Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram
#15
বিস্ময়

ছাদে উঠে অভি চেয়ে থাকে দুরের মাথের দিকে, ধানের খেতের ওপরে নির্মল বাতাসে কচি কচি ধান হাওয়াতে মাথা দোলাচ্ছে। মাথার ওপরে শীতকালের সূর্যি, ধিরে ধিরে পশ্চিম আকাশের দিকে পা এগিয়ে দিয়েছে। পরীর কোন দেখা নেই। বুকের মাঝে এক অনির্বচনীয় ব্যাথা জেগে উঠল, গত তিনদিন ওর জীবনের সব অঙ্ক গুলিয়ে দিয়েছে। খালি হাতে এসেছিল এই বিয়ে বাড়িতে, কিন্তু ফিরে যাবার সময়ে নিয়ে যাচ্ছে বুক ভরা ভালবাসা। ভগবানের কাছে এর থেকে বেশি আর কিছু চাওয়ার নেই ওর। কিছু পরে বিয়ে বাড়ি আবার আত্মীয় সজ্জনের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠবে। কোলকাতা ফিরে যাবার আগে হয়ত পরীর সাথে আর একা একা দেখা করা যাবেনা। রাতের খাবার পরে, ওরা ফিরে যাবে কোলকাতা। কেন মরতে রাতে রাম খেতে গেল। যদি না খেত তাহলে ও পরীর সাথে, মায়ের সাথে শপিঙে যেতে পারত। এই সব ভাবতে ভাবতে এক সময়ে চোখে জল চলে আসে অভির। ঝনঝন করে উঠল মাথা, মনে হল যেন কানের কাছে কেউ কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গে দিয়েছে।

"কি হয়েছে তোর?"

মনে হল যেন অনেক দূর থেকে কেউ ডাক দিচ্ছে অভিকে। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে তাকিয়ে দেখল যে মা ওকে ডাকছে। চোখের জল লুকিয়ে তাকাল মায়ের দিকে, লক্ষ্য করল পরী মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। মা অভির কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে আবার জিজ্ঞেস করল, "তোর কি হয়েছে?"

কোন উত্তর দিতে পারল না অভি। ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে পরীর দিকে। ওই চোখ দেখে পরীর চোখ ফেটে জল চলে আসে, ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলে নেয়। বুঝতে পারে অভির মনের বেদনা। মা বললেন, "নিচে সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করছে যে কি হয়েছে তোর?"

পরী ধিরে ধিরে মায়ের কাছে এগিয়ে এসে বলল, "ছোটোমা তুমি নিচে যাও, আমি ওকে দেখছি।"

মা, "হ্যাঁ দ্যাখ কি হয়েছে ওর, আর তাড়াতাড়ি নিচে চলে আয় তোরা।"

অভি জিজ্ঞেস করল মাকে, "তোমরা শপিঙে গেলে আমাকে বলে যেতে পারতেত?"

পরী বুঝতে পারে যে প্রশ্নটা ওর ছোটো মাকে নয়, অভি প্রশ্নটা ওকে করেছে। মা উত্তর দিলেন, "তুইত কোনদিন শপিঙে জাস না তাই তোকে বলা বৃথা। যাই হক, পরীর জন্য কিছু কেনা হয়েছে আর পরীও তোর জন্য কিছু কিনেছে, নিচে এসে একবার দেখিস। হয়ত তোর ভাল লাগবে।"

মা নিচে যাবার আগে জিজ্ঞেস করলেন, "রাতে কি আবার ধুতি পাঞ্জাবী পরবি না স্যুট?"

পরী ওর কানে কানে বলল, "রেমন্ডের সুট টা পর, আমি তোমার জন্য একটা টাই কিনে এনেছি।"

মা চলে যাবার পরেই, পরী ওর মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে বলল, "সরি বাবা, আমি কি বুঝেছিলাম যে তোমার এত কষ্ট হবে?" কপালে চুমু খেয়ে বলল, "বাচ্চা ছেলের মতন কাঁদে। শক্ত কবে হবে? তুমি এইরকম হলে আমার কি হবে? একবারও ভেবে দেখেছ?" হাত ধরে নিচে টেনে নিয়ে গেল পরী, "একদম সেই ছোট্ট বাচ্চার মতন, এতদিনে একদম বড় হওনি। চোখ মোছও আর তাড়াতাড়ি জামা কাপড় পরে নাও। খুব বড় সারপ্রাইস দেব তোমাকে।"

অভি ওর দেওয়া সেই সিল্কের রুমাল টা বের করে চোখ মুছে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, "সারপ্রাইস টা কি?"

