25-06-2020, 10:07 AM
কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#10)
একা একা বিছানার ওপরে শুয়ে রইল, কিছুই আর ভাল লাগছে না ওর। কামনার আগুনে পুড়ে একি করে ফেলল দেবেশ। মনিদিপাকে অনেক হেনস্থা করেছে ও সবার সামনে, আজ ওর পায়ে পরে ক্ষমা চেয়ে নেবে আর কোন দিন ওর সামনে যাবে না।
রাতের আঁধারে চুপি চুপি মই লাগিয়ে মানব জেঠুর ছাদে উঠল দেবেশ। সিঁড়ির দরজা বন্ধ দেখে, পাইপ বেয়ে দুতলায় নামল। চোরের মতন বারান্দা দিয়ে পাটিপে টিপে, মনিদিপার ঘরের দিকে এগোল। ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। আস্তে করে কড়া নাড়ল দেবেশ। কোন আওয়াজ নেই, আবার কিছুক্ষণ পরে কড়া নাড়ল দেবেশ। এবারে যেন পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল।
দরজা খুলে হাঁ করে তাকিয়ে রইল মনিদিপা, সামনে কাকুতি ভরা চোখে নিয়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দেবেশ।
ওই মুখ দেখে আরও রেগে গেল মনিদিপা, চোখ ফেটে জল চলে এল, বুকের পাঁজর একটা একটা করে যেন কেউ ভেঙ্গে দিচ্ছে। চাপা স্বরে কেঁদে উঠল মনিদিপা, “তুই একটা স্বার্থপর, নিজের খিদে ছাড়া আর কিছু জানিস না তুই। তুই আমাকে নিয়ে অনেক খেলা করেছিস। আমি তোকে মন দিয়ে…” আর কথা শেষ করতে পারল না… হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল মনিদিপা। দেবেশের মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিল, ওকে উত্তর দেবার সময় দিলনা পর্যন্ত। চিৎকার করে উঠল মনিদিপা, বন্ধ দরজার পেছন থেকে, “চলে যা তুই আমার সামনে থেকে, আর কোনোদিন আমার সামনে আসবি না তুই… তুই আমার মান সন্মান সব নিলাম করে দিয়েছিস আজ। আমি আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারছিনা, নিজেকে এত ছোটো মনে হচ্ছে।”
বন্ধ দরজার সামনে কিছুক্ষণ হাঁ করে জড় ভরতের মতন দাঁড়িয়ে রইল দেবেশ। ওর শরীরের সব রক্ত যেন কেউ শুষে নিয়েছে। হাঁটার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছে। বন্ধ দরজার সামনে হাত জোড় করে নিচু স্বরে বলল দেবেশ, “মনিদি আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিও আমি তোমার জীবনের সব থেকে বড় পাপী। আমি আর তোমার সামনে কোন দিন আসব না মনিদি।”
মনিদিপা দরজার ওপার থেকে দেবেশের কান্নার সুর শুনে, মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল, “একি করেছে ও, শেষ পর্যন্ত একটা লম্পট ছেলে কে মন দিয়ে ফেলছে, তাও আবার নিজের থেকে ছোটো। একি ভুল করে ফেলেছে। একি ভালবাসা না যৌন ক্ষুধা।” ককিয়ে ককিয়ে কেঁদে উঠল মনিদিপা, “আমি তোকে ভালবাসি রে দেবেশ… আমার মতন পাপী আর এই পৃথিবীতে কেউ নেই। আমি যে তোকে প্রান দিয়ে ভালবাসি।”
এই নিশুতি রাতে, দূর থেকে ভেসে এল একটা গান—
জড়িয়ে ধরেছি যারে সে আমার নয়
কখন বুঝিনি আমি কে আমার নয়
কখন বুঝিনি আমি কে আমার নয়
মন তার নেমে এল চোখের পাতায়
ভালবাসা এসে বুকে দাগ দিয়ে যায়
ভুল দিয়ে মালা গেঁথে
ভুল দিয়ে মালা গেঁথে পরাল আমায়
তবু বোঝা গেল না’ত সে আমার নয়
কখন বুঝিনি আমি কে আমার নয়
বন্ধ দরজার পেছনের সেই আওয়াজ কোনদিন দেবেশের কানে পউছাল না। যেরকম ভাবে পাইপ বেয়ে এসেছিল, ঠিক সেই রকম ভাবে আবার নিজের ঘরে চলে গেল দেবেশ। সারা রাত ঘুমতে পারল না, বিছানায় পড়ে ছটফট করতে থাকল।
সারাদিন দেবেশের মনের মধ্যে শুধু মনিদিপাদির কথা ঘুরে বেরাল, মন আর কিছুতে টিকতে চাইছেনা। আগে মনিদিপাদির কাছে যাবার জন্য মন আকুলি বিকুলি করত এখন মনিদিপাকে ছেড়ে মন আকুলি বিকুলি করছে। বিকেল বেলা কলেজ থেকে ফিরে দেখে বাড়িতে মনিদিপার মা, মানে জেঠিমা বসে মায়ের সাথে গল্প করছে।
জেঠিমা ওকে দেখে জিজ্ঞেস করল, “কি রে কাল তোদের কি কোন ঝগড়া হয়েছিল?”
