27-02-2019, 04:54 PM
পরবর্তী অভিযান
সাঙলা উপত্যকার একদম শেষ প্রান্তে একটি ছোট্ট গ্রাম চিতকুল। চিতকুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কোন মানুষকে বিমুগ্ধ করে দেবে। হোটেলের সামনে খালি ঘাসের মাঠ, তারপরে তুষারের ছিটে। বিয়াস নদীর বাঁ দিকের তীরে উঠেছে কিছু ছোটো ছোটো পাহাড়, সারা পাহাড়ের গায়ে বিশাল বিশাল পাইন দেবদারু আর শাল গাছ। মাথার ওপরে সূর্য কিন্তু রোদে যেন তেজ নেই, কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে নদীর দিক থেকে। সামনে কিছু দুরে বরফে ঢাকা একটি উঁচু পর্বত শৃঙ্গ। নদীর ডান দিকে উঠে গেছে একটি ঘাসে ঢাকা ন্যাড়া পাহার, পাহাড়ের মাথায় একটি গাছ যেন কঠোর পাহাড়ের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। চিতকুলে বিশেষ বড় কোন হোটেল নেই, কিছু ছোটো ছোটো কাঠের বাড়ি আর কিছু ছোটো ছোটো দোকান। গরম কালে এখানে কিছু পর্যটক ঘুরতে আসে কিছু শীতকালে এই দুর্গম স্থানে কেউ ঘুরতে আসে না। আই.টি.বি.পি. র একটি ছাওনি আছে চিতকুলে। চিতকুল গ্রাম থেকে অনেক দুরে চিনের সীমানা শুরু, তার ওপরে তিব্বেত শুরু। পর্যটক শুধু মাত্র ওই ছাওনি পর্যন্ত যেতে পারে তার আগে আর কাউকে যেতে দেওয়া হয় না।
অভি আর পরী বিয়াস নদীর তীরে হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াতে থাকে। পরীর পরনে তুঁতে রঙের শাড়ি, গায়ে ভারী সাদা জ্যাকেট আর গলায় শাল জড়িয়ে। কানে সোনার দুল, তাতে আবার দুটো পান্না জড়ানো।পরী ওর হাত বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে ওর দিকে মিটিমিটি করে হাসে। হাসিতে দু’গালে টোল পরে, আর সেই টোল দেখে অভির মনে হয় পরী যেন ঠিক স্বর্গের এক অপ্সরা। বারে বারে একটি চুলের গোছা ওর বাঁ গালের ওপরে চলে আসে আর বারে বারে পরী, বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে গোছা টাকে কানের ওপরে করে দেয়।
দুপুরের খাওয়ার সময়ে পরী নিরামিষ খেল। অভি ভাবল যে হয়ত জার্নির জন্য পরী নিরামিষ খেয়েছে, খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ কিছু জিজ্ঞেস করল না অভি। গল্প করতে করতে ওরা একে ওপরের ব্যাপারে অনেক কিছু জেনে নিল। পরীর প্রিয় রঙ তুঁতে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তে আর শরৎচন্দ্রের ছোটো গল্প পড়তে খুব ভালবাসে। অভির প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্রে। পরীর প্রিয় উপন্যাস শরৎচন্দ্রের "শ্রীকান্ত", গান ভালবাসে পরী, সেটা অভি বিয়ের দিনে দেখেছে যে পরী বেশ ভাল গান গায়। অভি ওর মুখের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে আর পরী ওর গল্প বলতে থাকে। অভি লক্ষ্য করল যে চিবুকে একটা ছোটো কাটা দাগ। অভি ওকে দাগটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাতে পরী জানায় যে ছোটো বেলায় একবার আম গাছে আম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পরে যায় আর ওর চিবুক কেটে যায়। আরও অনেক গল্প করল দু’জনে মিলে।
বল্বিন্দার ওদেরকে জিজ্ঞেস করল যে ওরা আর কোথাও যাবে কিনা। অভি জানাল যে সেইদিন ওরা আর কোথাও বের হবে না। হোটেলের ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারল যে, বেশ কিছু দুরে কারছাম ব্রিজ, তারপরে একটি জায়গা আছে নাম কল্পা। কল্পার নিচে রেকং পিও তে ওরা কেনাকাটি করতে পারে। পরীর চোখ চিকচিক করে উঠলো কেনাকাটির নাম শুনে। রেকং পিওর পরে স্পিতি উপত্যকা, হিমালয়ের মাঝে একটি হিমশীতল মরুস্থান। রাস্তা ঠিক থাকলে ওরা নাকো যেতে পারবে। পরী ওর দিকে তাকাল, অভি বুঝতে পারল যে পরী নাকো যেতে চায়। নাকো সমুদ্রতল থেকে প্রায় বারো হাজার ফুট উঁচুতে, সেখানে হিমের মতন ঠাণ্ডা পড়বে জানিয়ে দিল ম্যানেজার। পরীর নাক যেন কোন দুঃসাহসিক অভিযানের গন্ধ পেল, অভিকে আলতো ধাক্কা মেরে বুঝিয়ে দিল যে নাকো যেতে চায়।
খাবার পরে আবার ওরা নদীর তীরে গিয়ে বসে। পরীকে কোলে করে একটা বড় পাথরের ওপরে বসে অভি। অভির হাত বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে থাকে।
পরী, "নদিটা যেন গান গাইছে, জানো?"
অভি ওর মুখের দিকে চেয়ে বলে, "ধর আমরা যদি আর ফিরে না যাই। কেউ জানেনা আমরা এখানে আছি, সবাই ভাববে যে আমরা কোথাও হারিয়ে গেছি।"
বুকের ওপরে মাথা রেখে উত্তর দিল, "জীবন কোন পটে আঁকা ছবি নয়, অভি। আমাদের দু’জনেরই পরিবার আছে, যারা অধির উৎকণ্ঠায় আমাদের ফেরার পথ চেয়ে বসে আছে।"
অভি একটু ম্লান সুরে বলে, "মাঝে মাঝে আমার মনে হয় যে মা আমাকে একদম ভালবাসে না।"
চোখ তুলে ওর ম্লান মুখের দিকে তাকায় পরী, জিজ্ঞেস করে, "এই রকম কথা কেন বলছ?"
অভি, "মা বাবা আমার প্রতি সারা জীবন ভীষণ কড়া, তারপরে তুমি এলে মায়ের জীবনে। আজকাল ত মা সবসময়ে শুধু তোমার কথাই বলে।"
মিষ্টি হেসে পরী ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে, "সব মা তার সন্তানকে ভালবাসে অভি। আমার ছোটো মা খুব ভাল, অভি, আর তুমি আমাকে ঈর্ষা করো?"
