27-02-2019, 04:55 PM
(This post was last modified: 27-02-2019, 05:02 PM by sorbobhuk. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পরী সিটের অপ্রএ পা তুলে আমার করে অভির গা ঘেঁসে বসে আছে আর জানালার বাইরের অধভুত সৌন্দর্য দেখে চলেছে। নিচের পাহাড় আর এখানকার পাহাড়ে অনেক বিসম্যতা। কিছু পরে ওদের গাড়ি খাব ব্রিজে পৌঁছে গেল। সেখানেও দুটি নদীর মিলন দেখে পরী অবাক হয়ে গেল।
অভিকে জিজ্ঞেস করল, "এই নদীর নাম কি?"
যে নদী টা শতদ্রু তে এসে মিশেছে সেই দিকে দেখিয়ে অভি জানাল, "ওটা স্পিতি নদী।"
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে পরী, "তুমিত আগে এখানে কোন দিন আসনি, তাহলে এত সব জানলে কি করে? সত্যি বল, তুমি আগে এসেছিলে কিন্তু আমাকে জানাচ্ছ না।"
অভি, "না সোনা, আমি এখানে আগে কখন আসিনি, বিশ্বাস করও। আমি জানতাম যে তুমি আমাকে কয়েক হাজার প্রশ্ন করবে তাই আগে থেকে এই জায়গার ব্যাপারে পড়াশুনা করে এসেছিলাম।"
গালে চুমু খেয়ে বলল, "তুমি ভাব্লে কি করে যে আমি তোমাকে বিশ্বাস করব না। আমি নিজের চেয়ে বেশি তোমাকে বিশ্বাস করি ছোট্ট রাজকুমার।"
ওর আদরের ডাক শুনে অভি একটু রেগে যায়, "আমি এখন বর হয়ে গেছি, আর আমি তোমার সেই ছোটো রাজকুমার নই। আমাকে ওই নামে আর ডাকবে না।"
পরী, "তুমি বুড়ো হয়ে গেলেও আমি তোমাকে ওই নামে ডাকবো ছোট্ট রাজকুমার।"
অভি ওকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, "রাতের ওই খেলার পরেও তুমি আমাকে ছোট্ট রাজকুমার নামে ডাকতে চাও?"
পরী ওর গালে আলতো করে থাপ্পর মেরে বলে, "যাও তোমার সাথে কথা বলব না।"
আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অভি, "তুমি না সত্যি খুব মিষ্টি। এত মিষ্টি খেতে খেতে আমি বুড়ো হয়ে যাব তাও যেন শেষ হবে না।"
পরী লজ্জায় লাল হয়ে গেল, "তুমি শয়তানি করা ছারবে না আমি নদিতে ঝাপ দেব।"
অভি ওর ঠোঁটের সামনে ঠোঁট এনে বলে, "উম্মম... আমার পরী দেখি লজ্জা পায়।"
পরী ওর দিকে বড় বড় লাজুক চোখে তাকিয়ে বলে, "থাম অভি, আমরা গাড়িতে।"
অভি, "ওকে আমি থামবো, কিন্তু তার বদলে কি পাব?"
পরী, "বর্তমানে কিছু না, তবে পরে আমি ভেবে দেখব।"
খাব ব্রিজ পার করে গাড়ি একটি সরু রাস্তা দিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে শুরু করে। রাস্তা বড় খাড়া, পাহাড়ের কোল কেটে তৈরি সেই রাস্তা। কোন কোন জায়গায়, মাথার ওপরে পাহাড়ের ছাদ তার নিচ দিয়ে রাস্তা। ওই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায় পরী, এ কিরকমের রাস্তা, অভির বুকের ধুকপুকানিও একটুর জন্য বেড়ে যায়। কিন্তু পরীর মুখ দেখে নিজেকে শান্ত করে পরীকে জড়িয়ে ওকে ভয় পেতে বারন করে। পরী ওর বুকের কাছে এসে জড়সড় হয়ে বসে। কিছু দূর যাবার পরে রাস্তা খাড়া চরাই চরতে শুরু করে। পরীর সারা গায়ে কাটা দেয়।
পরী, "অভি, একি সাঙ্ঘাতিক সুন্দর রাস্তা। আমরা কি পাহারে চরে একবার থামব প্লিস, আমি নিচে দেখতে চাই একবার।"
বল্বিন্দার পরীর ভয় বুঝতে পেরে উত্তর দেয়, "ভাভিজি, বল্বিন্দার যতক্ষণ সাথে আছে ততক্ষণ চিন্তা করবেন না।"
পরী শুধু ভাভিজি কথাটা বুঝতে পারল, বল্বিন্দারের দিকে লাজুক চোখে তাকিয়ে হেসে দিল। পাহাড়ের ওপরে উঠে বল্বিন্দার গাড়ি থামাল। ওরা গাড়ি থেকে নেমে একদম ধারে গিয়ে নিচে স্পিতি নদীর দিকে দেখল। অনেক নিচে সরু একটা ময়াল সাপের মতন এঁকে বেকে বয়ে চলেছে স্পিতি নদী, জলের রঙ বড় ঘোলাটে। পরীর চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে উঠেছে, সাথে সাথে অভি বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে কত নিচ থেকে ওরা উঠেছে।