দেবেশের মনে হল যেন কেউ পেরেক দিয়ে ওর পা মেঝের সাথে গেঁথে দিয়েছে। মাথা নিচু করে উত্তর দিল, “কই না তো।”
জেঠিমা উত্তর দিল, “ও বাবা, কি জানি মেয়ের কি হল, কাল রাতে একদম মন মড়া ছিল। রাতে কিছু খায়নি আবার সকাল বেলাও না খেয়ে বেড়িয়ে গেছে। আজ বলছিল দেরি হবে। এই বারাসাত থেকে কলকাতা, রোজ রোজ যাওয়া, তাই নাকি ও আরও কয়েক জন মিলে ওর অফিসের কাছে একটা ফ্লাট ভাড়া করে থাকবে।”
মা জেঠিমা কে জিজ্ঞেস করল, “মনি বলল আর তুমি ওকে ছেড়ে দিলে? কি যে কর তুমি দিদি।”
জেঠিমা উত্তর দিল, “তুই ত আর জানিশ না ওকে, ওর যা জিদ।”
মা হেসে উত্তর দিল, “মনি আমার সোনার টুকরো মেয়ে, সাত রাজার এক মানিক। আমার যদি কোন বড় ছেলে থাকত তাহলে তোমার মনিকে আমি আমার বাড়ির বউমা করে নিতাম।”
মায়ের কথা শুনে দেবেশের বুক ফেটে চৌচির হয়ে গেল, চোখ জ্বালা করতে শুরু করে দিল। তাহলে ওর মনিদিপাদি আর ওর হাতের নাগালের কাছে থাকবে না। চিরদিনের মতন হারিয়ে যাবে, আর মায়ের মনে যে এত সাধ ছিল তা কি আর ও জানত। এখন আর কি হবে।
দিন দুই এই রকম ভাবে কেটে গেল দেবেশের, জীবনটা কেমন যেন ছন্নছাড়া হয়ে গেল ওর। একদিন খবর এল যে মানব জেঠুর বড় ছেলে প্রদিপ কোন পাঞ্জাবি মেয়েকে বিয়ে করে চণ্ডীগড়ে ঘর জামাই হয়ে চলে গেছে। দেবেশের মনে সেই ঘটনাটা তেমন কিছু দাগ কাটল না কেননা প্রদিপ কে ও কোনদিন দেখতে পারত না।
ব্যাথা লাগল সেদিন, যেদিন কলেজ থেকে ফিরে শুনল যে মানব জেঠু বাড়ি বিক্রি করে কলকাতায় মনিদিপাদির সাথে ভাড়া বাড়িতে থাকবে। সারারাত ধরে দেবেশ কেঁদে বালিশ ভাসিয়ে দিল, দেয়ালে মাথা ঠুকেও কোন কিছুর উপায় করতে পারল না। আর তিন মাস পরে ওর জয়েন্ট আই আই টি পরীক্ষা, কিন্তু সব ছেড়েছুরে ওর মন বৈরাগী হয়ে গেছে। মন বলছে শেষ পর্যন্ত ও বাবার দোকানে গিয়ে বসবে। মনিদিপাদি কে কথা দিয়েছিল যে ও আই আই টি পড়বে, কিন্তু যখন ওর জীবন থেকে প্রান প্রেয়সী মনিদিপা চলেই গেছে তাহলে আর কার জন্য ও জয়েন্ট আই আই টি দেবে।
এই ভাবে আরও দেড় মাস কেটে গেল। একদিন কলেজ থেকে ফিরে বাবার মুখে শোনে যে মানব জেঠুর নাকি খুব শরীর খারাপ। মাকে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারল যে মানব জেঠুর হার্ট এটাক হয়েছে। তার ওপরে নাকি বুকে পেস মেকার বসাতে হবে। বাবা দৌড় দিয়েছে কলকাতায়। দেবেশের যাবার ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিল না, কি মুখ নিয়ে দাঁড়াবে ও মনিদিপার সামনে।
