24-06-2020, 09:49 AM
## ১৮
সারাদিন ঘরের মধ্যে পরে পরে ঘুমিয়েছি। রাতে ঘুম হয়নি ভালো। ঘর অন্ধকার। রাত হয়ে গেছে কখন টের পাইনি। কটা বাজে এখন? ঘড়িটা কোথায় রেখেছি খুলে, হাতরাতে হাতরাতে পেলাম, বাজে আটটা পনেরো। হুম, সারাদিন ঘুমিয়ে কাটিয়েছি এখন সারা রাত কি করবো এটা ভেবে বিরক্ত লাগতেছে। কথা বলে সময় কাটানোর মত মানুষ নেই। চিন্তা করেছিলাম আগামিকাল সকাল সকাল রওনা হয়ে সোজা অফিসে চলে যাবো। আজকে সারা রাত জাগনা থাকলে কালকে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। নাহ ঘুম নেই চোখে। ঊঠে মুখে কুলি করে দরজা খুললাম, বাহিরটা বেশ অন্ধকার। চাদের আলো দুরের পুকুরটায় পড়ে চারপাশ আল করে রেখেছে। পুকুরের সাথে আমার অনেক স্মৃতি। বাল্যকালের আমার খেলার সাথিদের মধ্যে একজন। কল্পনায় সেইসব সুখস্মৃতি মনে করতে করতে হেটে পুকুর পারে চলে গেলাম। পাড়ে বসে পড়লাম।
পুকুরটায় আগের মতো আর জংলা নেই। বেশ পরিষ্কার। পুকুরটাও আগের মতো শান্তিতে নেই, কাসেম চাচা আর আমার চাচারা মিলে পুকুরের চোখ নিরঘুম করে তুলছে। চাদের আলোয় পানি চিক চিক করছে। বেশ বড় পুকুর। এই পুকুরের উপর অনেকের দাব। পুকুরের ঠিক উল্টো পাশে কাসেম চাচার বাড়ি, সেও এখন ভাগ চাচ্ছেন। আমার ভাগের কোন খবর নেই। আগে সবাই মিলে পুকুরটায় মজা করতাম এখনো মনে আছে ছোট বেলায় দেখেছি ইঞ্জিন লাগিয়ে পানি সেচে আমার বাবা ও চাচারা এক* সাথে মাছ ধরতো। কাদায় মাছগুলো লাফাতো। বর্ষার দিনে মাছ ধরা। আমি কাদায় নেমে যেতাম, মা বকা ঝকা করলেও বাবা আমাকে দেখিয়ে দিতেন ঐ মাছটা ধরো, ওটা নিয়ে আসো। এই চাদের আলোতে একজনের জন্যে বসে থাকতাম, মশার কামর খেতাম। আজ মশা নেই সেও নেই। জঙ্গল পরিস্কার। নিজেকে আরাল করবার মতো জায়গা নেই। সিগারেট ধরালাম। সেই একজন আমার সামনে আসতেই সুলেখার কথা মনে পরে গেলো। তার সুন্দর মুখ খানি, প্রভু তাকে খুব সুন্দর করে বানিয়েছেন। তার মায়াবি আকর্ষণ আমার মনের বড় অংশ দখল করে বসে আছে, কাওকে সেখানে ভিড়তে দিতে চাচ্ছেনা। সুলেখা আমাকে কি তার মনের ঢাল বানিয়েছে? হুম, তাকে চিনা যায়না। এই বুঝা যায় সে আমাকে ভালোবাসে। আবার নিজেকে শক্ত করে ফেলে। একবার মনে হয় তাকে মনের কথাটি বলা দরকার। কিন্তু সাহস হয়না। এ কিভাবে সম্ভব।
আচমকা পিঠের পিছনের একটা আলতো স্পর্শে চমকে উঠলাম। অনেকটা শরীর কেপে ভয় পেয়ে গেলাম। সাহস নিয়ে পিছনে ফিরে তাকালাম।
• এ কি তুমি?
• কেমন আছো? এতো রাতে একা বসে যে?
• দিনে ঘুমিয়েছিলাম সারাদিন, মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম, তুমি? এখানে চলে এলা যে? যদি কেও এসে পড়ে,
• আসলে আসুক, এখোনো কি তুমি সেই আগের ভয় নিয়ে আছো?
