26-06-2020, 06:41 PM
(This post was last modified: 13-02-2021, 12:57 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।১৪।।
রিজানুর আহমেদ সাহেব মারা গেলেন।ডাকসাইটে দারোগা পাঁচের কোঠায় এসেও দিব্য দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।ডিউটি থেকে ফিরে রাতে বিবির হাতে রান্না করা চিতল মাছের পেটির ঝোল দিয়ে পেট ভরে তৃপ্তিকরে খেলেন।রহিমাবিবির রান্নার হাত ভারী চমৎকার। ঢেকুর তুলে একটা মোদকের ডেলা মুখে পুরে জলজ্যান্ত মানুষটা বিবিকে নিয়ে শুতে গেলেন। পাশের ঘরে ছেলে মইদুলের সংগে পাল্লা দিয়ে এই বয়সে বিবির সঙ্গে যা যা করার সবই করলেন,কোন খামতি রাখলেন না।অবশ্য যোয়ান ছেলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া এই বয়সে সাধ্য কি?দারোগা সাহেব নেমাজ আদায়ে একদিন ভুল হলেও বিবিরে রমণ করেন নিয়মিত। হায়েজ হলেও বিরতি নাই।একটা নেশার মত।বড় মইদুল ইতিমধ্যে দুই বেটার বাপ।একটাকে এ বছর প্রাইমারিতে ভর্তি করেছে আর একটা এখনো বাপের মত মুমতাজের দুধ খায়।
--আপনে আর কতদিন চালাইবেন,এখনো আপনের ইচ্ছা মরে নাই?স্বামীরে বুকের উপর নিয়ে রহিমাবেগম জিজ্ঞেস করে।
--যতদিন ইন্তেকাল না হয়,কেন তোর ভাল লাগে না?
--আমি কি সেই কথা বলেছি? তবে আগের মত সুখ পাইনা।
--তোর এখন একটা যোয়ান দরকার--।
--তোবা তোবা।আপনের মুখের কোন রাখঢাক নাই।যা মুখে আসে কন।
কথা বলতে বলতে রিজানুরের তখন চরম অবস্থা,দাতে দাত চেপে হি-ই-ই-ই করে গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে বিবিকে জড়িয়ে ধরেন। তারপর একটু স্থির এবং ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে থাকেন। স্বামীর পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে রহিমা বলে, আপনের হয়ে গেছে?
--কেন বুঝতে পারিস নাই?
--অখন খুব কম বের হয় ভাল মত টের পাইনা।
সকালবেলা রহিমাবিবি ঘুম থেকে উঠে গায়ের আউলানো কাপড় চোপড় ঠিক করে পাশে স্বামীর দিকে তাকিয়ে কপালে ভাঁজ পড়ে। গায়ে হাত দিয়ে দেখেন অসাড় দেহ হাতের তালু উলটে নাকের নীচে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন।বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে, হায় তার কপাল পুড়েছে। চিৎকার করে ছেলেকে ডাকেন, দুলু মিঞা-আ-আ।
মার চিৎকারে মুমতাজকে বুক থেকে ঠেলে নামিয়ে দিয়ে মইদুল উঠে বসে বিছানায়।সারা বাড়ির লোকজন উঠে পড়ে। ডাক্তার ডাকা হয়,ডেথ সার্টিফিকেট লিখে ডাক্তার বিদায় নিলেন।রিজানুর কথা রেখেছেন ইন্তেকালের কয়েক মুহূর্ত আগেও বিবির সাথে সহবাস করে গেছেন।জানাশোনা অনেকে শোক-সমবেদনা জানাতে এসেছিল,অনেকে আসে নাই।
