27-02-2019, 03:49 PM
অপরিজ্ঞাত যাত্রা (#01)
কিছুদিন পরে অভি দেখল যে ওর চোখে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা নিল অভি। ওর চোখে চশমা দেখে মায়ের চিন্তা একটু বেড়ে গেল, মৃদু বকুনিও শুনতে হল ওকে, নিজের যত্ন নেয় না খালি রাত জেগে টি.ভি দেখা। প্রথম প্রথম চশমা নিয়ে একটু অসুবিধা হত, পরে ঠিক হয়ে গেল|
অনেক কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। বাবা মাকে কি বলে বের হবে তাঁর চিন্তা, কোথায় যাবে, কি করে যাবে তাঁর চিন্তা, পরীকে কি করে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বার করবে তাঁর চিন্তা। ওর এক সিনিয়ার বন্ধু, সুপ্রতিমদা দিল্লীতে থাকে। নয়ডার কোন এক বড় আই.টি কম্পানিতে চাকরি করে। একদিন ওকে ফোন করল অভি, জানাল যে ও হিমাচল ঘুরতে যেতে চায়, একটা গাড়ির ব্যাবস্তা করে দিতে হবে। সুপ্রতিমদা জানাল যে অভি ওর টাটা সাফারি নিয়ে ঘুরতে যেতে পারে, আরও জিজ্ঞেস করল যে কাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে, একা একা না কেউ স্পেসাল থাকবে সাথে। সুপ্রতিমদা জানতে চাইল যে বাবা মা জানেন কিনা ওর প্রেমের ব্যাপারে। অভি বলল যে, দেখা হলে সব জানাবে, কিন্তু গাড়ি ওর কাল্কাতে চাই। সুপ্রতিমদা বলল, যে অনেক দিন পরে ওদের দেখা হবে সুতরাং দিল্লীতে যদি ও দেখা না করে তাহলে ও গাড়ি দেবে না।
অভি হেসে ফেলল, "ঠিক আছে বাবা আমি তোর সাথে দিল্লীতে দেখা করব, কিন্তু গাড়ি ঠিক করে রাখিস।"
সুপ্রতিমদা, "তুই ব্যাটা ডুবে ডুবে কি জল খাচ্ছিস সেটা না যেনে আমি তোকে গাড়ি দেব না। গাড়ি পেতে হলে দিল্লীতে নাম তারপরে গাড়ি।"
অভি, "ঠিক আছে তাই হবে।"
বেশি দিন বাকি নেই, পরিকল্পনা টাকে বেশ ভাল করে ভাবতে হবে আবার। কাল্কা না এবারে দিল্লী যেতে হবে। একদিন রাতে খাবার টেবিলে অভি জানাল যে ও ঘুরতে যেতে চায়। একা একা আগেও ঘুরতে বেড়িয়েছে ও, তাই বাবা মার কাছ থেকে অনুমতি পেতে বিশেষ অসুবিধা হল না। বাবা জিজ্ঞেস করলেন যে কোথায় যেতে চায়। অভি জানাল যে ও হিমাচল প্রদেশে ঘুরতে যেতে চায়। বাবা প্রস্তাব দিলেন যে মানালি তে এখন বরফ পড়বে, ও যদি বরফ দেখতে চায় তাহলে মানালি, কুলু সিম্লা ঘুরতে যেতে পারে। অভি বলল যে ও এমন এক জায়গায় যেতে চায় যেখানে মানুষের যাতায়াত কম। বাবা খুব ঘুরেত ভালবাসেন। বাবা আই.এ.এ.আই এর(দমদম এয়ারপোরট অথরিটি) উচ্চ পদস্থ অফিসার। একদিন বাবা হিমাচলের ম্যাপ নিয়ে এলেন। ম্যাপ দেখে জানালেন যে অভি সাঙলা ভ্যালি তে চিতকুল নামে এক জায়গায় ঘুরতে যেতে পারে। ওখানে মানুষের আগমন খুব কম আর শীত কালে জায়গাটা একদম খালি থাকবে। অভি এই জায়গার নাম আগে কোনদিন শোনেনি, তাও যেতে রাজি হল এই ভেবে যে জায়গাটা একদম নিরিবিলি।
