27-02-2019, 03:39 PM
অশ্রুভরা বিদায়
সময় খুব তাড়াতাড়ি এগিয়ে চলেছে। বাবা অভির কাছে এসে খেতে ডেকে নিয়ে গেলেন। দিদা ওদের জন্য আলাদা করে খাবার ঘরে খাবারের ব্যাবস্থা করেছিলেন। ওদের খাবার সময়ে সবাই ওদের চারপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ইন্দ্রানি মাসি এসে মাকে একবার অনুরধ করল আর এক রাত কাটিয়ে যেতে। মা জানালেন যে কাল মায়ের কলেজ আছে, বাবাকে অফিস যেতে হবে।
খাবার পরে দিদা মাকে ডেকে নিয়ে গেল ঘরের মধ্যে। অভি বুঝতে পারল যে কান্নার পালা শুরু। বাবা ওকে ডেকে নিয়ে গেল বারান্দার দিকে।
বাবা জিজ্ঞেস করলেন, "বিয়ে কেমন কাটল?"
অভি মাথা নাড়ল শুধু।
বাবা, "তুই ওপরের রুমে শিফট হয়ে যাস কাল থেকে, পরী আমাদের পাশের রুমে থাকবে।"
অভি আবার মাথা নাড়ল, "ঠিক আছে।"
ধিরে ধিরে রাত বাড়ছে, আত্মীয় সজ্জন অনেকে চলে গেছেন। বাবা জানালেন যে উঠানে ওদের জন্য গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ঘড়ির দিকে তাকালেন বাবা, রাত প্রায় এগারোটা বাজে। ওকে বললেন ভেতর থেকে ওদের মালপত্র নিয়ে এসে গাড়িতে রাখতে। মাথা নিচু করে পায়ের দিকে তাকাল অভি, পরীকে ছেড়ে যেতে হবে এবারে ভেবে বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠল। কিছু পরে ভেতর দিকে পা বাড়াল।
খাবার ঘরে দিদা মায়ের হাত দুটি ধরে বসে আছে, দু’জনার চোখে জল। ইন্দ্রানি মাসি আর মেঘনা পাশে দাঁড়িয়ে, ওদের চোখেও জল। সুব্রত ওদের মালপত্র কাজের লোককে দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিল। মৈথিলী চুপ করে দিদার পাশে দাঁড়িয়ে দিদার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এর মাঝে পরীর কোথাও দেখা নেই। এমন সময়ে চন্দ্রানি এসে অভিকে জানাল যে পরী ওপরের রুমে নিজেকে বন্ধ করে দিয়েছে, দরজা খুলছে না। দিদা ওর কথা শুনে আবার মাকে থেকে যেতে বলল।
মা বললেন, "আজ না হয় কাল আমাকে যেতে তো হবেই। কাল গেলেও তুমি কাঁদবে ত আজ কেন নয়।"
মাকে চন্দ্রানি বলল যে, পরী দরজা খুলছে না। মা ইন্দ্রানি মাসি কে নিয়ে দৌড়ে গেল ওপরে। সাথে সাথে সুব্রত আর অভিও দৌড়ে গেল। মা দরজায় টোকা দিয়ে পরীকে দরজা খুলতে বললেন, কিন্তু ভেতর থেকে কোন সারা শব্দ নেই।
মা আবার ডাক দিলেন, "পরী, সোনা মা আমার দরজা খোল।"
তাও দরজা খোলে না পরী। দু’জনেই ভয়ে অভি আর সুব্রতর দিকে তাকাল।
ওদিকে দিদা এসে গেছেন, দিদাও দরজায় ধাক্কা দিয়ে পরীকে দরজা খুলতে বলে, কিন্তু ভেতর থেকে কোন সারা না পেয়ে সবাই উদ্ভিগ্ন হয়ে ওঠে।
দিদা কেঁদে অথেন, "পরী, দোহাই মা আমার, দরজা খোল।"
সুব্রত আর অভি একে ওপরের মুখ চাওয়াচায়ি করে। দরজার পেছনে পরী না কিছু অঘটন ঘটায়। সুব্রত দউর দিল ছাদের দিকে, পেছন পেছন অভি। অভি কে জিজ্ঞেস করল সুব্রত যে পাইপ বেয়ে নিচে নামতে পারবে কিনা। অভির মাথায় তখন রক্ত চরে গেছে, কিছু আর ভাবতে পারছে না। মাথা নেড়ে বলল ও সব কিছু করতে রাজি। পাইপ বেয়ে দু’জনে জানালার কার্নিশে নেমে গেল। জানাল দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে যা দেখল তাতে অভির রক্ত জল হয়ে গেল। বিছানার ওপরে সংজ্ঞাহীন লুটিয়ে পরী।
