27-02-2019, 03:55 PM
অপরিজ্ঞাত যাত্রা (#03)
অগত্যা অভিকে ওর পেছন পেছন গাড়ি থেকে নেমে যেতে হল। ততক্ষণে পরী, রাস্তার পাশ থেকে নদীর দিকে নেমে গেছে। বেশ পটীয়সীর মতন টাল সামলে পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তীরে চলে গেছে। ঝুঁকে পরে নদীর জল ছিটিয়ে দিল অভির দিকে।
হিম শীতল জল ওর হাতের আঙ্গুল যেন জমিয়ে দিল, "বাপরে কি ঠাণ্ডা, আঙ্গুল গুলো যেন কেটে বেড়িয়ে গেল।"
অভি, "আমি আগেই তোমাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম, তুমি ত আমার কোন কথা শুনবে না।"
পরী, "ধুর তুমি একদন রোম্যান্টিক নও।"
অভি, "পরী গাড়িতে ওঠো, চিতকুলে ও একটা নদী আছে।"
পরী খুশিতে নেচে উঠে বলল, "তাই নাকি? আমাকে আগে বলনি কেন। চলো তাহলে।"
অভি, "কিছু জিনিস ধিরে ধিরে প্রকাশ পাওয়া ভাল।"
পরী, "ঠিক আছে তুমি যদি সত্যি কথা বলছ তাহলে রাগ করব না। কি নাম বললে যেন জায়গাটার?"
অভি মৃদু বকুনি দেয় পরীকে, "বোকা মেয়ে, চিতকুল।"
গাড়ি আবার ওদের নিয়ে ছেড়ে দিল। রাস্তার পাশ দিয়ে পাহাড়ি নদী ওদের সাথে সাথে চলতে থাকে। আকাশ নীল, মাঝে মাঝে তুলোর মতন পোজা পোজা সাদা মেঘের ভেলা। দু’পাসে সবুজে ঢাকা ছোটো বড় পাহাড়। কোথাও কোথাও আপেলের বাগান। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা রামপুর পৌঁছে গেল। ওখানে ওরা দুপুরের খাবার সেরে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করল। খাবারের পরে অভির খুব ইচ্ছে করছিল একটা সিগারেট খায়, একবার পরীর দিকে তাকাল অভি, দেখতে পারলে মাথা খেয়ে ফেলবে তাও একটা সিগারেট জ্বালাল।
পরী ওর দিকে কটমট ক্রে তাকিয়ে বলল, "আবার সিগারেট ধরেছ।"
অভি কাতর চোখে অনুমতি চাইল, এই ঠান্ডায় একটা সিগারেট। পরী কিছু না বলে, মুখ ভার করে গাড়িতে উঠে গেল। অভি দেখল যে, সিগারেটের চেয়ে ওর মুখের হাসি অনেক বেশি মুল্যবান। আধা খাওয়া সিগারেটটা ফেলে দিয়ে গাড়িতে চেপে বসল।
অভি, "দেখো আমি সিগারেট ফেলে দিয়েছি, এবারে হাসো একটু।"
গাড়ি রামপুর ছাড়িয়ে এগতে শুরি করে। পরীর ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। অভি সিটের এক কোনায় সরে গিয়ে ওকে শুতে বলল, অভির কোলে মাথা রেখে পরী ঘুমিয়ে পড়ল। অভি নিস্পলক চোখে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে রইল। রাস্তার অবস্থা বদলে গেছে, বল্বিন্দার নিপুন হাতে খুব মন দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। অভি একবার সামনে দেখে, নিচে ঝুঁকে পরীর গালে আলতো করে একটা চুমু খেল। গালের ওপরে অভির ঠোঁটের পরশ পেয়ে আরও গুটিশুটি মেরে ওর হাথ খানি বুকের ওপরে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে পড়ল। অভি পরীর গায়ের উষ্ণতা হাতের ওপরে অনুভব করল। কিছুপরে জিওরিতে বল্বিন্দার গাড়ি থামিয়ে পেট্রল ভরে নিল।
গাড়ি থামতেই পরী জেগে গেল, "আমরা দাঁড়িয়ে কেন?"
