24-06-2020, 08:44 AM
## ১৬
অবশেষে ট্রেন আসলো, ভৈরবে রেলস্টেশনে আটকা পরেছিল। তাই দেরি হইছে। অনেক ভিড়ের মধ্যে ট্রেনে চরলাম। বহুদিন পর আপন ঠিকানায় যাচ্ছি। নিজের সিট পাওয়াতে ভালো লাগছে, জানালার কাছে একটু পর ট্রেন তার লম্বা হুইসাল মেরে চলা শুরু করল আমার জন্মস্তান এর উদ্ধ্যেশে। আমার চিরচেনা সেই গ্রাম, মাঠ, জঙ্গলে ঘেরা ভুমি। কত পরিচিত মুখ, নিজের কাছে অনেক ভালো লাগছে। আমি এখন চাকরি করি। পকেটে টাকা নিয়ে হাসি মুখে বাড়ি যাচ্ছি। মুরুব্বিদের বাসায় যেয়ে নিজ হাতে মিষ্টি দিয়ে আসবো। চাচা চাদিকে দিয়ে আসবো। কে জানে আখি এখোনো আছে কিনা। ইদানিং একটা সমস্যায় ভুগতেছি। আখির কথা মনে করতে গেলে সুলেখা এসে হাজির হয়। নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনা। নিজের মন নিজের কাছে খুব শক্তিশালী, তার সাথে লড়াই করা চলেনা। লড়াই করতে গেলে হার মেনে ফিরতে হয়। সুলেখা এই মুহূর্তে আমার মনের একটা বিশাল অংশ জুরে আমার মনের ঢাল হিসেবে লড়াই করে যাচ্ছে। তাকে যত দূরে সরাতে চাই সে তত কাছে আসতে চায়। আখি এতদিন আমার মনের পুরো অংশ জুরে ছিল। কখোনো কাওকে ভিরতে দেয়নি। আমি আখিকে সমর্থন করতাম। এখন তাকে সমর্থন করতে গেলেও পিছু হাটি। সুলেখা বাধা দেয়। মন কি তাহলে সুলেখাকে চায়?, তাকে কি ভালোবেসে ফেলেছে? অনেকদিন ধরে তাকে দেখছি, খুব কাছে থেকে তার সাথে কথা বলেছি। তার মায়া মাখা কথা আমাকে মুগ্ধ করে, সুলেখা কি আমাকে ভালোবাসে? নাহ এ কিভাবে হবে। হরতন দা বা কি মনে করবেন।
ট্রেনে আপন মনে ছুটে চলেছে। যেন কোথাও থামবেনা। দুপাশ দিয়ে গাছ গাছালি আবার ঘন জঙ্গলে ঘেরা। দিনের বেলায় অন্ধকার। আবার মাঝে মাঝে আলো উকি দিচ্ছে। বহুদিন নোংরা পরিবেশ আমাকে অসুস্থ করে দিয়েছে। রাস্তা ঘাট নর্দমায় নোংরা জিনিসে ভর্তি। গোসল করতে পারিনি অনেকদিন শান্তি মত। গ্রামে যেয়ে পুকুরে ডুবিয়ে গোসল করবো। বহুদিন ডুবিয়ে গোসল করা হয়না। সেই ছোটবেলায় মার হাতে কত বকা খেয়েছি। সারাদিন পুকুরের মধ্যে পড়ে থাকতাম। মা পুকুর পারে লাঠি নিয়ে দাড়িয়ে থাকতো। বেলা গরিয়ে গেছে তাও পুকুর থেকে উঠার নাম নেই। লুঙ্গি দিয়ে মাছ ধরেছি। মার সামনে যেয়ে মাছ ছেরে দিয়ে দৌড় দিয়েছি, বাসায় ফিরলে মা কিছু বলতেন না। আদোর করতেন।