পরী, "বাঃ রে, বলে দিলে কি আর সারপ্রাইস থাকে! বলব না যাও, যখন দেব তখন দেখে নিও।"

নিচে নেমে দেখল যে বাড়ির সবাই সাজতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। মায়ের ঘরে দু’জনে ঢুকে গেল। ওর মা আগে থেকেই বিছানার ওপরে ধুসর রঙের সুট টা বের করে রেখেছিল, আর তার ওপরে একটা নীল স্ট্রাইপ দেওয়া টাই রাখা। নীল রঙ অভির পছন্দের রঙ, টাই দেখে খুব পছন্দ হল অভির। মনে হল একবার পরীকে জড়িয়ে ধরে ওর টোপাটোপা গালে চুমু খায়, কিন্তু ঠিক সেই সময়ে মা ঘরে এসে পরাতে ওর আর চুমু খাওয়া হল না। মা পরীকে বললেন মৈথিলীর ঘরে যেতে ওকে সাজাতে লোক এসেছে, তাঁর তদারকি করতে। ঘর থেকে বেড়িয়ে যাবার আগে পরী ওকে একটা চোরা চুমু ছুঁড়ে দিয়ে যায়, চোখের ভাষায় যেন বলে গেল, "আমার জন্য নিচে অপেক্ষা কোরও।"

সন্ধ্যে নেমে এসেছে, সানাই বাজতে শুরু করেছে। বউভাতের বাড়িতে সাজ সাজ রব, আলোয় আলোকিত বাড়ি। সুট পরে কিছুক্ষণের মধ্যে বেড়িয়ে পরে অভি। অনেক লোকের চোখ আবার ওর দিকে। সুব্রত কাছে এসে কানে কানে বলে, "গুরু আবার কি দিয়েছ।" সুব্রতকে খুব বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল ওর কালো পাঞ্জাবীতে।

অভি সুব্রতর কাধ চাপড়ে বলে, "মামা, আজ রাত তোমার রাত কিন্তু চুরনির ওপরে যেন বেশি চাপ দিও না। বেস্ট উইসেস ফর হানিমুন। আমি সত্যি ভাগ্যবান যে তোমার বিয়ে এটেন্ড করতে পেরেছি।"

সুব্রত, "না, আমি সত্যি ভাগ্যবান যে তোমরা আমার বিয়েতে এসেছ।"

অভি, "এই তিন দিনে, এখানে এসে অনেক কিছু ফিরে পেলাম আর অনেক কিছু নতুন করে পেলাম। হারিয়ে যাওয়া আমাদের ছেলেবেলা, আমার পোঁতা আম গাছ, পুকুর পাড় যেখানে আমি আর তুমি মাছ ধরতাম আর তারপরে সেই মাছ গুলো আবার জলে ছেড়ে দিতাম।"

সুব্রত, "কবি কবি ভাব, তুমি কবি না টেকনিকাল?"

ঠিক সেই সময়ে অরুনিমা অভির কাছে এসে বলল, "হুম, দারুন দেখাচ্ছে তোমাকে। অনেক মেয়ের মাথা ঘুরে যাবেত।"

ওর কথা শুনে সুব্রত হেসে ফেলল, অভিকে ওর সাথে যেতে বলল।

অরুনিমা, "তোমাকে খাওয়ার পরে কত খুজলাম কোথাও দেখতে পেলামনা।"

অভি, "কেন খুজছিলে আমাকে?"

অরুনিমা, "এমনি খুজছিলাম। কি করব আমার বয়সের কেউ ছিল না তাই খুব বোর ফিল করছিলাম।"

অভি জিজ্ঞেস করল, "হাটবে নাকি?"