কিছুদিন পরে খবর এল যে, পেস মেকার বসানর পরেও মানব জেঠু দেহ রক্ষা করেছেন। সেই কথা শুনে দেবেশের পায়ের তলায় ভুমিকম্প হয়েছিল। না মানব জেঠুর জন্য নয়, মনিদিপাদির কথা ভেবে, দেবেশ আর থাকতে পারেনি। বাবাকে নিয়ে দৌরে গেল গরিয়াহাটায় মনিদিপার বাড়িতে।
চৌকাঠে পা রেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল দেবেশ। চোখের সামনে, সাধের মূর্তি মনিদিপাদি যেন কালি মেখে বসে আছে। সেই ফর্সা গোলগাল চেহারার মনিদিপাদি আর নেই, এক কাঠের পুতুল ভাসা ভাসা চোখে নিয়ে বাবার মৃতদেহের পাশে বসে। আস্তে করে হাঁটু গেড়ে মনিদিপাদির পেছনে গিয়ে বসল দেবেশ। আলত করে কাঁধে হাত ছোঁয়াল। পুরনো হাতের পরশ পেয়ে মনিদিপার হৃদয় কেঁদে উঠল।
একা একা বিছানার ওপরে শুয়ে রইল, কিছুই আর ভাল লাগছে না ওর। কামনার আগুনে পুড়ে একি করে ফেলল দেবেশ। মনিদিপাকে অনেক হেনস্থা করেছে ও সবার সামনে, আজ ওর পায়ে পরে ক্ষমা চেয়ে নেবে আর কোন দিন ওর সামনে যাবে না।
রাতের আঁধারে চুপি চুপি মই লাগিয়ে মানব জেঠুর ছাদে উঠল দেবেশ। সিঁড়ির দরজা বন্ধ দেখে, পাইপ বেয়ে দুতলায় নামল। চোরের মতন বারান্দা দিয়ে পাটিপে টিপে, মনিদিপার ঘরের দিকে এগোল। ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। আস্তে করে কড়া নাড়ল দেবেশ। কোন আওয়াজ নেই, আবার কিছুক্ষণ পরে কড়া নাড়ল দেবেশ। এবারে যেন পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল।
দরজা খুলে হাঁ করে তাকিয়ে রইল মনিদিপা, সামনে কাকুতি ভরা চোখে নিয়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দেবেশ।
ওই মুখ দেখে আরও রেগে গেল মনিদিপা, চোখ ফেটে জল চলে এল, বুকের পাঁজর একটা একটা করে যেন কেউ ভেঙ্গে দিচ্ছে। চাপা স্বরে কেঁদে উঠল মনিদিপা, “তুই একটা স্বার্থপর, নিজের খিদে ছাড়া আর কিছু জানিস না তুই। তুই আমাকে নিয়ে অনেক খেলা করেছিস। আমি তোকে মন দিয়ে…” আর কথা শেষ করতে পারল না… হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল মনিদিপা। দেবেশের মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিল, ওকে