ে পড়ল না তা ওই জানে। কোনদিন কোনো পরিখ্যায় হারাতে পারিনি। ওর মাথায় অঙ্ক জন্মায়। মাসি, কিছু খাবার দাও , ওই মেসের খাবার খেয়ে মুখ পচে গেছে। খুব খোলাখুলি কথা বার্তা, কোনো ফর্মালিটি নেই, সহজেই মিশতে পারে। " শোন তপতী, খাটতে হবে, তোমার সিলেবাস আর w.BENGAL এর সিলেবাস এ তফাত আছে। কিতু সেটা সেরকম কিছু না। অঙ্ক, প্রিয়র থেকে ভালো কাউকে পাবে না।ওটা ওই করাবে, আমি তোমাকে তোমার বাড়ি গিয়ে পড়াব, একটু খেতে দিও। আর মাকে বল মাল্লু যেন একটু বেশি দেয়।“ এমন সহজ আর কৌতুক ভরে কথা বলল যে তপতীর ভাললেগে গেল।
দিপু প্রথমেই তপতী কে জিজ্ঞাসা করলো ওর coordinate জ্যামিতি কিরকম লাগে। যখন শুনলো ভালো লাগে তখন বলল "তুই অঙ্ক ভালো পারবি, কাল থেকে তোকে অঙ্ক করাব, আজ তুই কৌশিককে নিয়ে বাড়ি যা, মার সাথে পরিচয় করিয়ে দে। কৌশিক যা খুশি কর , জয়েন্ট এ চান্স পেতেই হবে "
.......শোন,তপতী, আমাদের ইউনিভার্সিটি ভারতে স্টেট ইউনিভার্সিটির ভিতর ১ নম্বর। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগে। প্রথম iisc ,তারপর IIT , কানপুর, বম্বে ,খরগপুর , দিল্লি ,তারপরেই যাদবপুর। আর এখানে সুধু লেখপড়া না, ইউনিয়ন বাজি চলে, রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়। বিদেশে যাওয়া যায়, আমাদের স্কুল থেকে প্রতি বছর ৫০-৬০ জন জয়েন্ট এ ভালো রেজাল্ট করে , আর এখানে পরে। তাই লেগে পর। চল, মাসি খাবার দিক ,খেয়ে তোমার বাড়ি যাই। এরপর খেয়ে দুজনে বেরিয়ে গেল। দীপুও রাধাকে নিয়ে বিরজুর বাড়ি গেল। একটু আড়ালে ও বিরজু কে সব বলল। তারপর বিরজু কে বলে রাজদূত রেখে বিরজুর "বুলেট" মোটরবাইক নিল। কারণ এতে স্পিড বেশি আর পিকআপ অনেক ভালো। দিপুর মনে একটু সন্দেহ দেখা দিয়েছে তপতীর কথা শুনে। যদি কিছু করতে চায়, তাহলে সঞ্জীব গাড়ি নিয়েই করবে।

তপতী কৌশিক কে নিয়ে বাড়ি এলো। পূবার , কৌশিককে দেখে ভালো লাগলো। বুজলো ছেলে ঠিক লোক পাঠিয়েছে। কৌশিক সঞ্জীবের সামনেই দিপুর অঙ্ক নিয়ে বলছিল
.......আন্টি, প্রিয় অসাধারণ। সার, ক্লাসে একটা নতুন চ্যাপ্টার সুরু করে একটা অঙ্ক বুঝিয়ে দিয়ে পরেরটা সুরু করেছে, প্রিয় অমনি বলে উঠলো, '"সার, উত্তর টা এই "
প্রিয়, একটু frustrated হয়ে গেছিল, না হলে ও আমাদের থেকে অনেক উপরে। কারণ আপনি জানেন, ও সিম্পলি outstanding. ..তপতী লক্ষ্য করলো সঞ্জীবের মুখ শক্ত হয়ে গেল। ফের সেই হাতের মুঠো বন্ধ, দাঁত কিরমির। চিন্তিত হয়ে পড়ল তপতী।