অভি, "আমি জানি উনি তোমার ছোটো মা, কিন্তু মা সবসময়ে যেন ভালবাসা কে পয়সা দিয়ে বিচার করে। সবসময়ে আমাকে শোনাতে ছাড়ে না যে আমার পেছনে কত খরচ করেছেন। আমার পেছনে যে হেতু উনি টাকা খরচ করেছেন সেহেতু আমি ওদের কথা সর্বদা শুনব এই চান তারা।"
পরী বুঝতে পারল অভির মনের কষ্ট, সুন্দর স্বরনালী সন্ধ্যে টাকে নষ্ট করতে মন চাইল না পরীর। ও কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা, অভি, আমরা পুরো সময়টা কি এখানে ঘুরে কাটিয়ে দেব?"
ওর কথা শুনে অভি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিল, "মহারানী যেখানে আজ্ঞা করবেন সেখানে যাওয়া যাবে। আপনি যদি আগে যেতে চান তাহলে তাই হবে। আজ সোমবার, আমরা এখানে দুই রাত আরও কাটাতে পারি, মাঝে একদিন রেকংপিও তে গিয়ে তোমার কেনাকাটা ও সারা যাবে। তারপরে বুধবার নাগাদ আমরা বেড়িয়ে পড়ব নাকোর উদ্দেশ্যে। সেখানে শুক্রবার পর্যন্ত কাটিয়ে, শনিবার ফিরে আসব। কাল্কা পৌঁছনর আগে মাঝে কোথাও রাত কাটিয়ে দেব। রবিবার আমরা কাল্কা পৌঁছে যাব ঠিক তোমার ট্রেন ছাড়ার আগে। কেমন লাগল আমার পরিকল্পনা।"
পরী ওর কথা শুনে হাতের ওপরে চুমু খেয়ে বলে, "উম্মম্ম দারুন পরিকল্পনা। তোমার মাথা সত্যি দারুন।"
কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্য ডুবে গেল, শীতের সন্ধ্যে আর পাহাড়ের কোলে অন্ধকার, খুব তাড়াতাড়ি ওদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। নদীর তির ছেড়ে ওরা হোটেলে ঢুকে পড়ল। হোটেলের রুমে কোন টি.ভি. নেই তাই বিকেল বেলা চুপ করে বসে গল্প করা ছাড়া আর কিছু করার থাকেনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাপমান শূন্যর নিচে চলে গেল, রুমের ভেতরে দু দুটি হিটার জ্বলছে তা সত্তেও ঠাণ্ডা যেন বেড়েই চলেছে। পরীর ঠোঁটে হাসি লেগে আর চিতকুলের কথা।
কিছু পরে ম্যানেজার ওদের রুমে এসে রাতের খাবারের কথা জিজ্ঞেস করল, রাতে কি খাবে ওরা, চিকেন না মাটন। পরী জানাল যে ও নিরামিষ খাবে। সকালে নিরামিষ খেয়েছে আবার রাতে নিরামিষ খাবে শুনে অভির কেমন যেন খটকা লাগল।
পরী কে জিজ্ঞেস করল অভি, "দুপুরে নিরামিষ খেয়েছ সেটা না হয় বুঝলাম যে জার্নির ধকল গেছে তাই, কিন্তু রাতে নিরামিষ?"
পরী সুন্দর একটি হাসি দিয়ে উত্তর দিল, "তোমার জন্য অভি। সোমবার শিবের ব্রত রাখব আজ থেকে, সেই দিন পর্যন্ত রাখব যেদিন..."
কথাটা বলতে গিয়ে গলা ধরে এল পরীর, দু’চোখ একটু জলে চিকচিক করে উঠলো।
অভি ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, "যাঃ বোকা মেয়ে, এর জন্য কাঁদে নাকি... ধুর আমি ত তোমার পাশে আছি।"
রাতের খাওয়ার শেষে পরী একটা হাল্কা নীল রঙের স্লিপ পরে নিল, ঠাণ্ডার জন্য গায়ে ভারী গাউনটা চড়িয়ে নিল। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে মুখে রাতের প্রসাধনি মাখতে থাকে আর মাঝে মাঝে আয়নায় অভির দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। অভি পেছন থেকে দেখে পরীর নধর শরীর টিকে। পিঠের ওপরে ঢেউ খেলা কালো চুলের রাশি নেমে এসেছে কোমর পর্যন্ত। চওড়া পিঠ ক্রমশ সরু হয়ে আসে পাতলা কোমরে তারপর ফুলে ওঠে। ত্বকের সাথে যেন লেপটে আছে পাতলা স্লিপ টা। পরীর অঙ্গের প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি রেখা যেন ফুটে উঠেছে কাপড়ের ভেতর থেকে। ওই দৃশ্য দেখে বুকের ভেতর টা কেমন যেন করে উঠল অভির, মনে হল যেন দৌড়ে গিয়ে ওই পিঠের ওপরে চুমু খায়। ঠোঁট দুটি চুম্বনের ইশারা করে একটা ছোট্ট চুমু ছুঁড়ে দেয় ওর দিকে আর অভি সেটা লুফে নিয়ে বুকের ওপর চেপে ধরে। আঙ্গুল নাড়িয়ে পরীকে তাড়াতাড়ি শুতে আসতে আহ্বান জানায়। পরী মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, "সোনা একটু সবুর কর।"
এমনিতে অভি ডায়রি লেখে না, তবে ওর কাছে একটা খুব পুরানো ডায়রি আছে যেটাতে ও ছোটো বেলায় কবিতা বা ছোটো ছোটো গল্প লিখত। অভি সেই ডায়রিটা সঙ্গে এনেছিল, ভেবেছিল পরীর সাথে এই ভ্রমন কাহিনী লিখে রাখবে ওই ডায়রিতে। যখন ওরা বুড়ো হয়ে যাবে, তখন দুজনে মিলে একসাথে বসে পড়বে ওই ডায়রি আর এই সব সুন্দর দিন গুলর স্মৃতি চারন করবে।
প্রসাধনি শেষে, গায়ের গাউনটা খুলে ওর পাশে শুতে চলে এল পরী। অভির বাঁ দিকে শুয়ে ওর বুকের ওপরে মাথা রেখে ওর বাজু জড়িয়ে ধরল। বাজুর ওপরে অভি পরীর কোমল বুকের পরশ অনুভব করল।
পরী ওকে লিখতে দেখে জিজ্ঞেস করল, "কি লিখছ অভি?"
অভি, "আমাদের এই ভ্রমন কাহিনী লিখছি।"
পরী, "তুমি সাধারণত ত ডায়রি লেখ না, তাহলে?"
