23-06-2020, 05:33 PM
## ১৫
জয়েন লেটার পোষ্ট অফিসের কর্মরত লিটন ভাই এর কাছে পৌছে গেছে, সে ডাকযোগে আর্জেন্ট আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ মাসের ১ তারিখ থেকে জয়েন করবো। এটা কি মাস চলে, আজকে তারিখ কত। মাথায় পেচ লেগে যাচ্ছে। অনেক অনুসন্ধানের পর বের করলাম আজ মঙ্গলবার। হালকা হালকা ঠান্ডা বইছে। শীতকাল আসবে তাই মাঝে মধ্যে ঠান্ডা বাতাস উকি দিয়ে যাচ্ছে। কোন এক বর্ষায় চাকরির সন্ধানে বাড়ি ছেরেছিলাম। চাকরীটা আজ পেয়ে গেলাম কোন এক শীত কালে। মা- বাবা থাকলে তাদের কাছে দোয়া নিয়ে আসতাম। দোয়া নেয়ার মত আমার মানুষ নেই তেমন। গ্রামের কিছু মুরুব্বি আছেন তাদের কাছে দোয়া চেতে যেতে হলে মিস্টি নিয়ে যেতে হবে। হাতে টাকা নেই। একেবারেই যাবো বেতন পেয়ে। তাদের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে আসা যায়। টেলিফোনে তাদের সাথে কথা বলতে পারলে দোয়া নেয়া যেত, পরে মিষ্টি দিয়া আসতাম। চাকরি শুরু হয়ে গেলে দোয়া কেমন কাজে দিবে জানিনা। আগে থেকেই চাওয়া উচিত। ভাবিকেও জানাতে হবে যে কনফার্মেশন পেয়েছি। মোবারককে জানাতে চাইলেও পারবো কিনা জানিনা। সে দেঊলিয়া হয়ে গেছে। তার নতুন হুরপরী নিয়ে ব্যস্ত। হুরপরী গর্ভবতি।
অবশেষে সেই কাঙ্খিত দিন এলো, খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ভাবির বাসায় টোকা দিলাম, ভাবি এসে দরজা খুললেন, আমি বললাম ভাবি জানো তো আজ আমি চলে যাবো, ভোরে* রওনা না দিলে পরে আবার অফিসে যেয়ে পৌছাতে পারবোনা। ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন এক দৃষ্টিতে, তার চোখ ছল ছল করছে জলে, আমি বললাম মোবারক এসেছে? – নাহ আসেনাই, আপনি গোসল সেরে নিন আমি রুটি বানায়া দিতেছি। গোসল সেরে তৈরি হয়ে নিলাম। খেতে বসে ভাবিকে বললাম, ভাবি নিজের দিকে খেয়াল নিবে। মোবারক যাই করুক না কেন। সে তো মাসে মাসে টাকা দিচ্ছে। নিজের ছেলেটার দিকে নজর দিও, তার জন্যে চুপ করে থাকতে হলেও থেকো। — ঢাকায় কোথায় উঠবেন ঠিক হয়েছে? – হুম, সৌমিন দার ঢাকায় বাড়ি আছে, উনি কয়েকদিন ওখনে থাকতে বলছেন, বাসা ঠিক না হোওয়া পর্যন্ত উনার বাসায় থাকবো। অফিসের আশে পাশে যদি পাই তাহলে উঠে যাবো। সৌমিন বাবুর বাড়িতে কবুতরের ঘর আছে কিনা কে জানে, থাকলেও উঠবোনা, ভালো বাসায় উঠবো। ভাবি হেসে দিলেন, –এবার নাহয় বিয়েটা করেই ফেলুন, বড় বাসা নিয়ে কি একা একা থাকবেন বলুন? খাওয়া দাওয়া শেষে ভাবিকে বিদায় দিলাম, আপাতত ব্যাগে একটা সেট জামা কাপড় নিয়ে নিয়েছি, অবস্থা বুঝা হলে বাকিগুলা নেয়া যাবে। গত রাতে হরতন দার কাছে বিদায় নিয়েছি, সুলেখাকেও বলে এসেছি যদি পারি সকালে এসে দেখা করে যাবো। আর না পারলে বিদায়, আরেকদিন দেখা হবে। সুলেখা দূর রাস্তা পর্যন্ত চেয়েছিল, আমাকে