Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram
#4
বিমোহিত সৌন্দর্য

অভি পুনরায় পরীর চিন্তায় হারিয়ে গেল, যদি পরী ওর সাথে দেখা করতে না আসে? কিন্তু না আসার ত কোন কারন খুঁজে পাচ্ছে না। অভি’ত পরীর আত্মীয় হয় মাত্র, দেখা করতে আসা বা কথা বলা দৃষ্টিকটু নয়।

সূর্যি পশ্চিম আকাশের দিকে ঢলে চলেছে। বাড়ির সকলে নিজেদের সাজসজ্জা নিয়ে ব্যাস্ত। বিয়ে বলে কথা তাই সবাই নিজেদের কে নিখুত করে তুলতে তৎপর। অভি বরযাত্রী। অভি জানতে পারল যে কনের বাড়ি বসিরহাট থেকে অনেক দূর, রানাঘাট নামক এক জায়গায়, বাসে প্রায় ঘন্টা চারেক লাগবে যেতে। বিয়ের লগ্ন মাঝ রাতে।

বাঙ্গালীর প্রিয় পোশাক ধুতি পাঞ্জাবী। সাধারনত অভি ধুতি পাঞ্জাবী পরেনা, কিন্তু খুব কাছের কারুর বিয়ে হলে ধুতি পাঞ্জাবী পরে। অভি একটি ধাক্কা পাড়ের ধুতি আর তসরের পাঞ্জাবী পরে। গায়ে জড়িয়ে নেয় ঘিয়ে রঙের কাশ্মিরি শাল। এই জন সমুদ্রে অভিকে একদম আলাদা লাগছে ওর পোশাকের জন্য। এককোনে দাঁড়িয়ে থাকে অভি, চারদিকে সাজ সাজ কোলাহল।

সূর্যি পশ্চিম দিগন্তে পাটে চলে গেছে। বিয়ে বাড়ি সহস্র আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। বিয়ের ভিড়ে অভি আবার একা সাথে শুধু পরীর মুখাবয়াব চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে। এমন সময়ে হটাত করে কেউ অভির পাঞ্জাবির হাতা ধরে টান মারে। পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে একটা বাচ্চা ছেলে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছ।

অভি ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি হল?"

ছেলেটি উত্তর দিল, "আমি নীলাঞ্জন। সবাই আমাকে দুষ্টু নামে ডাকে, আমি তোমার শশাঙ্ক মামার পুত্র।"

অভি হাত বাড়িয়ে হাত মেলায় দুষ্টুর সাথে, "তোমার সাথে দেখা করে বেশ ভাল লাগল।"

দুষ্টু উত্তর দিল, "আমার ছোটো পিসি, পরী, তোমাকে উঠানে ডাকছে।"

অভি ওকে জিজ্ঞেস করে, "কেন ডাকছে?"

ওদিকে মনে তখন ওর নাচন ধরেছে!

দুষ্টু একটি শয়তানি হাসি হেসে বলে, "দেখা করে নিজেই জিজ্ঞেস করে নিও কেন ডাকছে।"

এই বলে দুষ্টু পালিয়ে গেল।

অভি উঠানের দিকে পা বাড়াল। প্রত্যেক পদে ওর বুকের ধুকপুকানি শতগুন বেড়ে গেছে, হৃদয়টা যেন পাঁজর ফেটে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করছে। সেই শীতের রাতে অধির ব্যাকুলতায় অভির ঘাম দিয়ে দিল।

উঠানে পা রাখতেই অভি দেখতে পেল যে পরী আর কিছু মহিলাদের সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। সেই মহিলাদের মাঝে অভির মা ও বর্তমান। মাকে দেখে অভির বুকটা বেলুনের থেকে হাওয়া বেড়িয়ে যাওয়ার মতন চুপসে গেল।

মা ওকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করল, "এদিকে আয়। সারা দিন কোথায় ছিলিস তুই?"

পরী ওর দিকে দুষ্টুমি মাখা হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করল, "হ্যাঁ অভিমন্যু, সারাদিন কোথায় ছিলে?"

