Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram
#5
প্রথম চুম্বন


বাস ভর্তি বরযাত্রী, মা বাবা, মামা মাসি আরও অনেক আত্মীয় সজ্জন। কোলাহলে বাসের ভেতরে থাকা দায়। অচির উৎসুক আঁখি ওই ভিড়ে শুধু পরীকে খুঁজে বেড়ায়। কিছু পরে দেখতে পায় যে পরী শেষের দিকের একটা সিটে বসে ওর জন্য অপেক্ষা করছে।

ওকে দেখেই জোরে ডাক দেয় পরী, "এদিকে অভিমন্যু। আমি একটা সিট রেখে দিয়েছি তোমার জন্য।"

অভি সুবোধ গাধার মতন মাথা নাড়িয়ে ওর পাশের সিটে গিয়ে বসে পরে। পরী জানালার দিকে বসে আর পাশে অভি। ভিড় ভর্তি বাস লোকজনের জন্যে গরম হয়ে ওঠে। সবাই যেন তারস্বরে চিৎকার করছে। কিছু পরে বরযাত্রীদের বাস রানাঘাট উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

রানাঘাট পৌঁছতে অনেক দেরি, সেইজন্য অভির মা প্রস্তাব দিলেন যে একটু নাচ গান হয়ে যাক। সবাই মায়ের কথা শুনে সম্মতি জানাল। কিন্তু প্রশ্ন উঠল যে শুরু কে করবে। বড়রা প্রস্তাব দিলেন যে ছোটোরা আগে শুরু করুক।

অভি আর পরী পাশাপাশি বসে, একজনের বাজু আরেক জনের বাজুর সাথে ঘসা খাচ্ছে। পরী বারে বারে এক প্রশ্নমাখা চোখ নিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে দেখছ, কিন্তু মুখে কিছু বলছে না। অভির মনের ভেতরে যেন সমুদ্রের উথাল পাথাল ঢেউ বয়ে চলেছে, অকি কোন এটম বম্ব ফেলেছে নাকি, না চুপ করে থাকাটাই নিরাপদ।

বাসের সামনে থেকে কেউ ডাক দিল, "পরী কোথায়, পরী। অনেকক্ষণ পরীর আওয়াজ শোনা যাচ্ছেনা, কি ব্যাপার। পরীর’ত এই রকম হবার কথা নয়।"

অভি মুখ নিচু করে পরীর কানে কানে বলল, "পরী, কি হয়েছে? আমি কি কিছু ভুল করে ফেলেছি? আমি ক্ষমা চাইছি যা ভুলে করেছি তার জন্যে। দেখ সারা বাসের লোক তোমাকে খুঁজছে, পরী।"

পরী অভির মুখের দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করে উত্তর দিল, "আমি ভেবেছিলাম যে তুমি আমার কথা গুলো শুনেছ, কিন্তু তুমি আমার কোন কথাতেই কান দাও নি। তুমি বোঝো না, আমি পড়াশুনা করতে চাই।"

অভি, "আই আম সরি, পরী। আমি সত্যি বলছি যে আমি তোমার সব কথা শুনেছি। এবার প্লিস একটু হাসো, দেখ সবাই তোমাকে খুঁজছে পরী, উত্তর দাও।"

পরীর চোখ টলটল করে উঠল, কিন্তু ও অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে। মনের অবস্থা লুকিয়ে রাখার মতন যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে।

চিৎকার করে উত্তর দেয়, "পরী এখানে..." পরী উঠে দাঁড়িয়ে অভির দিকে তাকিয়ে বলল, "আমাকে একটু যেতে দেবে নাকি?"