কয়েকটা উপদেশ দিলেন, এক- শীত বইছে, ঠান্ডা কন কনে বাতাস, বাতাসে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে তাই মাফলার পেচিয়ে নিবেন। মোটা জামা কাপড় নিবেন। দুই—প্রতি সপ্তাহে অন্তত যেনো দুদিন এসে দেখা করে যাই। তার মধ্যে শুক্রবার অবশ্যই পুরো সময়টা তাদের সাথে কাটাতে হবে। গাড়িতে বসে সুলখার কথাগুলো বার বার চিন্তা করতেছিলাম। আসলেই মেয়ে মানুষ বিচিত্র, তারা খেয়ালি। ভাবি আমার খেয়াল নিতেন, সুলেখাও নিতে চায়। ভাবি হয়ত তার দায়িত্য পালন করছেন কিন্তু সুলেখা? তার তো আমার উপর কোন দায়িত্য নেই। তারপরও তার মায়া মাখা উপদেশগুলো আমার কাছে মনে হয় আমার উপর তার অধিকার আছে। আমি তার বাসা থেকে বের হলে দূরদৃষ্টিতে একমনে তাকিয়ে থাকে। তাকে দেখলে মনে হয় সে কিছু বলতে চায়, এখুনি দৌড়ে চলে আসবে। হুমমম, না বলা অধিকার চাপিয়ে বসে আছে।
অফিসে জয়েন করার পর অফিস বেশ ভালোই যাচ্ছে। সবাই আমার থেকে একটু বয়স্ক হলেও তারা আপন করে নিয়েছেন, অফিসে খোস-গল্প করেই অনেক সময় কাটিয়ে দিই। তারা আমার থেকে বয়স্ক হলে কি হবে তাদের কথাবার্তার অধিকাংশ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে তাদের বঊ। কাল রাতে কার বউ কিভাবে তাদের সোহাগ করেছে। কতক্ষন ঠাপিয়েছে এইসব বিষয়। মাঝে মধ্যে তারা একে অন্যের বৌকে হামলা করতেও দ্বিধা করেনা। এ নিয়ে বেশ রসিকতা হয় সবার মাঝে, ভাগ্যিস আমি বিয়ে করিনাই। তাছাড়া তাদের থেকে আমি বয়সে ছোট। আমার বৌকে নিয়ে যদি তারা এসব বলে তাহলে অবশ্যই আমার কাছে ভালো লাগবেনা। রসিকতার মাঝে হয়ত অনেক সময় নিতিবোধ থাকেনা। কিন্তু রসিকতা করে ফেললেন, আমার বৌকে কোন কারনে তাদের সামনে নিয়ে আসলাম, তারা মুখে ঠিকি ভালো ব্যাবহার করছেন, বলবেন ভাবি কেমন আছেন? ভাই তো আপনার খুব প্রশংসা করেন। আপনার রান্না নাকি অনেক ভালো, একদিন যেয়ে খেয়ে আসবো। কিন্তু মনের চোখ দিয়ে আমার বৌ এর স্তন চুষবেন, উচু নিতম্বে তাদের লিঙ্গ দিয়ে ঘসবেন। কিন্তু তাদের বৌকে দেখলে প্রথমে শ্রদ্ধা জিনিসটা আমার মাথায় আসে, যেহেতু তারা বয়সে বড়। আমার বৌ এর ক্ষেত্রে তাদের স্নেহ জিনিসটা আগে আসবে, সেই স্নেহের ফাকে তারা হাতায়া দিবেন কু-নজর দিয়া। — এই যে জাহিদ সাহেব ঘুম দিছেন নাকি?, নিচের দিকে তাকায়া কি ভাবছেন? রাতে কি ঘুম হয়নাই? সরকারি চাকরির এই এক সুবিধা, রাতে ঘুম ভালো না হলেও দিনে আরাম করে চেয়ারে বসে ঘুমানো যায়। আমি নিঃশব্দ হাসি দিয়ে খাতায় চোখ বুলাতে থাকলাম। অনেকদিন হলো বাড়ি যাইনা। তাছাড়া প্রায় এক মাস হয়ে গেছে চাকরি করছি। বেতন পেলে মিষ্টি নিয়ে প্রথমে হরতন দার বাড়ি হয়ে, সৌমিন দা ও ভাবিদের মিষ্টি দিবো, তারপর সেখান থেকেই বাড়ি চলে যাবো। একদিন দুদিন থেকে আসা দরকার। কেমন জানি হাপিয়ে উঠেছি। অফিস জীবন এর অভিজ্ঞতা আমার নেই, মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। দেখি আগামি শুক্রবার চলে যাবো, সকাল সকাল সবার বাসা ঘুরে বাড়ির দিকে রওনা দিবো। তাছাড়া এই সপ্তাহে যেভাবেই হোক আমাকে বাসা খুজে বের করতে হবে। পরগাছা হয়ে থাকতে আর ভালো লাগছেনা। সৌমিন দার এলাকা নাখালপাড়ায় খোজা খুজি করেছিলাম, কয়েকটা পেয়েছি। তার মধ্যে একটা নিয়ে নিব।
