27-02-2019, 03:57 PM
অপ্রত্যাশিত রজনী
হোটেলের রুম টা বেশ বড়সড়, দু’দিকের দেয়ালে বড় বড় কাঁচের জানালা, তার ওপরে ভারী পর্দায় ঢাকা। হোটেলের লোক ওদের জিনিস পত্র রুমে রেখে চলে যাবার পরে অভি দরজা বন্ধ করে দিল। রুমের মধ্যে দু’খানা হিটার জ্বলছে। অভি পরীকে জিজ্ঞেস করল যে রুমটা পছন্দ হয়েছে কি না। উত্তরে পরী ওর দিকে একটু মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে ঠিক আছে। গায়ের জ্যাকেট টা খুলে এক এক ব্যাগ খুলতে শুরু করল পরী। ব্যাগ থেকে জিনিস পত্র বের করে আলমারিতে সাজিয়ে রাখতে শুরু করল। অভি বিছানায় বসে পেছন থেকে পরীকে একমনে দেখে চলেছে। খোলা চুল পিঠের ওপরে নাচছে। পেছন থেকে ওকে দেখতে ঠিক প্রাচিন বালির ঘড়ির মতন লাগছে, চওড়া কাঁধ সরু হয়ে নেমে এসেছে পাতলা কোমর, তারপরে ফুলে উঠেছে প্রসস্থ নিতম্ব। ওর মূর্তিময়ি সৌন্দর্য উপভোগ দেখতে থাকল অভি। একবার মনে হল যেন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পরীকে। মাঝে মাঝে চুড়ির ছনছন আওয়াজ গুঞ্জরিত হচ্ছে ঘরের মধ্যে। বারে বারে বাম পাশের চুলের এক গোছা ওর গালের ওপরে এসে পড়ছে আর বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে বারে বারে ওই চুলের গোছা টাকে কানের পেছনে করে দিচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত অভি আর থাকতে না পেরে চুপিচুপি পরীর পেছনে এসে দাঁড়াল। দু’হাতে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে ঘাড়ে একটা চুমু খেল। আচমকা অভির ঠোঁটের পরশ পেয়ে একটু কেঁপে উঠল পরী। ঘাড়ের ওপর দিয়ে শীতল চাহনি দিল অভির দিকে। অভি তাও ওকে ছেড়ে দিল না, জড়িয়ে ধরে থাকল।
পরী ওর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলল, "ছাড়ো আমাকে। আমি বাথরুম যাব।"
ওই গলার আওয়াজ শুনে অভি বুঝতে পারল যে বিশাল একটা ঝড় আসছে। পরী একটা হাল্কা গোলাপি রঙের নাইট ড্রেস আর একটা ভারী গাউন নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। বেচারা অভি নিরুপায় হয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পড়ল। নিজের জামা কাপড় বদলে একটা ট্রাক সুট পরে নিল। কিছু পরে পরী বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসে অভিকে হাত মুখ ধুয়ে নিতে বলল।
অভি ওর গম্ভির কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করল, "কি হয়েছে তোমার? এত চুপচাপ কেন? আমার সাথে কি কথা বলতে নেই?"
পরী ওর দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বলল, "বাথরুমে ঢোকো, তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও আমি ততক্ষনে খাবারের অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি।"
অভি, "ঠিক আছে কিন্তু একটু বলবে কি কেন এত চুপচাপ তুমি?"
পরী ওকে ঠেলে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিল। হাত মুখ ধুয়ে বাইরে বেড়িয়ে দেখে যে পরী একটা চেয়ার নিয়ে জানালার পাশে বসে বাইরের অন্ধকার দেখছে। পুর ঘরের বাতাস যেন পরীর সাথে কাঁদছে। ওর চেহারার গুমোট ভাব যেন ঘরের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়েছে। অভির সামনে সেই হাসি খুশি পরী নেই, কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই পরী। টেবিলে ওদের রাতের খাবার সাজান। চুপ করে রাতের খাওয়া সেরে নেয় ওরা। অভির মনে ভয় ঢুকে পরে। পরী যদি এইরকম ভাবে গুম মেরে বসে থাকে, থাকলে ত ঘোরার আনন্দ টা মাটি হয়ে যাবে।
খাবার পরে গায়ের ভারী গাউন টা খুলে বিছানায় উঠে পরে পরী। লেপটা বুক পর্যন্ত টেনে নিয়ে বিছানার মাথার দিকে হেলান দিয়ে কটমট চোখে তাকায় অভির দিকে।
অভি বিছানার পায়ের দিকে বসে ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে তোমার, কিছু বলবে কি?"