এর ১০-১২ দিন বাদে , নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে, একদিন সন্ধ্যাবেলা দিপু নিজামুউদিন স্টেশন এর কাছে গেছে একজনের টিকেট দিতে। ঠান্ডা বলে একটা কান ঢাকা উইন্ডচিটার পরে আছে। ভদ্রলোকের বাড়িতে কিছু সময় গেল এটা সেটা নিয়ে কথা বলতে। রাত ৯ টার সময় বেরিয়েছে।রাস্তা ফাঁকা ,৫০ এইরকম এ চালাচ্ছে। .হঠাত লক্ষ্য করলো একটা বিদেশী গাড়ি যেন ওকে ফলো করছে।আসার সময়েও এই গাড়িটাকে ওর পিছনে আসতে দেখেছে।দিপু ইচ্ছা করেই পাসের একটা রাস্তা ধরল, গাড়িটাও সেই রাস্তাতে ঢুকলো। বেশ ফাঁকা রাস্তা , তাই দিপু ডান দিকে ঘুরে তারাতারি আবারও বড় রাস্তায় উঠে এলো। ও নিশ্চিত হলো যে বিদেশী গাড়িটা ওকেই ফলো করছে। 'বুলেট ' বলেই এইরকম স্পিড এও সোজা আছে গাড়ি। দিপু স্পিড বাড়ালো। গাড়ির ও স্পিড বাড়ল, ওকে এখনো বেশ কিছু পথ যেতে হবে, এই রাস্তায় এই সময় গাড়ি কম থাকলেও দু একটা ট্রাক দেখা যাচ্ছে। দিপুর সামনে একটা ট্রাক, তার সামনে আর একটা ট্রাক, বোধহয় চাল গম এইসব নিয়ে যাচ্ছে। দুটো ট্রাক এর ভিতর ১০-১৫ ফুট তফাত। দিপু আয়ানায় দেখল গাড়িটা স্পিড খুব বাড়িয়ে তার দিকেই আসছে। দিপুর ঘাম ঝরছে উত্তেজনায়। দিপু ঠিক করলো ও ট্রাক গুলো কে পেরিয়ে বাঁ দিকে ঘুরবে। স্পিড বাড়ালো, কিন্তু বিদেশী গাড়ি আরো স্পিড বাড়ালো দিপুর ২৫-৩০ ফুট এর ভিতর চলে এসেছে। দিপু ক্যারাটে শেখার শিক্ষা কাজে লাগলো। মন শক্ত করে দৃষ্টি স্থির রেখে স্পিড বাড়ালো। উল্কার বেগে ছুটে যাচ্ছে দিপুর 'বুলেট'., গাড়ির স্পীডও বেড়ে গেলো। দিপু প্রথম ট্রাক এর পিছনের চাকা অতিক্রম করে সামনের চাকা প্রায় ধরে ফেলেছে, গাড়িটা দিপুর ৮-১০ ফুট ভিতরে এসেগেছে, দিপু আরো স্পিড বাড়ালো। ট্রাক টা কে পেরিয়ে গেল, সামনের ট্রাক টা আর ১০ ফুট মত দুরে , পিছনেরটা৪-৫ ফুট পিছনে ,কিন্তু গাড়িটা ৩-৪ ফুট এর ভিতর আরো কাছে এসে পড়ছে, আর দেরী করা যাবেনা, এখনি করতে হবে, ঝুঁকি নিতেই হবে বাঁচার জন্য নাহলে বিদেশী গাড়ি দীপুকে অল্প করে ছুয়ে দিলেও এই গতিতে দিপু ছিটকে পরবেই । দিপু আর বিলম্ব করলো না, গাড়ি ওর ২-৩ ফুট এর ভিতর, দিপু বুলেট কোনাকুনি চালিয়ে ফুটপাতে তুলেদিল/ সামনের ট্রাক টার পিছন দিয়ে দিপু যখন ফুটপাতে উঠলো তখন ট্রাক এর সাথে তফাত ৩-৪ ইঞ্চির , ফুটপাতে .শারীবদ্ধ গাছ ১০- ১২ ফুট তফাতে। দুটো গাছের ভিতর দিয়ে বুলেট নিয়ে যেতে যেতে শুনলো প্রচন্ড "দড়াম " করে শব্দ। ৩ ইঞ্চি উঁচু ফুটপাতে উঠতে গিয়ে ওই ১০০-১২০ স্পিড এ বুলেট হেলে গেছিল, আর তাতে দিপুর বাঁ হাত আলগা হয়ে 'বুলেট' এর গতি কমে যায় আর 'বুলেট ' হেলে যায় কিন্তু বাঁ পা মাটিতে লাগিয়ে টলমল টলমল করতে করতে দিপু টাল সামনে নিল। একটু দুরে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে পিছন দিকে তাকিয়ে দেখল, বিদেশী গাড়িটা পিছনের ট্রাক এর ডান পাশে ধাক্কা মেরেছে। তাতে গাড়ি আর ট্রাক দুটিই থেমে গেছে কয়েক ফুট