27-02-2019, 03:16 PM
প্রত্যাবর্তন
নবীন ঊষার সাথে সাথে এক নতুন দিনের আগমন ঘটে পরী আড় অভির জীবনে।
একে একে কনের বাড়ির লোকজন জাগতে শুরু করেছে। সেই ভিড়ে পরী আবার হারিয়ে গেল। সুমন্ত মামা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করল যে রাতে কোথায় ছিল। উত্তরে অভি জানিয়ে দিল যে সারা রাত ও বিয়ের প্যান্ডেলে বসে কাটিয়ে দিয়েছে। সেই শুনে মামা হেসে ওকে হাত মুখ ধুয়ে নিতে বলল। জানিয়ে দিল যে কয়েক ঘন্টা পরে বড় কনে কে নিয়ে বসিরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। ধিরে ধিরে বিয়ে বাড়ির লোকজন জেগে উঠে মেতে উঠেছে।
গ্রামের হাওয়ায় এক বিশুদ্ধতার আমেজ, বুক ভরে সেই বিশুদ্ধ বাতাস বুকের মাঝে টেনে নিল অভি। কোলকাতায় এই বাতাস পাওয়া বড় কঠিন ব্যাপার। কিছু পরেই বরযাত্রীদের সকালের খাওয়ার ব্যাবস্থা হয়ে গেল। অভির চোখ থেকে থেকে শুধু পরীকে খুঁজে বেড়ায়, কিন্তু খুজলে কি হবে সেই কন্যের দেখা নেই।
সবে মাত্র খেতে বসেছে অভি, ঠিক এমন সময়ে মাথার পেছনে চাটি মারে পরী।
অভি "আউচ" করে পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে রাতের পরী আর নেই। যে দাঁড়িয়ে সে যেন তরতাজা এক ফুল, সদ্য শিশিরে স্নান সেরে ওর কাছে দাঁড়িয়ে।
অভিমানি সুরে বলে, "আমাকে ছেড়েই খেতে বসে গেলে? লজ্জা করে না তোমার।"
অভি, "বাঃরে তোমার দেখা নেই। আড় আমার কি খিদে পায় না নাকি।"
পরী, "কাউকে কি আমার কথা জিজ্ঞেস করা যেত না নাকি।"
অভি, "আচ্ছা বাবা মাফ কর। এবারে বসে পরত, খেয়ে নাও। পেটে কিছু পরেনি বলে মনে হয় মাথাটা একটু গরম।"
প্রাতরাশ সেরে পরী চলে গেল কনের কাছে। বিদায়ের সময় বর্তমান। এই সময়টা অভির একদম ভাল লাগে না। কান্না কাটি একদম সহ্য করতে পারে না ও। বাড়ির ভেতরে ক্রন্দনের রল উঠেছে, সেই শুনে বুঝে গেল যে কনে বিদায় নিতে সময় লাগবে।
অভি চুপ করে উঠানের এককোণে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠিক সেই সময়ে পাঞ্জাবির হাতায় টান লাগে, পেছনে তাকিয়ে দেখে যে পরী ওর পেছনে মুখ লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুই হাতে অভির হাত খানি শক্ত করে ধরে ঘন ঘন পিঠের ওপরে নাক ঘষছে। মনে হল যেন চোখের জল আটকানোর প্রবল চেষ্টা করে চলেছে।
অভি, "আরে বাবা, বোকা মেয়ে কাঁদে নাকি। তোমার বৌদি তোমার বাড়ি যাচ্ছে আবার কি চিন্তা।"
ফুঁপিয়ে ওঠে পরী, "তুমি বুঝবে না।"
বাঁ হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁধের গোলায় আলতো করে হাত বুলিয়ে অভি ওকে আসস্থ করতে চেষ্টা করে। পরী তখন অভির ঘিয়ে রঙের শাল খানি জড়িয়ে।
ফিরে যাবার জন্য দুটি গাড়ি প্রস্তুত।
পরী চোখ মুছে নিচু স্বরে বলে, "আমাকে বউদির গাড়িতে যেতে হবে। তুমি ওর বন্ধুদের গাড়িতে যেও। আমার সাথে গেলে কারুর নজরে চলে আসব আমরা।"
কিছুক্ষণের মধ্যেই কনে কে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল গাড়ি। অভি চাপল সুব্রতর বন্ধুদের গাড়িতে আর পরী অন্য গাড়িতে। অভি সামনের সিটে চুপ করে বসে, পেছনে সুব্রতর বন্ধুরা বসে। দুই বন্ধু নিজেদের মধ্যে কথা বার্তা বলছিল, অভি বিশেষ কান দেয়নি ওদের কথাবার্তার মধ্যে। একসময়ে ওর কানে ভেসে আসলো শুচিস্মিতার নাম।
একজন, "কাল রাত থেকে শুচিস্মিতা কেমন যেন আলদা আলাদা মনে হচ্ছে।"
দ্বিতীয় জন, "হ্যাঁ রে, ঠিক বলেছিস। আমারো সেটাই মনে হয়েছে। এমনিতে খুব হাসি খুশি থাকে মেয়েটা কিন্তু কাল রাতে বেশ গম্ভির ছিল। অনেক ক্ষণ ধরে ওর কোন পাত্তা পাইনি।"
একজন, "ব্যাবহার টা কেমন যেন লাগল আমার, কি ব্যাপার কিছু জানিস নাকি?"