পরী ওকে বলল, "জানো আমার কি মনে হয়, এখানে কোন টুরিস্ট আসে না বা লোকজন থাকে না।"
অভি মাথা নাড়ল, হ্যাঁ তাই মনে হচ্ছে। এতক্ষণ গাড়ি চলল কিন্তু রাস্তায় অন্য কোন গাড়ির দেখা পায়নি ওরা, না সামনে থেকে না পেছন থেকে। একবারের জন্য হলেও অভির মনে ভয় ভর করল, যদি এই নির্জন দুর্গম জায়গায় ওদের সাথে কিছু অঘটন ঘটে তাহলে কোন বাড়ির কেউ খোঁজ পাবেনা এমন কি হয়ত শরীরের শেষ অংশ টুকুও খুঁজে পাবে না।
নাকো ঢোকার আগে রাস্তার দুপাসে বেশ উঁচু উঁচু কাঠের থামে অনেক রঙ বেরঙের পতাকা বাঁধা, হাওয়ায় পতাকা গুলো পত পত করে উড়ছে। পরী জিজ্ঞেস করল যে ওই পতাকা গুলো কিসের, অভি জানত না ওই পতাকা গুলো কিসের জন্য বাঁধা, পরে হোটেলের লোককে জিজ্ঞেস করে জেনেছিল যে পতাকা গুলো বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের জন্য। ওই পতাকা গুলর ওপরে বুদ্ধের বানী লেখা আছে।
নাকো পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় বিকেল চারটে বেজে গেছিল। নাকো অনেক উঁচুতে, চারপাসের পাহাড় যেন নাকোর পাশে বাচ্চা, ওরা যেন খুব উঁচু একটা ছাদে উঠে আসে পাশের পাহাড় দেখছে। দিনের পড়ন্ত আলোর সাথে সাথে চারপাসের কন কনে ঠান্ডা হাওয়া ওদের কাঁপিয়ে দিল। নাকোর উচ্চতায় চারপাশে গাছ পালা খুব কম, ওখানকার মানুষ কিছু টা কৃষি নির্ভর আর কিছু টা পরিব্রাজকের ওপরে নির্ভর। পরে ওরা জানতে পারে যে ওখানকার মানুষ, মটরশুঁটি, ফুলকপি, আলু ইত্যাদির চাষ করে।
শীতকালের সেই সময়ে হোটেল পেতে ওদের কোন আসুবিধা হল না, খুব সহজেই ওরা রুম পেয়ে গেল কেননা ওটা ভ্রমণের মরশুম নয় এবং এই জায়গায় খুব কম পর্যটক ঘুরতে আসে। অভি জিজ্ঞেস করল যে নাকোতে বরফ পাত হয় কিনা, ম্যানেজার জানাল যে বছর বছর বৃষ্টি হয় না এখানে ত বরফ কি করে পড়বে। কিন্তু শীতের সময়ে এখানে তাপমান শূন্যের চেয়ে অনেক নিচে নেমে যায়। ওদের কে সাবধান করে দিল যে রাতে যেন বাইরে না বের হয়, ঠান্ডার চোটে শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে। রুমের মধ্যে একটা কাঠের ফায়ারপ্লেস ছিল আর অনেক জ্বালানি কাঠ। এখানে বিজলি বাতির বেশ সমস্যা। একবার বিজলি চলে গেলে আসতে বেশ কয়েক দিন লেগে যায়।
অভি ঠিক করল যে রাতের খাবার পরে পরীকে সেই বুদ্ধের মূর্তিটা উপহার দিয়ে চমকে দেবে। কিন্তু এই উচ্চতা আর লম্বা রাস্তা পরী খুব ক্লান্ত করে দিয়েছে। বেচারা পরী রাতে ঠিক ভাবে কিছু না খেয়ে শুয়ে পড়ল। অভির মনে একটু ভয় ঢুকল, একদম কাছের শহর রেকং পিও, নাকো থেকে প্রায় ঘন্টা চারেকের রাস্তা, পরীর কিছু হলে বেশ মুশকিলে পড়তে হবে। অভি ওর সাথে প্রাথমিক কিছু ওষুধ পত্র এনেছিল, গায়ে ব্যাথার ওষুধ খেয়ে খেয়ে পরী লেপ মুরি দিয়ে শুয়ে পড়ল।
পরীর দাঁত ঠান্ডায় কাঁপতে লাগল, "অভি, আমার খুব শীত করছে।"
অভির একবার দুষ্টুমি করার মন হল, "দাড়াও আমি তোমাকে আবার গরম করে দিচ্ছি।"
পরী ওর মনব্রিতি বুঝতে পেরে চিৎকার করে ওঠে, "অভি না, আমি খুব ক্লান্ত, আমার শরীর খারাপ লাগছে। তুমি না ভীষণ শয়তান ছেলে।"
অভি, "দেখ আমি ত শয়তানি এখনো করিনি কিন্তু তোমার মাথায় শুদু দুষ্টুমির কথা ঘুরে বেড়ায়। তাহলে কে বেশি দুষ্টু মিষ্টি খেলা করতে ভালবাসে?"
"তোমার মাথায় সবসময়ে শুধু শয়তানি বুদ্ধি ঘোরে।" পরী ওর দিকে মৃদু রেগে গিয়ে, "তুমিই ত সবসময় ফাঁক খুঁজতে থাক কখন আমার সাথে একটু বদ্মাসি করবে। খালি আদর খাবার জন্য মন আনচান করে তোমার তাই না।"
পরীর শরীরে এই অবস্থা দেখে অভির একটু কষ্ট হল। ম্যানেজার কে বলে একটু সরসের তেল চাইল, মোমবাতির আলোতে তেল গরম করে ওর পায়ের পাতার ওপরে মালিশ করে দিতে শুরু করল।
অভি, "দেখ পরী, আমি কত ভাল, আমি তোমাকে কি শুধু ওই ভাবে গরম করার কথা বলেছি?"