অভি, "তেল ভরার জন্য।"
পরী, "আমি কতক্ষণ ঘুমিয়েছি।"
অভি, "বেশিক্ষণ ঘুময় নি তুমি আবার ঘুম লাগাতে পার।"
পরী, "আর কতক্ষণ লাগবে চিতকুল পৌঁছতে?"
অভি পেট্রোল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করে যেনে নিল যে চিতকুল পৌঁছতে এখন ঘন্টা চারেক লাগবে। লোকটা আরও জানিয়ে দিল যে, সামনে কারছাম ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা মটামুটি তারপরে রাস্তার অবস্থা খারাপ। বল্বিন্দার ওর কথা শুনে উত্তর দিল, "স্যারজি চিন্তা করবেন না একদম। আমি ঠিক আপনাদের নিয়ে যাব।"
পরী বিশেষ হিন্দি বোঝে না তাই অভিকে জিজ্ঞেস করল যে বল্বিন্দার কি বলল ওকে। অভি জানাল যে রাস্তার অবস্থা হয়ত ভাল না কিন্তু বল্বিন্দার ভরসা দিয়েছে যে গাড়ি চালাতে ওর কোন কষ্ট হবে না। ঘড়ি দেখল অভি, আরাইটে বাজে, মানে চিতকুল পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে।
জিওরি ছারতেই পরী বলল আর ঘুমাবে না, জেগে থেকে এখন শুধু পাহাড় দেখবে। কারছাম পৌঁছতেই সূর্যি ডুবে গেল। পাহাড়ে তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে এল। কারছামে ওরা লক্ষ্য করল যে দুটি নদী এসে মিশেছে। একটার জলের রঙ একটু ঘোলাটে একটা একদম পরিষ্কার তুঁতে রঙের।
পরী তুঁতে রঙের জলের নদী আগে কোনদিন দেখেনি। ওরা নদী দেখে বিস্ময়ান্বিত। অভিকে জিজ্ঞেস করল, "এই নদীর নাম কি?"
অভিও কোনদিন তুঁতে রঙের জল দেখেনি, ও বল্বিন্দার কে গাড়ি থামাতে বলল। গাড়ি থামতেই ওরা নেমে নদীর পাড়ে গেল। পরী ওকে জিজ্ঞেস করল, "এই নদীর নাম কি? এই নদী কি আমরা চিতকুলে পাব?"
অভি মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ এই নদী তুমি চিতকুলে দেখতে পাবে। সম্ভবত এই নদীর নাম বিয়াস, চিন থেকে আসছে এই নদী।"
কারছাম ব্রিজ পার করে, এন.এইচ.22 ছেড়ে ওরা চিতকুলের রাস্তা ধরল। রাস্তায় বড় বড় পাথর আর রাস্তাটা খুব নির্জন। আসেপাসে লোকজনের দেখা নেই নেই কোন গাড়ি ঘোড়া। বাইরে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। অভি পরীকে জড়িয়ে ধরে বসে। বাইরের আলো কমে এসেছে আগেই তাই বল্বিন্দার গাড়ির লাইট জ্বালিয়ে দিল। পরী অভির দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকাল।
অভি ওকে আসস্থ করে বলল, "অযথা ভয় পেওনা।"
পরী ওর গালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল, "তুমি আছো ত তাহলে আর ভয় কিসের। আমি শুধু এটা ভেবে অবাক হচ্ছি যে তুমি এই রকম জন বিরল জায়গার খোঁজ পেলে কি করে?"