গিয়ে। দুটো ট্রাক থেকেই ড্রাইভার আর খালাসী নেমে পড়েছে, ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বলছে। দিপু আর সময় না দিয়ে বুলেট এর স্পিড বাড়িয়ে চলে গেল আর প্রথম বাঁ দিকের রাস্তা ধরে ঘুর পথে বিরজুর বাংলো তে পৌছালো। বিরজু ওকে অত রাতে দেখেই বুঝলো কিছু একটা হয়েছে। দিপু ঢুকেই প্রথমে জলের জগ তুলে উঁচু করে বেশ খানিকটা জল খেয়ে শান্ত হয়ে বসলো।বিরজু খালি দেখে যাচ্ছে, কিছু বলছে না, দিপু বেশ কিছু সময় নিল
........সার, আজ আমার অবস্থ্যা বাবার মত হতে যাচ্ছিল। .....এরপর সবিস্তারে সম্পূর্ণ ঘটনাটা বলল।
........ভগবানের দয়া যে তুমি বেঁচে গেছ। সঞ্জীব কি পাগল?. ওর কি অবস্থ্যা ?
......জানিনা সার, আমি ওখনে দাড়ালে ফেঁসে যেতাম
.......না ঠিক করেছ। তুমি এই কথা রাধাকে বলবে না।ও ঘাবড়ে যাবে। তোমার মার সাথে তুমি যোগাযোগ করবেনা ওরা করলে তুমি যেন কিছু জাননা এমনি ভাব দেখাবে। আর বুলেট রেখে রাজদূত নিয়ে যাও। যদি কোনো ভাবে নম্বর দেখেও থাকে আমি ম্যানেজ করব।। ওটা নিয়ে চিন্তা করার নেই।

অত দেরী করে ফিরতে রাধা চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো
......কিরে, এত দেরী, তোকে এইরকম লাগছে কেন, কি হয়েছে ?
......কি আবার হবে, কিছু হয়নি, খাবার দাও, খেয়েনি আগে। ....খেতে বসে অন্য দিন বেশ কিছু কথা হয়, আড্ডা হয় আজ দিপু গম্ভীর। রাধার মনে সন্দেহ হয়। বিছানায় সুয়ে,
.......দিপু কি হয়েছে তুই আমাকে বলবিনা, নিশ্চই কিছু হয়েছে , বল আমাকে
......মাসি, তুমি আমার গায়ে হাত দিয়ে প্রতিজ্ঞা কর কাউকে বলবেনা,....রাধা দিপুর গায়ে হাত দিয়ে বলল " কাউকে বলবনা কি হয়েছে বল " দিপু তখন সব কথা খুলে বলল। রাধা শুনে দীপুকে জড়িয়ে কেঁদে দিল।
.......ভগবান তোকে বাঁচিয়েছেন, দিপু তোর্ কিছু হলে আমি যে মরে যাব
......জানি, তাই সার বারণ করা সত্তেও তোমাকে বললাম, তপুরা ফোন করবেই মাসি, একটু কিন্তু অভিনয় করতে হবে, সেটা মনেরেখো।
......ঠিক আছে আয়, বুকে আয়,
......কি করে বুঝলে যে আমার এখন তোমাকে পেতে ইচ্ছা করছে
.. বিপদের আশঙ্কায় প্রতিটি মানুষ তার সবচাইতে কাছের মানুষের ভিতর আশ্রয় খোজে। পুরুষ তখন চাইবে নারীর নরম বুকে মুখ রেখে শরীরের ঘ্রাণ নিতে আর নারী চাইবে পুরুষের বুকে মুখ রেখে নিরাপত্তা। তোর্ বয়েস বাড়লে তুই বুজতে পারবি। এইটাই মানুষের স্বভাবজাত প্রতিক্রিয়া। ….দিপু নিবির ভাবে রাধাকে জড়িয়ে চুমু খেতে লাগলো। রাধাই দিপুর গেঞ্জি আর পাজামা হাত দিয়ে খুলে দিয়ে নিজের ম্যাক্সি খুলে ফেলল। তারপর দুজনের প্রেম দুজনে ভাগ করে নিল দৈহিক ভালবাসার ভিতরে।
ভোর ৬ টা নাগাধ ফোন এলো পূবার, রাধা উঠে ফোন ধরল
....... হ্যাল্লো , কে বলছেন ?