অভি দৌড়ে গিয়ে পরীর মাথা কোলে তুলে নিল, পরী নড়ছে না। থমকে গেল অভি, বুকের কাছে কান নিয়ে এসে দেখল যে বুকটা ধুকপুক করছে। অভি হাতের কাছে একটা গ্লাসে জল ছিল, সেটা পরীর মুখের ওপরে ছিটিয়ে দিল। সুব্রত তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল। মা দিদা সবাই ঘরের মধ্যে ঢুকে পরলেন। দু’জনের মধ্যে কারুর কান্না আর থামে না।
কিছু পরে পরী চোখ খুলে চারপাশে তাকায়। ওকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে। মা ওকে কোলে নিয়ে চোখের বাঁধ ভেঙ্গে দিলেন।
মা, "পাগলি মেয়ে, এইরকম কেউ করে। কোনদিন আমার সামনে দরজা বন্ধ করবি না।"
মাকে জড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ল পরী, "প্লিস যেও না..."
মা ওর মুখ আঁজলা করে নিয়ে সান্তনা দিলেন, "তুই আমার সোনা মা না? বোকা মেয়ের মতন কেউ এই রকম করে কাঁদে নাকি? একটু হাস মা, আজ আমাকে ছেড়ে দে।"
কান্না কাটির পালা আরেক প্রস্থ শুরু হবে দেখে অভি আর সুব্রত ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। নিচে নেমে দেখে যে মৈথিলী আর অরুনিমা বসে আছে। কিছু পরে মায়ের সাথে পরী নিচে নেমে আসে। পরী তখন মায়ের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
অভি সুব্রত আর মৈথিলী কে জড়িয়ে ধরে বলল, "মামা চুর্নি কে দেখ। আর বেস্ট উইসেস ফর হানিমুন। পরে গল্প শুনব।"
মায়ের কান্না দেখে মনে হল যেন কেউ অনার বুকের একটুকরো কেটে রেখে দিয়েছে। বাবা মাকে ধরে গাড়িতে উঠে গেলেন। অভি ইন্দ্রানি মাসি কে প্রনাম করতে গেল, ইন্দ্রানি মাসি ওকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে বলল, "ভাল থাকিস।"
অভি একবার পরীর দিকে তাকাল, ওর চোখ দুটি লালা হয়ে গেছে, মৈথিলী ওকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে। অভি বুক ভরা শূন্যতায় একবার সবার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে গেল।
গাড়ি ছেড়ে দিল। ঠাণ্ডার রাত কেটে গাড়ি এগিয়ে চলল। পেছনের সিটে মা চুপ করে বাবার হাত ধরে বসে। অভি চুপ করে সামনের সিটে বসে। কিছু পরে চোখ বন্ধ করে নিল অভি। বন্ধ চোখের সামনে পরীর অশ্রুভরা লাল দু’নয়ন ভেসে উঠল। ওই দু’চোখ যেন ওকে বলছে, "আমি আজ থেকে প্রত্যেক মুহূর্তে তোমার কথা মনে করব।"
কাঁদতে পারল না অভি।
সময় খুব তাড়াতাড়ি এগিয়ে চলেছে। বাবা অভির কাছে এসে খেতে ডেকে নিয়ে গেলেন। দিদা ওদের জন্য আলাদা করে খাবার ঘরে খাবারের ব্যাবস্থা করেছিলেন। ওদের খাবার সময়ে সবাই ওদের চারপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ইন্দ্রানি মাসি এসে মাকে একবার অনুরধ করল আর এক রাত কাটিয়ে যেতে। মা জানালেন যে কাল মায়ের কলেজ আছে, বাবাকে অফিস যেতে হবে।
খাবার পরে দিদা মাকে ডেকে নিয়ে গেল ঘরের মধ্যে। অভি বুঝতে পারল যে কান্নার পালা শুরু। বাবা ওকে ডেকে নিয়ে গেল বারান্দার দিকে।
বাবা জিজ্ঞেস করলেন, "বিয়ে কেমন কাটল?"
