23-06-2020, 10:42 AM
## ১১
প্রায় দুদিন হয়ে গেলো জাহিদ হরতনের বাসায়, সেদিনের নেশার ঘোর তাকে এতটাই পেয়ে বসেছিল দুদিন তার খবর নেই, ভমি করে অবস্থা কাহিল। অজ্ঞেয়ান এর মত বিছনায় পরে পরে ঘুমিয়েছে। আজকে দুপুরের দিকে চোখটা ভালো করে খুলল, সুন্দর গুছানো একটি রুমের খাটিয়ায় ঘুমিয়ে আছে, এত নরম বিছানায় যে ঘুমাবে তার নেশা ছারাই দুদিন ঘুম হবে ভালো। চোখ মেলে তাকালো একটা রমনী সাদা শাড়ি পরে চুল মুছতেছে। তার শাড়ি জায়গায় জায়গায় ভেজা। পিছন থেকে তার কোমলমতি কোমর দেখা যাচ্ছে। সুডৌল পাছা। সিক্ত ব্লাওউজের ভিতর দিয়েও সাদা ব্রা ভেসে ঊঠেছে, মাথা কাত করে আয়নার সামনে শরীর মুছে যাচ্ছে। এ নিশ্চই সুলেখা ছাড়া আর কেও হবেনা। জাহিদ চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে তার পাছার দিকে একবার, কোমরের দিকে একবার।
• এই যে, তাহলে ঘুম ভাংলো আপনার? আমি তো মনে করেছিলাম একেবারেই নিদ্রায় চলে গেছেন।
• আমি কি এখোনো হরতন দার বাড়িতেই আছি?
• হ্যা, দুদিন হয়ে গেলো বিছনায় শুয়ে আছেন। সেদিন রাতে যে মাথা ঝাকুনি দিয়ে পড়ে গেলেন, তারপর থেকেই তো আপনি আমার ঘরে।
• এটা আপনার ঘর? দুদিন হয়ে গেছে? কি সর্বনাশ!
• সেদিন সবাই এতটা নেশা করেছিলো যে ভবের দুনিয়া থেকে অনেকের জাগতে সময় নিয়েছে, বাবা তো আপনাকে নিয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আমাকে বলল বাচ্চা ছেলে যদি আবার কিছু হয়ে যায়। ভুল হয়েছে তার। তারপর আপনাকে আমার রুমে দিয়ে গেলো। যাতে সর্বক্ষণ খেয়াল রাখি। তা পারেন না যখন কেন যান ওসব খেতে। কাওকে মনে পড়েছিলো বুঝি?
• আমি আপনার ঘরে দুদিন কাটিয়ে দিলাম আমার কোন হুস নেই। আপনি থেকেছেন কোথায়? হরতন দা কই?
• বাবা বাহিরে গেছে। আমি বাবার রুমে ছিলাম তাছারা নিচের ঘরে আরেকটি রুম আছে সেখানেও ছিলাম। এ রুমটার জানালাটা দিয়ে আলো বাতাস আসবে ঠীক মত আর গুছানো রুম তাই বাবা এখানে রেখে গেলেন। উঠে পড়ুন ভালো করে গোসল করুন। দুদিন গায়ে জল দেয়া হয়নি। আমি খাবার তৈরি করে দিচ্ছি।
তারপর জাহিদ বিছানা ছেড়ে ঊঠে বসলো। সুলেখা কাছে আসলো ধীর পায়ে। মাথা একটু নিচে করে বলল, আপনার বয়স কম, কেন যান ওসব খেতে? এত টেনশন করে কি হবে বলুন? এই যে আমি, দেখছেন না পড়ে আছি। বাবা মারা গেলে কোথায় গিয়ে উঠবো বলুন? বাবা আমাকে কুড়ীয়ে এনেছে আর মুসল্মানের মেয়ে বলে মা ভাইরা বাবারে ছেড়ে গ্রামে গিয়ে থাকছে। তাদের জাত চলে যাবে বলে। জীবনকে নাহয় তার পথেই ছেড়ে দিন। সে আপনা আপনি তার পথ চিনে নিবে অজানা পথে। জাহিদের হ্রদয়টা কেন জানি কেপে উঠলো, এমন লাগছে কেন? সুলেখাকে মনে হচ্ছে তার অনেকদিনের চেনা, এত মায়া মাখিয়ে কথা বলছে তার সাথে।