অপর জন, "জাঃ বাবা আমি কি করে জানব।"
অভির দিকে একজন প্রশ্ন করে, "তুমি উলুপি ম্যাডামের ছেলে তাই না।"
মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয় অভি, "হ্যাঁ" ওদিকে বুকের ভেতরে আশঙ্কায় কাপুনি ধরে, পরী আর ওকে একসাথে দেখে ফেলেনি ত ওরা, দেখে ফেললেই এক কেলেঙ্কারি কান্ড হয়ে যাবে।
একজন, "ভাই তোমার মা আমাদের কলেজের টিচার। আমাদের পড়াতেন আর খুব কড়া ম্যডাম ছিলেন।"
হেসে ওঠে অভি, "বাড়িতেও ভীষণ কড়া আমার মা।"
দ্বিতীয় জন, "সুব্রত তোমার মামা হন তাই না?"
অভি, "হ্যাঁ, কিন্তু মায়ের চেয় অনেক অনেক ছোটো ওরা।"
এর মধ্যে একজন একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অভির দিকে বাড়িয়ে দেয়, "তুমি কলেজে পড় তার মানে সিগারেট খাওয়া চলে তোমার। আরে লজ্জা পেও না আমরা তোমার মামার বন্ধু হলে কি হবে, আমাদের দাদা বলে ধরে নিও।"
অভি, "না, আমি কাল রাত থেকে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।"
একজন হেসে বলে, "কনের বাড়ির কাউকে মনে ধরে নিয়েছ নাকি। আচ্ছা তুই ড্রিঙ্ক করো?"
মাথা নাড়ায় অভি, "হ্যাঁ, তবে ভদকা আর রাম।"
একজন, "তাহলে বেশ জমবে। আজ রাতে বাড়ি ফিরে একসাথে বসা যাবে তাহলে। তুমিও চলে এসে আমাদের সাথে।"
কথা বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেল যে একজনের নাম সমির আর একজনের নাম মৃগাঙ্ক। দুজনেই সরকারি চাকুরিরত এবং অবিবাহিত। এও জানা গেল যে সুব্রতর নাকি প্রেম বিবাহ আর কনের নাম মৈথিলী। মৈথিলীর বয়স পরীর মতন কিম্বা পরীর চেয়ে একদু মাসের ছোটো বড় হবে। সুব্রত আর মৈথিলী দেখা কোন এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে হয়েছিল, সেই থেকে দু’জনের মাঝে প্রেম হয়। পরে সুব্রতর বড় দাদার মৈথিলীকে দেখে পছন্দ হয় এবং সুমন্ত মামা মৈথিলীর বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব করেন। এই ভাবে এই দুই প্রেমিক যুগল বিয়ের বন্ধনে বেঁধে যায়।
অভি মনে মনে ভাবে, "আমি খালি হাতে এসেছিলাম কিন্তু অনেক কিছু নিয়ে যাচ্ছি। আমার ভালবাসা, আমার পরী।"
নবীন ঊষার সাথে সাথে এক নতুন দিনের আগমন ঘটে পরী আড় অভির জীবনে।
একে একে কনের বাড়ির লোকজন জাগতে শুরু করেছে। সেই ভিড়ে পরী আবার হারিয়ে গেল। সুমন্ত মামা অভির কাছে এসে জিজ্ঞেস করল যে রাতে কোথায় ছিল। উত্তরে অভি জানিয়ে দিল যে সারা রাত ও বিয়ের প্যান্ডেলে বসে কাটিয়ে দিয়েছে। সেই শুনে মামা হেসে ওকে হাত মুখ ধুয়ে নিতে বলল। জানিয়ে দিল যে কয়েক ঘন্টা পরে বড় কনে কে নিয়ে বসিরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। ধিরে ধিরে বিয়ে বাড়ির লোকজন জেগে উঠে মেতে উঠেছে।