অরুনিমা, "আপত্তি নেই।"

অভি, "ভিড় অনেক সময় বর বোরিং হয়ে যায় তাই না?"

দু’জনে উঠোনের দিকে হাঁটত শুরু করল। ওদেরকে একসাথে হাঁটতে দেখে অনেকের চোখ গেল ওদের দিকে। ইন্দ্রানি মাসির ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে বুঝিয়ে দিল, "ভাল ভাল"

অরুনিমা, "তুমি বড় চুপচাপ প্রকৃতির ছেলে, তাই না?"

অভি, "হ্যাঁ তা বটে। ব্যাপারটা হচ্ছে ঠিক মতন লোক না পেলে ঠিক কথা বলতে ইচ্ছে করেনা।"

অরুনিমা, "ঠিক বলেছ, মনের মতন মানুষ না পেলে ঠিক কথা বলে আনন্দ হয় না।"

অভি, "তাঁর মানে আমি ত অনার্ড, তুমি আমার সাথে কথা বলছ।"

অভির কথার পরে দুজনেই হেসে ফেলল। কথা বার্তায় ওই জানতে পারল যে, অরুনিমার একটা ছোটো ভাই আছে, কলেজে পড়ে। ওর বাবা সরকারি চাকুরিরত, রাইটার্স বিল্ডিঙে চাকরি করেন। গল্প করতে করতে ওরা অনেক দূর চলে এসেছিল, অভি পেছনে তাকিয়ে বলল যে ওদের এবারে ফেরা উচিত।

অরুনিমা, "আর একটু হাটলে হত না?"

কিছু দূর আরও এগিয়ে যেতেই অরুনিমা জিজ্ঞেস করল, "আমি তোমাকে একটা পারসনাল কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?"

অভি, "হ্যাঁ জিজ্ঞেস করতে পার।"

অরুনিমা, "না মানে, তোমার নিশ্চয় কোন গার্লফ্রেন্ড নেই তাই না?"

অভি ঠিক এটাই ভয় পাচ্ছিল।

অভি মনের ভাব লুকিয়ে উত্তর দিল, "না মানে আমার কোন ফুল টাইম গার্লফ্রেন্ড নেই।"

অরুনিমা, "হুম তার মানে খালি ফ্লার্টিং করা হয়।"

অভি, "না না, আমার অত সময় নেই যে ফ্লা+টিং করব। আমার অনেক বন্ধু বান্ধবী আছে তবে বিশিষ্ট কোন বান্ধবী নেই আমার।"

ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অরুনিমা, মনে হল যেন বুকের মাঝে এতক্ষণ কিছু চেপে ধরে ছিল, অভির কথা শুনে সেই পাথরটা বুকের ওপর থেকে সরে গেল। অভি মনে মনে হাসতে থাকে, "পাগলি মেয়ে, আমি আমার ভালবাসা পেয়ে গেছি।"

দুজনেই চুপচাপ বাড়ির দিকে হাটা শুরু করল। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে অরুনিমা বলল, "আমরা দুজনেই কোলকাতায় থাকি, একবার দেখা করা যায় কি?"

মাথা নাড়লো অভি, যাবে কোনদিন ওর বাড়িতে। চলে যাবার আগে অভির হাতে একটা কাগজ গুঁজে দিয়ে ইশারা করল যেন ফোন করে। কাগজটা দেখে মাথার চুলে আঙ্গুল দিয়ে আঁচড়াল অভি, মনে মনে হেসে ফেলল, "কি যে হচ্ছে।"

পরী পেছন থেকে এসে ওর কাঁধে একটা টোকা দেয়, "কি ব্যাপার কি চলছে? কিছুর গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে যেন?"