হাতে তেল দেখে আর পায়ের ওপরে তেল মালিশ পেয়ে পরীর বেশ আরাম লাগল। আর পা ছারাল না পরী, ওর কোলে পা দিয়ে বলল, "তুমি ত আমার ছোট্ট রাজকুমার আমি জানি যে তুমি আমার খেয়াল রাখবে।"
অভি, "তোমার পায়ের পাতা গুলো কি নরম আর ফর্সা।"
অভি পা মালিশ করার পরে পরী কে বলল যে জামা খুলে শুয়ে পড়তে যাতে ও ওর পিঠের ওপরে তেল মালিশ করে দিতে পারে। পরী লজ্জা পেয়ে বলল যে, না ও জামা কাপড় খুলবে না, অভিকে ডাক দিল ওর পাশে এসে শুতে। অভি যত বার বলল যে ও কোন শয়তানি করবে না, কিন্তু পরী শুনল না। অগত্যা অভি লেপের মধ্যে ঢুকে পড়ল। পরী ওর গায়ের ওপরে লেপ টেনে দিয়ে ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে রেখে শুয়ে পড়ল। অভি পরীর বুকে মুখ গুঁজে গায়ের গন্ধ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
শুক্রবার সকাল, আগের দিনের থেকে রোদে খানিকটা তেজ বেড়েছে। পরিষ্কার আকাশে, ঝলমলে রোদের সাথে পরীর রাতের ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। সকালের খাওয়া সারার পরে অভি ম্যানেজার কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিল যে নাকো তে একটা সুন্দর বৌদ্ধ ধর্মের মন্দির আর মঠ আছে আর একটা ছোটো হ্রদ।
সারা সকাল ওরা নাকো ঘুরে বেড়াল। খুব ছোটো গ্রাম নাকো, ঘুরতে বেশি সময় লাগে না। নাকো হ্রদ বেশ ছোটো আর খুব সুন্দর। জলের রঙ সবুজ আর চারপাশে ছোটো ছোটো গাছে ভরা। দূর পাহাড়ের কোলে বেশ কিছু সাদা রঙের স্তুপ দেখে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করল অগুলর ব্যাপারে। অভি অনেকক্ষণ তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করল যে ওই স্তুপ গুলো কি, তারপরে মনে পড়ল যে কলেজ থেকে একবার ওরা সাঁচি গেছিল ঘুরতে সেখানে ও বৌদ্ধদের স্তপ দেখেছে। অভি উত্তর দিল যে ওগুলো হয়ত বৌদ্ধ ধর্মের স্তুপ। পরী ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেল, ছেলেটা কি না জানে।
মিষ্টি হেসে বলল, "তুমি আমার অভিধান, তুমি এত খবর রাখো কোথায় সোনা।"
অভি পরীর বুকে আলতো করে টোকা মেরে বলে, "এখানে রাখি আর দরকার পড়লে বের করে নেই।"
বৌদ্ধদের মঠ খানি গ্রামের এক প্রান্তে, পাহাড়ের কোলে একটি সমতল ভুমির ওপরে স্থাপিত। অনেক ছোটো মঠ কিন্তু বেশ সুন্দর সাজান গোছান। অনেক পুরান এই মঠ, নতুন মঠের তাঁর পাশে, নতুন মঠের জন্য অস্ট্রিয়া সরকার টাকা দান করেছে। মঠের একদম শেষে নেমে গেছে খাড়া পাহাড়, নিচে স্পিতি নদীর তীরে। পাহাড়ের কোলে স্থিত নাকো গ্রাম ঘুরে ওদের মন হল যেন পটে আঁকা একটি ছোটো গ্রাম। এই রুক্ষ ভুমির মাঝে একটা ছোটো মরুদ্যান এই গ্রাম। আশেপাশের কোন পাহাড়ে কোন গাছ পালা নেই কিন্তু এই গ্রামে কিছু গাছ পালা আছে।
অভি দুরে উঁচুতে ওই স্তুপ গুলর দিকে দেখিয়ে পরীকে জিজ্ঞেস করল যে ওখানে যেতে চায় কিনা। পরী বলল যে যেখানে অভি ওকে নিয়ে যেতে চায় সেখানে নিশ্চিন্ত মনে ও যেতে রাজি। আবার কবে এখানে আসা হবে জানেনা তাই ওরা ঠিক করল যে জায়গাটা পুর ঘুরে দেখবে।
পাহাড় চরতে চরতে পরী ওকে জিজ্ঞেস করল, "আগামি গরমের ছুটিতে এখানে আবার আসব, তখন লম্বা ছুটি নিয়ে আসব।"
অভি ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, "ঠিক আছে আসা যাবে।"
ওরা সমতলের মানুষ, পাহাড়ে এর আগে কোনদিন আসেনি, তাই দু’জনেই বেশ হাঁপিয়ে ওঠে। স্তুপ অনেক উঁচুতে, মাঝখানে একটু থামে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। চারপাশে চেয়ে দেখে, ন্যাড়া পাহাড়, কিছু কিছু জায়গায় ছোটো ছোটো ঘাসে ভর্তি আর বাকি টা ধুসর পাথর। এদিকে বৃষ্টি বিশেষ হয় না, আর নাকো যেন এই ঠাণ্ডা মরুভুমির মাঝে একটা মরুদ্যান। পরীকে হাপাতে দেখে শেষ পর্যন্ত অভি ওর হাত ধরে টানতে শুরু করে।
অবশেষে স্তুপার কাছে পৌঁছে গেল। অভি আকাশের দিকে মুখ করে দু’হাত মুঠি করে মাথার ওপরে ছুঁড়ে চিৎকার করে উঠলো, "আই লাভ ইউ পরী..."