বাসের সিট একদম চাপা, যাবার জায়গা কম। পরীকে একটু কুঁকড়ে বের হতে হল। ওর মসৃণ পিঠ অভির বাজুতে স্পর্শ করল, চিবুক ছুঁয়ে গেল শিরদাঁড়ার ওপরে। মসৃণ ত্বক যেন মাখন। অভি হাত দিয়ে পরীর পাতল কোমর ধরে ওকে বের হতে সাহায্য করে। নিরাভরন ত্বকের ওপরে অভির গরম হাতের স্পর্শে পরী একটু কেঁপে ওঠে। অভি দুষ্টুমি করে পরীর উন্মুক্ত পেটের ওপরে আলতো করে চাপ দেয়। অভির সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়।

নাক কুঁচকে অভির দিকে তাকিয়ে বলে, "একটু সবুর কর অভিমন্যু, আমি এখুনি আসছি।"

বরযাত্রী ভরা বাস, রাতের ঘন অন্ধকার কেটে দ্রুত গতিতে গন্তব্য স্থলের দিকে দৌড়ে চলেছে। আত্মীয় সজ্জনের কোলাহলে বাস মুখরিত। পরীর সাথে সাথে অনেক লোক ওর চারদিকে নাচ গান শুরু করে দিল। পরী ওদের ভিড়ে হারিয়ে গেল। না ঠিক নয়, বারে বারে পরী আড় চোখে অভির দিকে তাকিয়ে দেখে। চোখ ইশারায় কাতর আহ্বান জানায় ওর সাথে অংশ গ্রহন করতে। কিন্তু অভি একটু ঘরকুন প্রকৃতির ছেলে, বাইরের মানুষের সাথে মিশতে ওর একটু সময় লাগে। অনেকক্ষণ নাচার পরে সবাই ক্লান্ত হয়ে সিটের ওপরে এলিয়ে পরে। যাত্রীদের মধ্যে কেউ প্রস্তাব দেয় গানের খেলা খেলার।

পরী গান বাঁধে, "পিয়া তু আব ত আজা... শোলা সা মন দেহকে আকে বুঝা যা..."

গান গাইতে গাইতে বারে বারে অভির দিকে তাকায় পরী।

পরীর চোরা চাহনি বাসের অনেকের লোকের চোখে পরে যায়। অভির মা বাবার মনে সেইরকম কিছু উদয় হয় না।

অভি ওর গান শুনে আর চুপ করে বসে থাকতে পারেনা। বুক ভরে, একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে সাহস জুগিয়ে গেয়ে ওঠে, "তুঝে দেখা ত ইয়ে জানা সনম, প্যার হোতা হ্যায় দিওানা সনম..."

ওর গান শুনে পরী অবাক হয়ে যায়। বাসের বাকি লোকের মুখে প্রশ্ন ওঠে কে এই ছেলেটা আগে ত কোনদিন দেখিনি?

পরী ওদের উত্তর দেয়, "এ অভিমন্যু।" অভির মায়ের দিকে দেখিয়ে বলে, "উলুপিদির ছেলে।"

বড়রা মাকে বলে, "কিরে উলুপি তোর ছেলে যে অনেক বড় হয়ে গেছে।"

এই সব কথাবার্তার মাঝে পরী ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। পরী প্রস্তাব দেয় যে যেহেতু গানের খেলা চলছে সুতরাং সবাই নিজের নিজের সিটে বসে গান গাইতে পারে। অভির মন নেচে ওঠে, অনেকক্ষণ পরে ও আবার পরীর পাশে বসার সুযোগ পাবে।

পরী অভির কাঁধের ওপরে ভর দিয়ে ওর পেছনে সিটের ওপরে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। কোমল বক্ষ যুগল অভির ঘাড়ের ওপরে পিষ্ট হয়। অভির মাথার ওপরে নিজের চিবুক রেখে গলার দু পাশ দিয়ে সামনের দিকে হাত নামিয়ে দেয় পরী।

গানের খেলা আবার শুরু হয়ে যায়। মাঝে মাঝেই পরী ওর সরু সরু আঙ্গুল দিয়ে অভির চুলে বিলি কাটতে থাকে। আরামে অভির দু’চোখ বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। অভির মা একবার আড় চোখে ওদের লক্ষ্য করে।

কিছু সময় যাবার পরে একে একে সবাই ক্লান্ত হয়ে পরে, একে একে গান বন্ধ হয়ে যায়।

পরী সবাইকে জিজ্ঞেস করে, "কি হল, আর কি কেউ গান টান গাইবে না?"