বাথরুমে নিয়ে বেশ সময় নিয়ে গোসল করতে থাকলাম। এতক্ষন মাথার ভিতর সুলেখা ঘুর ঘুর করছিল। হঠাত মনে হল দুদিন ধরে বাসায় যাইনা, ভাবির সাথে অনেকদিন কথা বলিনা ঠিকমতো, মোবারকের সাথে নতুন করে কিছু হয়েছে কিনা কে জানে। মোবারক নিজেকে কেন বুঝতেছেনা। তার একটা ছেলে আছে। এর দিকে তাকিয়ে তো বাসায় আগে আগে চলে আসা যায়। আমাকে তাড়া তাড়ি বাসায় যেতে হবে। পরোক্ষনে মনে হলো আজ কি বার? কিছুতেই মনে করতে পারছিনা। রবিবারে আমার তো ঢাকায় যেতে হবে। কবে যেনো অফিসে গিয়েছিলাম? কয়দিন আগে হবে? উফফ মাথায় কেন আসতে চাইছেনা।
এরকম চুল ছেড়া ছেড়ি করে এক সময় গোসল শেষে বের হলাম। মেঝেতে খাবার সাজিয়েছে সুলেখা। * বাড়িতে খাবার হরতন বাবুর ছাড়া আর কোথায় খেয়েছি কিনা মনে পরছেনা। এরা এত আয়োজন করে। দেখে আগেই পেট ভরে যায়। মাংস দেখা যাচ্ছে। কিসের মাংস কে জানে। গরুর তো হবেনা নিশ্চই, দেখতে তো মুরগির মত মনে হচ্ছেনা। তাহলে কিসের হতে পারে? ওহহ ছাগলের মাংস হবে নিশ্চই। সুলেখা আমার সামনেই বসে আছে। একটু পর রুমে হরতন বাবু ঢুকল। ঢুকেই বলল কি ব্যাপার একেবারে মরার ঘুম দিয়েছিলে দেখছি। আমার ভুল হয়ে গিয়েছিল। ক্ষমা করে দিও। জাহিদ হরতন দাকে দেখে বলল ভুল হবে কেন? আগেও তো খেয়েছি মাঝে মধ্যে। ওইদিন বেশি পরে গিয়েছিল। দাদা আসুন আমার সাথে বসুন একসাথে খাই। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে হরতন দার কাছে বিদায় নিল। বসতে বলেছিল, কিন্তু বাসায় ফিরতে হবে বলে বিদায় নিলাম। যাওয়ার সময় গেট পর্যন্ত সুলেখা এগিয়ে দিল। বলল টেনশন কম করতে, বাবা তাকে নাকি বলেছে আমার সমস্যা। আমি ধীর পায়ে হেটে বাহির হয়ে গেলাম। একবার পিছন ফিরে দেখলাম সুলেখা দাঁড়িয়ে আছে মুখে হাসি নিয়ে। মেয়ে মানুষ মুখে হাসি নিয়ে থাকবে। হাসি তাদের বড় সৌন্দর্য। তারা মুখ গোমড়া করে রাখলে ভালো দেখায় না। ভাবিকে সব সময় মুখ গোমরা অবস্থায় দেখা যায়। তাই ভাবি সুন্দর হলেও তাকে অনেকটা বিবর্ণ লাগে।