অভি, "হ্যাঁ আমি ডায়রি লিখি না ঠিকই, কিন্তু কেন জানিনা মনে হল এই ভ্রমন কাহিনী টা লেখা দরকার। মনে হল যে যখন আমাদের বয়স হয়ে যাবে, তখন হয়ত আমরা এই ডায়রি পরে এই সুন্দর ভ্রমনের কথা স্মৃতিচারণ করব।"
"তুমি খুব মিষ্টি" কিছু থেমে, বুকের ওপরে আঁচর কেটে বলে, "আচ্ছা আমার যখন বুড়ো হয়ে যাব, তখন আমাকে নিয়ে এখানে আসবে তুমি? আমি যদি তখন তোমাকে বলি যে এখানে আমার জন্য একটা কুঁড়ে ঘর বানিয়ে দাও তাহলে তুমি সেটা বানিয়ে দেবে?"
ডায়রি লেখা শেষ করে অভি ওকে জড়িয়ে ধরল। স্লিপের সামনের অংশ অনেকটা কাটা থাকার ফলে পরীর উন্নত বক্ষ যুগলের অধিকাংশ অনাবৃত ছিল, আর অভি ওর বাজুতে উষ্ণ ত্বকের স্পর্শ অনুভব করছিল। হাত দিয়ে পরীর কোমরের কোমলতা নিয়ে আদর করছিল অভি আর মাঝে মাঝে ওর নরম নারী মাংস টিপে দিচ্ছিল। মৃদু পেষণে পরীর শরীরের উত্তাপ ধিরে ধিরে বেড়ে উঠছিল। পরী ওর খালি বুকের ওপরে নখের ডগা দিয়ে আঁচর কাটতে থাকে, মাঝে মাঝে নাম লিখতে থাকে বুকের শক্ত পেশির ওপরে।
পরী, "মাঝে মাঝে আমার ছোটো বেলার কথা মনে পরে। তুমি হামাগুরি দিয়ে সারা বাড়ি বেড়াতে আর আমি তোমার পেছন পেছন দৌরাতাম। তারপরে যখন একটু বড় হলে তখন আমি তোমাকে টেনেটেনে নিয়ে যেতাম আমার সাথে।"
চুলের মধ্যে নাক গুঁজে বুক ভরে পরীর গায়ের গন্ধ নিল অভি। চুলের কিছু গোছা ওর মুখের ওপরে পড়েছিল, আঙ্গুল দিয়ে সরিয়ে দিল অভি যাতে চাঁদ টাকে আরও ভাল করে দেখা যায়।
পরী, "একদিনের কথা আমার খুব মনে আছে। তুমি সবে হাঁটতে শিখেছ আর আমি তোমাকে নিয়ে সারা বাড়ি খেলে বেড়াতাম, তোমার সাথে যেন আমার কত গল্প হত। সেই সব মাথামুণ্ডু হীন গল্প। একদিন আমি তোমাকে টানতে টানতে নিয়ে গেছিলাম পুকুর পারে, আমি একটা পুতুলের ঘর বানিয়েছিলাম সেটা তোমাকে দেখাব বলে। তুমি তখন ছোটো ছিলে, কিছুই বুঝতে না, তুমি এক লাথি মেরে আমার সেই পুতুলের ঘর ভেঙ্গে দিলে। আমি তাঁর স্বরে চেঁচিয়ে কান্না শুরু করে দিলাম আর তোমাকে মারতে শুরু করলাম। তুমিও মাটিতে বসে কান্না জুড়ে দিয়েছিলে। ইন্দ্রানিদি আমাদের কান্না শুনে দৌড়াতে দৌড়াতে পুকুর পাড়ে আসে আর তোমাকে কোলে তুলে আমাকে খুব বকতে শুরু করে দেয়। আমাকে ছেড়ে দিয়ে তোমাকে কোলে নিয়ে ইন্দ্রানিদি বাড়ির মধ্যে চলে যায়, আমি একা একা ওখানে বসে কাঁদতে থাকি। ছোটো মা সেই দিন কলেজ যাননি, আমার কান্না শুনে দৌড়ে আমার কাছে আসে আর আমাকে কোলে তুলে নেয়। আমাকে সান্তনা দিয়ে বলেন যে যখন আমরা দু’জনে বড় হব আর বুঝতে শিখব, তখন তুমি আমার জন্য একটা পুতুলের ঘর বানিয়ে দেবে। আমি কান্না থামিয়ে ছোটো মাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খাই।"
অভি, "হুম বুঝলাম যে তোমার ছোটো মা তোমাকে খুব ভালবাসে।"
পরী গলা একটু ধরে আসে, চোখ তুলে অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "অভি আমাকে আমার সেই পুতুলের ঘর বানিয়ে দেবে, যেখানে শুধু আমরা দু’জনে থাকব?"