অভির মা উত্তর দেয়, "না পরী, আর নয়। সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সাড়ে ন’টা নাগাদ আমরা রানাঘাট পৌঁছে যাব, কিছু ক্ষণ রেস্ট নিয়ে নাও নাহলে বিয়ে বাড়িতে সবার চোখ মুখের অবস্থা খারাপ দেখাবে।"

মা কলেজের শিক্ষিকা, তার গম্ভির গলার আওয়াজে কেউ কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল।

পরী অভির পাশে জানালার দিকের সিটে আরাম করে বসে পড়ল। রাতের অন্ধকার কেটে এগিয়ে চলে বাস। সবাই চুপ, শুধু মাত্র বাসের ইঞ্জিনের শব্দ কানে আসে। পরী অভির ডান কাঁধে মাথা রেখে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। সাজ নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে পরী কোন শীতের কাপড় আনেনি। জানালার ফাঁক দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়ায় মাঝে মাঝে পরী কেঁপে ওঠে, অভি নিজের গায়ের শাল খানি খুলে ওর গায়ে জড়িয়ে দেয়।

শাল পরানোর সময়ে কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, "এত চুপ কেন, পরী?"

পরী ওর দিকে বড় বড় চোখ করে উত্তর দেয়, "থ্যাঙ্কস। আমার এমনিতে একটু ঠাণ্ডা লাগছিল।" হেসে বলে, "আমি কি বোকা, শীত কালেও কোন ঠান্ডার কাপড় আনিনি।"

অভি মজা করে ওর সাথে, "না না, তুমি শুধু বোকা নও, তুমি একটি সুন্দরী বোকা মেয়ে।"

পরী লাজুক হেসে বলে, "ধুর দুষ্টু ছেলে, দূর হ।"

অভি, "কিছু জিজ্ঞেস করতে পারি কি তোমাকে?"

পরী, "কি?"

অভি, "তোমার কলেজের কথা..."

পরী, "এই একরকম গেছে কলেজ। সেই রকম কিছু বলার মতন নেই।"

অভি, "তোমার কি কোন বয় ফ্রেন্ড আছে?"

প্রশ্নটা শুনে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল অভির দিকে, "এই কথা কেন জিজ্ঞেস করছ?"

প্রশ্নটা করে মাথা উঠাল পরী, অভির চেহারা আর পরীর চেহারার ব্যাবধান কমে এসেছে। একে ওপরে উষ্ণ নিঃশ্বাস ওপরের মুখের ওপরে অনুভব করতে পারছে।

অভির গলা শুকিয়ে এল, বাধও বাধও হয়ে উত্তর দিল, "না মানে এমনি জিজ্ঞেস করলাম। তুমি যা সুন্দরী তাতে তোমার একাধিক বয়ফ্রেন্ড থাকা কোন অসম্ভব ব্যাপার নয়।"

নাক কুঁচকে দুষ্টু হেসে পরী বলল, "আমি যেন কিছু জ্বলার গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে? অভি, আমি কিন্তু সম্পর্কে তোমার মাসি হই, সেটা মনে থাকে যেন।"

"অভি" নিজের নাম ছোটো করে পরীর ঠোঁটে শুনে অভিমন্যুর হৃদয় নেচে ওঠে।

দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয় অভি, "না না, আমি কেন ঈর্ষান্বিত হব।"

কিন্তু মনে মনে অভি সেই অচেনা অজানা লোকের ওপরে ঈর্ষা বোধ করে।

পরী, "না গো। আমার কোন বয় ফ্রেন্ড নেই। আমার অনেক বন্ধু ছিল তাদের মধ্যে অনেক ছেলে বন্ধুও ছিল কিন্তু কাউকে মনে ধরেনি জানও। আজ পর্যন্ত, সেই রকম কাউকে পাইনি যাকে মন দিতে পারি।"