আজকে কি বার জানা হলোনা। খেতে বসে সুলেখার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একেবারে ভুলেই গেলাম। মনে ভিতর আবার ওস-খোস করতে লাগলো। রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া সময় একজনকে জিজ্ঞেস করলাম বলল আজকে শুক্রবার। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেলা ৩ টার কাছা কাছি। আজকে মোবারককে বাসায় পাওয়া যাবে। সরকারী ছুটি। কিছুদুর যেতেই একজন লোক ডাক দিল এই যে জাহিদ ভাই দাড়ান দাড়ান। তার চেহারা মনে পরছেনা। আমার দিকে এগিয়ে এসে জিগ্যেস করল কি ব্যপার কেমন আছেন? ঘুম তাহলে ভাংলো? আমাকে চিনেছেন? আমি সৌমিন রয়। ওহহ দাদা কেমন আছেন? আমি তো চিনতে পারিনি প্রথম। ক্ষমা করবেন। সে বলল আরে না না ঠীক আছে। সেদিন রাতে দেখেছেন। তাছারা ভালোমত পরিচয় পর্ব শেষ না হতেই তো ভাং খেয়ে একেকজন ভবের দুনিয়ায় চলে গেলাম। যাই হোক আপনাকে দেখে ভালো লাগছে। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। হরতন দা তো মহা টেনশনে ছিল। একবার ডাক্তার এর কাছেও নিয়ে যেতে চাইলো। আপনি অজ্ঞেয়ান অবস্থায় সারাদিন আবোল তাবোল বকলেন। নেশা অনেকের সয় আবার অনেকের সয় না। তাই হরতন দার উপর কিছু মনে করবেন না। উনি অনেক ভালো মানুষ। একদম সহজ সরল। একা একা থাকেন তাই আনন্দ মুহুরত এলে উনি সবাইকে নিয়ে কাটাতে চান। মানুষের অনেক উপকার ও করেন। উনার উপর রাগ করবেন না। আমি বললাম একি বলছেন দাদা, আমি উনাকে অনেক শ্রদ্ধা করি। এ এলাকায় মাথার ছায়া হিসেবে উনি ছাড়া আমি আর কাওকে দেখিনা। উনি একমাত্র ভালো পরিচিত। নতুন এসেছি এখানে, একজন নতুন মানুষকে এভাবে যিনি আপন করে নিতে পারেন তিনি আর যাই হোক খারাপ হতে পারেন না। আচ্ছা দাদা আমি দুদিন ধরে হরতন দার বাসায় ছিলাম, বাসায় ফিরতে হবে। আরেক দিন না হয় আপনার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিব। –ঠীক আছে আছে আরেকদিন কথা হবে। আপনার আর সময় নষ্ট করবো না।
বাসায় গেলাম, ভাবির বাসায় তালা ঝুলানো, এই অসময়ে উনি আবার কোথায় গেলেন। আমি উপরে চলে গেলাম। শুয়ে রইলাম। কেন জানি কিছু ভালো লাগছেনা। এভাবে নীড় হারা হয়ে আর কতোদিন পরে থাকা। ঢাকায় যেয়ে কোন ব্যবস্থা না হলে গ্রামেই ফিরে যাবো। গ্রামে যেয়ে দরকার হলে মানুষের ক্ষেত নীড়াবো। অন্তত জীবনটা পার করে দেয়া যাবে। গ্রামের কি অবস্থা কে জানে। কারো কাছে খোজ খবর নিব সেই মানুষটিও নেই। একবার মনে হল পোষ্ট অফিসে ফোন দেই। পোষ্ট অফিসের লিটন ভাইকে ফোন দিয়ে খোজ খবর নিই।
হাবিজাবি চিন্তা করতে করতে চোখ বুজে এলো। কে জেনো ডাকছে, জাহিদ ভাই, জাহিদ ভাই
• কে? ওহ ভাবি। কোথাও গিয়েছিলে? বিকেলের দিকে এসেছিলাম, একটু বিশ্রাম নিতেই চোখটা বুজে এলো
• কোথায় ছিলেন দু-দিন? না বলে একেবারে উধাও হইয়ে গেলেন। আমি তো মনে করেছিলাম বাড়িতে চলে গেছেন।
• নাহ ভাবি আসে পাসেই ছিলাম, মোবারক কি বাসায় ফিরেনি?