• নাহ, তোমার জামাই দেখলে খারাপ হবে, তাছাড়া………।
• তাছাড়া কি? বিয়ে করে ফেলছি, আমি বিবাহিত, আমার উপর এখোনো রেগে আছো? আমি জানি তুমি রেগে আছো, আমিও তো চাইনি তোমাকে আমার মুখ দেখাতে। তাই এতদিনে আমি আসিনি
• এখোন মুখ দেখাতে পারবে, তাই এসেছো? আমার তোমার উপর কোন রাগ নেই, আর রাগ কেনই বা হবে? তুমি তো কোন অপরাধ করোনি, আমার কপালে ছিলোনা। যাই হোক সে অনেক আগের কথা। আখি, তুমি ভালো আছোতো??
• হ্যা আমি ভালো, আর আমি এখন মুখ দেখাতে পারবো তাই এসেছি কথাটা ঠিক, আমার সাথে আমার জামাই এর ছাড়া ছাড়ি হয়ে গেছে। এতে আমার মনে কোন দুঃখ নেই, সে আমাকে সন্দেহ করত। তার সাথে আমার মিলতো না। প্রচন্ড রাগি একজন মানুষ, অবশ্য এর জন্যে আমি নিজেই দায়ি। আমার কাছে তাকে কখনো আপন মনে হতোনা। আমার চেহারায় সেটা ফুটে উঠতোনা । আচ্ছা ওসব কথায় না হয় বাদ দিলাম। আমি শুনেছি তুমি গতকাল এসেছো। একবার তোমার দরজার ফাকে দিয়ে তাকিয়েছিলাম। তুমি ঘুমাচ্ছিলে। খুব ক্লান্ত ছিলে। একেবারে বাড়ি ছেড়ে দিয়েছো?
• নাহ, তবে ছেড়ে দিবো। আমার ঠিকানা পরিবর্তন করা দরকার। বেচে থাকার তাগিদে ঠিকানা পরিবর্তন। চাচা চাচি আছেন কেমন? তারা কি বলেন? তোমার এটা করা ঠিক হয়নি। যা হবার তা তো হয়ে গেছে। তুমি তাকে ছেড়ে দিলেও কি সেটা ফিরে আসবে? জীবনটাকে খাপ খাইয়ে নেয়ার দরকার ছিলো।
• বাবা মা কিছু বলেনি। আমি তাদের সাথেও কথা বলিনা। সারাদিন বাসার ভিতর ঘাপটি মেরে থাকি। জীবন যদি না চলতে চায় তাহলে তাকে জোর করা যায়না। জোর করলেও সেটা আরো যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠে। তুমি এখোনো বিয়ে করোনি যে? বিড়ির অভ্যাস কবে থেকে হলো?
• হুম
কত সময় চুপি চুপি আখির সাথে পুকুর পাড়ে বসে কাটিয়েছি। আজ চাদের আলোয় তার ভয় নেই। আমার পাশে বসে কথা বলে যাচ্ছে। গ্রামের লোকে দেখলে কাল-ই এর বিচার ডাকবে। সেই বিচার এর ভয় তার নেই। আমারো সেই বিচারের ভয় নেই কেন জানি। আখি আগে থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বড় হয়ে গেছে। চেহারায় পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সেই আগের মতই সাস্থ। তাদের সন্তান হয়নি। তবে তার জামাইকে ছেরে দেয়া উচিত হয়নি। আজকে আমার মন এতে সায় দিচ্ছেনা। জামাই ছাড়া কিভাবে থাকবে বাকিটা জীবন? একটা মেয়ের পাহারাদার, তার নিরাপত্তা সব কিছুই একজন পুরুষের হাতে। তাছাড়া এখন তাকে বিয়ে করবে কে? করলেও বয়স্ক লোক ছাড়া আর কেও করবেনা। সেটা আখি নিশ্চই চাবেনা। সে তার আগের জামাইকে আপন করে নিতে পারেনি। নতুন কাওকে নিবে বলে মনে হয়না। সারাটা জীবন কি তাহলে সে এভাবেই কাটিয়ে দিবে?
• আখি, বিয়ে করবেনা আবার?
• হি হি হি, করবো।
• করবে যেহেতু তো জামাই ছাড়লে কেন?
• এমনি, জামাই পছন্দ না, তুমি বিয়ে করছনা যে? ঢাকায় না কোথায় গিয়ে যেন উঠেছো, সেখানে কাওকে পছন্দ হয়নি?