ওই হাসি দেখে, অভির মনে হল বলে ফেলে, "তোমার খেয়ালে ডুবে ছিলাম সারাদিন।"

মা ওকে জানিয়ে দিলেন যে বাস বিকেল ছ’টার মধ্যে ছেড়ে যাবে, যেখানেই থাকুক না কেন অভি যেন ঠিক সময়ে বাসে উপস্থিত থাকে।

পরী অভির পাশে এসে ওর মাকে বলল, "কোন চিন্তা করোনা উলুপিদি। ছোটো বেলায় ওকে যেমন দেখতাম ঠিক তেমনি করে দেখব আমি।"

পরীর দিকে তাকাল অভি। পরীর পরনে কালো রঙের জমকালো শাড়ি তাতে সোনালি সুতোর ভারী কাজ। রুপ দেখে মনে হল যেন আকাশ থেকে একটুকরো তারা মাটিতে নেমে এসেছে। পাশে দাঁড়িয়ে অভির বাজুতে হাত ছোঁয়াল পরী। হাতের ছোঁয়ায় অভির সারা অঙ্গে যেন বিদুত্য খেলে গেল। অভির নাকে পরীর সেই মনমাতান জুঁইয়ের গন্ধে ভরে উঠল। ওর দিকে তাকিয়ে দেখল ওর মুখ। টিয়ে পাখীর মতন নাক, টানা টানা কাজল কালো দুই চোখ, দুই ভুরু যেন কালো দুই চাবুক। ঠোঁট জোড়া যেন রসাল কোন ফল।

অভির দিকে তাকিয়ে পরী ইশারা করল ওর সাথে হাঁটতে। নির্বাক হয়ে এতক্ষণ অভি শুধু পরীকে দেখে যাচ্ছিল, ওর কথা শুনে হতবাকের ন্যায় ওর পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল।

পরী ওকে জিজ্ঞেস করল, "তোমার কি ছোটবেলার কোন কথাই মনে নেই?"

নির্বাক অভি মাথা নাড়ল, "না নেই।"

পরী, "তুমি নাকি পড়াশুনায় বেশ ভাল।"

অভি আবার মাথা নাড়ল, "হুম।"

পরী, "তোমাকে না এই ধুতি পাঞ্জাবিতে দারুন হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে। তুমি কি সবসময়ে ধুতি পাঞ্জাবী পর?"

নির্বাক অভি আবার মাথা নাড়ল, "না"।

কথা কি বলবে অভি ওত বাক শক্তি হারিয়ে শুধু পরীর কথা শুনে যাচ্ছে।

পরী, "আমি গ্রাজুয়েসান ফিসিক্সে করেছি। শুনলাম তুমিও নাকি ফিসিক্সে গ্রাজুয়েসান করছ?"

অভি আবার মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ।"

পরী, "আমি আরও পড়তে চাই। আমার মা আমার বিয়ের জন্যে ছেলে দেখছে। আমি অনেক বলে কয়ে উলুপিদিকে ডাকিয়েছি। উলুপিদি হাইয়ার পড়াশুনা করে এখন কলেজে চাকরি করেন। উনি যে কলেজে চাকরি করেন সেই কলেজে আমি ছোটো বেলায় পড়তাম। আমি আশা করে আছি যে তোমার মা আমার মাকে বলে বুঝাবে যাতে আমি আগেও পড়াশুনা করতে পারি আর উলুপিদির মতন আমিও কলেজে টিচার হতে চাই।"

অভি চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে ওর পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। পাশাপাশি হাঁটার ফলে মাঝে মাঝে পরীর হাত অভির হাতের সাথে ছুঁয়ে যাচ্ছে, মাঝে মাঝ আঙ্গুল গুলির একে ওপরকে ছঁচ্ছে। আঙ্গুলের সেই কোমল স্পর্শে অভির শিরদাঁড়ায় যেন বিদ্যতু খেলে যায়। বারে বারে অভির নজর পরীর মুখের দিকে চলে যায়।

