Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram
#3
প্রথম দেখা

বিয়ের দিন ছিল দিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এক সুন্দর সকালে ওরা বেড়িয়ে পড়ল মায়ের মাসির বাড়ি, বসিরহাটের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস কোলকাতা ছেড়ে, ধান খেতের মাঝ দিয়ে ছুটে চলতে লাগল। অভি জানাল্র পাশে বসে পুরান স্মৃতি রোমন্থন করার প্রবল চেষ্টা চালিয়ে গেল। কেমন দেখতে হবে সেই শুচিস্মিতা যে ওকে কোলে নিয়ে ছোটো বেলায় অনেক খেলা করেছে, শীতের রাতে ওকে জড়িয়ে ধরে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচিয়েছে। এই সব ভাবতে ভাবতে অভি একসময়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

অভি’র ঘুম ভাঙ্গল মায়ের ডাকে, "এই ওঠ। বসিরহাট এসে গেছে প্রায়। এর পরের স্টপেজে আমাদের নামতে হবে।"

বাস থেকে নামার পরে মা জানালেন যে শশাঙ্কর বাড়ি বড় রাস্তা থেকে প্রায় মাইল দুই তিন ভেতরে, এতটা রাস্তা হাটতে হবে তবে গিয়ে গ্রামে পৌঁছান যাবে। অভি জিজ্ঞেস করল যে কোন রিক্সা পাওয়া যায় কিনা।

প্রতিউত্তর অভির বাবা বললেন যে, "ব্যাটা, গ্রামের হাওয়া বাতাসে অনেক অক্সিজেন। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নে, এই সুদ্ধ হাওয়া বাতাস কোলকাতায় পাবি না। এখানে তুই মাটির অনেক কাছে আছিস, হেঁটে চল।"

বাবার কথা তো আর অমান্য করা যায় না, অগত্যা অভি হাঁটতে শুরু করে।

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মা ওকে শুচিস্মিতার গল্প শুনালেন। সেই শুনে অভির মনে শুচিস্মিতাকে দেখার এক প্রবল ইচ্ছে জেগে উঠল।

অনেকক্ষণ হাঁটার পরে ওরা সবাই মায়ের মাসির বাড়ি পৌঁছে গেল। বাড়িটা বিশাল। মায়ের মেসোমশাই বেশ বড় চাষা ছিলেন, অনেক জমি জমা ছিল এককালে। অনেকদিন আগেই তিনি দেহরক্ষা করেছেন। মেসোমশাই মারা যাবার পরে, বড় ভাই সুমন্ত পরিবারের দায় দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। সংসারের জোয়াল কাঁধে পরাতে তিনি আর বেশি পড়াশুনা করতে পারলেন না, তিনি চাষ বাস করে বাকি ভাই বোনেদের পড়াশুনা করিয়েছেন এবং বোনেদের বিয়েথা দিয়েছেন।

বাড়িতে ঢোকা মাত্রই মনে হল যেন এক জন সমুদ্রের মাঝে এসে পড়েছে অভি। চারদিকে লোকজনের হইহুল্লর, চেঁচামেচি, দৌড়া দউরি লেগে আছে। অভি সেই পরিবেশে একদম নতুন, কাউকেই সে চেনে না। মায়ের মাসিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল মা। ঝুঁকে প্রনাম করল অভি। দিদু পরিবারের সবাইকে ডেকে অভির পরিবারের সাথে সবার আলাপ করিয়ে দিল। অভির চোখ থেকে থেকে শুচিস্মিতাকে খোঁজে, তার কোন দেখা নেই। অভির বুকের ভেতরটা ধুকপুক করছে, জিজ্ঞেস করবে কি করবেনা যে শুচিস্মিতা কোথায়, জিজ্ঞেস করাটা বাতুলতা হতে পারে সেই ভয়ে জিজ্ঞেস করল না অভি। মা মেঘনা কে শুচিস্মিতার কথা জিজ্ঞেস করলেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল অভি। মেঘনা উত্তর দিলেন যে যেহেতু শুচিস্মিতা বাড়ির সব থেকে ছোটো মেয়ে তাই ছোটবেলা থেকেই অনেক চঞ্চল। ওর বাড়ির বিয়ে হয়ত কোথাও ওর বান্ধবীদের সাথে ঘুরছে বা আড্ডা মারছে।

ঠিক সেইসময়ে ওদের পাশ দিয়ে একদল মেয়ে গল্প করতে করতে আর ফুল হাতে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিল। মেঘনা ওদের মধ্যে একজন কে ডাক দিল, "পরী এই দিকে শোনো। উলুপি দি ডাকছে তোমাকে।"

মেয়েদের দলের মাঝ থেকে একটি সুন্দরী তরুণী এগিয়ে এল। লাল ঠোঁটে লেগে আছে মনমোহক হাসি। মেয়েটি ঝুঁকে মায়ের পায়ে প্রনাম করল। অভির মা, দু’হাতে জড়িয়ে ধরল মেয়েটিকে। তারপর মেয়েটির চিবুক ছুঁয়ে আদর করে কপালে একটা চুমু খেলেন।