ব্যাগ ঘুছাতে শুরু করে দিল অভি, শীতের জামাকাপড় আর ঘুরতে যাবার সরঞ্জাম। মা প্রথমে একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন, কিন্তু অভি অনাকে শান্তনা দিয়ে বলে, ও আগেও একা একা ঘুরতে গেছে তাই যেন চিন্তা না করে। এবারে চিন্তা হচ্ছে পরীকে কি করে কাল্কা স্টেসান থেকে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বের করা যায়। যাবার আগে আর দাড়ি কামালো না, গাল ভর্তি গোঁফ দাড়ি, চোখে চশমা, একদিন আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারল না অভি। ছদ্মবেশ টা বেশ ভাল লাগল অভির। মা ওকে দেখে রেগে গিয়ে দাড়ি কাটার জন্য বললেন।
চিতকুলে একা অভি আর পরী থাকবে, হয়ত আর কোন লোকজনের দেখা পাবে না। রাত একসাথে এক ঘরের মধ্যে কাটাবে, অভির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। কামনার আগুনে পুড়ে অভি আর পরী শুধু মাত্র যে চুম্বনে বা আলঙ্গনে থেমে থাকবে না সেটা অনুধাবন করতে অসুবিধে হল না। অভি সেই মিলন রাতের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিল। যত দিন এগোয় অভির বুকের ধুকপুকানি বেড়ে চলে, পরীর সাথে একা একা ঘুরতে যাওয়ার কথা ভেবে, প্রথম মিলনের রাতের কথা ভেবে, কি করে প্রেমে ভালবাসায় পরীকে ভরিয়ে তুল্বে সেই কথা ভেবে রাত আর কাটতে চায় না।
যাবার আগেও মা বললেন ওকে দাড়ি কাটতে, মাকে বলল যে দিল্লী নেমে ও সুপ্রতিমদার বাড়িতে যাবে সেখানে স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে তবে গাড়ি নিয়ে হিমাচলের যাত্রা করবে। যাবার আগে বাবা ওর হাতে একটা খাম দিয়ে বললেন যে ওতে হাজার আটেক টাকা আছে।
অবশেষে এল ঘুরতে যাবার দিন। দুপুরের ফ্লাইটে চেপে অভি দিল্লীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। রবিবার ভোররাতেই পরী কাল্কা স্টেসানে পৌঁছে যাবে। অভির বিশ্বাস যে পরী ওর জন্য অপেক্ষা করবে, কিন্তু পরী যে জানেনা যে অভি প্লেনে করে দিল্লী আসছে।
দিল্লী নেমে সুপ্রতিমদার সাথে দেখা হল। সুপ্রতিমদার বাড়ি চিত্তরঞ্জন পার্কে, ওর বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম করে নিল। গল্পের ছলে সুপ্রতিমদা ওর ভালবাসার কথা জানতে চাইল। পরীর কথা বলল সুপ্রতিমদা কে কিন্তু অতি সতর্কতা করে অভি পরীর আর মায়ের সম্পর্ক এড়িয়ে গেল।
সুপ্রতিমদা অবিবাহিত, অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, "তুই আর কত দিন একা একা থাকবি? এবারে বিয়ে টা ক্করে ফেল।"
সুপ্রতিমদা, "ধুর বাবা বিয়ে করে কি হবে, টাইম পাসের জন্য ত পাওয়া যায় রে।" দুজিনেই হেসে ফেলল।
সুপ্রতিমদা, "তাহলে চিতকুল যাচ্ছিস? কোথায় সেটা?"