অভি ওকে আদর করে উত্তর দেয়, "তুমি আমার পাশে থাকলে আমি ত বিশ্ব জয় করে নেব, সোনা।"
ওর গালে একটা চুমু খেয়ে বলল পরী, "আমার সোনার ছোট্ট রাজকুমার।"
সাঙলা পার হতেই ঘন অন্ধকার ওদের ঢেকে নিল। এবড় খাবড় রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে বল্বিন্দারের একটু অসুবিধে হচ্ছিল। অভি জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দিল যে ঠিক আছে সব। পরী অভির দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকাল। বাইরে কোন আলো দেখা যায় না, ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা দু’পাস। কোথায় পাহাড় আর কোথায় রাস্তা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অভি পরীকে ভয় পেতে বারন করল।
কিছু পরে অভিকে মৃদু বকুনি দিয়ে বলল, "আমাদের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কেউ জানতেও পারবে না।"
অভি ওকে আসস্থ করে, "উল্ট পালটা কিছু বোলো না, আমাদের কিছু হবে না পরী।"
পরী রেগে সিটের এককোণে সরে গিয়ে বসল। উতকন্ঠায় পরী চুপ করে বসে, জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকার দেখতে থাকে। অভি পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য ওকে জিজ্ঞেস করল, "বাইরে অন্ধকারে কি দেখছ?"
কিছু উত্তর দিল না পরী, ওর দিকে একবার কটমট করে তাকিয়ে আবার বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকল। ভয়ে ওর মুখ শুকিয়ে গেছে, বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে গেছে। অভি প্রথম বার এই জায়গায় এসেছে, ওই বা কি করে জানবে যে রাস্তার অবস্তা ওই রকম খারাপ হবে। অভি ও উতকন্ঠায় বসে, কতক্ষণে গন্তব্য স্থানে পৌছবে। পরী গম্ভির মুখ করে একদম চুপ করে বসে।
আরও প্রায় ঘন্টা খানেক পরে ওরা চিতকুল পৌঁছে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে, কিছু দুরে কিছু আলো টিমটিম করে জ্বলছে। পরীকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে অভি নেমে গেল হোটেলের খোঁজে। বাইরে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া যেন যুদ্ধ জুড়েছে। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পরে রাস্তার একদম শেষে একটা হোটেলের সন্ধান পেল অভি। ম্যানেজার জানাল যে হোটেল একদম ফাঁকা, এই ঠাণ্ডায় কেউ এখানে ঘুরতে আসেনা। একটা রুম ভাড়া নিয়ে নিল অভি। পরী সেই যে সাঙলা থেকে গুম মেরে বসে আছে, হোটেলে ঢোকা পর্যন্ত কোন কথা বলল না।
অগত্যা অভিকে ওর পেছন পেছন গাড়ি থেকে নেমে যেতে হল। ততক্ষণে পরী, রাস্তার পাশ থেকে নদীর দিকে নেমে গেছে। বেশ পটীয়সীর মতন টাল সামলে পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তীরে চলে গেছে। ঝুঁকে পরে নদীর জল ছিটিয়ে দিল অভির দিকে।
হিম শীতল জল ওর হাতের আঙ্গুল যেন জমিয়ে দিল, "বাপরে কি ঠাণ্ডা, আঙ্গুল গুলো যেন কেটে বেড়িয়ে গেল।"
অভি, "আমি আগেই তোমাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম, তুমি ত আমার কোন কথা শুনবে না।"
পরী, "ধুর তুমি একদন রোম্যান্টিক নও।"
অভি, "পরী গাড়িতে ওঠো, চিতকুলে ও একটা নদী আছে।"
পরী খুশিতে নেচে উঠে বলল, "তাই নাকি? আমাকে আগে বলনি কেন। চলো তাহলে।"
অভি, "কিছু জিনিস ধিরে ধিরে প্রকাশ পাওয়া ভাল।"
পরী, "ঠিক আছে তুমি যদি সত্যি কথা বলছ তাহলে রাগ করব না। কি নাম বললে যেন জায়গাটার?"