পরীকে জড়িয়ে ধরে উত্তর দিল, "আমি তোমার সেই পুতুলের ঘর বানিয়ে দেব।"
অভি জানেনা এই প্রেমের কি পরিণতি হবে, কিন্তু পরীর কাজল কালো চোখে জল দেখে অভি কথা দিয়ে দিল। ইট কাঠ পাথর দিয়ে মানুষ বাড়ি বানাতে পারে কিন্তু ঘর বানাতে মানুষের ভালবাসার দরকার পরে আর অভির বুকের কাছে ওর ভালবাসা শুয়ে। দু’জনে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল।
পরের দু’দিন কেটে গেল চিতকুলে ঘুরে আর একে অপরের বাহু পাশে। বিনা বাধায় ওরা প্রেমের উদ্যানে কপোত কপোতীর মতন উড়তে থাকে। দু’জনের মনে মিলনে কোন বাধা থাকে না। লাজুক পরী কিন্তু একবারের জন্যেও অভিকে ওর সুন্দর শরীর দর্শন দেয়নি। প্রত্যেক মিলনের সময়ে গায়ে লেপ ঢাকা থাকত, অভি কোনমতেই পরীর লজ্জা খন্ডন করতে পারেনি। সময়ের সাথে দু’জনের মনে হল যেন দুজনের বুকের মাঝে হৃদয়ের মধ্যে এক আত্মা বইছে, শরীর আলাদা কিন্তু এক প্রান। অভি তৈরি সারা পৃথিবীর সাথে লড়াই করে পরীকে জিতে নেবার জন্য। প্রত্যেক সকালে যেন এক নতুন পরী বিছানা থেকে ওঠে। প্রত্যেক বার যখন পরী ওর দিকে তাকিয়ে হাসে তখন যেন মনে হয় যে হাসিটা কত নতুন কত মিষ্টি। চোখের চাহনি যেন আগের চেয়ে বেশি করে প্রেম ঝরিয়ে ওর দিকে তাকায়। আদর যেন আগের চেয়ে বেশি নিবিড় বেশি ঘন। বারে বারে যখন ওরা মিলন সাগরে ডুব দেয় তখন মনে হয় যেন পরীর আগের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত আর বেশি সিক্ত। অভি যেন প্রত্যেক বার আগের চেয়ে বেশি কঠিন আর বেশি উত্তপ্ত হয়ে যায়। চুম্বনে যেন আগের চেয়ে বেশি তিব্রতা, কামনার আগুন যেন প্রত্যেক বার নতুন করে জ্বলে ওঠে। বারে বারে পরীকে জড়িয়ে ধরে যেন পিষে ফেলে বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে চায়। শরীরের থেকে নির্গত ঘাম আর মধু মিশে একাকার হয়ে যায়।
বৃহস্পতি বার সকাল বেলা ওরা চিতকুল থেকে রওনা দেয় নাকোর পথে। অভি পরীকে বলে দিল যে নাকো তে হয়ত চিতকুলের চেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়তে পারে, কিন্তু পরী নাছরবান্দা, নাকো সে যাবেই। কিছু পরে গাড়ি কারছাম ব্রিজে পৌঁছে গেল। বিয়াস নদীর তুঁতে রঙের জল দেখে পরী অভিভুত, আগের বার যখন দেখেছিল তখন সন্ধ্যে নেমে এসেছিল। এবারে দিনের আলোতে নদীর জল দেখে পরী বেশ খুশি।
সূর্যের আলোয় একটু যেন তেজ। বল্বিন্দার তাঁর পটু হাতে গাড়ি চালাচ্ছে। আঁকা বাঁকা পথে গাড়ি পাহাড়ের গা বেয়ে এগিয়ে চলেছে। কিছু পরে ওরা পোয়ারি পৌঁছে গেল। পোয়ারি তে জানতে পারল যে অটাই শেষ পেট্রল পাম্প সুতরাং বল্বিন্দার গাড়ি থামিয়ে তেল ভরে নিল। দুপুর এগারটা নাগাদ ওরা রেকং পিও পৌঁছে গেল। রেকং পিও পাহাড়ের কোলে বেশ সাজান গোছান একটি ছোটো শহর। দোকান পসার দেখে পরীর মন চঞ্চল হয়ে উঠল, ওর অনেক কেনাকাটা করতে হবে। বিশেষ করে ছোটমা’র জন্য আর দিদার জন্য কিছু কিনবে।
একটি দোকানে দাঁড়িয়ে কিছু স্টোল দেখতে দেখতে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, "এই টা কেমন দেখতে?"
মাথা নাড়াল অভি, "হ্যাঁ ভালো দেখতে, তোমার গায়ের রঙের সাথে বেশ মানাবে।"
স্টোলটা গাড় নীল রঙের ওপরে সোনালি সুতোর কাজ করা ছিল। পরীর সেটা দেখে হয়ত ঠিক পছন্দ হল না, মাথা নেড়ে নাক কুঁচকে বলল, "না গো ভাল নয়।"
তারপরে আরও কিছু স্টোল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল সেগুলো কেমন। বেচারা অভি প্রত্যেক টি দেখে আর মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয় যে ভালো দেখতে। মেয়েদের কেনা কাটার ব্যাপারে ও অনভিজ্ঞ।
পরী ওর দিকে রেগেমেগে তাকিয়ে বলে, "তুমি একদম আমার দিকে দেখছ না। যা দেখাই তাতেই খালি গাধার মতন মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলছ। কিছু একটা বল কোনটা কিনব।"
অগত্যা অভি একটা স্টোল দেখিয়ে বলে, "এটা কেনো।"
সেটাও পরীর পছন্দ হয় না, অভি শেষ পর্যন্ত রেগে গিয়ে বলে, "কিনবে তুমি, পড়বে তুমি। আমি কি করে তোমার মনের কথা জানব, কোনটা তোমার ভাল লাগবে আর কোনটা মন্দ? যা ইচ্ছে হচ্ছে কিনে নাও নিজের জন্য।"
পরী একটু রেগে যায়, কোন রকমে একটা স্টোল কিনে নেয় নিজের জন্য। অভিকে বলে মায়ের জন্য কিছু কিনতে। অভি জানায় যে ওর কেনা কাটা বিশেষ ভাল লাগে না। যে কবার ও বেড়াতে গেছে কোন বার কারুর জন্য কিছু কিনে নিয়ে যায়নি।
পরী ওকে বলে, "অভি স্বভাব পাল্টাও, এবারে আমি এসে গেছি। কোথাও বেড়াতে গিয়ে যদি আমার জন্য কিছু না নিয়ে আস তাহলে কিন্তু ঘরে ঢুকতে দেব না।"
হেসে ফেলে অভি, "ওকে বাবা, তোমার কথা আলাদা। তোমার জন্য কিনব না সেটা কি হতে পারে।"
পরী, "হ্যাঁ হ্যাঁ, অনেক হয়েছে, এখুনি তার একটা ছোটো নমুনা দেখিয়ে দিলে।"
কেনা কাটা সেরে পরীকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বসতে বলে কোথাও চলে গেল। পরীর জন্য একটা ছোটো বুদ্ধের মূর্তি কিনল আর সেটা নিজের জ্যাকেটের পকেটে লুকিয়ে রাখল। নাকো পৌঁছে ওকে অবাক করে দেবে অভি।