* এখোনো সেই পুকুর আছে, মা চলে গেছেন। আমি এখন সারাদিন ডুবিয়ে গোসল করলেও মা কিছু বলবে না, লাঠি নিয়ে তাড়া দিবেনা। পুরোন সেই সুখ স্মৃতি করতে করতে চোখে ঘুম এসে যাচ্ছে। ট্রেনের ঝাকুনি আর শব্দ প্রথমে খারাপ লাগলেও একসময় দোলনার মত কাজ করে। তখোন ঝিমুনি ধরে, ঘুম চলে আসে। বাচ্চা কাচ্চার ও মহিলাদের শব্দ এখন নেই। সবাই ঝিমাইতেছে। আমারো প্রচন্ড ঝিমানি ধরেছে। আটকে রাখতে পারছিনা চোখ। যেকোনো মুহূর্তে চোখ বুজে যাবে। নাহ ঘুমিয়ে নেই। এখোনো অনেক পথ বাকি। আজকে আমার সাথে কিছু নেই। চুরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বেশ রাত্রি করেই স্টেশনে পৌছালাম। ষ্টেশনে কিছুটা ভীড় হলে দূর চোখে নির্জন অন্ধকার। বেশ কন কনে বাতাস বইছে। বাড়ির দিকে হাটা দিতে গিয়ে একবার মনে হলো পোষ্ট অফিসের দিকে যাই। বাড়িতে তো কেও নেই। যেয়ে কি করবো। যদি লিটনকে পাওয়া যায়। অফিসে যেয়ে লিটনকে পাওয়া গেলো। গলায় মাফলার লাগিয়ে পা নাড়িয়ে খাতা দেখে যাচ্ছে। হিসেবের খাতা। পোস্ট অফিসে কে কার একাউন্টে কত টাকা জমা রাখলো। তার সাথে ক্যলকুলেটর দেখে বুঝা গেলো। তার কাছে যেতেই লাফিয়ে উঠলো – আরে জাহিদ, একেবারে ভুতের মত এসে হাজির হলি যে? ফোন তো দিলিনা আসার আগে। অনেকদিন পর তোকে দেখলাম। – এইতো লিটন ভাই আমি আছি ভালো। বাড়ির দিকে হাটা দিছিলাম কিন্তু চিন্তা করলাম যদি আপনাকে পাওয়া যায়। একেবারে মাফলার পেচিয়ে রাতের ডিউটি দিচ্ছেন যে। – আর বলোনা পোষ্ট অফিসের চাকরির কোন টাইম নেই। তা তো্র কি অবস্থা ? বোস, তা জয়েন করেছিস? জয়েন লেটার দেখে আমি তো অবাক হয়েছিলাম একেবারে ঢাকায় কাম সেরে দিলি। ভালো দান দিয়েছিস বটে। – হুম, জয়েন করেছি আর এক মাস ও হয়ে গেলো, প্রথম প্রথম তো হাপিয়ে উঠেছি তাই চিন্তা দুদিন বাড়িতে থেকে যাই, মা-বাবার কবরটা জিয়ারত করা দরকার। – কিছু খেয়েছিস? দাড়া একটু বোস, রফিকরে পাঠাই, পুরি পেয়াজু নিয়া আসুক। বাজার এখোনো খোলা আছে।
লিটন আমার থেকে বয়সের বেশি বড় না। তবে একসাথেই পড়াশুনা করেছি। আমার প্রতিবেশি। সে এখোনো বিয়ে করেনি। মেয়ে পাচ্ছেনা তার পছন্দ মত। যেগুলো পায় ওগুলার পরিবারের সাথে লেনদেন এর বিষয়ে একমত না হতে পেরে শেষ মেস বিয়ে আর ঠিক হয়না। ওর চরিত্র সব দিক দিয়ে ভালো হলেও, টাকা পয়সার দিকে লোভ বেশি। বিশাল অঙ্কের যৌতুক দাবি করে বসে। শিক্ষিত ছেলে যদি যৌতুক চায় তাহলে সেটা লজ্জাজনক, তার উপর ছেলের চাকরি আছে, এমন তো নয় যে বেকার। বিয়ে তাদের কাছে মুখ্য বিষয় না, কন্যা তাদের কাছে কোন ব্যপার না, লেংরা, লুলা আন্ধা হলেও চলবে তবে তাকা চাই। এই প্রত্ত্যন্ত অন্ধলে যৌতুক একেবারে পেয়ে বসেছে।
লিটনকে অনেকটা মলিন মুখেই বললাম
• আখি কি এখোনো আছে?