গ্রামের হাওয়ায় এক বিশুদ্ধতার আমেজ, বুক ভরে সেই বিশুদ্ধ বাতাস বুকের মাঝে টেনে নিল অভি। কোলকাতায় এই বাতাস পাওয়া বড় কঠিন ব্যাপার। কিছু পরেই বরযাত্রীদের সকালের খাওয়ার ব্যাবস্থা হয়ে গেল। অভির চোখ থেকে থেকে শুধু পরীকে খুঁজে বেড়ায়, কিন্তু খুজলে কি হবে সেই কন্যের দেখা নেই।
সবে মাত্র খেতে বসেছে অভি, ঠিক এমন সময়ে মাথার পেছনে চাটি মারে পরী।
অভি "আউচ" করে পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে রাতের পরী আর নেই। যে দাঁড়িয়ে সে যেন তরতাজা এক ফুল, সদ্য শিশিরে স্নান সেরে ওর কাছে দাঁড়িয়ে।
অভিমানি সুরে বলে, "আমাকে ছেড়েই খেতে বসে গেলে? লজ্জা করে না তোমার।"
অভি, "বাঃরে তোমার দেখা নেই। আড় আমার কি খিদে পায় না নাকি।"
পরী, "কাউকে কি আমার কথা জিজ্ঞেস করা যেত না নাকি।"
অভি, "আচ্ছা বাবা মাফ কর। এবারে বসে পরত, খেয়ে নাও। পেটে কিছু পরেনি বলে মনে হয় মাথাটা একটু গরম।"
প্রাতরাশ সেরে পরী চলে গেল কনের কাছে। বিদায়ের সময় বর্তমান। এই সময়টা অভির একদম ভাল লাগে না। কান্না কাটি একদম সহ্য করতে পারে না ও। বাড়ির ভেতরে ক্রন্দনের রল উঠেছে, সেই শুনে বুঝে গেল যে কনে বিদায় নিতে সময় লাগবে।
অভি চুপ করে উঠানের এককোণে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠিক সেই সময়ে পাঞ্জাবির হাতায় টান লাগে, পেছনে তাকিয়ে দেখে যে পরী ওর পেছনে মুখ লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুই হাতে অভির হাত খানি শক্ত করে ধরে ঘন ঘন পিঠের ওপরে নাক ঘষছে। মনে হল যেন চোখের জল আটকানোর প্রবল চেষ্টা করে চলেছে।
অভি, "আরে বাবা, বোকা মেয়ে কাঁদে নাকি। তোমার বৌদি তোমার বাড়ি যাচ্ছে আবার কি চিন্তা।"
ফুঁপিয়ে ওঠে পরী, "তুমি বুঝবে না।"
বাঁ হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁধের গোলায় আলতো করে হাত বুলিয়ে অভি ওকে আসস্থ করতে চেষ্টা করে। পরী তখন অভির ঘিয়ে রঙের শাল খানি জড়িয়ে।
ফিরে যাবার জন্য দুটি গাড়ি প্রস্তুত।
পরী চোখ মুছে নিচু স্বরে বলে, "আমাকে বউদির গাড়িতে যেতে হবে। তুমি ওর বন্ধুদের গাড়িতে যেও। আমার সাথে গেলে কারুর নজরে চলে আসব আমরা।"
কিছুক্ষণের মধ্যেই কনে কে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল গাড়ি। অভি চাপল সুব্রতর বন্ধুদের গাড়িতে আর পরী অন্য গাড়িতে। অভি সামনের সিটে চুপ করে বসে, পেছনে সুব্রতর বন্ধুরা বসে। দুই বন্ধু নিজেদের মধ্যে কথা বার্তা বলছিল, অভি বিশেষ কান দেয়নি ওদের কথাবার্তার মধ্যে। একসময়ে ওর কানে ভেসে আসলো শুচিস্মিতার নাম।
একজন, "কাল রাত থেকে শুচিস্মিতা কেমন যেন আলদা আলাদা মনে হচ্ছে।"
দ্বিতীয় জন, "হ্যাঁ রে, ঠিক বলেছিস। আমারো সেটাই মনে হয়েছে। এমনিতে খুব হাসি খুশি থাকে মেয়েটা কিন্তু কাল রাতে বেশ গম্ভির ছিল। অনেক ক্ষণ ধরে ওর কোন পাত্তা পাইনি।"
একজন, "ব্যাবহার টা কেমন যেন লাগল আমার, কি ব্যাপার কিছু জানিস নাকি?"