মাতৃ সুলভ স্বরে বললেন, "পরী! আমার ছোট্ট মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে। অনেক দিন তোকে দেখিনি রে।"

অভি নিস্পলক চোখে মেয়েটির সৌন্দর্য সুধা পান করে চলেছে। মেয়েটির গায়ের রঙ বেশ ফর্সা যেন একটু আলতা ছোঁয়ান। পরনে একটি ছোটো হাতার হালকা গোলাপি রঙের জমকালো সালোয়ার কামিজ পড়েছে। মাথার লম্বা ঘন কালো চুল একটা হাত খোঁপা করে ঘাড়ের কাছে আলত করে বাঁধা। খোঁপায় জুঁই ফুল গোঁজা, আর সেই জুঁই ফুলের গন্ধে চারপাশ মাতোয়ারা করে তুলেছে। শীতের মিষ্টি রদ্দুর যেন ওর ত্বকের ওপরে পেছল খাচ্ছে। ডিম্বাকৃতি মুখাবয়াব, হাসলে দু’গালে টোল পরে, আর তাতে যেন হাসিটার সৌন্দর্য আরও শত গুন বেড়ে যায়। মেয়েটির রুপে মোহিত হয়ে যায় অভিমন্যু, হাঁ করে চেয়ে থাকে ওর দিকে।

পরী একবার অভির হাঁ করা মুখের দিকে চেয়ে, মাকে প্রশ্ন করল, "এটি তোমার পুত্র অভিমন্যু, তাই না?"

মা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলেন, "হ্যাঁ। তোর মনে আছে, ছোটো বেলায় তুই এর সাথে খেলতিস। তুই যেখানে যেতিস, তোর সাথে একেও টেনে নিয়ে যেতিস।"

পরী অভির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করল, "বাঃবা, অভিমন্যু তো অনেক বড় হয়ে গেছে।"

অভির দিকে তাকিয়ে এক মিষ্টি হাসল পরী। সেই হাসি দেখে অভির বুকের ভেতরের রক্ত ছলকে উঠল। আওয়াজ শুনে মনে হল যেন ওর কানে কেউ মধু ঢেলে দিয়েছে।

মাকে জড়িয়ে ধরে পরী বলল, "উলুপিদি, আমার না খুব তাড়া আছে। আমি এখন যাচ্ছি, পরে তোমাদের সাথে কথা বলব।" তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি আমাকে পরী বলে ডাকতে পার। আমাকে বাড়ির সবাই পরী বলেই ডাকে। আমার এখন খুব তাড়া আছে, আমি তোমার সাথে পরে দেখা করব।"

মেঘনা পরীকে বলল, "তোমার কোন তাড়া নেই, পরী। তুমি শুধু আড্ডা মেরে বেড়াবে আর কিছু না।"

পরী মেঘনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "অঃ বৌদি, এইত সময় আমার আড্ডা মারার আর মজা করার।"

তারপরে পরী ওর বান্ধবীদের সাথে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল। অভি নিস্পলক চোখে পরীর চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল। নাসারন্ধ্রে তখন শুধু জুঁইয়ের গন্ধ মম-মম করছে।

অভির মা অভিকে বললেন যে ঘুরে ফিরে সবার সাথে আলাপ পরিচয় করে নিত। নিজেরা চলে গেলেন ভেতরে। অভি একা একা কি করবে ঠিক ভেবে পেল না। একেবারে নতুন পরিবেশ নতুন মানুষজন, কাউকেই ও চেনেনা।

এক কাপ কফি নিয়ে ছাদে উঠে গেল অভি। পড়ন্ত দুপুরের রোদে ছাদের ওপরে একা একা ঘুরতে ঘুরতে এক কোনায় দাঁড়িয়ে গ্রামের শোভা দেখতে লাগল।হটাত করে চোখ গেল নিচে উঠানে। সেই মেয়েদের দল উঠানে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারছে। পরী কে দেখতে ঠিক এক রাজকুমারীর যেন সখী পরিবেষ্টিত হয়ে রয়েছে সেই রকম লাগছে। অভির চোখ আবার যেন পরীর শরীরের আঁকিবুঁকি মাপার জন্যে আনচান করছে। পরীর গঠন যেন প্রাচিন এক বালি-ঘড়ির মতন। তিন তলার ছাদ থেকে অভি পরীর রুপ ব্যাস এইটুকুই দেখে মন শান্তি করতে হল।

পরীর অপরূপ সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে প্রেমে পরে গেছে অভি। এক অদৃশ্য চুম্বকীয় শক্তি বাঁ ভাললাগা যেন ওকে পরীর দিকে টানছে। কিছু পরে মেয়েদের দলটি উঠান ছেড়ে অন্য দিকে চলে গেল।
[+] 2 users Like sorbobhuk's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram - by sorbobhuk - 27-02-2019, 02:25 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)