• হুম আছে, আজকে সকালেও দেখেছি।
• সে কি তার জামাই নিয়ে আয়ছে?
• তার জামাই নিয়া আসলে তো দেখতাম, জামাই নিয়া আসেনাই। কোন নতুন পোলা তো দেখিনাই। আর আমিও বুঝলাম না সেই যে বিয়া করে গেলো একবারো জামাই নিয়ে আসলো না। কেমন মাইয়া, আর তারে জামাই কিছু কয়না?
• হুম, এতো কিছু তো জানিনা। হইতে পারে জামাই হুজুর মানুষ। শ্বশুর বাড়িতে আসতে লজ্জা পায়। আর শুনেছি বহুদুরে বিয়া করাইছে, এই জন্যে আসেনা মনে হয়। আপনে আর কতোদিন? যৌতুক এর লোভটা এবার ছারেন, পরে টাকা দিয়াও মাইয়া পাইবেন না। চাকরি করেন যৌতুক এর কি দরকার?
• আহা, যৌতুক তো বিষয় না। আর আমার তো চাকরি ছাড়া আর কোন সম্পত্তি নাই। ধরেন কোন কারনে আমি লুলা হইয়া গেলাম, প্যরালাইসিস হইয়া গেলো, তখোন বঊ পোলা দেখবো কে? মাইয়ার সম্পত্তি তো খাইবো ভাইয়েরা। শরিয়তে আছে সম্পত্তিরে তিনভাগ করলে এক ভাগ পাবো মাইয়া আর দুই ভাগ পোলা। কিন্তু দেখ কয়টা মেয়েকে তার ভাইয়েরা সম্পত্তি দিচ্ছে? আমার দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তো মেয়েরা ভাইয়েরা আমার পরিবারকে দেখবেনা। যৌতুক দরকার আছে, এতাকে যৌতুক না বলে বলো অন্য এক মাধ্যম মেয়ের পাওনা আদার এর। আর পোস্ট অফিসে চাকরি কইরা কিছু হয় নাকি? বিয়া সাদি জটিল বিষয়। টাকা পয়সার মামলা। তারপরও মাইয়া তো জুইত মতোন পাইনা।
• লিটন ভাই বাড়িত যাবেন কখোন? গেলে এক সাথেই যাই
• এইতো যামু আধা ঘন্টা পর। এক সাথেই যামুনে। তোর বাড়িত তো সারাদিন দরবার লাইগা থাকে। তোর চাচারা যা শুরু করছে। ইদানিং তোর চাচার গলা কম শুনা গেলেও তোর চাচাতো ভাইরা তো খুনা খুনি করে পারলে। গ্রামের মাইনসের সাথে জায়গা জমি নিয়া সারাদিন খেচ খেচ লাইগা থাকে। কাসেম চাচায় জমি ঠিক রাইখা আইল ছাইরা দিসে, সেই আইল কাইটা চিকোন কইরা দিছে। মানুষ কেন পিপড়াও হাইটা যাইতে পারবনা। এতো চিকোন কইরা দিছে। এই নিয়া ব্যপক লাগা লাগি। কাসেম চাচার পোলা উকিল না হইলে এতদিনে তিনি খুন হইয়া যাইতো। সাহস আছে তোর ভাইগো। উকিলের বাপরেও পাড়লে ছারেনা। চল বাড়ির দিকে হাটা দেই।