অপর জন, "জাঃ বাবা আমি কি করে জানব।"
অভির দিকে একজন প্রশ্ন করে, "তুমি উলুপি ম্যাডামের ছেলে তাই না।"
মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয় অভি, "হ্যাঁ" ওদিকে বুকের ভেতরে আশঙ্কায় কাপুনি ধরে, পরী আর ওকে একসাথে দেখে ফেলেনি ত ওরা, দেখে ফেললেই এক কেলেঙ্কারি কান্ড হয়ে যাবে।
একজন, "ভাই তোমার মা আমাদের কলেজের টিচার। আমাদের পড়াতেন আর খুব কড়া ম্যডাম ছিলেন।"
হেসে ওঠে অভি, "বাড়িতেও ভীষণ কড়া আমার মা।"
দ্বিতীয় জন, "সুব্রত তোমার মামা হন তাই না?"
অভি, "হ্যাঁ, কিন্তু মায়ের চেয় অনেক অনেক ছোটো ওরা।"
এর মধ্যে একজন একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অভির দিকে বাড়িয়ে দেয়, "তুমি কলেজে পড় তার মানে সিগারেট খাওয়া চলে তোমার। আরে লজ্জা পেও না আমরা তোমার মামার বন্ধু হলে কি হবে, আমাদের দাদা বলে ধরে নিও।"
অভি, "না, আমি কাল রাত থেকে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।"
একজন হেসে বলে, "কনের বাড়ির কাউকে মনে ধরে নিয়েছ নাকি। আচ্ছা তুই ড্রিঙ্ক করো?"
মাথা নাড়ায় অভি, "হ্যাঁ, তবে ভদকা আর রাম।"
একজন, "তাহলে বেশ জমবে। আজ রাতে বাড়ি ফিরে একসাথে বসা যাবে তাহলে। তুমিও চলে এসে আমাদের সাথে।"
কথা বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেল যে একজনের নাম সমির আর একজনের নাম মৃগাঙ্ক। দুজনেই সরকারি চাকুরিরত এবং অবিবাহিত। এও জানা গেল যে সুব্রতর নাকি প্রেম বিবাহ আর কনের নাম মৈথিলী। মৈথিলীর বয়স পরীর মতন কিম্বা পরীর চেয়ে একদু মাসের ছোটো বড় হবে। সুব্রত আর মৈথিলী দেখা কোন এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে হয়েছিল, সেই থেকে দু’জনের মাঝে প্রেম হয়। পরে সুব্রতর বড় দাদার মৈথিলীকে দেখে পছন্দ হয় এবং সুমন্ত মামা মৈথিলীর বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব করেন। এই ভাবে এই দুই প্রেমিক যুগল বিয়ের বন্ধনে বেঁধে যায়।
অভি মনে মনে ভাবে, "আমি খালি হাতে এসেছিলাম কিন্তু অনেক কিছু নিয়ে যাচ্ছি। আমার ভালবাসা, আমার পরী।"