• নাহ গত ৫ দিন ধরে খোজ নেই। আমি এখন আর ওর জন্যে অপেক্ষা করিনা। খাওয়া দাওয়া করেছেন? সন্ধ্যে নেমে আসল। চলেন খাবেন।
• নাহ ভাবি এখন খাবোনা, রাতে খাবো। ভাবি মোবারকের বাবা মাকে বিষয়টা জানাও। আমি একবার চিন্তা করছিলাম খালারে জানাই, কিন্তু তুমাদের বিষয় তুমি জানালে ভালো হবে
• ওর কথা বাদ দিন। কিছু বলেও লাভ হবেনা।
ভাবি সেজেগুজে আছেন, এই এমন দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে কিভাবে মেয়েরা সেজেগুজে থাকেন আমার মাথায় ঢুকেনা। এমনভাবে তিনি নিজেকে সেজেগুজে রাখেন দেখলে মনে হবে তাকে দেখতে পাত্র পক্ষ আসবেন। আজব লাগে দুনিয়া। সেজে থাকুক এতে যদি উনার মন ভালো থাকে।
ঢাকার ফার্মগেটে আসলাম সালাম সাহেবের ঠিকানা অনুযায়ি। বেশ সকাল সকাল এসে পড়েছি। জহির কন্সট্রাশন লিমিটেড। দারোয়ান ঢুকতে দিতেছেনা। বলতেছে স্যার আসেনাই। উনি আসলে অনুমতি নিয়া ঢুকাবেন। দাঁড়িয়ে আছি প্রচন্ড রোদে। রাস্তায় অনেক মানুষ। এত মানুষের বাস এই ঢাকায়। গিজগিজ করছে ।বেশ খানিকবাদে উনার দেখা পেলাম। উনি আমাকে ডাকলেন, জিজ্ঞেস করতেছেন দেশের বাড়ী কোথায়, আমি বললাম গৌড়িপুর। উনি আমার চেহারা দেখতে লাগলেন ভালো করে। আমাকে উপজাতিও ভাবছেন কিনা কে জানে। আমি দেখতে তো মন্দ না সবাই বলে। উনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন আমি সালামকে ফোনে জানাবো। আমার এখানে তো কর্ম খালি নেই। যেটা আছে ওটা তুমি করবেনা। আমি বললাম যে আমি করব। উনি বললেন নাহ পারবেনা, তাছাড়া সালাম তুমাকে পাঠিয়েছে ব্যাপারটি আমি গুরুত্ত দিয়ে দেখবো। ভালো জায়গা খালি হলেই তুমাকে ডাকবো
আমি হতাশ মনেই ফিরলাম। উনি একটা ব্যাবসা প্রতিস্টানের মালিক, চাইলে একটা কিছু ব্যাবস্থা করে দিতে পারতেন। দিবেনা দিবেনা। উনার আত্মীয় স্বজন হলে দিতেন, তা না হলে উনার এলাকার হলেও দিতেন। রাস্তা দিয়ে হেটে চললাম। অনেক মানুষ ভীড় করে আছে। কেও কেও গোল হয়ে মিটিং করছে রাস্তার মাঝে। বাস পাওয়া যাচ্ছেনা। পেলেও ভীড় এর চোটে ঊঠা মুশকিল। সবাই যেমন করছে মনে হচ্ছে কোন দানব জাতিও কিছু ধাওয়া করেছে আর সবাই জীবন নিয়ে পালানোর চেষ্টা করতেছে। কিছুক্ষন পড়ে বুঝতে পারলাম সামরিক সরকার এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এরশাদ সরকার এর পতন চায়। একজন দাঁড়িয়ে ভাসন দিচ্ছেন। কিছু মানুষ জটলা পাকিয়ে শুনতেছে, তার কিছু দুরেই আরো একজন দাঁড়িয়ে ভাসন দিচ্ছে সেখানেও কিছু মানুষ জটলা পাকিয়ে বসে উনার বক্তব্য শুনছে। মনে হচ্ছে কার থেকে কার ভাসন সুন্দর হয় তার মহড়া চলতেছে।