অভি, "হিমাচলের এক কোনায়, সাঙলা ভ্যালি নামে এক ভ্যালিতে।"
সুপ্রতিমদা, "মানালি বা ডালহউসি যেতে পারতিস।"
অভি, "না পরীর বান্ধবীরা মানালি যাচ্ছে, পরীর ইচ্ছে আমরা এমন এক জায়গায় যাই যেখানে কেউ থাকবে না। অনেক ভেবে চিন্তে এই জায়গাটা বেছেছি।"
সুপ্রতিমদা বলল যে ওর ড্রাইভার বল্বিন্দার অভির সাথে যাবে। বেশ মিশুকে লোক, ভাল ড্রাইভার আর ঘুরতেও ভালবাসে। অভি বা পরীর কোন চিন্তা করার দরকার নেই। সুপ্রতিমদা আরও বলল যে দিল্লী থেকে কাল্কা প্রায় ঘন্টা আটেকের রাস্তা, বিকেল বিকেল বেড়িয়ে পড়তে পারলে মাঝ রাতের মধ্যে কাল্কা পৌঁছে যাবে। রাতের বেলা ড্রাইভ করাটা যদিও একটু মুশকিল হতে পারে, একে শীতকাল রাস্তায় রাতে কুয়াশা হতে পারে আর ট্রাক বা বাস ত আছেই। অভিকে জিজ্ঞেস করল যে পর্যাপ্ত গরমের পোশাক এনেছে কিনা।
বিকেল বেলায় অজানার পানে যাত্রা হল শুরু। দিল্লী থেকে গাড়ি ছাড়ল বিকেল ছটার মধ্যে, ঘন্টা দুয়েক পরেই গাড়ি দউরাতে শুরু করল হাইওয়ে ধরে। এক মিনিট পার হচ্ছে আর অভির ধুকপুকানি বেড়ে চলেছে, সকাল বেলায় দেখা হবে পরীর সাথে। অভি বল্বিন্দর কে বলল যে ও গাড়ি চালাবে। বল্বিন্দর ওকে সাবধান করে বলল যে রাতে কুয়াশা আর ট্রাক দেখে যেন গাড়ি চালায়। অভি বলল যে পাহাড়ে ও গাড়ি চালাতে পারবেনা কিন্তু সমতলে ওর হাত নিখুঁত।
সনেপত পেরনর পরে বল্বিন্দার ওকে গাড়ির স্টিয়ারিঙে বসতে দিল। অভি স্টিয়ারিঙে বসেই গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই কাটা আশি ছাড়িয়ে একশো। বল্বিন্দার বলল যে ওর শুধু মাত্র দু’বোতল চাই তাহলেই ওর পারিশ্রমিক হয়ে যাবে। আম্বালাতে থেমে ওরা এলকোহল কিনে নেবে এই ঠিক হল।
বল্বিন্দার ওকে জিজ্ঞেস করল, "স্যারজি, ভাভি জি কি করেন?"
"ভাভিজি" কথাটা শুনে মনে মনে হেসে ওঠে অভি, "ভাভি জি এই সবে কলেজ থেকে পাশ করেছে।"
বল্বিন্দার, "ট্রেন কাল্কা স্টেসানে কখন পৌঁছাবে?"