পরী অভিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল, পিঠের ওপরে মাথা রেখে গাল চেপে ধরল পিঠে। জ্যাকেটের ওপরে ঠোঁট চেপে ফিসফিস করে বলল, "আই লাভ ইউ অভিমন্যু।"
অভি ওর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওকে দুহাতে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে, ওর গোল মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমি সত্যি ভাগ্যবান, পরী। এই ট্রিপে তুমি আমার পাশে আছো, এই ট্রিপ টা আমার চিরকাল মনে থাকবে।"
পরী মুখ তুলে ওর দিকে তাকাল, অভি ওর মুখখানি আঁজলা করে হাতে নিয়ে ঠোঁট নামিয়ে আনল ওর লাল নরম ঠোঁটের ওপরে। পরী ওর জ্যাকেটের কলার মুঠোর মধ্যে নিয়ে, বুড়ো আঙ্গুলে ভর দিয়ে ঠোঁট নিয়ে গেল অভির ঠোঁটের কাছে। অভি পরীর পেছনে হাত দিয়ে চেপে ধরে, ওকে মাটি থেকে তুলে ধরল। অভির কাঁধে হাত রেখে নিজেকে আরও উঁচুতে উঠিয়ে নিল পরী। মাথা নিচু করে অভির ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট চেপে ধরল পরী। এক হাতে মাথার পেছনের চুল খামচে ধরল পরী। প্রেমের চুম্বন ক্রমে ঘনিভুত হয়ে ওঠে, প্রথমে শুধু ঠোঁট নিয়ে খেলা তারপরে পরী ওর জিবের ডগা দিয়ে আলতো করে চেটে দেয় অভির অধর। দু’হাতে পরীকে প্রাণপণে চেপে ধরে অভি, চুম্বন টিকে কেউ যেন আর থামাতে চায়না। হিমশীতল হিমালয়ের ক্রোরে দু’জনের ঠোঁটের মাঝে যেন আগুন জ্বলে ওঠে।
বেশ খানিকক্ষণ পরে পরী শ্বাস নেবার জন্য নিরুপায় হয়ে ঠোঁট ছেড়ে দেয়। অভি ওকে তখন কোলের ওপরে উঠিয়ে, পরী ওর দিকে লাজুক হেসে মিনতি করে মাটিতে নামাতে। অভি ওর কথায় কান না দিয়ে বুকের মাঝে চেপে ধরে মুখ, উত্তপ হয়ে ওঠে পরী। অভির মাথায় উষ্ণ নিঃশ্বাস ঢেউ খেলে বেড়ায়, দুহাতে ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে।
অভি দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, "রুমে ফিরতে চাও?"
পরী ওর চোখের দুষ্টু শয়তানি চাহনি দেখে বুঝতে পারে ও কি বলতে চাইছে, লাল হয়ে ওঠে পরীর মুখ, মাথা নাড়ায় পরী, "না, তোমার কি সব সময়ে চুমু খাবার পরে ফুটবল খেলার ইচ্ছে জাগে নাকি?"
অভি ওর বুকের মাঝে নাক ঘষে বলে, "তুমি এত নরম যে আমি কিছুতেই নিজেকে সংবরণ করে রাখতে পারিনা। সবসময়ে মনে হয় তোমাকে নিয়ে..."
পরী, "ধুর... নামাও এবারে আমাকে, তোমার হাত ব্যাথা করবে।"
পাহাড় থেকে নিচে নামার সময়ে অভি ওর পেছনে হাত দিয়ে আলতো থাপ্পর মারে, পরী ওর দিকে মৃদু রেগে তাকিয়ে বলে, "তুমি না সত্যি একদম যা তা। যেন কিছুতেই সবুর নেই, আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি? এই দিনের আলোতে এইরকম না করলে পারতে। আমি আর তোমার সাথে কথা বলব না।" এই বলে পরী হাসতে হাসতে এক দৌড়ে পাহাড় থেকে নিচে নেমে গেল। দুচোখ যেন ওর দিকে বলে গেল, "ধরতে পারলে ধর আমাকে।"
দুপুরের খাবার পরে দুজনে হোটেলের বারান্দায় বসে রোদের তাপ নেয়। অভি ওকে জিজ্ঞেস করল যে গ্রামে আর একবার হাটবে কিনা, পরী মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল না, ও এখন আর ঘুরতে চায় না, চুপচাপ অভির পাশে বসে থাকতে চায়।
পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, "কাল আমরা কোথায় যাব?"
অভি, "কাল সকালে আমরা ফেরার পরথ ধরব। কালকের মধ্যে আমরা মনে হয় না সিমলা বা কাল্কা পৌঁছতে পারব তাই মাঝপথে কোথাও আমরা থেকে যাবো।"
ফিরে যাবার কথা শুনে পরীর মুখ শুকিয়ে গেল, চেয়ার থেকে উঠে অভির কোলে গিয়ে বসে পড়ল। দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে থাকে পরী।
হালকা হেসে ভাবাবেগে অভির কানে কানে বলে, "জানো, আমার এই সব এখনো কেন জানি না, সব স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আমি যদি তোমাকে না পাই তাহলে কি হবে?"