অভি মাথা নাড়ল শুধু।
বাবা, "তুই ওপরের রুমে শিফট হয়ে যাস কাল থেকে, পরী আমাদের পাশের রুমে থাকবে।"
অভি আবার মাথা নাড়ল, "ঠিক আছে।"
ধিরে ধিরে রাত বাড়ছে, আত্মীয় সজ্জন অনেকে চলে গেছেন। বাবা জানালেন যে উঠানে ওদের জন্য গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ঘড়ির দিকে তাকালেন বাবা, রাত প্রায় এগারোটা বাজে। ওকে বললেন ভেতর থেকে ওদের মালপত্র নিয়ে এসে গাড়িতে রাখতে। মাথা নিচু করে পায়ের দিকে তাকাল অভি, পরীকে ছেড়ে যেতে হবে এবারে ভেবে বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠল। কিছু পরে ভেতর দিকে পা বাড়াল।
খাবার ঘরে দিদা মায়ের হাত দুটি ধরে বসে আছে, দু’জনার চোখে জল। ইন্দ্রানি মাসি আর মেঘনা পাশে দাঁড়িয়ে, ওদের চোখেও জল। সুব্রত ওদের মালপত্র কাজের লোককে দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিল। মৈথিলী চুপ করে দিদার পাশে দাঁড়িয়ে দিদার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এর মাঝে পরীর কোথাও দেখা নেই। এমন সময়ে চন্দ্রানি এসে অভিকে জানাল যে পরী ওপরের রুমে নিজেকে বন্ধ করে দিয়েছে, দরজা খুলছে না। দিদা ওর কথা শুনে আবার মাকে থেকে যেতে বলল।
মা বললেন, "আজ না হয় কাল আমাকে যেতে তো হবেই। কাল গেলেও তুমি কাঁদবে ত আজ কেন নয়।"
মাকে চন্দ্রানি বলল যে, পরী দরজা খুলছে না। মা ইন্দ্রানি মাসি কে নিয়ে দৌড়ে গেল ওপরে। সাথে সাথে সুব্রত আর অভিও দৌড়ে গেল। মা দরজায় টোকা দিয়ে পরীকে দরজা খুলতে বললেন, কিন্তু ভেতর থেকে কোন সারা শব্দ নেই।
মা আবার ডাক দিলেন, "পরী, সোনা মা আমার দরজা খোল।"
তাও দরজা খোলে না পরী। দু’জনেই ভয়ে অভি আর সুব্রতর দিকে তাকাল।
ওদিকে দিদা এসে গেছেন, দিদাও দরজায় ধাক্কা দিয়ে পরীকে দরজা খুলতে বলে, কিন্তু ভেতর থেকে কোন সারা না পেয়ে সবাই উদ্ভিগ্ন হয়ে ওঠে।
দিদা কেঁদে অথেন, "পরী, দোহাই মা আমার, দরজা খোল।"
সুব্রত আর অভি একে ওপরের মুখ চাওয়াচায়ি করে। দরজার পেছনে পরী না কিছু অঘটন ঘটায়। সুব্রত দউর দিল ছাদের দিকে, পেছন পেছন অভি। অভি কে জিজ্ঞেস করল সুব্রত যে পাইপ বেয়ে নিচে নামতে পারবে কিনা। অভির মাথায় তখন রক্ত চরে গেছে, কিছু আর ভাবতে পারছে না। মাথা নেড়ে বলল ও সব কিছু করতে রাজি। পাইপ বেয়ে দু’জনে জানালার কার্নিশে নেমে গেল। জানাল দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে যা দেখল তাতে অভির রক্ত জল হয়ে গেল। বিছানার ওপরে সংজ্ঞাহীন লুটিয়ে পরী।