প্রায় দুদিন হয়ে গেলো জাহিদ হরতনের বাসায়, সেদিনের নেশার ঘোর তাকে এতটাই পেয়ে বসেছিল দুদিন তার খবর নেই, ভমি করে অবস্থা কাহিল। অজ্ঞেয়ান এর মত বিছনায় পরে পরে ঘুমিয়েছে। আজকে দুপুরের দিকে চোখটা ভালো করে খুলল, সুন্দর গুছানো একটি রুমের খাটিয়ায় ঘুমিয়ে আছে, এত নরম বিছানায় যে ঘুমাবে তার নেশা ছারাই দুদিন ঘুম হবে ভালো। চোখ মেলে তাকালো একটা রমনী সাদা শাড়ি পরে চুল মুছতেছে। তার শাড়ি জায়গায় জায়গায় ভেজা। পিছন থেকে তার কোমলমতি কোমর দেখা যাচ্ছে। সুডৌল পাছা। সিক্ত ব্লাওউজের ভিতর দিয়েও সাদা ব্রা ভেসে ঊঠেছে, মাথা কাত করে আয়নার সামনে শরীর মুছে যাচ্ছে। এ নিশ্চই সুলেখা ছাড়া আর কেও হবেনা। জাহিদ চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে তার পাছার দিকে একবার, কোমরের দিকে একবার।
• এই যে, তাহলে ঘুম ভাংলো আপনার? আমি তো মনে করেছিলাম একেবারেই নিদ্রায় চলে গেছেন।
• আমি কি এখোনো হরতন দার বাড়িতেই আছি?
• হ্যা, দুদিন হয়ে গেলো বিছনায় শুয়ে আছেন। সেদিন রাতে যে মাথা ঝাকুনি দিয়ে পড়ে গেলেন, তারপর থেকেই তো আপনি আমার ঘরে।
• এটা আপনার ঘর? দুদিন হয়ে গেছে? কি সর্বনাশ!
• সেদিন সবাই এতটা নেশা করেছিলো যে ভবের দুনিয়া থেকে অনেকের জাগতে সময় নিয়েছে, বাবা তো আপনাকে নিয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আমাকে বলল বাচ্চা ছেলে যদি আবার কিছু হয়ে যায়। ভুল হয়েছে তার। তারপর আপনাকে আমার রুমে দিয়ে গেলো। যাতে সর্বক্ষণ খেয়াল রাখি। তা পারেন না যখন কেন যান ওসব খেতে। কাওকে মনে পড়েছিলো বুঝি?
• আমি আপনার ঘরে দুদিন কাটিয়ে দিলাম আমার কোন হুস নেই। আপনি থেকেছেন কোথায়? হরতন দা কই?
• বাবা বাহিরে গেছে। আমি বাবার রুমে ছিলাম তাছারা নিচের ঘরে আরেকটি রুম আছে সেখানেও ছিলাম। এ রুমটার জানালাটা দিয়ে আলো বাতাস আসবে ঠীক মত আর গুছানো রুম তাই বাবা এখানে রেখে গেলেন। উঠে পড়ুন ভালো করে গোসল করুন। দুদিন গায়ে জল দেয়া হয়নি। আমি খাবার তৈরি করে দিচ্ছি।
তারপর জাহিদ বিছানা ছেড়ে ঊঠে বসলো। সুলেখা কাছে আসলো ধীর পায়ে। মাথা একটু নিচে করে বলল, আপনার বয়স কম, কেন যান ওসব খেতে? এত টেনশন করে কি হবে বলুন? এই যে আমি, দেখছেন না পড়ে আছি। বাবা মারা গেলে কোথায় গিয়ে উঠবো বলুন? বাবা আমাকে কুড়ীয়ে এনেছে আর মুসল্মানের মেয়ে বলে মা ভাইরা বাবারে ছেড়ে গ্রামে গিয়ে থাকছে। তাদের জাত চলে যাবে বলে। জীবনকে নাহয় তার পথেই ছেড়ে দিন। সে আপনা আপনি তার পথ চিনে নিবে অজানা পথে। জাহিদের হ্রদয়টা কেন জানি কেপে উঠলো, এমন লাগছে কেন? সুলেখাকে মনে হচ্ছে তার অনেকদিনের চেনা, এত মায়া মাখিয়ে কথা বলছে তার সাথে।