বাহাদুরবাদ রেল আজকে অনেক ভিড় লেগে আছে। আসার সময় এক ভিড়ের মধ্যে এসেছি যাওয়ার সময় আরেক ভিড়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাজে সকাল ৮ টা। ট্রেন আসেনি এখোনো। স্টেশন মাষ্টার এর কাছে খোজ নিয়ে জানলাম ট্রেন আসতে আসতে সাড়ে ৮টা কি ৯টা বাজবে। সেই ফযরের সময় বের হয়েছি, তারাহুরো করে সবার কাছে বিদায় নিয়ে আসলাম এখোন বলে ট্রেন আসতে দেরি হবে!! *একটু ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস বইছে। শীতের জামা কাপড় নিয়ে বের হইনি। গ্রামে অনেক শীত পড়তে পারে। ভারতের মেঘালয় থেকে কন কনে বাতাস গৌড়িপুরকে শীতকালে বরফ বানিয়ে দেয়, শীতকাল শুরু হউয়ার আগেই। ওয়েটিং রুমে বসে রইলাম। ওয়েটিং রুমেও শান্তি নেই। বাচ্চা কাচ্চারা একে অন্যের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে। আর ঝাপ দেয়ার সাথে সাথে এত জোরে চিল্লান দিচ্ছে যে মনে হচ্ছে কান ঘেছে ফাইটার প্লেন যাচ্ছে। সকালে সবার সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু আজো মোবারককে বাসায় পাইনি। মোবারকের কথা মনে পড়লে খুব জিদ হয়। প্রতি শুক্রবার নাকি সে বাসায় আসেনা। এটা একটা নিওম হয়ে গেছে।* শুক্রবারে সেই মেয়ের কাছে যায় মনে হয়। মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিস ভালো কথা। প্রেম করেছিস ভালো কথা, বিয়ে করতে গেলি কেন হাদারাম? চুলকানি উঠেছে যখন টেস্ট নিয়ে নিতি। জগতে চুপি চুপি কতরকম ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। প্রকাশ না হলে সবই ভালো। গর্দভটা একেবারে বিয়ে করে পেট বাধিয়ে দিয়েছে । ভাবির কথা মনে পড়লেও খারাপ লাগে। বেচারা পাগোল হয়ে গেছে। কথা বার্তার কোন ঠিক নেই। মাঝে মধ্যে বাসায় পাওয়া যায়না। অফিস থেকে বের হয়ে কয়েকবার বাসায় গিয়ে তাকে পাইনি, সন্ধ্যে রাতে সেজেগুজে কোথা থেকে যেন ফিরে।
এক লোক জাহিদের দিকে বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। জাহিদ হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে আটটা বাজে। লোকটি কাছে এগিয়ে আসতেছে
• এই যে ভাই, আপনি উঠুন, এখানে একজন মহিলা বসবে।
• মহিলা? কই আমি তো কোন মহিলা দেখছিনা
• আছে উনি টয়লেটে গেছেন।
• টয়লেটে গেছে মানে? আপনি দেখছেন না এখানে পুরুষরা বসে আছে? আর সকালে এসে ওয়েটিং রুমে জায়গা রাখতে পারলেন না?