পরী রেগে গিয়ে উত্তর দেয়, "কি হয়েছে আমার? বাইরে একবার দেখেছ? একবিন্দু আলো দেখা যায় না কোথাও, চারদিকে শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার। এখানে কিছুই নেই, না একটা রেস্টুরেন্ট আছে, না একটা দোকান আছে, না কোন বর বাড়ি আছে। এমন কি এখানে কোন লোকজন ও নেই।"
অভি, "দেখ পরী, আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম। আমিও এই জায়গায় নতুন, প্রথম বার এসেছি।"
পরী, "এখানে একটা দোকান ও নেই।"
অভি, "দোকান দিয়ে কি করবে তুমি?"
পরী, "দোকান দিয়ে মানুষে কি করে, জানো না। শপিং করব আবার কি করব। যারাই ঘুরতে যায় তারাই শপিং করে।"
অভি, "তুমি তাহলে এখানে শপিং করার জন্য এসেছ।"
পরী, "না মানে শুধু মাত্র শপিং নয়। কিন্তু বাইরে দেখ, কোথাও কিছু দেখতে পাওয়া যায় না শুধু অন্ধকার ছাড়া। তুমি বলেছিলে যে এখানে নাকি একটা নদী আছে, কোথায় সেই নদী?"
অভি, "বাইরে অন্ধকার তাই তুমি নদী দেখতে পাচ্ছ না।"
পরী, "অভি, তুমি এখান কার রাস্তা দেখেছ। রাস্তা অরে বাব, রাস্তা নেই বললেই চলে। এবর খাবর আর পাথরে ঢাকা কি সাঙ্ঘাতিক রাস্তা এখান কার। এখানে কি মানুষে আসে?"
অভি আর মাথা ঠিক রাখতে পারে না। শেষ পর্যন্ত শুরু হল ওদের ঝগড়া বা প্রেম রাগ। রেগে গিয়ে পরীকে বকে দেয়, "আমি কি করে জানব যে রাস্তা ওই রকম হবে?"
পরীও রেগে গিয়ে উত্তর দেয়, "অভি তুমি নিশ্চয় জানতে।"
অভি, "হাঁ ভগবান, পরী আমি সত্যি জানতাম না।"
পরী, "তোমার সাথে না এসে কল্যানি আর রানির সাথে মানালি ঘুরতে গেলে ভাল হত।"
অভি, "হ্যাঁ তাই করতে। কেন করনি তাহলে?"
কেঁদে ওঠে পরী, "তুমি ভাল করে জানো আমি কেন ওদের সাথে যাইনি আর কেন আমি তোমার সাথে এসেছি। আর এখন..."
অভি, "এখন কি এখন..."