খুব সকালে মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙল, বহুদিন পর সকালে মোরগের ডাক শুনতে পাইলাম। বিছানা ছারতে মন চাইছেনা। কুয়াশায় ঘর ছেয়ে গেছে। আশে পাশে কিছু দেখা যাচ্ছেনা। সকাল ৭টা বাজে, গ্রামাঞ্চলে এতো সকালে ঘুম থেকে উঠলেও কেও ঘরের বাহির হয়না। মহিলারা রান্নাঘরে থাকেন। ছেলেরা লুঙ্গি হাটুর উপর উচিয়ে পিরার উপর বসে দাত মাজেন, নাহয় আকাশের দিকে তাকায়া আপন মনে ভাবতে থাকেন। তার পাশে বদনা থাকে। ওই বদনা দিয়ে তারা মুখ কুলি ও বাথরুমের কার্যাবলী সারেন। আমার আকাশের দিকে ভাবার মতো কিছু নেই। আমার ঘরে রান্না করার মতো কোন মহিলা নেই। খাওয়া দাওয়া বাজারে করতে হবে। বিবাহ না করা পর্যন্ত আমার ঘরে চুলা জল্বেনা। ঢাকায় এখোনো পরগাছা হয়ে আছি। নারায়নগঞ্জে নাহয় কিছু মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছে, ঢাকায় আমাকে নিবার মতো কেও নাই। ঢাকার মানুষের সাথে আমি পরিচিত না। অফিসের কেও আজ পর্যন্ত দাওয়াত করলো না। সৌমিন দার বাসার দারোয়ানের বউ রাইন্ধা দেয়। সৌমিন দার বাড়িতে তার বোন ও বোন জামাই থাকেন। আমি নিচের তলার একটা কোনের ঘরে উঠেছি। দারোয়ানের ঘরের পাশেই। সৌমিন দার বোন ও বোন জামাই দুজনেই শীক্ষকতা করেন, তারা অনেক ব্যাস্ত। দেখা খুব কম হয়। কথা তেমন বলেনা। ঘরকুনো টাইপের দুজনেই। ঢাকায় যারা থাকে তাদের হাতে সময় কম। তারা কাজে ব্যস্ত থাকে। আপন করে নিবার মতো তাদের হাতে সময় কম। টাকা টাকা দুনিয়ার সব কিছু হচ্ছে টাকা। নাহ আর বিছানায় থাকা যাবেনা। বাজারের দিকে যাওয়া দরকার।
অবশেষে ট্রেন আসলো, ভৈরবে রেলস্টেশনে আটকা পরেছিল। তাই দেরি হইছে। অনেক ভিড়ের মধ্যে ট্রেনে চরলাম। বহুদিন পর আপন ঠিকানায় যাচ্ছি। নিজের সিট পাওয়াতে ভালো লাগছে, জানালার কাছে একটু পর ট্রেন তার লম্বা হুইসাল মেরে চলা শুরু করল আমার জন্মস্তান এর উদ্ধ্যেশে। আমার চিরচেনা সেই গ্রাম, মাঠ, জঙ্গলে ঘেরা ভুমি। কত পরিচিত মুখ, নিজের কাছে অনেক ভালো লাগছে। আমি এখন চাকরি করি। পকেটে টাকা নিয়ে হাসি মুখে বাড়ি যাচ্ছি। মুরুব্বিদের বাসায় যেয়ে নিজ হাতে মিষ্টি দিয়ে আসবো। চাচা চাদিকে দিয়ে আসবো। কে জানে আখি এখোনো আছে কিনা। ইদানিং একটা সমস্যায় ভুগতেছি। আখির কথা মনে করতে গেলে সুলেখা এসে হাজির হয়। নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনা। নিজের মন নিজের কাছে খুব শক্তিশালী, তার সাথে লড়াই করা চলেনা। লড়াই করতে গেলে হার মেনে ফিরতে হয়। সুলেখা এই মুহূর্তে আমার মনের একটা বিশাল অংশ জুরে