রেকং পিও তে দুপুরের খাবার সেরে ওরা যাত্রা শুরু করল নাকোর দিকে। বল্বিন্দার জানাল যে ঘন্টা তিন চার লাগবে রেকং পিও থেকে নাকো পৌঁছতে। কিছু পরে স্পিলো নামে একটি জায়গার পরে পাহাড়ের রঙ বদলে গেল। আগে দুপাসের পাহাড় ছিল সবুজে ঢাকা, কোথাও ঘাস কোথাও গাছ। কিন্তু এখন দুপাসের পাহাড় ন্যাড়া, ধুসর রঙ। রাস্তার অবস্থা বিশেষ ভালো নয়। রাস্তার বড় পাথুরে আর ভঙ্গুর, কোথাও কোথাও রাস্তা একপাস ভেঙ্গে নিচে শতদ্রু নদীতে মিশে গেছে। একদিকের পাহাড় থেকে ঝুরঝুর করে নুড়ি পাথর আর বাল ঝরে পড়ছে। বল্বিন্দার খুব সাবধানে সেই ভঙ্গুর সাঙ্ঘাতিক রাস্তা দিয়ে অতি সাবধানে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সাঙলা উপত্যকার একদম শেষ প্রান্তে একটি ছোট্ট গ্রাম চিতকুল। চিতকুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কোন মানুষকে বিমুগ্ধ করে দেবে। হোটেলের সামনে খালি ঘাসের মাঠ, তারপরে তুষারের ছিটে। বিয়াস নদীর বাঁ দিকের তীরে উঠেছে কিছু ছোটো ছোটো পাহাড়, সারা পাহাড়ের গায়ে বিশাল বিশাল পাইন দেবদারু আর শাল গাছ। মাথার ওপরে সূর্য কিন্তু রোদে যেন তেজ নেই, কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে নদীর দিক থেকে। সামনে কিছু দুরে বরফে ঢাকা একটি উঁচু পর্বত শৃঙ্গ। নদীর ডান দিকে উঠে গেছে একটি ঘাসে ঢাকা ন্যাড়া পাহার, পাহাড়ের মাথায় একটি গাছ যেন কঠোর পাহাড়ের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। চিতকুলে বিশেষ বড় কোন হোটেল নেই, কিছু ছোটো ছোটো কাঠের বাড়ি আর কিছু ছোটো ছোটো দোকান। গরম কালে এখানে কিছু পর্যটক ঘুরতে আসে কিছু শীতকালে এই দুর্গম স্থানে কেউ ঘুরতে আসে না। আই.টি.বি.পি. র একটি ছাওনি আছে চিতকুলে। চিতকুল গ্রাম থেকে অনেক দুরে চিনের সীমানা শুরু, তার ওপরে তিব্বেত শুরু। পর্যটক শুধু মাত্র ওই ছাওনি পর্যন্ত যেতে পারে তার আগে আর কাউকে যেতে দেওয়া হয় না।
অভি আর পরী বিয়াস নদীর তীরে হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াতে থাকে। পরীর পরনে তুঁতে রঙের শাড়ি, গায়ে ভারী সাদা জ্যাকেট আর গলায় শাল জড়িয়ে। কানে সোনার দুল, তাতে আবার দুটো পান্না জড়ানো।পরী ওর হাত বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে ওর দিকে মিটিমিটি করে হাসে। হাসিতে দু’গালে টোল পরে, আর সেই টোল দেখে অভির মনে হয় পরী যেন ঠিক স্বর্গের এক অপ্সরা। বারে বারে একটি চুলের গোছা ওর বাঁ গালের ওপরে চলে আসে আর বারে বারে পরী, বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে গোছা টাকে কানের ওপরে করে দেয়।
দুপুরের খাওয়ার সময়ে পরী নিরামিষ খেল। অভি ভাবল যে হয়ত জার্নির জন্য পরী নিরামিষ খেয়েছে, খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ কিছু জিজ্ঞেস করল না অভি। গল্প করতে করতে ওরা একে ওপরের ব্যাপারে অনেক কিছু জেনে নিল। পরীর প্রিয় রঙ তুঁতে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তে আর শরৎচন্দ্রের ছোটো গল্প পড়তে খুব ভালবাসে। অভির প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্রে। পরীর প্রিয় উপন্যাস শরৎচন্দ্রের "শ্রীকান্ত", গান ভালবাসে পরী, সেটা অভি বিয়ের দিনে দেখেছে যে পরী বেশ ভাল গান গায়। অভি ওর মুখের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে আর পরী ওর গল্প বলতে থাকে। অভি লক্ষ্য করল যে চিবুকে একটা ছোটো কাটা দাগ। অভি ওকে দাগটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাতে পরী জানায় যে ছোটো বেলায় একবার আম গাছে আম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পরে যায় আর ওর চিবুক কেটে যায়। আরও অনেক গল্প করল দু’জনে মিলে।
বল্বিন্দার ওদেরকে জিজ্ঞেস করল যে ওরা আর কোথাও যাবে কিনা। অভি জানাল যে সেইদিন ওরা আর কোথাও বের হবে না। হোটেলের ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারল যে, বেশ কিছু দুরে কারছাম ব্রিজ, তারপরে একটি জায়গা আছে নাম কল্পা। কল্পার নিচে রেকং পিও তে ওরা কেনাকাটি করতে পারে। পরীর চোখ চিকচিক করে উঠলো কেনাকাটির নাম শুনে। রেকং পিওর পরে স্পিতি উপত্যকা, হিমালয়ের মাঝে একটি হিমশীতল মরুস্থান। রাস্তা ঠিক থাকলে ওরা নাকো যেতে পারবে। পরী ওর দিকে তাকাল, অভি বুঝতে পারল যে পরী নাকো যেতে চায়। নাকো সমুদ্রতল থেকে প্রায় বারো হাজার ফুট উঁচুতে, সেখানে হিমের মতন ঠাণ্ডা পড়বে জানিয়ে দিল ম্যানেজার। পরীর নাক যেন কোন দুঃসাহসিক অভিযানের গন্ধ পেল, অভিকে আলতো ধাক্কা মেরে বুঝিয়ে দিল যে নাকো যেতে চায়।
খাবার পরে আবার ওরা নদীর তীরে গিয়ে বসে। পরীকে কোলে করে একটা বড় পাথরের ওপরে বসে অভি। অভির হাত বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে থাকে।
পরী, "নদিটা যেন গান গাইছে, জানো?"
অভি ওর মুখের দিকে চেয়ে বলে, "ধর আমরা যদি আর ফিরে না যাই। কেউ জানেনা আমরা এখানে আছি, সবাই ভাববে যে আমরা কোথাও হারিয়ে গেছি।"
বুকের ওপরে মাথা রেখে উত্তর দিল, "জীবন কোন পটে আঁকা ছবি নয়, অভি। আমাদের দু’জনেরই পরিবার আছে, যারা অধির উৎকণ্ঠায় আমাদের ফেরার পথ চেয়ে বসে আছে।"
অভি একটু ম্লান সুরে বলে, "মাঝে মাঝে আমার মনে হয় যে মা আমাকে একদম ভালবাসে না।"
চোখ তুলে ওর ম্লান মুখের দিকে তাকায় পরী, জিজ্ঞেস করে, "এই রকম কথা কেন বলছ?"
অভি, "মা বাবা আমার প্রতি সারা জীবন ভীষণ কড়া, তারপরে তুমি এলে মায়ের জীবনে। আজকাল ত মা সবসময়ে শুধু তোমার কথাই বলে।"
মিষ্টি হেসে পরী ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে, "সব মা তার সন্তানকে ভালবাসে অভি। আমার ছোটো মা খুব ভাল, অভি, আর তুমি আমাকে ঈর্ষা করো?"