অভি দৌড়ে গিয়ে পরীর মাথা কোলে তুলে নিল, পরী নড়ছে না। থমকে গেল অভি, বুকের কাছে কান নিয়ে এসে দেখল যে বুকটা ধুকপুক করছে। অভি হাতের কাছে একটা গ্লাসে জল ছিল, সেটা পরীর মুখের ওপরে ছিটিয়ে দিল। সুব্রত তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল। মা দিদা সবাই ঘরের মধ্যে ঢুকে পরলেন। দু’জনের মধ্যে কারুর কান্না আর থামে না।
কিছু পরে পরী চোখ খুলে চারপাশে তাকায়। ওকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে। মা ওকে কোলে নিয়ে চোখের বাঁধ ভেঙ্গে দিলেন।
মা, "পাগলি মেয়ে, এইরকম কেউ করে। কোনদিন আমার সামনে দরজা বন্ধ করবি না।"
মাকে জড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ল পরী, "প্লিস যেও না..."
মা ওর মুখ আঁজলা করে নিয়ে সান্তনা দিলেন, "তুই আমার সোনা মা না? বোকা মেয়ের মতন কেউ এই রকম করে কাঁদে নাকি? একটু হাস মা, আজ আমাকে ছেড়ে দে।"
কান্না কাটির পালা আরেক প্রস্থ শুরু হবে দেখে অভি আর সুব্রত ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। নিচে নেমে দেখে যে মৈথিলী আর অরুনিমা বসে আছে। কিছু পরে মায়ের সাথে পরী নিচে নেমে আসে। পরী তখন মায়ের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
অভি সুব্রত আর মৈথিলী কে জড়িয়ে ধরে বলল, "মামা চুর্নি কে দেখ। আর বেস্ট উইসেস ফর হানিমুন। পরে গল্প শুনব।"
মায়ের কান্না দেখে মনে হল যেন কেউ অনার বুকের একটুকরো কেটে রেখে দিয়েছে। বাবা মাকে ধরে গাড়িতে উঠে গেলেন। অভি ইন্দ্রানি মাসি কে প্রনাম করতে গেল, ইন্দ্রানি মাসি ওকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে বলল, "ভাল থাকিস।"
অভি একবার পরীর দিকে তাকাল, ওর চোখ দুটি লালা হয়ে গেছে, মৈথিলী ওকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে। অভি বুক ভরা শূন্যতায় একবার সবার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে গেল।
গাড়ি ছেড়ে দিল। ঠাণ্ডার রাত কেটে গাড়ি এগিয়ে চলল। পেছনের সিটে মা চুপ করে বাবার হাত ধরে বসে। অভি চুপ করে সামনের সিটে বসে। কিছু পরে চোখ বন্ধ করে নিল অভি। বন্ধ চোখের সামনে পরীর অশ্রুভরা লাল দু’নয়ন ভেসে উঠল। ওই দু’চোখ যেন ওকে বলছে, "আমি আজ থেকে প্রত্যেক মুহূর্তে তোমার কথা মনে করব।"
কাঁদতে পারল না অভি।