বাথরুমে নিয়ে বেশ সময় নিয়ে গোসল করতে থাকলাম। এতক্ষন মাথার ভিতর সুলেখা ঘুর ঘুর করছিল। হঠাত মনে হল দুদিন ধরে বাসায় যাইনা, ভাবির সাথে অনেকদিন কথা বলিনা ঠিকমতো, মোবারকের সাথে নতুন করে কিছু হয়েছে কিনা কে জানে। মোবারক নিজেকে কেন বুঝতেছেনা। তার একটা ছেলে আছে। এর দিকে তাকিয়ে তো বাসায় আগে আগে চলে আসা যায়। আমাকে তাড়া তাড়ি বাসায় যেতে হবে। পরোক্ষনে মনে হলো আজ কি বার? কিছুতেই মনে করতে পারছিনা। রবিবারে আমার তো ঢাকায় যেতে হবে। কবে যেনো অফিসে গিয়েছিলাম? কয়দিন আগে হবে? উফফ মাথায় কেন আসতে চাইছেনা।
এরকম চুল ছেড়া ছেড়ি করে এক সময় গোসল শেষে বের হলাম। মেঝেতে খাবার সাজিয়েছে সুলেখা। * বাড়িতে খাবার হরতন বাবুর ছাড়া আর কোথায় খেয়েছি কিনা মনে পরছেনা। এরা এত আয়োজন করে। দেখে আগেই পেট ভরে যায়। মাংস দেখা যাচ্ছে। কিসের মাংস কে জানে। গরুর তো হবেনা নিশ্চই, দেখতে তো মুরগির মত মনে হচ্ছেনা। তাহলে কিসের হতে পারে? ওহহ ছাগলের মাংস হবে নিশ্চই। সুলেখা আমার সামনেই বসে আছে। একটু পর রুমে হরতন বাবু ঢুকল। ঢুকেই বলল কি ব্যাপার একেবারে মরার ঘুম দিয়েছিলে দেখছি। আমার ভুল হয়ে গিয়েছিল। ক্ষমা করে দিও। জাহিদ হরতন দাকে দেখে বলল ভুল হবে কেন? আগেও তো খেয়েছি মাঝে মধ্যে। ওইদিন বেশি পরে গিয়েছিল। দাদা আসুন আমার সাথে বসুন একসাথে খাই। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে হরতন দার কাছে বিদায় নিল। বসতে বলেছিল, কিন্তু বাসায় ফিরতে হবে বলে বিদায় নিলাম। যাওয়ার সময় গেট পর্যন্ত সুলেখা এগিয়ে দিল। বলল টেনশন কম করতে, বাবা তাকে নাকি বলেছে আমার সমস্যা। আমি ধীর পায়ে হেটে বাহির হয়ে গেলাম। একবার পিছন ফিরে দেখলাম সুলেখা দাঁড়িয়ে আছে মুখে হাসি নিয়ে। মেয়ে মানুষ মুখে হাসি নিয়ে থাকবে। হাসি তাদের বড় সৌন্দর্য। তারা মুখ গোমড়া করে রাখলে ভালো দেখায় না। ভাবিকে সব সময় মুখ গোমরা অবস্থায় দেখা যায়। তাই ভাবি সুন্দর হলেও তাকে অনেকটা বিবর্ণ লাগে।