পরী, "এখন কি? দেখ কোথায় এনেছ আমাকে। কোন ক্রমে একটা হোটেল খুঁজে পাওয়া গেছে তাতে আবার কোন লোক নেই। কেউ যদি রাতে আমাদের কিছু করে দেয় তাহলে বাড়ির কেউ খবরও পাবে না। কেউ জানে না আমরা এই রকম একটা সাঙ্ঘাতিক জায়গায় ঘুরতে এসেছি, যেখানে আসেপাসে দেখার কিছুই নেই।"
অভি চিৎকার করে ওঠে, "চুপ কর পরী, আমাদের কিছুই হবে না।"
কেঁদে উত্তর দেয় পরী, "আমি শুধু চেয়েছিলাম তোমার সাথে আমার প্রথম বেড়ানো টা চিরস্মরণীয় হয়ে থাক।"
বারে বারে চোখের জল মুছতে থাকে। সেই চোখের জল দেখে অভির মাথা আরও গরম হয়ে যায়।
অভি বকুনি দিয়ে বলে, "আমার সামনে কুমিরের কান্না একদম কাঁদবে না।"
চিৎকার করে ওঠে পরী, "অভি, একদম আমার সাথে ওই রকম ভাবে কথা বলবে না। কাল সকালে আমাকে সিমলা পৌঁছে দিয়ে আসবে। আমি জানি কল্যানিরা কোন হোটেলে উঠেছে, আমি কল্যাণীদের সাথে ঘুরতে যাব।"
অভি, "ঠিক আছে কাল সকালে আমি তোমাকে সিমলা পৌঁছে দিয়ে আসব।"
গলা পর্যন্ত লেপ টেনে নিয়ে উলটো দিকে ফিরে শুয়ে পড়ল পরী। বালিসে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিল। অভি মাথা চাপড়াল, শেষ পর্যন্ত একি ঘটে গেল। এই রকম ত ও চায়নি।
যথাসম্ভব মিষ্টতা এনে পরীকে শান্তনা দেবার চেষ্টা করল অভি, "প্লিস কেঁদো না। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।"
ফুফিয়ে উঠে বলল, "যাও যাও, আমি জানি তুমি বাইরে কেন যাচ্ছ। তুমি সিগারেট খাবে এই ত। আমাকে লুকিয়ে তুমি ব্যাগে করে সিগারেট প্যাকেট নিয়ে এসেছ আমি দেখেছি। একে বারে সবকটা সিগারেট খেয়ে মর গিয়ে। দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে।"
অভি, "দোহাই চুপ করে থাক।"
পরী, "আমার সামনে থেকে চলে যাও, আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও।"
অভির সিগারেট টা খুব দরকার ছিল তাই সিগারেট ধরিয়ে বাইরে চলে এল। বাইরে এসে ভাবতে থাকল, কি করে জানবে যে জায়গাটা এই রকম জনবিরল স্থান হবে? অভিও প্রথম বার এসেছে এই জায়গায় পরী ও প্রথম বার।
"অভিমন্যু তোমার উচিত হয়নি শুচিস্মিতাকে কাঁদানোর। এই ভ্রমন যাত্রা বিশেষ সুখদায়ক হবে না অভিমন্যু। সব মেয়েই চায় তাঁর প্রেমিকের সাথে মিলনের প্রথম রাত চিরস্মরণীয় হয়ে থাক, কিন্তু তুমি শুচিস্মিতাকে কাঁদিয়ে ঠিক করনি, অভিমন্যু। তোমাকে এই পরিস্থিতির সামাল দিতে হবে না হলে শুচিস্মিতা তোমাকে সারা জীবন ক্ষমা করবে না।"
অভির মাথার মধ্যে থেকে কেউ ওকে এই সব কথা বলে গেল। বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া যেন তুমুল যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। হয়ত বা বাইরে তুষার পাত হচ্ছে।
ঘরে ঢুকে দেখল যে পরী ঘুমিয়ে পড়েছে। ট্রাক সুটের জ্যাকেট টা খুলে লেপের নিচে ঢুকে গেল অভি। পরীর দিকে সরে গিয়ে একটু ঝুঁকে পরীর ঘুমন্ত মুখখানি দেখতে চেষ্টা করল। সুন্দর মুখখানির ওর চুলের গোছার নিচে ঢেকে পড়েছে। আলতো করে আঙ্গুল দিয়ে চুলের গোছা টা সরিয়ে দিল মুখের ওপরে থেকে। একটা সরু জলের রেখা চোখের কোন থেকে বেয়ে নাকের ডগা পর্যন্ত গিয়েছে, বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে জলের দাগটা মুচে দিল। অভির উত্তপ্ত নিঃশ্বাস পেয়ে একটু কেঁপে উঠল পরী। অভি আলতো করে ওর বাঁকা ভুরুর ওপর দিয়ে আঙ্গুল বুলিয়ে দিল। ঝুঁকে পরে ওই গোলাপি নরম গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। তারপরে আদর করে ওর নরম গালের ওপরে নাকের ডগা দিয়ে ঘষে দিল। পরী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওর কোমরে হাত রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল অভি। পেটের ওপরে অভির বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শ পেয়ে মৃদু কেঁপে উঠল পরী, ওর হাতখানি বুকের কাছে এনে আরও জোরে শক্ত করে বুকের ওপরে চেপে ধরল। শরীরের সাথে শরীর মিলিয়ে দিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল ওরা।