..... রাধাদি , আমি পূবা, সর্বনাশ হয়েছে, সঞ্জীব কাল রাতে গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে, খুব খারাপ অবস্থায় এখন হাসপাতালে, ventilation এ আছে,দীপুকে একটু বলবেন আসার জন্য? আমি খুব অসহায় হয়ে পরেছি।
.......সেকি , কি সর্বনাশ, কি করে হলো, কখন ?
.......রাত ১০টা নাগাধ, কি করে বুজতে পারছিনা, একটা মোটর সাইকেল নাকি সামনে দিয়ে হঠাত ঘুরে যায় তাই ও তাল ঠিক রাখতে না পেরে ট্রাক এ ধাক্কা মারে, দিপু কোথায়?
........দিপু তোর্ ফোন, কি খারাপ খবর, শোন .....দিপু ফোন নিয়ে সব শুনলো , তারপর কিছুক্ষণের ভিতর আসছে বলে তৈরী হয়ে হাসপাতালে গেল সেখানে সঞ্জীবের অনান্য আতীয়্য উপস্থিত। পূবা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে স্বাবাভিক ভাবেই।তপু এক পাশে শুকনো মুখে দাড়িয়ে দীপুকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল। পূবা দিপুর হাত ধরে কেঁদে উঠলো। দিপু আর কি করতে পারে, দুজনকেই স্বান্তনা দেওয়া ছাড়া। ট্রাক এর ড্রাইভার আর খালাসির মুখে শোনা যে একটি 'বুলেট' মোটর সাইকেল হঠাত নাকি ট্রাক এর সামনে দিয়ে ফুটপাতে উঠে যায় আর পিছনে সঞ্জীবের গাড়ি ট্রাক এ ধাক্কা মারে। এখনো জ্ঞান ফেরেনি , তবে বুকে আর কোমরে ভারী চোট লেগেছে। শিরদাড়া তেও আঘাত লেগেছে। তাই বেঁচে গেলেও অশেষ দুর্ভোগ আছে। দিপু প্রায় সমস্ত দিনিই ওদের সাথে থাকলো। এইভাবে ১২ দিন পর ventilation থেকে বার করে ICU তে রাখল। কথা বলতে পারলেও, ডাক্তার কথা বলতে দিচ্ছেনা। প্রায় ২ মাস হাসপাতালে ওই ভাবে থাকার পর সঞ্জীব বাড়ি এলো। সর্বক্ষণ ২ জন নার্স, এ ছাড়া ডাক্তার দুবেলা , তো আছেই।

ডাক্তার বলে দিয়েছে যে কোনদিন আর সোজা হয়ে দাড়ানো মুশকিল। physiotherapy করে কিছুটা উন্নতি সম্ভব। wheel chair এ ঘুরতে পারবে আসা করা যায়। তবে বুকের চোট পরে কি হবে বলা যাচ্ছেনা। কথা বলার উপর এখন কোনো বাধা নেই। সঞ্জীব এখন একেবারে শেষ। এর মাঝে পূবা দীপুকে ফোন করে ডাকলো,সেই রেস্টুরান্ট এ যেখানে দুজনে কথা হয়েছিল। দিপু গিয়ে দেখে পূবা একাই এসেছে
........চল, ভিতরে বসি, বাইরে খুব ঠান্ডা
.......হাঁ চল,তুই কতক্ষণ এসেছিস?