অভি, "হাওড়া কাল্কা মেলে আসছে ভাভিজি। সম্ভবত সকাল চারটে কি সাড়ে চারটেতে পৌছবে।"
বল্বিন্দার, "কাল্কা মেল, তাহলে লেট করবে স্যারজি, চিন্তা নেই আপনি আস্তে চালান।"
অভির মন মানে না, যদি ট্রেন আগে এসে পৌঁছে গিয়ে থাকে, যদি পরী ট্রেন থেকে নেমে ওকে দেখতে না পায়, তাহলে কি করবে। অভি বল্বিন্দার কে বলে, "না আমি কোন ঝুঁকি নিতে চাই না। আমি আগেভাগে স্টেসানে পৌছাতে চাই, তাতে যদি আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তা আমি দাঁড়িয়ে থাকব।"
ঠাণ্ডার অন্ধকার রাত কেটে গাড়ি সো সো করে এগিয়ে চলে অচেনা গন্তব্য স্থলের পানে। জানে না অভি কোথায় যাচ্ছে, অভি কোনদিন হিমাচলে আগে আসেনি আর পরীও কোনদিন পাহাড় দেখেনি। সো সো করে ট্রাক বাস কে টপকে গাড়ি কুয়াশা আর অন্ধকার কেটে ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে। একটানা গাড়ি চালিয়ে অভির মাঝে একটু ঝিম ধরে গেল, রাত দশ’টা নাগাদ, মাঝখানে এক জায়গায় থেমে বল্বিন্দার আর অভি একটু চা খেয়ে নিল।
গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। কুয়াশা দেখে বল্বিন্দার ওকে আস্তে চালাতে বলল। গাড়ি ধিরে ধিরে চালাচ্ছে অভি। বল্বিন্দার ওকে বলল যে আম্বালা পৌঁছে যেন ফ্লাই অভারে না চড়ে। ফ্লাইঅভারের নিচ দিয়ে সহরে ঢুকে ওরা দু বোতল এলকোহল কিনে নিল।
বল্বিন্দার, "স্যারজি, আমরা অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাব’ত। আপনি পিঞ্জোর পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যান তারপরে আমি চালাব খানে।"
অভি জানাল যে আগে কোনদিন এদিকে আসেনি তাই ও রাস্তা ঘাট চেনেনা। বল্বিন্দার বলল যে সিমলা পর্যন্ত রাস্তা ওর চেনা, তারপরে না হয় লোকজন কে জিজ্ঞেস করে রাস্তা যেনে নেওয়া যাবে। আম্বালা ছাড়িয়ে গাড়ি এন.এইচ.1 ছেড়ে এন.এইচ.22 ধরল। পিঞ্জোর ছাড়াতেই বল্বিন্দার গাড়ি চালাতে শুরু করল। পাসের সিটে বসে অভি চোখ বন্ধ করে মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম নিল।
কিছুদিন পরে অভি দেখল যে ওর চোখে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা নিল অভি। ওর চোখে চশমা দেখে মায়ের চিন্তা একটু বেড়ে গেল, মৃদু বকুনিও শুনতে হল ওকে, নিজের যত্ন নেয় না খালি রাত জেগে টি.ভি দেখা। প্রথম প্রথম চশমা নিয়ে একটু অসুবিধা হত, পরে ঠিক হয়ে গেল|
অনেক কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। বাবা মাকে কি বলে বের হবে তাঁর চিন্তা, কোথায় যাবে, কি করে যাবে তাঁর চিন্তা, পরীকে কি করে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বার করবে তাঁর চিন্তা। ওর এক সিনিয়ার বন্ধু, সুপ্রতিমদা দিল্লীতে থাকে। নয়ডার কোন এক বড় আই.টি কম্পানিতে চাকরি করে। একদিন ওকে ফোন করল অভি, জানাল যে ও হিমাচল ঘুরতে যেতে চায়, একটা গাড়ির ব্যাবস্তা করে দিতে হবে। সুপ্রতিমদা জানাল যে অভি ওর টাটা সাফারি নিয়ে ঘুরতে যেতে পারে, আরও জিজ্ঞেস করল যে কাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে, একা একা না কেউ স্পেসাল থাকবে সাথে। সুপ্রতিমদা জানতে চাইল যে বাবা মা জানেন কিনা ওর প্রেমের ব্যাপারে। অভি বলল যে, দেখা হলে সব জানাবে, কিন্তু গাড়ি ওর কাল্কাতে চাই। সুপ্রতিমদা বলল, যে অনেক দিন পরে ওদের দেখা হবে সুতরাং দিল্লীতে যদি ও দেখা না করে তাহলে ও গাড়ি দেবে না।