হোটেলের রুম টা বেশ বড়সড়, দু’দিকের দেয়ালে বড় বড় কাঁচের জানালা, তার ওপরে ভারী পর্দায় ঢাকা। হোটেলের লোক ওদের জিনিস পত্র রুমে রেখে চলে যাবার পরে অভি দরজা বন্ধ করে দিল। রুমের মধ্যে দু’খানা হিটার জ্বলছে। অভি পরীকে জিজ্ঞেস করল যে রুমটা পছন্দ হয়েছে কি না। উত্তরে পরী ওর দিকে একটু মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে ঠিক আছে। গায়ের জ্যাকেট টা খুলে এক এক ব্যাগ খুলতে শুরু করল পরী। ব্যাগ থেকে জিনিস পত্র বের করে আলমারিতে সাজিয়ে রাখতে শুরু করল। অভি বিছানায় বসে পেছন থেকে পরীকে একমনে দেখে চলেছে। খোলা চুল পিঠের ওপরে নাচছে। পেছন থেকে ওকে দেখতে ঠিক প্রাচিন বালির ঘড়ির মতন লাগছে, চওড়া কাঁধ সরু হয়ে নেমে এসেছে পাতলা কোমর, তারপরে ফুলে উঠেছে প্রসস্থ নিতম্ব। ওর মূর্তিময়ি সৌন্দর্য উপভোগ দেখতে থাকল অভি। একবার মনে হল যেন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পরীকে। মাঝে মাঝে চুড়ির ছনছন আওয়াজ গুঞ্জরিত হচ্ছে ঘরের মধ্যে। বারে বারে বাম পাশের চুলের এক গোছা ওর গালের ওপরে এসে পড়ছে আর বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে বারে বারে ওই চুলের গোছা টাকে কানের পেছনে করে দিচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত অভি আর থাকতে না পেরে চুপিচুপি পরীর পেছনে এসে দাঁড়াল। দু’হাতে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে ঘাড়ে একটা চুমু খেল। আচমকা অভির ঠোঁটের পরশ পেয়ে একটু কেঁপে উঠল পরী। ঘাড়ের ওপর দিয়ে শীতল চাহনি দিল অভির দিকে। অভি তাও ওকে ছেড়ে দিল না, জড়িয়ে ধরে থাকল।
পরী ওর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলল, "ছাড়ো আমাকে। আমি বাথরুম যাব।"
ওই গলার আওয়াজ শুনে অভি বুঝতে পারল যে বিশাল একটা ঝড় আসছে। পরী একটা হাল্কা গোলাপি রঙের নাইট ড্রেস আর একটা ভারী গাউন নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। বেচারা অভি নিরুপায় হয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পড়ল। নিজের জামা কাপড় বদলে একটা ট্রাক সুট পরে নিল। কিছু পরে পরী বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসে অভিকে হাত মুখ ধুয়ে নিতে বলল।
অভি ওর গম্ভির কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করল, "কি হয়েছে তোমার? এত চুপচাপ কেন? আমার সাথে কি কথা বলতে নেই?"
পরী ওর দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বলল, "বাথরুমে ঢোকো, তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও আমি ততক্ষনে খাবারের অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি।"
অভি, "ঠিক আছে কিন্তু একটু বলবে কি কেন এত চুপচাপ তুমি?"
পরী ওকে ঠেলে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিল। হাত মুখ ধুয়ে বাইরে বেড়িয়ে দেখে যে পরী একটা চেয়ার নিয়ে জানালার পাশে বসে বাইরের অন্ধকার দেখছে। পুর ঘরের বাতাস যেন পরীর সাথে কাঁদছে। ওর চেহারার গুমোট ভাব যেন ঘরের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়েছে। অভির সামনে সেই হাসি খুশি পরী নেই, কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই পরী। টেবিলে ওদের রাতের খাবার সাজান। চুপ করে রাতের খাওয়া সেরে নেয় ওরা। অভির মনে ভয় ঢুকে পরে। পরী যদি এইরকম ভাবে গুম মেরে বসে থাকে, থাকলে ত ঘোরার আনন্দ টা মাটি হয়ে যাবে।
খাবার পরে গায়ের ভারী গাউন টা খুলে বিছানায় উঠে পরে পরী। লেপটা বুক পর্যন্ত টেনে নিয়ে বিছানার মাথার দিকে হেলান দিয়ে কটমট চোখে তাকায় অভির দিকে।
অভি বিছানার পায়ের দিকে বসে ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে তোমার, কিছু বলবে কি?"