আমার মনের ঢাল হিসেবে লড়াই করে যাচ্ছে। তাকে যত দূরে সরাতে চাই সে তত কাছে আসতে চায়। আখি এতদিন আমার মনের পুরো অংশ জুরে ছিল। কখোনো কাওকে ভিরতে দেয়নি। আমি আখিকে সমর্থন করতাম। এখন তাকে সমর্থন করতে গেলেও পিছু হাটি। সুলেখা বাধা দেয়। মন কি তাহলে সুলেখাকে চায়?, তাকে কি ভালোবেসে ফেলেছে? অনেকদিন ধরে তাকে দেখছি, খুব কাছে থেকে তার সাথে কথা বলেছি। তার মায়া মাখা কথা আমাকে মুগ্ধ করে, সুলেখা কি আমাকে ভালোবাসে? নাহ এ কিভাবে হবে। হরতন দা বা কি মনে করবেন।
ট্রেনে আপন মনে ছুটে চলেছে। যেন কোথাও থামবেনা। দুপাশ দিয়ে গাছ গাছালি আবার ঘন জঙ্গলে ঘেরা। দিনের বেলায় অন্ধকার। আবার মাঝে মাঝে আলো উকি দিচ্ছে। বহুদিন নোংরা পরিবেশ আমাকে অসুস্থ করে দিয়েছে। রাস্তা ঘাট নর্দমায় নোংরা জিনিসে ভর্তি। গোসল করতে পারিনি অনেকদিন শান্তি মত। গ্রামে যেয়ে পুকুরে ডুবিয়ে গোসল করবো। বহুদিন ডুবিয়ে গোসল করা হয়না। সেই ছোটবেলায় মার হাতে কত বকা খেয়েছি। সারাদিন পুকুরের মধ্যে পড়ে থাকতাম। মা পুকুর পারে লাঠি নিয়ে দাড়িয়ে থাকতো। বেলা গরিয়ে গেছে তাও পুকুর থেকে উঠার নাম নেই। লুঙ্গি দিয়ে মাছ ধরেছি। মার সামনে যেয়ে মাছ ছেরে দিয়ে দৌড় দিয়েছি, বাসায় ফিরলে মা কিছু বলতেন না। আদোর করতেন।* এখোনো সেই পুকুর আছে, মা চলে গেছেন। আমি এখন সারাদিন ডুবিয়ে গোসল করলেও মা কিছু বলবে না, লাঠি নিয়ে তাড়া দিবেনা। পুরোন সেই সুখ স্মৃতি করতে করতে চোখে ঘুম এসে যাচ্ছে। ট্রেনের ঝাকুনি আর শব্দ প্রথমে খারাপ লাগলেও একসময় দোলনার মত কাজ করে। তখোন ঝিমুনি ধরে, ঘুম চলে আসে। বাচ্চা কাচ্চার ও মহিলাদের শব্দ এখন নেই। সবাই ঝিমাইতেছে। আমারো প্রচন্ড ঝিমানি ধরেছে। আটকে রাখতে পারছিনা চোখ। যেকোনো মুহূর্তে চোখ বুজে যাবে। নাহ ঘুমিয়ে নেই। এখোনো অনেক পথ বাকি। আজকে আমার সাথে কিছু নেই। চুরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বেশ রাত্রি করেই স্টেশনে পৌছালাম। ষ্টেশনে কিছুটা ভীড় হলে দূর চোখে নির্জন অন্ধকার। বেশ কন কনে বাতাস বইছে। বাড়ির দিকে হাটা দিতে গিয়ে একবার মনে হলো পোষ্ট অফিসের দিকে যাই। বাড়িতে তো কেও নেই। যেয়ে কি করবো। যদি লিটনকে পাওয়া যায়। অফিসে যেয়ে লিটনকে পাওয়া গেলো। গলায় মাফলার লাগিয়ে পা নাড়িয়ে খাতা দেখে যাচ্ছে। হিসেবের