আজকে কি বার জানা হলোনা। খেতে বসে সুলেখার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একেবারে ভুলেই গেলাম। মনে ভিতর আবার ওস-খোস করতে লাগলো। রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া সময় একজনকে জিজ্ঞেস করলাম বলল আজকে শুক্রবার। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেলা ৩ টার কাছা কাছি। আজকে মোবারককে বাসায় পাওয়া যাবে। সরকারী ছুটি। কিছুদুর যেতেই একজন লোক ডাক দিল এই যে জাহিদ ভাই দাড়ান দাড়ান। তার চেহারা মনে পরছেনা। আমার দিকে এগিয়ে এসে জিগ্যেস করল কি ব্যপার কেমন আছেন? ঘুম তাহলে ভাংলো? আমাকে চিনেছেন? আমি সৌমিন রয়। ওহহ দাদা কেমন আছেন? আমি তো চিনতে পারিনি প্রথম। ক্ষমা করবেন। সে বলল আরে না না ঠীক আছে। সেদিন রাতে দেখেছেন। তাছারা ভালোমত পরিচয় পর্ব শেষ না হতেই তো ভাং খেয়ে একেকজন ভবের দুনিয়ায় চলে গেলাম। যাই হোক আপনাকে দেখে ভালো লাগছে। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। হরতন দা তো মহা টেনশনে ছিল। একবার ডাক্তার এর কাছেও নিয়ে যেতে চাইলো। আপনি অজ্ঞেয়ান অবস্থায় সারাদিন আবোল তাবোল বকলেন। নেশা অনেকের সয় আবার অনেকের সয় না। তাই হরতন দার উপর কিছু মনে করবেন না। উনি অনেক ভালো মানুষ। একদম সহজ সরল। একা একা থাকেন তাই আনন্দ মুহুরত এলে উনি সবাইকে নিয়ে কাটাতে চান। মানুষের অনেক উপকার ও করেন। উনার উপর রাগ করবেন না। আমি বললাম একি বলছেন দাদা, আমি উনাকে অনেক শ্রদ্ধা করি। এ এলাকায় মাথার ছায়া হিসেবে উনি ছাড়া আমি আর কাওকে দেখিনা। উনি একমাত্র ভালো পরিচিত। নতুন এসেছি এখানে, একজন নতুন মানুষকে এভাবে যিনি আপন করে নিতে পারেন তিনি আর যাই হোক খারাপ হতে পারেন না। আচ্ছা দাদা আমি দুদিন ধরে হরতন দার বাসায় ছিলাম, বাসায় ফিরতে হবে। আরেক দিন না হয় আপনার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিব। –ঠীক আছে আছে আরেকদিন কথা হবে। আপনার আর সময় নষ্ট করবো না।
বাসায় গেলাম, ভাবির বাসায় তালা ঝুলানো, এই অসময়ে উনি আবার কোথায় গেলেন। আমি উপরে চলে গেলাম। শুয়ে রইলাম। কেন জানি কিছু ভালো লাগছেনা। এভাবে নীড় হারা হয়ে আর কতোদিন পরে থাকা। ঢাকায় যেয়ে কোন ব্যবস্থা না হলে গ্রামেই ফিরে যাবো। গ্রামে যেয়ে দরকার হলে মানুষের ক্ষেত নীড়াবো। অন্তত জীবনটা পার করে দেয়া যাবে। গ্রামের কি অবস্থা কে জানে। কারো কাছে খোজ খবর নিব সেই মানুষটিও নেই। একবার মনে হল পোষ্ট অফিসে ফোন দেই। পোষ্ট অফিসের লিটন ভাইকে ফোন দিয়ে খোজ খবর নিই।
হাবিজাবি চিন্তা করতে করতে চোখ বুজে এলো। কে জেনো ডাকছে, জাহিদ ভাই, জাহিদ ভাই
• কে? ওহ ভাবি। কোথাও গিয়েছিলে? বিকেলের দিকে এসেছিলাম, একটু বিশ্রাম নিতেই চোখটা বুজে এলো
• কোথায় ছিলেন দু-দিন? না বলে একেবারে উধাও হইয়ে গেলেন। আমি তো মনে করেছিলাম বাড়িতে চলে গেছেন।
• নাহ ভাবি আসে পাসেই ছিলাম, মোবারক কি বাসায় ফিরেনি?