• ভাই আপনি উঠবেন? তা না হলে আমি স্টেশন মাষ্টারকে বলে ঠিকি জায়গা করে নিব। আপনি পুরুষ মানুষ। বাহিরে মেঝেতে চেগিয়ে বসে যাবেন। সমস্যা নেই
• ভাই আপনি এখন যান। আমি জায়গা দিতে পারবোনা।
• ভাই দেখেন মহিলা মানুষ, আর উনি অসুস্থ। তা না হলে কি আমি নিরলজ্জের মত আপনার কাছে জায়গা চাইতাম? আরো মানুষের কাছে যাইতে পারতাম কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হলো ভদ্র ঘরের ছেলে।
অনেকটা মেজাজ খারাপ নিয়েই ঊঠলাম। একটু পরে টয়লেট থেকে সেই মহিলাটা আসলো। তাকে দেখে মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো। বিশাল দেহের অধিকারি। আমি আমার জায়গাটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম অতটুকুতে তার হবেনা। আমার পাশে বসা দুইজনকে উঠতে হবে। এটা ভেবে এখন একটু ভালো লাগছে। ট্রেন আসার কোন খবর নেই। ষ্টেশন মাষ্টার এর রুমের দিকে এগুতে থাকলাম।
• মাষ্টার সাহেব ট্রেন তো এখোনো আসেনাই
• আসেনাই আসবো। আজকে আসবোনা কাইল আসবো। না আয়সা যাইবো কই?
• কি বলেন যাদের আজকে গ্রামে যাওয়া লাগবে তারা কাইল যেয়ে কি করবে?
• ভাই আমি ট্রেন চালাই না। কোন জায়গায় হয়তো আটকা পড়ছে। আয়সা পড়বো। আপনি বসেন, অপেক্ষা করেন
• ভাই রাত হয়ে গেলে একটু সমস্যা আমার জন্যে, আর একদিন দুদিন থাকবো। ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি করে তাই জানতে চেয়েছিলাম। আর এমনেও এলাকা ভালোনা বুঝছেন তো?
• ভয় পাওয়া লাগবোনা, আয়সা পরবো। ভাইজান করে কি?
• সরকারি চাকরি করি, বিদ্যুৎ অফিসে। থাকি ঢাকায়
• ঢাকা থিকা উঠতেন। এখান থিকা কেন? সিগারেট খাবেন? নতুন ব্রান্ড। আগে দেখিনাই। সকালে একজন দিয়া গেছে। বেনসন। সারাজিবন তো ফিল্টার ছাড়া টানছি। ফিল্টার সিগারেট টেনে আরাম আছে। কাশি কম হয়। ধরেন একটা ধরান। দাম আছে ২টাকা প্রতি পিছ। একজন দিয়া গেলো আমারে। তা ভাইজান যাবেন কোথায়?
• গৌরিপুর যাবো
• হুম, বউ পোলাপানরে দেখতে যাবেন?