উত্তর দেবার সময় দিলনা পর্যন্ত। চিৎকার করে উঠল মনিদিপা, বন্ধ দরজার পেছন থেকে, “চলে যা তুই আমার সামনে থেকে, আর কোনোদিন আমার সামনে আসবি না তুই… তুই আমার মান সন্মান সব নিলাম করে দিয়েছিস আজ। আমি আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারছিনা, নিজেকে এত ছোটো মনে হচ্ছে।”
বন্ধ দরজার সামনে কিছুক্ষণ হাঁ করে জড় ভরতের মতন দাঁড়িয়ে রইল দেবেশ। ওর শরীরের সব রক্ত যেন কেউ শুষে নিয়েছে। হাঁটার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছে। বন্ধ দরজার সামনে হাত জোড় করে নিচু স্বরে বলল দেবেশ, “মনিদি আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিও আমি তোমার জীবনের সব থেকে বড় পাপী। আমি আর তোমার সামনে কোন দিন আসব না মনিদি।”
মনিদিপা দরজার ওপার থেকে দেবেশের কান্নার সুর শুনে, মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল, “একি করেছে ও, শেষ পর্যন্ত একটা লম্পট ছেলে কে মন দিয়ে ফেলছে, তাও আবার নিজের থেকে ছোটো। একি ভুল করে ফেলেছে। একি ভালবাসা না যৌন ক্ষুধা।” ককিয়ে ককিয়ে কেঁদে উঠল মনিদিপা, “আমি তোকে ভালবাসি রে দেবেশ… আমার মতন পাপী আর এই পৃথিবীতে কেউ নেই। আমি যে তোকে প্রান দিয়ে ভালবাসি।”
এই নিশুতি রাতে, দূর থেকে ভেসে এল একটা গান—
জড়িয়ে ধরেছি যারে সে আমার নয়
কখন বুঝিনি আমি কে আমার নয়
কখন বুঝিনি আমি কে আমার নয়
মন তার নেমে এল চোখের পাতায়
ভালবাসা এসে বুকে দাগ দিয়ে যায়
ভুল দিয়ে মালা গেঁথে
ভুল দিয়ে মালা গেঁথে পরাল আমায়
তবু বোঝা গেল না’ত সে আমার নয়
কখন বুঝিনি আমি কে আমার নয়
বন্ধ দরজার পেছনের সেই আওয়াজ কোনদিন দেবেশের কানে পউছাল না। যেরকম ভাবে পাইপ বেয়ে এসেছিল, ঠিক সেই রকম ভাবে আবার নিজের ঘরে চলে গেল দেবেশ। সারা রাত ঘুমতে পারল না, বিছানায় পড়ে ছটফট করতে থাকল।
সারাদিন দেবেশের মনের মধ্যে শুধু মনিদিপাদির কথা ঘুরে বেরাল, মন আর কিছুতে টিকতে চাইছেনা। আগে মনিদিপাদির কাছে যাবার জন্য মন আকুলি বিকুলি করত এখন মনিদিপাকে ছেড়ে মন আকুলি বিকুলি করছে। বিকেল বেলা কলেজ থেকে ফিরে দেখে বাড়িতে মনিদিপার মা, মানে জেঠিমা বসে মায়ের সাথে গল্প করছে।
জেঠিমা ওকে দেখে জিজ্ঞেস করল, “কি রে কাল তোদের কি কোন ঝগড়া হয়েছিল?”