• হুম, না। আচ্ছা তুমি চলে যাও, কেও এসে পড়লে বিপদ হবে। রাত হয়ে গেছে অনেক। আমি আগামিকাল সকালের দিকে চলে যাবো, গ্রামের কথা মনে পড়তেছিল অনেক তাই চিন্তা করেছিলাম কয়েকদিন থেকে যাই, এখন ভালো লাগছেনা
আমাকে ভাগাতে চাচ্ছো? গতকাল বাড়িতে এসেছো একবারো তো আমাকে জিগ্যেস করতে গেলানা? আমি জানি আমাকে তুমি ক্ষমা করনি। আর কলঙ্কের ভয় দেখাচ্ছো? আমার কি কলঙ্ক পড়েনি? মানুষের চোখে নাইবা ধরা পড়লো। কলঙ্ক মাখা সেদিনের দিনগুলি আজ মনে আসেনা তেমন তাই না। আসলে আমি জোর করিনি কখোনো কাওকে, তুমি আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলে, আমি সেদিন মনকে জোর করতে পারিনি, অনেক চেয়েছিলাম। আমি জানি তুমি এতে অনেক কষ্ট পেয়েছো, আমি বিয়ের তিনদিন পরে যখন বাড়িতে এলাম তোমাকে পেলাম না।, চাচির মুখে শুনলাম তুমি সেই যে আমার বিয়ের দিন বাড়ি ছেরে চলে গিয়েছো আর আসোনি। চাচি অনেক কান্না কাটি করলো। আমি সেদিন নিওত করেছিলাম এ বাড়িতে আর আসবোনা। আমি মেয়ে মানুষ লড়াই করার মত শক্তি হয়তো আমার নেই, কিন্তু জেদ করার শক্তি তো আছে? এই চাপা জেদ এর কারনে আমার জামাই আমাকে অনেক মানসিক চাপ দিত, নিরযাতন করতো, আমি তাকে তোমার কথাও বলেছি। অবশেষে সে আমাকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, আমি তাকে দিইনি। তালাক নিয়ে তার উপরে আমার কোন রাগ নেই, আমি জানি তার কোন দোষ নেই। কোন পুরুষ চাবেনা তার স্ত্রি অন্যকে কল্পনা করে সারাদিন বসে থাকবে।
– আখি সেদিনের কথা বাদ দেও, আমি তো বলেছি তুমার কোন দোষ ছিলনা। চল ঘরের দিকে যাই।
আখি আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে, আমি বললাম যাবেনা? দাঁড়িয়ে আছো যে? আখি বলল আজ আমার একজনের প্রতি কোন অধিকার নেই, সে একজন আমার জন্যে রাতভর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতো। আজ ইচ্ছে হচ্ছে সারা রাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে। তার অনুভুতি বুঝতে। জানি এ আমার উচিত না। তারপরও বড় ইচ্ছে হয় সেদিনে ফিরে চলে যেতে। আমি বললাম হুম, জীবন যে পথে চলে গেছে, সেখানে সুখের স্বর্গ খুজে নেও, অজানা পথে আর হেটোনা, ও পথ বড় নির্মম । আমি আগামিকাল ভোরেই চলে যাবো। দেখা হবে কিনা জানিনা। তুমি জিজ্ঞ্যেস করেছিলে আমার কাওকে পছন্দ হয়েছে কিনা। হ্যা আমার একজনকে পছন্দ হয়েছে, তাকে ভালো লাগার কথা জানানো হয়নি, আমার ধারনা সেও আমাকে চায়। আমি তোমাকে ভালবাসতাম এটা সত্য, সেই নারী আমার জীবনে আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অনিচ্ছা সত্যেও তুমি আমার মনের অন্তরালে বাসা বেধে রেখেছিলে। অনেক যন্ত্রনা হত। তুমি ভালো থেকো এটা আমার সবসময়ের কামনা। আমার কেন জানি ভালো লাগছেনা। আমি চলি। আমার কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিও।