অভি বুঝতে পারল যে পরী আবেগের বশে আবার না কান্না জুড়ে দেয় তাই কথা ঘুরিয়ে দিয়ে বলে, "আবার এই সব নিয়ে কথা কেন বলতে শুরু করলে। আবার যদি শুরু কর তাহলে কোলে তুলে লেকের মধ্যে ফেলে দেব।"
অভিকে জিজ্ঞেস করল, "এই নদীর নাম কি?"
যে নদী টা শতদ্রু তে এসে মিশেছে সেই দিকে দেখিয়ে অভি জানাল, "ওটা স্পিতি নদী।"
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে পরী, "তুমিত আগে এখানে কোন দিন আসনি, তাহলে এত সব জানলে কি করে? সত্যি বল, তুমি আগে এসেছিলে কিন্তু আমাকে জানাচ্ছ না।"
অভি, "না সোনা, আমি এখানে আগে কখন আসিনি, বিশ্বাস করও। আমি জানতাম যে তুমি আমাকে কয়েক হাজার প্রশ্ন করবে তাই আগে থেকে এই জায়গার ব্যাপারে পড়াশুনা করে এসেছিলাম।"
গালে চুমু খেয়ে বলল, "তুমি ভাব্লে কি করে যে আমি তোমাকে বিশ্বাস করব না। আমি নিজের চেয়ে বেশি তোমাকে বিশ্বাস করি ছোট্ট রাজকুমার।"
ওর আদরের ডাক শুনে অভি একটু রেগে যায়, "আমি এখন বর হয়ে গেছি, আর আমি তোমার সেই ছোটো রাজকুমার নই। আমাকে ওই নামে আর ডাকবে না।"
পরী, "তুমি বুড়ো হয়ে গেলেও আমি তোমাকে ওই নামে ডাকবো ছোট্ট রাজকুমার।"
অভি ওকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, "রাতের ওই খেলার পরেও তুমি আমাকে ছোট্ট রাজকুমার নামে ডাকতে চাও?"
পরী ওর গালে আলতো করে থাপ্পর মেরে বলে, "যাও তোমার সাথে কথা বলব না।"
আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অভি, "তুমি না সত্যি খুব মিষ্টি। এত মিষ্টি খেতে খেতে আমি বুড়ো হয়ে যাব তাও যেন শেষ হবে না।"
পরী লজ্জায় লাল হয়ে গেল, "তুমি শয়তানি করা ছারবে না আমি নদিতে ঝাপ দেব।"
অভি ওর ঠোঁটের সামনে ঠোঁট এনে বলে, "উম্মম... আমার পরী দেখি লজ্জা পায়।"
পরী ওর দিকে বড় বড় লাজুক চোখে তাকিয়ে বলে, "থাম অভি, আমরা গাড়িতে।"
অভি, "ওকে আমি থামবো, কিন্তু তার বদলে কি পাব?"
পরী, "বর্তমানে কিছু না, তবে পরে আমি ভেবে দেখব।"
খাব ব্রিজ পার করে গাড়ি একটি সরু রাস্তা দিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে শুরু করে। রাস্তা বড় খাড়া, পাহাড়ের কোল কেটে তৈরি সেই রাস্তা। কোন কোন জায়গায়, মাথার ওপরে পাহাড়ের ছাদ তার নিচ দিয়ে রাস্তা। ওই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায় পরী, এ কিরকমের রাস্তা, অভির বুকের ধুকপুকানিও একটুর জন্য বেড়ে যায়। কিন্তু পরীর মুখ দেখে নিজেকে শান্ত করে পরীকে জড়িয়ে ওকে ভয় পেতে বারন করে। পরী ওর বুকের কাছে এসে জড়সড় হয়ে বসে। কিছু দূর যাবার পরে রাস্তা খাড়া চরাই চরতে শুরু করে। পরীর সারা গায়ে কাটা দেয়।
পরী, "অভি, একি সাঙ্ঘাতিক সুন্দর রাস্তা। আমরা কি পাহারে চরে একবার থামব প্লিস, আমি নিচে দেখতে চাই একবার।"
বল্বিন্দার পরীর ভয় বুঝতে পেরে উত্তর দেয়, "ভাভিজি, বল্বিন্দার যতক্ষণ সাথে আছে ততক্ষণ চিন্তা করবেন না।"
পরী শুধু ভাভিজি কথাটা বুঝতে পারল, বল্বিন্দারের দিকে লাজুক চোখে তাকিয়ে হেসে দিল। পাহাড়ের ওপরে উঠে বল্বিন্দার গাড়ি থামাল। ওরা গাড়ি থেকে নেমে একদম ধারে গিয়ে নিচে স্পিতি নদীর দিকে দেখল। অনেক নিচে সরু একটা ময়াল সাপের মতন এঁকে বেকে বয়ে চলেছে স্পিতি নদী, জলের রঙ বড় ঘোলাটে। পরীর চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে উঠেছে, সাথে সাথে অভি বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে কত নিচ থেকে ওরা উঠেছে।
পরী ওকে বলল, "জানো আমার কি মনে হয়, এখানে কোন টুরিস্ট আসে না বা লোকজন থাকে না।"