দেবেশের মনে হল যেন কেউ পেরেক দিয়ে ওর পা মেঝের সাথে গেঁথে দিয়েছে। মাথা নিচু করে উত্তর দিল, “কই না তো।”
জেঠিমা উত্তর দিল, “ও বাবা, কি জানি মেয়ের কি হল, কাল রাতে একদম মন মড়া ছিল। রাতে কিছু খায়নি আবার সকাল বেলাও না খেয়ে বেড়িয়ে গেছে। আজ বলছিল দেরি হবে। এই বারাসাত থেকে কলকাতা, রোজ রোজ যাওয়া, তাই নাকি ও আরও কয়েক জন মিলে ওর অফিসের কাছে একটা ফ্লাট ভাড়া করে থাকবে।”
মা জেঠিমা কে জিজ্ঞেস করল, “মনি বলল আর তুমি ওকে ছেড়ে দিলে? কি যে কর তুমি দিদি।”
জেঠিমা উত্তর দিল, “তুই ত আর জানিশ না ওকে, ওর যা জিদ।”
মা হেসে উত্তর দিল, “মনি আমার সোনার টুকরো মেয়ে, সাত রাজার এক মানিক। আমার যদি কোন বড় ছেলে থাকত তাহলে তোমার মনিকে আমি আমার বাড়ির বউমা করে নিতাম।”
মায়ের কথা শুনে দেবেশের বুক ফেটে চৌচির হয়ে গেল, চোখ জ্বালা করতে শুরু করে দিল। তাহলে ওর মনিদিপাদি আর ওর হাতের নাগালের কাছে থাকবে না। চিরদিনের মতন হারিয়ে যাবে, আর মায়ের মনে যে এত সাধ ছিল তা কি আর ও জানত। এখন আর কি হবে।
দিন দুই এই রকম ভাবে কেটে গেল দেবেশের, জীবনটা কেমন যেন ছন্নছাড়া হয়ে গেল ওর। একদিন খবর এল যে মানব জেঠুর বড় ছেলে প্রদিপ কোন পাঞ্জাবি মেয়েকে বিয়ে করে চণ্ডীগড়ে ঘর জামাই হয়ে চলে গেছে। দেবেশের মনে সেই ঘটনাটা তেমন কিছু দাগ কাটল না কেননা প্রদিপ কে ও কোনদিন দেখতে পারত না।
ব্যাথা লাগল সেদিন, যেদিন কলেজ থেকে ফিরে শুনল যে মানব জেঠু বাড়ি বিক্রি করে কলকাতায় মনিদিপাদির সাথে ভাড়া বাড়িতে থাকবে। সারারাত ধরে দেবেশ কেঁদে বালিশ ভাসিয়ে দিল, দেয়ালে মাথা ঠুকেও কোন কিছুর উপায় করতে পারল না। আর তিন মাস পরে ওর জয়েন্ট আই আই টি পরীক্ষা, কিন্তু সব ছেড়েছুরে ওর মন বৈরাগী হয়ে গেছে। মন বলছে শেষ পর্যন্ত ও বাবার দোকানে গিয়ে বসবে। মনিদিপাদি কে কথা দিয়েছিল যে ও আই আই টি পড়বে, কিন্তু যখন ওর জীবন থেকে প্রান প্রেয়সী মনিদিপা চলেই গেছে তাহলে আর কার জন্য ও জয়েন্ট আই আই টি দেবে।
এই ভাবে আরও দেড় মাস কেটে গেল। একদিন কলেজ থেকে ফিরে বাবার মুখে শোনে যে মানব জেঠুর নাকি খুব শরীর খারাপ। মাকে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারল যে মানব জেঠুর হার্ট এটাক হয়েছে। তার ওপরে নাকি বুকে পেস মেকার বসাতে হবে। বাবা দৌড় দিয়েছে কলকাতায়। দেবেশের যাবার ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিল না, কি মুখ নিয়ে দাঁড়াবে ও মনিদিপার সামনে।
কিছুদিন পরে খবর এল যে, পেস মেকার বসানর পরেও মানব জেঠু দেহ রক্ষা করেছেন। সেই কথা শুনে দেবেশের পায়ের তলায় ভুমিকম্প হয়েছিল। না মানব জেঠুর জন্য নয়, মনিদিপাদির কথা ভেবে, দেবেশ আর থাকতে পারেনি। বাবাকে নিয়ে দৌরে গেল গরিয়াহাটায় মনিদিপার বাড়িতে।
চৌকাঠে পা রেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল দেবেশ। চোখের সামনে, সাধের মূর্তি মনিদিপাদি যেন কালি মেখে বসে আছে। সেই ফর্সা গোলগাল চেহারার মনিদিপাদি আর নেই, এক কাঠের পুতুল ভাসা ভাসা চোখে নিয়ে বাবার মৃতদেহের পাশে বসে। আস্তে করে হাঁটু গেড়ে মনিদিপাদির পেছনে গিয়ে বসল দেবেশ। আলত করে কাঁধে হাত ছোঁয়াল। পুরনো হাতের পরশ পেয়ে মনিদিপার হৃদয় কেঁদে উঠল।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!