• এখোনো বিয়ে করিনাই, তাই পোলাপান নাই।
• বসেন ট্রেন এসে পরবে যেকোনো মুহূর্তে, সিগন্যাল পাঠিয়েছে
জয়েন লেটার পোষ্ট অফিসের কর্মরত লিটন ভাই এর কাছে পৌছে গেছে, সে ডাকযোগে আর্জেন্ট আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ মাসের ১ তারিখ থেকে জয়েন করবো। এটা কি মাস চলে, আজকে তারিখ কত। মাথায় পেচ লেগে যাচ্ছে। অনেক অনুসন্ধানের পর বের করলাম আজ মঙ্গলবার। হালকা হালকা ঠান্ডা বইছে। শীতকাল আসবে তাই মাঝে মধ্যে ঠান্ডা বাতাস উকি দিয়ে যাচ্ছে। কোন এক বর্ষায় চাকরির সন্ধানে বাড়ি ছেরেছিলাম। চাকরীটা আজ পেয়ে গেলাম কোন এক শীত কালে। মা- বাবা থাকলে তাদের কাছে দোয়া নিয়ে আসতাম। দোয়া নেয়ার মত আমার মানুষ নেই তেমন। গ্রামের কিছু মুরুব্বি আছেন তাদের কাছে দোয়া চেতে যেতে হলে মিস্টি নিয়ে যেতে হবে। হাতে টাকা নেই। একেবারেই যাবো বেতন পেয়ে। তাদের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে আসা যায়। টেলিফোনে তাদের সাথে কথা বলতে পারলে দোয়া নেয়া যেত, পরে মিষ্টি দিয়া আসতাম। চাকরি শুরু হয়ে গেলে দোয়া কেমন কাজে দিবে জানিনা। আগে থেকেই চাওয়া উচিত। ভাবিকেও জানাতে হবে যে কনফার্মেশন পেয়েছি। মোবারককে জানাতে চাইলেও পারবো কিনা জানিনা। সে দেঊলিয়া হয়ে গেছে। তার নতুন হুরপরী নিয়ে ব্যস্ত। হুরপরী গর্ভবতি।
অবশেষে সেই কাঙ্খিত দিন এলো, খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ভাবির বাসায় টোকা দিলাম, ভাবি এসে দরজা খুললেন, আমি বললাম ভাবি জানো তো আজ আমি চলে যাবো, ভোরে* রওনা না দিলে পরে আবার অফিসে যেয়ে পৌছাতে পারবোনা। ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন এক দৃষ্টিতে, তার চোখ ছল ছল করছে জলে, আমি বললাম মোবারক এসেছে? – নাহ আসেনাই, আপনি গোসল সেরে নিন আমি রুটি বানায়া দিতেছি। গোসল সেরে তৈরি হয়ে নিলাম। খেতে বসে ভাবিকে বললাম, ভাবি নিজের দিকে খেয়াল নিবে। মোবারক যাই করুক না কেন। সে তো মাসে মাসে টাকা দিচ্ছে। নিজের ছেলেটার দিকে নজর দিও, তার জন্যে চুপ করে থাকতে হলেও থেকো। — ঢাকায় কোথায় উঠবেন ঠিক হয়েছে? – হুম, সৌমিন দার ঢাকায় বাড়ি আছে, উনি কয়েকদিন ওখনে থাকতে বলছেন, বাসা ঠিক না হোওয়া পর্যন্ত উনার বাসায় থাকবো। অফিসের আশে পাশে যদি পাই তাহলে উঠে যাবো। সৌমিন বাবুর বাড়িতে কবুতরের ঘর আছে কিনা কে জানে, থাকলেও উঠবোনা, ভালো বাসায় উঠবো। ভাবি হেসে দিলেন, –এবার নাহয় বিয়েটা করেই ফেলুন, বড় বাসা নিয়ে কি একা একা থাকবেন বলুন? খাওয়া দাওয়া শেষে ভাবিকে বিদায় দিলাম, আপাতত ব্যাগে একটা সেট জামা কাপড় নিয়ে নিয়েছি, অবস্থা বুঝা হলে বাকিগুলা নেয়া যাবে। গত রাতে হরতন দার কাছে বিদায় নিয়েছি, সুলেখাকেও বলে এসেছি যদি পারি সকালে এসে দেখা করে যাবো। আর না পারলে বিদায়, আরেকদিন দেখা