......এই মাত্র এলাম, তুমিই আগে এসেছ। ভিতরে বসে কিছু খাবার অল্প করে, আর কফি অর্ডার দিল দিপু, পূবা যেন কি ভাবছে/, দিপু মা কে লক্ষ্য করলো, এক বছর আগে দেখা পূবা আর এই পূবা কোনো মিল নেই। জানুয়ারী মাসের দিল্লির শীত বলে একটা গোল গলা ফুল হাতা লাল সোয়েটার আর পায়ে মোজা জুতো, মুখে ক্রিম মেখেছে বোঝা যাচ্ছে কিন্তু কোনো প্রসাধন নেই। এমনকি লিপস্টিক পর্যন্ত না।
.......দিপু একটা সত্যি কথা বলবি, কি হয়েছিল? এক্সিডেন্ট কি ভাবে হয়?
.......আমি কি করে জানব? আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছ?
.......আমাকে সঞ্জীব বলেছে, তোর্ কাছে ক্ষমা চেয়েছে,সম্পূর্ণটা বলেনি, তুই বল ?
.......আমি কি বলব, উনি তোমাকে কি বলেছেন ?
.......সঞ্জীব গাড়ি নিয়ে তোকে ধাওয়া করেছিল , তুই তো আমাকে বলিসনি। দিপু একটু চুপ করে রইলো,তারপর নিচু স্বরে
........বলে কি হত? তুমি বিশ্বাস করতে? আর ওই অবস্থায় কিছু কি বলা যায়। ওনার মানসিক স্থিতি নষ্ট হয়ে গেছিল। আমি বুজতে পেরেছিলাম যে উনি কিছু করলে গাড়ি নিয়েই করবেন, সেইজন্যে আমি সতর্ক ছিলাম। আর জানাজানি হলে, কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে
পরার সম্ভবনা আছে, এই জন্য কিছু বলিনি।
.......সঞ্জীবের মানসিক অবস্থা তুই জানলি কি করে, তপু বলেছে?
.......বলেছে বলে তুমি আর আমি এখানে বসে কথা বলতে পারছি, না হলে কি হত ভাবতে পারো ? MP সাহেব ছিড়ে খেতেন, তোমাদের বাঁচা মুশকিল হয়ে পরত।পুরানো ঘটনা বেরিয়ে আসতো, সেটা মোটেই সুখকর হতনা। বাবার পরিনতি হত আমার। তোমাকে সারা জীবন বুক চিপে মুখ চিপে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হত।
.......তপু ঠিক করেছে, আমি তোকে বলতে পারিনি কেন সেটা তুই বুজতে পারছিস। স্বামী নিজের সন্তানকে শেষ করতে চায় কি করে বলব। আমি ওকে বুঝিয়েছিলাম, কিন্তু কিছুতেই কিছুনা। এখন সারা জীবন নিজে ভুগবে আর আমাকে ভোগাবে, পাপের প্রাশচিত্ত , করব। কথাগুলো বলে পূবা একটু ঝুকে দিপুর মুখে হাত দিয়ে বলাতে লাগলো।
.......যা কিছু হোক, আমার ওপর দিয়ে যাক ভগবান, আমার এই ছেলেটাকে আর তপুকে তুমি রক্ষা কর। ...বলে আরো ঝুকে দিপুর দুই গালে চুমু খেল। " আমি জানি তুই না বলবি, তবুও বলছি, সঞ্জীব একবার তোর্ সাথে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেছে, তুই যা ভালো বুঝিস " দিপু গভীর ভাবে পূবাকে দেখল,পূবার দু হাত নিজের হাতে নিয়ে