অভি, "আমি জানি উনি তোমার ছোটো মা, কিন্তু মা সবসময়ে যেন ভালবাসা কে পয়সা দিয়ে বিচার করে। সবসময়ে আমাকে শোনাতে ছাড়ে না যে আমার পেছনে কত খরচ করেছেন। আমার পেছনে যে হেতু উনি টাকা খরচ করেছেন সেহেতু আমি ওদের কথা সর্বদা শুনব এই চান তারা।"
পরী বুঝতে পারল অভির মনের কষ্ট, সুন্দর স্বরনালী সন্ধ্যে টাকে নষ্ট করতে মন চাইল না পরীর। ও কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা, অভি, আমরা পুরো সময়টা কি এখানে ঘুরে কাটিয়ে দেব?"
ওর কথা শুনে অভি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিল, "মহারানী যেখানে আজ্ঞা করবেন সেখানে যাওয়া যাবে। আপনি যদি আগে যেতে চান তাহলে তাই হবে। আজ সোমবার, আমরা এখানে দুই রাত আরও কাটাতে পারি, মাঝে একদিন রেকংপিও তে গিয়ে তোমার কেনাকাটা ও সারা যাবে। তারপরে বুধবার নাগাদ আমরা বেড়িয়ে পড়ব নাকোর উদ্দেশ্যে। সেখানে শুক্রবার পর্যন্ত কাটিয়ে, শনিবার ফিরে আসব। কাল্কা পৌঁছনর আগে মাঝে কোথাও রাত কাটিয়ে দেব। রবিবার আমরা কাল্কা পৌঁছে যাব ঠিক তোমার ট্রেন ছাড়ার আগে। কেমন লাগল আমার পরিকল্পনা।"
পরী ওর কথা শুনে হাতের ওপরে চুমু খেয়ে বলে, "উম্মম্ম দারুন পরিকল্পনা। তোমার মাথা সত্যি দারুন।"
কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্য ডুবে গেল, শীতের সন্ধ্যে আর পাহাড়ের কোলে অন্ধকার, খুব তাড়াতাড়ি ওদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। নদীর তির ছেড়ে ওরা হোটেলে ঢুকে পড়ল। হোটেলের রুমে কোন টি.ভি. নেই তাই বিকেল বেলা চুপ করে বসে গল্প করা ছাড়া আর কিছু করার থাকেনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাপমান শূন্যর নিচে চলে গেল, রুমের ভেতরে দু দুটি হিটার জ্বলছে তা সত্তেও ঠাণ্ডা যেন বেড়েই চলেছে। পরীর ঠোঁটে হাসি লেগে আর চিতকুলের কথা।
কিছু পরে ম্যানেজার ওদের রুমে এসে রাতের খাবারের কথা জিজ্ঞেস করল, রাতে কি খাবে ওরা, চিকেন না মাটন। পরী জানাল যে ও নিরামিষ খাবে। সকালে নিরামিষ খেয়েছে আবার রাতে নিরামিষ খাবে শুনে অভির কেমন যেন খটকা লাগল।
পরী কে জিজ্ঞেস করল অভি, "দুপুরে নিরামিষ খেয়েছ সেটা না হয় বুঝলাম যে জার্নির ধকল গেছে তাই, কিন্তু রাতে নিরামিষ?"
পরী সুন্দর একটি হাসি দিয়ে উত্তর দিল, "তোমার জন্য অভি। সোমবার শিবের ব্রত রাখব আজ থেকে, সেই দিন পর্যন্ত রাখব যেদিন..."
কথাটা বলতে গিয়ে গলা ধরে এল পরীর, দু’চোখ একটু জলে চিকচিক করে উঠলো।
অভি ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, "যাঃ বোকা মেয়ে, এর জন্য কাঁদে নাকি... ধুর আমি ত তোমার পাশে আছি।"
রাতের খাওয়ার শেষে পরী একটা হাল্কা নীল রঙের স্লিপ পরে নিল, ঠাণ্ডার জন্য গায়ে ভারী গাউনটা চড়িয়ে নিল। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে মুখে রাতের প্রসাধনি মাখতে থাকে আর মাঝে মাঝে আয়নায় অভির দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। অভি পেছন থেকে দেখে পরীর নধর শরীর টিকে। পিঠের ওপরে ঢেউ খেলা কালো চুলের রাশি নেমে এসেছে কোমর পর্যন্ত। চওড়া পিঠ ক্রমশ সরু হয়ে আসে পাতলা কোমরে তারপর ফুলে ওঠে। ত্বকের সাথে যেন লেপটে আছে পাতলা স্লিপ টা। পরীর অঙ্গের প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি রেখা যেন ফুটে উঠেছে কাপড়ের ভেতর থেকে। ওই দৃশ্য দেখে বুকের ভেতর টা কেমন যেন করে উঠল অভির, মনে হল যেন দৌড়ে গিয়ে ওই পিঠের ওপরে চুমু খায়। ঠোঁট দুটি চুম্বনের ইশারা করে একটা ছোট্ট চুমু ছুঁড়ে দেয় ওর দিকে আর অভি সেটা লুফে নিয়ে বুকের ওপর চেপে ধরে। আঙ্গুল নাড়িয়ে পরীকে তাড়াতাড়ি শুতে আসতে আহ্বান জানায়। পরী মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, "সোনা একটু সবুর কর।"
এমনিতে অভি ডায়রি লেখে না, তবে ওর কাছে একটা খুব পুরানো ডায়রি আছে যেটাতে ও ছোটো বেলায় কবিতা বা ছোটো ছোটো গল্প লিখত। অভি সেই ডায়রিটা সঙ্গে এনেছিল, ভেবেছিল পরীর সাথে এই ভ্রমন কাহিনী লিখে রাখবে ওই ডায়রিতে। যখন ওরা বুড়ো হয়ে যাবে, তখন দুজনে মিলে একসাথে বসে পড়বে ওই ডায়রি আর এই সব সুন্দর দিন গুলর স্মৃতি চারন করবে।
প্রসাধনি শেষে, গায়ের গাউনটা খুলে ওর পাশে শুতে চলে এল পরী। অভির বাঁ দিকে শুয়ে ওর বুকের ওপরে মাথা রেখে ওর বাজু জড়িয়ে ধরল। বাজুর ওপরে অভি পরীর কোমল বুকের পরশ অনুভব করল।
পরী ওকে লিখতে দেখে জিজ্ঞেস করল, "কি লিখছ অভি?"
অভি, "আমাদের এই ভ্রমন কাহিনী লিখছি।"
পরী, "তুমি সাধারণত ত ডায়রি লেখ না, তাহলে?"