হবে। সুলেখা দূর রাস্তা পর্যন্ত চেয়েছিল, আমাকে কয়েকটা উপদেশ দিলেন, এক- শীত বইছে, ঠান্ডা কন কনে বাতাস, বাতাসে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে তাই মাফলার পেচিয়ে নিবেন। মোটা জামা কাপড় নিবেন। দুই—প্রতি সপ্তাহে অন্তত যেনো দুদিন এসে দেখা করে যাই। তার মধ্যে শুক্রবার অবশ্যই পুরো সময়টা তাদের সাথে কাটাতে হবে। গাড়িতে বসে সুলখার কথাগুলো বার বার চিন্তা করতেছিলাম। আসলেই মেয়ে মানুষ বিচিত্র, তারা খেয়ালি। ভাবি আমার খেয়াল নিতেন, সুলেখাও নিতে চায়। ভাবি হয়ত তার দায়িত্য পালন করছেন কিন্তু সুলেখা? তার তো আমার উপর কোন দায়িত্য নেই। তারপরও তার মায়া মাখা উপদেশগুলো আমার কাছে মনে হয় আমার উপর তার অধিকার আছে। আমি তার বাসা থেকে বের হলে দূরদৃষ্টিতে একমনে তাকিয়ে থাকে। তাকে দেখলে মনে হয় সে কিছু বলতে চায়, এখুনি দৌড়ে চলে আসবে। হুমমম, না বলা অধিকার চাপিয়ে বসে আছে।
অফিসে জয়েন করার পর অফিস বেশ ভালোই যাচ্ছে। সবাই আমার থেকে একটু বয়স্ক হলেও তারা আপন করে নিয়েছেন, অফিসে খোস-গল্প করেই অনেক সময় কাটিয়ে দিই। তারা আমার থেকে বয়স্ক হলে কি হবে তাদের কথাবার্তার অধিকাংশ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে তাদের বঊ। কাল রাতে কার বউ কিভাবে তাদের সোহাগ করেছে। কতক্ষন ঠাপিয়েছে এইসব বিষয়। মাঝে মধ্যে তারা একে অন্যের বৌকে হামলা করতেও দ্বিধা করেনা। এ নিয়ে বেশ রসিকতা হয় সবার মাঝে, ভাগ্যিস আমি বিয়ে করিনাই। তাছাড়া তাদের থেকে আমি বয়সে ছোট। আমার বৌকে নিয়ে যদি তারা এসব বলে তাহলে অবশ্যই আমার কাছে ভালো লাগবেনা। রসিকতার মাঝে হয়ত অনেক সময় নিতিবোধ থাকেনা। কিন্তু রসিকতা করে ফেললেন, আমার বৌকে কোন কারনে তাদের সামনে নিয়ে আসলাম, তারা মুখে ঠিকি ভালো ব্যাবহার করছেন, বলবেন ভাবি কেমন আছেন? ভাই তো আপনার খুব প্রশংসা করেন। আপনার রান্না নাকি অনেক ভালো, একদিন যেয়ে খেয়ে আসবো। কিন্তু মনের চোখ দিয়ে আমার বৌ এর স্তন চুষবেন, উচু নিতম্বে তাদের লিঙ্গ দিয়ে ঘসবেন। কিন্তু তাদের বৌকে দেখলে প্রথমে শ্রদ্ধা জিনিসটা আমার মাথায় আসে, যেহেতু তারা বয়সে বড়। আমার বৌ এর ক্ষেত্রে তাদের স্নেহ জিনিসটা আগে আসবে, সেই স্নেহের ফাকে তারা হাতায়া দিবেন কু-নজর দিয়া। — এই যে জাহিদ সাহেব ঘুম দিছেন নাকি?, নিচের দিকে তাকায়া কি ভাবছেন? রাতে কি ঘুম হয়নাই? সরকারি চাকরির এই এক সুবিধা, রাতে ঘুম ভালো না হলেও দিনে আরাম করে চেয়ারে বসে ঘুমানো যায়। আমি নিঃশব্দ হাসি দিয়ে খাতায় চোখ বুলাতে থাকলাম। অনেকদিন হলো বাড়ি যাইনা। তাছাড়া প্রায় এক মাস হয়ে গেছে চাকরি করছি। বেতন পেলে মিষ্টি নিয়ে প্রথমে হরতন দার বাড়ি হয়ে, সৌমিন দা ও ভাবিদের মিষ্টি দিবো, তারপর সেখান থেকেই বাড়ি চলে যাবো। একদিন দুদিন থেকে আসা দরকার। কেমন জানি