• নাহ গত ৫ দিন ধরে খোজ নেই। আমি এখন আর ওর জন্যে অপেক্ষা করিনা। খাওয়া দাওয়া করেছেন? সন্ধ্যে নেমে আসল। চলেন খাবেন।
• নাহ ভাবি এখন খাবোনা, রাতে খাবো। ভাবি মোবারকের বাবা মাকে বিষয়টা জানাও। আমি একবার চিন্তা করছিলাম খালারে জানাই, কিন্তু তুমাদের বিষয় তুমি জানালে ভালো হবে
• ওর কথা বাদ দিন। কিছু বলেও লাভ হবেনা।
ভাবি সেজেগুজে আছেন, এই এমন দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে কিভাবে মেয়েরা সেজেগুজে থাকেন আমার মাথায় ঢুকেনা। এমনভাবে তিনি নিজেকে সেজেগুজে রাখেন দেখলে মনে হবে তাকে দেখতে পাত্র পক্ষ আসবেন। আজব লাগে দুনিয়া। সেজে থাকুক এতে যদি উনার মন ভালো থাকে।
ঢাকার ফার্মগেটে আসলাম সালাম সাহেবের ঠিকানা অনুযায়ি। বেশ সকাল সকাল এসে পড়েছি। জহির কন্সট্রাশন লিমিটেড। দারোয়ান ঢুকতে দিতেছেনা। বলতেছে স্যার আসেনাই। উনি আসলে অনুমতি নিয়া ঢুকাবেন। দাঁড়িয়ে আছি প্রচন্ড রোদে। রাস্তায় অনেক মানুষ। এত মানুষের বাস এই ঢাকায়। গিজগিজ করছে ।বেশ খানিকবাদে উনার দেখা পেলাম। উনি আমাকে ডাকলেন, জিজ্ঞেস করতেছেন দেশের বাড়ী কোথায়, আমি বললাম গৌড়িপুর। উনি আমার চেহারা দেখতে লাগলেন ভালো করে। আমাকে উপজাতিও ভাবছেন কিনা কে জানে। আমি দেখতে তো মন্দ না সবাই বলে। উনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন আমি সালামকে ফোনে জানাবো। আমার এখানে তো কর্ম খালি নেই। যেটা আছে ওটা তুমি করবেনা। আমি বললাম যে আমি করব। উনি বললেন নাহ পারবেনা, তাছাড়া সালাম তুমাকে পাঠিয়েছে ব্যাপারটি আমি গুরুত্ত দিয়ে দেখবো। ভালো জায়গা খালি হলেই তুমাকে ডাকবো
আমি হতাশ মনেই ফিরলাম। উনি একটা ব্যাবসা প্রতিস্টানের মালিক, চাইলে একটা কিছু ব্যাবস্থা করে দিতে পারতেন। দিবেনা দিবেনা। উনার আত্মীয় স্বজন হলে দিতেন, তা না হলে উনার এলাকার হলেও দিতেন। রাস্তা দিয়ে হেটে চললাম। অনেক মানুষ ভীড় করে আছে। কেও কেও গোল হয়ে মিটিং করছে রাস্তার মাঝে। বাস পাওয়া যাচ্ছেনা। পেলেও ভীড় এর চোটে ঊঠা মুশকিল। সবাই যেমন করছে মনে হচ্ছে কোন দানব জাতিও কিছু ধাওয়া করেছে আর সবাই জীবন নিয়ে পালানোর চেষ্টা করতেছে। কিছুক্ষন পড়ে বুঝতে পারলাম সামরিক সরকার এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এরশাদ সরকার এর পতন চায়। একজন দাঁড়িয়ে ভাসন দিচ্ছেন। কিছু মানুষ জটলা পাকিয়ে শুনতেছে, তার কিছু দুরেই আরো একজন দাঁড়িয়ে ভাসন দিচ্ছে সেখানেও কিছু মানুষ জটলা পাকিয়ে বসে উনার বক্তব্য শুনছে। মনে হচ্ছে কার থেকে কার ভাসন সুন্দর হয় তার মহড়া চলতেছে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!