অভি মৃদু বকুনি দেয় পরীকে, "বোকা মেয়ে, চিতকুল।"
গাড়ি আবার ওদের নিয়ে ছেড়ে দিল। রাস্তার পাশ দিয়ে পাহাড়ি নদী ওদের সাথে সাথে চলতে থাকে। আকাশ নীল, মাঝে মাঝে তুলোর মতন পোজা পোজা সাদা মেঘের ভেলা। দু’পাসে সবুজে ঢাকা ছোটো বড় পাহাড়। কোথাও কোথাও আপেলের বাগান। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা রামপুর পৌঁছে গেল। ওখানে ওরা দুপুরের খাবার সেরে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করল। খাবারের পরে অভির খুব ইচ্ছে করছিল একটা সিগারেট খায়, একবার পরীর দিকে তাকাল অভি, দেখতে পারলে মাথা খেয়ে ফেলবে তাও একটা সিগারেট জ্বালাল।
পরী ওর দিকে কটমট ক্রে তাকিয়ে বলল, "আবার সিগারেট ধরেছ।"
অভি কাতর চোখে অনুমতি চাইল, এই ঠান্ডায় একটা সিগারেট। পরী কিছু না বলে, মুখ ভার করে গাড়িতে উঠে গেল। অভি দেখল যে, সিগারেটের চেয়ে ওর মুখের হাসি অনেক বেশি মুল্যবান। আধা খাওয়া সিগারেটটা ফেলে দিয়ে গাড়িতে চেপে বসল।
অভি, "দেখো আমি সিগারেট ফেলে দিয়েছি, এবারে হাসো একটু।"
গাড়ি রামপুর ছাড়িয়ে এগতে শুরি করে। পরীর ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। অভি সিটের এক কোনায় সরে গিয়ে ওকে শুতে বলল, অভির কোলে মাথা রেখে পরী ঘুমিয়ে পড়ল। অভি নিস্পলক চোখে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে রইল। রাস্তার অবস্থা বদলে গেছে, বল্বিন্দার নিপুন হাতে খুব মন দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। অভি একবার সামনে দেখে, নিচে ঝুঁকে পরীর গালে আলতো করে একটা চুমু খেল। গালের ওপরে অভির ঠোঁটের পরশ পেয়ে আরও গুটিশুটি মেরে ওর হাথ খানি বুকের ওপরে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে পড়ল। অভি পরীর গায়ের উষ্ণতা হাতের ওপরে অনুভব করল। কিছুপরে জিওরিতে বল্বিন্দার গাড়ি থামিয়ে পেট্রল ভরে নিল।
গাড়ি থামতেই পরী জেগে গেল, "আমরা দাঁড়িয়ে কেন?"
অভি, "তেল ভরার জন্য।"
পরী, "আমি কতক্ষণ ঘুমিয়েছি।"
অভি, "বেশিক্ষণ ঘুময় নি তুমি আবার ঘুম লাগাতে পার।"
পরী, "আর কতক্ষণ লাগবে চিতকুল পৌঁছতে?"
অভি পেট্রোল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করে যেনে নিল যে চিতকুল পৌঁছতে এখন ঘন্টা চারেক লাগবে। লোকটা আরও জানিয়ে দিল যে, সামনে কারছাম ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা মটামুটি তারপরে রাস্তার অবস্থা খারাপ। বল্বিন্দার ওর কথা শুনে উত্তর দিল, "স্যারজি চিন্তা করবেন না একদম। আমি ঠিক আপনাদের নিয়ে যাব।"
পরী বিশেষ হিন্দি বোঝে না তাই অভিকে জিজ্ঞেস করল যে বল্বিন্দার কি বলল ওকে। অভি জানাল যে রাস্তার অবস্থা হয়ত ভাল না কিন্তু বল্বিন্দার ভরসা দিয়েছে যে গাড়ি চালাতে ওর কোন কষ্ট হবে না। ঘড়ি দেখল অভি, আরাইটে বাজে, মানে চিতকুল পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে।
জিওরি ছারতেই পরী বলল আর ঘুমাবে না, জেগে থেকে এখন শুধু পাহাড় দেখবে। কারছাম পৌঁছতেই সূর্যি ডুবে গেল। পাহাড়ে তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে এল। কারছামে ওরা লক্ষ্য করল যে দুটি নদী এসে মিশেছে। একটার জলের রঙ একটু ঘোলাটে একটা একদম পরিষ্কার তুঁতে রঙের।
পরী তুঁতে রঙের জলের নদী আগে কোনদিন দেখেনি। ওরা নদী দেখে বিস্ময়ান্বিত। অভিকে জিজ্ঞেস করল, "এই নদীর নাম কি?"