পরী, "তোমার মাকে আমি সব বুঝিয়ে বলেছি। উলুপিদি বলেছেন যে ঠিক সময়ে আমার মাকে সব বুঝিয়ে বলবে যাতে আমার মা আমাকে আগেও পরাশুনার জন্য বারন না করে। আমি জানি যে আমার মা তোমার মায়ের কথা উপেক্ষা করতে পারবে না। আমি মায়ের মুখে শুনেছি যে তোমার মা নাকি আমাকে নিজের মেয়ের মতন ভালবাসত আর আমার মা তোমার মায়ের সব কথা শুনত। সেইসব দিন চলে গেছে, আর আমাদের মাঝের ব্যাবধান অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু কিছুদিন আগে তোমার মায়ের কথা উঠতে আমার মায়ের চোখে জল চলে আসে। আজও আমার মা উলুপিদির কথা মনে করে শ্রদ্ধায় মাথা নত করে। সেইসব শুনে আমার মনে হল যে আমি যদি উলুপিদিকে আমার মনের কথা খুলে বলি আর উলুপিদি যদি আমার মাকে বলে তাহলে আমার মা তোমার মায়ের কথা ফেলতে পারবে না।"

অভির দিকে তাকিয়ে পরী জিজ্ঞেস করে, "তোমার কি মনে হয় অভিমন্যু? মা আমাকে পড়াশুনা করতে দেবে?"

নির্বাক অভি আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গুনতে চেষ্টা করল, কি উত্তর দেবে, ওর কানে ত একবর্ণ ও কথা ঢোকেনি।

পরী একটু রাগত ভাবে বলল, "কি হল অভিমন্যু? তখন থেকে শুধু আমিই কথা বলে যাচ্ছি। তোমার কি জিব নেই নাকি না বোবা তুমি। তখন থেকে শুধু গরুর মতন মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিচ্ছ যে। কিছু’ত উত্তর দেবে নাকি?"

আকাশের দিকে তাকিয়ে অভি বুক ভরে এক নিঃশ্বাস নিল। বুকের মধ্যে সাহস জুগিয়ে দুম করে বললে ফেলল, "পরী তুমি ভারী সুন্দরী।" কথাটা বলে ফেলেই চোখ বন্ধ করে নেই অভি, এই বুঝি পরী ওর গালে সপাটে এক চড় কসিয়ে দেয়।
পরী ওর কথা শুনে ওর হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। অভির দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, "তুমি তার মানে আমার কোন কথাই শোনোনি, তাইত। তুমি একদম শয়তান ছেলে, মনে মনে আবার আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে?"

অভির হাতে সজোরে একটা থাপ্পর মেরে বলল, "তুমি না খুব শয়তান।"

অভি মনের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে পরীর দিকে তাকিয়ে বলল, "না সেই কথা নয়। আমি তোমার কথা সব শুনেছি কিন্তু তুমি ভারী সুন্দরী দেখতে, পরী।"

পরী লাজুক হেসে উত্তর দিল, "দুষ্টু ছেলে, যাই হক, থ্যাঙ্কস ফর দা কমপ্লিমেন্টস।"

অভি জিজ্ঞেস করল, "তোমার বান্ধবীরা কোথায়, তুমি তাদের সাথে কেন নয়?"

পরী উত্তরে জানাল যে, ওর বান্ধবীদের বউভাতে নিমন্ত্রন করা হয়েছে। যেহেতু পরী বাড়ির সবার ছোটো সেইজন্য এই ভিড়ে ওরও খুব একা একা লাগছে।

অভির মন ব্যাকুল হয়ে উঠল, একটু খানি পরীর ছোঁয়া পাওয়ার জন্য হাত বাড়াল পরীর দিকে। ঠিক সেই সময়ে অভির মা ওদের কে ডাক দিলেন, বললেন যে বাস ছাড়ছে ওরা যেন বাসে উঠে পরে। কপালে করাঘাত করল অভি, "ধুর বাবা, এই সময়ে কি মাকে ডাক দিতে হত, একটু পরে ডাক দিলে হত না।"

পরী বুঝতে পারে অভির মনের কথা, বুঝতে পারে যে অভি ওর দিকে হাত বাড়াচ্ছিল। ওর দিকে তাকিয়ে চোখে মুখে দুষ্টুমি ভরা এক হাসি দিয়ে বলল, "আমি অপেক্ষা করে থাকব কিন্তু......"

এই বলে অভিকে ওখানে একা ছেড়ে বাসের দিকে দৌড়ে চলে গেল।
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram - by sorbobhuk - 27-02-2019, 02:28 PM



Users browsing this thread: 9 Guest(s)