আখিকে পুকুরে রেখেই জাহিদ ঘরের দিকে চলে গেলো। আখির সাথে কথা বলতে তার কষ্ট হচ্ছিল। আখি নিজে ত সুখি হতে পারলোনা। মাঝখানে দুটি জীবনের চাওয়া চাওয়াতেই থেকে গেলো
সারাদিন ঘরের মধ্যে পরে পরে ঘুমিয়েছি। রাতে ঘুম হয়নি ভালো। ঘর অন্ধকার। রাত হয়ে গেছে কখন টের পাইনি। কটা বাজে এখন? ঘড়িটা কোথায় রেখেছি খুলে, হাতরাতে হাতরাতে পেলাম, বাজে আটটা পনেরো। হুম, সারাদিন ঘুমিয়ে কাটিয়েছি এখন সারা রাত কি করবো এটা ভেবে বিরক্ত লাগতেছে। কথা বলে সময় কাটানোর মত মানুষ নেই। চিন্তা করেছিলাম আগামিকাল সকাল সকাল রওনা হয়ে সোজা অফিসে চলে যাবো। আজকে সারা রাত জাগনা থাকলে কালকে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। নাহ ঘুম নেই চোখে। ঊঠে মুখে কুলি করে দরজা খুললাম, বাহিরটা বেশ অন্ধকার। চাদের আলো দুরের পুকুরটায় পড়ে চারপাশ আল করে রেখেছে। পুকুরের সাথে আমার অনেক স্মৃতি। বাল্যকালের আমার খেলার সাথিদের মধ্যে একজন। কল্পনায় সেইসব সুখস্মৃতি মনে করতে করতে হেটে পুকুর পারে চলে গেলাম। পাড়ে বসে পড়লাম।
পুকুরটায় আগের মতো আর জংলা নেই। বেশ পরিষ্কার। পুকুরটাও আগের মতো শান্তিতে নেই, কাসেম চাচা আর আমার চাচারা মিলে পুকুরের চোখ নিরঘুম করে তুলছে। চাদের আলোয় পানি চিক চিক করছে। বেশ বড় পুকুর। এই পুকুরের উপর অনেকের দাব। পুকুরের ঠিক উল্টো পাশে কাসেম চাচার বাড়ি, সেও এখন ভাগ চাচ্ছেন। আমার ভাগের কোন খবর নেই। আগে সবাই মিলে পুকুরটায় মজা করতাম এখনো মনে আছে ছোট বেলায় দেখেছি ইঞ্জিন লাগিয়ে পানি সেচে আমার বাবা ও চাচারা এক* সাথে মাছ ধরতো। কাদায় মাছগুলো লাফাতো। বর্ষার দিনে মাছ ধরা। আমি কাদায় নেমে যেতাম, মা বকা ঝকা করলেও বাবা আমাকে দেখিয়ে দিতেন ঐ মাছটা ধরো, ওটা নিয়ে আসো। এই চাদের আলোতে একজনের জন্যে বসে থাকতাম, মশার কামর খেতাম। আজ মশা নেই সেও নেই। জঙ্গল পরিস্কার। নিজেকে আরাল করবার মতো জায়গা নেই। সিগারেট ধরালাম। সেই একজন আমার সামনে আসতেই সুলেখার কথা মনে পরে গেলো। তার সুন্দর মুখ খানি, প্রভু তাকে খুব সুন্দর করে বানিয়েছেন। তার মায়াবি আকর্ষণ আমার মনের বড় অংশ দখল করে বসে আছে, কাওকে সেখানে ভিড়তে দিতে চাচ্ছেনা। সুলেখা আমাকে কি তার মনের ঢাল বানিয়েছে? হুম, তাকে চিনা যায়না। এই বুঝা যায় সে আমাকে ভালোবাসে। আবার নিজেকে শক্ত করে ফেলে। একবার মনে হয় তাকে মনের কথাটি বলা দরকার। কিন্তু সাহস হয়না। এ কিভাবে সম্ভব।
আচমকা পিঠের পিছনের একটা আলতো স্পর্শে চমকে উঠলাম। অনেকটা শরীর কেপে ভয় পেয়ে গেলাম। সাহস নিয়ে পিছনে ফিরে তাকালাম।
• এ কি তুমি?
• কেমন আছো? এতো রাতে একা বসে যে?
• দিনে ঘুমিয়েছিলাম সারাদিন, মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম, তুমি? এখানে চলে এলা যে? যদি কেও এসে পড়ে,
• আসলে আসুক, এখোনো কি তুমি সেই আগের ভয় নিয়ে আছো?