অভি, "তার মানে তুমি তোমার হৃদয়ের সব জানালা দরজা বন্ধ করে রেখেছ, এই তো।"

বাঁকা হাসি হাসে পরী, "না ঠিক তা নয়। আজ পর্যন্ত আমি পাইনি এটা বলতে চাই।" অভি কিছু বুঝতে না পেরে ওর মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটে দুষ্টুমিরে হাসি মেখে উত্তর দিল, "ধুর বোকা ছেলে। আজ পর্যন্ত পাইনি বলেছি, এখন পর্যন্ত পাইনিত বলিনি।"

কথা শুনে মাথা ঘুরে গেল অভির, মানে পরী কি বলতে চায়? পরীও ওর প্রতি আকৃষ্ট? ওর কথার মানে বুঝে অভির বুকের মাঝে দুমদাম আওয়াজ শুরু হয়ে যায়।
নিজেকে একটু সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে অভি, "আচ্ছা একটা কথা বল পরী। তুমি আজ বিকেলে আমাকে তোমার কথা গুলো বলতে গেলে কেন?"

পরী, "জানি না কেন, অভি। আমার মনে হল তাই তোমাকে বলে ফেললাম। এবারে একটু চুপ করবে কি, আমি একটু রেস্ট নেব।"

অভি ডান হাতে পরীর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিল। অভির কাঁধে মাথা গুঁজে চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইল পরী। অভির নচ্ছার আঙ্গুল গুলো, পরীর কোমরের পাশের উন্মুক্ত পেটের ওপরে আদর করতে থাকে। বাসের নিস্প্রভ আলোয় পরী কে ঠিক স্বর্গের অপ্সরার মতন দেখাচ্ছে।

বেশ কিছুক্ষণ পরে সামনের দিকে থেকে কেউ জানিয়ে দিল যে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস বিয়ে বাড়ি পৌঁছে যাবে।

অভি পরীর কাঁধে হাত রেখে জাগাতে চেষ্টা করে, "পরী ওঠও। আমরা কিছুক্ষণের মধেই বিয়ে বাড়ি পৌঁছে যাব।"

পরী, "উম্মম... এত তাড়াতাড়ি কেন, আমাকে একটু ঘুমুতে দাও না... প্লিস..."

কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস বিয়ে বাড়ির সামনে পৌঁছে গেল। অভির মা ওদের সিটের সামনে এসে পরীকে ওঠাল। সেই সময়ে অভি বুঝতে পারল যে ওর মা পরীকে ঠিক নিজের মেয়ের মতন ভালবাসে।

মা বললেন, "পরী সোনা মা আমার, উঠে পর, আমাদের নামতে হবে।"

মায়ের গলা শুনে পরী নড়েচড়ে বসল, আরামোড়া ভেঙ্গে মুখচোখ কচলে হাতের ব্যাগ খুলে মেকআপ করতে শুরু করল। বাস থেকে সবাই নেমে গেছে, বাসের মধ্যে শুধু অভি আর পরী। পরী নিজের মেকআপ নিয়ে ব্যাস্ত।

অভি উঠে দাঁড়াল, পরীর দিকে তাকিয়ে দেখল একবার, বুকের মাঝে যেন একটা ফেরারি চলছে। ওর দিকে ঝুঁকে পড়ল অভি। মাথার ওপরে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করে মুখ তুলে তাকাল পরী। চার চোখ এক হল, পরীর দু’চোখ চকচক করছে এক অজানা আশঙ্কায়। অভি, সারা শরীরের শেষ শক্তিটুকু একত্রিত করে চোখ বন্ধ করে ঠোঁট নামিয়ে আনল পরীর কপালের ওপরে। পরীর উষ্ণ কপালের ওপরে ভিজে ঠোঁটে একটি ছোট্ট চুমু খেয়ে এক লাফে বাস থেকে নেমে পড়ল অভি। ভয়ে আর পেছন দিকে তাকাল না।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram - by sorbobhuk - 27-02-2019, 02:29 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)