পরী রেগে গিয়ে উত্তর দেয়, "কি হয়েছে আমার? বাইরে একবার দেখেছ? একবিন্দু আলো দেখা যায় না কোথাও, চারদিকে শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার। এখানে কিছুই নেই, না একটা রেস্টুরেন্ট আছে, না একটা দোকান আছে, না কোন বর বাড়ি আছে। এমন কি এখানে কোন লোকজন ও নেই।"
অভি, "দেখ পরী, আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম। আমিও এই জায়গায় নতুন, প্রথম বার এসেছি।"
পরী, "এখানে একটা দোকান ও নেই।"
অভি, "দোকান দিয়ে কি করবে তুমি?"
পরী, "দোকান দিয়ে মানুষে কি করে, জানো না। শপিং করব আবার কি করব। যারাই ঘুরতে যায় তারাই শপিং করে।"
অভি, "তুমি তাহলে এখানে শপিং করার জন্য এসেছ।"
পরী, "না মানে শুধু মাত্র শপিং নয়। কিন্তু বাইরে দেখ, কোথাও কিছু দেখতে পাওয়া যায় না শুধু অন্ধকার ছাড়া। তুমি বলেছিলে যে এখানে নাকি একটা নদী আছে, কোথায় সেই নদী?"
অভি, "বাইরে অন্ধকার তাই তুমি নদী দেখতে পাচ্ছ না।"
পরী, "অভি, তুমি এখান কার রাস্তা দেখেছ। রাস্তা অরে বাব, রাস্তা নেই বললেই চলে। এবর খাবর আর পাথরে ঢাকা কি সাঙ্ঘাতিক রাস্তা এখান কার। এখানে কি মানুষে আসে?"
অভি আর মাথা ঠিক রাখতে পারে না। শেষ পর্যন্ত শুরু হল ওদের ঝগড়া বা প্রেম রাগ। রেগে গিয়ে পরীকে বকে দেয়, "আমি কি করে জানব যে রাস্তা ওই রকম হবে?"
পরীও রেগে গিয়ে উত্তর দেয়, "অভি তুমি নিশ্চয় জানতে।"
অভি, "হাঁ ভগবান, পরী আমি সত্যি জানতাম না।"
পরী, "তোমার সাথে না এসে কল্যানি আর রানির সাথে মানালি ঘুরতে গেলে ভাল হত।"
অভি, "হ্যাঁ তাই করতে। কেন করনি তাহলে?"
কেঁদে ওঠে পরী, "তুমি ভাল করে জানো আমি কেন ওদের সাথে যাইনি আর কেন আমি তোমার সাথে এসেছি। আর এখন..."
অভি, "এখন কি এখন..."