অভি হেসে ফেলল, "ঠিক আছে বাবা আমি তোর সাথে দিল্লীতে দেখা করব, কিন্তু গাড়ি ঠিক করে রাখিস।"
সুপ্রতিমদা, "তুই ব্যাটা ডুবে ডুবে কি জল খাচ্ছিস সেটা না যেনে আমি তোকে গাড়ি দেব না। গাড়ি পেতে হলে দিল্লীতে নাম তারপরে গাড়ি।"
অভি, "ঠিক আছে তাই হবে।"
বেশি দিন বাকি নেই, পরিকল্পনা টাকে বেশ ভাল করে ভাবতে হবে আবার। কাল্কা না এবারে দিল্লী যেতে হবে। একদিন রাতে খাবার টেবিলে অভি জানাল যে ও ঘুরতে যেতে চায়। একা একা আগেও ঘুরতে বেড়িয়েছে ও, তাই বাবা মার কাছ থেকে অনুমতি পেতে বিশেষ অসুবিধা হল না। বাবা জিজ্ঞেস করলেন যে কোথায় যেতে চায়। অভি জানাল যে ও হিমাচল প্রদেশে ঘুরতে যেতে চায়। বাবা প্রস্তাব দিলেন যে মানালি তে এখন বরফ পড়বে, ও যদি বরফ দেখতে চায় তাহলে মানালি, কুলু সিম্লা ঘুরতে যেতে পারে। অভি বলল যে ও এমন এক জায়গায় যেতে চায় যেখানে মানুষের যাতায়াত কম। বাবা খুব ঘুরেত ভালবাসেন। বাবা আই.এ.এ.আই এর(দমদম এয়ারপোরট অথরিটি) উচ্চ পদস্থ অফিসার। একদিন বাবা হিমাচলের ম্যাপ নিয়ে এলেন। ম্যাপ দেখে জানালেন যে অভি সাঙলা ভ্যালি তে চিতকুল নামে এক জায়গায় ঘুরতে যেতে পারে। ওখানে মানুষের আগমন খুব কম আর শীত কালে জায়গাটা একদম খালি থাকবে। অভি এই জায়গার নাম আগে কোনদিন শোনেনি, তাও যেতে রাজি হল এই ভেবে যে জায়গাটা একদম নিরিবিলি।
ব্যাগ ঘুছাতে শুরু করে দিল অভি, শীতের জামাকাপড় আর ঘুরতে যাবার সরঞ্জাম। মা প্রথমে একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন, কিন্তু অভি অনাকে শান্তনা দিয়ে বলে, ও আগেও একা একা ঘুরতে গেছে তাই যেন চিন্তা না করে। এবারে চিন্তা হচ্ছে পরীকে কি করে কাল্কা স্টেসান থেকে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বের করা যায়। যাবার আগে আর দাড়ি কামালো না, গাল ভর্তি গোঁফ দাড়ি, চোখে চশমা, একদিন আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারল না অভি। ছদ্মবেশ টা বেশ ভাল লাগল অভির। মা ওকে দেখে রেগে গিয়ে দাড়ি কাটার জন্য বললেন।
চিতকুলে একা অভি আর পরী থাকবে, হয়ত আর কোন লোকজনের দেখা পাবে না। রাত একসাথে এক ঘরের মধ্যে কাটাবে, অভির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। কামনার আগুনে পুড়ে অভি আর পরী শুধু মাত্র যে চুম্বনে বা আলঙ্গনে থেমে থাকবে না সেটা অনুধাবন করতে অসুবিধে হল না। অভি সেই মিলন রাতের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিল। যত দিন এগোয় অভির বুকের ধুকপুকানি বেড়ে চলে, পরীর সাথে একা একা ঘুরতে যাওয়ার কথা ভেবে, প্রথম মিলনের রাতের কথা ভেবে, কি করে প্রেমে ভালবাসায় পরীকে ভরিয়ে তুল্বে সেই কথা ভেবে রাত আর কাটতে চায় না।