অভি, "হ্যাঁ আমি ডায়রি লিখি না ঠিকই, কিন্তু কেন জানিনা মনে হল এই ভ্রমন কাহিনী টা লেখা দরকার। মনে হল যে যখন আমাদের বয়স হয়ে যাবে, তখন হয়ত আমরা এই ডায়রি পরে এই সুন্দর ভ্রমনের কথা স্মৃতিচারণ করব।"
"তুমি খুব মিষ্টি" কিছু থেমে, বুকের ওপরে আঁচর কেটে বলে, "আচ্ছা আমার যখন বুড়ো হয়ে যাব, তখন আমাকে নিয়ে এখানে আসবে তুমি? আমি যদি তখন তোমাকে বলি যে এখানে আমার জন্য একটা কুঁড়ে ঘর বানিয়ে দাও তাহলে তুমি সেটা বানিয়ে দেবে?"
ডায়রি লেখা শেষ করে অভি ওকে জড়িয়ে ধরল। স্লিপের সামনের অংশ অনেকটা কাটা থাকার ফলে পরীর উন্নত বক্ষ যুগলের অধিকাংশ অনাবৃত ছিল, আর অভি ওর বাজুতে উষ্ণ ত্বকের স্পর্শ অনুভব করছিল। হাত দিয়ে পরীর কোমরের কোমলতা নিয়ে আদর করছিল অভি আর মাঝে মাঝে ওর নরম নারী মাংস টিপে দিচ্ছিল। মৃদু পেষণে পরীর শরীরের উত্তাপ ধিরে ধিরে বেড়ে উঠছিল। পরী ওর খালি বুকের ওপরে নখের ডগা দিয়ে আঁচর কাটতে থাকে, মাঝে মাঝে নাম লিখতে থাকে বুকের শক্ত পেশির ওপরে।
পরী, "মাঝে মাঝে আমার ছোটো বেলার কথা মনে পরে। তুমি হামাগুরি দিয়ে সারা বাড়ি বেড়াতে আর আমি তোমার পেছন পেছন দৌরাতাম। তারপরে যখন একটু বড় হলে তখন আমি তোমাকে টেনেটেনে নিয়ে যেতাম আমার সাথে।"
চুলের মধ্যে নাক গুঁজে বুক ভরে পরীর গায়ের গন্ধ নিল অভি। চুলের কিছু গোছা ওর মুখের ওপরে পড়েছিল, আঙ্গুল দিয়ে সরিয়ে দিল অভি যাতে চাঁদ টাকে আরও ভাল করে দেখা যায়।
পরী, "একদিনের কথা আমার খুব মনে আছে। তুমি সবে হাঁটতে শিখেছ আর আমি তোমাকে নিয়ে সারা বাড়ি খেলে বেড়াতাম, তোমার সাথে যেন আমার কত গল্প হত। সেই সব মাথামুণ্ডু হীন গল্প। একদিন আমি তোমাকে টানতে টানতে নিয়ে গেছিলাম পুকুর পারে, আমি একটা পুতুলের ঘর বানিয়েছিলাম সেটা তোমাকে দেখাব বলে। তুমি তখন ছোটো ছিলে, কিছুই বুঝতে না, তুমি এক লাথি মেরে আমার সেই পুতুলের ঘর ভেঙ্গে দিলে। আমি তাঁর স্বরে চেঁচিয়ে কান্না শুরু করে দিলাম আর তোমাকে মারতে শুরু করলাম। তুমিও মাটিতে বসে কান্না জুড়ে দিয়েছিলে। ইন্দ্রানিদি আমাদের কান্না শুনে দৌড়াতে দৌড়াতে পুকুর পাড়ে আসে আর তোমাকে কোলে তুলে আমাকে খুব বকতে শুরু করে দেয়। আমাকে ছেড়ে দিয়ে তোমাকে কোলে নিয়ে ইন্দ্রানিদি বাড়ির মধ্যে চলে যায়, আমি একা একা ওখানে বসে কাঁদতে থাকি। ছোটো মা সেই দিন কলেজ যাননি, আমার কান্না শুনে দৌড়ে আমার কাছে আসে আর আমাকে কোলে তুলে নেয়। আমাকে সান্তনা দিয়ে বলেন যে যখন আমরা দু’জনে বড় হব আর বুঝতে শিখব, তখন তুমি আমার জন্য একটা পুতুলের ঘর বানিয়ে দেবে। আমি কান্না থামিয়ে ছোটো মাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খাই।"
অভি, "হুম বুঝলাম যে তোমার ছোটো মা তোমাকে খুব ভালবাসে।"
পরী গলা একটু ধরে আসে, চোখ তুলে অভির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "অভি আমাকে আমার সেই পুতুলের ঘর বানিয়ে দেবে, যেখানে শুধু আমরা দু’জনে থাকব?"