অভি মাথা নাড়ল, হ্যাঁ তাই মনে হচ্ছে। এতক্ষণ গাড়ি চলল কিন্তু রাস্তায় অন্য কোন গাড়ির দেখা পায়নি ওরা, না সামনে থেকে না পেছন থেকে। একবারের জন্য হলেও অভির মনে ভয় ভর করল, যদি এই নির্জন দুর্গম জায়গায় ওদের সাথে কিছু অঘটন ঘটে তাহলে কোন বাড়ির কেউ খোঁজ পাবেনা এমন কি হয়ত শরীরের শেষ অংশ টুকুও খুঁজে পাবে না।
নাকো ঢোকার আগে রাস্তার দুপাসে বেশ উঁচু উঁচু কাঠের থামে অনেক রঙ বেরঙের পতাকা বাঁধা, হাওয়ায় পতাকা গুলো পত পত করে উড়ছে। পরী জিজ্ঞেস করল যে ওই পতাকা গুলো কিসের, অভি জানত না ওই পতাকা গুলো কিসের জন্য বাঁধা, পরে হোটেলের লোককে জিজ্ঞেস করে জেনেছিল যে পতাকা গুলো বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের জন্য। ওই পতাকা গুলর ওপরে বুদ্ধের বানী লেখা আছে।
নাকো পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় বিকেল চারটে বেজে গেছিল। নাকো অনেক উঁচুতে, চারপাসের পাহাড় যেন নাকোর পাশে বাচ্চা, ওরা যেন খুব উঁচু একটা ছাদে উঠে আসে পাশের পাহাড় দেখছে। দিনের পড়ন্ত আলোর সাথে সাথে চারপাসের কন কনে ঠান্ডা হাওয়া ওদের কাঁপিয়ে দিল। নাকোর উচ্চতায় চারপাশে গাছ পালা খুব কম, ওখানকার মানুষ কিছু টা কৃষি নির্ভর আর কিছু টা পরিব্রাজকের ওপরে নির্ভর। পরে ওরা জানতে পারে যে ওখানকার মানুষ, মটরশুঁটি, ফুলকপি, আলু ইত্যাদির চাষ করে।
শীতকালের সেই সময়ে হোটেল পেতে ওদের কোন আসুবিধা হল না, খুব সহজেই ওরা রুম পেয়ে গেল কেননা ওটা ভ্রমণের মরশুম নয় এবং এই জায়গায় খুব কম পর্যটক ঘুরতে আসে। অভি জিজ্ঞেস করল যে নাকোতে বরফ পাত হয় কিনা, ম্যানেজার জানাল যে বছর বছর বৃষ্টি হয় না এখানে ত বরফ কি করে পড়বে। কিন্তু শীতের সময়ে এখানে তাপমান শূন্যের চেয়ে অনেক নিচে নেমে যায়। ওদের কে সাবধান করে দিল যে রাতে যেন বাইরে না বের হয়, ঠান্ডার চোটে শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে। রুমের মধ্যে একটা কাঠের ফায়ারপ্লেস ছিল আর অনেক জ্বালানি কাঠ। এখানে বিজলি বাতির বেশ সমস্যা। একবার বিজলি চলে গেলে আসতে বেশ কয়েক দিন লেগে যায়।
অভি ঠিক করল যে রাতের খাবার পরে পরীকে সেই বুদ্ধের মূর্তিটা উপহার দিয়ে চমকে দেবে। কিন্তু এই উচ্চতা আর লম্বা রাস্তা পরী খুব ক্লান্ত করে দিয়েছে। বেচারা পরী রাতে ঠিক ভাবে কিছু না খেয়ে শুয়ে পড়ল। অভির মনে একটু ভয় ঢুকল, একদম কাছের শহর রেকং পিও, নাকো থেকে প্রায় ঘন্টা চারেকের রাস্তা, পরীর কিছু হলে বেশ মুশকিলে পড়তে হবে। অভি ওর সাথে প্রাথমিক কিছু ওষুধ পত্র এনেছিল, গায়ে ব্যাথার ওষুধ খেয়ে খেয়ে পরী লেপ মুরি দিয়ে শুয়ে পড়ল।
পরীর দাঁত ঠান্ডায় কাঁপতে লাগল, "অভি, আমার খুব শীত করছে।"
অভির একবার দুষ্টুমি করার মন হল, "দাড়াও আমি তোমাকে আবার গরম করে দিচ্ছি।"
পরী ওর মনব্রিতি বুঝতে পেরে চিৎকার করে ওঠে, "অভি না, আমি খুব ক্লান্ত, আমার শরীর খারাপ লাগছে। তুমি না ভীষণ শয়তান ছেলে।"
অভি, "দেখ আমি ত শয়তানি এখনো করিনি কিন্তু তোমার মাথায় শুদু দুষ্টুমির কথা ঘুরে বেড়ায়। তাহলে কে বেশি দুষ্টু মিষ্টি খেলা করতে ভালবাসে?"
"তোমার মাথায় সবসময়ে শুধু শয়তানি বুদ্ধি ঘোরে।" পরী ওর দিকে মৃদু রেগে গিয়ে, "তুমিই ত সবসময় ফাঁক খুঁজতে থাক কখন আমার সাথে একটু বদ্মাসি করবে। খালি আদর খাবার জন্য মন আনচান করে তোমার তাই না।"
পরীর শরীরে এই অবস্থা দেখে অভির একটু কষ্ট হল। ম্যানেজার কে বলে একটু সরসের তেল চাইল, মোমবাতির আলোতে তেল গরম করে ওর পায়ের পাতার ওপরে মালিশ করে দিতে শুরু করল।
অভি, "দেখ পরী, আমি কত ভাল, আমি তোমাকে কি শুধু ওই ভাবে গরম করার কথা বলেছি?"