• নাহ, তোমার জামাই দেখলে খারাপ হবে, তাছাড়া………।
• তাছাড়া কি? বিয়ে করে ফেলছি, আমি বিবাহিত, আমার উপর এখোনো রেগে আছো? আমি জানি তুমি রেগে আছো, আমিও তো চাইনি তোমাকে আমার মুখ দেখাতে। তাই এতদিনে আমি আসিনি
• এখোন মুখ দেখাতে পারবে, তাই এসেছো? আমার তোমার উপর কোন রাগ নেই, আর রাগ কেনই বা হবে? তুমি তো কোন অপরাধ করোনি, আমার কপালে ছিলোনা। যাই হোক সে অনেক আগের কথা। আখি, তুমি ভালো আছোতো??
• হ্যা আমি ভালো, আর আমি এখন মুখ দেখাতে পারবো তাই এসেছি কথাটা ঠিক, আমার সাথে আমার জামাই এর ছাড়া ছাড়ি হয়ে গেছে। এতে আমার মনে কোন দুঃখ নেই, সে আমাকে সন্দেহ করত। তার সাথে আমার মিলতো না। প্রচন্ড রাগি একজন মানুষ, অবশ্য এর জন্যে আমি নিজেই দায়ি। আমার কাছে তাকে কখনো আপন মনে হতোনা। আমার চেহারায় সেটা ফুটে উঠতোনা । আচ্ছা ওসব কথায় না হয় বাদ দিলাম। আমি শুনেছি তুমি গতকাল এসেছো। একবার তোমার দরজার ফাকে দিয়ে তাকিয়েছিলাম। তুমি ঘুমাচ্ছিলে। খুব ক্লান্ত ছিলে। একেবারে বাড়ি ছেড়ে দিয়েছো?
• নাহ, তবে ছেড়ে দিবো। আমার ঠিকানা পরিবর্তন করা দরকার। বেচে থাকার তাগিদে ঠিকানা পরিবর্তন। চাচা চাচি আছেন কেমন? তারা কি বলেন? তোমার এটা করা ঠিক হয়নি। যা হবার তা তো হয়ে গেছে। তুমি তাকে ছেড়ে দিলেও কি সেটা ফিরে আসবে? জীবনটাকে খাপ খাইয়ে নেয়ার দরকার ছিলো।
• বাবা মা কিছু বলেনি। আমি তাদের সাথেও কথা বলিনা। সারাদিন বাসার ভিতর ঘাপটি মেরে থাকি। জীবন যদি না চলতে চায় তাহলে তাকে জোর করা যায়না। জোর করলেও সেটা আরো যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠে। তুমি এখোনো বিয়ে করোনি যে? বিড়ির অভ্যাস কবে থেকে হলো?
• হুম
কত সময় চুপি চুপি আখির সাথে পুকুর পাড়ে বসে কাটিয়েছি। আজ চাদের আলোয় তার ভয় নেই। আমার পাশে বসে কথা বলে যাচ্ছে। গ্রামের লোকে দেখলে কাল-ই এর বিচার ডাকবে। সেই বিচার এর ভয় তার নেই। আমারো সেই বিচারের ভয় নেই কেন জানি। আখি আগে থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বড় হয়ে গেছে। চেহারায় পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সেই আগের মতই সাস্থ। তাদের সন্তান হয়নি। তবে তার জামাইকে ছেরে দেয়া উচিত হয়নি। আজকে আমার মন এতে সায় দিচ্ছেনা। জামাই ছাড়া কিভাবে থাকবে বাকিটা জীবন? একটা মেয়ের পাহারাদার, তার নিরাপত্তা সব কিছুই একজন পুরুষের হাতে। তাছাড়া এখন তাকে বিয়ে করবে কে? করলেও বয়স্ক লোক ছাড়া আর কেও করবেনা। সেটা আখি নিশ্চই চাবেনা। সে তার আগের জামাইকে আপন করে নিতে পারেনি। নতুন কাওকে নিবে বলে মনে হয়না। সারাটা জীবন কি তাহলে সে এভাবেই কাটিয়ে দিবে?
• আখি, বিয়ে করবেনা আবার?
• হি হি হি, করবো।
• করবে যেহেতু তো জামাই ছাড়লে কেন?
• এমনি, জামাই পছন্দ না, তুমি বিয়ে করছনা যে? ঢাকায় না কোথায় গিয়ে যেন উঠেছো, সেখানে কাওকে পছন্দ হয়নি?