বছর খানেক আগের কথা।যা গেছে তা নিয়ে বসে থাকলে হবে যা আছে তা শুনবে কেন? শোক কাটিয়ে আগোছালো সংসার আবার সাজিয়ে ফেলেন রহিমাবিবি। হাতের কোন কাজ বাকী রাখেন নি রিজানুর সাহেব। এক মেয়ে ফরজানার বিয়ে দিয়েছেন নেত্রকোনায়,বড় ছেলে মইদুলের চাকরি করে দিয়েছেন সরকারী অফিসে। ছোট ছেলে সইদুল কলেজে পড়ে। বিশাল বাড়ির একতলা ভাড়া দিয়েছেন।কিছু সরকারী মুলাজিন মেস করে থাকে।রিজানুর সাহেব নেই কিন্তু এই বাড়ি এখনো দারোগা বাড়ি বলে লোকে এক কথায় চেনে।
দুই নাতি নিয়ে রহিমাবিবির ভালই কাটে,একটাই দুঃখ বছর তিনেকের বেশি হবে ফরজানার বিয়ে হয়েছে।পেটের উপরে চর্বি জমছে কিন্তু ভিতরে প্রাণ আসল না। সেবার মেয়ে-জামাই এসেছিল, আনন্দ ফুর্তি করল রফিকরে দেখে মনে হয়নি সন্তান হয়নি বলে মনে কোন আক্ষেপ আছে। কিন্তু টুনটুনির কাছে যা শুনলেন তাতে কপালে ভাঁজ পড়ে রহিমা বেগমের। টুনটুনির বাপ বেঁচে থাকলে তাকে এত চিন্তা করতে হত না। দুলুকে একবার বলে দেখা যাক ওর কি মত? সায়েদের মাথা গরম ওকে এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না। যত দোষ মেয়েদের, বোঝেনা এইটা দুইজনের মিলিত চেষ্টায় হয়। রান্না ঘর থেকে বৌমা ডাকাডাকি শুরু করেছে।বেলা হল ছেলেদের অফিস কলেজ আছে। এই সময়টা দম ফেলার ফুরসত মেলে না।
রান্নাঘরে ঢুকে রহিমা বেগম বলেন, একটা কাজ নিজে নিজে করতে পারোনা? আম্মু আর কতদিন--?
--পারবোনা কেন? আপনার ব্যাটার আবার অন্যের হাতের রান্না রোচেনা।
--ভাবীজান--আমার দেরী হয়ে যায়।সায়েদ তাগাদা দিল।
ফরজানা দ্রুত হাতে ভাত বেড়ে দেবরকে খেতে দিল। সামনে ভাতের থালা পেয়ে হাপুস-হুপুস খেতে শুরু করে সায়েদ।
--আস্তে খাও।কি এমন রাজ কাজ আছে? ফরজানা বলে।
--রাজকাজ না রাণির কাজ।মজা করে বলে সায়েদ।
--তুমি কিন্তু বলেছিলে আমাকে দেখাবে।একদিন নিয়ে এসোনা বাড়িতে।
--আনবো আনবো।চোখ তুলে ভাবীকে দেখে মুচকি হাসে সায়েদ।
--কেমন দেখতে? খুব সুন্দরী? ফরজানা কৌতুহল চেপে রাখতে পারেনা। বিয়ে হবার পর থেকে শুনে আসছে সে খুব সুন্দরী। সেই জায়গা বেদখল হয়ে যাবে না তো?
--কিছু ফুল আছে দেখতে সুন্দর কিন্তু গন্ধ নাই---।
--আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি তোমাকে আর বলতে হবেনা।কবে আনছো সেই গন্ধ আলা ফুল?
মইদুল টেবিলে আসতে সায়েদ ব্যস্ত হয়ে ঊঠে পড়ে।বড়ভাইয়ের কাছাকাছি বেশিক্ষন থাকতে চায়না।কখন কি উল্টা-পাল্টা প্রশ্ন করে, তার যত কথা ভাবীর সাথে।ভাতের থালা নিয়ে রহিমাবেগম ঢুকে বলে,বউমা তুমি যাও দেখো বনু কি করছে একা একা।
বনু ছোট কলেজে ভর্তি হয়নি মনু কলেজে চলে গেছে,আসার সময় হয়ে গেল।মুমতাজ চলে গেল ছেলে সামলাতে।
ভাতের থালা এগিয়ে দিয়ে উসখুস করে রহিমা বেগম।
--কিছু বলবে আম্মু? বুঝতে পেরে দুলু মিঞা জিজ্ঞেস করে।
একটু ইতস্তত করে রহিমা বেগম বলেন, বাজান একবার টুনটুনির খবর নিতে হয়।
--তার আবার কি হল?
--কি আবার হবে?একটা খবর নিবি না?