খাতা। পোস্ট অফিসে কে কার একাউন্টে কত টাকা জমা রাখলো। তার সাথে ক্যলকুলেটর দেখে বুঝা গেলো। তার কাছে যেতেই লাফিয়ে উঠলো – আরে জাহিদ, একেবারে ভুতের মত এসে হাজির হলি যে? ফোন তো দিলিনা আসার আগে। অনেকদিন পর তোকে দেখলাম। – এইতো লিটন ভাই আমি আছি ভালো। বাড়ির দিকে হাটা দিছিলাম কিন্তু চিন্তা করলাম যদি আপনাকে পাওয়া যায়। একেবারে মাফলার পেচিয়ে রাতের ডিউটি দিচ্ছেন যে। – আর বলোনা পোষ্ট অফিসের চাকরির কোন টাইম নেই। তা তো্র কি অবস্থা ? বোস, তা জয়েন করেছিস? জয়েন লেটার দেখে আমি তো অবাক হয়েছিলাম একেবারে ঢাকায় কাম সেরে দিলি। ভালো দান দিয়েছিস বটে। – হুম, জয়েন করেছি আর এক মাস ও হয়ে গেলো, প্রথম প্রথম তো হাপিয়ে উঠেছি তাই চিন্তা দুদিন বাড়িতে থেকে যাই, মা-বাবার কবরটা জিয়ারত করা দরকার। – কিছু খেয়েছিস? দাড়া একটু বোস, রফিকরে পাঠাই, পুরি পেয়াজু নিয়া আসুক। বাজার এখোনো খোলা আছে।
লিটন আমার থেকে বয়সের বেশি বড় না। তবে একসাথেই পড়াশুনা করেছি। আমার প্রতিবেশি। সে এখোনো বিয়ে করেনি। মেয়ে পাচ্ছেনা তার পছন্দ মত। যেগুলো পায় ওগুলার পরিবারের সাথে লেনদেন এর বিষয়ে একমত না হতে পেরে শেষ মেস বিয়ে আর ঠিক হয়না। ওর চরিত্র সব দিক দিয়ে ভালো হলেও, টাকা পয়সার দিকে লোভ বেশি। বিশাল অঙ্কের যৌতুক দাবি করে বসে। শিক্ষিত ছেলে যদি যৌতুক চায় তাহলে সেটা লজ্জাজনক, তার উপর ছেলের চাকরি আছে, এমন তো নয় যে বেকার। বিয়ে তাদের কাছে মুখ্য বিষয় না, কন্যা তাদের কাছে কোন ব্যপার না, লেংরা, লুলা আন্ধা হলেও চলবে তবে তাকা চাই। এই প্রত্ত্যন্ত অন্ধলে যৌতুক একেবারে পেয়ে বসেছে।
লিটনকে অনেকটা মলিন মুখেই বললাম
• আখি কি এখোনো আছে?
• হুম আছে, আজকে সকালেও দেখেছি।
• সে কি তার জামাই নিয়ে আয়ছে?
• তার জামাই নিয়া আসলে তো দেখতাম, জামাই নিয়া আসেনাই। কোন নতুন পোলা তো দেখিনাই। আর আমিও বুঝলাম না সেই যে বিয়া করে গেলো একবারো জামাই নিয়ে আসলো না। কেমন মাইয়া, আর তারে জামাই কিছু কয়না?
• হুম, এতো কিছু তো জানিনা। হইতে পারে জামাই হুজুর মানুষ। শ্বশুর বাড়িতে আসতে লজ্জা পায়। আর শুনেছি বহুদুরে বিয়া করাইছে, এই জন্যে আসেনা মনে হয়। আপনে আর কতোদিন? যৌতুক এর লোভটা এবার ছারেন, পরে টাকা দিয়াও মাইয়া পাইবেন না। চাকরি করেন যৌতুক এর কি দরকার?