হাতে তেল দেখে আর পায়ের ওপরে তেল মালিশ পেয়ে পরীর বেশ আরাম লাগল। আর পা ছারাল না পরী, ওর কোলে পা দিয়ে বলল, "তুমি ত আমার ছোট্ট রাজকুমার আমি জানি যে তুমি আমার খেয়াল রাখবে।"
অভি, "তোমার পায়ের পাতা গুলো কি নরম আর ফর্সা।"
অভি পা মালিশ করার পরে পরী কে বলল যে জামা খুলে শুয়ে পড়তে যাতে ও ওর পিঠের ওপরে তেল মালিশ করে দিতে পারে। পরী লজ্জা পেয়ে বলল যে, না ও জামা কাপড় খুলবে না, অভিকে ডাক দিল ওর পাশে এসে শুতে। অভি যত বার বলল যে ও কোন শয়তানি করবে না, কিন্তু পরী শুনল না। অগত্যা অভি লেপের মধ্যে ঢুকে পড়ল। পরী ওর গায়ের ওপরে লেপ টেনে দিয়ে ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে রেখে শুয়ে পড়ল। অভি পরীর বুকে মুখ গুঁজে গায়ের গন্ধ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
শুক্রবার সকাল, আগের দিনের থেকে রোদে খানিকটা তেজ বেড়েছে। পরিষ্কার আকাশে, ঝলমলে রোদের সাথে পরীর রাতের ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। সকালের খাওয়া সারার পরে অভি ম্যানেজার কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিল যে নাকো তে একটা সুন্দর বৌদ্ধ ধর্মের মন্দির আর মঠ আছে আর একটা ছোটো হ্রদ।
সারা সকাল ওরা নাকো ঘুরে বেড়াল। খুব ছোটো গ্রাম নাকো, ঘুরতে বেশি সময় লাগে না। নাকো হ্রদ বেশ ছোটো আর খুব সুন্দর। জলের রঙ সবুজ আর চারপাশে ছোটো ছোটো গাছে ভরা। দূর পাহাড়ের কোলে বেশ কিছু সাদা রঙের স্তুপ দেখে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করল অগুলর ব্যাপারে। অভি অনেকক্ষণ তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করল যে ওই স্তুপ গুলো কি, তারপরে মনে পড়ল যে কলেজ থেকে একবার ওরা সাঁচি গেছিল ঘুরতে সেখানে ও বৌদ্ধদের স্তপ দেখেছে। অভি উত্তর দিল যে ওগুলো হয়ত বৌদ্ধ ধর্মের স্তুপ। পরী ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেল, ছেলেটা কি না জানে।
মিষ্টি হেসে বলল, "তুমি আমার অভিধান, তুমি এত খবর রাখো কোথায় সোনা।"
অভি পরীর বুকে আলতো করে টোকা মেরে বলে, "এখানে রাখি আর দরকার পড়লে বের করে নেই।"
বৌদ্ধদের মঠ খানি গ্রামের এক প্রান্তে, পাহাড়ের কোলে একটি সমতল ভুমির ওপরে স্থাপিত। অনেক ছোটো মঠ কিন্তু বেশ সুন্দর সাজান গোছান। অনেক পুরান এই মঠ, নতুন মঠের তাঁর পাশে, নতুন মঠের জন্য অস্ট্রিয়া সরকার টাকা দান করেছে। মঠের একদম শেষে নেমে গেছে খাড়া পাহাড়, নিচে স্পিতি নদীর তীরে। পাহাড়ের কোলে স্থিত নাকো গ্রাম ঘুরে ওদের মন হল যেন পটে আঁকা একটি ছোটো গ্রাম। এই রুক্ষ ভুমির মাঝে একটা ছোটো মরুদ্যান এই গ্রাম। আশেপাশের কোন পাহাড়ে কোন গাছ পালা নেই কিন্তু এই গ্রামে কিছু গাছ পালা আছে।
অভি দুরে উঁচুতে ওই স্তুপ গুলর দিকে দেখিয়ে পরীকে জিজ্ঞেস করল যে ওখানে যেতে চায় কিনা। পরী বলল যে যেখানে অভি ওকে নিয়ে যেতে চায় সেখানে নিশ্চিন্ত মনে ও যেতে রাজি। আবার কবে এখানে আসা হবে জানেনা তাই ওরা ঠিক করল যে জায়গাটা পুর ঘুরে দেখবে।
পাহাড় চরতে চরতে পরী ওকে জিজ্ঞেস করল, "আগামি গরমের ছুটিতে এখানে আবার আসব, তখন লম্বা ছুটি নিয়ে আসব।"
অভি ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, "ঠিক আছে আসা যাবে।"
ওরা সমতলের মানুষ, পাহাড়ে এর আগে কোনদিন আসেনি, তাই দু’জনেই বেশ হাঁপিয়ে ওঠে। স্তুপ অনেক উঁচুতে, মাঝখানে একটু থামে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। চারপাশে চেয়ে দেখে, ন্যাড়া পাহাড়, কিছু কিছু জায়গায় ছোটো ছোটো ঘাসে ভর্তি আর বাকি টা ধুসর পাথর। এদিকে বৃষ্টি বিশেষ হয় না, আর নাকো যেন এই ঠাণ্ডা মরুভুমির মাঝে একটা মরুদ্যান। পরীকে হাপাতে দেখে শেষ পর্যন্ত অভি ওর হাত ধরে টানতে শুরু করে।
অবশেষে স্তুপার কাছে পৌঁছে গেল। অভি আকাশের দিকে মুখ করে দু’হাত মুঠি করে মাথার ওপরে ছুঁড়ে চিৎকার করে উঠলো, "আই লাভ ইউ পরী..."