.......তুমি আর যা বলবে করব মা, এইটা পারবনা । দিপুর মুখে মা শুনে পূবা অপূর্ব একটা হাসি দিল,সব পেয়েছির হাসি, সন্তানকে মা প্রথম বুকের ভিতর নিয়ে যে হাসি দেন, সেই হাসি বুঝিয়ে দিল, আর কিছু চায়না পূবা। ......ঘটনাটা বল , জেনে রাখি , তপুকে কিছু বলিস না
.....তপু খুব বুদ্ধিমতী, ও নিজেই আমাকে বলেছে " দাদা আমি বুজতে পারছি যে পাপা তোকে মারতে সেইদিন গাড়ি নিয়ে গেছিল, না হলে ওই সময় ওই খানে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। তুই মাকে কিছু বলিসনা ". তুমি বুজতে পারছ তো তোমার সন্তানেরা মাথায় কিছু ধরে। নিরেট না। তপু এই কথা ওর পাপাকে বলবেনা, তুমিও কিছু বল না। যেটুকু সম্পর্ক আছে, থাকতে দাও। ......মুগ্ধ নয়নে পূবা চেয়ে রইলো
......সুধু আমার না, পঙ্কজ আর আমার সন্তানদের মাথা নিরেট না। বলে আবার হাসি

........একটা কথা জিজ্ঞাসা করছি, কিছু মনে করনা। তুমি আমাকে খোজার জন্য আমাকে কেন ঠিক করেছিলে? আর তোমার বাপের বাড়ির কি খবর, বাবা মা আছেন? পূবা একটু চেয়ে রইলো। মুখ নিচু করে, তারপর মুখ তুলে
,........বলতেও খারাপ লাগে রে দিপু , তুই আমার ছেলে, তবুও জিজ্ঞাসা যখন করলি তখন বন্ধু ভাবে বলি, তুই একমাত্র পুরুষ যার চোখে পাপ দেখিনি।মেয়েরা এইটা ধরতে পারে। তা ছাড়া সব কথা সবাইকে বলা যায়না। তুই আমাকে যে কথা বলতে পারবি, আর কাউকে পারবিনা। আবার তুই বন্ধুদের যে কথা বলতে পারবি, আমাকে বলতে পারবিনা। তোর্ প্রেমিকাকে যে কথা বলতে পারবি আর কাউকে সে কথা বলতে পারবিনা। অন্য কাউকে ওই গোপন কথা গুলো আমি বলতে পারতামনা, তাই তোকে ঠিক করেছিলাম।
বাপের বাড়ির সাথে আমার বিয়ের পর থেকেই বিশেষ ভালো সম্পর্ক ছিলনা। বাবা মারা গেছেন আজ ৪ বছর। আমাকে ভাইরা খবর দিল তার প্রায় ২ বছর বাদে যখন সম্পত্তি ভাগ করার কথা উঠলো। এখন সম্পর্ক খুবই খারাপ, আমি ওদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তোদের একমাত্র বোন্ আমি, দিপু একমাত্র ভাগ্নে এতদিনে কোনো খবর নিসনি কেন। ওই সম্পত্তির পুরো ভাগ চাই। আসলে বাবা, আমি একমাত্র মেয়ে তার উপর লেখাপড়ায় ভালো, বাকি গুলো তো গন্ড মুর্খ, সম্পত্তির অর্ধেক আমাকে দিয়ে গেছেন। ওই রকম জায়গায় ১২ কাঠা জমির দামী প্রায় ৭-৮ কোটি, তার উপর মদের দোকান ওসুদের দোকান বাড়ি দুটো,সব মিলিয়ে প্রায় ২০-২২ কোটির সম্পত্তি। আমাকে অর্ধেক দিতে হবেই। এই বলাতে আর যোগাযোগ করেনি। কিন্তু সম্পত্তি নিয়ে কিছু করতে পারবেনা। উকিল আছে কলকাতায়। ঐটা পেলে তোকে দেব, please নিস .....বলে পূবা দিপুর হাত জড়িয়ে ধরল
........ধুর, আমি নিয়ে কি করব, আমি আমারটা নিজে করব তুমি দেখে নীয়