যাবার আগেও মা বললেন ওকে দাড়ি কাটতে, মাকে বলল যে দিল্লী নেমে ও সুপ্রতিমদার বাড়িতে যাবে সেখানে স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে তবে গাড়ি নিয়ে হিমাচলের যাত্রা করবে। যাবার আগে বাবা ওর হাতে একটা খাম দিয়ে বললেন যে ওতে হাজার আটেক টাকা আছে।
অবশেষে এল ঘুরতে যাবার দিন। দুপুরের ফ্লাইটে চেপে অভি দিল্লীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। রবিবার ভোররাতেই পরী কাল্কা স্টেসানে পৌঁছে যাবে। অভির বিশ্বাস যে পরী ওর জন্য অপেক্ষা করবে, কিন্তু পরী যে জানেনা যে অভি প্লেনে করে দিল্লী আসছে।
দিল্লী নেমে সুপ্রতিমদার সাথে দেখা হল। সুপ্রতিমদার বাড়ি চিত্তরঞ্জন পার্কে, ওর বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম করে নিল। গল্পের ছলে সুপ্রতিমদা ওর ভালবাসার কথা জানতে চাইল। পরীর কথা বলল সুপ্রতিমদা কে কিন্তু অতি সতর্কতা করে অভি পরীর আর মায়ের সম্পর্ক এড়িয়ে গেল।
সুপ্রতিমদা অবিবাহিত, অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, "তুই আর কত দিন একা একা থাকবি? এবারে বিয়ে টা ক্করে ফেল।"
সুপ্রতিমদা, "ধুর বাবা বিয়ে করে কি হবে, টাইম পাসের জন্য ত পাওয়া যায় রে।" দুজিনেই হেসে ফেলল।
সুপ্রতিমদা, "তাহলে চিতকুল যাচ্ছিস? কোথায় সেটা?"
অভি, "হিমাচলের এক কোনায়, সাঙলা ভ্যালি নামে এক ভ্যালিতে।"
সুপ্রতিমদা, "মানালি বা ডালহউসি যেতে পারতিস।"
অভি, "না পরীর বান্ধবীরা মানালি যাচ্ছে, পরীর ইচ্ছে আমরা এমন এক জায়গায় যাই যেখানে কেউ থাকবে না। অনেক ভেবে চিন্তে এই জায়গাটা বেছেছি।"
সুপ্রতিমদা বলল যে ওর ড্রাইভার বল্বিন্দার অভির সাথে যাবে। বেশ মিশুকে লোক, ভাল ড্রাইভার আর ঘুরতেও ভালবাসে। অভি বা পরীর কোন চিন্তা করার দরকার নেই। সুপ্রতিমদা আরও বলল যে দিল্লী থেকে কাল্কা প্রায় ঘন্টা আটেকের রাস্তা, বিকেল বিকেল বেড়িয়ে পড়তে পারলে মাঝ রাতের মধ্যে কাল্কা পৌঁছে যাবে। রাতের বেলা ড্রাইভ করাটা যদিও একটু মুশকিল হতে পারে, একে শীতকাল রাস্তায় রাতে কুয়াশা হতে পারে আর ট্রাক বা বাস ত আছেই। অভিকে জিজ্ঞেস করল যে পর্যাপ্ত গরমের পোশাক এনেছে কিনা।
বিকেল বেলায় অজানার পানে যাত্রা হল শুরু। দিল্লী থেকে গাড়ি ছাড়ল বিকেল ছটার মধ্যে, ঘন্টা দুয়েক পরেই গাড়ি দউরাতে শুরু করল হাইওয়ে ধরে। এক মিনিট পার হচ্ছে আর অভির ধুকপুকানি বেড়ে চলেছে, সকাল বেলায় দেখা হবে পরীর সাথে। অভি বল্বিন্দর কে বলল যে ও গাড়ি চালাবে। বল্বিন্দর ওকে সাবধান করে বলল যে রাতে কুয়াশা আর ট্রাক দেখে যেন গাড়ি চালায়। অভি বলল যে পাহাড়ে ও গাড়ি চালাতে পারবেনা কিন্তু সমতলে ওর হাত নিখুঁত।
সনেপত পেরনর পরে বল্বিন্দার ওকে গাড়ির স্টিয়ারিঙে বসতে দিল। অভি স্টিয়ারিঙে বসেই গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই কাটা আশি ছাড়িয়ে একশো। বল্বিন্দার বলল যে ওর শুধু মাত্র দু’বোতল চাই তাহলেই ওর পারিশ্রমিক হয়ে যাবে। আম্বালাতে থেমে ওরা এলকোহল কিনে নেবে এই ঠিক হল।
বল্বিন্দার ওকে জিজ্ঞেস করল, "স্যারজি, ভাভি জি কি করেন?"