• আহা, যৌতুক তো বিষয় না। আর আমার তো চাকরি ছাড়া আর কোন সম্পত্তি নাই। ধরেন কোন কারনে আমি লুলা হইয়া গেলাম, প্যরালাইসিস হইয়া গেলো, তখোন বঊ পোলা দেখবো কে? মাইয়ার সম্পত্তি তো খাইবো ভাইয়েরা। শরিয়তে আছে সম্পত্তিরে তিনভাগ করলে এক ভাগ পাবো মাইয়া আর দুই ভাগ পোলা। কিন্তু দেখ কয়টা মেয়েকে তার ভাইয়েরা সম্পত্তি দিচ্ছে? আমার দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তো মেয়েরা ভাইয়েরা আমার পরিবারকে দেখবেনা। যৌতুক দরকার আছে, এতাকে যৌতুক না বলে বলো অন্য এক মাধ্যম মেয়ের পাওনা আদার এর। আর পোস্ট অফিসে চাকরি কইরা কিছু হয় নাকি? বিয়া সাদি জটিল বিষয়। টাকা পয়সার মামলা। তারপরও মাইয়া তো জুইত মতোন পাইনা।
• লিটন ভাই বাড়িত যাবেন কখোন? গেলে এক সাথেই যাই
• এইতো যামু আধা ঘন্টা পর। এক সাথেই যামুনে। তোর বাড়িত তো সারাদিন দরবার লাইগা থাকে। তোর চাচারা যা শুরু করছে। ইদানিং তোর চাচার গলা কম শুনা গেলেও তোর চাচাতো ভাইরা তো খুনা খুনি করে পারলে। গ্রামের মাইনসের সাথে জায়গা জমি নিয়া সারাদিন খেচ খেচ লাইগা থাকে। কাসেম চাচায় জমি ঠিক রাইখা আইল ছাইরা দিসে, সেই আইল কাইটা চিকোন কইরা দিছে। মানুষ কেন পিপড়াও হাইটা যাইতে পারবনা। এতো চিকোন কইরা দিছে। এই নিয়া ব্যপক লাগা লাগি। কাসেম চাচার পোলা উকিল না হইলে এতদিনে তিনি খুন হইয়া যাইতো। সাহস আছে তোর ভাইগো। উকিলের বাপরেও পাড়লে ছারেনা। চল বাড়ির দিকে হাটা দেই।
খুব সকালে মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙল, বহুদিন পর সকালে মোরগের ডাক শুনতে পাইলাম। বিছানা ছারতে মন চাইছেনা। কুয়াশায় ঘর ছেয়ে গেছে। আশে পাশে কিছু দেখা যাচ্ছেনা। সকাল ৭টা বাজে, গ্রামাঞ্চলে এতো সকালে ঘুম থেকে উঠলেও কেও ঘরের বাহির হয়না। মহিলারা রান্নাঘরে থাকেন। ছেলেরা লুঙ্গি হাটুর উপর উচিয়ে পিরার উপর বসে দাত মাজেন, নাহয় আকাশের দিকে তাকায়া আপন মনে ভাবতে থাকেন। তার পাশে বদনা থাকে। ওই বদনা দিয়ে তারা মুখ কুলি ও বাথরুমের কার্যাবলী সারেন। আমার আকাশের দিকে ভাবার মতো কিছু নেই। আমার ঘরে রান্না করার মতো কোন মহিলা নেই। খাওয়া দাওয়া বাজারে করতে হবে। বিবাহ না করা পর্যন্ত আমার ঘরে চুলা জল্বেনা। ঢাকায় এখোনো পরগাছা হয়ে আছি। নারায়নগঞ্জে নাহয় কিছু মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছে, ঢাকায় আমাকে নিবার মতো কেও নাই। ঢাকার মানুষের সাথে আমি পরিচিত না। অফিসের কেও আজ পর্যন্ত দাওয়াত করলো না। সৌমিন দার বাসার দারোয়ানের বউ রাইন্ধা দেয়। সৌমিন দার বাড়িতে তার বোন ও বোন জামাই থাকেন। আমি নিচের তলার একটা কোনের ঘরে উঠেছি। দারোয়ানের ঘরের পাশেই। সৌমিন দার বোন ও বোন জামাই দুজনেই শীক্ষকতা করেন, তারা অনেক ব্যাস্ত। দেখা খুব কম হয়। কথা তেমন বলেনা। ঘরকুনো টাইপের দুজনেই। ঢাকায় যারা থাকে তাদের হাতে সময় কম। তারা কাজে ব্যস্ত থাকে। আপন করে নিবার মতো তাদের হাতে সময় কম। টাকা টাকা দুনিয়ার সব কিছু হচ্ছে টাকা। নাহ আর বিছানায় থাকা যাবেনা। বাজারের দিকে যাওয়া দরকার।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!