........তা তুই পারবি সেই ক্ষমতা তোর্ আছে, দেখা যাক, কিন্তু আমি সম্পত্তির ভাগ ছাড়বনা। পঙ্কজের উপর অপমানের বদলা নেব। বিশ্বাস কর,পঙ্কজকে খুব ভালবাসতাম ,এক্সিডেন্ট ঘটানোর ব্যাপারে আমি কোনো ভাবেই দায়ী নই, আর ঘটনাটা আমাকে শেষ করে দিয়েছিল । না জানানোর জন্য দায়ী।

......শোনো, আমি আর কৌশিক চেষ্টা করছি , যাতে তপু যাদবপুর এ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারে। ওখানে চান্স পাওয়া কপালের ব্যাপার। চান্স পেলে তপু কাকিমার কাছে থাকবে, তুমিও যাবে,আর কৌশিক অসাধারণ ছেলে, কোনো ভাবনা নেই। ওর থেকে কোনো ক্ষতি হবে না। এইবলে দুজনে উঠলো , পূবা দিপুর হাত ধরে চাপ দিল।
.......ব্যবসার প্রয়োজনে আমাকে জানাতে পারিস, ঐটা আমি এখনো তোর্ থেকে ভালো বুঝি। ...দিপু হেসে গাড়ির দরজা খুলে পুবাকে তুলে দিল।
দিপু নিয়মিত সুবীরের মেয়েকে পড়ায় কিন্তু সুবীরের সাথে প্রায় ১ মাসের ওপর দেখা হয়নি। একদিন পেমেন্ট নিতে রেল এর অফিসএ গিয়ে চেক নিল তারপর সুবীরের চেম্বার এ ঢু মারলো।
.......কিরে তুই তো ডুমুরের ফুল দেখছি, বাড়িতে যাস আর আমার সাথে তোর্ দেখা হয়না ,কি ব্যাপার
.......অনেক কিছু ঘটে গেছে সুবিরদা, ৪ টে তো বাজে চল, কোথাও যাওয়া যাক, গিয়ে বলব।
.......চল তোকে দিল্লির অন্য একটা রূপ দেখাই । কিন্তু গোপন রাখবি।
....... বৌদি জানে ?
......আন্দাজ করে , কিছু বলেনা। কি করব বল, আর কোনো উপায় আছে কি ?
......না না, ভালো মন্দ বিচার করছি না, আর আমিও তো সাধু পুরুষ নই। চল দেখা যাক। ....পালিকা বাজারের সামনে সুবীরের গাড়ি আসলো। একটি মহিলা গাড়ি দেখেই কাছে এসে পিছনের দরজা খুলে উঠে বসলো।
.......মঞ্জু, এ আমার ভাই কাম বন্ধু, দিপু। আর এ আমার বান্ধবী মঞ্জু। ..দিপু ঘাড় ঘুরিয়ে মহিলার দিকে তাকেয়ে হাসলো, মহিলাও হাসলো। ৩০ এর মত বয়েস, সুন্দরী। মনে হয় পাঞ্জাবি বা কাশ্মীরি হতে পারে। দোহারা ফিগার। গাড়ি নিয়ে সুবীর শহরের শেষ প্রান্তে একটি বাড়ির সামনে এসে থামল। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ৪ তলায় উঠে চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। " দিপু, এই ফ্লাট আমার , তুই আজ প্রথম জানলি, আর কেউ জানেনা , সুতরাং" বলে অর্থপূর্ণ হাসি দিল।
.......ভয় নেই, নিশ্চিন্তে থাক। সুবীর ব্যাগ থেকে বোতল বার করলো আর কিছু খাবার, ভিতর থেকে গ্লাস নিয়ে এসে রাখল। মঞ্জু উঠে ভিতরে গিয়ে প্লেট নিয়ে তাতে খাবার সাজিয়ে দিল, গ্লাস গুলো ধুয়ে রাখল। তিন জনে গ্লাস এ গ্লাস ঠেকিয়ে সুরু করলো।
....মঞ্জু , অল্প করে খাবার দাও, না হলে নষ্ট হবে ... সুবীর বলাতে, মঞ্জু অল্প খাবার দিয়ে বাকিটা প্যাকেট এ রেখে দিল।