"ভাভিজি" কথাটা শুনে মনে মনে হেসে ওঠে অভি, "ভাভি জি এই সবে কলেজ থেকে পাশ করেছে।"
বল্বিন্দার, "ট্রেন কাল্কা স্টেসানে কখন পৌঁছাবে?"
অভি, "হাওড়া কাল্কা মেলে আসছে ভাভিজি। সম্ভবত সকাল চারটে কি সাড়ে চারটেতে পৌছবে।"
বল্বিন্দার, "কাল্কা মেল, তাহলে লেট করবে স্যারজি, চিন্তা নেই আপনি আস্তে চালান।"
অভির মন মানে না, যদি ট্রেন আগে এসে পৌঁছে গিয়ে থাকে, যদি পরী ট্রেন থেকে নেমে ওকে দেখতে না পায়, তাহলে কি করবে। অভি বল্বিন্দার কে বলে, "না আমি কোন ঝুঁকি নিতে চাই না। আমি আগেভাগে স্টেসানে পৌছাতে চাই, তাতে যদি আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তা আমি দাঁড়িয়ে থাকব।"
ঠাণ্ডার অন্ধকার রাত কেটে গাড়ি সো সো করে এগিয়ে চলে অচেনা গন্তব্য স্থলের পানে। জানে না অভি কোথায় যাচ্ছে, অভি কোনদিন হিমাচলে আগে আসেনি আর পরীও কোনদিন পাহাড় দেখেনি। সো সো করে ট্রাক বাস কে টপকে গাড়ি কুয়াশা আর অন্ধকার কেটে ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে। একটানা গাড়ি চালিয়ে অভির মাঝে একটু ঝিম ধরে গেল, রাত দশ’টা নাগাদ, মাঝখানে এক জায়গায় থেমে বল্বিন্দার আর অভি একটু চা খেয়ে নিল।
গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। কুয়াশা দেখে বল্বিন্দার ওকে আস্তে চালাতে বলল। গাড়ি ধিরে ধিরে চালাচ্ছে অভি। বল্বিন্দার ওকে বলল যে আম্বালা পৌঁছে যেন ফ্লাই অভারে না চড়ে। ফ্লাইঅভারের নিচ দিয়ে সহরে ঢুকে ওরা দু বোতল এলকোহল কিনে নিল।
বল্বিন্দার, "স্যারজি, আমরা অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাব’ত। আপনি পিঞ্জোর পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যান তারপরে আমি চালাব খানে।"
অভি জানাল যে আগে কোনদিন এদিকে আসেনি তাই ও রাস্তা ঘাট চেনেনা। বল্বিন্দার বলল যে সিমলা পর্যন্ত রাস্তা ওর চেনা, তারপরে না হয় লোকজন কে জিজ্ঞেস করে রাস্তা যেনে নেওয়া যাবে। আম্বালা ছাড়িয়ে গাড়ি এন.এইচ.1 ছেড়ে এন.এইচ.22 ধরল। পিঞ্জোর ছাড়াতেই বল্বিন্দার গাড়ি চালাতে শুরু করল। পাসের সিটে বসে অভি চোখ বন্ধ করে মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম নিল।