অভিও কোনদিন তুঁতে রঙের জল দেখেনি, ও বল্বিন্দার কে গাড়ি থামাতে বলল। গাড়ি থামতেই ওরা নেমে নদীর পাড়ে গেল। পরী ওকে জিজ্ঞেস করল, "এই নদীর নাম কি? এই নদী কি আমরা চিতকুলে পাব?"
অভি মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ এই নদী তুমি চিতকুলে দেখতে পাবে। সম্ভবত এই নদীর নাম বিয়াস, চিন থেকে আসছে এই নদী।"
কারছাম ব্রিজ পার করে, এন.এইচ.22 ছেড়ে ওরা চিতকুলের রাস্তা ধরল। রাস্তায় বড় বড় পাথর আর রাস্তাটা খুব নির্জন। আসেপাসে লোকজনের দেখা নেই নেই কোন গাড়ি ঘোড়া। বাইরে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। অভি পরীকে জড়িয়ে ধরে বসে। বাইরের আলো কমে এসেছে আগেই তাই বল্বিন্দার গাড়ির লাইট জ্বালিয়ে দিল। পরী অভির দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকাল।
অভি ওকে আসস্থ করে বলল, "অযথা ভয় পেওনা।"
পরী ওর গালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল, "তুমি আছো ত তাহলে আর ভয় কিসের। আমি শুধু এটা ভেবে অবাক হচ্ছি যে তুমি এই রকম জন বিরল জায়গার খোঁজ পেলে কি করে?"
অভি ওকে আদর করে উত্তর দেয়, "তুমি আমার পাশে থাকলে আমি ত বিশ্ব জয় করে নেব, সোনা।"
ওর গালে একটা চুমু খেয়ে বলল পরী, "আমার সোনার ছোট্ট রাজকুমার।"
সাঙলা পার হতেই ঘন অন্ধকার ওদের ঢেকে নিল। এবড় খাবড় রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে বল্বিন্দারের একটু অসুবিধে হচ্ছিল। অভি জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দিল যে ঠিক আছে সব। পরী অভির দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকাল। বাইরে কোন আলো দেখা যায় না, ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা দু’পাস। কোথায় পাহাড় আর কোথায় রাস্তা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অভি পরীকে ভয় পেতে বারন করল।
কিছু পরে অভিকে মৃদু বকুনি দিয়ে বলল, "আমাদের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কেউ জানতেও পারবে না।"
অভি ওকে আসস্থ করে, "উল্ট পালটা কিছু বোলো না, আমাদের কিছু হবে না পরী।"
পরী রেগে সিটের এককোণে সরে গিয়ে বসল। উতকন্ঠায় পরী চুপ করে বসে, জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকার দেখতে থাকে। অভি পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য ওকে জিজ্ঞেস করল, "বাইরে অন্ধকারে কি দেখছ?"
কিছু উত্তর দিল না পরী, ওর দিকে একবার কটমট করে তাকিয়ে আবার বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকল। ভয়ে ওর মুখ শুকিয়ে গেছে, বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে গেছে। অভি প্রথম বার এই জায়গায় এসেছে, ওই বা কি করে জানবে যে রাস্তার অবস্তা ওই রকম খারাপ হবে। অভি ও উতকন্ঠায় বসে, কতক্ষণে গন্তব্য স্থানে পৌছবে। পরী গম্ভির মুখ করে একদম চুপ করে বসে।
আরও প্রায় ঘন্টা খানেক পরে ওরা চিতকুল পৌঁছে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে, কিছু দুরে কিছু আলো টিমটিম করে জ্বলছে। পরীকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে অভি নেমে গেল হোটেলের খোঁজে। বাইরে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া যেন যুদ্ধ জুড়েছে। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পরে রাস্তার একদম শেষে একটা হোটেলের সন্ধান পেল অভি। ম্যানেজার জানাল যে হোটেল একদম ফাঁকা, এই ঠাণ্ডায় কেউ এখানে ঘুরতে আসেনা। একটা রুম ভাড়া নিয়ে নিল অভি। পরী সেই যে সাঙলা থেকে গুম মেরে বসে আছে, হোটেলে ঢোকা পর্যন্ত কোন কথা বলল না।