পরী, "এখন কি? দেখ কোথায় এনেছ আমাকে। কোন ক্রমে একটা হোটেল খুঁজে পাওয়া গেছে তাতে আবার কোন লোক নেই। কেউ যদি রাতে আমাদের কিছু করে দেয় তাহলে বাড়ির কেউ খবরও পাবে না। কেউ জানে না আমরা এই রকম একটা সাঙ্ঘাতিক জায়গায় ঘুরতে এসেছি, যেখানে আসেপাসে দেখার কিছুই নেই।"
অভি চিৎকার করে ওঠে, "চুপ কর পরী, আমাদের কিছুই হবে না।"
কেঁদে উত্তর দেয় পরী, "আমি শুধু চেয়েছিলাম তোমার সাথে আমার প্রথম বেড়ানো টা চিরস্মরণীয় হয়ে থাক।"
বারে বারে চোখের জল মুছতে থাকে। সেই চোখের জল দেখে অভির মাথা আরও গরম হয়ে যায়।
অভি বকুনি দিয়ে বলে, "আমার সামনে কুমিরের কান্না একদম কাঁদবে না।"
চিৎকার করে ওঠে পরী, "অভি, একদম আমার সাথে ওই রকম ভাবে কথা বলবে না। কাল সকালে আমাকে সিমলা পৌঁছে দিয়ে আসবে। আমি জানি কল্যানিরা কোন হোটেলে উঠেছে, আমি কল্যাণীদের সাথে ঘুরতে যাব।"
অভি, "ঠিক আছে কাল সকালে আমি তোমাকে সিমলা পৌঁছে দিয়ে আসব।"
গলা পর্যন্ত লেপ টেনে নিয়ে উলটো দিকে ফিরে শুয়ে পড়ল পরী। বালিসে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিল। অভি মাথা চাপড়াল, শেষ পর্যন্ত একি ঘটে গেল। এই রকম ত ও চায়নি।
যথাসম্ভব মিষ্টতা এনে পরীকে শান্তনা দেবার চেষ্টা করল অভি, "প্লিস কেঁদো না। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।"
ফুফিয়ে উঠে বলল, "যাও যাও, আমি জানি তুমি বাইরে কেন যাচ্ছ। তুমি সিগারেট খাবে এই ত। আমাকে লুকিয়ে তুমি ব্যাগে করে সিগারেট প্যাকেট নিয়ে এসেছ আমি দেখেছি। একে বারে সবকটা সিগারেট খেয়ে মর গিয়ে। দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে।"
অভি, "দোহাই চুপ করে থাক।"
পরী, "আমার সামনে থেকে চলে যাও, আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও।"
অভির সিগারেট টা খুব দরকার ছিল তাই সিগারেট ধরিয়ে বাইরে চলে এল। বাইরে এসে ভাবতে থাকল, কি করে জানবে যে জায়গাটা এই রকম জনবিরল স্থান হবে? অভিও প্রথম বার এসেছে এই জায়গায় পরী ও প্রথম বার।
"অভিমন্যু তোমার উচিত হয়নি শুচিস্মিতাকে কাঁদানোর। এই ভ্রমন যাত্রা বিশেষ সুখদায়ক হবে না অভিমন্যু। সব মেয়েই চায় তাঁর প্রেমিকের সাথে মিলনের প্রথম রাত চিরস্মরণীয় হয়ে থাক, কিন্তু তুমি শুচিস্মিতাকে কাঁদিয়ে ঠিক করনি, অভিমন্যু। তোমাকে এই পরিস্থিতির সামাল দিতে হবে না হলে শুচিস্মিতা তোমাকে সারা জীবন ক্ষমা করবে না।"
অভির মাথার মধ্যে থেকে কেউ ওকে এই সব কথা বলে গেল। বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া যেন তুমুল যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। হয়ত বা বাইরে তুষার পাত হচ্ছে।
ঘরে ঢুকে দেখল যে পরী ঘুমিয়ে পড়েছে। ট্রাক সুটের জ্যাকেট টা খুলে লেপের নিচে ঢুকে গেল অভি। পরীর দিকে সরে গিয়ে একটু ঝুঁকে পরীর ঘুমন্ত মুখখানি দেখতে চেষ্টা করল। সুন্দর মুখখানির ওর চুলের গোছার নিচে ঢেকে পড়েছে। আলতো করে আঙ্গুল দিয়ে চুলের গোছা টা সরিয়ে দিল মুখের ওপরে থেকে। একটা সরু জলের রেখা চোখের কোন থেকে বেয়ে নাকের ডগা পর্যন্ত গিয়েছে, বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে জলের দাগটা মুচে দিল। অভির উত্তপ্ত নিঃশ্বাস পেয়ে একটু কেঁপে উঠল পরী। অভি আলতো করে ওর বাঁকা ভুরুর ওপর দিয়ে আঙ্গুল বুলিয়ে দিল। ঝুঁকে পরে ওই গোলাপি নরম গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। তারপরে আদর করে ওর নরম গালের ওপরে নাকের ডগা দিয়ে ঘষে দিল। পরী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওর কোমরে হাত রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল অভি। পেটের ওপরে অভির বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শ পেয়ে মৃদু কেঁপে উঠল পরী, ওর হাতখানি বুকের কাছে এনে আরও জোরে শক্ত করে বুকের ওপরে চেপে ধরল। শরীরের সাথে শরীর মিলিয়ে দিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল ওরা।