--আচ্ছা দেখি--নেত্রকোনা যেতি হলে একটা দিন চলে যায়।
যতদিন বাড়ির কর্তা বেচে ছিলেন সব ব্যাপারে মাথা ঘামাতে হতনা। রিজানুর সাহেবের ঘরে-বাইরে ছিল প্রবল প্রতাপ। এতদিন বোঝেনি আজ তার অবর্তমানে সেইকথাটা চলতে ফিরতে টের পায় সবাই।রিজানুর সাহেব মারা যাবার পর মনে হয়েছিল সংসারটা বুঝি ভেসে যাবে। গাছ মরে যায় রেখে যায় বীজ।কোনো কিছুই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না।
রিজানুর আহমেদ সাহেব মারা গেলেন।ডাকসাইটে দারোগা পাঁচের কোঠায় এসেও দিব্য দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।ডিউটি থেকে ফিরে রাতে বিবির হাতে রান্না করা চিতল মাছের পেটির ঝোল দিয়ে পেট ভরে তৃপ্তিকরে খেলেন।রহিমাবিবির রান্নার হাত ভারী চমৎকার। ঢেকুর তুলে একটা মোদকের ডেলা মুখে পুরে জলজ্যান্ত মানুষটা বিবিকে নিয়ে শুতে গেলেন। পাশের ঘরে ছেলে মইদুলের সংগে পাল্লা দিয়ে এই বয়সে বিবির সঙ্গে যা যা করার সবই করলেন,কোন খামতি রাখলেন না।অবশ্য যোয়ান ছেলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া এই বয়সে সাধ্য কি?দারোগা সাহেব নেমাজ আদায়ে একদিন ভুল হলেও বিবিরে রমণ করেন নিয়মিত। হায়েজ হলেও বিরতি নাই।একটা নেশার মত।বড় মইদুল ইতিমধ্যে দুই বেটার বাপ।একটাকে এ বছর প্রাইমারিতে ভর্তি করেছে আর একটা এখনো বাপের মত মুমতাজের দুধ খায়।
--আপনে আর কতদিন চালাইবেন,এখনো আপনের ইচ্ছা মরে নাই?স্বামীরে বুকের উপর নিয়ে রহিমাবেগম জিজ্ঞেস করে।
--যতদিন ইন্তেকাল না হয়,কেন তোর ভাল লাগে না?
--আমি কি সেই কথা বলেছি? তবে আগের মত সুখ পাইনা।
--তোর এখন একটা যোয়ান দরকার--।
--তোবা তোবা।আপনের মুখের কোন রাখঢাক নাই।যা মুখে আসে কন।
কথা বলতে বলতে রিজানুরের তখন চরম অবস্থা,দাতে দাত চেপে হি-ই-ই-ই করে গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে বিবিকে জড়িয়ে ধরেন। তারপর একটু স্থির এবং ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে থাকেন। স্বামীর পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে রহিমা বলে, আপনের হয়ে গেছে?
--কেন বুঝতে পারিস নাই?
--অখন খুব কম বের হয় ভাল মত টের পাইনা।
সকালবেলা রহিমাবিবি ঘুম থেকে উঠে গায়ের আউলানো কাপড় চোপড় ঠিক করে পাশে স্বামীর দিকে তাকিয়ে কপালে ভাঁজ পড়ে। গায়ে হাত দিয়ে দেখেন অসাড় দেহ হাতের তালু উলটে নাকের নীচে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন।বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে, হায় তার কপাল পুড়েছে। চিৎকার করে ছেলেকে ডাকেন, দুলু মিঞা-আ-আ।
মার চিৎকারে মুমতাজকে বুক থেকে ঠেলে নামিয়ে দিয়ে মইদুল উঠে বসে বিছানায়।সারা বাড়ির লোকজন উঠে পড়ে। ডাক্তার ডাকা হয়,ডেথ সার্টিফিকেট লিখে ডাক্তার বিদায় নিলেন।রিজানুর কথা রেখেছেন ইন্তেকালের কয়েক মুহূর্ত আগেও বিবির সাথে সহবাস করে গেছেন।জানাশোনা অনেকে শোক-সমবেদনা জানাতে এসেছিল,অনেকে আসে নাই।
বছর খানেক আগের কথা।যা গেছে তা নিয়ে বসে থাকলে হবে যা আছে তা শুনবে কেন? শোক কাটিয়ে আগোছালো সংসার আবার সাজিয়ে ফেলেন রহিমাবিবি। হাতের কোন কাজ বাকী রাখেন নি রিজানুর সাহেব। এক মেয়ে ফরজানার বিয়ে দিয়েছেন নেত্রকোনায়,বড় ছেলে মইদুলের চাকরি করে দিয়েছেন সরকারী অফিসে। ছোট ছেলে সইদুল কলেজে পড়ে। বিশাল বাড়ির একতলা ভাড়া দিয়েছেন।কিছু সরকারী মুলাজিন মেস করে থাকে।রিজানুর সাহেব নেই কিন্তু এই বাড়ি এখনো দারোগা বাড়ি বলে লোকে এক কথায় চেনে।
দুই নাতি নিয়ে রহিমাবিবির ভালই কাটে,একটাই দুঃখ বছর তিনেকের বেশি হবে ফরজানার বিয়ে হয়েছে।পেটের উপরে চর্বি জমছে কিন্তু ভিতরে প্রাণ আসল না। সেবার মেয়ে-জামাই এসেছিল, আনন্দ ফুর্তি করল রফিকরে দেখে মনে হয়নি সন্তান হয়নি বলে মনে কোন আক্ষেপ আছে। কিন্তু টুনটুনির কাছে যা শুনলেন তাতে কপালে ভাঁজ পড়ে রহিমা বেগমের। টুনটুনির বাপ বেঁচে থাকলে তাকে এত চিন্তা করতে হত না। দুলুকে একবার বলে দেখা যাক ওর কি মত? সায়েদের মাথা গরম ওকে এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না। যত দোষ মেয়েদের, বোঝেনা এইটা দুইজনের মিলিত চেষ্টায় হয়। রান্না ঘর থেকে বৌমা ডাকাডাকি শুরু করেছে।বেলা হল ছেলেদের অফিস কলেজ আছে। এই সময়টা দম ফেলার ফুরসত মেলে না।
রান্নাঘরে ঢুকে রহিমা বেগম বলেন, একটা কাজ নিজে নিজে করতে পারোনা? আম্মু আর কতদিন--?