পরী অভিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল, পিঠের ওপরে মাথা রেখে গাল চেপে ধরল পিঠে। জ্যাকেটের ওপরে ঠোঁট চেপে ফিসফিস করে বলল, "আই লাভ ইউ অভিমন্যু।"
অভি ওর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওকে দুহাতে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে, ওর গোল মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমি সত্যি ভাগ্যবান, পরী। এই ট্রিপে তুমি আমার পাশে আছো, এই ট্রিপ টা আমার চিরকাল মনে থাকবে।"
পরী মুখ তুলে ওর দিকে তাকাল, অভি ওর মুখখানি আঁজলা করে হাতে নিয়ে ঠোঁট নামিয়ে আনল ওর লাল নরম ঠোঁটের ওপরে। পরী ওর জ্যাকেটের কলার মুঠোর মধ্যে নিয়ে, বুড়ো আঙ্গুলে ভর দিয়ে ঠোঁট নিয়ে গেল অভির ঠোঁটের কাছে। অভি পরীর পেছনে হাত দিয়ে চেপে ধরে, ওকে মাটি থেকে তুলে ধরল। অভির কাঁধে হাত রেখে নিজেকে আরও উঁচুতে উঠিয়ে নিল পরী। মাথা নিচু করে অভির ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট চেপে ধরল পরী। এক হাতে মাথার পেছনের চুল খামচে ধরল পরী। প্রেমের চুম্বন ক্রমে ঘনিভুত হয়ে ওঠে, প্রথমে শুধু ঠোঁট নিয়ে খেলা তারপরে পরী ওর জিবের ডগা দিয়ে আলতো করে চেটে দেয় অভির অধর। দু’হাতে পরীকে প্রাণপণে চেপে ধরে অভি, চুম্বন টিকে কেউ যেন আর থামাতে চায়না। হিমশীতল হিমালয়ের ক্রোরে দু’জনের ঠোঁটের মাঝে যেন আগুন জ্বলে ওঠে।
বেশ খানিকক্ষণ পরে পরী শ্বাস নেবার জন্য নিরুপায় হয়ে ঠোঁট ছেড়ে দেয়। অভি ওকে তখন কোলের ওপরে উঠিয়ে, পরী ওর দিকে লাজুক হেসে মিনতি করে মাটিতে নামাতে। অভি ওর কথায় কান না দিয়ে বুকের মাঝে চেপে ধরে মুখ, উত্তপ হয়ে ওঠে পরী। অভির মাথায় উষ্ণ নিঃশ্বাস ঢেউ খেলে বেড়ায়, দুহাতে ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে।
অভি দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, "রুমে ফিরতে চাও?"
পরী ওর চোখের দুষ্টু শয়তানি চাহনি দেখে বুঝতে পারে ও কি বলতে চাইছে, লাল হয়ে ওঠে পরীর মুখ, মাথা নাড়ায় পরী, "না, তোমার কি সব সময়ে চুমু খাবার পরে ফুটবল খেলার ইচ্ছে জাগে নাকি?"
অভি ওর বুকের মাঝে নাক ঘষে বলে, "তুমি এত নরম যে আমি কিছুতেই নিজেকে সংবরণ করে রাখতে পারিনা। সবসময়ে মনে হয় তোমাকে নিয়ে..."
পরী, "ধুর... নামাও এবারে আমাকে, তোমার হাত ব্যাথা করবে।"
পাহাড় থেকে নিচে নামার সময়ে অভি ওর পেছনে হাত দিয়ে আলতো থাপ্পর মারে, পরী ওর দিকে মৃদু রেগে তাকিয়ে বলে, "তুমি না সত্যি একদম যা তা। যেন কিছুতেই সবুর নেই, আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি? এই দিনের আলোতে এইরকম না করলে পারতে। আমি আর তোমার সাথে কথা বলব না।" এই বলে পরী হাসতে হাসতে এক দৌড়ে পাহাড় থেকে নিচে নেমে গেল। দুচোখ যেন ওর দিকে বলে গেল, "ধরতে পারলে ধর আমাকে।"
দুপুরের খাবার পরে দুজনে হোটেলের বারান্দায় বসে রোদের তাপ নেয়। অভি ওকে জিজ্ঞেস করল যে গ্রামে আর একবার হাটবে কিনা, পরী মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল না, ও এখন আর ঘুরতে চায় না, চুপচাপ অভির পাশে বসে থাকতে চায়।
পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, "কাল আমরা কোথায় যাব?"
অভি, "কাল সকালে আমরা ফেরার পরথ ধরব। কালকের মধ্যে আমরা মনে হয় না সিমলা বা কাল্কা পৌঁছতে পারব তাই মাঝপথে কোথাও আমরা থেকে যাবো।"
ফিরে যাবার কথা শুনে পরীর মুখ শুকিয়ে গেল, চেয়ার থেকে উঠে অভির কোলে গিয়ে বসে পড়ল। দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে থাকে পরী।
হালকা হেসে ভাবাবেগে অভির কানে কানে বলে, "জানো, আমার এই সব এখনো কেন জানি না, সব স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আমি যদি তোমাকে না পাই তাহলে কি হবে?"
অভি বুঝতে পারল যে পরী আবেগের বশে আবার না কান্না জুড়ে দেয় তাই কথা ঘুরিয়ে দিয়ে বলে, "আবার এই সব নিয়ে কথা কেন বলতে শুরু করলে। আবার যদি শুরু কর তাহলে কোলে তুলে লেকের মধ্যে ফেলে দেব।"