হাপিয়ে উঠেছি। অফিস জীবন এর অভিজ্ঞতা আমার নেই, মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। দেখি আগামি শুক্রবার চলে যাবো, সকাল সকাল সবার বাসা ঘুরে বাড়ির দিকে রওনা দিবো। তাছাড়া এই সপ্তাহে যেভাবেই হোক আমাকে বাসা খুজে বের করতে হবে। পরগাছা হয়ে থাকতে আর ভালো লাগছেনা। সৌমিন দার এলাকা নাখালপাড়ায় খোজা খুজি করেছিলাম, কয়েকটা পেয়েছি। তার মধ্যে একটা নিয়ে নিব।
বাহাদুরবাদ রেল আজকে অনেক ভিড় লেগে আছে। আসার সময় এক ভিড়ের মধ্যে এসেছি যাওয়ার সময় আরেক ভিড়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাজে সকাল ৮ টা। ট্রেন আসেনি এখোনো। স্টেশন মাষ্টার এর কাছে খোজ নিয়ে জানলাম ট্রেন আসতে আসতে সাড়ে ৮টা কি ৯টা বাজবে। সেই ফযরের সময় বের হয়েছি, তারাহুরো করে সবার কাছে বিদায় নিয়ে আসলাম এখোন বলে ট্রেন আসতে দেরি হবে!! *একটু ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস বইছে। শীতের জামা কাপড় নিয়ে বের হইনি। গ্রামে অনেক শীত পড়তে পারে। ভারতের মেঘালয় থেকে কন কনে বাতাস গৌড়িপুরকে শীতকালে বরফ বানিয়ে দেয়, শীতকাল শুরু হউয়ার আগেই। ওয়েটিং রুমে বসে রইলাম। ওয়েটিং রুমেও শান্তি নেই। বাচ্চা কাচ্চারা একে অন্যের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে। আর ঝাপ দেয়ার সাথে সাথে এত জোরে চিল্লান দিচ্ছে যে মনে হচ্ছে কান ঘেছে ফাইটার প্লেন যাচ্ছে। সকালে সবার সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু আজো মোবারককে বাসায় পাইনি। মোবারকের কথা মনে পড়লে খুব জিদ হয়। প্রতি শুক্রবার নাকি সে বাসায় আসেনা। এটা একটা নিওম হয়ে গেছে।* শুক্রবারে সেই মেয়ের কাছে যায় মনে হয়। মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিস ভালো কথা। প্রেম করেছিস ভালো কথা, বিয়ে করতে গেলি কেন হাদারাম? চুলকানি উঠেছে যখন টেস্ট নিয়ে নিতি। জগতে চুপি চুপি কতরকম ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। প্রকাশ না হলে সবই ভালো। গর্দভটা একেবারে বিয়ে করে পেট বাধিয়ে দিয়েছে । ভাবির কথা মনে পড়লেও খারাপ লাগে। বেচারা পাগোল হয়ে গেছে। কথা বার্তার কোন ঠিক নেই। মাঝে মধ্যে বাসায় পাওয়া যায়না। অফিস থেকে বের হয়ে কয়েকবার বাসায় গিয়ে তাকে পাইনি, সন্ধ্যে রাতে সেজেগুজে কোথা থেকে যেন ফিরে।
এক লোক জাহিদের দিকে বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। জাহিদ হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে আটটা বাজে। লোকটি কাছে এগিয়ে আসতেছে
• এই যে ভাই, আপনি উঠুন, এখানে একজন মহিলা বসবে।
• মহিলা? কই আমি তো কোন মহিলা দেখছিনা
• আছে উনি টয়লেটে গেছেন।
• টয়লেটে গেছে মানে? আপনি দেখছেন না এখানে পুরুষরা বসে আছে? আর সকালে এসে ওয়েটিং রুমে জায়গা রাখতে পারলেন না?