--পারবোনা কেন? আপনার ব্যাটার আবার অন্যের হাতের রান্না রোচেনা।
--ভাবীজান--আমার দেরী হয়ে যায়।সায়েদ তাগাদা দিল।
ফরজানা দ্রুত হাতে ভাত বেড়ে দেবরকে খেতে দিল। সামনে ভাতের থালা পেয়ে হাপুস-হুপুস খেতে শুরু করে সায়েদ।
--আস্তে খাও।কি এমন রাজ কাজ আছে? ফরজানা বলে।
--রাজকাজ না রাণির কাজ।মজা করে বলে সায়েদ।
--তুমি কিন্তু বলেছিলে আমাকে দেখাবে।একদিন নিয়ে এসোনা বাড়িতে।
--আনবো আনবো।চোখ তুলে ভাবীকে দেখে মুচকি হাসে সায়েদ।
--কেমন দেখতে? খুব সুন্দরী? ফরজানা কৌতুহল চেপে রাখতে পারেনা। বিয়ে হবার পর থেকে শুনে আসছে সে খুব সুন্দরী। সেই জায়গা বেদখল হয়ে যাবে না তো?
--কিছু ফুল আছে দেখতে সুন্দর কিন্তু গন্ধ নাই---।
--আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি তোমাকে আর বলতে হবেনা।কবে আনছো সেই গন্ধ আলা ফুল?
মইদুল টেবিলে আসতে সায়েদ ব্যস্ত হয়ে ঊঠে পড়ে।বড়ভাইয়ের কাছাকাছি বেশিক্ষন থাকতে চায়না।কখন কি উল্টা-পাল্টা প্রশ্ন করে, তার যত কথা ভাবীর সাথে।ভাতের থালা নিয়ে রহিমাবেগম ঢুকে বলে,বউমা তুমি যাও দেখো বনু কি করছে একা একা।
বনু ছোট কলেজে ভর্তি হয়নি মনু কলেজে চলে গেছে,আসার সময় হয়ে গেল।মুমতাজ চলে গেল ছেলে সামলাতে।
ভাতের থালা এগিয়ে দিয়ে উসখুস করে রহিমা বেগম।
--কিছু বলবে আম্মু? বুঝতে পেরে দুলু মিঞা জিজ্ঞেস করে।
একটু ইতস্তত করে রহিমা বেগম বলেন, বাজান একবার টুনটুনির খবর নিতে হয়।
--তার আবার কি হল?
--কি আবার হবে?একটা খবর নিবি না?
--আচ্ছা দেখি--নেত্রকোনা যেতি হলে একটা দিন চলে যায়।
যতদিন বাড়ির কর্তা বেচে ছিলেন সব ব্যাপারে মাথা ঘামাতে হতনা। রিজানুর সাহেবের ঘরে-বাইরে ছিল প্রবল প্রতাপ। এতদিন বোঝেনি আজ তার অবর্তমানে সেইকথাটা চলতে ফিরতে টের পায় সবাই।রিজানুর সাহেব মারা যাবার পর মনে হয়েছিল সংসারটা বুঝি ভেসে যাবে। গাছ মরে যায় রেখে যায় বীজ।কোনো কিছুই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না।