পরীকে জড়িয়ে ধরে উত্তর দিল, "আমি তোমার সেই পুতুলের ঘর বানিয়ে দেব।"
অভি জানেনা এই প্রেমের কি পরিণতি হবে, কিন্তু পরীর কাজল কালো চোখে জল দেখে অভি কথা দিয়ে দিল। ইট কাঠ পাথর দিয়ে মানুষ বাড়ি বানাতে পারে কিন্তু ঘর বানাতে মানুষের ভালবাসার দরকার পরে আর অভির বুকের কাছে ওর ভালবাসা শুয়ে। দু’জনে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল।
পরের দু’দিন কেটে গেল চিতকুলে ঘুরে আর একে অপরের বাহু পাশে। বিনা বাধায় ওরা প্রেমের উদ্যানে কপোত কপোতীর মতন উড়তে থাকে। দু’জনের মনে মিলনে কোন বাধা থাকে না। লাজুক পরী কিন্তু একবারের জন্যেও অভিকে ওর সুন্দর শরীর দর্শন দেয়নি। প্রত্যেক মিলনের সময়ে গায়ে লেপ ঢাকা থাকত, অভি কোনমতেই পরীর লজ্জা খন্ডন করতে পারেনি। সময়ের সাথে দু’জনের মনে হল যেন দুজনের বুকের মাঝে হৃদয়ের মধ্যে এক আত্মা বইছে, শরীর আলাদা কিন্তু এক প্রান। অভি তৈরি সারা পৃথিবীর সাথে লড়াই করে পরীকে জিতে নেবার জন্য। প্রত্যেক সকালে যেন এক নতুন পরী বিছানা থেকে ওঠে। প্রত্যেক বার যখন পরী ওর দিকে তাকিয়ে হাসে তখন যেন মনে হয় যে হাসিটা কত নতুন কত মিষ্টি। চোখের চাহনি যেন আগের চেয়ে বেশি করে প্রেম ঝরিয়ে ওর দিকে তাকায়। আদর যেন আগের চেয়ে বেশি নিবিড় বেশি ঘন। বারে বারে যখন ওরা মিলন সাগরে ডুব দেয় তখন মনে হয় যেন পরীর আগের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত আর বেশি সিক্ত। অভি যেন প্রত্যেক বার আগের চেয়ে বেশি কঠিন আর বেশি উত্তপ্ত হয়ে যায়। চুম্বনে যেন আগের চেয়ে বেশি তিব্রতা, কামনার আগুন যেন প্রত্যেক বার নতুন করে জ্বলে ওঠে। বারে বারে পরীকে জড়িয়ে ধরে যেন পিষে ফেলে বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে চায়। শরীরের থেকে নির্গত ঘাম আর মধু মিশে একাকার হয়ে যায়।
বৃহস্পতি বার সকাল বেলা ওরা চিতকুল থেকে রওনা দেয় নাকোর পথে। অভি পরীকে বলে দিল যে নাকো তে হয়ত চিতকুলের চেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়তে পারে, কিন্তু পরী নাছরবান্দা, নাকো সে যাবেই। কিছু পরে গাড়ি কারছাম ব্রিজে পৌঁছে গেল। বিয়াস নদীর তুঁতে রঙের জল দেখে পরী অভিভুত, আগের বার যখন দেখেছিল তখন সন্ধ্যে নেমে এসেছিল। এবারে দিনের আলোতে নদীর জল দেখে পরী বেশ খুশি।
সূর্যের আলোয় একটু যেন তেজ। বল্বিন্দার তাঁর পটু হাতে গাড়ি চালাচ্ছে। আঁকা বাঁকা পথে গাড়ি পাহাড়ের গা বেয়ে এগিয়ে চলেছে। কিছু পরে ওরা পোয়ারি পৌঁছে গেল। পোয়ারি তে জানতে পারল যে অটাই শেষ পেট্রল পাম্প সুতরাং বল্বিন্দার গাড়ি থামিয়ে তেল ভরে নিল। দুপুর এগারটা নাগাদ ওরা রেকং পিও পৌঁছে গেল। রেকং পিও পাহাড়ের কোলে বেশ সাজান গোছান একটি ছোটো শহর। দোকান পসার দেখে পরীর মন চঞ্চল হয়ে উঠল, ওর অনেক কেনাকাটা করতে হবে। বিশেষ করে ছোটমা’র জন্য আর দিদার জন্য কিছু কিনবে।
একটি দোকানে দাঁড়িয়ে কিছু স্টোল দেখতে দেখতে পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, "এই টা কেমন দেখতে?"
মাথা নাড়াল অভি, "হ্যাঁ ভালো দেখতে, তোমার গায়ের রঙের সাথে বেশ মানাবে।"
স্টোলটা গাড় নীল রঙের ওপরে সোনালি সুতোর কাজ করা ছিল। পরীর সেটা দেখে হয়ত ঠিক পছন্দ হল না, মাথা নেড়ে নাক কুঁচকে বলল, "না গো ভাল নয়।"
তারপরে আরও কিছু স্টোল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল সেগুলো কেমন। বেচারা অভি প্রত্যেক টি দেখে আর মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয় যে ভালো দেখতে। মেয়েদের কেনা কাটার ব্যাপারে ও অনভিজ্ঞ।
পরী ওর দিকে রেগেমেগে তাকিয়ে বলে, "তুমি একদম আমার দিকে দেখছ না। যা দেখাই তাতেই খালি গাধার মতন মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলছ। কিছু একটা বল কোনটা কিনব।"
অগত্যা অভি একটা স্টোল দেখিয়ে বলে, "এটা কেনো।"
সেটাও পরীর পছন্দ হয় না, অভি শেষ পর্যন্ত রেগে গিয়ে বলে, "কিনবে তুমি, পড়বে তুমি। আমি কি করে তোমার মনের কথা জানব, কোনটা তোমার ভাল লাগবে আর কোনটা মন্দ? যা ইচ্ছে হচ্ছে কিনে নাও নিজের জন্য।"
পরী একটু রেগে যায়, কোন রকমে একটা স্টোল কিনে নেয় নিজের জন্য। অভিকে বলে মায়ের জন্য কিছু কিনতে। অভি জানায় যে ওর কেনা কাটা বিশেষ ভাল লাগে না। যে কবার ও বেড়াতে গেছে কোন বার কারুর জন্য কিছু কিনে নিয়ে যায়নি।
পরী ওকে বলে, "অভি স্বভাব পাল্টাও, এবারে আমি এসে গেছি। কোথাও বেড়াতে গিয়ে যদি আমার জন্য কিছু না নিয়ে আস তাহলে কিন্তু ঘরে ঢুকতে দেব না।"
হেসে ফেলে অভি, "ওকে বাবা, তোমার কথা আলাদা। তোমার জন্য কিনব না সেটা কি হতে পারে।"
পরী, "হ্যাঁ হ্যাঁ, অনেক হয়েছে, এখুনি তার একটা ছোটো নমুনা দেখিয়ে দিলে।"
কেনা কাটা সেরে পরীকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বসতে বলে কোথাও চলে গেল। পরীর জন্য একটা ছোটো বুদ্ধের মূর্তি কিনল আর সেটা নিজের জ্যাকেটের পকেটে লুকিয়ে রাখল। নাকো পৌঁছে ওকে অবাক করে দেবে অভি।
রেকং পিও তে দুপুরের খাবার সেরে ওরা যাত্রা শুরু করল নাকোর দিকে। বল্বিন্দার জানাল যে ঘন্টা তিন চার লাগবে রেকং পিও থেকে নাকো পৌঁছতে। কিছু পরে স্পিলো নামে একটি জায়গার পরে পাহাড়ের রঙ বদলে গেল। আগে দুপাসের পাহাড় ছিল সবুজে ঢাকা, কোথাও ঘাস কোথাও গাছ। কিন্তু এখন দুপাসের পাহাড় ন্যাড়া, ধুসর রঙ। রাস্তার অবস্থা বিশেষ ভালো নয়। রাস্তার বড় পাথুরে আর ভঙ্গুর, কোথাও কোথাও রাস্তা একপাস ভেঙ্গে নিচে শতদ্রু নদীতে মিশে গেছে। একদিকের পাহাড় থেকে ঝুরঝুর করে নুড়ি পাথর আর বাল ঝরে পড়ছে। বল্বিন্দার খুব সাবধানে সেই ভঙ্গুর সাঙ্ঘাতিক রাস্তা দিয়ে অতি সাবধানে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।