• ভাই আপনি উঠবেন? তা না হলে আমি স্টেশন মাষ্টারকে বলে ঠিকি জায়গা করে নিব। আপনি পুরুষ মানুষ। বাহিরে মেঝেতে চেগিয়ে বসে যাবেন। সমস্যা নেই
• ভাই আপনি এখন যান। আমি জায়গা দিতে পারবোনা।
• ভাই দেখেন মহিলা মানুষ, আর উনি অসুস্থ। তা না হলে কি আমি নিরলজ্জের মত আপনার কাছে জায়গা চাইতাম? আরো মানুষের কাছে যাইতে পারতাম কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হলো ভদ্র ঘরের ছেলে।
অনেকটা মেজাজ খারাপ নিয়েই ঊঠলাম। একটু পরে টয়লেট থেকে সেই মহিলাটা আসলো। তাকে দেখে মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো। বিশাল দেহের অধিকারি। আমি আমার জায়গাটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম অতটুকুতে তার হবেনা। আমার পাশে বসা দুইজনকে উঠতে হবে। এটা ভেবে এখন একটু ভালো লাগছে। ট্রেন আসার কোন খবর নেই। ষ্টেশন মাষ্টার এর রুমের দিকে এগুতে থাকলাম।
• মাষ্টার সাহেব ট্রেন তো এখোনো আসেনাই
• আসেনাই আসবো। আজকে আসবোনা কাইল আসবো। না আয়সা যাইবো কই?
• কি বলেন যাদের আজকে গ্রামে যাওয়া লাগবে তারা কাইল যেয়ে কি করবে?
• ভাই আমি ট্রেন চালাই না। কোন জায়গায় হয়তো আটকা পড়ছে। আয়সা পড়বো। আপনি বসেন, অপেক্ষা করেন
• ভাই রাত হয়ে গেলে একটু সমস্যা আমার জন্যে, আর একদিন দুদিন থাকবো। ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি করে তাই জানতে চেয়েছিলাম। আর এমনেও এলাকা ভালোনা বুঝছেন তো?
• ভয় পাওয়া লাগবোনা, আয়সা পরবো। ভাইজান করে কি?
• সরকারি চাকরি করি, বিদ্যুৎ অফিসে। থাকি ঢাকায়
• ঢাকা থিকা উঠতেন। এখান থিকা কেন? সিগারেট খাবেন? নতুন ব্রান্ড। আগে দেখিনাই। সকালে একজন দিয়া গেছে। বেনসন। সারাজিবন তো ফিল্টার ছাড়া টানছি। ফিল্টার সিগারেট টেনে আরাম আছে। কাশি কম হয়। ধরেন একটা ধরান। দাম আছে ২টাকা প্রতি পিছ। একজন দিয়া গেলো আমারে। তা ভাইজান যাবেন কোথায়?
• গৌরিপুর যাবো
• হুম, বউ পোলাপানরে দেখতে যাবেন?
• এখোনো বিয়ে করিনাই, তাই পোলাপান নাই।
• বসেন ট্রেন এসে পরবে যেকোনো মুহূর্তে, সিগন্যাল পাঠিয়েছে
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!