অভি পরীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে অবাক হয়ে গেল। পরীর পরনে একটি সুন্দর তুঁতে রঙের লেহেঙ্গা তার ওপরে রুপলি সুতোর ভারী কাজ, ফর্সা গায়ের রঙের সাথে বেশ মানিয়েছে ওর লেহেঙ্গার রঙ। চুল খোঁপা করে বাঁধা, কিছু জুঁই ফুল গোঁজা খোঁপায়। ললাটে একটি বড় তুঁতে রঙের টিপ, কানে লম্বা সোনার দুল, গলায় মায়ের দেওয়া সোনার হার। কবজিতে ছঞ্ছন করছে দু গাছা তুঁতে আর গাড় নীল রঙের কাঁচের চুরি। দু’গালের টোল দেখে মনে হল যেন এখুনি গালে চুমু খায়। কাচুলি আর কোমরের মাঝে অনাবৃত ছোটো গোল পেট আর তাঁর মাঝে সুগভীর নাভিদেশ। বড় বড় কালো চোখে অভির অবাক মুখের দিকে তাকিয়ে পরী।

একটু নেচে ঘুরে অভিকে জিজ্ঞেস করল, "কেমন দেখাচ্ছে আমাকে?"

অভি মন্ত্রমুগ্ধের মতন পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে, "আমি যে এখন হার্ট ফেল করব সোনা।"

ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল পরী, "অরুনিমার চেয়েও সুন্দরী?"

"হুম, কোথাও কিছু জ্বলছে মনে হচ্ছে?" গালে আলতো করে টোকা মেরে বলে অভি।

একটা ধাক্কা মেরে উত্তর দেয় পরী, "আমি ছাড়া কারুর দিকে তাকালে আমি কিন্তু চোখ গেলে দেব, বুঝলে।"

তর্জনীর ডগায় ছোট্ট চুমু খেয়ে বলে, "পাগল নাকি।"

পরী, "এই কি করছ, ছোটো মা আসছে, দেখতে পাবে যে।"

অভি, "সরি।"

মা কাছেই ছিলেন, পরীকে দেখে ডাক দিলেন। পরী দৌড়ে মায়ের কাছে চলে গেল। মা ওকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু খেল। অভি দূর থেকে মা আর পরীকে দেখতে থাকে। ইন্দ্রানি মাসি ওর কাছে এসে বলে, "আজ পরীকে শান্ত করতে মুশকিল হবে।"

অভি ইন্দ্রানি মাসিকে একটা ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ওর পায়ের কাছে বসে পরে। ইন্দ্রানি মাসির হাত দুটো হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, "তুমি ত ওর বড়দি, তোমার চোখে যদি জল আসে তাহলে ওকে কি করে আটকাবে তুমি?"

ফুঁপিয়ে ওঠে ইন্দ্রানি মাসি, "এত বছর শুধু ওকে দোষ দিয়ে গেছি আমরা।" এই বলে কাঁদতে শুরু করে ইন্দ্রানি মাসি।

অভি ইন্দ্রানি মাসির চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল, "চোখ মোছো মাসি। আজ না তোমার ভাইয়ের বউভাত, এই রকম আনন্দের দিনে কেউ কাঁদে নাকি?"

ঠিক সেই সময়ে মেঘনা ঘরে ঢুকে ওদের কে দেখে বলল, "সারা বাড়িতে হচ্ছে টাকি, এক জায়গায় পরী, মা আর উলুপিদি কাঁদছে আর একদিকে তোমার। আমি ত পাগল হয়ে যাব।"

অভি ইন্দ্রানি মাসিকে শান্ত করে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। অনুরিমা এসে ওকে ডেকে নিয়ে যায় বলে যে ওর জামাইবাবু, সুব্রত ফটো তলার জন্য ওদের ডেকেছে। লোকেরা খেতে বসে গেছে, ধিরে ধিরে রাত গভীর হচ্ছে।

পরীর মুখে হাসি দেখে আসস্থ হল অভি, যাক কান্না কাটির পালা তাহলে শেষ। ওকে দেখতে পেয়ে ডাক দিল পরী। দুই বান্ধবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। দু’জনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, "ঠিক আছো?" কোন উত্তর দিল না, শুধু একটু ম্লান হাসল।

অভি, "দেখি বাবা মা কোথায়, খেতে বসতে হবে।"

পরী, "এত তাড়াতাড়ি? আমার সাথে খেতে বসবে না?"

সুব্রত ওদের কে ফটো তুলতে ডেকে নিয়ে গেল।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram - by sorbobhuk - 27-02-2019, 03:37 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)