• হুম, না। আচ্ছা তুমি চলে যাও, কেও এসে পড়লে বিপদ হবে। রাত হয়ে গেছে অনেক। আমি আগামিকাল সকালের দিকে চলে যাবো, গ্রামের কথা মনে পড়তেছিল অনেক তাই চিন্তা করেছিলাম কয়েকদিন থেকে যাই, এখন ভালো লাগছেনা
আমাকে ভাগাতে চাচ্ছো? গতকাল বাড়িতে এসেছো একবারো তো আমাকে জিগ্যেস করতে গেলানা? আমি জানি আমাকে তুমি ক্ষমা করনি। আর কলঙ্কের ভয় দেখাচ্ছো? আমার কি কলঙ্ক পড়েনি? মানুষের চোখে নাইবা ধরা পড়লো। কলঙ্ক মাখা সেদিনের দিনগুলি আজ মনে আসেনা তেমন তাই না। আসলে আমি জোর করিনি কখোনো কাওকে, তুমি আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলে, আমি সেদিন মনকে জোর করতে পারিনি, অনেক চেয়েছিলাম। আমি জানি তুমি এতে অনেক কষ্ট পেয়েছো, আমি বিয়ের তিনদিন পরে যখন বাড়িতে এলাম তোমাকে পেলাম না।, চাচির মুখে শুনলাম তুমি সেই যে আমার বিয়ের দিন বাড়ি ছেরে চলে গিয়েছো আর আসোনি। চাচি অনেক কান্না কাটি করলো। আমি সেদিন নিওত করেছিলাম এ বাড়িতে আর আসবোনা। আমি মেয়ে মানুষ লড়াই করার মত শক্তি হয়তো আমার নেই, কিন্তু জেদ করার শক্তি তো আছে? এই চাপা জেদ এর কারনে আমার জামাই আমাকে অনেক মানসিক চাপ দিত, নিরযাতন করতো, আমি তাকে তোমার কথাও বলেছি। অবশেষে সে আমাকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, আমি তাকে দিইনি। তালাক নিয়ে তার উপরে আমার কোন রাগ নেই, আমি জানি তার কোন দোষ নেই। কোন পুরুষ চাবেনা তার স্ত্রি অন্যকে কল্পনা করে সারাদিন বসে থাকবে।
– আখি সেদিনের কথা বাদ দেও, আমি তো বলেছি তুমার কোন দোষ ছিলনা। চল ঘরের দিকে যাই।
আখি আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে, আমি বললাম যাবেনা? দাঁড়িয়ে আছো যে? আখি বলল আজ আমার একজনের প্রতি কোন অধিকার নেই, সে একজন আমার জন্যে রাতভর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতো। আজ ইচ্ছে হচ্ছে সারা রাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে। তার অনুভুতি বুঝতে। জানি এ আমার উচিত না। তারপরও বড় ইচ্ছে হয় সেদিনে ফিরে চলে যেতে। আমি বললাম হুম, জীবন যে পথে চলে গেছে, সেখানে সুখের স্বর্গ খুজে নেও, অজানা পথে আর হেটোনা, ও পথ বড় নির্মম । আমি আগামিকাল ভোরেই চলে যাবো। দেখা হবে কিনা জানিনা। তুমি জিজ্ঞ্যেস করেছিলে আমার কাওকে পছন্দ হয়েছে কিনা। হ্যা আমার একজনকে পছন্দ হয়েছে, তাকে ভালো লাগার কথা জানানো হয়নি, আমার ধারনা সেও আমাকে চায়। আমি তোমাকে ভালবাসতাম এটা সত্য, সেই নারী আমার জীবনে আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অনিচ্ছা সত্যেও তুমি আমার মনের অন্তরালে বাসা বেধে রেখেছিলে। অনেক যন্ত্রনা হত। তুমি ভালো থেকো এটা আমার সবসময়ের কামনা। আমার কেন জানি ভালো লাগছেনা। আমি চলি। আমার কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিও।
আখিকে পুকুরে রেখেই জাহিদ ঘরের দিকে চলে গেলো। আখির সাথে কথা বলতে তার কষ্ট হচ্ছিল। আখি নিজে ত সুখি হতে পারলোনা। মাঝখানে দুটি জীবনের চাওয়া চাওয়াতেই থেকে গেলো
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!