.......সুবিরদা আমি কিন্তু বেশি খাবনা, আমার ভালো লাগেনা।
.......ঠিক আছে , তোর্ যতক্ষণ ইচ্ছা খাবি।
চুমুক দিতে দিতে মঞ্জু আর সুবীর উঠে ভিতরে গেল। দিপু মাল টানতে টানতে একটা বই পেল, সত্যজিত রায়ের "সোনার কেল্লা", বুজলো সুবীর এখানে ভালই আসে, আর সময় কাটায় । একজন ৪০ বছরের স্বাস্থ্যবান পুরুষ কিই বা করতে পারে, যার বাড়িতে ঐরকমের অসুস্থ স্ত্রী আর যখন তার পয়সার সঙ্গতি আছে। দিপু সোফায় লম্বা হয়ে সুয়ে 'সোনার কেল্লা' পড়া সুরু করলো। যখন বইটা শেষ হতে আর ৪-৫ পাতা বাকি তখন ভিতর থেকে দুজনে আসল, জামা কাপড় পরে তৈরী হয়ে। দিপু উঠে বসে বইটা শেষ করার জন্য একটু অপেখ্যা করতে বলল। মঞ্জু জিজ্ঞাসা করলো চা খাবে কিনা , দিপু না বলল। খাবার কেউই বেশি কিছু খায়নি। মঞ্জু তার নিজের খাবার টা প্যাকেট এ মুড়ে ব্যাগে ঢোকাল ।
……মঞ্জু তুমি সব খাবার টুকুই নিয়ে যাও, মিছি মিছি কেন নষ্ট হবে। আমরা কেউই তো এটো করিনি।
মঞ্জু বাকি খাবার টুকু প্যাকেট এ নিয়ে নিল,তারপর সুবিরকে জিজ্ঞাসা করলো বোতল টা নিতে পারে কিনা, সুবীর হাঁ বলাতে সেটাও ব্যাগে পুরল। আবার গাড়ি করে পালিকা বাজারের কাছেই মঞ্জু কে নামিয়ে সুবীরের বাড়ি গেল। বাড়িতে গিয়ে সুবীরের স্ত্রী আর সুবীর কে দিপু এই গত ২-৩ মাসের ঘটে যাওয়া সব জানালো।
.........দিপু দ্যাখ, তোর্ মাকে আমরা কি চোখে দেখতাম আর তিনি আমাদের সামনে এখন কি রূপে হাজির। ওই সত্যজিতের "আগুন্তুক" সিনেমার শেষ দৃশ্যর মত , যেখানে উত্পল দত্ত বলছে " পাসপোর্ট দেখে কি মানুষ চেনা যায়, মুখের সাথে মুখ মেলাও চোখের সাথে চোখ, কিন্তু চিনতে হলে একটু সময় দিতে হয়, নাহলে অসম্পূর্ণ থাকে চেনা”", মানুষ চেনা সব চাইতে কঠিন। মুখ অধিকাংশ সমেয়ই deceptive হয়, তাই না ?
......একটা কথা, তোমাকে তো আগে বলেছি যে আমার নিজের মাযের জন্য বিন্দু মাত্র টান নেই। বৌদি , কি বলব, জানিনা কেন, যে মুহুর্তে উনি আমার মুখ চোখে হাত বলালেন আমি ওনার চোখে জল দেখতে পেলাম। আমার ভিশন ইচ্ছা করছিল জড়িয়ে ধরতে, বোধহয় অবচেতন মনে চাইতাম ওনাকে।
....তাই হয়রে দিপু, এই সম্পর্ক, স্বর্গীয় সম্পর্ক কোনদিন নষ্ট হয়না, একমাত্র পাষন্ড মা বা ছেলে হলে অন্য কথা। এটাই স্বাবাভিক । এইটার মানে তুই একজন নরমাল মানুষ। বৌদি সুয়ে সুয়েই বললেন।
[+] 5 users Like pnigpong's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: টান (কালেক্টেড) - by pnigpong - 27-06-2020, 08:37 AM



Users browsing this thread: 27 Guest(s)